মৃত্তিকা দূষণ , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , পরিবেশ , ইউনিট ২ , পাঠ-২.৫

মৃত্তিকা দূষণ , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , পরিবেশ , মৃত্তিকা অতীব গুরুত্বপ ূ র্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। ইহা পৃথিবীর অধিকাংশ জীবের খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যম। মৃত্তিকাকে কেন্দ্র করে সকল কৃষিকাজ আবর্তিত হয়। মানুষের ক্রিয়াকর্ম ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপায়ে মৃত্তিকা দূষিত হয়। নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং মানুষের প্রয়োজনে তার অবিবেচিত ব্যবহার দিন দিন উর্বর মৃত্তিকাকে কলুষিত করছে। ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে এবং ফসল চাষে মৃত্তিকা অনুপযোগী হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

মৃত্তিকা দূষণ , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , পরিবেশ , ইউনিট ২ , পাঠ-২.৫

ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন অনন্ত কাল মৃত্তিকাকে নিরাপদে ব্যবহার করতে পারে সেজন্য মৃত্তিকা সম্পদকে দূষণ মুক্ত রাখতে হবে। যাহোক, মৃত্তিকা দূষণ কে নিম্নোপায়ে সংজ্ঞায়িত করা যায়। মৃত্তিকা দূষণ বলতে বোঝায় মাটির প্রয়োজনীয় উপাদানের হ্রাস ও অবাঞ্চিত পদার্থ সমূহের সঞ্চয় যা জীব ও উদ্ভিদ জগতের পক্ষে অমঙ্গলজনক। অবাঞ্চিত পদার্থ বলতে সেসব উপাদান বোঝায় যা মৃত্তিকার নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়।

মৃত্তিকা দূষণ , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , পরিবেশ , ইউনিট ২ , পাঠ-২.৫

মৃত্তিকা গুণাবলীর অবনমনকেও মৃত্তিকা দূষণের আওতাভুক্ত বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন কারণে মৃত্তিকা দূষণ ঘটে থাকে। মৃত্তিকা দূষণের ফলে মৃত্তিকার ব্যবহারিক মূল্য হ্রাস পায়। মাটি দূষণ পরিবেশ দূষণের অন্যতম অংশ। নগরায়ন ও ব্যাপকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়। মৃত্তিকা দূষণের প্রধান নিয়ামক সমূহ

১। বিভিন্ন ধরনের ভূমি ক্ষয়

২। বন্যা

৩। অনিয়ন্ত্রিত সেচ ও নিকাশ

৪। আপদনাশক, রাসায়নিক সার ও উচ্চ ফলনশীল জাতের নিবিড় ব্যবহার

৫। মৃত্তিকার অম্লতা বৃদ্ধি (অপরফরভরপধঃরড়হ)

৬। সেচ পানির ব্যবহারে মৃত্তিকার লবণাক্ততা ও ক্ষারকতা বৃদ্ধি

৭। মরুকরণ

৮। অপরিকল্পিত কৃষি ভূমির ব্যবহার

৯। পলিথিন ব্যাগের যথেচ্ছা ব্যবহার

১০। শিল্প বর্জ্য (কঠিন, তরল, জৈব ও অজৈব)

১১। পৌর ও গ্রামীন বর্জ্য

১২। তেজস্ক্রিয় আবর্জনা, ইত্যাদি

মৃত্তিকা দূষণ কীভাবে ঘটে

বিভিন্ন কারণে মৃত্তিকা দূষণ সংঘটিত হয়। বন্যা, নদীভাঙ্গন, অতিবৃষ্টি, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতির কারণে বিভিন্ন ধরনের ভূমিক্ষয় ঘটে। এসব ভূমিক্ষয়ের উর্বর ভূমি ফসল চাষে অনুর্বর হয়ে পড়ে। নদনদীর ক্রমবর্ধমান পড়া এবং পাহাড়ী ঢলে উর্বর ভূমিতে অনুর্বর বালি জমা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মৃত্তিকা দীর্ঘ সময় পানির নিচে পড়ে থাকা কিংবা দূষিত পানি দ্বারা সেচ প্রদানেও মৃত্তিকা দূষণ ঘটতে পারে। কৃষিক্ষেত্রে অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার প্রতিনিয়তই মৃত্তিকা দুষিত করে তুলছে। আপদনাশকের অধিকাংশই বিভিন্নভাবে মৃত্তিকায় দীর্ঘদিন অবস্থান করে যা মৃত্তিকার গুণাবলীতে প্রচন্ড ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

মৃত্তিকা দূষণ , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , পরিবেশ , ইউনিট ২ , পাঠ-২.৫

