ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান

ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান – কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ বিষয়ের একটি পাঠ। এই পাঠটি ১ নং ইউনিটের ১.৪ নং পাঠ।

ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান

 

ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ 

 

বাংলাদেশে মোট জমির পরিমাণ প্রায় ১,৪৯,০০,০০০ হেক্টর (বি.বি.এস. ২০০০) । এ দেশের ভূভাগ বিভিন্ন খাতে ব্যবহৃত হেয়েছ।

এগুলো হলো ঃ

১। বনভূমি

২। আবাদের অনুপোযোগী জমি বাংলাদেশে মোট জমির পরিমাণ প্রায় ১,৪৯,০০,০০০ হেক্টর

৩। আবাদযোগ্য বা চাষযোগ্য জমি

 

আবাদযোগ্য জমিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা ঃ

ক) আবাদযোগ্য বা চাষযোগ্য পতিত জমি

খ) চাষকৃত ফসলী জমি ।

ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ 

চাষকৃত ফসলী জমিকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো ঃ র) বর্তমান বা চলতি পতিত জমি প্রকৃত ফসলী জমি প্রকৃত ফসলী জমিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা ঃ

ধ) এক ফসলী জমি

ন) দ্বি—ফসলী জমি

প) ত্রি—ফসলী জমি

বাংলাদেশে প্রায় ২৬,২৮,০০০ হেক্টর জমিতে বন রয়েছে যা মোট স্থলভাগের প্রায় শতকরা ১৮ ভাগের মত। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোন দেশের ২৫% বনাঞ্চল থাকা উচিত।

১। বনভূমি বাংলাদেশে প্রায় ২৬,২৮,০০০ হেক্টর জমিতে বন রয়েছে যা মোট ভূমির প্রায় শতকরা ১৮ ভাগের মত (বি.বি.এস. ২০০০)। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোন দেশের ২৫% বনাঞ্চল থাকা উচিত। বনভূমির দিক হ’তে প্রধান পাঁচটি বৃহত্তর জেলা হচ্ছে— পার্বত্য চট্টগাম, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং টাঙ্গাইল। যে সব জেলায় মোটেই বনাঞ্চল নেই সেগুলো হচ্ছে বৃহত্তর ফরিদপুর, যাশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া ও পাবনা। সাধারনভাবেই এদেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ কম তারপরেও যেভাবে অনিয়ন্ত্রিত এবং অপরিকল্পিত উপায়ে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে তা যদি রোধ না করা হয় তবে ভবিষ্যতে এ দেশ মরুভূমিতে পরিণত হ’তে পারে যার কিছু আলামত এখনই দেশের উত্তরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে।

২। আবাদের অনুপোযোগী জমি এ জমিতে বাড়ীঘর, হাট—বাজার, শহর—বন্দর, অফিস—আদালত, স্কুল—কলেজ, মস্জিদ—মন্দির, মাদ্রাসা ইত্যাদি অবস্থিত। এর পরিমাণ প্রায় ৩৪,১৫,০০০ হেক্টর যা মোট জমির শতকরা প্রায় ২৩ ভাগ (বি.বি.এস. ২০০০)।

৩। আবাদযোগ্য জমি চাষযোগ্য পতিত জমি, চলতি পতিত জমি ও প্রকৃত ফসলী জমির পরিমাণের সমষ্টি হলো আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ। আবাদযোগ্য বা চাষযোগ্য জমি বলতে প্রকৃতপক্ষে কতটুকু জমিতে ফসল আবাদ করা সম্ভব তাকে বুঝায়। চাষযোগ্য পতিত জমি, চলতি পতিত জমি ও প্রকৃত ফসলী জমির পরিমাণের সমষ্টি হলো আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ। আরও সহজভাবে বলা যায়

Capture 214 ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০০ অনুসারে এ দেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৮৮,০৩,২৩৯ হেক্টর। নিম্নে এর অন্যান্য শ্রেণীবিভাগগুলো আলোচনা করা হলো ঃ

(ক) আবাদযোগ্য বা চাষযোগ্য পতিত জমি:

