দুধ দোহন হলো গাভী বা ছাগল থেকে দুধ সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া, যা কৃষিজীবী ও গৃহপালিত পশুপালকদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। হাত দিয়ে দুধ দোহন প্রথাগত এবং সহজলভ্য একটি পদ্ধতি, যা কোনো যান্ত্রিক সরঞ্জাম ছাড়াই যে কেউ করতে পারে। এই পদ্ধতিতে পশুর যত্ন, দুধের গুণগত মান রক্ষা এবং শুদ্ধতা বজায় রাখা সহজ হয়। সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতা মেনে হাত দিয়ে দুধ দোহন করলে দুধের পরিমাণ বাড়ে এবং পশুর স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। এই প্রবন্ধে আমরা হাত দিয়ে দুধ দোহনের ধাপ, প্রয়োজনীয় উপকরণ, এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা দুধ উৎপাদনে নতুনদের জন্য দারুন গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ হাত দিয়ে দুধ দোহন আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর দুগ্ধ খামার স্থাপন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।

Table of Contents
ব্যবহারিকঃ হাত দিয়ে দুধ দোহন
যে প্রক্রিয়া বা কৌশলের মাধ্যমে গাভীর ওলান থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে তাকে দুধ দোহন বলে । প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সঠিকভাবে গাভী থেকে দ্রুত দুধ দোহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এতে করে গাভী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ।
নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী প্রতিদিন দু’বার বা তিনবার দুধ দোহন করা উচিত । যখন তখন দুধ দোহন করলে দুধ উৎপাদন কমে যায় ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
ছোট ছোট দুগ্ধ খামারে এবং গ্রামাঞ্চলে কৃষকরা সাধারণত হাত দিয়ে দুধ দোহন করে থাকে । হাত দিয়ে দুধ দোহনের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। এ কোর্স বইয়ের পাঠ ২.৩-এর দুধ দোহন অংশটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ।

প্রয়োজনীয় উপকরণ
নীচে হাত দিয়ে দুধ দোহনের প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ সংশোধিত তালিকা এবং প্রতিটির কাজ সহ টেবিল দেয়া হলো:
| উপকরণের নাম | কাজ/ব্যবহার |
|---|---|
| ১. দুগ্ধবতী গাভী | দুধ দোহনের প্রধান উৎস, সুস্থ এবং পরিচ্ছন্ন গাভী দুধ উৎপাদনে বেশি ফলপ্রসূ। |
| ২. পরিষ্কার দুধের পাত্র | দুধ সংগ্রহের জন্য ব্যবহার হয়; পাত্রটি ঝলমলে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে। |
| ৩. এ্যান্টিসেপটিক লোশন/নিমপাতার গরম পানি | গাভীর উরু ও মুতির পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা হয়, যাতে জীবাণু সংক্রমণ কমে। |
| ৪. সাবান ও পরিষ্কার পানি | দুধ দোহনের আগে হাত পরিষ্কার করার জন্য অপরিহার্য। |
| ৫. শুকনো নরম কাপড় | হাত ও গাভীর দুধ দোহনের স্থান মুছে পরিষ্কার রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। |
| ৬. তোয়ালে বা টুপি | দুধ দোহনের সময় মাথা ঢেকে রাখা বা পরিবেশ থেকে দূষণ রোধে ব্যবহৃত হতে পারে। |
| ৭. ব্যবহারিক খাতা | দুধ দোহনের সময় পর্যবেক্ষণ ও তথ্য লিপিবদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয় (যেমন দুধের পরিমাণ, সময় ইত্যাদি)। |
| ৮. দুধ দোহনের জন্য সঠিক স্থান | পরিষ্কার, হাওয়া চলাচলযুক্ত ও ছায়াযুক্ত স্থান যেখানে গাভী আরামদায়কভাবে দুধ দোয়া যায়। |

হাত দিয়ে দুধ দোয়ানো কাজের ধারা:
| কাজের ধাপ | বর্ণনা ও উদ্দেশ্য |
|---|---|
| পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করুন | মাটির ও ধূলার সংস্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং দুধে অশুচিতা এড়ানো। |
| প্রয়োজনবোধে নখ কেটে নিন | নখের নিচে ময়লা বা জীবাণু থাকতে পারে, যা দুধে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। |
| তোয়ালে বা টুপি দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন | চুল পড়ে দুধে মিশে যেতে পারে, তাই সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে। |
| গাভীর ওলান ও বাঁট অ্যান্টিসেপটিক লোশন বা নিমপাতার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করুন | ব্যাকটেরিয়া ও ময়লা দূরীকরণে সাহায্য করে, যা দুধের গুণগত মান রক্ষা করে। |
| শুকনো নরম কাপড় দিয়ে ওলান ও বাঁট মুছে নিন | ভেজা থাকলে দুধের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, শুকিয়ে নিতে হবে। |
| হাত ভেজা থাকলে কাপড় দিয়ে মুছে নিন | ভেজা হাত দুধ দোহনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই হাত শুকনো রাখতে হবে। |
| বাছুর দিয়ে বাঁট চুষান অথবা হাত দিয়ে ওলান ম্যাসেজ করুন | গাভীর স্রোত উত্তেজিত করার জন্য, যাতে দুধ সহজে বের হয়। |
| পূর্ণহস্ত পদ্ধতি বা দু’আঙ্গুলের সাহায্যে দুধ দোহন করুন | দুধ সহজে এবং সম্পূর্ণভাবে সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি। |
| বাঁটে দুধ আসার ৫-৭ মিনিটের মধ্যে সমস্ত দুধ দোহন করুন | সময়মত দুধ দোহন না করলে দুধ কম পাওয়া বা গাভীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। |
| পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যবহারিক খাতায় লিখুন | কাজের ধারাবাহিকতা ও রেকর্ড রাখার জন্য প্রয়োজন। |
| ব্যবহারিক খাতাটি টিউটরকে দেখান ও সই নিন | কাজের প্রমাণ ও মূল্যায়নের জন্য। |
অতিরিক্ত পরামর্শ:
দুধ দোহনের আগে এবং পরে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
দুধ সংগ্রহের স্থান পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
দুধ দোহনের সময় গাভীকে শান্ত ও আরামদায়ক রাখতে হবে।
