আজকের আমাদের আলোচনা বিষয় হলো — ভূমিক্ষয় এবং তার সংরক্ষণ পদ্ধতি। বৃষ্টি, নদী, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ক্রিয়াশীলতায় ভূমির উপরিভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ভূমিপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমশ কমে যায়। ভূমির এই ধীরগতি ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়কে ভূমিক্ষয় বলা হয়। এটি একটি প্রাকৃতিক, দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া যা পৃথিবীর ভূ-আকৃতির পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।
Table of Contents
ভূমিক্ষয় ও সংরক্ষণ পদ্ধতি
ভূমিক্ষয়
বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণ যেমন বায়ুপ্রবাহ, পানি প্রবাহ, বৃষ্টিপাত এবং অন্যান্য উপাদানের প্রভাবে ভূমির উপরিভাগের উর্বর মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ভূমিক্ষয় বলা হয়। কৃষি জমির উপরের ১৫-২০ সে.মি. গভীরতা পর্যন্ত উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো বেশি পরিমাণে সঞ্চিত থাকে। ভূমিক্ষয়ের ফলে এসব পুষ্টি উপাদানের স্থানান্তর ঘটে, যার ফলে জমি অনুর্বর হয়ে যায়। ভূমিক্ষয় প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত:
(১) পানি দ্বারা ভূমিক্ষয়:
পানির চলাচল বা দ্রুত প্রবাহের কারণে ভূমির ক্ষয়কে পানি দ্বারা ভূমিক্ষয় বলা হয়। এটি আবার পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়:
(ক) আস্তরণ বা পাত ভূমিক্ষয়
বৃষ্টিপাত বা সেচের পর যখন ভূমির পানি চারদিকে সরে যেতে থাকে, তখন মাটির উপরের স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এই ক্ষয় প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে হওয়ায় তা সহজে চোখে পড়ে না। তবে এই প্রক্রিয়ায় মাটির উপরিভাগের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান অপসারিত হয়, ফলে মাটি তার উর্বরতা হারায়। এই ধরনের ক্ষয়কে আস্তরণ বা পাত ভূমিক্ষয় বলা হয়। সাধারণত সমতল ভূমির চেয়ে সামান্য ঢালু জমিতে এটি বেশি ঘটে।
(খ) রিল ভূমিক্ষয়
পাত ভূমিক্ষয়ের একটি উন্নত পর্যায় হলো রিল ভূমিক্ষয়। মাটির উপরের স্তর ক্রমশ ক্ষয় হওয়ার ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নালা গঠন হয়। এগুলো পানি চলাচলের গতি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতায় বড় হয়ে প্রশস্ত নালা গড়ে তোলে। এই ধরনের ভূমিক্ষয়কে রিল ভূমিক্ষয় বলা হয়।
(গ) নালী ভূমিক্ষয়
যদি রিল ভূমিক্ষয় অবাধে চলতে থাকে, তবে ছোট ছোট নালাগুলো প্রতিবছর ক্ষয়ে বড় বড় নালায় পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াকে নালী ভূমিক্ষয় বলে। অধিক বৃষ্টিপাতে কয়েক বছরের মধ্যেই নালার সংখ্যা বাড়ে এবং জমি ফসল আবাদের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
(ঘ) নদীকূলের ভূমিক্ষয়
প্রবল স্রোত, ঢেউ বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে নদীর পাড় ক্ষয়প্রাপ্ত ও ভেঙে যায়। নদীতে জোয়ারের সময় এ ধরনের ভাঙ্গনের গতি বৃদ্ধি পায়। এই প্রক্রিয়াকে নদীকূলের ভূমিক্ষয় বলা হয়। নদীকূল ভূমিক্ষয় দুইভাবে ঘটে:
- নদীর ধারা নালা বা খালের পথে প্রবাহিত হয়ে নদীতে পতিত হলে, মিলনস্থলের প্রবল স্রোত নদীর দুপাড়কে ক্ষয় করে ভেঙে ফেলে।
- নদীর পাড় নিজেই স্রোতের চাপ এবং মাটির দুর্বলতার কারণে ভেঙে পড়ে, যা সাধারণত নদীর বাঁকের কাছে বেশি দেখা যায়।
(ঙ) সাগরকূলের ভূমিক্ষয়
সাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চল জলোচ্ছ্বাস ও ঢেউয়ের প্রভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। সমুদ্র উপকূলীয় দ্বীপগুলিতেও এ ধরনের ভূমিক্ষয় হতে দেখা যায়।
বায়ুর প্রবাহের কারণে জমির মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বায়ু দ্বারা ভূমিক্ষয় বলা হয়। সাধারণত উন্মুক্ত স্থান, বা যেখানে গাছপালা কম, সেখানে বায়ু দ্বারা ভূমিক্ষয় অধিক পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে মরু অঞ্চলে ভূমিক্ষয়ের প্রধান কারণ বায়ু প্রবাহই।
এই ধরনের স্থানে জমির উপরের স্তরের মাটি বায়ুর প্রবাহের কারণে স্থানান্তরিত হয়। বিশেষ করে ধূলিময় বা বেলে প্রাকৃতির মাটি বায়ুর মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও, চাষাবাদের পর যদি মাটি চূর্ণবিচূর্ণ ও মিহি হয়ে যায়, তখন বায়ুর প্রবাহ দ্বারা ভূমিক্ষয় আরও তীব্র হয়।
ভূমিক্ষয়ের অন্যান্য কারণ
পানি ও বায়ু ছাড়াও ভূমিক্ষয়ের জন্য আরও কিছু কারণ রয়েছে, যেগুলো ভূমির ক্ষয়ের মাত্রাকে প্রভাবিত করে:
১. বৃষ্টিপাত
ভূমিক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হলো বৃষ্টিপাত। বৃষ্টির তীব্রতা, ফোঁটার আকার ও পরিমাণ সরাসরি ভূমিক্ষয়ের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। বড় আকারের বৃষ্টির ফোঁটা মাটির কণাকে শক্তভাবে আঘাত করে এবং কণা পানির সাথে মিলিত হয়ে স্থানান্তরিত হয়।
ঘনঘন ও মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলে মাটির শোষণ ক্ষমতা কমে যায়। অতিরিক্ত পানির সঙ্গে মাটির কণা মিশে জমির ওপর দিয়ে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। প্রবাহমান পানির গতি যত বেশি, মাটির ক্ষয়ও তত বেশি ঘটে।
২. ভূমির ঢাল
ভূমির ঢাল ভূমিক্ষয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ঢাল যত বেশি এবং তার দৈর্ঘ্য যত দীর্ঘ, তত বেশি ভূমিক্ষয় ঘটে, কারণ ঢালু জমিতে পানির গতি বেশি হওয়ায় মাটির ক্ষয় দ্রুত হয়।
৩. মাটির প্রকৃতি
মাটির বুনন, দানাবদ্ধতা এবং জৈব পদার্থের উপস্থিতি ভূমিক্ষয়ের মাত্রায় প্রভাব ফেলে। হালকা, দানাদার এবং জৈব পদার্থসমৃদ্ধ মাটি ছিদ্রবহুল হওয়ায় বৃষ্টির পানি সহজে শোষিত হয় এবং এ ধরনের মাটির ক্ষয় কম হয়। অন্যদিকে ভারী এঁটেল জাতীয় মাটির ছিদ্রতা কম থাকায় পানি শোষণ কম হয়, ফলে অল্প বৃষ্টিতেই ভূমিক্ষয় বেশি হয়।
৪. শস্যের প্রকার
শস্যের ধরন নির্বাচন করেও ভূমিক্ষয় কমানো সম্ভব। অধিক পাতাযুক্ত ফসল যেমন চীনাবাদাম, খেশারি, বরবটি, সয়াবিন ইত্যাদির চাষাবাদে ভূমিক্ষয় কম হয়। অন্যদিকে কম পাতাযুক্ত ফসল যেমন ইক্ষু, ভুট্টা, তুলা ইত্যাদির চাষাবাদে ভূমিক্ষয় বেশি হয়। জমির প্রকৃতি বুঝে না চাষাবাদ করলে উর্বর মাটির ক্ষয় বেশি ঘটে।
৫. জমির চাষ পদ্ধতি
অসমতল বিশেষ করে পাহাড়ি জমিতে ঢালের অক্ষরেখার বিপরীতে চাষাবাদ করলে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায়। চাল বরাবর বা ঢালু জমির অনুক্রম অনুযায়ী চাষ করলে ভূমিক্ষয় কমানো যায়।
৬. অত্যধিক পশুচারণ
অত্যধিক বা অনিয়মিত পশুচারণ ভূমিক্ষয়ের আরেকটি কারণ। পশুর পায়ের চাপে জমির মাটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মাটির ওপরিভাগ অপসারিত হয়।
৭. মানব কার্যাবলী
মানব কার্যাবলী ভূমিক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। বনজঙ্গল বা মাঠ-ঘাট সাধারণত স্বাভাবিক অবস্থায় ভূমিক্ষয়ের ঝুঁকিতে থাকে না। তবে মানুষের অপরিকল্পিত গাছপালা কর্তন এবং জমি উন্মুক্ত করার ফলে ভূমিক্ষয় বেড়ে যায়।
ভূমিক্ষয়ের অপকারিতা
