আজ দেখবো মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা অনুশীলন, ব্যবহারিক ক্লাস। বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের প্রতিটি অধ্যায় শেষেই এইরকম ব্যবহারিক ক্লাসের উদাহরণ রয়েছে।
Table of Contents
মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা অনুশীলন, ব্যবহারিক
বাংলাদেশের ৪৬০টি থানার ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহারে সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের সাহায্যার্থে স্থান ভিত্তিক তথ্যাদি সংগ্রহের মাধ্যমে একটি পুস্তক রচনা করা হয় যা ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা বলে পরিচিত।
নির্দেশিকা অনুশীলন:
১।এলাকার ভূমিভিত্তিক কী সমস্যা ঐগুলো লিখতে হবে।
২। সমস্যা একাধিক হলেও এখানে গুরুত্ব অনুসারে তালিকায় সাজাতে হবে।
৩। নির্দেশিকা অনুশীলন করার প্রশিক্ষণ থাকলে সমস্যা কম হবে।
8। নির্দেশিকাটি ৩-৫ বার কিংবা আরও অধিক বার পড়তে হবে।
৫। বুঝতে অসুবিধা হলে কিংবা প্রশ্ন আসলে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ঢাকায় কিংবা স্থানীয় জেলা অফিসে গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তা বুঝে নিতে হবে।
৬। নির্দেশিকায় যে সকল তথ্যাবলী রয়েছে:
(ক) সাধারণ বিবরণ
(খ) মানচিত্র একক ভিত্তিক পরিশিষ্ট
(গ) এলাকার মানচিত্র ও কৃষি ভিত্তিক মৌলিক চিত্র
(ক) সাধারণ বিবরণ থেকে যে সকল তথ্য নেয়া সম্ভব :
(১) এলাকার অবস্থান ও পরিচিতি
(২) এলাকার আয়তন
(৩) প্রশাসনিক কাঠামো
(৪) জনসংখ্যা
(৫) যাতায়াত ব্যবস্থা
(৬) জলবায়ু
(৭) ভূ-প্রকৃতি ও
(৮) পানি সম্পদ
বস্তুতঃ সাধারণ বিবরণ থেকে এলাকার মানুষ, জমি, ফসল ও জীবনযাত্রার বাস্তবচিত্র চোখে ভাসে যাগবেষণা ও সঠিক উন্নয়নে প্রয়োজন।
মানচিত্রের তথ্যাবলী:
এখানে এক একটি থানায় সমগুণ সম্পন্ন এক একটি এলাকাকে উন্নয়ন এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শনাক্তকৃত এলাকাগুলোর মধ্যে ভূমি ও মাটির প্রকারভেদ, বর্তমান ভূমি ব্যবহার, কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এবং উন্নয়ন সম্ভাবনার ক্ষেত্র তুলে ধরা হয়। আবার ভূপ্রকৃতি, মাটির গুণাগুণ এবং উন্নয়ন সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে ভূমি সম্পদ উন্নয়নের একক শনাক্ত করা হয়েছে এবং এসব এককের এলাকাগত বিস্তার, সংযোজন, মৃত্তিকা ও ভূমি মানচিত্রে দেখানো হয়েছে। এককে ভূমির উঁচু নিচু প্রকারভেদ, মৃত্তিকা দল, ভূমির গুণাগুণ, ভূমি ব্যবহারের দিকদর্শন প্রদান করে।
নির্দেশিকার পরিশিষ্টে মৃত্তিকার রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা আছে। এখানে এলাকা ভিত্তিক মাটির গুণাগুণের ভিত্তিতে নিম্ন মাধ্যম ও উত্তম সার প্রয়োগের সুপারিশ রয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের মাটিতে গন্ধক এবং দস্তার অভাব পরিলক্ষিত হওয়ায় এখন যথাক্রমে জিপসাম ও জিংক অক্সাইড/জিংক সালফেট ব্যবহৃত হচ্ছে।
নির্দেশিকা ভিত্তিক সার প্রণয়ন:
সার সুপারিশের জন্য মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রদত্ত নীতিমালা/ পদক্ষেপগুলো দেয়া হলো। এগুলো অনুশীলন করুন।
১। মানচিত্রে চিহ্নিত একটি এলাকায় কোন শস্যের জন্য সার ব্যবহার সুপারিশ করা হবে, তা সে এলাকার জমির বর্তমান ব্যবহার শীর্ষক সারণী থেকে নির্ধারণ করুন।
২। এবার যে শস্যের জন্য সার সুপারিশ করা হবে এবং যে জমিতে যে ফসল বপন/রোপণ করা হবে, সে জমির গড় উর্বরতামান উক্ত এলাকার মৃত্তিকা দলের রাসায়নিক গুণাবলী শীর্ষক সারণী হতে নির্ধারণ করুন।
৩। যে শস্যের জন্য সার সুপারিশ করা হবে, তার ফলনমাত্রা পরিশিষ্ট সারণী-১ হতে নির্ধারণ করুন।
8। বিভিন্ন শস্যের জন্য মাটির উর্বরতাভেদে (নিম্ন, মধ্যম ও উত্তম) সার সুপারিশ পরিশিষ্ট সারণী ২ হতে নিরূপণ করুন।
৫। উচ্চ ফলনমাত্রার সার সুপারিশের জন্য বিএআরসি কর্তৃক প্রকাশিত ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন গাইড অনুসরণ করুন।
কীভাবে সার সুপারিশ তৈরি করবেন:
ধরা যাক, আপনাকে মানচিত্র একক-৩ এর দু’টি ভিন্ন ক্ষেতে দু’টি ভিন্ন শস্যের যেমন স্থানীয় (উন্নত) আউশ ধান এবং সরিষা (উফশী) এর জন্য সার সুপারিশ করতে হবে। আউশ ধানের মাঝারি উঁচু জমির ‘ঈশ্বরদী’ মৃত্তিকা দলের মাটির পরীক্ষার ফলাফল থেকে (সারণী-৬খ) দেখা গেল যে, ঐ মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, গন্ধক দস্তা এবং বোরনের পরিমাণ যথাক্রমে, নিম্ন মধ্যম, মধ্যম উত্তম, নিম্ন মধ্যম, মধ্যম এবং উত্তম। তাহলে এক্ষেত্রে ফলনমাত্রার স্থানীয় আউশ ধান উৎপাদনের জন্য সার সুপারিশ হবে যথাক্রমে হেক্টর প্রতি ৫০ কেজি নাইট্রোজেন, ৪০ কেজি ফসফেট, ০ কেজি পটাশ, ০ কেজি গন্ধক এবং ০ কেজি দস্তা এবং ০ কেজি বোরন ( পরিশিষ্ট সারণী-২; নির্দেশিকা পুস্তক)।
মৌজা ভিত্তিক নির্দেশিকার অনুশীলন ঃ উদাহরণ
বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট (এস.আর.ডি.আই) কর্তৃক প্রদত্ত নীতিমালা এখানে অনুশীলন করা হলো। এ নির্দেশিকাকে সর্বক্ষেত্রে মৌজাভিত্তিক ব্যবহারের পূর্বে মৌজাভিত্তিক তথ্য ও প্রতিবেদন প্রস্তুত করা প্রয়োজন। থানার ইউনিয়নভিত্তিক মৌজা মানচিত্র এবং তার বিস্তারিত তথ্যাদি সন্নিবেশিত করা হলো। নিম্নে সংক্ষেপে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্লক সুপারভাইজারগণ (বি,এস) কীভাবে তাদের ব্লকের তথ্য ও প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন তার একটি নমুনা দেয়া হলো :
১। থানা নির্দেশিকার মানচিত্র থেকে ব্লক সুপারভাইজার তার এলাকায় প্রাপ্ত মৃত্তিকা দলের তালিকা প্রস্তুত করবেন। থানায় প্রাপ্ত সব কটি মৃত্তিকা দল তার ব্লকে নাও থাকতে পারে। তিনি তার এলাকার শনাক্তকৃত দলগুলোর বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি চার্ট নির্দেশিকার পরিশিষ্ট-১ হতে প্রস্তুত করবেন।
২। ব্লকে সুপারভাইজার তার এলাকার সব কটি মৌজা মানচিত্র স্কেল ১৬ = ১ মাইল সংগ্রহ করবেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাবে, প্রাপ্ত মৌজা মানচিত্রের সাথে সরজমিনে গরমিল আছে। যেমন, কোন একটি দাগ নম্বরের প্লট বাস্তবে একাধিক ছোট ছোট প্লটে বিভক্ত। বুঝতে হবে, মৌজা মানচিত্রটি ছাপার পর ওয়ারিশান সূত্রে বা বিক্রয়ের মাধ্যমে বা বন্টনের দ্বারা ঐ প্লটটিকে একাধিক ছোট ছোট প্লটে বিভক্ত করা হয়েছে বা নতুন কোন পুকুর খনন বা বাড়ীঘর তৈরি করা হয়েছে অথবা প্রদর্শিত কোন পুকুর কিংবা বসতবাটী বর্তমানে সরজমিনে নেই।
