বীজের শ্রেণীবিভাগ ও বীজের অপরিহার্য অঙ্গসমূহ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-১ , পাঠ-১.২

বীজের শ্রেণীবিভাগ ও বীজের অপরিহার্য অঙ্গসমূহ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , বীজের শ্রেণীকরণ বিভিন্নভাবে করা যায়। বীজের আকার-আকৃতি, ব্যবহার, শারীরবৃভীয় গুণাবলী ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে বীজকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। নিয়ে তা আলোচনা করা হলোঃ

বীজের শ্রেণীবিভাগ ও বীজের অপরিহার্য অঙ্গসমূহ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি

ব্যবহারের উদ্দেশ্য অনুসারে শ্রেণীবিন্যাস

১ প্রকৃত বীজ : নিষিক্ত ও পরিপক্ক ডিন্বককে উদ্ভিদতাত্তিক বীজ বলে। যেমন ঃ দানাদার বীজ (পান, গম, ভুটা প্রভৃতি), তৈলবীজ (সরিষা, সয়াবীন, তিল প্রভৃতি) ও ডালবীজ (মসুর, শেসারী, মুগ প্রভৃতি)।

২। কৃষি বীজ : উদ্ভিদের যে কোন ভাংশ যা তানুকুল পরিবেশ তার সমতুল্য নতুন গাছের জন্ম দিতে সক্ষম তাকে কৃষি বীজ বলে। যেমনঃ কান্ড (আখ, আলু প্রভৃতি), শিকড (মিষ্টি আলু, কাকরোল, পটল প্রভৃতি) পাতা (পাথরকুচি) থেকে শুরু পান, গম, ভুট্টা প্রভৃতির বীজ কুষিজ বীজের উদাহরণ।

বীজের শ্রেণীবিভাগ ও বীজের অপরিহার্য অঙ্গসমূহ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি

বীজের আবরণের উপর ভিত্তি করেো

১. নগ্নবীজ : যে বীজে কোন আবরণ থাকেনা, তাকে নগ্নবীজ বলে। যেমন ৪ গন, ভুটা প্রভৃতি।

২। আবরিত বীজ : যে বীজে আবরণ থাকে তাকে আবরিত বীজ বলে। যেমন: পান, ডাল, তৈল বীজ ইত্যাদি।

বীজ পত্রের সংখ্যা অনুযায়ী

১। একবীজপত্রী বীজ : যে সকল বীজে একটি মাত্র বীভপত্র থাকে তাদেরকে একবীজপত্রী বীজ বলে। যেমন ঃ পান, গম, ভুট্টা, নারিকেল, তাল ইত্যাদি।

২। দ্রিবীজপত্রী বীজে : যে সকল নীজে দুইটি বীজপত্র থাকে তাদেরকে দ্বিবীজপত্রী বীজ বলে। যেমন ঃ পাট, ছোলা, সয়াবীন, আম, কাঠাল ইত্যাদি।

৩। বহুবীজপত্রী বীজ : য়ে বীজে দুই এর আদিক বীজপত্র থাকে তাকে বহুবীজপত্রী বীজ বলে। যেমন ঃ পাইন বীজ।

বীজে ভ্রূণের সংখ্যা অনুসারে

একজণী বীজ (Monoembryonic seed ) : যে বীজে একটি মাত্র ভ্রূণ থাকে তাকে এক ভ্রূণী বীজ বলে যেমন : পাট, ধান, গম।

বহুভ্রূণী বীজ (Polyembryonic seed ) : যে বীজে একাধিক ভ্রূণ থাকে এবং প্রত্যেকটি ভ্রূণ এক একটি স্বতন্ত্র উদ্ভিদের জন্ম দিতে পারে তাকে বহুভ্রূণী বীজ বলে। যেমন : আম, লেবু ইত্যাদি। সস্য (Endosperm) এর উপর ভিত্তি করে

সস্যল বীজ (Endospermic seed ) : যে সকল বীজের বীজপত্রের বাইরে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য খাদ্য হিসেবে সস্য বা এন্ডোস্পার্ম সঞ্চিত থাকে তাদেরকে সস্যল বীজ বলে। যেমন : ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি।

অসস্যল বীজ (Non endospermic seed) : যে সকল বীজে ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সস্য হিসেবে জমা না থেকে বীজ পত্রের মধ্যে সঞ্চিত থাকে সে সকল বীজকে অসস্যল বীজ বলে। যেমনঃ কুমড়া, ছোলা ইত্যাদি।

নিষিক্ততা (Fertilization) অনুসারে

নিষিক্ত বীজ (Fertilized seed) : ডিম্বক পরাগরেণু দ্বারা নিষিক্ত হয়ে যে বীজ উৎপন্ন করে তাকে নিষিক্ত বীজ বলে। যেমন : ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা ইত্যাদি।

অনিষিক্ত বীজ (Unfertilized seed) ঃ পরাগরেণু দ্বারা ডিম্বক নিষিক্ত না হয়েই যে বীজ উৎপন্ন হয় তাকে অনিষিক্ত বীজ বলে। এক্ষেত্রে ডিম্বকের দেহ কোষ (Vegetative cell) থেকে ভ্রূণের উৎপত্তি হয়। এই বীজকে এপোমিকটিক (Apomictic) বীজ বলে এবং বীজ উৎপন্ন হওয়ার উক্ত পদ্ধতিকে এপোমিক্সিস (Apomixis) বলে। এপোমিকটিক বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করলে তাকে অংঙ্গজ বংশ বৃদ্ধি বলে এবং তাতে মাতৃগুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে। লেবু, জামবুরা, কমলা ইত্যাদি সাইট্রাস ফলে এপোমিকটিক বীজ পাওয়া যায়।

বীজের শ্রেণীবিভাগ ও বীজের অপরিহার্য অঙ্গসমূহ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি

বিভিন্ন অঙ্গজ বীজের পরিচিতি

রাইজোম (Rhizome) : রাইজোম ভূ-নিম্নস্থ রূপান্তরিত কান্ড। আদা, হলুদ ইত্যাদির বংশ বিস্তারের জন্য রাইজোম ব্যবহৃত হয়।

স্ফীত কন্দ (Tuber) : স্ফীত কন্দ ভূ-নিম্নস্হ রূপান্তরিত কান্ড। নিম্ন কান্ডের শীর্ষে খাদ্য সঞ্চিত হয়ে তা স্ফীত হয়ে কন্দের রূপ ধারণ করে। এতে চোখ (Eye বা bud), শল্কপত্র (Scale leaves) বর্তমান থাকে। গোল আলুর বংশ বিস্তার টিউবারের সাহায্যে করা হয়ে থাকে।

টিউবারকল (Tubercol বা Bulbil) : এ জাতীয় উদ্ভিদে পাতার কক্ষীয় কুঁড়ি রূপান্তরিত হয়ে স্ফীত ও গোলাকার ধারণ করে। এদের টিউবারকল বা বুলবিল বলে। যেমনঃ মেটে আলুর বুলবিল।

শঙ্ক কন্দ (Bulb) ঃ এটা ভূ-নিম্নস্হ রূপান্তরিত কান্ড যা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত এবং স্কেল (Scale) সমন্বয়ে গঠিত। পিয়াজের অংঙ্গজ বংশ বিস্তার শঙ্ক কন্দের দ্বারা করা হয়। অনেক সময় শঙ্কের কক্ষীয় কুঁড়িও আবার ক্ষুদ্রাকার কন্দে পরিণত হয়। এগুলো কোয়া (Bulblet) নামে পরিচিত। যেমনঃ রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি।

গুঁড়িকন্দ (Corm) : কান্ডের নিচের অংশ স্ফীত ও গোলাকার হলে একে গুঁড়িকন্দ বলে। এতে সন্ধি (Node) ও পর্বসন্ধি (Inter node) বিদ্যমান থাকে। গুঁড়িকন্দের উপরিভাগ শল্কপত্র দ্বারা আবৃত থাকে। আবার গুঁড়িকন্দের নিচের দিকে কতিপয় কুড়ি ক্ষুদ্রাকার গুঁড়িকন্দে পরিণত হয়। এগুলো মুখি নামে পরিচিত। কচুর বংশ বিস্তার গুঁড়িকন্দ দ্বারা করা হয়।

কন্দালমূল (Tuberous root) : যখন কোন মূল খাদ্যদ্রব্য সঞ্চিত করে স্ফীত হয়ে উঠে তখন তাকে কন্দালমূল বলে। মিষ্টি আলু ও বিভিন্ন জাতের আলুর বংশ বিস্তারে কন্দালমূল ব্যবহৃত হয়।

শোষক (Sucker) : মাতৃগাছের গোড়া থেকে নতুন চারা বের হয় এবং বৃদ্ধির প্রথম পর্যায় মাতৃগাছ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে যেমন: কলা, আনারস, চন্দ্রমল্লিকা প্রভৃতি।