এদের প্রভাবে মাটিতে অবস্থানকারী উপকারী জীবাণুরা বেঁচে থাকতে পারে না। আমরা জানি, এক কেজি উর্বর মাটিতে সর্বোচ্চ ২ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া, ৪০০ মিলিয়ন ছত্রাক, ৫০ মিলিয়ন শ্যাওলা এবং ৩০ মিলিয়ন প্রোটোজোয়াসহ অন্যান্য বড় ও ক্ষদ্র মৃত্তিকা জীব বাস করে। মৃত্তিকায় বায়ুমন্ডলীয় নাইট্রোজেন সংযোজনসহ মৃত্তিকাস্থ বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটনে এদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে এদের মৃত্যু ঘটায় মাটি শক্ত হয়ে উঠে এবং উর্বরতা হ্রাস পায়।

মৃত্তিকায় মূল আপদনাশকের (চবংঃরপরফব) শতকরা ৭৫—১০০ ভাগ প্রভাব নষ্ট হতে যে পরিমাণ সময় লাগে তা নিচের সারণীতে প্রদত্ত হলো—

Capture মৃত্তিকা দূষণ , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , পরিবেশ , ইউনিট ২ , পাঠ-২.৫

উৎস

এসিড বৃষ্টি, অম্লীয় রাসায়নিক সারের ব্যবহারে মৃত্তিকার অম্লতা বৃদ্ধি পেয়ে মৃত্তিকা দূষণ ঘটে। কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে নদীর নাব্যতা নষ্ট করা ও ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধনের ফলে খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পায় যা মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়। অপরিকল্পিত কৃষি ভূমির ব্যবহার, নিবিড় উফশী ফসলের চাষের ফলে দিন দিন মৃত্তিকা জৈব পদার্থ কমে যায়। এভাবে মাটি ক্রমশঃ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অবাঞ্চিত শিল্প বর্জ্য, তেজস্ক্রিয় পদার্থ ও অন্যান্য ক্ষতিকর বর্জ্যের মিশ্রণ মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়। তেজস্ক্রিয়তা দুষ্ট মাটি থেকে উৎপাদিত ফসল মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের পর তা যেখানে সেখানে মাটিতে ফেলে দিলে তা মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়। পলিথিন ব্যাগ উদ্ভিদের শিকড়ের বৃদ্ধিকে রোধ করে এবং সেচ ও নিকাশে মারাÍক অসুবিধার সৃষ্টি করে।

মৃত্তিকা দূষণ রোধে করণীয় মৃত্তিকা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে মৃত্তিকাকে দূষণ মুক্ত রাখা আবশ্যক। মৃত্তিকা দূষণ মুক্ত রাখতে কিংবা দূষণ যুক্ত মৃত্তিকাকে ব্যবহারোপযোগী করতে নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১। দুর্বল মৃত্তিকা ব্যবস্থা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূযোর্গের (যেমন বন্যা, খরা, ভূমিক্ষয়, লবণাক্তকরণ, অিèয়করণ, তলানীকরণ, পানি লাগা, উর্বরতা হ্রাস ইত্যাদি) প্রধান কারণ। এ সমস্যা দূরীরণে কৃষি ও কৃষিকাজের সাথে জড়িত সকলকে দুর্বল মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং পাশাপাশি উন্নত ব্যবস্থাপনা কৌশল শিক্ষা দিতে হবে। এক্ষেত্রে
গণমাধ্যমের অংশগ্রহণসহ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।

২। বীজ, সার, পানি ব্যবস্থাপনা, আপদব্যবস্থাপনা, চাষাবাদ প্রণালী, ইত্যাদি যথেষ্ট দক্ষতার সাথে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে যেন মৃত্তিকা দূষণ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা যায়।

মৃত্তিকা দূষণ , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ , পরিবেশ , ইউনিট ২ , পাঠ-২.৫

৩। উন্নত প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করে দুষণযুক্ত মৃত্তিকার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

৪। গবেষণার মাধ্যমে ফসল চাষে উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

৫। ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহারের জন্য জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

৬। সকল স্তরে পরিবেশ সম্পর্কে শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭। রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে প্রাকৃতি পদার্থের (যেমনঃ জৈবসার, সবুজ সার, কম্পোস্ট, খামারজাত সার, জীবাণু সার, চটের ব্যাগ, ইত্যাদি) ব্যবহার বাড়ানো আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে অসুবিধা হলেও দীর্ঘমেয়াদী লাভের কথা বিবেচনা করে ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

আরও দেখুন :

Leave a Comment