৩। ব্লক সুপারভাইজার তার এলাকার যে কোন একটি মানচিত্রে চিহ্নিত আছে এমন একটি নির্দিষ্ট প্লট অথবা পুকুর অথবা অন্য যে কোন স্থায়ী বস্তু মৌজায় গিয়ে সরজমিনে শনাক্ত করবেন।
8। এবার চিহ্নিত বস্তু হতে কাছাকাছি যে কোন একটি প্লট শনাক্ত করবেন এবং সে জমির মালিক বা যিনি ঐ জমি সন্ধন্ধে জ্ঞাত আছেন এমন লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভূমি শ্রেণি, রবিমৌসুমে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে পানি অপসারণ অবস্থা, মাটির রস সরবরাহ ক্ষমতা, মাটির নিষ্কাশন শ্রেণি ও জমির ফসল বিন্যাস ইত্যাদি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করবেন। উদাহরণ : মাঠ পর্যায় উদাহরণ হিসেবে ঝাউডাংগা ইউনিয়নের ‘ক’ মৌজার ‘খ’ নম্বরের প্লটটি নেয়া হলো। উক্ত প্লটের কৃষক অথবা পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকের বিবৃতির ভিত্তিতে প্লটটি সম্বন্ধে নিম্নরূপ তথ্য পাওয়া গেলো ঃ
এখন কোদাল বা অগারের সাহায্যে খুঁড়ে মাটির উপরিস্তর ও নিম্নস্তরের রং, বুনট, দৃঢ়তা, প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি নিরূপণ করে চার্টের তালিকার সাথে মিলিয়ে মৃত্তিকা দলটি শনাক্ত করে দেখা গেলো যে, আলোচিত প্লটটির মৃত্তিকা দল ‘সারা’।
তারপর বি, এস, ‘খ’ দাগের প্লটটি মৌজা মানচিত্রের ওপর একটি সংকেতিক চিহ্ন বা নম্বর যথা- ১ দ্বারা চিহ্নিত করবেন এবং একটি নোট বুকে ১ নম্বর চিহ্ন লিখে উপরোক্ত প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করবেন। এর সাথে প্রতিবন্ধকতা, বর্তমান ভূমি ব্যবহার বা প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যাদিও লিখবেন।
অনুরূপভাবে ক্রমান্বয়ে জরিপের পার্শ্ববর্তী প্লটগুলো সন্বন্ধে যাবতীয় তথ্য মৌজা মানচিত্রে ও নোট বুকে চিহ্ন দিয়ে লিপিবন্ধ করবেন।
এ পদ্ধতিতে সমগ্ৰ ‘ক’ মৌজার ভূমি শ্রেণি, মৃত্তিকা দল, ফসল বিন্যাস ও প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। যেসব প্লট একই মৃত্তিকা দল বা ভূমি শ্রেণির অন্ত গর্ত সেগুলোর চতুর্দিকে লাইন টেনে চৌহদ্দী এঁকে দিতে হবে।
জরিপকারী জরিপকার্যে যত বেশি অভিজ্ঞতা লাভ করবেন, ভূমি শ্রেণি, মৃত্তিকা দল, ফসল বিন্যাস ইত্যাদির মধ্যে নিহিত কার্যকারণ সম্বন্ধগুলো তার নিকট ক্রমাগত তত সহজতর হয়ে উঠবে। পরবর্তীতে তিনি ‘ক’ মৌজার বন্যা উপদ্রুত এলাকা, খরাক্লিষ্ঠ এলাকা অথবা কোন একটি শস্যের আবাদকৃত এলাকার প্রতিবেদন প্রণয়নে অনেক বেশি আত্নপ্রত্যয়ের সাথে কাজ করতে পারবেন (নির্দেশিকা থেকে নেয়া হয়েছে)।
এখানে নির্দেশিকা অনুযায়ী বি.এস বা ব্লক সুপারভাইজার নির্দেশিকার অনুশীলন কীভাবে করবেন তা উল্লেখ করা হলো যা বিএজিএড প্রোগ্রামের ছাত্রদের জন্যও প্রযোজ্য।
সূত্র:
- মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা অনুশীলন, ব্যবহারিক, পাঠ ৫.৫, ইউনিট ৫ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি