শুকনা ও ভিজা মাটিতে কর্ষণ ও বীজতলা তৈরি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় শুকনা ও ভিজা মাটিতে কর্ষণ ও বীজতলা তৈরি

শুকনা ও ভিজা মাটিতে কর্ষণ ও বীজতলা তৈরি

 

শুকনা ও ভিজা মাটিতে কর্ষণ ও বীজতলা তৈরি

 

শুকনো ও ভিজা মাটিতে কর্ষণ ও বীজতলা তৈরি

মাটির আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে জমিকে শুকনো অবস্থায় কিংবা ভিজা অবস্থায় কর্ষণ করা হয় । আমাদের দেশে বছরের বিভিন্ন সময় জমির আর্দ্রতা বিভিন্ন রকম থাকে। আবার জমির অবস্থানের উপর নির্ভর করেও মাটি শুকনো অথবা ভিজা হতে পারে। জমির অবস্থান উঁচু হলে মাটির আর্দ্রতা কম থাকা স্বাভাবিক। অপর দিকে জমির অবস্থান নিচু হলে বছরের অধিকাংশ সময় তা পানি দ্বারা সিক্ত থাকতে পারে।

ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য ফসল। এটি একটি অদ্বিতীয় ফসল যা শুকনো ও ভিজা উভয় জমিতে চাষ করা যায়। এজন্য আমাদের পরিবেশ পরিস্থিতিতে শুকনো ও ভিজা জমির প্রস্তুতি সম্পর্কে বেশি। করে জানার অবকাশ রয়েছে। অথচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেখানে ধান চাষ করা হয় না – সেখানে ভিজা জমির প্রস্তুতি ও গুণাবলী সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় ।

এদেশে সাধারণত ধান চাষের জন্য দুটি পদ্ধতিতে জমি তৈরি করা হয়। এর একটি শুকনো জমি তৈরি আর অন্যটি ভিজা কাদাময় জমি তৈরি। পৃথকভাবে এ দুটি পদ্ধতি নিচে আলোচিত হলো:

শুকনো জমি তৈরি

আউশ ধান চাষের জন্য শুকনো জমি তৈরি করে বীজ সরাসরি মাঠে বুনে দেয়া হয়। রোপা আমন বা বোরো ধান কাটার পর সাধারণত মার্চ মাসের দিকে অথবা মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাতের পরপরই জমিতে প্রথম লাঙল চাষ দেয়া হয়। ঐ সময়ে জমিতে যখন ‘জো’ আসে তখনই এই চাষ দেবার উৎকৃষ্ট সময়। এ সম্পর্কে কৃষি জমি ও ভূমি কর্ষণ ইউনিটে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

আউশ ধানের বীজ সরাসরি মাঠে বোনার জন্য ৫-৬ বার লাঙল ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হয়। সাধারনত প্রতি লাঙল চাষ ও আড়াআড়ি লাঙল চাষের পরপরই মই দিতে হয়। আগাছা ও পূর্ববর্তী ফসলের আবর্জনা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয় অথবা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। যদি প্রথম চাষ ও বীজ বোনার সময়ের দৈর্ঘ্য খুব সংকীর্ণ হয়, তবে এসব আবর্জনা জোগাড় করে পুড়িয়ে ফেলাই ভাল। তা না হলে আবর্জনা পচনের সময় অঙ্কুরিত চারার তি করতে পারে। বীজের সঙ্গে মাটির সংযুক্তি নিবিড় হওয়ার জন্য জমির কর্ষাবস্থা উত্তম হওয়া উচিত। যদি বীজ বোনার পরপরই বৃষ্টি হয় তাহলে বীজ ও মাটির সংযুক্তি সমস্যা দেয়া দেয় না ।

আউশ ধানের জন্য শুকনো কর্ষিত জমিতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা উচিত:

১. ভালো হতে মাঝারি ধরনের কর্ষাবস্থা থাকতে হবে যার ফলে বীজ নিবিড়ভাবে মাটির সাথে সংযুক্ত থাকে এবং এর অংকুরোদগম সহজতর হয় ।

২. শিকড় মাটিতে ভালোভাবে বিস্তার লাভের জন্য কর্ষণের প্রয়োজনীয় গভীরতা বজায় থাকতে হবে।

৩. জমিকে আগাছা ও পূর্ববর্তী ফসলের আবর্জনা থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

