শিলা ও খনিজ

শিলা ও খনিজ নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি উন্মক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান ১২০৪ বই এর ১ নং ইউনিটের ১.৩ নম্বর পাঠ।

শিলা ও খনিজ

শিলা ও খনিজ

 

শিলা কী (What is Rocks) ?:

সিলেটের জাফলং বা শ্রীপুর থেকে আগত পাথর ভর্তি ট্রাক কিংবা আমাদের সড়ক ও রেলপথ তৈরির পাথর সবাই দেখে থাকবেন। বনভোজন কিংবা ভ্রমণের জন্য যারা জাফলং কিংবা শ্রীপুরে গিয়েছেন তারা পাহাড়ী ঝরণায় পাথরের আগমন দৃশ্য নিশ্চয় অবলোকন করেছেন। ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে, পাহাড়ী ঝরণা ধারায় নেমে আসা এ সব পাথরকে শিলা বলে। তাপ, চাপ ও রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে এরা ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে উঁচু পাহাড়ী এলাকা থেকে পানির স্রোতে গড়িয়ে নিচের দিকে নেমে আসে।

গড়িয়ে গড়িয়ে নিচের দিকে আসার ফলে ঘর্ষণের কারণে এরা মসৃন ও সুন্দর আকার প্রাপ্ত হয়। সুতরাং ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে, শিলা হলো দুই বা ততোধিক খনিজের সংমিশ্রণ বা দলা যা ভূত্বকের অপরিহার্য অংশসমূহ গঠন করেছে এবং যাদের ধর্ম ধারণকৃত খনিজের ভিত্তিতে পরিবর্তনশীল। যেমনঃ গ্র্যানাইট, চুনাপাথর ইত্যাদি। (According to the Geologists rock is a mixture or aggregate part of the earth’s crust, the properties of which will vary on the basis of minerals they contain. Such as granite, limestone etc.)।

 

শিলা ও খনিজ , মৃত্তিকা বিজ্ঞান

 

শিলার প্রকারভেদ (Classification of rocks):

গঠন ও উৎস অনুসারে শিলাকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় :

  • আগ্নেয় শিলা ( Igneous rocks)
  • পাললিক শিলা (Sedimentary rocks)
  • রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic rocks)
  • আগ্নেয় শিলা (Igneous rocks)

 

আগ্নেয় শিলা (Igneous rocks):

পৃথিবীর আদিম অবস্থার উত্তপ্ত ও গলিত লাভা কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের সময় উত্থিত উত্তপ্ত গলিত লাভা ঠান্ডা হয়ে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলে।

 

আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য:
  • উত্তপ্ত গলিত অবস্থা হতে ঠান্ডা হয়ে এ জাতীয় শিলার উৎপত্তি হয় বলে আগ্নেয় শিলায় কোন স্তর থাকে না।
  • উত্তপ্ত গলিত পদার্থের মধ্যে জীব-জন্তুর অস্তিত্ব অসম্ভব। বৃক্ষলতাও তাতে জন্মে না। এ কারণে আগ্নেয়শিলার ভিতর জীবাশা দেখতে পাওয়া যায় না।
  • গলিত অবস্থা হতে তাপ বিকিরণ করে ক্ষেত্র বিশেষে এ জাতীয় শিলা কেলাসিত হয় বা নির্দিষ্ট আকার ধারণ করে।
  • উত্তপ্ত গলিত পদার্থ ভূ-পৃষ্ঠে ঠান্ডা হলে তাকে বহিঃজ আগ্নেয় শিলা (Extrusive igneous rocks) বলে। অপর পক্ষে উত্তপ্ত গলিত পদার্থ ভূ-পৃষ্ঠে আসতে না পেরে পৃথিবীর অভ্যন্তরেই ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে কঠিন আকার ধারণ করে। এ রূপে গঠিত আগ্নেয় শিলাকে অন্তঃজ (Intrusive) আগ্নেয় শিলা বলে।

ব্যাসল্ট, পিউমিকস্টোন, লাপিলি ইত্যাদি হলো বহিঃজ আগ্নেয় শিলা। অন্যদিকে গ্র্যানাইট, গ্যারো, সায়েনাইট, পরিফাইরি ইত্যাদি অন্তঃজ আগ্নেয় শিলা।

 

পাললিক শিলা (Sedimentary rocks):

তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, সাগরতরঙ্গ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে আগ্নেয় শিলা ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ছোট ছোট নুড়ি, কাকর ও বালিতে পরিণত হয়। অতঃপর অংশসমূহ উল্লিখিত প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা বাহিত হয়ে সমুদ্র, হ্রদ বা উপমহাদেশের তলদেশে পলল বা তলানীরূপে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। পরে তা বায়ুর চাপে জমে শক্ত ও দৃঢ় আকার প্রাপ্ত হয়। এ ধরনের শিলাকে পাললিক শিলা বলে। পলল বা তলানী হতে এ শিলা গঠিত হয় বলে একে পাললিক শিলা বলে। আবার স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে এ শিলাকে স্তরীভূত (Stratified) শিলা বলে। ইহা অকেলাসিত ।

শিলা ও খনিজ , মৃত্তিকা বিজ্ঞান

পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য:
  • এ শিলা মূল শিলার (Older rocks) ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ হতে সৃষ্টি হয়।
  • পাললিক শিলা স্তরে স্তরে সৃষ্টি হয় বলে এর মধ্যে স্তর থাকে।
  • এ শিলার মধ্যে জীবাশা দেখা যায়। ইহা উত্তপ্ত অবস্থা হতে সৃষ্ট নয় বলে অকেলাসিত ।
  • ইহা গৌণ বা মাধ্যমিক (Secondary) শিলা নামে পরিচিত।
  • ইহা ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ায় উন্নত (Developed ) হতে পারে। বালিপাথর (Sand stone), শেল (Shale), ডলোমাইট (Dolomite), সিল্ট স্টোন (Silt stone), চুনাপাথর (Lime. stone) ইত্যাদি পাললিক শিলার উদাহরণ।

 

রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic rocks):

প্রচন্ড তাপ ও চাপের যৌথ প্রভাবে মূল আগ্নেয় ও পাললিক শিলা কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে অধিকতর কঠিন ও স্ফটিকাকার যে নতুন শিলার সৃষ্টি হয় তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। এ ভাবে চুনাপাথর (পাললিক শিলা) রূপান্তরিত হয়ে মার্বেলে, বেলেপাথর (পাললিক শিলা) পরিবর্তিত হয়ে কোয়ার্টজাইট, কাদা পরিবর্তিত হয়ে স্লেটে (Slate), গ্র্যানাইট (আগ্নেয় শিলা) পরিবর্তিত হয়ে নীসে ( Gneisses) পরিণত হয়।

আগ্নেয়শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় রূপান্তরিত হলে তাকে আগ্নেয় রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন : গ্র্যানাইট নীসে ( Gneisses ), পরিণত হওয়া। অনুরূপভাবে পাললিক শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হলে তাকে পাললিক রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমনঃ বেলে পাথর পরিবর্তিত হয়ে কোয়ার্টজাইট পরিণত হওয়া।

 

রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য:

আগ্নেয় ও পাললিক শিলা উভয় শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ ইহা আগ্নেয় ও পাললিক শিলার জাতক। প্রচন্ড তাপ ও চাপের যৌথ প্রভাবে এ নতুন প্রকৃতির শিলার সৃষ্টি হয়। ইহা কেলাসিত হয় বলে ইহাকে পাললিক শিলা থেকে পৃথক করা যায়। এ জাতীয় শিলার খনিজ উপাদানগুলি সমান্তরাল থাকে বলে আগ্নেয় শিলা থেকে সহজে পৃথক করা যায়।

 

খনিজ (Minerals) কী?

প্রাকৃতিক অজৈব প্রক্রিয়ায় তৈরি সমসত্ব স্ফটিকাকার বস্তু যার সুনির্দিষ্ট আণবিক গঠন ও রাসায়নিক সংযুক্তি রয়েছে তাকে খনিজ বলে। দুই বা ততোধিক খনিজ একত্রিত হয়ে শিলা গঠন করে। সুতরাং খনিজ হলো শিলা গঠনের উপাদান।

শিলা ও খনিজ , মৃত্তিকা বিজ্ঞান

খনিজ প্ৰধানত দু’প্রকার :

প্রাইমারী খনিজ (Primary minerals) : উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা শীতল ও কঠিন হওয়ার ফলে সৃষ্ট খনিজকে প্রাইমারী খনিজ বলে। যেমনঃ কোয়ার্টজ (SiO2) অর্থোক্লেজ ( KAISiO3) মাস্কোভাইট [KAl Si O 10 (OH)2], বায়োটাইট ( KAI (Mg-Fe), Si, O 10 (OH)2], ইত্যাদি প্রাইমারী খনিজ।

সেকেন্ডারী খনিজ (Secondary minerals) : তাপ, চাপ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে প্রাথমিক খনিজ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে খনিজ সৃষ্টি হয় তাকে সেকেন্ডারী খনিজ বলে। যেমনঃ ক্যালসাইট (CaCO3), জিপসাম (CaSO4, 2H2O), লিমোনাইট, (Fe2O3, 3H2O), ডলোমাইট [(CaMg (CO3)2] শিলা ও খনিজের মধ্যে পার্থক্য ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে শিলা ও খনিজ পদার্থে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। নিচে শিলা ও খনিজের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য তুলে ধরা হলো।

Capture শিলা ও খনিজ

সূত্র:

  • শিলা ও খনিজ, পাঠ ১.৩, ইউনিট ১ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment