কৃত্রিম প্রজনন

আজকে আমরা কৃত্রিম প্রজনন সম্পর্কে জানবো। গাভী গরম হলে বা ডাকে আসলে ষাঁড় ছাড়া কৃত্রিম ভাবে গাভীর জরায়ুতে উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীজ দেওয়াই কৃত্রিম প্রজনন। এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর গাভীর জাত উন্নয়ন ইউনিটের অন্তর্গত।

 

কৃত্রিম প্রজনন

 

Table of Contents

কৃত্রিম প্রজনন

 

কৃত্রিম প্রজনন (Artificial insemination)

গবাদিপশুর কৌলিকমান উন্নয়নের (Genetic improvement ) জন্য কৃত্রিম প্রজনন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। অধিক উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কোনো ষাঁড় ব্যবহার করে বহুসংখ্যক গাভীকে পাল দেওয়ানোর জন্য কৃত্রিম প্রজনন কৌশলটি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি বহুলভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে ।

 

কৃত্রিম প্রজননের আদিকথা (History of artificial insemination)

খ্রীষ্টের জন্মের ১৩০০ বছর পূর্বে একজন আরব বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম ঘোড়ীতে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গর্ভধারণ ঘটাতে সক্ষম হন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় । প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম প্রজননে প্রথম সফলতা লাভ করেন ইটালির বিজ্ঞানী স্পেলেনজানি ১৭৮০ সালে । তিনি সাফল্যজনকভাবে কুকুরীতে কৃত্রিম প্রজনন করেন। ১৯২৮ সাল থেকে রাশিয়াতে ব্যাপকভাবে গাভীতে কৃত্রিম প্রজনন প্রয়োগ শুরু হয়। পাকভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৩৯ সালে মহিশুর দুগ্ধ খামারে কৃত্রিম প্রজনন শুরু হয় । স্বাধীনতা পূর্ব পঞ্চাশ-এর দশকে এদেশে সরকারীভাবে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয় । স্বাধীনতার পর ১৯৭৫-৭৬ সাল থেকে আমাদের দেশে কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়েছে।

 

কৃত্রিম প্রজনন কী?

কৃত্রিম প্রজনন হচ্ছে এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে

  • কৃত্রিমভাবে ষাঁড় থেকে বীর্য সংগ্রহ করা হয় ।
  • সংগৃহীত বীর্যের গুণাগুন পরীক্ষা করা হয় ।
  • বীর্যকে তরল করা হয় এবং
  • যান্ত্রিক উপায়ে স্ত্রী জননতন্ত্রের নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট পরিমাণ বীর্য প্রবেশ করানো হয় ।

 

কৃত্রিম প্রজনন

 

কৃত্রিম প্রজননের সুবিধা ( Advantages of artificial insemination)

  •  কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ভালো গুণাবলী সম্পন্ন উন্নত ষাঁড় থেকে বীর্য সংগ্রহ করে গাভীকে পাল দেওয়া যায় এবং এভাবে জাতের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয় ।
  •  প্রাকৃতিকভাবে পাল দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি ষাঁড় বছরে ৫০টি গাভীর সাথে মিলিত হতে পারে । কিন্তু কৃত্রিম প্রজননের বেলায় ঐ ষাঁড়ের বীর্য দিয়ে বছরে কমপক্ষে ১০০০০ গাভীকে পাল দেওয়া সম্ভব হয় ।
  • উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীর্য সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে ব্যবহার করা যায় ।
  • বিদেশী উন্নত জাতের ষাঁড় আমদানি না করেও শুধুমাত্র বীর্য আমদানি করে দেশী অনুন্নত জাতের গাভীকে পাল দেওয়া সম্ভব হয় ।
  • অনেক সময় বড়ো আকারের ষাঁড় দিয়ে ছোট আকারের গাভীকে প্রাকৃতিকভাবে পাল দেওয়া অসুবিধা হয়ে পড়ে । কৃত্রিম প্রজনন দ্বারা এই অসুবিধা দূর করা যায় ।
  • একস্থান থেকে অন্যস্থানে গাভী বা ষাঁড় পরিবহণের খরচ এবং ঝামেলা পোহাতে হয় না ।
  • কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ষাঁড় থেকে গাভীতে সংক্রামক রোগ (যেমন- ভিব্রিওসিস, ট্রাইকোমোনিয়াসিস ইত্যাদি) বিস্তার প্রতিহত করা যায় ।
  • গাভীতে বীর্য প্রবেশ করানোর পূর্বে বীর্যের গুণাবলী পরীক্ষা করে দেখা হয় বলে গাভীর গর্ভধারণের সম্ভাবনাও বেশি থাকে ।

 

কৃত্রিম প্রজননের অসুবিধা (Disadvantages of artificial insemination)

  • দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অপারেটর এবং বিশেষ ধরনের যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় ।
  • প্রাকৃতিকভাবে পাল দেওয়ার চেয়ে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় ।
  • যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে পরিষ্কার করা না হলে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় থাকলে গাভীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায় ।

 

কৃত্রিম প্রজনন

 

বীর্য সংগ্রহ (Collection of Semen)

ভালো মানের বীর্য পেতে হলে উন্নত জাতের ষাঁড় বাছাই করার পাশাপাশি ষাঁড়কে সঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে, আরামদায়ক বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবে, নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করাতে হবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে বীর্য সংগ্রহ করতে হবে ।

 

বীর্য সংগ্রহ পদ্ধতি (Semen collection methods)

কৃত্রিম উপায়ে বীর্য সংগ্রহের জন্য নিলিখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।

  • কৃত্রিম যোনি পদ্ধতি (Artificial vagina method)
  • বৈদ্যুতিক বীর্যক্ষরণ পদ্ধতি (Electro ejaculate method )
  • মৈথুন পদ্ধতি (Massage method

 

কৃত্রিম যোনি পদ্ধতি (Artificial vagina method)

কৃত্রিম উপায়ে ষাঁড় হতে বীর্য সংগ্রহের জন্য কৃত্রিম যোনি পদ্ধতি একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। এটি তুলনামূলকভাবে অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে সহজ ও কম ব্যয়সাপেক্ষ । এই পদ্ধতিতে কৃত্রিমভাবে একটি যোনি তৈরি করা হয়, যেখানে তাপ ও চাপ এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যা গাভীর যোনির মতোই মনে হয় ।

 

কৃত্রিম যোনি প্রস্তুতকরণ

কৃত্রিম যোনি প্রস্তুত করার পূর্বে এর বিভিন্ন অংশগুলোর নাম জেনে নেয়া যাক । যে অংশগুলোর সমন্বয়ে একটি কৃত্রিম যোনি তৈরি করা হয়ে থাকে সেগুলো হলো-

  • রাবার সিলিন্ডার (২-৩” ব্যাস, দৈর্ঘ্য ১৪-১৮”)
  •  রাবার ইনার লাইনার
  • রাবার কোণ
  • দাগকাটা সংগ্রাহক নল
  • প্রটেকটিব টিউব
  •  থার্মোমিটার
  • রড ও পাম্পার
  • ভ্যাসেলিন বা কে.ওয়াই জেলী ইত্যাদি

 

কৃত্রিম যোনি প্রস্তুতকরণের ধাপ

  • প্রথমে ইনারলাইনারটি রাবার সিলিন্ডারের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দুই প্রান্ত ভালোভাবে আটকিয়ে দিতে হবে ।
  • এবার রাবার বন্ধনী দ্বারা সিলিন্ডারের পেছন দিকে রাবার কোণটি আটকিয়ে দিন । রাবার কোণের পেছনে সংগ্রাহকনল লাগিয়ে দিতে হবে ।
  • এখন ৪৩-৪৫° সে. (১১০-১১৫° ফাঃ) তাপমাত্রার গরম পানি দিয়ে রাবার সিলিন্ডার ও ইনার রাবার লাইনের মধ্যবর্তী স্থানের দুই-তৃতীয়াংশ ভর্তি করতে হবে ।
  • এবার পাম্পার দিয়ে পাম্প করে সিলিন্ডার ও লাইনারের মধ্যবর্তীস্থান ফুলিয়ে নিতে হবে ।
  • ভেসলিন বা কে.ওয়াই জেলী কাঁচের নল দিয়ে কৃত্রিম যোনির মুখের ফাঁকা জায়গায় মেখে নিতে হবে।
  • এবার থার্মোমিটারের সাহায্যে কৃত্রিম যোনির তাপমাত্রা ৪৩-৪৫° সে. এর মধ্যে আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে । কৃত্রিম যোনির বিভিন্ন অংশগুলো সংযোজনের পূর্বে সেগুলো অবশ্যই পরিস্কার ও জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে ।

 

কৃত্রিম প্রজনন

 

ষাঁড়ের যত্ন ও প্রস্তুতি (Care and preparation of bull)

কৃত্রিম উপায়ে বীর্য সংগ্রহের পূর্বে এবং সংগ্রহের সময় ষাঁড়ের যত্ন ও প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে । এগুলো হলো-

পরিচ্ছন্নতা (Cleanliness)

  • ষাঁড় অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হবে ।
  • বীর্য সংগ্রহের কয়েক মিনিট পূর্বে ব্রাশ দিয়ে গ্রুমিং করে নিতে হবে ।
  • পেনিসের সিথের মধ্যকার লম্বা চুল কেটে ফেলতে হবে ।
  • সিথের নিচের অংশ ভেজা তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিতে হবে ।
  • বেশি ময়লা থাকলে সিথ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে ।

 

বীর্য সংগ্রহপূর্বক উত্তেজনা:

  • বীর্য সংগ্রহের পূর্বে ডামি ব্যবহার করে ষাঁড়ের উত্তেজনা বাড়াতে হবে ।

 

উত্তেজনা ধরে রাখা:

  • ষাঁড়ের উত্তেজনা মুহুর্তে ভুল ব্যবস্থাপনা যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
  • বীর্য সংগ্রহকারীকে যথাসম্ভব কম নড়াচড়া করতে হবে ।
  • বীর্য সংগ্রহের সময় উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে ।

 

বীর্য সংগ্রহের সময় করণীয়

  • বীর্য সংগ্রহের সময় বীর্য সংগ্রহকারীকে অবশ্যই কৃত্রিম যোনির তাপমাত্রা সঠিক আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে ।
  • কখনো সিথসহ পেনিস যোনির ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে না ।
  •  কৃত্রিম যোনি অবশ্যই পেনিসের সমান্তরালে রাখতে হবে ।
  • পেনিস কখনো বেশি নিচু করা যাবে না এতে বীর্য সংগ্রহ ব্যাহত হতে পারে ।
  • বীর্য সংগ্রহকারীকে ষাঁড়ের আচরণ সমন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে ।
  •  যোনির ভেতর পেনিসকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে ষাঁড় যোনির ভেতর বীর্য নির্গত করতে পারে ।
  •  বীর্য সংগ্রহের সাথে সাথে সিমেন ভায়াল সরিয়ে নিতে হবে এবং তা ২৮-৩০° সে. তাপমাত্রায় ওয়াটার বাথে রেখে দিতে হবে ।

 

বীর্য সংগ্রহের হার

  • চার থেকে পাঁচ দিন অন্তর অন্তর ষাঁড় থেকে বীর্য সংগ্রহ করলে বীর্যের আয়তন তথা বীর্যের মধ্যস্থিত শুক্রানুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ।

 

বীর্যের মূল্যায়ন

কৃত্রিম উপায়ে সংগৃহীত বীর্য ব্যবহারের পূর্বে কতকগুলো ধারাবাহিক পরীক্ষা করা হয়। এ সকল পরীক্ষার মাধ্যমে বীর্যের গুণগতমান ও উর্বরতার ক্ষমতা নির্ণয় করা হয়। একেই বীর্যের মূল্যায়ন বলে । সংগৃহীত বীর্য কৃত্রিম প্রজননের জন্য উপযোগী কিনা তা বীর্যের মূল্যায়নের মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব । বীর্যকে কতগুণ তরলীকরণ করা যাবে সেটাও মূল্যায়নের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয় ।

 

কৃত্রিম প্রজনন

 

ম্যাক্রোস্কোপিক ও ভৌত পরীক্ষা

আয়তন :

সংগ্রাহক নলের সাহায্যে বীর্যের আয়তন সরাসরি পরিমাপ করা হয়। একটি ষাঁড় থেকে প্রতিবারে গড়ে ৫-৮ সি.সি. বীর্য পাওয়া যায় ।

বর্ণ :

বীর্যের বর্ণ সাধারনত ক্রীম, ধুসর বা হলুদাভ হয়ে থাকে। এর বাইরে কোনো রং যেমন— খুব হলুদ যা পূঁজ বা প্রসাব মেশানো বীর্য, লালচে যা রক্ত মেশানো বীর্য নির্দেশ করে ।

বীর্যের ঘনত্ব :

একটি সুস্থ ও সবল ষাঁড়ের বীর্যের ঘনত্ব ক্রীমের মতো হয়ে থাকে । অপরদিকে দুর্বল বা অসুস্থ ষাঁড়ের বীর্য পানির মতো তরল যা ব্যবহারের উপযোগী নয় ।

সান্দ্রতা ;

বীর্যের সান্দ্রতা সংগ্রাহক নল আলতোভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয় ।

 

মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা

বীর্যের নড়াচড়ার গতি পরীক্ষা (Motility of Spermatozoa) :

বীর্য সংগ্রহের অল্প সময় পরে একটি পরিস্কার পাইডে এক ফোটা বীর্য নিয়ে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে বীর্যের নড়াচড়ার গতি পর্যবেক্ষণ করা হয় । বীর্যের নড়াচড়ার গতিকে ০-৫ পর্যন্ত গ্রেডে ভাগ করা যায় ।

০ = এই গ্রেড বীর্যের মধ্যস্থিত শুক্রাণুর কোনোরূপ নড়াচড়া নির্দেশ করে না অর্থাৎ No motility |

+ = এই গ্রেড বীর্যের মধ্যকার শতকরা ২০ ভাগের কম শুক্রাণুর নড়াচড়া নির্দেশ করে । অবশ্য এতে বীর্যের অগ্রগামী গতি পরিলক্ষিত হয় না। এটা Poor motility।

++ = শতকরা ২০ থেকে ৫০ ভাগ শুক্রাণুর নড়াচড়া এ গ্রেডে পরিলক্ষিত হয়। এটা Good motility |

+++ = প্রায় শতকরা ৫০-৭৫ ভাগ শুক্রাণু নড়াচড়া করে। এতে শুক্রাণুগুলো সক্রিয় থাকে এবং অগ্রগামী গতি পরিলক্ষিত হয় । কিন্তু গতি খুব দ্রুত হয় না। এটি Very good motility |

++++ = এই গ্রেডের বীর্যের শতকরা ৮০ বা ততোধিক শুক্রাণু খুবই তড়িৎ গতি সম্পন্ন এবং এদের অগ্রগামী গতি এতো দ্রুত হয় যে কোনো একটি শুক্রাণু অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে আলাদা করে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না । এটা Excellent motility |

+++ = এ মান অথবা তার চেয়ে ভালমানের বীর্য কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহার করতে হবে ।

 

অস্বাভাবিক আকৃতির শুক্রাণুর হার

বীর্যের মধ্যে কোনোক্রমেই শতকরা ২০ ভাগের বেশি অস্বাভাবিক আকৃতির শুক্রাণু থাকা উচিত নয় । শুক্রাণুর আকৃতিতে যে অস্বাভাবিকতা গুলো দেখা যায়, সেগুলো হলো—

মাথা ঃ

দ্বৈত মাথা, লম্বা মাথা, ক্ষুদ্র মাথা, সরু মথা ।

লেজ ঃ

সরু লেজ, মাঝখানে ভাঙ্গা লেজ, ইত্যাদি।

ঘাড় ঃ

মাথার সাথে ভালো সংযোগের অনুপস্থিতি,

মধ্যভাগ ঃ

বর্ধিত, সরু ইত্যাদি ।

 

রাসায়নিক পরীক্ষা

পি.এইচ (pH) :

নাইট্রাজেন কাগজ দিয়ে এই পরীক্ষা সম্পাদন করা হয়। বীর্যের ভূত্র ষাঁড়ের ক্ষেত্রে ৬-৭ এর মধ্যে অবস্থান করে ।

মিথাইলিন-বু-পরীক্ষা :

এ পরীক্ষায় বীর্য প্রক্রিয়াজাত করে মিথাইলিন ব্লু মিশিয়ে ১১০-১১৫° ফা (৪৩-৪৬° সে.) তাপে নলের মধ্যে পানিতে রাখা হয় । ৩-৬ মিনিটের মধ্যে যদি বীর্যের নীল রং চলে যায়, তবে এটি ভালো মানের বীর্য, অন্যদিকে যদি নীল রং বিবর্ন হতে ৯ মিনিটের বেশি সময় নেয় তবে উক্ত বীর্য ব্যবহারের অনুপুযুক্ত বলে বিবেচিত হবে ।

 

বীর্য তরলীকরণ ও সংরক্ষণ

বীর্যের আয়তন এবং শুক্রাণুর বেঁচে থাকার সময়কাল বৃদ্ধির জন্য বীর্য তরলীকরণ অপরিহার্য । কৃত্রিম উপায়ে বীর্য সংগ্রহ করে তা তরলীকরণের মাধ্যমে অসংখ্য গাভীকে পাল দেওয়া যায়। এতে করে ভালো জাতের গবাদিপশুর উৎপাদন দ্রুত বাড়ানো সম্ভব । বীর্যের আয়তন বাড়ানোর জন্য যে মিডিয়া ব্যবহার করা হয় তাকে ডাইলুয়েন্ট বলে। যেমন— এগ ইয়ক সাইট্রেট একটি বহুল ব্যবহৃত ডাইলুয়েন্ট । বীর্য তরলীকরণে ব্যবহৃত ডাইলুয়েন্টের (diluent) নিচের বৈশিষ্টগুলো থাকতে হবে ।

  •  রাসায়নিক দিক থেকে ডাইলুয়েন্ট বিষাক্ত হবে না ।
  • ডাইলুয়েন্ট শুক্রাণুর জন্য শক্তি সরবরাহকারী খাদ্যোপাদানযুক্ত হবে ।
  • ঠান্ডা থেকে শুক্রাণু রক্ষা পাবে এমন গুণসম্পন্ন হতে হবে ।
  •  ডাইলুয়েন্ট অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব মুক্ত হবে ।
  • সম্পূর্ণভাবে জীবানুমুক্ত হতে হবে ।

 

ডাইলুয়েন্টের প্রকার

  •  এগইয়ক সাইট্রেট এক্সটেনডার
  • মিল্ক এক্সটেনডার
  • এগইয়ক ফসফেট ডাইলুয়েন্ট
  •  মিল্ক-রিপ্লেসার
  • কোকোনাট মিল্ক এক্সটেনডার

 

এগইয়ক সাইট্রেট ডাইলুয়েন্ট তৈরির ধাপ

বাফার তৈরি

১০০ সি.সি. বিশুদ্ধ পানির সঙ্গে ২.৯৪ গ্রাম সোডিয়াম সাইট্রেট পাউডার মিশ্রিত করে সোডিয়াম সাইট্রেট বাফার তৈরি করা হয় ।

এন্টিবায়োটিক যোগকরণ
  • পেনিসিলিন ৫ লক্ষ আই ইউ এম্পুল ৫ সি.সি. পানি দ্রবীভূত করে তার ১ সি.সি. ১০০ সি.সি. বাফার দ্রবণে যোগ করুন ।
  • স্ট্রেপটোমাইসিন এক গ্রামের একটি এম্পুলে ৫ সি.সি. পাতিত পানি দ্রবীভূত করে তার ০.৫ সি.সি. ১০০ সি.সি. বাফারে যোগ করুন ।
  • সালফালানিমাইড পাউডার ১০০ সি.সি. তৈরিকৃত বাফারে ০.৬ গ্রাম পাউডার যোগ করুন ।
এগইয়ক মিশ্ৰণ

মুরগীর ডিম (১ দিনের) এলকোহল দ্বারা ভালভাবে পরিস্কার করে নিন । অতপর ডিমের মোটা অংশ ভেঙ্গে নিন । জেলির মত ডিমের সাদা অংশ (এ্যালবুমিন) যতদূর পারা যায় স্পেচুলা দিয়ে আলাদা করুন । এবারে ডিমের কুসুম চোষ কাগজে ঢেলে নিন । আস্তে আস্তে সাদাঅংশ কাগজ দিয়ে চুষে নিয়ে কুসুমের পর্দাটি ফাটিয়ে কুসুম একটি দাগ কাটা সিলিন্ডারে রাখুন ও মেপে নিন। ১ ভাগ ডিমের কুসুমের সাথে ২-৪ ভাগ বাফার ভালো করে মিশান । এভাবে বীর্য তরলীকরণে ডাইলুয়েন্ট তৈরি করা হয় ।

 

বীর্য মিশ্রিতকরণ

বীর্য ডাইলুয়েন্টর সাথে মিশ্রণের পূর্বে বীর্যের মধ্যস্থিত শুক্রাণুর ঘনত্ব কত তা জেনে নিতে হবে । ধরা যাক, কোন বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা ১০০০ মিলিয়ন/সি.সি. । এক্ষেত্রে বীর্যকে (১০০০ মিলিয়ন = ১০ মিলিয়ন) = ১০০ গুণ বর্ধন করা যাবে (যেহেতু ১ সি.সি. বীর্যে কমপক্ষে ১০ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকে) এভাবে ১ সি.সি. আদি বীজ ১০০ সি.সি. ডাইলুয়েন্টের সাথে যোগ করা যেতে পারে। সাধারণত বীর্যকে ১০-২৫০ গুণ তরলীকৃত করা যায় । এটা অবশ্য বীর্যে অবস্থিত শুক্রাণুর সংখ্যার ওপর নির্ভর করে।

বীর্য সংরক্ষণ

বীর্যকে দুভাবে সংরক্ষণ করা যায়-

স্বল্প সময়ের জন্য ঃ

৪-৫° সে. তাপমাত্রায় ৩-৪ দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় ।

দীর্ঘ সময়ের জন্য ঃ

– ৭৯° সে. তাপমাত্রায় শুষ্ক বরফ ও অ্যালকোহলে এবং – ১৯৬° সে. তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেন দ্বারা সংরক্ষণ করা যায় ।

 

কৃত্রিম প্রজনন

 

কৃত্রিম উপায়ে গাভীকে পাল দেওয়ার নিয়ম

  • প্রজননের জন্য গাভী চিহ্নিত করে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে ।
  • গাভী ঋতুচক্রের কোন্ অবস্থায় আছে তা জেনে নিতে হবে ।
  • গাভীকে শূটের (Chute) মধ্যে ভালভাবে আটকিয়ে নিতে হবে ।
  • এবার বাম হাতে গ্লোবস, গায়ে অ্যাপ্রন এবং গামবুট পরিধান করতে হবে ।
  •  জীবানুনাশক দিয়ে হাত, পশুর মলদ্বার ও যোনির বাইরের অংশ ভালভাবে মুছে নিতে হবে এবং পিচ্ছিলকারক দিয়ে হাতের উপরে গ্লোবসকে পিচ্ছিল করে নিতে হবে ।
  • বাম হাতটি এবার মলদ্বার দিয়ে প্রবেশ করাতে হবে এবং মলাশয় থেকে মূত্রাশয় দেয়ালের ওপর দিয়ে জননতন্ত্রের সার্ভিক্স ধরতে হবে ।
  • অতপর ১ সি.সি. পরিমাণ তরল বীর্য ক্যাথেটারে নিতে হবে ।
  • বীর্যপূর্ণ ক্যাথেটারটি ডান হাত দিয়ে ধীরে ধীরে যোনির মধ্যে প্রবেশ করাতে হবে এবং বাম হাত দিয়ে ক্যাথেটারের অস্তিত্ত অনুভব করতে হবে।
  • ক্যাথেটারের পলিবান্ধে চাপ দিয়ে বীর্যকে জননতন্ত্রে প্রবাহিত করতে হবে । পুরো বীর্য সার্ভিক্সে নির্গত হলে পলিবাল্বে সমপরিমাণ চাপ রেখে ক্যাথেটার বের করতে হবে ।

সারমর্ম

উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি অনুন্নত দেশগুলোতেও কৃত্রিম প্রজনন কৌশল গবাদিপশুর কৌলিকমান উন্নয়নে বহুল প্রচলিত । প্রাকৃতিকভাবে পাল দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি ষাঁড় বছরে ৫০টি গাভীর সাথে মিলিত হতে পারে। কিন্তু কৃত্রিম প্রজননের বেলায় একটি ষাঁড়ের বীর্য ব্যবহার করে বছরে কমপক্ষে | ১০০০০ গাভীকে পাল দেওয়া সম্ভব । কৃত্রিম প্রজনন কৌশল সফলভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে বিদেশী উন্নত জাতের ষাঁড় আমদানি না করেও শুধুমাত্র বীর্য আমদানি করে দেশী অনুন্নত জাতের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে কৃত্রিমভাবে ষাঁড় থেকে বীর্য সংগ্রহ করতে হয়, ঐ বীর্য মূল্যায়ন করতে হয়, প্রয়োজনে সংরক্ষণ করতে হয় এবং সঠিকভাবে গাভীকে পাল দেওয়াতে হয় ।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন

১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন ।

ক. কোন দেশের বিজ্ঞানী ঘোড়ীতে সর্বপ্রথম কৃত্রিম প্রজনন ঘটাতে সক্ষম হন

i. মিশরীয় বিজ্ঞানী।

ii. আরব বিজ্ঞানী

iii. রাশিয়ার বিজ্ঞানী

iv. ইউরোপের বিজ্ঞানী

খ. আমাদের দেশে কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ প্রকল্প চালু হয় কত সালে ?

i. ১৯৭৫-৭৬ সালে

ii. ১৯৭৬-৭৮ সালে

iii. ১৯৫৭-৫৮ সালে

iv. ১৯৭৭-৭৮ সালে

২. সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন ।

ক. একটি ষাঁড় বছরে ৫০টি গাভীর সাথে মিলিত হতে পারে ।

খ. কৃত্রিম প্রজননে দক্ষ ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অপারেটরের প্রয়োজন নেই ।

৩। শূণ্যস্থান পূরণ করুন ।

ক. কৃত্রিম যোনিতে গরম পানির তাপমাত্র ————–।

খ. ২০-৫০ ভাগ শুককীটের নড়াচড়া ————-।

৪।  এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন।

ক. একটি ষাঁড় থেকে প্রতিবারে কী পরিমাণ বীর্য পাওয়া যায় ।

খ. ষাঁড়ের ক্ষেত্রে বীর্যের pH কত ?

 

Leave a Comment