মুরগির শ্রেণি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ৬ নং ইউনিটের “জাত ও বৈশিষ্ট্য”, ৬.২ নং পাঠ। পূর্বের পাঠে আমরা জেনেছি পোল্টি্র কি? আরও জেনেছি পোল্টি্রর ধারণা ও গুরুত্ব, পোল্টি্র শিল্পের বর্তমান, অবস্থা সমস্যা ও স¤া¢বনা। এই পাঠে আমরা মুরগির বিভিন্ন শ্রেণি, জাত ও উপজাত এবং এদের বৈশিষ্ট্য শিখতে পারব।
Table of Contents
মুরগির শ্রেণি, জাত ও বৈশিষ্ট্য
মুরগির শ্রেণি :
পৃথিবীর কোনো নিদিষ্ট এলাকা হতে উদ্ভুত এবং কিছু কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য সাদৃশ্যের মুরগিগুলোকে একটি শ্রেণিতে অন্তভূর্ক্ত করা হয়। যেমন— আমেরিকান শ্রেণি, এশিয়াটিক শ্রেণি, ভূমধ্যসাগরীয় শ্রেণি এবং ইংলিশ শ্রেণি। পৃথিবীর সব মুরগিকে এই চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
মুরগির জাত :
শ্রেণির অধীনে আকার ও আকৃতিতে সাদৃশ্যপূর্ণ মুরগিগুলোকে একটি জাতের অন্তভূর্ক্ত করা হয়। যেমন— লেগহর্ণ, মিনর্কা, অস্ট্রালর্প ইত্যাদি। এবার অসা যাক কোন কোন শ্রেণিতে কি কি জাত এবং উপজাত রয়েছে সেই আলোচনায়। নিম্নোক্ত সারণী সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
উদাহরণ হিসেবে এখানে বিভিন্ন শ্রেণির মুরগি থেকে অন্তত একটি করে জাত ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে।
রোড আইল্যান্ড রেড উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান:
আমেরিকার রোড আইল্যান্ড নামক স্থানে এ জাতের উৎপত্তি। এটি আমেরিকান শ্রেণীভুক্ত মুরগির জাত। বর্তমানে পৃথিবীর সব অঞ্চলে এ জাতটি পাওয়া যায়।
জাত বৈশিষ্ট্য:
১. পালকের রং লাল। চামড়ার রং হলুদ।
২. ঝুঁটি একক বা গোলাপি হয়ে থাকে। কানের লতির রং লাল।
৩. পায়ের নালায় পালক থাকে না। নালার রং হলুদ।
৪. এ জাতের মোরগের সাহায্যে দেশি মুরগির প্রজনন ঘটিয়ে সংকরমোরগ—মুরগি উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
৫. এ সংকর মোরগ—মুরগির ডিম ও মাংস বেশি হয়ে থাকে।
৬. ডিমের খোসার রং বাদামি।
উৎপাদান বৈশিষ্ট্য :
১. ডিম এবং মাংস উৎপাদনের জন্য এ মুরগির জাতটি বিশেষভাবে পরিচিত।
২. শরীরের ওজন— মোরগ ৩.৮ কেজি ও মুরগি ৩.০ কেজি।
৩. বার্ষিক ডিম উৎপাদান ক্ষমতা— প্রায় ১৮০টি। চিত্র ৬.২.১ : রোড আইল্যান্ড রেড অস্ট্রালর্প
উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান:
এই জাতের মুরগির উৎপত্তি গ্রেট ব্রিটেন। এটি ইংলিশ শ্রেণীভুক্ত মুরগির জাত। এরা ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য উপযোগী। তাই বিশ্বব্যাপী এই জাতটি বেশ জনপ্রিয়।
জাত বৈশিষ্ট্য:
১. এদের দেহ খাড়া ও লেজের দিকে ক্রমশ ঢালু, গভীর ও মজবুত হয়ে থাকে।
