বীজের অংকুরোদগম পরীক্ষা, বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি ,ব্যবহারিক , অংকুরোদগম পরীক্ষা : কোন বীজের কোন সুপ্ত ভ্রূণ জাগ্রত হওয়ার নাম অংকুরোদগম। অংকুরিত বীজ সংখ্যা তাত্ত্বিকভাবে শতকরা হারে নির্ণয় করে অংকুরোদগম পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ১০০টি বীজ গজাতে দিলে কতটি বীজ গজিয়েছে বের করলেই বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতার শতকরা হার বের হয়ে আসে। অংকুরোদগম ক্ষমতার হার পূর্ণ সংখ্যায় প্রকাশ করতে হয়।
বীজের অংকুরোদগম পরীক্ষা, বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি ,ব্যবহারিক
এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য
(১) বীজ নমূনার স্বাভাবিক চারা উৎপাদনকারী বীজের সংখ্যা (%) নির্ণয়
(২) বীজ নমূনায় অন্যান্য উপকরণ অংশের তুলনায় স্বাভাবিক চারা উৎপাদনকারী বীজের পারস্পরিক পরিমাণ নির্ণয়।
(৩) বপনের জন্য বীজের হার ও বীজের বাজার মূল্য নির্ধারণ।
(৪) বীজের প্রকৃত মান নির্ধারণ।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
(১) বীজ অঙ্কুরোদগম যন্ত্র
(২) বোর্ড (সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য)
(৩) মাটি ও বালির বাক্স
( ৪ ) তোয়ালে, চোষ কাগজ, পেট্রিডিস
(৫) নমূনা রাখার ট্রে ইত্যাদি
পরীক্ষা পদ্ধতি
বিশুদ্ধ বীজের অংশ থেকে অংকুরোদগমের জন্য বীজ নমূনা নিন। অংকুরোদগমের জন্য কমপক্ষে ৪০০ বীজ নিন এবং পরীক্ষা নির্ভুল হওয়ার জন্য এগুলো চারটি ভাগে (Replicate) ভাগ করুন। প্রতি ভাগে ১০০ টি বীজ থাকবে।
সর্ব প্রথম উপযুক্ত পাত্রে যে কোন একটি অংকুরোদগম মাধ্যমের ( চোষ কাগজ, ফিল্টার কাগজ, বালি, করাতের গুড়া, তোয়ালে) উপর প্রয়োজনীয় পানি ও বীজ নিন। বীজ স্হাপনের
সময় কমপক্ষে বীজের সমান মাপের ১-৫ গুন স্হান ফাঁকা রাখুন।
পেট্রিডিস ব্যবহার করা হলে বীজ বসানোর প্রথম দিন পেট্রিডিসটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন। এতে পানির বাষপায়ন কম হয়। তারপর পেট্রিডিস গুলো উপযুক্ত পরিবেশে গবেষণাগারে রেখে দিন। সুবিধা থাকলে পেট্রিডিসগুলো নিয়ন্ত্রিত অঙ্কুরোদগম যত্নে রাখুন।
(ক) এখন পেট্রিডিসে নেওয়া বীজের নাম, জাত, সংখ্যা ও পরীক্ষায় বসানোর তারিখ কাগজে লিখে রাখুন।
(খ) প্রতিদিন লক্ষ রাখুন যেন পানি শুকিয়ে না যায়। পানি শুকিয়ে গেলেই পুণরায় পেট্রিডিসে পানি দিন। অতিরিক্ত পানি ক্ষতিকর।
পরীক্ষার ৪টি ভাগের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য হলে পুনরায় পরীক্ষা সম্পাদন করতে হবে।
যে বীজগুলোকে অংকুরোদগম পরীক্ষার জন্য বসানো হবে, অংকুরিত হওয়ার পর সেগুলোকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয় যেমন :
(১) স্বাভাবিক বীজ অর্থাৎ যেগুলো স্বাভাবিক চারার জন্ম দেয়।
(২) অস্বাভাবিক বীজ অর্থাৎ যেগুলো অস্বাভাবিক চারার জন্ম দেয়। (৩) মৃত বীজ অর্থাৎ একেবারেই গজায় না।
(৪) সজীব বীজ অর্থাৎ সুপ্তাবস্হা ভাংগার পর অংকুরোদগম হতে পারে।
(৫) শক্ত বীজ অর্থাৎ সুপ্তাবস্হা ভাংগার পরও অংকুরোদগম হতে নাও পারে। (মালভেসী ও লিগুমিনোসি পরিবারের কোন কোন বীজে শক্ত বীজের উপস্হিতি দেখা যায়।)
প্রথম গণনার সময় স্বাভাবিক বীজগুলো (যা গজিয়েছে) গণনা করে এবং মৃত বীজগুলো (যদি চিহ্নিত করা যায়) ফেলে দিতে হয়। প্রাথমিক গণনার ফলাফল কাগজে / রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে। এরপর দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত গণনা খুব সতর্কতার সাথে করতে হয়। এ সময় যদি সুপ্ত বীজের উপস্হিতি টের পাওয়া যায় তবে চূড়ান্ত গণনার তারিখ আরও ৫ দিন পর্যন্ত বর্ধিত করা যেতে পারে। বীজের সুপ্তকাল ভাংগার পরও (পটাশিয়াম নাইট্রেট অথবা জিবারেলিক এসিড প্রয়োগ করে) যদি কোন বীজ না গজায়, তবে সে বীজ মৃত/শক্ত বীজ বলে ধরে নিতে হবে।
স্বাভাবিক চারার বৈশিষ্ট্য : স্বাভাবিক চারার বৈশিষ্ট্য সকল বীজের ক্ষেত্রে এক নয়। নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকলে মোটামুটিভাবে চারাকে স্বাভাবিক চারা বলা যেতে পারে।
