মুগ ডাল চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। মুগ ডালের চাষ পদ্ধতি আমাদের অনেকেরই জানা নেই। মুগ ডাল আমাদের আমিষের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করে থাকে। ডাল একটি আমিষ জাতীয় অর্থকরী ফসল। আমাদের দেশে প্রায় সব লোকই ডাল খেতে ভালবাসে। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রকারের ডালের চাষ করা হয়ে থাকে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মুগডাল। আসুন জেনে নেই মুগ ডালের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে-
Table of Contents
মুগ ডাল চাষ পদ্ধতি
মুগ ডালের জাত নির্বাচন:
আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি জাতের মুগডাল চাষ করা হয়ে থাকে। সেগুলো হল- বিনামুগ-১, বিনামুগ-৩, বিনামুগ-৪ ও বিনামুগ-৫ ইত্যাদি।
মুগ ডাল চাষের জন্য মাটির গুণাগুণ:
আমাদের দেশে প্রায় সব ধরনের মাটিতেই মুগডাল চাষ করা যায়। তবে সুনিষ্কাশিত দোআঁশ মাটিতে এই ফসল ভাল জন্মে। জমিতে যদি পানি জমে না থাকে, তবে এঁটেল মাটিতেও এর চাষ করা যায়। বেলে দোঁ-আশ ও দোআঁশ মাটিতে এই জাত চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়।
মুগ ডাল চাষের জন্য জমি প্রস্তুতকরণ:
মুগ ডাল চাষ করার জন্য জমি ভাল করে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিলে ভাল হয়। এতে বীজের অঙ্কুরোদগমের হার বেড়ে যায় এবং ফসলের ফলনও ভালো হয়।
মুগ ডালের বীজের পরিমাণ:
প্রত্যেক একর জমিতে ১৮ থেকে ২০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
মুগ ডালের বীজ বপন:
দুইভাবে মুগ ডালের বীজ বপন করা যায়। একটি হল ছিটিয়ে বীজ বোনা, অপরটি সারিবদ্ধভাবে। তবে এই দুই পদ্ধতির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে বোনা সবচেয়ে ভাল। কারণ, লাইন বা সারি করে মুগ চাষ করলে ফলন ছিটানো পদ্ধতির চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়া যায়। সারিতে বীজ বপন করলে প্রতিটি গাছ সমানভাবে বেড়ে উঠতে পারে। গাছের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য- সূর্যালোক, খাদ্য উৎপাদন ও পানি সমানভাবে পেতে পারে বলে ফলনও বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া সারি করে বুনলে মাঠে অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা করা সহজ হয়।
মুগ ডালের পরিচর্যা:
নিয়মিত পরিচর্যা করলে মুগ ডাল চাষে ভাল ফলন পাওয়া যায়। তবে ছিটানো পদ্ধতিতে বপন করা মুগে আগাছা পরিষ্কার করা বেশ কঠিন। তবুও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে যাতে করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। আর ভালো ফলন পেতে হলে অঙ্কুরোদগমের ১৫-২৫ দিনের মধ্যে কমপক্ষে একবার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
মুগ ডালে সার প্রয়োগ:
- প্রতি একর জমিতে টিএসপি সার ৩৫ থেকে ৪০ কেজি।
- প্রতি একর জমিতে বোরিকন এসিড ২.৫-৩ কেজি।
- প্রতি একর জমিতে ইউরিয়া সার ১৬ থেকে ২০ কেজি।
- প্রতি একর জমিতে এমওপি ১২ থেকে ১৫ কেজি।
চাষ শেষে সব সার প্রয়োগ করতে হবে। অপ্রচলিত এলাকায় আবাদের জন্য ২-৩ কেজি/একর অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
মুগ ডাল চাষে সেচ পদ্ধতি:
জমিতে সেচ দেওয়ার সময় মাটির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। অতিরিক্ত খরা ও জলাবদ্ধতা উভয়ই এ ফসলের জন্য ক্ষতিকর৷
মুগ ডাল সংগ্রহ:
মুগ ডাল পরিপক্ব হলেই তা সংগ্রহ করতে হবে। মুগ ডালের বীজ বপনের পর ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে মুগ ডাল সংগ্রহের উপযোগী হয়। সঠিক সময়ে ফসল সংগ্রহ করলে বেশি ফলন পাওয়া যায় ৷ মুগ ডাল সংগ্রহ করতে বেশি দেরি করলে এর ভেতরের দানা ঝরে পড়ে যায়।