বাড়ী—ঘর, হাট—বাজার, অফিস—আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ—মন্দির ইত্যাদির আশেপাশে কিছু জমি পতিত থাকে যা কিছুটা যত্ন নিলেই চাষাবাদের আওতায় আনা যায়। এরূপ জমিকে আবাদযোগ্য পতিত জমি বলে এবং এর পরিমাণ প্রায় ৩ লক্ষ হেক্টর যা মোট জমির শতকরা প্রায় ২ ভাগ। এরূপ পতিত জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে।

 

(খ) চাষকৃত ফসলী জমি চাষকৃত ফসলী জমি:

বলতে বুঝায় যে জমি চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। চাষকৃত ফসলী জমি = আবাদযোগ্য জমি Ñ আবাদযোগ্য পতিত জমি। অন্য কথায়, চাষকৃত ফসলী জমি = চলতি পতিত জমি + প্রকৃত ফসলী জমি। এর পরিমাণ প্রায় ৮৫ লক্ষ হেক্টর, যা মোট জমির শতকরা প্রায় ৫৭ ভাগ।

 

(গ) চলতি বা বর্তমান পতিত জমি:

অন্যান্য বছর আবাদ করা হলেও কোন কারণে আলোচ্য বছরে কমপক্ষে এক মৌসুমের জন্যও আবাদ করা না হলে তাকে চলতি বা বর্তমান পতিত জমি বলে। কারণগুলো হ’তে পারে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, বীজের অভাব ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রায় ৩.৪৯ লক্ষ হেক্টর চলতি পতিত জমি আছে যা কমিয়ে শুন্যতে আনতে হবে। এর পরিমাণ মোট জমির শতকরা প্রায় ২.৩৪ ভাগ।

(ঘ) প্রকৃত ফসলী জমি:

এক, দ্বি এবং ত্রি—ফসলী জমির যোগফলই হলো প্রকৃত ফসলী জমি। আমাদের দেশের প্রায় ৮১.৩৮ লক্ষ হেক্টর জমি প্রকৃত ফসলী জমির আওতাভূক্ত। এক, দ্বি এবং ত্রি—ফসলী জমির যোগফলই হলো প্রকৃত ফসলী জমি। আমাদের দেশের প্রায় ৮১.৩৮ লক্ষ হেক্টর জমি প্রকৃত ফসলী জমির আওতাভূক্ত। এর পরিমাণ মোট জমির শতকরা প্রায় ৫৪.৬১ ভাগ।

(ঙ) এক ফসলী জমি:

যে জমিতে সারা বছর একটি মাত্র ফসল জন্মানো হয় তাকে এক—ফসলী জমি বলে। আমাদের দেশে এক ফসলী জমির পরিমাণ প্রায় ৩০ লক্ষ হেক্টর। এরূপ জমির পরিমাণ ক্রমশঃ কমে আসছে। এর পরিমাণ প্রকৃত ফসলী জমির শতকরা প্রায় ৩৭ ভাগ।

(চ) দ্বি ফসলী জমি:

যে জমিতে বছরে দুটি ফসল জন্মানো হয় তাকে দ্বি—ফসলী জমি বলে। এদেশে দ্বি—ফসলী জমির পরিমাণ ৪১.৪৮ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি। এ জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর পরিমাণ প্রকৃত ফসলী জমির শতকরা প্রায় ৫১ ভাগ।

(ছ) ত্রি—ফসলী জমি:

যে জমিতে বছরে তিনটি ফসল জন্মানো হয় তাকে ত্রি—ফসলী জমি বলে । আমাদের দেশে বর্তমানে ত্রি—ফসলী জমির পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ হেক্টর। নতুন নতুন প্রযুক্তি, জাতের উদ্ভব, কৃষি উপকরণ এবং সেচ সুবিধা বৃদ্ধির ফলে এর পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। এটি প্রকৃত ফসলী জমির শতকরা প্রায় ১২ ভাগ। সর্বমোট ফসলী জমি সর্বমোট ফসলী জমি = এক ফসলী জমি + (দ্বি—ফসলী জমি ২) + (ত্রি—ফসলী জমি৩)।