(ক) সুস্হ ও বর্ধিষ্ণু চারা হলে ।
(খ) চারার শিকড় সুউন্নত হলে।
(গ) ইপিকোটাইল ও হাইপোকোটাইল অক্ষত থাকলে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
(ঘ) গ্রামিনি পরিবারের চারার ক্ষেত্রে কলিওপটাইল ও প্রাথমিক পাতা সুষ্ঠুভাবে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হলে (যেমন : গম)।একবীজ পত্রী বীজের জন্য একটি বীজপত্র এবং দ্বিবীজপত্রী বীজের ২টি বীজপত্র থাকলে।
(জ) চারার বৃদ্ধি সুষম থাকলে।
(ছ) চারার সীমিত স্হানে ক্ষত রয়েছে, তবে কোন পরিবহণকারী কোষ কলা ক্ষতিগ্রস্হ না হয়ে থাকলে।
(জ) চারা সুস্হ থাকলে, দ্বিবীজপত্রী বীজের একটি বীজপত্র বর্তমান থাকলে (বীজপত্রের সংযোগস্হল অক্ষত থাকা সাপেক্ষে)।
(ঝ) ইপিজিয়েল অংকুরোদগমের ক্ষেত্রে শিকড় ও হাইপোকোটাইলের যুক্ত দৈর্ঘ্য বীজের দৈর্ঘ্যের ৪ গুণের বেশি হয়ে গাছের কান্ড, পাতা ও শিকড় সুষমভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে।
অস্বাভাবিক চারার বৈশিষ্ট্য :
(ক) চারা ক্ষতিগ্রস্হ হয়ে বীজপত্র না থাকলে এবং গাছের কান্ড, পাতা ও শিকড়ে বিস্তৃত ক্ষত সৃষ্টি হলে।
(খ) কান্ড, পাতা ও শিকড়ের বৃদ্ধি অসম হলে।
(গ) বেঁকে যাওয়া ও বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রুমিউল বা হাইপোকোটাইল বা এপিকোটাইল সম্পন্ন চারা হলে । (ঘ) কান্ড, পাতা, শিকড় রোগাক্রান্ত ও ক্ষয়প্রাপ্ত চারা।
১।স্বাভাবিক চারা (এপিকোটাইল ও ব্রেডিকল এর বৃদ্ধি ভাল)
২।অস্বাভাবিক চারা (দুর্বল রেডিকল)
৩।অস্বাভাবিক চারা (রেডিকল বৃদ্ধি খুব খারাপ)
৪। অস্বাভাবিক চারা (স্ফীত এপিকোটাইল)
৫। অস্বাভাবিক চারা (খুব দুর্বল এপিকোটাইল ও রেডিকল)
৬। অস্বাভাবিক চারা (এপিকোটাইল অনুপস্থিত)
বীজের স্বাস্হ্য পরীক্ষা
আন্তর্জাতিক বীজ পরীক্ষা সংস্হা কর্তৃক অনুমোদিত বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে বর্ণনা করা হলোঃ
(ক) অল্টারনেরিয়া পদ্ধতি : সরিষা পরিবারের সবজি ও তৈলবীজ অল্টারনেরিয়া গোত্রের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। বীজে ২, ৪ ডাইক্লোরো ফেনোক্সি এসিটিক এসিডে ০.২% সোডিয়াম প্রয়োগ করে ১৮–২২° সেঃ তাপমাত্রায় ৬–১১ দিন রাখার পর অণুবীক্ষন যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয়। এ পরীক্ষায় উল্লেখিত রোগ জীবাণুর উপস্হিতি জানা যায়।
(খ) ভাইরাস পরীক্ষা : সরাসরি বীজে ভাইরাস রোগের উপস্হিতি নির্ণয় করা যায় না, তাই বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে ভাইরাসের আক্রমণ যাচাই করে বীজে ভাইরাসের উপস্হিতি নির্ণয় করা সম্ভব হয়। তাছাড়া বীজ গুঁড়ো করে তার নির্যাস নির্দিষ্ট গাছে প্রয়োগ করে রোগাক্রমণ হয় কী না তা প্রত্যক্ষ করেও বীজে ভাইরাসের উপস্হিতি নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
আপনার টিউটোরিয়েল কেন্দ্রে টিউটরের সহযোগিতায় বীজের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা অনুশীলন করতে পারবেন। তবে বাহ্যিকভাবে ও বীজের গায়ে বিভিন্ন রোগ পোকার আক্রমণের চিহ্ন কিংবা বীজের বর্ণের উজ্জ্বলতার তারতম্য দেখেও বীজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করা সম্ভব। সুস্থ বীজে সবল চারা উৎপাদন করা সম্ভব। রোগাক্রান্ত বীজ দ্বারা চারা উৎপাদন করা গেলেও পরবর্তীতে উৎপন্ন চারা রোগাক্রান্ত হতে পারে।
আরও দেখুন:
- বীজের অংকুরোদগম পরীক্ষা , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি ,ব্যবহারিক , ইউনিট-১ , পাঠ-১.৭
- বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষা , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি ,ব্যবহারিক , ইউনিট-১ , পাঠ-১.৬
- বীজের সুপ্ততা ভাঙ্গার উপায় , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-১ , পাঠ-১.৫
- বীজের সুপ্ততা এবং সুপ্ততার কারণসমূহ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-১ , পাঠ-১.৪
- বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা