কৃষি সমবায় এর ধারণা, উদ্দেশ্যে ও প্রকারভেদ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৮ , পাঠ – ১৮.২ , কৃষি সমবায়ের ধারণা : সমবায় হচ্ছে পারিবারিক সমঝোতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে একত্রে কাজ করার জন্য স্বাধীনভাবে গড়ে তোলা একটি সংঘ বা সমিতি। কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে সবোর্চ্চ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে যে সমবায় পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাকে কৃষি সমবায় বলে। ব্যক্তি উদ্যোগের তুলনায় কিছু সংখ্যক সমমনা ব্যক্তির যৌথ উদ্যোগে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন সহজতর হয় বিধায় কৃষি সমবায়ের ধারণা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
কৃষি সমবায় এর ধারণা, উদ্দেশ্যে ও প্রকারভেদ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৮ , পাঠ – ১৮.২
কৃষি সমবায় আধুনিক কৃষি কাজের প্রয়োজনীয় সফল উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহারে কৃষকদেরকে অধিকহারে সক্ষম করে তোলার মাধ্যমে কৃষিকাজে সর্বোচ্চ সফলতা এনে দিতে পারে। কৃষি সমবায় এমন একটি সমম্বিত কার্যক্রম যা কৃষি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন এর সফল হিসাব রক্ষা করে এবং প্রত্যেক সদস্যের বিনিয়োগের পরিমান অনুযায়ী মুনাফা বন্টনের দায়িত্বও পালন করে। সমবায়ের এই ধারণাকে আনুষ্ঠানিক রূপ প্রদানে বিভিন্ন সমাজ বিজ্ঞানীরা নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।
যেমন কালভার্ট এর মতে সমবায় হলো একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে মানুষ নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি সাধনের জন্য স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে সমঅধিকারের ভিত্তিতে একে অন্যের সহযোগিতা করে। অন্যদিকে ড. কে.এল. কাজুর্র মতে — ”সমবায় হলো এমন একটি সাংগঠনিক তৎপরতা যা আর্থিকভাবে শোচনীয় ব্যত্তিদের দ্বারা গঠিত হয় এবং তারা ব্যক্তি লাভের আশায় কাজ না করে সার্বিকভাবে সবার আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করে”। তাই সমবায়ের মূল মন্ত্র হচ্ছে ”সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে”।
কৃষি সমবায়ের উদ্দেশ্যে কৃষি সমবায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো সমবায়ের মূলনীতির ভিত্তিতে সংগঠিত কৃষকদেরকে আর্থ—সামজিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলা । কৃষি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন সমবায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত করে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের নায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে কৃষিকাজে গতিশীলতা আনয়ন করা। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের সর্বোচ্চ সুবিধা কৃষকদের জন্য নিশ্চিত করা।
কৃষি সমবায়ের প্রকারভেদ
কৃষিজীবি মানুষদের নিয়ে যে ধরণের সমবায় সংগঠন তৈরী করা হয় তাদেরকে কৃষি সমবায় সমিতি বলে। কৃষি সমবায় তিন ধরণের—
ক) কৃষি উৎপাদন সমবায় সমিতি: কৃষির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত বা নিয়োজিত কৃষক। ব্যক্তিবর্গ সমবায়ে গঠিত সমবায়কে কৃষি উৎপাদন সমবায় সমিতি বলে। সহজভাবে কৃষিউপকরণ সংগ্রহ, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, পশু সম্পদের উন্নয়ন প্রভৃতি কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য কৃষি উৎপাদন সমবায় সমিতি গঠিত হয়।
খ) সেবামূলক সমবায় সমিতি: কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উপকরণ সংগ্রহ যেমন— ভূমি কর্ষন যন্ত্রপাতি (পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, কীটনাশক ছিটানোর যন্ত্র), সেচের যন্ত্রপাতি (শক্তিচালিত পানির পাম্প), এবং কৃষি ঋণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ ধরণের সমিতি গঠিত হয়।
গ) কৃষি বিপণন সমবায় সমিতি: কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের নায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের জন্য এই ধরণের সমবায় সমিতি গঠিত হয়। এ সমিতি কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করে থাকে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে গাছ লাগানোর জন্য স্থান ভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন করে শিক্ষার্থীরা ক্লাশে উপস্থাপন করবেন।
সারসংক্ষেপ
সংঘবদ্ধভাবে কৃষি কাজ করে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনই হলো সমবায়ের মূল ধারণা। সমবায়ের মূলনীতির ভিত্তিতে সংগঠিত কৃষকদেরকে আর্থ—সামাজিকভাবে স্বনির্ভর করাই সমবায়ের প্রধান উদ্দেশ্য। কৃষি ও সমাজের সঠিক উন্নতি বিবেচনায় বিভিন্ন ধরণের সমবায় পদ্ধতির প্রচলন করা হয়েছে। যেমন কৃষি উৎপাদন সমাবায় সমিতি, কৃষি বিপণন সমবায় সমিতি, সেবামূলক সমবায় সমিতি ইত্যাদি।
আরও দেখুন :
- কৃষি ঋণ ও সমবায় , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৮, পাঠ – ১৮.১
- ফসল বিন্যাস , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.৬
- শস্য পরিকল্পনা, শস্য পঞ্জিকা ও শস্য আবর্তন , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.৫
- খামার স্থাপনের পরিকল্পনা , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.৪
- বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা