ফসল-পশুপাখি-মাৎস্য কৃষিবন আন্তঃক্রিয়া

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ফসল-পশুপাখি-মাৎস্য কৃষিবন আন্তঃক্রিয়া

ফসল-পশুপাখি-মাৎস্য কৃষিবন আন্তঃক্রিয়া

 

ফসল-পশুপাখি-মাৎস্য কৃষিবন আন্তঃক্রিয়া

 

আন্তঃক্রিয়ার প্রকার

বাংলাদেশের একটি সাধারণ গ্রামে অতি সাধারণ খামার হচ্ছে ফসল, পশুপাখি, মাৎস্য ও কৃষিবন— এই চারটি অঙ্গের সংযোজিত সমাহার। আর এই চারটি অঙ্গের উপস্থিতিতে গড়ে উঠা খামার ব্যবস্থা হয় সর্বোচ্চ সম্ভাবনাময়, উৎপাদনে স্থিতিশীল এবং পরিবেশে টেকসই। এরূপ খামারে উৎপাদন প্রায় সারা বছরই হয়ে থাকে। তাই এখানে পারিবারিক বা মজুরী শ্রম দ তার সাথে ব্যবহার করা যায়।

এই চারটি অঙ্গের মধ্যকার বিভিন্ন সংযোগ হতে পারে অনেক। তবে এগুলোকে মোটামুটিভাবে নয়টি প্রকারে ব্যাখ্যা করা যায়। এগুলি হচ্ছে- জৈব-পরিবেশগত, বিনিময়, প্রতিযোগিতা, বিনিয়োগ, খাদ্য, জৈব সার, পশুশক্তি, পশু খাদ্য এবং জ্বালানী সংযোগ।

আন্তঃক্রিয়ার বিবরণ

জৈব-পরিবেশগত সংযোগ (Ecological linkage )

যে কোন একটি অঙ্গের প্রচলন (নিয়ম) যদি অন্য একটি অঙ্গকে প্রভাবিত করে তাহলে জৈব- পরিবেশগত সংযোগ হয়। যেমন- পতিত জমিতে পশু ঘাস খেয়ে মল-মূত্র ত্যাগে মাটি উর্বর হলে সেখানে পরে ফসল চাষ করা। ধান তে ধানের গোড়া বা আগাছা পচে গেলে ও পানিতে ভরে গেলে সেখানে মাছে রচাষ করা হয়। বিভিন্ন গাছের ছায়ায় পশু ঘাস খেয়ে বিশ্রাম নেয়, ছায়াযুক্ত স্থানে বিশেষ ফসল উৎপাদন হয়।

বিনিময় সংযোগ (Exchance linkage )

যে কোন দুটি খামারের মধ্যে ফসল, পশুপাখি, মাৎস্য ও কৃষিবন অঙ্গের উৎপাদিত দ্রব্য, পণ্য, উপজাত প্রভৃতির আদান-প্রদান হলে বিনিময় সংযোগ হয়। যেমন- ধান বা চালের বিনিময়ে মুরগি বা ডিম সংগ্রহ। মাছের বিনিময়ে চাল সংগ্রহ। ফল বা কাঠের বিনিময়ে ধান, দুধ বা মাছ সংগ্রহ। এরূপ অনেক হতে পারে।

প্রতিযোগিতা সংযোগ (Competition linkage )

একই সম্পদ (ভূমি, টাকা) ফসল, পশুপাখি, মাৎস্য ও কৃষিবন অঙ্গের জন্য উপযোগী হলে প্রতিযোগিতা সংযোগ হয়। এেেত্র কৃষককে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বা সমন্বিত উৎপাদনের কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়। যেমন— ফসল-মাছ, মাছ-পশুপাখি, ফসল-কৃষিবন, পশুপাখি-কৃষিবন প্রভৃতি সমন্বিত উৎপাদন কৌশল ।

বিনিয়োগ সংযোগ (Investment linkage )

একই অঙ্গের উপস্থিতি অন্য একটি অঙ্গের সৃষ্টি বা উৎপাদন বৃদ্ধি বা অস্তিত্ব টিকানোতে সহায়তা করলে বিনিয়োগ সংযোগ হয়। ফসল, পশুপাখি, মাৎস্য ও কৃষিবন অঙ্গগুলো একত্রে থাকলে এগুলি পরস্পরকে বিনিয়োগ সংযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে ।

 

ফসল-পশুপাখি-মাৎস্য কৃষিবন আন্তঃক্রিয়া

 

খাদ্য সংযোগ (Food linkage )

মানুষের খাদ্য অনেক প্রকার। তাই একই খামারে বহু অঙ্গের সম্মিলনে একটি কৃষক পরিবারের প্রধান খাদ্য ভাতসহ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বিভিন্ন ফল উৎপাদিত হয়। এখানে একটি অঙ্গ খাদ্যের দ্বারা অন্য অঙ্গগুলোর সম্পূরক ভূমিকা পালন করছে। এই বহুমুখী খাদ্য কৃষক পরিবারে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে এসব অঙ্গে বিনিয়োগ উৎসাহিত হয়।

জৈব সার সংযোগ (Manure linkage )

ফসলের অবশিষ্টাংশ ও শিকড়, পশুপাখির মল-মূত্র, মাছের উচ্ছিষ্টাংশ এসব ফসল, মাছ ও গাছপালা উৎপাদনে জৈব সাররূপে ব্যবহৃত হয়ে জৈব সার সংযোগ সৃষ্টি করে। এতে খামার তথা সামগ্রিক পরিবেশ দূষণ হতে র া পায়।

পশুশক্তি সংযোগ (Draft linkage)

ফসল উৎপাদনের চাষ, মই ও আঁচড়া দেয়ায়, বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদনে ঘানি টানায়, ই, মাড়াই কাজে, পণ্য পরিবহনে, গ্রামে গাড়ি টানায় পশু ব্যবহৃত হয়। এভাবেই ভারবাহী পশু অন্যান্য অঙ্গের সংযোগ ঘটায়। এতে গ্রামীণ কৃষি ও অর্থনৈতিক কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।

পশুখাদ্য সংযোগ (Feed and Fodder linkage )

বিভিন্ন ফসলের খড়, আগাছা, উপজাত ও উচ্ছিষ্ট, ফলের চামড়া বা উচ্ছিষ্ট, মাছের গুঁড়া, হাড়ের গুঁড়া, শস্য ইত্যাদি গৃহপালিত পশু (গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া) বা পাখির (হাঁস, মুরগি, কবুতর) খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয়ে পশুখাদ্য সংযোগ সৃষ্টি করে। এতে খামারে অবস্থিত বিভিন্ন অঙ্গের উৎপাদন খরচ কমে যায়। এভাবে বিভিন্ন অঙ্গের সমন্বয় খামার ব্যবস্থাকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।

 

জ্বালানী সংযোগ (Fuel linkage)

নিবিড় ফসল উৎপাদনকারী এলাকায় (ঘনবসতিপূর্ণ) ফসলের উচ্ছিষ্ট, খড়, গরুর বিষ্ঠা, গাছপালা, জলজ আগাছা ইত্যাদি কৃষক পরিবারে রান্নার জ্বালানীরূপে ব্যবহৃত হয়। এভাবেই জ্বালানী সংযোগ হয়ে থাকে। অন্যথায় এগুলোর অনেক কিছুই জৈব সার সংযোগে ব্যবহৃত হতো।

Leave a Comment