বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি

বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি,বরবটি আমিষ সমৃদ্ধ সবজি। প্রায় সারা বছরই এটি ফলানো যায়। তবে গ্রীষ্মকালে এটি ভালো হয়। খুব বেশি শীতে আবার ভালো হয় না। বরবটি ভর্তা, ভাজি, তরকারি সব কিছুতেই সমান উপযোগী। পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। খাবারে স্বাদ বাড়ানো পাশাপাশি চমৎকার কিছু পুষ্টির উৎস এটি। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি থাকে। এটি চর্বি কমাতে ও সাহায্য করে থাকে।

বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি

 

বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি

 

আজ আপনাদের সাথে বরবটি চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব-

বরবটির জাত

বরবটি চাষ করলে ভালো জাত দেখে চাষ করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের বরবটির জাত রয়েছে। যেমন- বিএইউ বরবটি ১, কেগর নাইটি, চীনা বরবটি, ফেলন, লাল বেনী, ঘৃত কুমারি, গ্রিন লং, তকি, বনলতা ইত্যাদি। তবে কেগর নাটকী নামে একটি উন্নত জাতের বরবটি অনেক চাষ হয়ে থাকে। কেগর নাটকী জাতটি পৌষ এবং মাঘ মাস ছাড়া সারা বছরই চাষ করা যায়। বরবটির উল্লেখযোগ্য জাতের মধ্যে কেগর নাটকী ও লাল বেণী জাতের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়।

প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি নির্বাচন

অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় বরবটি ভালো জন্মে। তবে খুব বেশি শীত পড়লে বরবটি চাষ ভালো হয় না। কারণ শীতকালে বরবটি গাছের বৃদ্ধি কম হয় ও ফল কম ধরে। বরবটি উষ্ণ ও অবউষ্ণ অঞ্চলের ফসল। কিন্তু বরবটি এখন সারা বছরই চাষ করা হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতে বরবটি সবসময় চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে বরবটির চাষের জন্য বেশি উপযোগী।

চাষের সময়

বরবটির বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাস। শীতকালে বরবটির বীজ বোনা উচিত নয়।

 

বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি ১ বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি

 

বীজের পরিমাণ

প্রতি শতকে ১০০-১২৫ গ্রাম এবং প্রতি হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি।

জমি তৈরি ও বীজ বপন

বরবটি চাষের জন্য জমি হতে হবে আগাছামুক্ত ও ঝুরঝুরে মাটি। এজন্য জমি ভালোভাবে কয়েকবার চাষ দিতে হবে। জমি পরিষ্কার করে ৪ থেকে ৫টি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। তারপর মাটির ওপরে বেড ও মাদা তৈরি করে প্রত্যেক মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২-৩ হাত এবং মাদা হতে মাদার দূরত্ব হতে হবে ১ থেকে ২ হাত। একই সময় পলিব্যাগে কিছু চারা তৈরি করে রাখলে যেসব জায়গায় বীজ গজাবে না সেসব ফাঁকা জায়গায় পলিব্যাগে চারা রোপণ করে পূরণ করা যাবে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ কেজি বা প্রতি শতকে ৪০ গ্রাম বীজ লাগে।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

জৈব সার বরবটি গাছের জন্য খুবই ভালো। অল্প সময়ে অধিক ফলন পেতে হলে অন্যান্য সার ও দিতে হবে পরিমাণ মতো। যেমন টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া। এসব সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে বরবটি চাষে ইউরিয়া সার কম লাগে। এ ছাড়াও গোবর সার, জিপসাম সার, জিংক সালফেট সার ও বোরক্স সার দিতে হবে। ইউরিয়া সার বেশি দিলে গাছ ঝোপালো হয় ও ফলন কম হয়।

সেচ ব্যবস্থাপনা

জমিতে জলের যাতে অভাব না হয় সেজন্য প্রয়োজন অনুসারে শুকনার সময় জল সেচ দিতে হবে। নালার মধ্যে জল ঢুকিয়ে সেচ দিলে গাছের শিকড় সে জল টেনে নিতে পারে। এজন্য জমিতে নালা তৈরি করে দিতে হবে।

 

বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি ৩ বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি

 

আগাছা ও নিড়ানি

বৃষ্টির জল যাতে আটকে না থাকে সেজন্য নালার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। জমি সবসময় আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। বিশেষ করে গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। বরবটির গাছ বড় হলে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। জমিতে মাটির অবস্থা বুঝে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে। জমিতে জল জমে থাকতে দেওয়া যাবে না।

রোগ বালাই দমন

বরবটি গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা যায়। যেমন জাব পোকা, বিছা পোকা, মাজরা পোকা ইত্যাদি। এসকল পোকা বরবটি গাছের কচিপাতা, কাণ্ড, ফুল ও ফলের ক্ষতি করে থাকে। তাই এই সব পোকা কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এসব পোকা দমনে বাজারে বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের কীটনাশক ওষুধ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও বরবটি গাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। যেমন- এনথ্রাকনোজ রোগ, পাতায় দাগ রোগ, গাছের শিকড় ও গোড়া পচা রোগ ইত্যাদি। এসব রোগ দমন করার জন্য ও বাজারে বিভিন্ন ছত্রাকনাশক পাওয়া যায়।

ফসল সংগ্রহ ও ফলন

বীজ বোনার ৫০-৬০ দিন পর থেকেই বরবটি সংগ্রহ করা যায়। কচি অবস্থাতেই বরবটি তোলা যায়। কারণ বেশি পুষ্ট হলে সবজি হিসেবে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। আর বীজের জন্য শুটি সম্পূর্ণ পেকে গেলে সংগ্রহ করতে হবে। তবে সব শুটি একসাথে পাকে না। কয়েক বারে সংগ্রহ করতে হয়ে থাকে। শতকপ্রতি ফলন ৩০-৬০ কেজি, প্রতি হেক্টরে ফলন ১০-১২ টন।

আরও  পড়ুনঃ

Leave a Comment