মৃত্তিকা গঠনের উপাদান

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান নিয়ে আজকের আলোচনা। কঠিন শিলা থেকে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। শিলা থেকে প্রথমে খনিজের সৃষ্টি হয়। শিলা ও খনিজ থেকে মাটি সৃষ্টি হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। দীর্ঘ সময় ব্যাপিয়া শিলা ও খনিজের উপর বিভিন্ন ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক পরিবর্তন সাধিত হয়ে মৃত্তিকায় পরিণত হয়। বিশেষ করে তাপমাত্রা, বারিপাত (Precipitation), বিভিন্ন রকমের উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর চলমান ক্রিয়ায় শিলা ও খনিজ নির্দিষ্ট সময় পর মৃত্তিকায় পরিণত হয়।

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান ,পাঠ ১.২, ইউনিট ১ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান

সুতরাং যেসব উপাদান নতুন মৃত্তিকা গঠনের জন্য দায়ী তাদেরকে মৃত্তিকা গঠনের উপাদান বলে। ঐসব উপাদানের যৌথ ক্রিয়ার ফলে মৃত্তিকা প্রোফাইল গঠিত হয়। ভূত্বকের কোন স্থানের মৃত্তিকা প্রধানত পাঁচটি উপাদানের যুগপৎ ক্রিয়ার ফলে গঠিত হয়। এ পাঁচটি উপাদান হলো ঃ

১। মৃত্তিকার উৎস বস্তু (Parent material)

২। জলবায়ু (Climate )

৩। জীবসত্ত্বা (Biosphere)

৪। ভূমির বন্ধুরতা (Topography)

৫। সময় (Time)

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান , মৃত্তিকা বিজ্ঞান

জেনীর সমীকরণ (Jenny’s equation):

মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানগুলোর প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন উপায় ও তীব্রতায় সংঘটিত হয়। সবগুলো উপাদানই আবশ্যকভাবে পরস্পর নির্ভরশীল। তবে নির্দিষ্টস্থানে বিশেষ কোন উপাদান মৃত্তিকা গঠনের কাজে অধিক সক্রিয় হতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য উপাদানগুলো অবশ্যই সক্রিয় থাকবে তবে তা তুলনামূলকভাবে কম সক্রিয় হতে পারে। মৃত্তিকা গঠনকালে ভিন্ন ভিন্ন উপাদানের সক্রিয়তার তারতম্যের উপর মৃত্তিকার ধর্ম নির্ভরশীল। বিজ্ঞানী Jenny মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানসমূহ এবং মৃত্তিকার ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক দেখিয়ে একটি সাধারণ সমীকরণ প্রকাশ করেছেন। ইহা জেনীর সমীকরণ নামে পরিচিত। সমীকরণটি নিম্নরূপ ঃ

S=f (p, cl, b, r, t…………)।

এখানে ঃ
S =মৃত্তিকার ধর্ম (Any soil property)
f= ক্রিয়া (Function of )
P= উৎস বস্তু (Parent material)
cl =জলবায়ু (Climate)
b = জীবসত্ত্বা (Biosphere)
r= বন্ধুরতা (Relief)
t= সময় (Time)

 

মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানসমূহের শ্রেণিবিভাগ:

মৃত্তিকা বিজ্ঞানী Joffe মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :

  • সক্রিয় উপাদান (Active factor)
  • অক্রিয় উপাদান (Passive factor)

উৎস বস্তু শিলা (Parent material) এবং ভূনিম্নস্থ শিলার (Bed rock) উপর কাজ করে মৃত্তিকা গঠন করিবার জন্য যে সমস্ত উপাদান শক্তি সরবরাহ করে থাকে তাদেরকে সক্রিয় উপাদান (Active factor) বলে। মৃত্তিকা গঠনের পাঁচটি উপাদানের মধ্যে জলবায়ু (Climate) ও জীবসত্ত্বা (Biosphere) হলো সক্রিয় উপাদান। অপরপক্ষে, উৎস বস্তু, ভূমির বন্ধুরতা (Topography/relief) এবং সময় এরা মৃত্তিকা গঠনে সরাসরি কোন শক্তি সরবরাহ করে না বলে তাদেরকে অক্রিয় উপাদান বলে।

মৃত্তিকা গঠনে উৎস দ্রব্য (Parent material):

মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অঘনীভূত ও রাসায়নিকভাবে কম বেশি ক্ষয় প্রাপ্ত যে সকল খনিজ ও শিলা দ্রব্য থেকে মৃত্তিকা প্রোফাইল উৎপন্ন হয় তাকে মাটির উৎস দ্রব্য বলে।

মৃত্তিকা বিজ্ঞানী Jenny’র মতে, S = f(p) { cl, b, c, ….. }

এ সমীকরণে মাটির গুণের সহিত মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদান উৎস দ্রব্য (Parent material) বা P এর কাজের ফাংশন বুঝানো হয়েছে যখন cl. b. . . ……. স্থির থাকে। ভূতাত্বিক প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্টের বিভিন্ন উৎস দ্রব্য হতে মৃত্তিকার উৎপত্তি হয়। উৎস দ্রব্যের প্রকৃতির ওপর উদ্ভূত মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ মাটির বুনট উৎস দ্রব্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, যা মৃত্তিকায় পানির নিম্নমূখী প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলশ্রুতিতে সূক্ষ্ম মৃত্তিকা কলা ও উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদানের সঞ্চায়ন (illuviation) এবং চুয়ীসরন (eluviation) প্রভাবিত হয়। শিলাক্ষয় (Weathering) প্রক্রিয়া ও এর গতি প্রকৃতি উৎস বস্তুর (Parent material) রাসায়নিক ও খনিজ উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে, যা উৎপন্ন উদ্ভিদরাজির প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে।

উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, লাইম স্টোন সমৃদ্ধ উৎস বস্তু হতে সৃষ্ট মৃত্তিকার প্রোফাইল সৃষ্টি হতে দীর্ঘ সময় লাগে, যা আর্দ্র আবহাওয়া দ্বারা ত্বরান্বিত হয়। শক্ত বিশুদ্ধ চুনাপাথর হতে গভীর বালি প্রধান মাটি তৈরি হয়। অপরদিকে মিশ্রিত নরম চুনাপাথর হতে গভীর ও সূক্ষ্ম বুনট সম্পন্ন মাটি তৈরি হয়। উষ্ণ এশিয়ার অধিকাংশ মাটি গ্রানাইট, নীস, বেসন্ট, বালিপাথর, চুনাপাথর, শেইল ও পলিজ অধঃক্ষেপ হতে উৎপন্ন হয়েছে।

ক্লে কর্দমের গুণগত বৈশিষ্ট্যাবলী ও মৃত্তিকা পার্শ্বচিত্র সমভাবে উৎস বস্তু দ্বারা প্রভাবিত হয়। আগ্নেয় শিলা, স্থুল কোয়ার্টজ নুড়ি, বালিপাথর ইত্যাদি ধীর গতিতে ক্ষয় প্রাপ্ত হয় এবং সাধারণ অনুর্বর মাটি গঠন করে। ইহাতে কেওলিনাইট জাতীয় কর্দম কণা উপস্থিত থাকে এবং ক্ষারীয় দ্রবা কম থাকে। অধিকাংশ ক্ষারীয় আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে সূক্ষ্ণ বুনট সম্পন্ন এবং ক্ষারক সম্পন্ন উর্বর মাটি গঠন করে। এতে মন্টমরিলোনাইট জাতীয় কর্দম কণা বেশি থাকে।

জলবায়ু (Climate ):

Jenny’ র মতে, S = f (cl) {p, b, r, ……) এ সমীকরণে মাটির গুণের সাথে মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদান জলবায়ু বা এর কাজের ফাংশানকে বুঝানো হয়েছে, যখন অন্যান্য উপাদান অপরিবর্তিত থাকে। জলবায়ু হলো মৃত্তিকা গঠনের প্রত্যক্ষ এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি মৃত্তিকা প্রোফাইল শত শত বছর ধরে মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানসমূহের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্রিয়ার ফল। জলবায়ু সাধারণত বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রার মাধ্যমে মৃত্তিকা গঠনে প্রভাব বিস্তার করে।

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান , মৃত্তিকা বিজ্ঞান

বৃষ্টিপাত:

বৃষ্টিপাত নানাভাবে মাটি গঠনে অংশ গ্রহণ করে। বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি চুয়ানোর মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে ক্ষারীয় পদার্থ ক্রমেই চুইয়ে নিচে চলে যায়। তখন মাটি অয় হয় এবং সেখানে Fe এবং Al এর প্রাধান্য দেখা যায়। অল্প বৃষ্টি হলে উপরের স্তর হতে CaCO3 ও MgCO3 নিচে নেমে মধ্য স্তরে জমা হয়। ফলে চুন সমৃদ্ধ একটা হরাইজন (Horizon) এর সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বৃষ্টিপাত কম হলে বাষ্পীভবন বেশি হয় ফলে নিচের ক্ষারীয় উপাদান বাষ্পীভবনজনিত টানে পানির সাথে উপরে উঠে। আর পানি বাষ্প হয়ে উড়ে গেলে সে পদার্থগুলো মাটির উপরের স্তরে জমা হয় এবং তখন মাটি ক্ষারীয় বিক্রিয়া প্রদর্শন করে।

বৃষ্টিপাত উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে বাড়ায়, ক্ষুদ্র জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং তাদের কর্মতৎপরতাকে উৎসাহিত করে। ফলে মাটিতে বেশি পরিমাণে জৈবপদার্থের বিয়োজন হয়ে মৃত্তিকা গঠনের কাজ তরান্বিত করে।
বৃষ্টিপাত ঢালু জমিতে প্রাকৃতিক ভূমিকম্পের মাধ্যমে মাটির প্রোফাইলকে আক্রান্ত করে, ফলে মৃত্তিকা ধাপ (Steep) এ পাতলা মাটির স্তর এবং পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্তিকা পদার্থের পুরু স্তর জমা হয়।
বৃষ্টির পরিশ্রুত পানি মৃত্তিকার উৎস বস্তু গঠনকারী পদার্থগুলোকে দ্রবীভূত করে এবং অন্যত্র নিয়ে জমা করে মাটি গঠনে সহায়তা করে। বাংলাদেশে নদীজনিত ভূমিক্ষয় ও পানি জমাটের মাধ্যমে সামুদ্রিক উপকূল অঞ্চলে নতুন মৃত্তিকা গঠিত হয়।

তাপমাত্রা:

মৃত্তিকা গঠনের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি ১০° সে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে মৃত্তিকার রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বিগুণ হয়। মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা হচ্ছে মৃত্তিকা গঠনের বিরোধিতাকারী একটি শক্তি। নিচু তাপমাত্রার কারণে সেখানে কোন পরিস্কার রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না। শুষ্ক অঞ্চলেও পরিস্রবনের পরিমাণ কম। যার কারণ হচ্ছে অধিক বাস্পীভবন। উঁচু পর্বত অঞ্চলে শীতকাল দীর্ঘ হওয়ায় মৃত্তিকা প্রোফাইল এর ভিতর দিয়ে পরিস্রবনের পরিমাণ কম হয়। ফলে হ্রদ জলভূমি পাট গঠিত হয়।

নিচু তাপমাত্রায় অণুজীবের কার্যকলাপ সীমিত হওয়ায় জৈব পদার্থ সঞ্চিত হতে থাকে। ফলে এসব অঞ্চলে জৈব পদার্থের স্তর বেশ বিস্তৃত হয় এবং পিটের নিচে কোন মৃত্তিকা স্তর গঠিত হয় না। অপরপক্ষে, আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডল ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডল অঞ্চলে উদ্ভিদ প্রচুর পরিমাণে জন্মে এবং অবশেষে বিগলিত হওয়ার ফলে Ao স্তরে জৈবপদার্থ খুব কম হয়।

যে সব এলাকায় উত্তাপ ও আর্দ্রতা বেশি সেখানে মাটিতে কর্দম কণা বেশি দেখা যায় কারণ অবক্ষয় প্রক্রিয়া বেশি মাত্রায় হয়। কিন্তু হীম ও শুষ্ক বা হীম ও আর্দ্র এলাকায় ইহা কম হয়। তাপমাত্রা বেশি ও বৃষ্টিপাত কম হলে মৃত্তিকার ধনাত্মক আয়ন বেশি ধরে রাখতে পারে এবং চুয়ানী পানির পরিমাণ কম হয়।

জীব সত্ত্বা (Biosphere):

Jenny’ র মতে, S=f (b) (cl, p, r, t…..} । এই সমীকরণে b দ্বারা জীব সত্ত্বা (Biosphere) বুঝানো হয়েছে যা সবুজ আণুবীক্ষনিক বা অপেক্ষাকৃত বড় জীবসমূহ এবং মানুষের সমন্বয়ে গঠিত। এটি মৃত্তিকা গঠন পদ্ধতিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। উদ্ভিদ কী প্রকৃতির এবং কী পরিমাণ জৈব পদার্থ প্রদান করিবে তাহার ওপর মৃত্তিকার গঠন নির্ভরশীল। মৃত্তিকার রং, বর্ণ, সংযুক্তি ইত্যাদি ভৌত অবস্থা উদ্ভিদ জাতীয় জৈব পদার্থ দ্বারা পরিবর্তিত হয়। বিশেষ করে উপরের স্তরের ঘাসী জমির মাটিতে জৈব পদার্থ (Organic matter) তুলনামূলকভাবে বনাঞ্চলের মাটি হতে বেশি থাকে।

উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি গাঢ় বর্ণের যার পানি ও ক্যাটায়ন ধারণ ক্ষমতা বনাঞ্চলের মাটি হতে বেশি। মৃত্তিকা গঠনও ঘাসী উদ্ভিদরাজি দ্বারা প্রভাবিত হয়। এছাড়া মৃত্তিকার অম্লত্ব ও ক্ষারকত্বও উদ্ভিদরাজি দ্বারা প্রভাবিত হয় পার্বত্য এলাকার মাটির চাইতে নিম্নভূমির মাটিতে গাছের বৃদ্ধি এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি হয়।

ভূমির বন্ধুরতা (Topography):

Jenny’র মতে, S = f (r) { cl, b, p. …… | এ সমীকরণে মাটির গুণের সাথে মৃত্তিকার বন্ধুরতার বা এর কাজের ফাংশানকে বুঝানো হয়েছে যখন অন্যান্য উপাদান অপরিবর্তিত থাকে। কোন স্থানের ভূমির বন্ধুরতা বলতে সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে উক্ত স্থানের উচ্চতাকে বুঝায়। মৃত্তিকা গঠনে ভূমির বন্ধুরতা সাধারণত নিম্নরূপ প্রভাব বিস্তার করে থাকে :
ভুমির বন্ধুরতা জলবায়ুর প্রভাবকে ত্বরান্বিত করে বা বিলম্বিত করে। অসমতল জমি অপেক্ষা সমতল জমি থেকে অতিরিক্ত পানি কণা বেশি অপসারিত হয়। কোন স্থানে সারা বছর বা বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমা থাকলে উহাতে জলবায়ূর প্রভাব ততটা কার্যকর হয় না।

পাড়ের তীক্ষ্ণঢালে সহজে ভূমিক্ষয় হয় এবং পানি মাটির প্রোফাইলে খুবই কম পরিমাণে প্রবেশ করে। এজন্য কম দৈর্ঘ্যের প্রোফাইল গঠিত হয়। ভূমির বন্ধুরতা নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও মাটির পানির স্তরের উচ্চতা নির্ধারণ করে। বন্ধুরতা বা ঢাল মৃদু হলে অধিক পরিমাণ পানি মৃত্তিকা প্রোফাইলে প্রবেশ করে ফলে অধিক দৈর্ঘ্যের প্রোফাইল প্রতিষ্ঠিত হয়।

কম ঢালবিশিষ্ট প্রোফাইলটিতে অধিক জৈব পদার্থ থাকে। ভূ-পৃষ্টের অসমতলতা সমুদ্রপৃষ্ট হতে উচ্চতা বৃদ্ধি করে জলবায়ু অধিকতর শীতল হয়। মাঝে মাঝে অধিক আর্দ্রতাসম্পন্ন হয় যা মৃত্তিকা গঠনে প্রভাব ফেলে। বন্ধুরতা ফসলী জমির ব্যবহার বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে জমির ব্যবহারের উপর প্রভাব ফেলে যা মাটি গঠনের সহায়ক।

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান , মৃত্তিকা বিজ্ঞান

সময় (Time):

Jenny’র মতে S = f (t) { cl, b, p, r} | এ সমীকরণে মাটির গুণের সাথে মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদান সময় বা এর কাজের ফাংশানকে বুঝানো হয়েছে, যখন অন্যান্য উপাদান যেমন : cl,b, pr… স্থির থাকে। শিলা হতে মাটি সৃষ্টি হওয়ার জন্য একটা ন্যূনতম সময়ের দরকার। শিলা ও খনিজ পদার্থের ক্ষয় হতে কী পরিমাণ সময় ব্যয়িত হয়েছে তার ওপর মাটির প্রকৃতি নির্ভর করে।

উৎস বস্তু সৃষ্টির পর সময়ের ব্যবধানে সৃষ্ট মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলীর পরিবর্তন ঘটে। যদিও সময়ের এ প্রয়োজনীয়তা জলবায়ু, Parent material এর প্রকার, প্রাণী ও উদ্ভিদের কার্যাবলী ও নিষ্কাশন (Drainage) এর উপর ঘনিষ্টভাবে নির্ভরশীল। সাধারণত একটি পরিণত বা সম্পূর্ণ মাটি (Mature soil) তৈরি হতে দুইশত থেকে কয়েক হাজার বছর লাগতে পারে।

নিম্নলিখিত কারণে মাটি তৈরির কাজ বিলম্বিত হয়।

(ক) কম বৃষ্টিপাত

(খ) কম আপেক্ষিক আর্দ্রতা

(গ) অধিক চুন সম্পন্ন উৎস বস্তু

(ঘ) অধিক বালি

(ঙ) অধিক কর্দম কণা

(চ) ক্ষয়রোধী উৎস বস্তু

(ছ) তীব্র ঢাল

(জ) উচ্চ পানি স্তর

(ঝ) সতত মৃত্তিকা দ্রব্যের অপসারণ

(ঞ) তীব্র বায়ু ও পানি ভূমি ক্ষয়

(ট) অধিক গর্ত খননকারী প্রাণী, ইত্যাদি

 

সূত্র:

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান ,পাঠ ১.২, ইউনিট ১ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

আরও দেখুন:

Leave a Comment