খামারের কার্যাবলী, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা – পাঠঠি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.৩। খামারের কার্যাবলী খামারের অধিক উৎপাদনশীল করতে নিমèবর্ণিত কার্য সম্পাদন করতে হয় ।
Table of Contents
খামারের কার্যাবলী, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা
যেমন—
১। টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।
২। উপকরণ এর সহজ প্রাপ্যতা বিবেচনায় নিতে হবে।
৩। যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা উন্নত হতে হবে।
৪। উৎপাদন উপকরণ যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৫। সঠিক সময়ে উৎপাদন কার্য পরিচালনা করতে হবে।
৬। শ্রমিকের সহজলভ্যতা ও যোগান নিশ্চিত করতে হবে।
৭। খামারকে লাভজনক করতে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নয়ন
৮। উৎপাদিত পণ্য যথাসময়ে উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাত করতে হবে।
খামার ব্যবস্থাপনা:
খামার ব্যবস্থাপনার সাথে লাভ লোকসানের সাথে সম্পর্কযুক্ত সিদ্ধান্তগুলোই বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। একটি খামার সাধারণত: ক) জমি, খ) শ্রম, গ) মূলধন, ঘ) যন্ত্রপাতি নিয়ে গঠিত। এ্যান্ডু বসের সংজ্ঞানুসারে, খামার ব্যবস্থাপনা হলো “খামারের উৎপাদন সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কাজে ব্যবসায়িক ও বৈজ্ঞানিক নীতিমালার প্রয়োগ। জি.এফ. ওয়ারেন এর মতে খামার ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যা ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে খামারের বিভিন্ন ফসল বা পণ্য সামগ্রী উৎপাদনের সাংগঠনিক ও ব্যবস্থাপনাগত দিক নিয়ে আলোচনা করে থাকে।
খামার ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য:
খামার ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হল বৈজ্ঞানিক উপায়ে জমি, শ্রম, পুঁজি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উৎপাদন ও মুনাফা বৃদ্ধিকরণ। খামার ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যগুলো হতে পারে— * স্বল্প খরচে উৎপাদন বাড়ানো
* খরচের সাথে মুনাফা সর্বাধিক করা
* বিভিন্ন ধরনের উৎপাদন ঝুঁকি কমিয়ে আনা
* পারিবারিক সচ্ছলতার জন্য পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করা।
* প্রাকৃতিক উৎসের বা সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা।
খামার পরিচালনা :
খামার পরিচালনা বলতে উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা এবং খামারের বিভিন্ন কার্যাবলী সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য উপাদানসমূহের সমন্বয় সাধন করাকে বুঝায়। খামার পরিচালনার নীতিমালাগুলো নিম্নে বর্ণিত হলো—
১। ক্রমহ্রাসমান আয়নীতি
২। ব্যয় নীতি
৩। প্রতিস্থাপন নীতি
১। ক্রমহ্রাসমান আয় নীতি:
উৎপাদনের সকল উপাদান এর পরিমান অপরিবর্তিত রেখে শুধু কেবল উপাদানের পরিমান বাড়ানো হয়। প্রথমে উপাদান বৃদ্ধির সাথে সাথে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট বৃদ্ধির পর প্রথমে প্রান্তিক উৎপাদন এবং পরে গড় উৎপাদন হ্রাস পেতে থাকবে। এটাই ক্রমহ্রাসমান আয় নীতি। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যাবহার। জমিতে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন কোন নির্দিষ্ট জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে ফলন বৃদ্ধি পাবে। একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলেও পরে আর ফলন বৃদ্ধি পায় না।
২। ব্যয় নীতি:
খামারের উৎপাদনের লাভ লোকসান নির্ধারনে এ নীতি ব্যবহার করা হয় উৎপাদনে দুই ধরনের খরচ হয়। স্থির খরচ যেমন কর্মচারীর বেতন, খামার নির্মান ব্যয়, জমির খাজনা। অস্থায়ী বা পরিবর্তনশীল খরচ উৎপাদনের সাথে উঠানামা করে। মোট উৎপাদন খরচ যদি উৎপাদন আয়ের চেয়ে কম হয়। তবে খামারে আরো মূলধন বিনিয়োগ করা যাবে ততক্ষন মূলধন ব্যবহার করা যাবে যতক্ষন পর্যন্ত মোট উৎপাদন আয় ও পরিবর্তন ব্যয় সমান না হয়।
৩। প্রতিস্থাপন নীতি:
প্রতিস্থাপন নীতি দ্বারা কোন ফসল লাভজনক তা নির্ধারণ করা যায়। এ নীতি ব্যবহার করে কম লাভজনক ফসলের উৎপাদন বন্ধ রেখে অন্য লাভজনক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। এ নীতি ২টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে প্রতিস্থাপিত ফসলের ফলন
উদাহরণ হিসাবে আউশ ধানের বাজারদর কমে যাওয়ায় খামারী যদি সে জমিতে পাট লাগানোর ইচ্ছে করেন, এক্ষেত্রে আউশ ধান প্রতিস্থাপিত ফসল এবং আলু হলো চাষকৃত ফসল। যদি প্রতিস্থাপন অনুপাত মূল্য অনুপাতের চেয়ে ছোট হয় তবে ফসল প্রতিস্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ আউশ ধানের বদলে আলু চাষ করতে হবে। আর প্রতিস্থাপন অনুপাত মূল্য অনুপাতের চেয়ে বড় হয় তবে ফসল প্রতিস্থাপন করা যাবে না। তখন আলু লাগানো যাবে না।
আরও দেখুন :