ভূমিক্ষয়ের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হল জমির উপরিভাগের উর্বর ও নরম মাটি অপসারণ হওয়া। সাধারণত কৃষি জমির উপরের ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার গভীরতায় উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো সমৃদ্ধ থাকে। ভূমিক্ষয়ের ফলে এই উর্বর স্তরের মাটি অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়, যা জমির উর্বরতা ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয় এবং ফলস্বরূপ ফসলের ফলন হ্রাস পায়।
এছাড়াও, ভূমিক্ষয়ের কারণে মাটি নদী, নালা ও খাল-বিলের তলদেশে জমা হতে থাকে। পানিবাহিত মাটির এই ভারী কণাগুলো জলাধারগুলোতে জমা হয়ে জলপ্রবাহ কমিয়ে দেয় এবং খাল-বিলগুলো ভরাট হয়ে যায়। এর ফলে বর্ষাকালে বন্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, কারণ জল নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে শুষ্ক মৌসুমে নদী-নালা ও খালগুলোর গভীরতা কমে যাওয়ায় নৌপরিবহন ও মৎস্য চাষের কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং কৃষিকাজে অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
ভূমিক্ষয়ের কারণে:
মাটির উর্বরতা ও ফলন হ্রাস: গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান মাটির সাথে অপসারিত হয়ে যায়, ফলে ফসলের গুণগত মান ও পরিমাণ কমে যায়।
জলাধার ভরাট: নদী, খাল ও বিল ভরাট হয়ে বন্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি: পানির চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়, যা মৎস্যজীবন ও কৃষি জলের প্রাপ্যতাকে প্রভাবিত করে।
অর্থনৈতিক ক্ষতি: ফলন হ্রাস ও অতিরিক্ত বন্যার কারণে কৃষকদের আর্থিক লোকসান হয় এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সুতরাং ভূমিক্ষয় রোধে সচেতনতা ও সঠিক নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি, যাতে কৃষি জমির উর্বরতা বজায় থাকে এবং প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট ঝুঁকি হ্রাস পায়। কৃষি উৎপাদনের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে ভূমিক্ষয়ের বিরুদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ভূমি সংরক্ষণ
আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনায় মৃত্তিকা বা মাটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিক্ষয় রোধ না করা হলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ক্ষতি হবে। প্রকৃতি এবং মানুষের অমনোযোগী কার্যকলাপ থেকে ভূমিকে সুরক্ষা দিতে দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কৃষক থেকে শুরু করে সরকারি পর্যায় পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ভূমিক্ষয় রোধ করা সম্ভব নয়।
নিচে ভূমি সংরক্ষণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:
১. পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ
বৃষ্টির পানির বেগ কমিয়ে ভূমিক্ষয় রোধ করা যায়। এর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে, যেমন:
- জমির মাঝে মাঝে প্রয়োজনীয় স্থানে আড়াআড়িভাবে ছোট ছোট আইল বা বাঁধ তৈরি করা।
- অসমতল জমি কেটে সমতল করা ও ভালভাবে চাষাবাদ করা।
- জমির ছোট ছোট নালা ভরাট করা।
- বড় নালায় আগাছা জমানো ও খুঁটি পুঁতে তার সাথে তারের জাল দিয়ে পানি প্রবাহ কমানো।
- নদীর উজানে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা।
২. পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা
কৃষিজমি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে জমিতে পানি জমে জমে ফেনাভাব সৃষ্টি হয়, যা ভূমিক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। এর প্রতিরোধে মাটির নিচে টাইল নালা তৈরি করা যেতে পারে, যাতে পানি ধীরে ধীরে নির্গত হয় এবং ক্ষয় কম হয়।
৩. পর্যাপ্ত জৈব সার প্রয়োগ
জৈব সার মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মাটির কণাগুলোকে একসাথে আটকে রাখে, ফলে মাটি সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। সঠিক পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ মাটির উর্বরতা বজায় রাখার অন্যতম উপায়।
৪. বনভূমি সৃষ্টি
বায়ুর প্রবাহ দ্বারা ভূমিক্ষয় বেশি হলে বায়ু প্রবাহের পথে সারি সারি লম্বা ও ঝোপজাতীয় গাছপালা লাগানো উচিত। এই গাছগুলো বায়ুর গতিবেগ কমিয়ে ভূমিক্ষয় রোধ করে।
৫. ধাপ চাষ (Terrace Farming)
পাহাড়ি ও ঢালু জমিতে শস্যের সারিগুলো ঢালের বিপরীতে আড়াআড়িভাবে সাজানো হয়, যা পানির সরাসরি প্রবাহ কমিয়ে ভূমিক্ষয় রোধ করে। পাহাড়ের ঢাল কেটে সিঁড়ির মতো ধাপে জমি সাজানো হয়, যাকে ধাপ চাষ বলে।
৬. খন্ড খন্ড প্লটে শস্য চাষ
অসমতল বা পাহাড়ি জমিতে এক ধরনের ফসল না চাষ করে জমিকে খন্ড খন্ড করে বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। এতে ভূমিক্ষয় কমে এবং মাটির উর্বরতা বজায় থাকে।
৭. অনিয়মিত পশুচারণ রোধ
অত্যধিক বা অনিয়মিত পশুচারণে মাটির উপরিভাগ উন্মুক্ত হয়ে যায়, যা ভূমিক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। তাই পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করে ভূমি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
৮. বাঁধ বা আইল নির্মাণ
জমির চারপাশে সুষ্ঠু বাঁধ বা আইল তৈরি করলে বৃষ্টি ও সেচের পানি জমির বাইরে সরাতে সাহায্য করে এবং ভূমিক্ষয় রোধ হয়।
ভূমি সংরক্ষণের উপকারিতা
উপায় | ভূমি সংরক্ষণের ভূমিকা |
পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ | পানির বেগ কমিয়ে মাটির ক্ষয় রোধ করে। |
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা | জমিতে পানি জমতে দেয় না, ফলে ভূমিক্ষয় কম হয়। |
জৈব সার প্রয়োগ | মাটির গঠন মজবুত করে এবং পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। |
বনভূমি সৃষ্টি | বায়ুর গতিবেগ কমিয়ে মাটির ক্ষয় রোধ করে। |
ধাপ চাষ | ঢালু জমিতে পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করে ভূমিক্ষয় কমায়। |
খন্ড খন্ড প্লটে চাষ | মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং ফসলের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করে। |
পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ | মাটির ওপরিভাগ রক্ষা করে ভূমিক্ষয় কমায়। |
বাঁধ বা আইল নির্মাণ | বৃষ্টির পানি নিয়ন্ত্রণ করে জমি ধ্বংস ঠেকায়। |
সুতরাং, বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে ভূমিক্ষয় রোধের জন্য এসব পদ্ধতি কার্যকরভাবে গ্রহণ করা হলে দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, জমির উর্বরতা বজায় থাকবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কৃষক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভূমি সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি চর্চায় গুরুত্ব দিতে হবে।
এই পাঠের সারমর্ম
- বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক কারণ যেমন- বায়ুপ্রবাহ, পানি প্রবাহ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি এবং অন্যান্য কারণে ভূমির উপরিভাগের উর্বর মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যাওয়াকে ভূমিক্ষয় বলে।
- ভূমিক্ষয় প্রধানত দুভাবে হতে পারে, যথা- পানি দ্বারা ভূমিক্ষয় ও বায়ু দ্বারা ভূমিক্ষয়।
- মাটির উপরিভাগের ১৫-২০ সে.মি. গভীরতা পর্যন্ত উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মজুদ থাকে।
- মাটিতে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংরক্ষণ ভূমিক্ষয় রোধ করা প্রয়োজন।