কমলা চাষ

কমলা চাষ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “উদ্যান ফসল” বিষয়ের ৮ নং ইউনিটের, পাঠ নং ৮.৪।

কমলা চাষ

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ

 

কমলা হল লেবুজাতীয় ফলের মধ্যে সারাবিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত জনপ্রিয় ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি উৎকৃষ্ট ফল। বর্তমানে বাংলাদেশে কমলার বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়েছে। বৃহত্তর সিলেট, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, পঞ্চগড় কমলা চাষের জন্য উপযোগী।

 

কমলার জাত :

কমলার অনেক জাত রয়েছে। আমাদের দেশে জনপ্রিয় জাতগুলোর মধ্যে খাসিয়া, বারি কমলা—১, বারি কমলা—২, নাগপুরী উল্লেখযোগ্য। কমলার চাষের উপযোগী জলবায়ু ও মাটি কমলা যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ভালো হয় সেখানেই ভালো জন্মে। কমলা গাছ ৫৫ ফারেনহাইট থেকে ১০০  ফারেনহাইট তাপমাত্রায় জন্মে। সুনিষ্কাশিত দোঅঁাশ, বেলে দোঅঁাশ, পাহাড়ী মাটি কমলা চাষ করা হয়। বিশেষ করে উর্বর পার্বত্য এলাকায় এর চাষ ভালো হয়। কমলা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বৃষ্টিপাত হলে পোকার আক্রমণ বেড়ে যায় এবং ফলের ক্ষতি হয়। অম্লীয় মাটিতে কমলা ভালো হয়।

কমলা চাষ , উদ্যান ফসল , পাঠ – ৮.৪ , ইউনিট – ৮
চিত্র ৮.৩.১ : কমলা গাছ বংশবিস্তার

কমলা বীজ এবং কলম দুই পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করতে পারে। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলে মাতৃগাছের গুণাগুন ঠিক থাকে না, ফল আসতে বিলম্ব হয়। গুটি কলম, জোড় কলম ও চোখ কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করলে মাতৃগাছের গুণাগুন ঠিক থাকে এবং ফল তাড়াতাড়ি আসে।

 

কমলা চাষ 3 কমলা চাষ
কমলা চাষের জন্য জমি তৈরি :

জমি তৈরির আগে আগাছা জঙ্গল পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত কলমের চারা রোপনের উপযুক্ত সময়। তবে অন্যান্য সময় চারা রোপন করতে চাইলে সেচের ব্যবস্থা করে নিতে হবে। কমলার জন্য ৬ মি.৬ মি. দুরত্বে রোপন করা ভালো। চারা রোপনের ১৫—২০ দিন পূর্বে গর্ত করে নিতে হবে।

সারব্যবস্থাপনা : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট কতৃর্ক বয়সভেদে কমলা গাছে সারের গাছ প্রতি মাত্রা হলো—

Capture 100 কমলা চাষ

কমলার চারা রোপন :

গর্তের ঠিক মাঝখানে এক বছর বয়সের চারা রোপন করতে হবে। চারা গাছ ভালোভাবে বসিয়ে দিতে হবে। তবে চারা লাগানো আগে গর্ত প্রতি ১৫—২০ কেজি গোবর সার মাটির সাথে মিশিয়ে ভরাট করে ফেলতে হবে। উপরের মাটির সাথে ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপি সার ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চারার গোড়ার মাটি উঁচু করে দিয়ে খুটি বেধে দিতে হবে। আবার গরু—ছাগল, বন্য পশুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য খাচা দিয়ে বেড়া দিতে হবে।

আন্তঃপরিচর্যা গাছের মরা রোগাক্রান্ত ডাল ছেঁটে ফেলতে হবে। গাছে অতিরিক্ত ফল আসলে কিছু ফল ফেলে দেওয়া ভালো। বর্ষা আসার পরে ফল আহরণের পর পরই মরা ও রোগাক্রান্ত ডাল পালা ছেঁটে দিতে হবে। এতে ফল বড় এবং বেশি হয়।

কমলা চাষ 1 কমলা চাষ

 

কমলা চাষে সেচ :

খরা বা শীত মৌসুমে সেচ দিতে হয়। তবে ৩—৫ বার সেচ দেয়া উচিত। বর্ষাকালে পানি না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শীতকালে ১৫—২০ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে।

 

কমলা চাষে রোগ বালাই দমন:

রোগ দমন লেবু জাতীয় ফলের ডাইব্যাক রোগ একটি মারাত্মক রোগ। এ রোগে গাছের অগ্রভাগের ডাল মারা যেতে থাকে এবং আস্তে আস্তে গাছ মারা যায়। রোগ দেখামাত্র ১০—১৫ দিন পর পর বোর্দোমিশ্রণ স্প্রে করলে এ রোগ দমন হয়। ক্যাঙ্কার রোগে পাতা, ফল ঝরে যায়। বোর্দোমিক্সার প্রয়োগে বা আক্রান্ত অংশ কেটে রোগ দমন করা যায়। সাইলিড নামক পোকা গ্রীনিং রোগ বহন করে। এ রোগে আক্রান্ত হলে গাছের পাতা হলদে হয়। পাতা পাতলা কোকড়ানো ও ছোট হয়। গাছ মারা যেতে থাকে এবং ফল ধারণ ক্ষমতা থাকে না।

কমলা চাষ 1 কমলা চাষ

পোকামাকড় দমন পাতা ছিদ্রকারী পোকা কচি পাতার নিচে আক্রমণ করে ফলে পাতা কুকড়ে যায়। এ পোকা দমনে মেটাসিসটক্স ১০ মি.লি./১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করা হয়। কান্ড ছিদ্রকারী পোকা ডাল বা কান্ড খেয়ে শুকিয়ে মারা যায়। রিপকর্ড ১০মি.লি/১০লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ফলের মাছি পোকার কীড়া ফলের ভিতরে খেয়ে ফল ছিদ্র করে বের হয়ে আসে এবং ফল নষ্ট হয়ে ঝড়ে পড়ে। এ পোকার জন্য অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

 

কমলা সংগ্রহ :

কমলা গাছে প্রথমের দিকে ফল কম হয় তবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলন বেড়ে যায় এবং ফল বড় হয়। কমলা নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে পাকা শুরু হয়। ফলগুলো পরিপক্ক হলেই সংগ্রহ করা উচিত। কমলা সংগ্রহের কয়েকদিনের মধ্যে হলুদ রং ধারণ করে। ফলন কমলা হেক্টর প্রতি গড় ফলন ২৫—৩০ মেট্রিক টন। সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা সেচের সুবিধা থাকলে ফলন বাড়ানো সম্ভব।

 

আরও দেখুন :

Leave a Comment