ডিম পাড়া মুরগির খামার স্থাপন

ডিম পাড়া মুরগির খামার স্থাপন – পাঠটি বাউবি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ইউনিট-৭ , পাঠ – ৭.৩। ডিমপাড়া মুরগির খামার স্থাপনের পরিকল্পনা যে কোনো খামার পরিকল্পনা অর্থনৈতিক লাভের জন্য করা হয়। খামার স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রথমে পরিকল্পনা করতে হবে। তাই ডিমপাড়া মুরগির খামার স্থাপনের পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ চিন্তা করে খামার স্থাপন করতে হবে।

ডিম পাড়া মুরগির খামার স্থাপন

যথা—

১. কোন ধরনের খামার

২. খাবার ডিম উৎপাদনকারী খামার না—কি বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদনকারী খামার তা চিন্তা করতে হবে

৩. মূলধন

৪. জমি নিবার্চন

৫. লাভ—ক্ষতির হিসাব

ডিম পাড়া মুরগির খামার স্থাপন , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৭ , পাঠ – ৭.৩

খামার স্থাপনের বিস্তারিত:

খামার স্থাপন ও পরিচালনার খরচ দুই খাতে বিভক্ত।

যথা— ক) স্থায়ী খরচ খ) আবর্তক বা চলমান বা চলতি খরচ

 

ক) স্থায়ী খরচ

স্থায়ী খরচের খাতওয়ারী হিসেব নিম্নরূপ—

* খামার নির্মাণকৃত জমির মূল্য।

* অন্যান্য বাসস্থান বাবদ খরচ।

* ম্যানেজারের অফিস, ডিম সংরক্ষণাগার, খাদ্য গুদাম, খাদ্য ছাড়া অন্যান্য জিনিসপত্র রাখার স্থান, শ্রমিকদের বিশ্রাম ঘর, অসুস্থ ও মৃত মুরগি রাখার জায়গা নির্মাণবাবদ খরচ।

* আসবাবপত্র ও যানবাহন ক্রয়বাবদ খরচ।

 

খ) আবর্তক খরচ

আবর্তক খরচে নিম্নবর্ণিত খাতসমূহ অন্তর্ভুক্ত। যথা—

* সুষম খাদ্যের মূল্য।

* টিকা এবং প্রতিষেধক ওষুধপত্রের মূল্য।

* খামার পরিচালনায় জনবলের বেতন—ভাতাবাবদ খরচ।

* পরিবহণ ও যাতায়াত খরচ।

* মূলধনের সুদ।

* ডিপ্রেসিয়েসন বা অপচয় খরচ।

* মেরামত খরচ।

* বিদ্যুৎ ও পানির বিলবাবদ খরচ।

 

ডিম পাড়া মুরগীর খামারের আয়:

অন্যদিকে ডিমপাড়া মুরগি হতে আয়ের খাতওয়ারী হিসাব নিম্নরূপ—

* ডিম বিক্রিবাবদ আয়।

* উৎপাদন শেষে জীবিত মুরগির বিক্রিত মূল্য।

* বিষ্ঠা বা সারের মূল্য।

* পুরনো বা অকেজো জিনিসপত্র বিক্রিবাবদ আয়।

* চটের বস্তা বিক্রিবাবদ আয়।

 

খামার স্থাপন স্থায়ী খরচ:

১. মোট ব্যবহৃত জমির মূল্য

২. মুরগি রাখার ঘর ও খামারের অন্যান্য ঘর নির্মাণবাবদ খরচ।

 

পোল্টি্র খামার 2 ডিম পাড়া মুরগির খামার স্থাপন

 

খামারের ঘরের চালা:

বাংলাদেশের পরিবেশে দোচালা বা গেবল টাইপ চালই মুরগির জন্য বেশি আরামদায়ক।

বেড়ার নমুনা ব্রয়লার ঘরের বেড়ার মতো লেয়ারের ঘরের বেড়ার উচ্চতার ১/৩ অংশ শক্ত দেয়াল, কাঠ বা বাঁশের চাটাই দিয়ে পূর্ণ করে বাতাস চলাচলের জন্য তারজালি বা বাঁশের চটি দিয়ে আড়াআড়িভাবে তৈরি করতে হবে। বেশি বাতাস বা বেশি শীত হতে মুরগিকে রক্ষার জন্য বেড়ার ফাঁকা অংশ প্রয়োজনে ঢেকে দেয়ার জন্য পলিথিন বা চটের পর্দার ব্যবস্থা করতে হবে।

মেঝের প্রকৃতি লিটার পদ্ধতিতে পালন করলে মুরগির ঘরের মেঝে পাকা হলে ভালো হয়। কাঁচা মেঝের ক্ষেত্রে শক্ত এঁটেল মাটির মেঝে হলেও চলবে। তবে এ ধরনের মেঝে বর্ষাকালে স্যঁাতসেঁতে হয়ে যেতে পারে। শুকনো বালির মেঝের ক্ষেত্রে বর্ষাকালে সমস্যা হতে পারে।

* এছাড়াও ম্যানেজারের অফিস ঘর তৈরিবাবদ প্রতি বর্গফুট (০.০৯৩ বর্গমিটার) হিসাবে মোট মূল্য।

* ডিম সংরক্ষণের ঘর তৈরিবাবদ প্রতি বর্গফুট (০.০৯৩ বর্গমিটার) হিসাবে মোট মূল্য।

* খাদ্য গুদাম তৈরির খরচ— মুরগির সংখ্যা অনুযায়ী প্রতিটি মুরগির জন্য দৈনিক ১১০—১২০ গ্রাম খাদ্যের প্রয়োজন হিসাবে কমপক্ষে ২ মাসের খাদ্য সংরক্ষণাগার তৈরির খরচ।

* বিষ্ঠা বা সার রাখার স্থান নির্মাণের খরচ।

* মৃত মুরগি পুড়িয়ে ফেলা বা পাকা গর্তে ফেলে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখার স্থান নিমার্ণবাবদ খরচ। * যানবাহন কেনাবাবদ খরচ।

 

আবর্তক খরচ এর বিস্তারিত:

ক. মুরগি সংক্রান্ত খরচ—

* একদিন বয়সের লেয়ারের বাচ্চা বা ডিমপাড়ার সম্ভাবনাময় পুলেট ক্রয়ের খরচ।

* খাদ্য খরচ— মাথাপিছু ১১০—১২০ গ্রাম ধরে।

* লিটার কেনাবাবদ খরচ।

* খাঁচায় মুরগি পালন করলে মেঝে পাকা হলেই ভালো।

খ. ঘর তৈরির সাজসারঞ্জাম বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যথা—

* বাঁশ, টিন বা বিচালি, মাটির ঘর, ইট, সিমেন্ট বা পাকা দালান ঘর।

গ. ঘর তৈরির সাজসরঞ্জাম অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট ঘর তৈরির খরচ, তা যেভাবেই ঘর তৈরি করা হোক না কেন প্রতি বর্গফুট (০.০৯৩ বর্গমিটার) হিসাবে খরচ ধরে ঘরের মোট খরচ বের করতে হবে।

ঘ. আসবাবপত্র ক্রয় বা তৈরিবাবদ খরচ—

* খাবার পাত্রের দাম।

* পানির পাত্রের দাম।

* ডিম পাড়ার বাক্সের দাম।

* ডিম রাখার ঝুড়ি কেনার জন্য খরচ।

* টিকা ও ওষুধপত্রের খরচ।

* খাদ্য সংগ্রহ, ডিম বাজারজাতকরণ ও ডিমপাড়া শেষে মুরগি বিক্রির জন্য পরিবহণ খরচ।

ঙ. খামারের জনশক্তির খরচ

* ম্যানেজারের বার্ষিক বেতনভাতা।

* অফিস স্টাফের বার্ষিক বেতনভাতা।

* শ্রমিকদের বার্ষিক বেতনভাতা।
এছাড়াও মূলধনের উপর বার্ষিক সুদ (ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে), জমিবাদে স্থায়ী খরচের অবচয়ের শতকরা হার ইত্যাদি। এভাবে যত খরচ হয় সব যোগ করে বার্ষিক খরচ/মোট খরচের হিসাব রাখতে হবে।

পোল্টি্র খামার 3 ডিম পাড়া মুরগির খামার স্থাপন

 

খামারের বার্ষিক আয়:

* ডিম বিক্রি— বার্ষিক গড়ে ৭০—৭৫% হারে উৎপাদন ধরে বর্তমান বাজার দরে ডিমের মোট মূল্য।

* শতকরা ৯৫টি মুরগির সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে এ হিসাবে ডিমপাড়া শেষে বর্তমান বাজার দরে মোট মূল্য।

* প্রতিটি মুরগি থেকে বছরে ৩০ কেজি বিষ্ঠা পাওয়া যাবে এভাবে হিসাব করে বর্তমান বাজার দরে মোট বিষ্ঠা বা সারের মূল্য।

* অকেজো আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি বিক্রিবাবদ মোট আয়।

এভাবে মোট আয় থেকে মোট ব্যয় বাদ দিয়ে প্রকৃত লাভ—লোকসান হিসাব করতে হবে।

 

আরও দেখুন :

Leave a Comment