৪. মাঝারি নিচু জমিতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ‘আইল’ থাকা উচিত।

৫. কর্ষণের পর জমিতে কোন অকর্ষিত ফালি থাকবে না

৬. বীজের অঙ্কুরোদগম ও চারা বৃদ্ধির জন্য মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে।

ভিজা কাদাময় জমি তৈরি

রোপা আমন ও বোরো ধান চাষের জন্য ভিজা কাদাময় জমি তৈরি করা হয়। জমিতে ৪-৫ বার আড়াআড়ি লাঙ্গল চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করা হয়। প্রথম ২ বার লাঙল চাষ ও মই দেয়া হয় জমিতে জৈব পদার্থ, আগাছা ও অন্যান্য আবর্জনা মাটির সাথে মিশিয়ে দেবার জন্য। একে জাবর দেয়া বলা হয়। এরপর নরম কাদাময় জমি তৈরির জন্য পরবর্তী চাষগুলো দেয়া হয়।

রোপা আমন ধানের জন্য কমপ ে রোপণের ১৫ দিন পূর্বে চাষ শুরু করা উচিত। এই সময়ের মধ্যে জৈব পদার্থ পঁচে এমন একটা অবস্থায় আসে যখন পচনশীল জৈব পদার্থ হতে অ্যামোনিয়া নির্গত হয় যা রোপণকৃত চারার জন্য গ্রহন উপযোগী ।

আর যদি সময় ১৫ দিনের কম হয় তাহলে আংশিক পচনশীল জৈব পদার্থ হতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, জৈব এসিড এবং অন্যান্য অবায়বীয় পচনশীল দ্রব্য নির্গত হতে পারে যা রোপণকৃত চারার জন্য তিকর হতে পারে। বোরো মৌসুমে এ সময়ের দৈর্ঘ্য ১৫ দিনের বেশি হওয়া উচিত। কেননা এই সময় অর্থাৎ ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা কম থাকায় জৈব পদার্থ পচনের হার কম হয়ে থাকে।

ভিজা কাদাময় মাটি তৈরির সময় জমিতে পানির উচ্চতা কম থাকা উচিত। এ ধরণের জমিতে লাঙল চাষ ও মই দিয়ে থকথকে কাদাময় জমি তৈরি করা যায়। আর যদি অধিক পানির জন্য জমি ডুবে থাকে তাহলে চাষী লাঙল ফালির সঠিক স্থান ঠিক দেখতে পারে না। ফলে অকর্ষিত জমির ফালি থেকে যেতে পারে এবং ভালোভাবে জমি তৈরি হয় না।

ভালোভাবে তৈরি ভিজা কাদাময় জমির নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা উচিত :

১. জৈব পদার্থ যেমন- আগাছা, পূর্ববর্তী ফসলের খড় ও আবর্জনা সম্পূর্ণভাবে পচে মাটির সাথে মিশে যায়।

২. জমি কর্দমাক্ত এবং সুষমভাবে জমিতে পানি বিরাজ করে।

৩. আইল শক্তভাবে বাঁধা থাকবে এবং স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ও সেচের পানির উপচে পড়া বাধাগ্রস্থ হবে।

৪. পানির গভীরতা এরকম থাকবে যাতে রোপণের পর চারা ডুবে না যায়।

৫. মাটি থকথকে কাদাযুক্ত হলে চারা রোপণ সহজতর হবে।

৬. জমিতে পানি ধরে রাখার জন্য শক্ত লাঙল স্তরে (Plough pan) কোন ভাঙ্গনের সৃষ্টি হবে না ।

ছক ১: শুকনো ও ভিজা মাটিতে জমি তৈরির তুলনামূলক চিত্র

 

শুকনা ও ভিজা মাটিতে কর্ষণ ও বীজতলা তৈরি

শুকনা ও ভিজা মাটিতে কর্ষণ ও বীজতলা তৈরি

 

জমিতে বীজ বপন ও চারা রোপণের জন্য জমি তৈরি ছাড়াও ধানের চারা তৈরিতে শুকনো ও ভিজা উভয় পদ্ধতিতেই বীজতলা তৈরি করা হয়। ধানের চারা তৈরির জন্য বীজতলা তৈরি সম্পর্কিত তত্ত্ব ও তথ্য ৩.৭ নং ব্যবহারিক পাঠে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।

Leave a Comment