কৃষি সমবায় এবং সমবায় সংগঠন

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কৃষি সমবায় এবং সমবায় সংগঠন – যা কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার এর অন্তর্ভুক্ত। বৃহৎ কোন কাজ অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে সম্মিলিত ভাবে কোন দল বা জনগোষ্ঠী বা সংগঠনের মাধ্যমে সমাধানকে সমবায় বলে সমবায়ের এ সরল ধারনা যখন কৃষি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এবং বিপননের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় তখন তাকে কৃষি সমবায় বলে।

সফলভাবে কোন কৃষি প্রযুক্তির বাস্তবায়ন এবং তা থেকে মুনাফা অর্জনই কৃষি-সমবায় সমিতির অভিষ্ট লক্ষ্য। সকল সমবায় যেহেতু ক্ষুদ্র দলের মধ্যে গড়ে উঠে, বিশেষ এলাকানির্ভরতা বা আঞ্চলিকতা-এর অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য।

বিজ্ঞানের অগ্রগতি কৃষিকেও স্পর্শ করায় এককালের লাঙ্গল নির্ভর কৃষি আজ প্রযুক্তির আর্শিবাদপুষ্ট এবং একইকৃষি-সমবায় সাথে পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। এ সবের ফলশ্রুতি একদিকে কৃষির উৎপাদন যেমন বহুগুণে বেড়েছে, অপরদিকে ঐ অধিক উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণে সৃষ্টি হয়েছে নতুন সংকট। যেমন, প্রযুক্তির ছোয়ায় বাম্পার ফলন ফলে বলেই ফসলের দাম পড়ে যায়। ক্ষেত্র বিশেষ উৎপাদন খরচও উঠে আসে না।

এ সকল অনাকাঙ্খিত সমস্যা দূরীকরণে কৃষি-সমবায় এক উৎকৃষ্ট বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। সমবায় ভিত্তিতে প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র গড়ে তুলে ফসলের দীর্ঘ মেয়াদি গুদামজাতকরণ যেমন সম্ভব তেমনি কাঙ্খিত সময়ে বাজারজাত করে অধিক মুনাফাও অর্জন সম্ভব।

কোন একজন কৃষকের পক্ষে প্রযুক্তিনির্ভর এবং ব্যয়বহুল এ সুবিধা পুরোপুরিভাবে তৈরী বা অর্জন বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে শুধুই কঠিন নয় ক্ষেত্র বিশেষ অসম্ভবও বটে। অথচ কৃষি-সমবায়ের মাধ্যমে দল গঠন করে জমি ও অন্যান্য সকল ব্যয়ভার এবং মুনাফার আনুপাতিক বন্টনের নীতিমালা কৃষিক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করতে পারে।

কৃষি সমবায় এবং সমবায় সংগঠন

 

কৃষি সমবায় এবং সমবায় সংগঠন

 

গুরুত্ব

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে কৃষি সমবায়ের গুরুত্ব অসীম। নিম্নে কৃষি সমবায়ের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-

(১) আধুনিক কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল সকল উপকরণ সংগ্রহ (যেমন, কম্বাইন্ড হারভেষ্টার), কার্যকরভাবে ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষনের জন্য সুদক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে।

(২) বহুবিদ কমল এবং বৈচিত্রময় ফসলের চাষ, নিবির চাষাবাদ, কার্যকরি শষ্য পর্যায় অবলম্বন, আইপিএম পদ্ধতিতে ফসলের ক্ষতিকর রোগবালাই ও পোকামাকড় প্রতিরোধ, ফসল কর্তন, সংগ্রহ এবং সংরক্ষনের যান্ত্রিক কৃষির প্রয়োগের জন্য কৃষি সমবায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে ।

(৩) উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মানসম্মত পরিবর্তন নিশ্চিতকরণ, সঠিক গুদামজাতকরণ এবং কাঙ্খিত সময়ে বিপণনের ক্ষেত্রে কৃষি সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ।

(৪) সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মূলধন সংগ্রহ ও পুঁজি গঠন, ক্ষেত্র বিশেষ সরকার বা অন্য উৎস হতে প্রদেয় ভর্তুকি গ্রহনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

(৫) সর্বপুরি উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারন, বিক্রয় এর মাধ্যমে উচ্চ মুনাফা অর্জন নিশ্চিত করতে পারে । বৃহৎ পরিসরে তিন ধরণের সমবায় লক্ষ করা যায়-

যান্ত্রিক পুলঃ

একটি ব্যয়বহুল কৃষি যন্ত্র, যা সাধারনত অনিয়মিতভাবে ব্যবহৃত হয় যেমন শুধুমাত্র ফসল কর্তনের সময়, সেক্ষেত্রে একটি ক্ষুদ্র কৃষক পরিবার তা ক্রয় না করে, বৃহৎপরিসরে ঐ যন্ত্রটির সকল কৃষক সম্মিলিতভাবে তা ক্রয় করে ব্যবহার করতে পারে।

 

কৃষি সমবায় এবং সমবায় সংগঠন

 

বিপণন সমবায়ঃ

একটি ক্ষুদ্র খামারে সুসম পদ্ধতিতে পন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুরত্বে পরিবহনের সময়ে লাভজনক হয় না। সেক্ষেত্রে সকল ক্ষুদ্র খামারের উৎপাদিত পন্য সমবায়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করে বিপণনের জন্য প্রেরণ করা যেতে পারে।

ঋণ ইউনিয়নঃ

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যাংকে ঋণের উচ্চ সুদ, স্বল্প ঋণের অপ্রাপ্যতা কিংবা ঋণ প্রাপ্তিকালে কৃষকের প্রাপ্তি বিলম্বিত করে। এসব ক্রান্তিকাল মোকাবেলায় কৃষকবৃন্দ একটি তবহিল গঠন করতে পারে যা সদস্য কৃষককে বিনা সুদে কিংবা স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করতে পারবে। এ সকল পদক্ষেপ বিপর্যয়কালীন সময়ে অত্যাবশ্যকীয় কৃষি উপকরণ যেমন, বীজ বা কৃষি যন্ত্রপাতি।

 

সারসংক্ষেপ

কৃষি খামারে বৃহৎ কোন কাজ অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে সমাধান করাকে কৃষি সমবায় বলে । কৃষি | সমবায়কে যান্ত্রিক পুল, বিপনন সমবায় ও ঋণ ইউনিয়ন, এ তিন বৃহৎ পরিসরে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। কৃষির ব্যয়বহুল উপকরণ সংগ্রহে সহজলভ্যতা এবং ঐ সকল উপকরণের কার্যকর ব্যবহারে কৃষি সমবায়ের ভূমিকা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

 

Leave a Comment