খরিপ—১, খরিপ—২ এবং রবি মৌসুম মিলিয়ে এক বছরে সর্বমোট যে পরিমাণ জমিতে আবাদ করা হয় তাই সর্বমোট ফসলী জমি। সর্বমোট ফসলী জমি = এক ফসলী জমি + (দ্বি—ফসলী জমি ী ২) + (ত্রিফসলী জমি ী ৩)। বাংলাদেশে মোট ফসলী জমির পরিমাণ প্রায় ১,৪২,৭৮,১৩৮ হেক্টর (বি.বি.এস.
২০০০)।

Capture 215 ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান

কোন দেশের মোট কী পরিমাণ জমিতে কী কী ফসল আবাদ করা হয, সেগুলোর মোট উৎপাদন কত এবং প্রতি হেক্টরে সেগুলোর উৎপাদনের পরিমাণ এবং তার হিসাব সম্বন্ধীয় প্রতিবেদনকে ফসল পরিসংখ্যান বলে। দেশে কোন বছর কী পরিমাণ ধান, গম, পাট, আখ, তামাক, ডাল ও তৈল জাতীয় এবং অন্যান্য ফসল উৎপন্ন হয় তা একমাত্র ফসল পরিসংখ্যান হ’তে পাওয়া সম্ভব।

ধানের জমির মধ্যে আমন ধান ৫৮৪৩.৭ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপন্ন হয় যা মোট ধানী জমির শতকরা ৫৭ ভাগ। নিম্নের ছক (২) হ’তে দেখা যায় যে ধানই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে জন্মে। ধানের জমির মধ্যে আমন ধান ৫৮৪৩.৭ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপন্ন হয় যা মোট ধানী জমির শতকরা ৫৭ ভাগ। বোরো ধান উৎপন্ন হয় ২৫৮০.৩ হাজার হেক্টরে এবং আউশ ধান ১৬৪৯.৪ হাজার হেক্টরে। মোট ধানী জমির শতকরা ২৫.৫ ও ১৬.৪ ভাগে যথাক্রমে বোরো ও আউশ ধান উৎপন্ন হয়।

ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ 

বর্তমানে (১৯৯৩’৯৪) সর্বমোট ১০০৭৩.৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপন্ন হয় এবং মোট উৎপাদনের পরিমাণ ১৮৩০২ হাজার মেট্রিক টন। গত কয়েক বছরের খতিয়ান হ’তে দেখা যায় যে গম চাষের জমির পরিমাণ মোটামুটি স্থিতিশীল। বর্তমানে ৮৮২.২ হাজার হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন করা হয় এবং উৎপাদনের পরিমাণ ১৯০৮ হাজার মেট্রিক টন। আন্তজার্তিক বাজারে পাটের মূল্য কমে যাওয়ায় পাট চাষের জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৭৭.৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হচ্ছে এবং উৎপাদনের পরিমাণ ৮১২ হাজার মেট্রিক টন।

বর্তমানে ১৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে ৬৯৫১ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপন্ন হচ্ছে। তামাক অর্থকরী ফসল। তামাক উৎপাদনের জমি এবং উৎপাদন মোটামুটি স্থিতিশীল। ডাল ফসল ও তৈলবীজ ফসলের উৎপাদন ও জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে এবং এ দু’টি ফসলই এখন মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিদেশ হ’তে আমদানী করতে হয়। বর্তমানে ৫৪৬.৭ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ডাল ফসল এবং ৫১১.৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন তৈলবীজ ফসলের চাষ করা হয এবং উৎপাদনের পরিমাণ যথাক্রমে ৪১৭ ও ৭০০ হাজার মেট্রিক টন।

ছক — ২ ঃ প্রধান প্রধান ফসলের আবাদকৃত জমির পরিমাণ ও উৎপাদন ।

ফসলের আবাদকৃত জমির পরিমাণ ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান

 

 

Leave a Comment