চিচিঙ্গা চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করবো আজ। চিচিঙ্গা বাংলাদেশের সকলের নিকট প্রিয় অন্যতম প্রধান গ্রীষ্মকালীন সবজি। এর অনেক ঔষধী গুণ আছে। চিচিঙ্গার ১০০ ভাগ ভক্ষণযোগ্য অংশে ৯৫ ভাগ পানি, ৩.২-৩.৭ গ্রাম শর্করা, ০.৪-০.৭ গ্রাম আমিষ, ৩৫-৪০ মিঃগ্রাঃ ক্যালসিয়াম, ০.৫-০.৭ মিঃগ্রাঃ লৌহ এবং ৫-৮ মিঃগ্রাঃ খাদ্যপ্রাণ সি আছে।

Table of Contents
চিচিঙ্গা চাষ পদ্ধতি
জলবায়ু ও মাটি:
উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় চিচিঙ্গা ভাল জন্মে। শীতের দু’ তিন মাস বাদ দিলে বাংলাদেশে বছরের যেকোন সময় চিচিঙ্গা জন্মানো যায়। সব রকম মাটিতে চিচিঙ্গার চাষ করা যায় তবে জৈব সার সমৃদ্ধ দো-আশঁ ও বেলে দো-আশঁ মাটিতে ভালো জন্মে।
জাত
বিএডিসি ‘ঝুম লং’ নামের একটি জাতের বীজ উৎপাদন করছে। এর ফল নীলাভ কালচে সবুজ ও দীর্ঘ। ফলধারী আরো একটি জাত ‘সাদা সাভারী’ নামে পরিচিত। তাছাড়া তিস্তা, তুরাগ, সুরমা, রূপসা, বিভিন্ন জাত এদেশে চাষ হয়।
জীবন কাল:
মোট জীবনকাল প্রায় পাঁচ মাস। তবে জাত ও আবহাওয়া ভেদে সময় কমবেশী হতে পারে।
উৎপাদন মৌসুম:
এদেশে চিচিঙ্গা প্রধানত খরিফ মৌসুমেই হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে যে কোন সময় চিচিঙ্গার বীজ বোনা যেতে পারে।
বীজের হার:
চিচিঙ্গার জন্য হেক্টর প্রতি ৪-৫ কেজি (১৬-২০ গ্রাম/শতাংশ) বীজের প্রয়োজন হয়।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি:
সারের নাম /মোট পরিমাণ (হেক্টর প্রতি)
মোট পরিমাণ জমি তৈরির সময় চারা রোপণের —দিন পূর্বে —–দিন পর ——দিন পর——–দিন পর
(শতাংশ প্রতি)—–(শতাংশ প্রতি)—-৭-১০—চারা রোপণের ১০-১৫ —-চারা রোপনের
৩০-৩৫—-চারা রোপনের ৫০-৫৫——-চারা রোপনের ৭০-৭৫
পচা গোবর ২০ টন ৮০ কেজি ৪০ কেজি ৫ কেজি – – – –
টিএসপি ১৭৫ কেজি ৭০০ গ্রাম ৩৫০গ্রাম ৩০ গ্রাম – – – –
ইউরিয়া ১৭৫ কেজি ৭০০ গ্রাম -১৫ গ্রাম ১৫ গ্রাম ১৫ গ্রাম ১৫ গ্রাম
এমপি ১৫০ কেজি ৬০০গ্রাম ২০০ গ্রাম ২০ গ্রাম ১৫ গ্রাম – – –
জিপসাম ১০০ কেজি ৪০০ গ্রাম ৪০০ গ্রাম – – – – –
দস্তা সার ১২.৫ কেজি ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম – – – – –
বোরাক্স ১০ কেজি ৪০ গ্রাম ৪০ গ্রাম – – – – –
ম্যাগনেশিয়াম ১২.৫কেজি ৫০ গ্রাম – ৫ গ্রাম – – – –
অক্সাইড
চিচিঙ্গার অন্তর্র্বতীকালীন পরিচর্যা:
- আগাছা সবসময় পরিষ্কার করে সাথে সাথে মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।
- খরা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। জুন-জুলাই মাস থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর আর সেচের প্রয়োজন হয় না।
- বাউনী দেয়া চিচিঙ্গার প্রধান পরিচর্যা। চারা ২০-২৫ সেমি উঁচু হতেই ১.০-১.৫ মিটার উঁচু মাচা তৈরি করতে হবে । বাউনী দিলে ফলন বেশী ও ফলের গুনগত মানও ভালো হয়।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন:
চারা গজানোর ৬০-৭০ দিন পর চিচিঙ্গার গাছ ফল দিতে থাকে। স্ত্রীফুলের পরাগায়নের ১০-১৩ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ফল আহরণ একবার শুরু হলে তা দুই আড়াই মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে চিচিঙ্গার হেক্টর প্রতি ফলন ২০-২৫ টন (৮০-১০০ কেজি/শতাংশ)
বীজ উৎপাদনে করনীয়:
চিচিঙ্গার কৃত্রিম পরাগায়ন:
বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আশেপাশে অন্য জাতের চিচিংগার গাছ থাকলে নির্বাচিত গাছের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ফোটার আগে (সকাল ৯ঃ০০ ঘটিকা থেকে দুপুর ২ঃ০০ ঘটিকার মধ্যে) পেপার ব্যাগ দ্ধারা বেধেঁ নিতে হবে। অতঃপর ফুল ফোটার পর কৃত্রিম পরাগায়ণ করতে হবে এবং পরাগায়ণ শেষে স্ত্রী ফুলটি আবার ব্যাগিং করে রাখতে হবে। ৩-৪ দিন পর ব্যাগ খুলে ফেলা যাবে। কৃত্রিম পরাগায়ণ অবশ্যই সকাল ৬ঃ০০ ঘটিকা থেকে ৯ঃ০০ ঘটিকার মধ্যেই সমাপ্ত করতে হবে।
আরও দেখুন:
- বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ সম্পর্কিত সকল তথ্য
- লাউ চাষের আধুনিক কলাকৌশল
- কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা । Essay on Science in Agriculture । প্রতিবেদন রচনা
- বাংলাদেশের কৃষি, কৃষক, কৃষি উন্নয়ন ও কৃষিপ্রযুক্তি রচনা । রচনা
- কৃষি উদ্যোক্তা রচনা। Essay on Agricultural entrepreneur । প্রতিবেদন রচনা
- কৃষি খাত [ Agriculture Sector ] গুরুকুল লাইভ
- বঙ্গবন্ধুর সরকার – কৃষি পুনর্বাসন ও ভূমি সংস্কার
- বাংলাদেশের কৃষক রচনা
- মৎস্য চাষ ব্যবস্থাপনায় যান্ত্রিকীকরণ
- পরিবর্তিত জলবায়ুতে বারো মাসের কৃষি
- বগুড়ায় পাটের ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক
- খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষিজমি সুরক্ষার প্রয়োজন : তথ্যমন্ত্রী