লাল শাক চাষ পদ্ধতি

লাল শাক চাষ পদ্ধতি , বাংলাদেশে লাল শাক অত‌্যন্ত জনপ্রিয়। এ কারণে দেশের প্রায় সকল অঞ্চলে লাল শাক চাষ হয়। লাল শাক অত‌্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। একইসাথে এটি অত‌্যন্ত সুস্বাদু। এ কারণে ছেলে-বুড়ো সবার কাছেই এই শাক জনপ্রিয়। ইংরেজিতে একে Red Amaranth বলা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম Anaranthus oleraceus. রান্নার পর গাঢ় লাল রঙ ধারণ করে লাল শাক। বাণিজ্যিকভিত্তিতে লাল শাক চাষ ও বাজারজাত করার মাধ‌্যমে যে কেউ নিজের কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করতে পারেন।

লাল শাক চাষ পদ্ধতি

লাল শাক চাষ পদ্ধতি

লাল শাকের জাত :

লাল শাকের বিভিন্ন জাতের মধ‌্যে আলতা পেটি ২০, রক্ত লাল, বারি লালশাক ১, ললিতা, রক্তরাঙ্গা, পিংকি কুইন, রক্তজবা ও স্থানীয় জাতই উল্লেখযোগ‌্য।

লাল শাক চাষের সময় :

বছরের সব সময়েই লাল শাক চাষ করা যায়। তবে ভাদ্র থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত দেশব‌্যাপী সবচেয়ে বেশি চাষ হয় লাল শাকের।

লাল শাক চাষের জন্য মাটির প্রকৃতি :

প্রায় সব ধরনের মাটিতে লাল শাকের উৎপাদন হয়। তবে বেলে দোঁ-আশ থেকে এঁটেল দোঁ-আশ মাটিতে ভালো ফলন হয়। তাছাড়া যেখানে পানি জমে না, এমন জমি লাল শাক চাষের জন্য উপযোগী।

লাল শাকের বীজবপন পদ্ধতি :

জমি ভাল করে চাষ ও মই দিয়ে সমান করার পর ১ ভাগ বীজের সাথে ৯ ভাগ শুকনা ছাই মিশিয়ে হালকাভাবে ছিটিয়ে লাল শাকের বীজ বুনতে হয়। লাইন করে অথবা সারি করে বুনতে হলে ১৫ থেকে ২০ সেন্টমিটার দূরে দূরে বেড বানাতে হবে। এরপর কাঠি দিয়ে ১.৫ থেকে ২.০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত গভীর করে বীজ বুনতে হয়। পরে সেসব বীজ মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

লাল শাকে সার প্রয়োগ :

গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে লাল শাক চাষের জমিতে প্রয়োজন মতো জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকে। জৈব সারের পাশাপাশি অন‌্যান‌্য সারের প্রয়োগও করতে হবে।

সারের পরিমাণ :

সারএক শতকেহেক্টর প্রতি
গোবর৪০ কেজি১০ টন
ইউরিয়া৫০০ গ্রাম১২৫ কেজি
টিএসপি৩০০ গ্রাম৭৫ কেজি
এমওপি৪০০ গ্রাম১০০ কেজি

 

সার প্রয়োগের নিয়ম :

বীজ বোনার আগেই সব ধরনের সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং সার জমির প্রতিটি ইঞ্চিতে সমানভাবে ছড়িয়ে যায়। যে কারণে পুরো জমি থেকেই সমানহারে সুপুষ্ট আবাদ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

লাল শাকের পরিচর্যা :

জমিতে চারা গজানোর পর তা ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। যেসব স্থানে বীজের পরিমাণ বেশি পড়ে, সেখানে চারার পরিমাণ ঘন হয়। এসব ঘন জায়গা থেকে চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে।

বীজ ছিটিয়ে বোনা হলে প্রতি বর্গমিটারে ১০০ থেকে ১৪০টি গাছ রাখলে ভালো হয়। সারিতে বোনা হলে প্রতি লাইনে ৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে গাছ রাখলে লাল শাকের ফলন ভালো হয়। ৪-৫ দিন পর পর জমিতে সেচ দিতে পারলে দ্রুত বাড়ে লাল শাকের চারা। তবে মাঝে মাঝেই জমির আগাছা পরিষ্কার করে মাটি আলগা করে দিতে হবে।

লাল শাকের রোগবালাই ও প্রতিকার :

লাল শাকের রোগবালাইয়ের মধ‌্যে প্রধানত দুটি রোগই দেখা যায়। এর মধ‌্যে একটি হলো শুয়া পোকার আক্রমণ, অপরটি মরিচা রোগ।

লাল শাক চাষ পদ্ধতি


লাল শাকে শুয়া পোকার আক্রমণ:

লাল শাকের রোগবালাইয়ের মধ‌্যে প্রধান শত্রু হলো শুয়া পোকা। এ পোকা গাছের পাতা খেয়ে ফেলে। তাই আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। এ পোকার হাত থেকে ফসল বাঁচাতে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি, রক্সিয়ন ৪০ ইসি, ইকালাক্স ২৫ ইসি ওষুধগুলোর যেকোন একটি হেক্টর প্রতি ১.১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।


লাল শাকে মরিচা রোগ আক্রমণ :

লাল শাকের অন‌্যতম রোগের আরেকটি হলো মরিচা রোগ। শুধুমাত্র শিকড় ছাড়া গাছের সকল অংশই এ রোগে আক্রান্ত হয়। পাতার নিচে সাদা অথবা হলুদ দাগ দেখতে পাওয়া যায়। পরে সেগুলো লালচে বা মরিচা রং ধারণ করে। এতে পাতা মরে যায়। এ রোগের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম ডাইথেন এম – ৪৫ ওষুধ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

লাল শাকের ফলন :

নিয়ম মেনে এবং সঠিক পরিচর্যা করলে প্রতি শতকে ৩০ থেকে ৪০ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ৫ থেকে ৬ টন শাক পাওয়া সম্ভব।

লাল শাকের ফসল সংগ্রহ :

বীজ বোনার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে শাক খাওয়ার উপযুক্ত হয়। একসাথে শাক সংগ্রহ না করে ধীরে ধীরে সংগ্রহ করা ভালো। তবে বাণিজ‌্যিকভাবে শাক চাষ করলে অনেক কৃষক একবারেই জমির সব শাক তুলে ফেলতে পারেন। এতে আরেকটি ফসল চাষে জমি প্রস্তুত করতে সুবিধা হবে।

লাল শাক চাষ পদ্ধতি

 

লাল শাকের পুষ্টিগুণ :

লালশাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্য শাকের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। দাঁতের সুস্থতা, হাড় গঠন, গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে লাল শাক উপকারী। লাল শাকে থাকা প্রচুর ভিটামিন দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে ব‌্যাপক উপকারী। লালশাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা হজমে সাহায্য করে ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজমের আশঙ্কা কমে। রক্তশূন্যতা রোধ করতে লাল শাক অত‌্যন্ত উপকারী। লাল শাকের এন্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। কিডনি ভালো রাখতে ও কিডনি পরিষ্কার রাখতে লাল শাক খুব ভালো কাজ করে। চুলের স্বাস্থ্যের জন্য লাল শাক অনেক উপকারী। লাল শাক রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment