আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – জলবায়ু ও কৃষি আবহাওয়া। জলবায়ু হচ্ছে কোনো এলাকা বা ভৌগোলিক অঞ্চলের ৩০-৩৫ বছরের গড় আবহাওয়া।
Table of Contents
জলবায়ু ও কৃষি আবহাওয়া
এ পাঠ শেষে আপনি-
কৃষি আবহাওয়ার সংজ্ঞা লিখতে পারবেন।
• বাংলাদেশের কৃষি আবহাওয়া ভিত্তিক অঞ্চলগুলো উল্লেখ করতে পারবেন।
• জলবায়ু বলতে কী বুঝায় তা বলতে পারবেন।
• ফসল উৎপাদনে কৃষি আবহাওয়া ও জলবায়ু ভিত্তিক মৌসুমগুলো উল্লেখ করতে পারবেন।
কৃষি আবহাওয়া
কৃষি আবহাওয়া বলতে মূলত কোন স্থানের বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, সূর্যকিরণ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর চাপ ইত্যাদি নিয়ামক যা ফসল উৎপাদন ও কৃষিকাজকে নানাভাবে প্রভাবিত করে তার দৈনিক সমষ্টিগত অবস্থাকে বুঝায়। ফসল উৎপাদন সরাসরি কৃষি- আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল ।
তাই বাংলাদেশে সাধারণত আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে ফসল চাষাবাদের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ ও বায়ুর আর্দ্রতার বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। এ কারণে বিশেষ কোন অঞ্চলে নির্দিষ্ট কোন ফসল ভাল জন্মে। কৃষি -আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে তিনটি প্রধান কৃষি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। যথা-
(১) উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল : রাজশাহী বিভাগ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের উত্তরাংশ।
২) উত্তর-পূর্বাঞ্চল : ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল ।
(৩) দক্ষিণাঞ্চল : ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগসমূহের দক্ষিণাঞ্চল । এ সব অঞ্চলের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উৎপাদিত ফসল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
(১) উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল : এ অঞ্চলে শীতকালে অধিক শীত এবং গ্রীষ্মকালে অধিক গরম অনুভূত হয়। এখানকার উলে-খযোগ্য ফসল: ধান, পাট, গম, আলু, ইক্ষু, শীতকালীন শাকসবজি, আম, লিচু, তামাক, পটল, মরিচ, ডাল ইত্যাদি।
(২) উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঃ এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকে। এ অঞ্চলের প্রধান ফসলগুলো হচ্ছে- পাট, চা, আনারস, কমলালেবু, তৈলবীজ, শাকসব্জি ইত্যাদি।
(৩) দক্ষিণাঞ্চল : বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে শীতকাল ও গ্রীষ্মকালের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য তুলনামূলকভাবে কম। সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় এ অঞ্চলের বাতাসে আর্দ্রতা বেশি। বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেশি। এ অঞ্চলের প্রধান ফসল: ধান, নারিকেল, সুপারি, গোলপাতা, বিলেতি গাব, পান, কলা, পেঁয়াজ ইত্যাদি।

জলবায়ু
কোন স্থানের বা অঞ্চলের ২৫-৩০ বছরের আবহাওয়ার গড়কে ঐ স্থানের বা অঞ্চলের জলবায়ু বলে। সারা বছর যে জলবায়ুর উলেখযোগ্য পরিবর্তন হয় না তাকে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বলা হয়। বাংলাদেশের জলবায়ু অনেকটা সমভাবাপন্ন। ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষি -আবহাওয়ার সাথে সাথে জলবায়ু ও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের ফসল উৎপাদনের জন্য জলবায়ুর ভিত্তিতে সারা বছরকে প্রধান দুটি মৌসুমে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
(১) রবি মৌসুম ও
(২) খরিপ মৌসুম
এসব মৌসুমের বৈশিষ্ট্য ও প্রধান উৎপাদিত ফসল উল্লেখ করা হলোঃ
(১) রবি মৌসুম :
আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন মাস ( মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ) পর্যন্ত সময় কালকে রবি মৌসুম বলে। এ মৌসুমে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কম থাকে। বৃষ্টিপাতও কম হয়। এ সময় শীতকালীন শাকসবজি যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, গাজর, লাউ, সীম, টমেটো, আলু ইত্যাদির চাষ করা হয়। এ ছাড়া বোরো ধান, গম, ডাল ও সরিষা রবি মৌসুমের ফসল।

(২) খরিপ মৌসুম
খরিপ মৌসুমকে পুনরায় দু’ভাগে ভাগ করা হয়।
(ক) খরিপ-১: ফাল্গুন মাস হতে আষাঢ় মাস (মার্চ মাস থেকে জুলাই মাস) পর্যন্ত সময় খরিপ-১ এর অন্তর্ভুক্ত। এ সময়কালকে গ্রীষ্মকালও বলা হয়। এ সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে। মাঝে মাঝে ঝড় বৃষ্টি হয়। এ মৌসুমে আউশ ধান, পাট, ঢেঁড়শ, করলা, পটল, কাঁকরোল, বরবটি ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়। আম, জাম, কাঠাল, লিচু, পেঁপে ইত্যাদি এ মৌসুমের প্রধান ফল।
(খ) খরিপ-২ : আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র মাস (মধ্য জুলাই থেকে মধ্য অক্টোবর) পর্যন্ত সময়কাল খরিপ-২ এর অন্তর্ভুক্ত। এ মৌসুমে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকে এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এ মৌসুমকে তাই বর্ষাকাল বলে। আমন ধান ও বর্ষাকালীন শাকসবজি এ মৌসুমের প্রধান ফসল। প্রধান ফলের মধ্যে জাম্বুরা, তাল, আমলকি, কাঠাল, জলপাই উল্লেখযোগ্য।
সারমর্ম
কৃষিকাজে প্রভাব বিস্তার করে এমন কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন নির্দিষ্ট স্থানের বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, সূর্যকিরণ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুরচাপ ইত্যাদির দৈনিক সমষ্টিগত অবস্থাকে আবহাওয়া বলে। কোন স্থানের বা অঞ্চলের ২৫-৩০ বছরের কৃষি -আবহাওয়ার গড়কে ঐ স্থানের বা অঞ্চলের কৃষি জলবায়ু বলে।
কৃষি আবহাওয়ার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে তিনটি প্রধান কৃষি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। যথা- উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল। – কৃষি জলবায়ুর ভিত্তিতে সারা বছরকে প্রধান দুটি মৌসুমে ভাগ করা যায়, যথা- রবি মৌসুম ও খরিপ মৌসুম।
