বনায়ন, বৃক্ষ কর্তন ও সংরক্ষণ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-বনায়ন, বৃক্ষ কর্তন ও সংরক্ষণ

বনায়ন, বৃক্ষ কর্তন ও সংরক্ষণ

কোন জীব ( উদ্ভিদ বা প্রাণী) চিরদিন এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকে না বা চিরদিন কোন কিছু সংরক্ষণ করে রাখাও যায় না। মানুষ তার প্রয়োজনে গাছ লাগিনো থাকে। এর মধ্যে কিছু আছে শুধু কাঠ পাওয়ার আশারা আবার কিছু আছে ফল ও কাঠ উভয়ই পাওয়ার আশায়। কোন গাছকেই চিরদিন সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব নয়। তাই কোন বিশেষ সময়ে বা একটা নির্দিষ্ট সময় পর মানুষ তার চাহিদানুযায়ী ব্যবহারের উদ্দেশ্যে গাছ কর্তন করে থাকে।

গাছ কাটার সময় বিবেচ্য বিষয়

গাছ কাটার আগে প্রথমেই খেয়াল করতে হবে গাছটি কোন জায়গায় অবস্থিত। গাছটির আশেপাশে কি কি জিনিস রয়েছে। গাছের চারদিকে ঘরবাড়ি, বাগান, অন্য কোন গাছ, রাস্তা, খান, টিলা প্রভৃতি জিনিস থাকতে পারে। কাজেই গাছটি কাটার সম্যা অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কর্তনকৃত গাছটি আশেপাশের কোন জিনিসের উপর পড়ে কোন ক্ষতি না করে বা গাছটি ভেঙ্গে না যায়। এ সময় ঠিক করে নিতে হবে গাছটি কেটে কোন দিকে ফেলতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে গাছ কাটলে বিভিন্ন প্রকার ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

সঠিক পদ্ধতিতে গাছ কাটার প্রয়োজনীয়তা:

একটা গাছ রোপণ করার অনেক বছর পর কাটার উপযুক্ত হয় অর্থাৎ ঐ গাছ থেকে আসবাবপত্র তৈরির জন্য মূল্যবান কাঠ পাওয়া যায়। অপরিকল্পিতভাবে গাছ কাটলে কাঠের অনেক অপচয় হয় বা ক্ষতি হয়। গোড়া থেকে উপরের দিকে কাটলে গোড়ার কাঠের অপচন হন।

অথচ গোড়ার কাঠের মান সবচেয়ে বেশি ভালো থাকে। আবার কুড়াল দিবো গাছ কাটলে কাঠের অপচয় বেশি হয় এবং করাত দিয়ে কাটলে কাঠের অপচয় কম হয়। এছাড়া আনাড়িভাবে গাছ কাটলে অনেক সময় গাছ ভেঙ্গে যায় বা গোড়ার অংশ ফাটল ধরে। এভাবে অনেক বছর পর একটা কাঙ্ক্ষিত গাছ কাটার সময় সামান্য ভুলের জন্য মূল্যবান কাঠ নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য সঠিক পদ্ধতিতে গাছ কাটা অবশ্যই প্রয়োজন।

 

বনায়ন, বৃক্ষ কর্তন ও সংরক্ষণ

 

গাছ কাটার নিয়ম

মূলের যত কাছাকাছি গাছ কাটা যায় তা ততই ভালো। সাধারণত মাটির ১-১০ সে.মি. উপরে গাছ কাটলে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কাঠ পাওয়া যায়। তবে সবক্ষেত্রে এ নিয়ম অনুসরণ করাসম্ভব হয় না। পাহাড়ের ঢালে, কোন খাসে, বা টিলার উপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিবিন্নভাবে গাছ কাটতে হয়। যে সব গাছে কপিসিং ক্ষমতা আছে অর্থাৎ শিকড় থেকে নতুন মুকুল বের হয়, সেসব গাছ মূলের একদম কাছাকাছি কাটা উত্তম।

এ নতুন মুকুল থেকে আবার নতুন গাছ হয়। যেমন- শাল গাছ। গাছ কাটার আগে ডালপালা ছেঁটে দেয়া ভালো। কারণ এতে গাছ যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে ফেলানো যায়। কুড়াল, করাত বা উভয়ের দ্বারা একসংগে গাছ কাটা যায়। নিচে এগুলো দিয়ে গাছ কাটার পদ্ধতি আলোচনা করা হলো-

কুড়াল দিয়ে গাছ কাটা

কুড়াল দিয়ে গাছ কাটার সময় গাছ যেদিকে ফেলানো হবে প্রথমে সেদিকে মাটির ৯-১০ সে.মি. উপরে গাছের পুরত্বের ২, অংশ কেটে ফেলতে হবে। পরে এ কাটার বিপরীত দিকে ঠিক একই উচ্চতার কাটতে হবে।

বনায়ন, বৃক্ষ কর্তন ও সংরক্ষণ

 

করাত নিয়ে গাছ কাটা

করাত নিয়ে গাছ কাটার সময় গাছ যেদিকে ফেলতে হবে সেদিকে মাটির ৯-১০ সে.মি. উপরে গাছের ২/৩ অংশ কাটতে হবে। এক্ষেত্রে গাছের গোড়ার যদি করাতের চওড়ার বিগুণ বা তারও বেশি পরিমাপের হন তবে কাটা অংশে দিল বা কাঠের টুকরো ঢুকাতে হবে এবং করাত দিয়ে গাছ কেটে যেতে হবে।

এর পর এ কাটার বিপরীত দিকে একই উচ্চতার করাত দিয়ে কাটতে হবে। উল্লেখ্য যে, দিল বা কাঠের টুকরোর অবস্থান ঠিক করে গাছ পড়া নির্ধারণ করা যায়। যখন গাছ পড়ার শব্দ পাওয়া যাবে তখন করাত সরিয়ে নিতে হবে।

 

বনায়ন, বৃক্ষ কর্তন ও সংরক্ষণ

 

কুড়াল ও করাত উভয়ের দ্বারা গাছ কাটা কুড়াল ও করাত উত্তরের যারা গাছ কাটা বেশ সুবিধাজনক। এতে গাছ যেদিকে ফেলতে হবে প্রথমে সেদিকে কুড়াল দিয়ে গাছ কাটতেহবে। এরপর বিপরীত দিকে একই সমান্তরালে ৩-৪ সে.মি. উপরে করাত দ্বারা গাছ কাটতে হবে।

গাছ বেশি চওড়া হলে করাত দ্বারা কাটা অংশে খিল বা কাঠের টুকরো ব্যবহার করতে হবে। কর্তনকৃত গাছ মাটিতে পড়ার পর ডালপালা ভালোভাবে ছেটে নিয়ে মূল কান্ডকে সাধারণত: ২-২.৫ মিটার সাইজে খন্ড খন্ড করে নিতে হয়। তবে এ পরিমাপ ব্যবহারের উপর নির্ভর করে।

অর্থাৎ কি কাজে কাঠ ব্যবহার করা হবে তার উপর ভিত্তি করে কান্ডকে নির্দিষ্ট সাইজে খন্ডন করে নিতে হয়। কান্ডের এ খন্ড খন্ড অংশগুলোকে লগ বলা হয়। এ লগকে পরবর্তীতে করাতকলে নিয়ে গিয়ে ব্যবহার উপযোগী চেরাই কাঠ বা তক্তা তৈরি করা হয়।

সারমর্ম

গাছ রোপণের পর দীর্ঘদিন পর এটা কাঠ হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী হয়। মূল্যবান কাঠ যাতে গাছ কাটার সময় নষ্ট না হয় বা অপচয়া কম হয় সেজন্য সঠিক পদ্ধতিতে কুড়াল, করাত বা উভয়ের ব্যবহারে গাছ কাটা উত্তম। গাছ কাটার সময় কোন্ দিকে ফেললে আশেপাশের গাছ, ঘরবাড়ি বা কর্তনকৃত গাছের ক্ষতি হবে না সেটা পূর্বেই নির্ধারণ করে নিয়ে গাছ কাটতে হবে।

Leave a Comment