বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , ইউনিট ১ , পাঠ-১.২

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , ইউনিট ১ , পাঠ-১.২ , বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশ বিষুব রেখার ২০.৩৪ ডিগ্রি থেকে ২৬.৩৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.০১ ডিগ্রি থেকে
৯২.৪১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় অবস্থিত দক্ষিণ—পূর্ব এশিয়ার একটি ছোট্ট দেশ।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , ইউনিট ১ , পাঠ-১.২

এর আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার (বি. বি. এস. ১৯৯৪)। বাংলাদেশের কিছু এলাকা অবনিরক্ষীয় এবং কিছু এলাকা নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা ও মায়ানমার, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনির হাট, গাইবান্ধা, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুর হাট জেলাসমহ অবনিরক্ষীয় ূ অঞ্চলের অন্তর্গত।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , ইউনিট ১ , পাঠ-১.২
অন্যদিকে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম, ক*বাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি জেলাসমূহ নিরক্ষীয় অঞ্চলের অন্তভুর্ক্ত। বাংলাদেশের উপকূল রেখার বর্তমান দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৪৩ কিলোমিটার। এই উপকূল ক*বাজারের দক্ষিন হ’তে রায়মঙ্গল নদীর মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের উপকূলভাগে হাতিয়া, সন্দীপ, ভোলা, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সেন্টমার্টিন প্রভৃতি দ্বীপ রয়েছে।
আবহাওয়া ও জলবায়ু

কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন নির্দিষ্ট স্থানের বায়ু মন্ডলে যে অবস্থা বিরাজ করে ঐ অবস্থাকে সেই স্থানের উক্ত সময়ের আবহাওয়া বলে। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, সূর্যালোক, আর্দ্রতা, বায়ুর গতি, কূয়াশা, তুষারপাত প্রভৃতি হলো আবহাওয়ার উপাদান। বায়ুমন্ডলের অবস্থা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয় এবং ফলে আবহাওয়াও প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়ে। কোন স্থানের বা অঞ্চলের অন্ততঃ ২৫ বৎসরের

আবহাওয়ার গড়কে ঐ স্থানের বা অঞ্চলের জলবায়ু বলে। কোন সময়ই যে জলবায়ুর উলে­খযোগ্য পরিবর্তন হয়না তাকে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে। কোন স্থানে বছরের অধিকাংশ সময় বৃষ্টিপাতযুক্ত হলে ঐ স্থানের জলবায়ু আর্দ্র হয়। অত্যাধিক ঠান্ডাও নয় আবার অত্যধিক উষ্ণও নয় এরূপ জলবায়ুকে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বলে। যে স্থানে গ্রীষ্ম কালে অত্যাধিক গরম ও শীতকালে অত্যাধিক শীত, এরূপ স্থানের জলবায়ুকে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে। সমুদ্র উপকুলবর্তী স্থানগুলোর জলবায়ু মৃদুভাবাপন্ন। এতে শীত ও গ্রীষ্মের তারতম্য কম থাকে।

তাপমাত্রা

তাপের আদি উৎস হলো সূর্য। সূর্য থেকে বিকিরণের মাধ্যমে তাপ বায়ুমন্ডল ভেদ করে আসার পথে নানাভাবে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় এ তাপ বহুলাংশে কমে যায়। সূর্য হ’তে বিকিরিত যে তাপ পৃথিবীতে আসে তাকে সৌরতাপ বলে যা বিভিন্নভাবে বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে। সৌরতাপ পৃথিবীর স্থল ও জলভাগে পতিত হওয়ায় ভূ—পৃষ্ট উত্তপ্ত হয়। পরে ভূ—ত্বক এ তাপ বিকিরন করায় বায়ুমন্ডল পূনরায় উত্তপ্ত হয়। বাংলাদেশের তাপমাত্রা মোটামুটি উষ্ণ। দেশের অধিকাংশ অঞ্চল সমতল ভূমি (৮৭%) হওয়ায় এবং দক্ষিনে সমুদ্র, উত্তরে হিমালয় পর্বত থাকায় এদেশে তত শীত বা গরম অনুভূত হয় না। তবে খরিপ মৌসুমে রবি মৌসুম অপেক্ষা তাপমাত্রা বেশি। খরিপ মৌসুমে তাপমাত্রা সাধারণতঃ ২৪ক্ক সেলসিয়াস হ’তে ৩৫ক্ক সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকে।

তবে কোন কোন সময় এ তাপমাত্রা ৪৩ক্ক সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে থাকে। তাপমাত্রা দেশের দক্ষিনাঞ্চল হ’তে উত্তরাঞ্চলে ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। শীতকালে তাপমাত্রা ৭ক্ক সেলসিয়াস থেকে ২৭ক্ক সেলসিয়াস পর্যন্ত দেখা যায়। দক্ষিনের সমুদ্র উপকূল থেকে এ তাপমাত্রা উত্তর দিকে ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। এ সময় দেশের উত্তরাঞ্চলের কোন কোন জেলায় তাপমাত্রা ৪ক্ক সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে আসে। দেশের উত্তরাঞ্চলে খরিপ মৌসুমে তাপমাত্রা বেশি হয় আবার রবি মৌসুমে এখানে তাপমাত্রা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কম থাকে। এ অঞ্চলে কম তাপমাত্রা বেশি দিন থাকে বলে কিছু কিছু ফসল যেমন: গম এখানে ভাল জন্মে।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , ইউনিট ১ , পাঠ-১.২

তাপমাত্রার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে নিম্নলিখিত তিনটি  অঞ্চলে ভাগ করা যায়:

উত্তর অঞ্চল

খরিপ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয় বৃহত্তর রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায়। ১৯৯২ সনে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৪৩ক্ক সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। মধ্যম অঞ্চল বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলা সমূহে মধ্যম তাপমাত্রা বিরাজমান থাকে। খরিপ মৌসুমে এখানে সর্বোচ্চ ৩৮—৩৯ক্ক সেলসিয়াস তাপমাত্রা হয়ে থাকে।

দক্ষিণ—পূর্বাঞ্চল বৃহত্তর বরিশাল, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলাসমূহে খরিপ মৌসুমে অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়। এসময় এসব অঞ্চলে ৩৪— ৩৫ক্ক সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজমান থাকে। বৃষ্টিপাত বারিমন্ডল থেকে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত প্রচুর পরিমানে জলীয় বাষ্প বায়ুতে ভেসে বেড়ায়। বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা তাপমাত্রার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোন কারণে বায়ুমন্ডলের

তাপমাত্রা ১০ক্ক সেলসিয়াস এর নিচে নেমে এলে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় ভূ—পৃষ্ঠে নেমে আসে যা বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত। খরিপ মৌসুমে বাংলাদেশে দক্ষিন—পশ্চিম দিক থেকে মৌসুমি বায়ু বঙ্গপোসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ফলে এই মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। রবি মৌসুমে বায়ু উত্তর—পূর্ব দিকে অবস্থিত পর্বত অঞ্চল হ’তে প্রবাহিত হয় বলে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। বাংলাদেশের মোট বৃষ্টিপাতের পাঁচ ভাগের চারভাগই হয় বর্ষাকালে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় জুনজুলাই মাসে। তবে এই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দেশের পূর্বদিক হ’তে পশ্চিম দিকে ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে।

১৯৯২ সনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চট্টগ্রাম ও সিলেটে যথাক্রমে ২২৪১ এবং ৩৫০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ঘটে যা অন্যান্য জেলার তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি। সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় রাজশাহী জেলায় যা মাত্র ৮৪৯ মিলিমিটার। সিলেট জেলার লালখালে বৎসরে দেশের সবার্পেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাত হয় (৬৪৯৬ মিমি.) এবং সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় রাজশাহী জেলার লালপুরে (১১৯৯ মিমি.)। দেশের বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ২২২ মিমি কিন্তু নভেম্বর হ’তে মার্চ মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় মাত্র ৩০ মিলিমিটার। দেশে বৃষ্টিপাত প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া সত্ত্বেও সময়মত ও পরিমাণ মত না হওয়ায় প্রত্যেক বৎসরেই জমিতে প্রয়োজনীয় রসের অভাবে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয় এবং রবি মৌসুমে সেচ ছাড়া সাফল্যজনকভাবে কোন ফসল করা সম্ভব হয়না।

বৃষ্টিাপাতের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে নিম্নলিখিত তিনভাগে ভাগ করা যায় —

* কম বৃষ্টিপাত অঞ্চল — বৃহত্তর রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চল।

* মাঝারী বৃষ্টিপাত অঞ্চল — বৃহত্তর ঢাকা ও খুলনা অঞ্চল।

* বেশি বৃষ্টিপাত অঞ্চল — বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চল। আপেক্ষিক আর্দ্রতা

কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ও চাপে কোন নিদ্দির্ষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প আছে এবং একই উষ্ণতায় ও চাপে ঐ পরিমাণ বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন হয় —এ দু’য়ের
অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে।

বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিকে আর্দ্রতা বলে। কোন স্থানের আর্দ্রতা সেই স্থানের বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ও চাপে কোন নিদ্দির্ষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প আছে এবং একই উষ্ণতায় ও চাপে ঐ পরিমাণ বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন হয় —এ দু’য়ের অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে। আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে শতকরা (%) হারে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে আর্দ্রতা শীতকাল অপেক্ষা বেশি। কারণ এ সময় তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং নদী—নালা পানিতে ভরাট থাকায় বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়।

উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য এ দেশ পাট উৎপাদনের জন্য বেশি উপযোগী। বাংলাদেশের বায়ুমন্ডলে সাধারণতঃ শতকরা ৭০—৮০ ভাগ আপেক্ষিক আর্দ্রতা দেখা যায়। এই আর্দ্রতা দিনের প্রারম্ভে বেশি থাকে। সূর্যের আলো সূর্যের আলো না থাকলে পৃথিবী এমন সবুজ সুন্দর থাকত না। সূর্যের আলোক শক্তিকে ব্যবহার করে সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরী করে যার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষসহ সকল প্রাণী নির্ভরশীল। সব গাছের জন্য সূর্যের প্রত্যক্ষ আলো বাঞ্ছনীয় নয়। চা, পান ইত্যাদি গাছের জন্য ঈষৎ ছায়ার ব্যবস্থা থাকা ভাল। সরাসরি সূর্যের আলো এসব গাছের পাতা ঝলসিয়ে দেয়।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , ইউনিট ১ , পাঠ-১.২

এজন্য চা বা পানের জমিতে যথাক্রমে শিম^ জাতীয় গাছ ও পাটশোলা কিংবা খড়কুটা দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়। আবার কোন কোন ফসল যেমন: হলূদ ছায়াযুক্ত স্থানে ভাল জন্মে। দিনের দৈর্ঘ্য যে সমস্ত উদ্ভিদ একটি নির্দিষ্টি দিন দৈর্ঘ্য বা তার আগে শীষ, ফুল, ফল বা বীজ উৎপন্ন করে তাদেরকে ছোট উদ্ভিদ বলে।

দিনের দৈর্ঘ্যের উপর আলো ও তাপমাত্রার পরিমাণ নির্ভর করে। শীতকালে ক্ষুদ্রতম দিন ১০ ঘন্টা এবং বর্ষাকলে বৃহত্তম দিন প্রায় ১৪ ঘন্টা হয়ে থাকে। দিন বড় হলে আলোর পরিমাণ বেশি হয় যদি আকাশে মেঘ না থাকে এবং কম হলে আলোর পরিমাণ কমে যায়। বড় দিন বা আলো অনেক উদ্ভিদের ফুল ও বীজ উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। উদ্ভিদ জীবনের উপর এ বিশেষ প্রক্রিয়া তথা যৌন বংশ বৃদ্ধির উপর আলোর এরূপ প্রভাব বিস্তারকে ফটোপিরিয়ডিজম বলে। গাছের জন্ম এবং বৃদ্ধির উপর দিনের দৈর্ঘে্যর সরাসরি প্রভাব রয়েছে।

কিছু কিছু গাছপালা আলোক সংবেদনশীল আবার কোন কোন গাছপালা আলোক সংবেদনশীল নয়। আলোক সংবেদনশীল গাছ ফটো পিরিয়ড কতৃর্ক প্রভাবান্বিত হয়। কিন্তু যে সকল গাছ আলোক সংবেদনশীল নয় তারা ফটো পিরিয়ড কতৃর্ক প্রভাবান্বিত হয় না। ফটো পিরিয়ডের উপর ভিত্তি করে আলোক সংবেদনশীল গাছকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যথা — ১। ছোট দিন উদ্ভিদ এবং ২। বড় দিন উদ্ভিদ ।

ছোট দিন উদ্ভিদ

যে সমস্ত উদ্ভিদ একটি নির্দিষ্টি দিন দৈর্ঘ্য বা তার আগে শীষ, ফুল, ফল বা বীজ উৎপন্ন করে তাদেরকে ছোট দিন উদ্ভিদ বলে। এই দিন দৈর্ঘ্য বিভিন্ন ফসল বা গাছের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হ’তে পারে
এবং একে ক্রিটিক্যাল দিন দৈর্ঘ্য (ঈৎরঃরপধষ ফধু ষবহমঃয) বলে। ছোট দিন উদ্ভিদ ক্রিটিক্যাল দিন
দৈর্ঘ্য বা ফটো পিরিয়ডের পরে ফুল ফল দেয় না। যেমন — পাট, সয়াবীন, ইত্যাদি।

যে সমস্ত উদ্ভিদ কেবল মাত্র কোন নির্দিষ্ট দিন দৈর্ঘে্যর পরেই ফুল, ফল দেয় তাদেরকে বড় দিন উদ্ভিদ বলে।

বড় দিন উদ্ভিদ

যে সমস্ত উদ্ভিদ কেবল মাত্র কোন নির্দিষ্ট দিন দৈর্ঘে্যর পরেই ফুল, ফল দেয় তাদেরকে বড় দিন উদ্ভিদ বলে। নির্দিষ্ট ফটো পিরিয়ডের পূর্বে এসকল উদ্ভিদ কোন ক্রমেই ফুল, ফল দেয় না। দিন নিরপেক্ষ উদ্ভিদকোন কোন উদ্ভিদ দিন নিরপেক্ষ। দিন নিরপেক্ষ উদ্ভিদের ফুল, ফল উৎপাদনে ফটো পিরিয়ডের কোন প্রভাব নেই। বড় দিন উদ্ভিদের ফুল, ফল গ্রীষ্মকালে এবং ছোট দিন উদ্ভিদের ফুল ফল শীত ও বসন্তকালে আসে। বাংলাদেশের বিভিন্ন মাসের দিনের দৈর্ঘ্য নিম্নে দেয়া হলো।

বিভিন্ন মাসের দিনের দৈর্ঘ্য বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , ইউনিট ১ , পাঠ-১.২

বায়ু প্রবাহ বায়ু মন্ডলের তাপমাত্রার পার্থক্যের ফলে সৃষ্ট বায়ুমন্ডলীয় চাপের পার্থক্যের কারণে প্রায় প্রতি মুহূর্তে বায়ু একস্থান হ’তে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বায়ুর এই স্থানান্তরকে বায়ু প্রবাহ বলে। বাংলাদেশে প্রধানতঃ দু‘ধরনের বায়ু প্রবাহ দেখা যায়। যথা ঃ ১। সাময়িক (ঝবধংড়হধষ) এবং ২। অনিয়মিত বায়ু প্রবাহ। সাময়িক বায়ু প্রবাহের মধ্যে এদেশে স্থল বায়ু, সমুদ্র বায়ু এবং মৌসুমি বায়ু উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে অনিয়মিত বায়ু প্রবাহের মধ্যে সাইক্লোন বা ঘুর্ণিঝড়, কালবৈশাখী এবং টর্নেডোর নাম করা যেতে পারে।

শীতকালে মৌসুমি বায়ু উত্তর পূর্ব—দিক হ’তে প্রবাহিত হয় এবং এ বায়ুর গতিবেগ কম এবং কোনরূপ জলীয় বাষ্প থাকেনা ফলে এ বায়ু প্রবাহের ফলে কোন বৃষ্টিপাতও হয় না। মার্চ—এপ্রিল মাসে এদেশে কালবৈশাখী আঘাত হানে এবং জানমালের বেশ ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়। জুন—সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণ—পশ্চিম দিক হ’তে মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এ বায়ু সমুদ্র হ’তে প্রচুর জলীয় বাষ্প বয়ে আনে এবং এসময় দেশে প্রচুর বৃষ্টি হয়। অক্টোবর—নভেম্বর মাসে সমুদ্র উপকূলবতীর্ অঞ্চলে সাধারনতঃ সাইক্লোন ও জলোচ্ছাস হয়ে থাকে। বঙ্গোপসাগরের তীরে শেষরাতে ও ভোরের দিকে স্থলভাগ হ’তে স্থলবায়ু সমুদ্রের দিকে এবং অপরাহ্নে সমুদ্র থেকে সুমুদ্র বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।

কৃষি মৌসুম বাংলা বছরে ২ মাসে এক ঋতু হয়। এগুলো হচ্ছে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। কিন্তু কোন ফসলই দুই মাসে তার জীবন চক্র সম্পন্ন করতে পারেনা। তাই কৃষি কাজের সুবিধার্থে সমস্ত বছরকে প্রধানতঃ দুটি কৃষি মৌসুমে ভাগ করা হয়েছে —

* রবি মৌসুম
* খরিপ মৌসুম ।

রবি মৌসুম নভেম্বর মাসে রবি মৌসুম শুরু হয় এবং শেষ হয় ফেব্রুয়ারী মাসে। যে সকল ফসলের জীবনকাল সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ সময় এ মৌসুমে অতিবাহিত করে সেগুলোকে রবিশস্য বলে। যেমন— তামাক, গোল আলু, গম, মসুর, খেসারী, ছোলা ইত্যাদি।

খরিপ মৌসুম  খরিপ মৌসুম শুরু হয় মার্চ মাসে এবং শেষ হয় অক্টোবর মাসে। যে সকল ফসলের জীবন চক্রের সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ সময় এই মৌসুমে অতিবাহিত হয় সেগুলোকে খরিপ শস্য বলে। যেমন— আউশ ধান, পাট এবং বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন শাক—সব্জি। খরিপ মৌসুমকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা ঃ—

খরিপ—১ একে প্রাক খরিপ মৌসুমও বলা হয়। খরিপ—১ মার্চ মাসে শুরু হয়ে জুন মাসে শেষ হয়।

খরিপ—২ জুলাই মাসে শুরু হয় এবং অক্টোবর মাসে শেষ হয়। রবি মৌসুমে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্রতা কম থাকে। দিন ছোট হয় এবং রাত বড় থাকে। এসময় মৌসুমি বায়ু উত্তর—পূর্ব দিক হ’তে প্রবাহিত হয় বলে দেশে বৃষ্টিপাত কম হয়। রবি ফসলের মধ্যে উলে­খযোগ্য হলো রবি সব্জি যেমন— আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, লাউ, গম, সরিষা, তিষি, চীনাবাদাম ও ডাল জাতীয় ফসল।

খরিপ মৌসুমে তাপমাত্রা , বৃষ্টিপাত এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। দিন বড় ও রাত ছোট হয়। দক্ষিন—পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহের ফলে এসময় দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। খরিপ ফসলের মধ্যে রয়েছে ঢঁ্যাড়স, পুইশাক, আউশ ধান, ইত্যাদি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পরে যে, কেবল একবষীর্ ফসল সম হকেই রবি এবং খরিপ ফসল অনুযায়ী ভাগ করা সম্ভব।

Capture 1 24 বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , ইউনিট ১ , পাঠ-১.২Capture 213 বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , ইউনিট ১ , পাঠ-১.২

আরও পড়ুন :

কৃষির ধারণা ও গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , ইউনিট ১ , পাঠ-১.১

কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ | সূচিপত্র | কোড ১২০১

কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৮, পাঠ – ১৮.৪

কৃষি উন্নয়নে সমবায়ের ভুমিকা ও সমবায় আইন , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৮, পাঠ – ১৮.৩

Leave a Comment