২. এদের মাথার ঝঁুটি একক এবং কানের লতি লাল।
৩. পায়ের নালা পালকহীন ও চামড়ার রং সাদা।
৪. পালকের রং উজ্জ¦ল ও সবুজের আভাযুক্ত কালো।
৫. ডিমের খোসার রং বাদামি।
উৎপাদান বৈশিষ্ট্য :
১. দৈহিক ওজন ২.৯—৩.৯ কেজি।
২. বার্ষিক ডিম উৎপাদান ক্ষমতা— ১৫০—২০০টি। চিত্র ৬.২.২ : অস্ট্রালর্প জাতের মুরগি লেগহর্ন
উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান:
এদের উৎপত্তিস্থল ইটালি। এটি ভূমধ্যসাগরীয় জাতের মুরগি। এই শ্রেণির মধ্যে এরা সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত। ডিম উৎপাদনের জন্য এরা বিশ্ববিখ্যাত। মুরগির জাত উন্নয়নের জন্য এটি ব্যাবহৃত হয়।
জাত বৈশিষ্ট্য:
১. এদের দেহ ত্রিভূজাকার অর্থাৎ কাঁধের দিকে চওড়া ও লেজের দিকে ক্রমশ সরু।
২. দেহ আঁটোসাঁটো ও আকারের ছোট হয়ে থাকে।
৩. এদের মাথার ঝঁুটি একক এবং কানের লতি সাদা।
৪. পায়ের নালা পালকহীন ও চামড়ার রং হলুদ।
৫. উপজাত অনুযায়ী পালকের সাদা, কালো বাব বাদামি হতে পারে।
৬. ডিমের খোসার রং সাদা।
উৎপাদান বৈশিষ্ট্য :
১. দৈহিক ওজন ২.০—২.৭ কেজি।
২. বার্ষিক ডিম উৎপাদান ক্ষমতা— ২০০—২৫০টি। চিত্র ৬.২.৩ : লেগহর্ন জাতের মুরগি ব্রাহমা
উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান:
এদের উৎপত্তিস্থল ভারতের ব্রহ্মপুত্র অঞ্চল। এটি এশিয়াটিক শ্রেণির মুরগির জাত। এরা মূলত মাংস উৎপাদনে উপযোগী। ব্রাহমা জাতের আসল নাম ছিল ‘গ্রে চিটাগাং’।
জাত বৈশিষ্ট্য:
১. এদের দেহ ভারি ও ঘন পালকে ঢাকা।
২. দেহ আঁটোসাঁটো ও আকারের ছোট হয়ে থাকে।
৩. মাথা মটর ঝঁুটিবিশিষ্ট এবং কানের লতি লাল।
৪. পায়ের নালা পালকযুক্ত, মাংসল ও হলুদ বর্ণের।
৫. চামড়ার রং হলুদ।
৬. ডিমের খোসার রং বাদামি।
উৎপাদান বৈশিষ্ট্য :
১. দৈহিক ওজন ৪.০—৫.০ কেজি।
২. ডিম উৎপাদান ক্ষমতা বেশ কম।
যদিও আমাদের দেশে মুরগির তেমন কোন উল্লেখযোগ্য জাত নেই তবে আসিল নামে এক জাতের মুরগি দেখা যায়। নিচে এ জাতটির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো।
আসল উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও চট্টগামের বিভিন্ন অঞ্চল। এরা মূলত লড়াইয়ের মুরগি। তবে মাংসের জন্যও ব্যবহৃত হয়।
জাত বৈশিষ্ট্য:
১. এই মুরগি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর ও সুঠাম।
২. মাথা মটর ঝুঁটিবিশিষ্ট।
৩. পা ও গলা বেশ লম্বা।
৪. গায়ে পালক খুব কম থাকে; পালকের সাদা, কালো, সোনালি প্রভৃতি।
৫. পায়ের নালায় পালক থাকে না।
উৎপাদান বৈশিষ্ট্য :
১. এদের দেহে বেশ মাংস থাকে এবং সুস্বাদু মাংসের জন্য এরা বিখ্যাত।
২. পূর্ণ বয়সে এদের দৈহিক ওজন ৪—৫ কেজি পর্যন্ত হয়। এরা ডিম কম দেয়।