শিকড় (Root cutting) : অনেক গাছের মূল নতুন চারা গাছের জন্ম দেয় এবং পরে তা কেটে পৃথক করে রোপণ করলে স্বতন্ত্র উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়। বেল ও পেয়ারা ফলের এরূপ শিকড় ব্যবহার করা হয়।

পাতা ঃ পাতা থেকেও চারা উৎপন্ন করা যায়। যেমন : পাথরকুচি। অনেক সময় চায়ের পাতা থেকে চারা উৎপন্ন করা হয়।

শাখা কলম (Stem cutting) : বিভিন্ন প্রকার ফসল, ফল ও ফুল গাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য শাখা কলম ব্যবহৃত হয়। যেমন : আম, মিষ্টি আলু, আংগুর, গোলাপ, গন্ধরাজ, ইত্যাদি।  যথাঃ কর্তন বা ছেদ কলম : এক্ষেত্রে সরাসরি কচি ডাল কেটে মাটিতে লাগিয়ে চারা তৈরি করা হয়। যেমন : সজিনা, শিমুল, এলামন্ডা ইত্যাদি।

প্রধানত পাঁচভাবে কলমের চারা তৈরি করা হয়।

দাবা কলম ঃ এক্ষেত্রে গাছের শাখার খানিক মাটিতে চাপা দিয়ে তাতে মূল গাজিয়ে মাতৃগাছ থেকে আলাদা করা হয়। যেমন : লেবু।

গুটি কলম ঃ নির্বাচিত গাছের ডালের ৫ সে.মি. পরিমাণ অংশের ছাল তুলে গোবর মিশ্রিত মাটি দিয়ে গুটি তৈরি করে চট দিয়ে আটকে দিতে হয়। বর্ষাকালে সাধারণত লিচু, ডালিম,  লেবুতে, এ ধরণের কলম করে চারা তৈরি করা হয়।

জোড় কলম ঃ এক্ষেত্রে একই জাতের দুটি গাছের কান্ডকে পরিমিত চেছে একত্রে বেঁধে দিলে ২-৩ মাসের মধ্যে জোড়া লেগে যায়। অতঃপর কাঙ্খিত গাছের মধ্যে অন্যটির নিচের অংশ কেটে আলাদা করে কলমের চারা পাওয়া যায়। আমের ক্ষেত্রে জোড় কলম উত্তম।

চোখ কলম : পাতা বা ডালের সংযোগ স্থানের কুঁড়িকে বিশেষ পদ্ধতিতে অন্য উদ্ভিদে স্থানান্তরিত করাকে চোখ কলম বলে। গোলাপ, লেবু, কুল প্রভৃতি উদ্ভিদে এ কলম ব্যবহৃত হয়। কুলের ক্ষেত্রে টক কুল গাছকে চোখ কলমের সাহায্যে মিষ্টি কুলে রূপান্তরিত করা যায়।

এতক্ষণ আপনি প্রকৃত বীজের শ্রেণিবিন্যাস এবং কৃষি বীজের বিভিন্ন অঙ্গজ বংশ বিস্তারের মাধ্যম সম্পর্কে ধারণা পেলেন। এখন আমরা আলোচনা করবো আন্তর্জাতিক শস্য উন্নয়ন সমিতি (International Crop Improvement Association, ICIA) বীজকে কীভাবে শ্রেণিবিন্যাস করছেন। উক্ত সমিতি বিভিন্ন বীজের কৌলিক বিশুদ্ধতা, উৎপাদন ও বিতরণের প্রকৃতির ভিত্তিতে বীজকে প্রধানতঃ ৪টি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন (ক-ঘ)। কিন্তু বাংলাদেশ বীজ বিধি ১৯৮০ এর ১৮ ধারা মোতাবেক বীজকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে (ক, খ, ঘ)।

(ক) প্রজনন বীজ (Breeder seed )

(খ) ভিত্তি বীজ (Foundation seed)

(গ) নিবন্ধিত বীজ ( Registered seed )

(ঘ) প্রত্যায়িত বীজ (Certified seed)

বাংলাদেশ বীজ বিধিতে নিবন্ধিত ও প্রত্যায়িত বীজকে একই ধরণের বিবেচনা করে নিবন্ধিত বীজকে বাদ দেয়া হয়েছে। কারণ এ দুই শ্রেণির বীজই ভিত্তি বীজ থেকে উৎপাদিত হয়।

প্রজননবীদের বীজ (Breeder seed) : উদ্ভিদ প্রজনন প্রতিষ্ঠান বা কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা কোন প্রজননবিদের ঘনিষ্ঠ ও সরাসরি তত্ত্বাবধানে উৎপন্ন বীজ, যা থেকে ভিত্তি বীজ (Foundation seed) উৎপন্ন করা হয় তাকে প্রজনন বীজ বলে। এ বীজের মধ্যে সর্বাধিক কৌলিক বিশুদ্ধতা (Genetic purity) থাকে। অনুমোদিত বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হলো প্রজনন বীজ। প্রজনন বীজ থেকে ভিত্তি বীজ উৎপাদন করা হয়।

ভিত্তি বীজ : বীজের পরবর্তী বিস্তার ঘটানোর জন্য কৌলিকভাবে শনাক্তকরণযোগ্য জাতের প্রথমিক উৎসকে ভিত্তি বীজ বলে। ভিত্তি বীজে কৌলিক স্বাতন্ত্র্য (Genetic identity) ও জাতের বিশুদ্ধতা (Varietal purity) বিদ্যমান থাকে। ভিত্তি বীজ থেকে প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করা হয়। অনুমোদনকারী সংস্হা কর্তৃক অনুমোদিত বীজ উৎপাদনের নিয়মনীতি পালন করে ও সংশ্লিষ্ট পরিদর্শক কমিটির তত্ত্বাবধানে এ বীজ উৎপাদন করা হয়।

নিবন্ধিত বীজ ঃ অনুমোদিত সরকারী উৎসের ভিত্তি বীজ থেকে নিবন্ধিত উৎপাদনকারী যথাযথ নিয়মনীতি অনুসরণ করে যে বীজ উৎপন্ন করে তাকে নিবন্ধিত বীজ বলে। ভিত্তি বীজের সকল কৌলিক গুণাবলী ও বিশুদ্ধতা নিবন্ধিত বীজে বিদ্যমান রাখা হয়।

প্রত্যায়িত বীজ : ভিত্তি বীজ হতে প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করা হয় যাতে বংশগত ও বাহ্যিক বিশুদ্ধতা নির্ধারিত মানের থাকে। প্রয়োজনবোধে প্রত্যায়িত বীজ হতেও সর্বাধিক তিন ধাপ পর্যন্ত প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করা যেতে পারে।বীজের গুণাবলী সংরক্ষণের জন্য প্রত্যয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্হা। বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী নামে একটি সরকারী সংস্হা এই অনুমোদনের কাজটি করে থাকে।

বীজের অপরিহার্য অংগসমূহ : একটি বীজের প্রধানতঃ দুইটি অংশ থাকে। যথাঃ

(১) বীজত্বক (Seed coat) ও

(২) অন্তবীজ বা বীজসার ( Kernel ) ।

(১) বীজত্বক : বীজের আবরণকে বীজত্বক বলে। ডিম্বকের ত্বক বীজত্বকে পরিণত হয়। বীজত্বক আবার দুইটি আবরণ দ্বারা গঠিত। বাহিরের অপেক্ষাকৃত পুরু ও শক্ত স্তরটিকে বলে বহিঃত্বক বা টেস্টা (Testa)। ভিতরের পাতলা স্বচ্ছ আবরণকে বলে অন্তঃত্বক বা টেগমেন (Tegmen)। বীজত্বক দুইটি সংযুক্ত থাকতে পারে অথবা একটি হতে অন্যটি পৃথক থাকতে পারে। বীজ যে অংশ দ্বারা ফলের সংগে যুক্ত থাকে সেই সংযোগস্থলকে বলে হাইলাম (Hilum) বীজনাভি বা ডিম্বকনাভি। বীজ ফিউনিকুলাস (Funiculus) নামক বোটার সংগে হাইলামের সংগে যুক্ত থাকে। হাইলামের সন্নিকটে বীজত্বকে একটি ছিদ্র থাকে যাকে মাইক্রোপাইল (Micropyle) বা বীজরন্ধ্র বলে। কোন কোন বীজের ত্বকে লম্বালম্বি যে প্রবর্ধন দেখা যায় তাকে র‍্যাফি ( Raphe) বলে। রাফির সাহায্যে বীজ বোঁটার সংগে লেগে থাকে।

(২) অস্তবীজ বা কার্নেল বা বীজসার : বীজত্বক অপসারণের পর বীজের অবশিষ্ট অংশকে বলে অন্তবীজ বা কার্নেল বা বীজসার। কার্নেল শুধু ভ্রূণ দ্বারা গঠিত হতে পারে (যেমন : ছোলা বীজ) অথবা ভ্রূণ ও সস্য (Endosperm) দ্বারা গঠিত হতে পারে (যেমন : ধান বীজ)।

বীজের শ্রেণীবিভাগ ও বীজের অপরিহার্য অঙ্গসমূহ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি

অন্তবীজ বা কার্নেল এর বিভিন্ন অংশ

ভ্রূণ (Embryo) : বীজত্বক দ্বারা আবৃত সুপ্ত উদ্ভিদকে ভ্রূণ বলে। কার্নেলের মূল অংশ ভ্রূণ। ভ্রূণের দুইটি অংশ যথাঃ ভ্রূণাক্ষ বা টাইজেলাম (Tigellum) ও বীজপত্র (Cotyledon)। ভ্রূণাক্ষের আবার দুইটি অংশ যেমন: ভ্রূণমূল (Radicle) যা থেকে বীজ গজানোর পর শিকড় হয় এবং ভ্রূণকান্ড ভ্রূণমুকুল (Plumule) যা থেকে কান্ড উৎপন্ন হয়।

ভ্রূণাক্ষ : যে অক্ষের সংগে বীজপত্র সংযুক্ত থাকে তাকে ভ্রূণাক্ষ বলে। ভ্রূণাঙ্কের যে স্হানে বীজপত্র সংযুক্ত থাকে তাকে ভ্রূণপর্ব (Nodal zone) বলে। ভ্রূণাক্ষের উপরের অংশ ভ্রূণমুকুল এবং নিচের অংশ ভ্রূণমূল। ভ্রূণাক্ষের যে অংশ পর্বাঞ্চলের উপরে অবস্থিত তাকে এপিকোটাইল (Epicotyle) বা বীজ পত্রাধিকান্ড বলে। অপরপক্ষে ভ্রূণাক্ষের যে অংশ পর্বাঞ্চলের নিচে অবস্থিত তাকে বলে হাইপোকোটাইল (Hypocotyle) বা বীজপত্রাবকান্ড। একবীজপত্রী উদ্ভিদে ভ্রূণমুকুল ও ভ্রূণমূল যে আবরণীসমূহ দ্বারা আবৃত থাকে তাদেরকে যথাক্রমে কলিওপটাইল (Coleoptyle) এবং কলিওরাইজা (Coleorrhiza ) বলে।

বীজপত্র (Cotyledon) : দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে দুইটি বীজপত্র এবং একবীজপত্রী উদ্ভিদে একটি বীজপত্র থাকে। বীজপত্রে খাদ্য সঞ্চিত থাকলে তা পুরু ও রসাল হয়। যেমন : ছোলা বীজ। যে বীজপত্রে খাদ্য সঞ্চিত থাকে না তা পাতলা ও স্বচ্ছ হয় (যেমন : রেডি)। নিম্নে চিত্রে বীজের বিভিন্ন অংশ দেখানো হয়েছে।

বীজপত্রের কাজ :

  • বীজপত্র নরম ও কোমল ভ্রূণমুকুলকে রক্ষা করে।
  • বীজপত্র ভ্রূণের জন্য খাদ্য সঞ্চয় করে।
  • বীজপত্র ভ্রূণাক্ষকে খাদ্য সরবরাহ করে।

সস্য (Endosperm) : কোন কোন কার্নেলে সস্য বা এন্ডোস্পার্ম পাওয়া যায়। বীজের এন্ডোস্পার্মে শিশু উদ্ভিদের খাদ্য সঞ্চিত থাকে। সকল বীজে সস্য থাকে না। সস্য যুক্ত বীজকে বলে সসাল (Albuminous) বীজ। যে বীজে সস্য থাকে না তাকে বলে অসস্যল বীজ (Exalbuminous)।

পেরিস্পার্ম (Perisperm) : ডিম্বকের নিউসেলাসের অবশিষ্টাংশকে পেরিস্পার্ম বলে। ইহা বর্ধিষ্ণু ভ্রূণে খাদ্য সরবরাহ করে। সকল বীজে পেরিস্পার্ম থাকে না। খুব অল্প সংখ্যক বীজে পেরিস্পার্ম থাকে। যেমন : শাপলা।

Capture 246 বীজের শ্রেণীবিভাগ ও বীজের অপরিহার্য অঙ্গসমূহ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-১ , পাঠ-১.২

আরও দেখুন:

Leave a Comment