বায়ুর তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নির্ণয় , ইউনিট – ৬ , পাঠ – ৬.৭ , মূলতত্ত্ব : ফসল উৎপাদনের জন্য স্থায়ী তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের ভূমিকা অপরিহার্য। এ সকলের ভিত্তিতেই কোনো এলাকায় শস্যের জাত নির্বাচন করা হয়। এ কারণেই স্থানীয় তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণের মাসিক ও বার্ষিক হিসাব রাখা প্রয়োজন। আধুনিক বিশ্বে এ সবের পরিমাণের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হচ্ছে।
বায়ুর তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নির্ণয় , ইউনিট – ৬ , পাঠ – ৬.৭
ক) সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করণ
এ পাঠ থেকে তোমরা সে সব যন্ত্রপাতির ব্যবহার শিখতে পারবে। প্রয়োজনীয় উপকরণ :
ক. গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ তাপমান যন্ত্র।
খ. একটি কাঠের বোর্ড।
গ. প্রয়োজনীয় খাতা কলম ইত্যাদি।
গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ থার্মোমিটার দুটি কাঠ বা ধাতু নির্মিত বোর্ডে সমান্তরালভাবে আটা থাকে। একটি স্টিভেনশন স্ক্রিন যুক্ত কাঠের বাক্সের মধ্যে বোর্ডটি এমনভাবে বসানো থাকে যাতে থার্মোমিটার দুটি বায়ুমন্ডলের তাপের সংস্পর্শে থাকে কিন্তু সূর্যের আলো সরাসরি এর উপর পড়তে না পারে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্য থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহার করা হয়।
থার্মোমিটার নলের মধ্যে গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ পারদের উপরের শেষ প্রান্তে লৌহ নির্মিত একটি থার্মোমিটার সূচক থাকে। দিনের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে পারদের আয়তন বেড়ে যায় এবং সূচকটিকে সামনের দিকে ঠেলে দেয়। তারপর তাপমাত্রা কমে গেলে পারদ নেমে আসে কিন্তু সূচকটি সেখানে থেকে যায়। সূচকের এরূপ অবস্থান দেখে সর্বোচ্চ তাপের পাঠ নেওয়া যায়।
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্য থার্মোমিটার পারদের পরিবর্তে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়। থার্মোমিটারের নলে ষ্পি্রংযুক্ত একটি সূচক থাকে, সূচকটিকে অ্যালকোহলের উপরের পৃষ্ঠের সাথে লাগিয়ে দেওয়া হয়। দিনের তাপমাত্রা কমতে থাকলে অ্যালকোহলের সংকোচনের কারণে সূচকটি নামতে থাকে। পুনরায় তাপমাত্রা বাড়লে অ্যালকোহলের আয়তন বেড়ে যায়। কিন্তু সূচকের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না। সূচকের এ অবস্থা দেখে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। কাজের ধাপ :
ফলাফল :
নলের স্কেলের সূচকটির নিম্নাংশের ও স্কেলে কাটা দাগের পাঠ যা পাওয়া যায় তাই ঐ দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। মনে করি, ইহা ২০ সেলসিয়াস। একইভাবে প নলের স্কেলের সূচকটি নিম্নাংশের অবস্থান ও স্কেলে কাটা দাগের মিলনস্থলের
যে পাঠ পাওয়া যাবে তা ঐ দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। মনে করি ইহা ১৭ সেলসিয়াস।
খ) বায়ুর আর্দ্রতা নির্ণয়
মূলতত্ত্ব : বায়ুতে জলীয়বাষ্প থাকলে তাকে বায়ুর আর্দ্রতা বলে। কোন নির্দিষ্ট তাপ ও চাপে বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প থাকে, তার সাথে ঐ তাপ ও চাপো বায়ু যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে তার অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে। এটি সর্বদা শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা হয়। যেমন— বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ আপেক্ষিক আর্দ্রতা = বায়ু তেজলীয় বাষ্পের ধারণ করার ক্ষমতা ১০০
যে যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর এ আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয় তাকে আর্দ্রতামাপক যন্ত্র বা হাইগ্রোমিটার বলা হয়। বায়ুর আর্দ্রতা নির্ণয়ের জন্য সাধারণত শুষ্ক ও আর্দ্র বাল্ব হাইগ্রোমিটার ব্যবহার করা হয়।
আর্দ্রতামাপক যন্ত্র বা হাইগ্রোমিটার :
এ যন্ত্রে দুইটি পারদ থার্মোমিটার পাশপাশি কাঠের ফ্রেমে উলম্ববাস্ন বে লাগানো থাকে। থার্মোমিটারগুলির একটি অ ও অন্যটি ই দ্বারা চিহ্ন করা হয়েছে। অ থার্মোমিটার বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা নির্দেশ করে। ই থার্মোমিটারের নিচের অংশে একটি মসলিন পলতে জড়ানো থাকে এবং এটি একটি পাত্রে পরিষ্কার পানির মধ্যে ডুবানো থাকে। পানি পলতে বেয়ে উপরে ওঠে এবং ই থার্মোমিটারের বাল্বকে সবসময় সিক্ত রাখে। মসলিন পলতে থেকে পানি বাষ্পায়িত হয়।
ফলত সিক্ত বাল্ব থার্মোমিটার শুষ্ক বাল্ব থার্মোমিটারের চেয়ে কম তাপমাত্রা প্রদর্শন করে। দুই থার্মোমিটারে তপমাত্রার ব্যবধান বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে। আর্দ্রতা যত কম হবে বাষ্পায়ন তত দ্রুত হবে, সিক্ত বাল্ব থার্মোমিটারের তাপমাত্রা তত কম হবে। ব্যবধান কম হলে বোঝা যাবে বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতা বেশি।
প্রয়োজনীয় উপকরণ :
(১) শুষ্ক ও আর্দ্র বাল্ব হাইগ্রোমিটার,
(২) রেনোর সম্পৃক্ত জীলয় বাষ্প চাপের তালিকা ও
(৩) কাগজ কলম
কাজের ধাপ :
(১) যন্ত্রটি নাড়া চাড়া না করে শ্রেণি শিক্ষকের সহায়তায় বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা প্রদর্শনকারী থার্মোমিটারের পাঠ দেখ।
(২) আর্দ্র—সিক্ত থার্মোমিটারের পাঠ পর্যবেক্ষণ কর।
(৩) উভয় পাঠের পার্থক্য নির্ণয় কর।
(৪) রেনোর সম্পৃক্ত জলীয় বাষ্প চাপের তালিকা পর্যবেক্ষণ করে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার আলোকে সবোর্চ্চ জলীয় বাষ্পের চাপ নির্ণয় কর।
(৫) দুই থার্মোমিটারের পাঠের পার্থক্য সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শুষ্ক থার্মোমিটারের তাপমাত্রার আলোকে পাঠ র্নিণয় কর।
(৬) এবার সূত্রের সাহায্যে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা নির্ণয় কর।
শুষ্ক থার্মোমিটার এর পাঠে তাপমাত্রার পার্থক্য জনিত জলীয় বাষ্প চাপ [মিলিমিটার—পারদ একক]
আপেক্ষিক আর্দ্রতা= শুষ্ক থার্মোমিটার—এর পাঠ সম্পর্কিত সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প চাপ ১০০
আপেক্ষিক আর্দ্রতা পরিমাপোর তালিকা :
উদাহরণ : একজন ছাত্র আপেক্ষিক আর্দ্রতা নিরূপণের সময় শুষ্ক থার্মোমিটার পাঠ ১৯ সে. এবং আর্দ্র থার্মোমিটারের পাঠ ১৬ সে. পেয়েছে। এ অবস্থায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা কীরূপ হবে ?
উত্তর : শুষ্ক থার্মোমিটার—এর পাঠ ও আর্দ্র থার্মোমিটার এর পাঠের পার্থক্য ৩। কাজেই উভয় পাঠের পার্থক্যজনিত মান এর বাষ্পচাপ ৩ এর কলাম থেকে ১৯ সে. এর সারি বরাবর মান হল ১২.১ এবং শুষ্ক থার্মোমিটার এর পাঠ ১৯ সে. এর বাষ্পচাপ হল ১৬.৫।
অতএব, বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা = ১০০ = ৭৩.৩% (প্রায়)। সাবধানতা :
(১) আর্দ্রতামাপক যন্ত্র খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হবে।
(২) যন্ত্রের পাঠ নিখঁুতভাবে নিতে হবে।
(৩) আপেক্ষিক আর্দ্রতা পরিমাপের তালিকার ব্যবহার ভালভাবে শিখতে হবে।
আরও দেখুন :
- ফসলের আলোক সংবেদনশীলতা ও ফসলের মৌসুম , ইউনিট – ৬ , পাঠ – ৬.৬
- প্রতিকূল বা বিরূপ আবহাওয়ায় ফসল ও পশুপাখি রক্ষার কৌশল , ইউনিট – ৬ , পাঠ – ৬.৫
- ফসল উৎপাদন, গবাদিপশু ও পাখি পালনে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব , ইউনিট – ৬ , পাঠ – ৬.৪
- কৃষি জলবায়ু উপযোগী উদ্যান মাঠফসল ও গবাদি পশুপাখির উপর জলবায়ুর প্রভাব , ইউনিট – ৬ , পাঠ – ৬.৩
- বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা