কৃষি উন্নয়নে সমবায়ের ভুমিকা ও সমবায় আইন – বইটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ইউনিট – ১৮, পাঠ – ১৮.৩ এর একটি পাঠ। কৃষি উন্নয়নে সমবায়ের ভূমিকা বাংলাদেশের কৃষির বর্তমান সমস্যা হলো- স্বপ্নজমি, অধিক জনসংখ্যা, জমি খন্ডে খন্ডে বিভক্ত হওয়ার উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা, উপকরণের ক্ষ্মতা, নিম্ন উৎপাদনশীলতা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধে অক্ষমতা ইত্যাদি। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ খুব একটা ফলসু হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কৃষি সমবায় একটি বিরাট ভূমিকা পালন করছে। নিম্নে বিস্তারিতভাবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
Table of Contents
কৃষি উন্নয়নে সমবায়ের ভুমিকা ও সমবায় আইন
ক) উৎপাদন বৃদ্ধি ও লভ্যাংশের সমবন্টন :
আমাদের কৃষকদের খন্ড খন্ড জমিগুলো একত্রিত করে যৌথ চাষাবাদ মাধ্যমে সঠিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা। ব্যয়বহুল কৃষি প্রযুক্তি যা কৃষকদের পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে প্রচলন করা সম্ভব নয় যেমন গভীর নলকূপ স্থাপন, পানির পাম্প ক্রয়, স্বল্প খরচে ভূমি কর্ষণের জন্য ট্রাক্টর সংগ্রহের মতো অধিক পুজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রসমূহ সমবায়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সহজ। ফলে উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং সমবায়ের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে লভ্যাংশ নিজেদের মধ্যে সমবন্টনের মাধ্যমে পরস্পর লাভবান হওয়া।
খ) ঋণ প্রদান :
সমবায় সমিতির মাধ্যমে সহজ শর্তে প্রাতিষ্ঠানিক উৎসসমূহ থেকে ঋণ পাওয়া সহজ। ক্ষুদ্র চাষীরা ব্যক্তি উদ্যোগে ঋণ পাওয়ার জন্য মহাজন, ফড়িয়া বা অন্য অর্থাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে হয়রানি হওয়ার সম্ভাবনা লাঘব হয় ।
গ) সঞ্চয়ে উদ্ধুদ্ধ করা :
সমবায় সমিতির উদ্যোগে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে সদস্যদের একটি তহবিল গঠনে সাহায্য করে। এ তহবিল পরবর্তীতে নানান ধরণের আয় বর্ধক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে পারে।
ঘ) পণ্য বিক্রয় :
জমিতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রয় করার ক্ষেত্রে ব্যক্তি কৃষক অধিকাংশ ক্ষেত্রে নায্যমূল্য পায় না। সমবায় সমিতির মাধ্যমে নায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করার মাধ্যমে লাভবান হওয়া সম্ভব।
ঙ) বীমা প্রবর্তন :
প্রাকৃতিক দূযোর্গে ক্ষুদ্র কৃষক প্রায়শই সর্বশান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে সমবায় সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারী—বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে শস্য বীমা প্রবর্তন করে দূযোর্গকালীন ক্ষয়ক্ষতির ধকল সামলানো সম্ভব হয়।
চ) সমম্বিত সেচ ব্যবস্থার প্রর্বতন :
সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন বা ভাড়াভিত্তিতে সময়মত সেচ দেয়া সম্ভব।
ছ) যান্ত্রিক চাষাবাদ প্রচলন :
ভূমি একত্রীকরণের মাধ্যমে স্বল্প খরচে যান্ত্রিক চাষাবাদ পদ্ধতি প্রর্বতন করে ফসলের উৎপাদন বহুগুন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
জ) কুটির শিল্পের প্রসার :
সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণ করে কৃষকরা ছোট ছোট কুটির শিল্প স্থাপন করে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে পারে।
ঝ) স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ :
সমবায় সমিতির গঠনের মাধমে গ্রামীণ জনপরিদ যেখানে চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল সেখানে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা সুবিধা পৌছে দিতে পারে। তাছাড়া সমবায় সমিতির মাধ্যম বয়স্ক শিক্ষার প্রচলন করে নিরক্ষরতামুক্ত সমাজ গঠনে সহায়তা প্রদান করতে পারে।
সমবায় আইন:
কৃষি সমবায় সমিতিসমূহ সরকারের সমবায় আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। সমবায় আইনের বিভিন্ন ধারা—উপধারার মাধ্যমে সমিতির কার্যাবলী পরিচালিত হয়। সমবায় আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিধিসমূহ হলো—
ক) কৃষি সমবায় বা সমিতির একটি নির্দিষ্ট নাম থাকবে।
খ) সমিতির একটি কার্যালয় থাকবে।
গ) সমবায় সমিতির গঠনতন্ত্র সমবায় অধিদপ্তর কতৃর্ক নিবন্ধিত হতে হবে।
ঘ) সমবায় সমিতির একটি ব্যবস্থাপনা থাকবে।
ঙ) সমিতির নিদিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকবে।
চ) সমবায় সমিতির সদস্যদের চাদা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
সমবায় সমিতিগুলোর গঠনতন্ত্রে কিছু মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ করা একান্ত প্রয়োজনীয়। নিম্নে নীতিমালাসমূহের উপর আলোকপাত করা হলো —
ক) সহযোগিতার মনোভাব :
সদস্যগণের পারস্পারিক সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাবের উপর জোর দিতে হবে। কারণ এর উপর সমবায়ের সাফল্য বহুলাংশে নির্ভরশীল।
খ) একতা:
সদস্যগণের একতা সমবায়ের আসল শক্তি। একতার ভিত্তিতে কাজ করলে সাফল্য লাভ নিশ্চিত হবে।
গ) সাম্য :
সমিতির সদস্য নানান শ্রেণি পেশার হওয়াই স্বাভাবিক। তাই সকল সদস্যই সাম্যের ভিত্তিতে সমান অধিকারের নীতি অবলম্বনপূর্বক কাজ করবে।
ঘ) সততা :
সমিতির সদস্যদের সততা ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। সমিতির সাফল্য সততার উপর সার্বিকভাবে নির্ভরশীল।
ঙ) মিতব্যয়িতা :
সমিতির সদস্যদের মিতব্যয়ী হতে হবে। মিতব্যয়িতার অভ্যাসই দ্রুত উন্নতির জন্য সহায়ক হয়।
চ) গণতন্ত্র :
সমিতির সফল কাজকর্মে সমান সমানাধিকার থাকা আবশ্যক। এখানে কোন প্রকার বৈষম্য থাকলে সমিতির কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পালন সম্ভব হবে না।