আগাছা দমন ও রোগিং , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , বীজ ফসলের জমিতে অনাকাঙ্খিত কোন উদ্ভিদ জন্মালে তাকে আগাছা বলা যাবে। এই আগাছা বীজ ফসলের সাথে খাদ্য ও পানি গ্রহণে প্রতিযোগিতা করবে ও বীজ ফসলকে সুষ্ঠুভাবে বৃদ্ধি হতে দেবে না। তাই বীজ ফসলের প্লট সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। বীজ প্লটের পরিচর্যা আলোচনাকালে বিষয়টি বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বীজ উৎপাদন গাছের বংশ রক্ষার একমাত্র উপায়। তাছাড়া ফসলের ফলন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ভালো বীজ উৎপাদনের বিকল্প নেই। সাধারণ ফসল উৎপাদন পদ্ধতির চেয়ে বীজ ফসল উৎপাদন পদ্ধতি কিছুটা আলাদা।
অর্থাৎ বীজ ফসল উৎপাদন করার জন্য বিশেষ কিছু পরিচর্যা ও যত্ন নেয়া প্রয়োজন। আমরা বীজ থেকে ফসল উৎপাদন করি খাওয়ার জন্য। কিন্তু যখন বীজ হিসেবে ফসল উৎপন্ন করব তখন সতর্কতার সাথে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
আগাছা দমন ও রোগিং , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি
যেমন : ভালো বীজ ব্যবহার, উপযুক্ত স্হান ও জমি নির্বাচন, জমি সুচারুরূপে কর্ষন করা এবং মাত্রা মোতাবেক সার প্রয়োগ করা, নির্দিষ্ট ফসলের জন্য নির্দিষ্ট নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা যাতে বিজাতি বা অন্য জাতের সাথে পরাগায়ন হতে না পারে, উত্তমরূপে আগাছা দমন করা এবং সময়মত ও প্রয়োজন মাফিক কীটনাশক/বালাইনাশক স্প্রে করা যাতে বীজ ফসল পোকামাকড় বা রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত না হয়। বীজ ফসল নির্দিষ্ট সময়ে পরিপক্ক ও পুষ্ট হওয়ার পর বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
রোগিং
বীজ ফসলের জমিতে অন্য ফসল, অন্য জাত বা একই জাতের অবক্ষয় প্রাপ্ত গাছ জন্মালে সেগুলোকে তুলে ফেলে অপসারণ করাকে রোগিং বলে। বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ গুলোর উপস্হিতি বীজের বিশুদ্ধতা নষ্ট করে। পর পরাগায়নের মাধ্যমে নির্ধারিত জাতটির যাতে অবক্ষয় না হয় তার জন্য গাছে ফুল আসার আগেই যথা সম্ভব রোগিং করা উচিত। কতবার রোগিং করতে হবে তা নির্ভর করবে ফসল এবং মাঠের অবস্হার ওপর। সাধারণত সকল ফসলের বেলায় নিম্নের যে কোন স্তরে অথবা সব কটি স্তরেই রোগিং করার প্রয়োজন হতে পারে
(ক) গাছের বৃদ্ধি/ফুল আসার আগে।
(খ) ফুল আসার সময়।
(গ) ফসলের পরিপক্কতা আসার পূর্ববর্তী সময়ে।
গাছের বৃদ্ধির সময় এবং ফুল আসার আগেই সর্বপ্রথম রোগিং করা উচিত, যাতে অন্য জাতের সাথে সংক্রমিত হয়ে নির্বাচিত জাতটির বংশগত বিশুদ্ধতা নষ্ট না হয়। এ সময় নির্বাচিত জাতটির সাথে উচ্চতায়, গাছের রং এর বিভিন্নতায়, পাতার আকার ও গঠনে এবং অন্য যে কোন দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেই তা মাঠ থেকে নির্মূল করতে হবে। এমনকি একই জাতের রোগাক্রান্ত এবং বিকলাংগ গাছ সমূলে তুলে দূরে ফেলে দিতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
প্রথম রোগিং এর সময় অনাকাঙ্খিত কোন গাছ চিনতে না পারলে, দ্বিতীয় রোগিং অর্থাৎ ফুল আসার সময় সেগুলোকে নির্মূল করতে হবে। এ সময় খুব সাবধানে রোগিং করা না হলে অনাকাঙ্খিত গাছের পরাগরেনু বাতাসে ছড়িয়ে যেতে পারে। তৃতীয় এবং সর্বশেষ রোগিং ফসল পরিপক্ক হওয়ার পূর্ববর্তী সময়ে করা প্রয়োজন। এ সময় নির্বাচিত জাতটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয় এমন সব গাছ (Off type) তুলে ফেলতে হবে। জাতের বিশুদ্ধতা
রক্ষার জন্য রোগিং একটি উত্তম পদ্ধতি। ভালো বীজ উৎপাদনের জন্য ফসল ও মাঠের অবস্থাভেদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রোগিং করা আবশ্যক।
আরও দেখুন:
- বীজ উৎপাদন: স্থান নির্বাচন, জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-২ , পাঠ-২.১
- বীজের অংকুরোদগম পরীক্ষা, বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি ,ব্যবহারিক , ইউনিট-১ , পাঠ-১.৮ , পাঠ-১.৯
- বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি ,ব্যবহারিক , ইউনিট-১ , পাঠ-১.৭
- বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষা , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি ,ব্যবহারিক , ইউনিট-১ , পাঠ-১.৬
- বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা