শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি

শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি

যে সব কৃষি যন্ত্রপাতি বিদ্যুৎ বা ডিজেল দিয়ে চালিত হয় তাদেরকে শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি -বলে। বাংলাদেশে পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, পাওয়ার পাম্প, পাওয়ার স্প্রেয়ার, অগভীর নলকূপ, গভীর নলকূপ, মাড়াইযন্ত্র, প্রভৃতি শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে পাওয়ার টিলার ও সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প এ দুটোই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

পাওয়ার টিলার

পাওয়ার টিলার হলো একটি যান্ত্রিক শক্তির উৎস যার সাথে একটি কর্ষণ যন্ত্র সংযুক্ত থাকে। এর দ্বারা সাধারণত: জমি কর্ষণের কাজই বেশি করা হয়। তবে একে সেচ পাম্প চালানো, বালাইনাশক ছিটানো, কলা মাড়াই, ধান ভাঙ্গার কল চালানো, পরিবহন প্রভৃতি কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে গতশক্তির বিকল্প হিসেবে পাওয়ার টিলার ভূমি কর্ষণ ও কৃষিজাত পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন কারণে হালের বলদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এদেশে দিন দিন পাওয়ার টিলারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাওয়ার টিলারের ক্ষমতার উৎস একটি ইঞ্জিন। সামনের দিকে নাট-বল্টু দিয়ে ফ্রেমের সাথে ইঞ্জিনটি আটকানো থাকে। মিনি পাওয়ার টিলারের ক্ষেত্রে ৩-৫ অশ্বশক্তি বিশিষ্টি একটি পেট্রোল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। তবে সাধারণত ৭-১২ অশ্বশক্তি সম্পন্ন ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়।

 

শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি

 

পাওয়ার টিলারের বিভিন্ন অংশের নাম হলো- ঢাকার শ্যাফট, পার্শ্ব গ্রেট, কানা প্রতিরোধক ঢাকনা, বিজার ড. পিছনের ঢাকা আটকানোর হাতল, স্টিয়ারিং ক্লাচ লিভার, প্রধান হাতল, এক্সিলারেটিং লিভার, সাহায্যকারী হাতল, গতি পরিবর্তন লিভার, মেইন ব্লাড লিভার, স্ট্যান্ড লিভার, ম্যাজিক বার, টেনশন পুলি, স্ট্যান্ড, প্রটেক্টর, ইঞ্জিন পুলি, মেইনগুলি – বেল্ট, টুল বক্স, ল্যাম্প চেন্ত সুইচ, টায়ার, রোটারি টিলার ইত্যাদি।

পাওয়ার টিলার চালানোর আগে কী করতে হয় তা জেনে নেয়া প্রয়োজন। এবার দেখা যাক কাজগুলো কী?

১। পাওয়ার টিলারটি সমতল জায়গায় রাখতে হবে যাতে ইঞ্জিনটি মাটির সমান্তরালে থাকে।

২। পানির ট্যাংকের ক্যাপটি খুলে পানির পরিমাণ দেখে নিতে হবে। পানি না থাকলে বা কম থাকলে পরিষ্কার পানি দিয়ে তা পূর্ণ করে নিতে হবে।

৩। জ্বালানি ট্যাংকের ক্যাপ খুলে ডিজেলের পরিমাণ দেখতে হবে। ডিজেল না থাকলে বা কম পরিমাণে থাকলে ডিজেল দিয়ে তা পূর্ণ করে নিতে হবে।

৪। ইঞ্জিনের ডিপস্টিকটি খুলে নিয়ে মরিলের পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে। ইঞ্জিনে এমন পরিমাণ মবিল থাকতে হবে যাতে ডিপস্টিকটি লাগালে মরিলের মাত্রা ডিপস্টিকের উচ্চমাত্রা ও নিমাত্রার নাগের মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকে।

সতর্কতা

১। ডিজেল ও মবিলে যাতে ধুলোবালি, ময়লা বা পানি না থাকে।

২। ডিজেল ও মবিল ঢালার পাত্রটিও যাতে ধূলোবালি ও পানিযুক্ত থাকে।

৩। পাওয়ার টিলার চালানোর আগে অবশ্যই ডিজেল, মবিল ও পানির পরিমাণ পরীক্ষা করে নিতে হবে।

 

শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি

 

