বেগুন চাষ

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বেগুন চাষ – যা কৃষিজ উৎপাদন: সবজি, ফুল, ফল চাষ এর অন্তর্ভুক্ত ।

বেগুন চাষ

 

বেগুন চাষ

 

বেগুন সারা বছর পাওয়া যায়। সবজির মধ্যে বাংলাদেশে উৎপাদনের দিক থেকে বেগুনের স্থান উল্লেখযোগ্য। তবে শীত মৌসুমে এর ফলন বেশি হয়।

জাত

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) কর্তৃক কিছু জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। সেগুলো হলো বারি বেগুন-১ (উত্তরা), বারি বেগুন-২ (তারাপুরী), বারি বেগুন-৪ (কাজলা), বারি বেগুন-৫ (নয়নতারা), বারি বেগুন-৬, বারি বেগুন-৭, বারি বেগুন-৮, বারি বেগুন-৯, বারি বেগুন-১০। এছাড়াও খটখটিয়া, ইসলামপুরী, মুক্তকেশী, চিত্রা, পুরাক্রান্তি, শিংনাথ।

জলবায়ু ও মাটি

বেগুন উষ্ণ জলাবায়ুর ফসল হলেও ফল ধারণের উপযুক্ত ১৫-২০ সে: বাংলদেশে শীত মৌসুমে এর ফলন ভালো হয়। দোআঁশ, বেলে দোআঁশ, এঁটেল দোআঁশ ও পলি মাটি বেগুন চাষের জন্য সবচেয়ে ভলো ।

বীজ বপনের সময়

বেগুনের চারা উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য জুলাই মাসের মাঝামাঝি হতে সেপ্টেম্বর মাস এবং বর্ষাকালীন বেগুন চাষের জন্য ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা হয়।

বীজ তলায় চারা উৎপাদন

বীজতলা সমপরিমাণ বালি, কম্পোষ্ট ও মাটি মিশিয়ে ঝুর ঝুরে করে তৈরি করতে হয়। গ্রীষ্মকালীন বেগুন চাষের জন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে বীজ বপন করা যায়।

বীজ হার

প্রতি হেক্টরের জন্য ১২০-১৪০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়।

জমি তৈরি

জমিতে ৪-৫টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুর ঝুরে করে করতে হয়। ভালো ফসল পেতে হলে জমি গভীর ভাবে চাষ করতে হবে।

সার প্রয়োগ ও নিয়মাবলী

 

বেগুন চাষ

 

ইউরিয়া ছাড়া সব সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। তবে গোবর জমি তৈরি প্রথম দিকে প্রয়োগ করা উত্তম। ইউরিয়া সার চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পরপর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

চারা রোপণ

বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর চারা রোপনের উপযোগী হয়। চারা কাঠির সাহায্যে েতুলতে হবে। চারা গাছের শিকড়ের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এরপর ৭৫ সেমি দূরত্বে সারিতে ৬০ সে.মি. দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হবে।

রোগ দমন

বেগুনের রোগের মধ্যে গোড়া পঁচা রোগ অন্যতম। এছাড়াও ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট ও খাটো আকৃতির পাতা রোগ দেখা যায়। গোড়া পঁচা রোগের জন্য ভিটাভেক্স-২০০ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। যাহোক নিম্নলিখিত প্রযুক্তিগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের বালাই (রোগ ও পোকা) দমন করা যায়:

  • কলম চারা ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের উইল্ট রোগ দমন করা যায়।
  • শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে অর্থাৎ একই জমিতে বেগুন/টমেটো রোপন করা যাবে না ।
  • বেগুনের মাছি পোকা দমনের জন্য ফেরোমন ও মিষ্টি কুমড়ার ফাঁদ ব্যবহার করেত হবে।
  • মুরগির পচনকৃত বিষ্ঠা ও সরিষার খৈল ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজি যেমন- বেগুন, টেমেটো, শশা, বাঁধাকপি ফসলের মাটি বাহিত রোগ দমন করা যায়।
  • রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে। যেমন- বারি বেগুন-১, বারি বেগুন-৫, বারি বেগুন-৬, বারি বেগুন-৭ ।
  • পোকার আক্রমনযুক্ত চারা রোপন করতে হবে।
  • সুষম সার ব্যবহার করতে হবে।
  • দ্রুত আগাছা দমন ও মালচিং করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ ও ফলন :

চারা রোপনের ৩০ দিন এর বেশি সময় পর ফুল আসে এবং এরও প্রায় ৩০ দিন পর ফল সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত হেক্টর প্রতি ৩০-৪৫ টন বেগুনের ফলন হতে পারে।

 

সারসংক্ষেপ

সবজির মধ্যে বেগুন একটি অতি পরিচিত জন প্রিয় সবজি। বেগুনের ফল ধারনের উপযুক্ত তাপমাত্রা ১৫-২০° সে। দোঁ-আশ ও বেলে দোঁ-আশ মাটি বেগুন চাষের জন্য ভালো। প্রতি হেক্টর ১২০-১৪০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন। বেগুনের প্রধান শত্রু ডগাও ফলছিদ্রকারী পোকা। রোগের মধ্যে গোড়া পচা অন্যতম। ফলন হেক্টর প্রতি ৩০-৪০ টন হতে পারে।

 

Leave a Comment