সেন্টিফিউগাল পাম্প

এটা পাওয়ার পাম্প নামে পরিচিত। বাংলাদেশে পানি সেচের জন্য বিভিন্ন ধরনের শক্তিচালিত পাম্প ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মধ্যে নদী-নালা খালবিল ও পুকুর-ডোবা থেকে পানি উত্তোলনের জন্য সেন্টিফিউগাল পাম্পই বেশী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এদেশে অগভীর নলকূপে যে পাম্প ব্যবহার করা হয় সেটিও সেন্টিফিউগাল পাম্প। সেন্টিফিউগাল পাম্প হচ্ছে একটি ঘূর্ণায়মান যন্ত্র যা দুটো অংশের সমন্বয়ে গঠিত।

অংশ দুটো হচ্ছে- ইম্পেলার (ঘূর্ণায়মান অংশ) ও পাম্প কেসিং (স্থির অংশ)। চাকতির ন্যায় এক বা একাধিক ইম্পেলার পাম্প শ্যাফটের সঙ্গে লাগানো থাকে। বিয়ারিংযুক্ত শ্যাফট বৈদ্যুতিক মটর বা ইঞ্জিন দিয়ে খুবালে ইম্পেলার তার সাথে সাথে ঘুরতে থাকে। এ পাম্পে ইম্পেলার বন্ধ প্রকোষ্ঠে ঘুরে পানিকে কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত করে। পরবর্তীতে পানিকে কেন্দ্রাতিক বল প্রয়োগ করে কেসিং থেকে ডিসচার্জ পাইপে নিক্ষেপ করে।

 

শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি

 

কার্যপ্রণালী :

চালু করার পূর্বে পাম্প পানি দিয়ে ভর্তি করা হয় এবং ইম্পোর ঘুরানো হয়। পানি ইম্পেলারের সাথে সাথে ঘুরতে থাকে এবং উচ্চ গতিবেগ প্রাপ্ত হয়। কেন্দ্রাতিক বল পানিকে বাইরের দিকে নিক্ষেপ করে। এতে পানির প্রবেশ পথে শূন্যতা সৃষ্টি হন এবং

বাইরের বায়ুচাপ পানি উৎস থেকে পাইপে প্রবেশ করে। পাম্প কেসিং এ প্রবিষ্ট পানির উচ্চ গতিবেগ উচ্চ চাপে পরিণত হয় এবং ডিসচার্জ পাইপের ভিতর দিয়ে পানি সেচ নালায় গিয়ে পৌঁছায়। এ ধরনের পাম্প ৭.৫ মিটার থেকে কম গভীরতার পানি তুলতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পাম্প চালু করার পূর্বে সাকশন পাইপ ও কেসিং পানি দিয়ে ভর্তি করে নিতে হয়। এ কাজকে প্রাইমিং বলা হয়।

সতকতা

১। অস্বাভাবিক আওয়াজ বা কালো দুয়া বের হলে পাম্প বন্ধ করতে হবে।

২। পাম্প চালানোর আগে ডিজেল ও মরিলের পরিমাণ পরীক্ষা করে নিতে হবে।

৩। পাম্প ও পানি উৎসের মাঝখানের জায়গায় উপর উচ্চতা ৩২ ফুট বা ১০ মিটারের কম হতে হবে।

৪। ঢিলেঢালা পোশাক পরে পাম্প চালানো যাবে না। এতে দুর্ঘটানার আশঙ্কা থাকে।

সারমর্ম

প্রধানত কৰ্ষণ কাজের জন্য পাওয়ার টিলার ব্যবহৃত হয়। তবে পাওয়ার টিলার দ্বারা সেচ পাম্প চালানো, বালাইনাশক ছিটানো, ফসল মাড়াই, ধান ভাঙ্গার কল চালানো, পরিবহন প্রভৃতি কাজ করা যায়। এর প্রধান প্রধান অংশ হচ্ছে জ্বালানি ট্যাংক, পানির ট্যাংক, ক্র্যাংক কেস, ক্র্যাংক শ্যাফট, ফ্রেম বাস্পার কর্ষণ ইউনিট প্রভৃতি। সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের প্রধান অংশ হলো দুটো-ইম্পেলার ও পাম্প কেসিং। এ পাম্প হলো পানি সেচের একটি যন্ত্র।

Leave a Comment