উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ২.২০ লক্ষ হেক্টর জমি চিংড়ি চাষের উপযোগী। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৫০ লক্ষ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করা হয় না বলে হেক্টর প্রতি উৎপাদন ২০০-২৫০ কেজি মাত্র। আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হলে এ উৎপাদন ১৫০ কেজি থেকে ২০০০ কেজিতে বাড়ানো সম্ভব। বর্তমানে কোন কোন খামারে এ পদ্ধতি অবলম্বন করার ফলে হেক্টর প্রতি ২০০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে চিংড়ির স্থান তৃতীয়।
তাছাড়া বেকার সমস্যা সমাধানে চিংড়ির যথেষ্ট অবদান আছে। প্রায় ২ লক্ষ লোক এ পেশায় নিয়োজিত। উপকূলীয় এলাকায় ঘেরে চিংড়ি চাষ করার ফলে পরিবেশ দূষণ রোধ হচ্ছে। চিংড়ি রপ্তানি করে কয়েক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

Table of Contents
চিংড়ি চাষ ও বাজারজাতকরণ
বর্তমানে বছরে শুধুমাত্র চিংড়ি রপ্তানি করে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। বিশ্বে চিংড়ির চাহিদার জন্য চিংড়ি এলাকা সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। এ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের যথাযথভাবে চাষের ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকারী এ সম্পদ আরো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা:
বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা – পঠিটি কৃষি শিক্ষা বিষয়ের ২য় পত্রের ২ ইউনিট এর পাঠ – ২.১ এর অংশ।
চিংড়ি সাধারণত মিঠা ও লোনা পানিতে বাস করে। মিঠা পানির চিংড়ি বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ জলাশয়, যেমন— পুকুর, ডোবা, দিঘি, খাল—বিল, নদী—নালা ও ধানক্ষেতে বাস করে। লোনাপানির চিংড়ি সমুদ্রের লোনা পানিতে এবং মোহনার ইষৎ লবণাক্ত পানিতে বাস করে।
বাংলাদেশে চাষযোগ্য চিংড়ির প্রজাতি :
বাংলাদেশে বিভিন্ন জলাশয়ে প্রায় ৬৭টি প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। এর মধ্যে মিঠা পানির গলদা চিংড়ি এবং লোনা পানির বাগদা, চাকা ও হরিণা চিংড়ির চাষ লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
গলদা চিংড়ির সম্ভাবনা :
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গলদা চিংড়ি বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন— গোদা চিংড়ি, শলা চিংড়ি, ছোয়া, ইচা ইত্যাদি। গলদা চিংড়ির বৈজ্ঞানিক নাম Macrobracium rosebergii এবং ইংরেজিতে Giant prawn বলা হয়। প্রাপ্তিস্থান :এই চিংড়ি মিঠা বা স্বাদু পানিতে বাস করে। বাংলাদেশের দাউদকান্দি, বাগেরহাট, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে এদের অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়।
বাগদা চিংড়ির সম্ভাবনা:
বাগদা সামুদ্রিক ও লোনা পানির চিংড়ি। তবে এদের পোনা (পি.এল) মোহনায় পাওয়া যায়। বাগদা চিংড়ির বৈজ্ঞানিক নাম হলো Giant tiger prawn। ইংরেজিতে এদেরকে Giant tiger pawn বলা হয়।
প্রাপ্তিস্থান : বাগদা চিংড়ি লোনা পানিতে বাস করে। বাংলাদেশের বাগেরহাট (উর্ধ্বমোহনায়), চালনা (মোহনা), খুলনা (পশুর নদীর মুখে নিম্ন মোহনায়), পটুয়াখালি (রাঙাবালী), খেপুপাড়া (মোহনায়), কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বঙ্গোপসাগর এদের বিচরণ ক্ষেত্র।
বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক:
বিশ্বের সর্বত্র বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সকল প্রকার প্রাকৃতিক আমিষ জাতীয় উপাদানের মধ্যে চিংড়ি হচ্ছে একটি অত্যন্ত মূল্যবান উপাদেয় খাদ্য। বিশ্বের চিংড়ি উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশ চিংড়ি সম্পদে খুবই সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে চিংড়ি একটি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। দেশের আর্থ—সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা অতি উজ্জ্বল।
বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পোশাক শিল্পের পরেই চিংড়ির স্থান। চিংড়ি চাষে কাঁচামাল, চিংড়ির পোনা এ দেশের প্রাকৃতিক উৎস হতে সহজেই পাওয়া যায়। চিংড়ি চাষ বর্তমানে একটি শিল্প হিসেবে চিহ্নিত। এ শিল্পে স্বল্প ব্যয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য নদী—নালা, খাল—বিল, পুকুর—ডোবা, দিঘি এবং দেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের ৪৮০ কি.মি. তটরেখা বরাবর ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অর্থনৈতিক এলাকাসমূহে চিংড়ি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে স্থানীয় কৌশলে প্রায় অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে।
উৎপাদনের উপকরণ খরচ, জমির ইজারা মূল্য, শ্রমিকের মজুরি এবং পোনার কম মূল্য, অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে মাটি ও পানির গুণগত মান, বাজারে আকর্ষণীয় মূল্য, আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক বিধায় বাংলাদেশের চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। বর্তমানে বাংলাদেশে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ১,৪০,০০০ হেক্টর জমিতে চিংড়ির চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে খুলনা অঞ্চলে ১,১০,০০০ হেক্টর ও কক্সবাজার অঞ্চলে ৩০,০০০ হেক্টর। এছাড়াও দেশের ১৬টি জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমি গলদা চিংড়ি চাষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশের মিঠা পানিতে বিশেষ করে ধানক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এদেশের শুধুমাত্র চিিংড়ির পোনা ধরার কাজেই জড়িত আছে ২-৫ লাখ লোক। তাছাড়া চিংড়ি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে প্রায় ১.৫-২ লাখ লোক জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশে চিংড়ি চাষ প্রধানতঃ প্রচলিত ও আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে হচ্ছে।
যার শতকরা ৭৫ শতাংশ জমিতে প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে এবং উৎপাদন হার হলো প্রতি হেক্টরে ২০০—২৫০ কেজি। বাংলাদেশের বিশাল চিংড়ি চাষ এলাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, চাষ পদ্ধতির সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চিংড়ি উৎপাদন অনেকগুণ বাড়ানো সম্ভব। সুতরাং আমরা দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি যে, বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে চিংড়ি রপ্তানি করে যে আয় তার পরিমাণ জাতীয় আয়ের শতকরা প্রায় ৭.৮ ভাগ। রপ্তানি আয়ে চিংড়ির অবদান প্রায় ৮.৫%।
সূত্র: [ বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা | ইউনিট-২ , পাঠ -২.১ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র ]

বাংলাদেশে চাষযোগ্য চিংড়ির বিভিন্ন জাত বা প্রজাতির পরিচিতি:
দেশের স্বাদু ও লোনা পানিতে প্রায় ৬০টি প্রজাতির চিংড়ি আছে। সব প্রজাতি চাষ করা হয় না। বর্তমানে ব্যাপকভাবে গলদা ও বাগদা চিংড়ির চাষ করা হচ্ছে। চিংড়ির মধ্যে গলদা আকারে সবচেয়ে বড়।
গলদা চিংড়ির পরিচিতি:
গলদা চিংড়ির ক্যারাপেজে কয়েকটি লম্বালদি দাগ থাকে। ছোট অবস্থায় উক্ত দাগ ৭-৮টি, বড় হলে ক্রমশ দাগগুলো মিশে যায়। বড় চিংড়ির শিরোবক্ষ বেশ বড়। রোস্টাম লম্বা ও ২ ভাতো বাঁকা। পুরুষ গলদার রোস্টমের উপরের দিকে ১২-১৫টি এবং নিচের দিকে ১১-১৪টি দাঁত থাকে। এ জাতের চিংড়ি খামু পানিতে চাষ করা হয়। স্ত্রী গলদা চিংড়ির ক্যারা পজের উপর অস্পষ্ট দাগ থাকে। রোস্ট্রমাটি অপেক্ষাকৃত ছোট। এতে কাঁটা বা দাঁতের সংখ্যা উপরের দিকে ১২-১৩টি এবং নিচের দিকে ৫-৭টি।
গলদা চিংড়ি দেখতে গাঢ় সবুজ থেকে বাদামি বা কালচে রঙের হয়। পুরুষ চিংড়ি স্ত্রী চিংড়ির চেয়ে বড়। পুরুষ চিংড়ির দ্বিতীয় চলার পা বড়, কালো এবং চিমটাযুক্ত। স্ত্রী চিংড়ির বেলায় তেমনটি দেখা যায় না। তাই খুব সহজেই স্ত্রী ও পুরুষ চিংড়ি আলাদা করা যায়।
একটি স্ত্রী চিংড়ি একবারে প্রায় ৫০,০০০ ডিম দিতে পারে। ডিম থেকে পোস্ট লার্ভা বেরুতে সময় লাগে। ৩০-৩৫ দিন। চিংড়ির ডিম ফোটার পর থেকে পোনার আকার ধারণ করার অবস্থাকে পোস্টলার্ভা বা (পি.এল) বলা হয়। এ সময় লবণাক্ত পানির দরকার হয়।
কিন্তু প্রজননকালীন সময় বাদে জীবচরের বাকি সময় গলদা চিংড়ি মানু পানিতে বাস করে। এরা পুকুরের তলদেশ এবং পাড় ঘেঁষে চলাফেরা করে। এসব জায়গা থেকেই খাবার গ্রহণ করে। রাতেরবেলা খাবার খোঁজে এবং খাবার খায়। এরা তুলনামূলকভাবে কম চলাফেরা করে। বর্তমানে দেশের পুকুরে ব্যাপকভাবে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে।
বাগদা চিংড়ির পরিচিতি:
বাগদা চিংড়ি লোনা পানিতে বাস করে। এজাতের চিংড়ির দেহে সামনে থেকে পিছন পর্যন্ত একটি লম্বা দাগ থাকে। বড় চিংড়ির রোস্ট্রামটি বাঁকা ও চ্যাপ্টা। এর উপরের দিকে ৮টি ও নিচের দিকে ৩টি দাঁত থাকে। লেজের নিচে লাল খয়েরী নাগ থাকে।
এ চিংড়ি দেখতে হাল্কা বাদামি থেকে সবুজ রঙের হয়। গায়ে ডোরা কাটা বাঘের মত কালচে দাগ থাকে বলে একে টাইগার চিংড়িও বলা হয়। স্ত্রী বাগদা তুলনামূলকভাবে পুরুষ বাগদার চেয়ে বড়, ও পুরুষ বাগদা চিংড়ি সমুদ্রের ৪০-৫০ মি. গভীরতায় বেশি পাওয়া যায়।
একটি স্ত্রী বাগদা চিংড়ি একবারে প্রায় ৮-১০ লক্ষ ডিম পাড়ে। ডিম থেকে পোস্টলার্ভা বা পি.এল হতে সময় লাগে প্রায় ১৫-২০ দিন। এ চিংড়ি জীবন চলেনা পুরো সময় লবণাক্ত পানিতে বাস করে। গলনা চিংড়ির মত বাগদা চিংড়িও পুকুর বা ঘোরের তলদেশ ও পাড় ঘেঁষে চলাফেরা করে। সেখানকার সব ধরনের খাবার গ্রহণ করে। রাতেরবেলা খাবার খায় এবং বেশি চলাফেরা করে। খাদ্যের তীব্র অভাব হলে বড় চিংড়ি ছোট চিংড়ি খেনো ফেলতে পারে।
বাগদা চিংড়ির স্ত্রী-পুরুষের পার্থক্য চেনার উপায়:
বাগদা চিংড়ির স্ত্রী-পুরুষ চেনা বা সনাক্ত করা গলদা চিংড়ি থেকে অনেক অনেক সহজ।
১। পুরুষ বাগদা চিংড়ির প্রথম সন্তরণপদ বা সাতার কাঁটার পায়ে ছোট দূটি দন্ডের মত জিনিস থাকে। একে পুরুষের অপ্রধান যৌনাঙ্গ পেটাসমা বলে। যাদের পেটাসমা থাকবে তারা পুরুষ, যাদের থাকবে না তারা স্ত্রী। জুভেনাইল অবস্থায়ও পেটাসমা থাকে।
২। স্ত্রী চিংড়ির ৩য় থেকে ৫ম জোড়া পায়ের মধ্যবর্তী স্থানে বা বুকে স্ত্রীর অপ্রধান যৌনাঙ্গ থেলিকাম থাকবে। যাদের থেলিকাম থাকবে না তারা পুরুষ। জুভেনাইল অবস্থায়ও থেলিকাম থাকবে।
৩। পুরুষের ৫ম জোড়া চলনপদ বা পায়ের গোড়ায় পুংজননেন্দ্রিয়ের ছিদ্র থাকে।
৪। স্ত্রী চিংড়ির ৩য় জোড়া চলনপদ বা পায়ের গোড়ায় স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের ছিদ্র থাকে।
৫। একই বয়সের স্ত্রী অপেক্ষা পুরুষ অনেক ছোট হয়। তাই যে কোন খামার থেকে ও ট্রলারের মাধ্যমে একই সময়ে আহরিত চিংড়ির মধ্যে ছোটগুলো সাধারণত পুরুষ এবং বড়গুলো স্ত্রী হয়ে থাকে।
**বাগদা চিংড়ির স্ত্রী-পুরুষ চেনার উত্তম পদ্ধতি হল পেটাসমা ও থেলিকাম দেখা। পেটাসমা থাকলে নিশ্চিত পুরুষ, না থাকলে স্ত্রী এবং থেলিকাম থাকলে নিশ্চিত স্ত্রী, না থাকলে পুরুষ চিংড়ি।
বাগদা চিংড়ি হ্যাচারি কর্মীদের ট্রলার থেকে মাদার চিংড়ি নির্বাচন করতে স্ত্রী-পুরুষ চেনা জরুরী প্রয়োজন। এস.পি. এফ. হ্যাচারি পরিচালনার কর্মীদের অবশ্যই সহজে স্ত্রী-পুরুষ চিনতে হবে।
চ্যাপা/চাপদা চিংড়ির পরিচিতি:
লোনা পানির চিংড়ি। দেহের রং সাদা ও রোস্ট্রামের অগ্রভাগ গোলাপি রঙের হয়। মাথায় খোলসটির মাঝখানে কয়েকটি হাল্কা হলুদ ও বাদামি দাগ দেখা যায়। এ জাতের চিংড়ির পোনা পানিতে খুব দ্রুত সাঁতার কাটে। বড় চিংড়ির রোস্ট্রাম খাড়া ও বাঁকা। এর উপরের দিকে ৮-১০টি ও নিচের দিকে ৩টি বেশি খাঁজ কাটা থাকে।
গলদা চিংড়ির চাষ পদ্ধতি গলদা স্বাদু পানিতে চাষ করা যায়। চাষ পদ্ধতি বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যথা- সাধারণ চাষ পদ্ধতি ও উন্নত চাষ পদ্ধতি । সাধারণ পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে পুকুরে প্রাকৃতিক খাবারের উপর নির্ভর করে পানি পরিবর্তন ছাড়াই কম ঘনত্বে পোনা মজুদ করে চিংড়ি চাষ করা হয়। সাধারণ পদ্ধতি দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

চিংড়ির বিভিন্ন ধরণের চাষ পদ্ধতি:
চিংড়ির একক চাষ পদ্ধতির পরিচতি
যখন কোন জলাশয় বা পুকুরে একটি মাত্র প্রজাতি চাষ করা হয় তাকে একক চাষ বলে। একটি পুকুরে শুধুমাত্র গলদা চিংড়ি চাষ করলে তাকে গলনার একক চাষ বলা হয়। সাধারণ পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ির একক চাষে হেক্টর প্রতি ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ পোনা মজুদ করা যায়।
এক হেক্টর পুকুরে ছয় মাসে ২৫০ কেজি থেকে ৩৭৫ কেজি গলদা চিংড়ি উৎপাদিত হতে পারে। বছরে দুইবার চাষ করা যায়। মাছ চাষের জন্য পুকুর তৈরির নিয়ম মত পুকুর বা জলাশয় তৈরি করতে হয়। নিনা চাষ পদ্ধতিটি পর্যায়ক্রমে দেখান হলো- আগাছা পরিষ্কার রাক্ষুসে মাছ নিধন চুন প্রয়োগ জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার পরীক্ষা ঠে পোনা মজুদ পুকুরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জাল টানা আহরণ ও চিংড়ি বাজারজাত করা।
চিংড়ির মিশ্র চাষ পদ্ধতির পরিচতি
গলদা চিংড়ির সাথে অন্য মাছ চাষ করলে তাকে মিশ্র চাষ বলা যায়। এই মিশ্র চাষ দুইভাগ করা যায়। যথা-
(ক) মাছের সাথে গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষ।
(খ) গলদা চিংড়ির সাথে মাছের মিশ্র চাষ।
(ক) মাছের সাথে গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষ পরিচিতি
জলাশয়ে মাছের পোনা মজুদ করার সময় নিচের স্তরের মাছ কম মজুদ করা হয়। সেখানে গলদা চিংড়ির পোনা মজুদ করা হয়। গলদা চিংড়ি পুকুরের নিচের স্তরের খাবার খায়। অর্থাৎ যখন কোন জলাশয়ে কম পরিমাণে মাছের পোনা মজুদ করে গলদা চিংড়ির পোনা মজুদ করা হয় তখন তাকে মাছের সাথে গলদা চিংড়ির মিশ্রচাষ বলা হয়।
এ পদ্ধতিতে পুকুরের প্রধান ফসল মাছ এটা মনে রেখে সামান্য পরিমাণে গলদার পোনা ছাড়তে হবে। এ জাতীয় মিশ্র চাষে পুকুরের নিচের স্তরের এবং ঘাস জাতীয় খাবার খায় এমন মাছ মজুদ বন্ধ রাখতে হবে। মৃগেল, কালবাউস, মিরর কার্প এবং গ্রাস কার্পের পোনা মজুদ করা যাবে না। এ পদ্ধতিতে ৪০০০-৫০০০ গলদা চিংড়ির পোনা প্রতি হেক্টর মজুদ করা যায়।।
খ) গলাদা চিংড়ির সাথে মাছের মিশ্র চাষ পরিচিতি
চিংড়ি সাধারণত পুকুরের তলার খাবার খায়। তাই কোন পুকুর বা জলাশয়ে যদি এককভাবে গলদার চাষ করা হয় তখন পানির উপরিস্তরের খাবার অব্যবহৃত থাকে। পানিতে মিশে যাওয়া খাবার বা সবুজকণা চিংড়ি সরাসরি খায় না।
পুকুরের অব্যবহৃত খাদ্য ও সবুজ কণা চিংড়ির পরিবেশ নষ্ট করে। এ খাদ্যগুলি মাছের জন্য উপকারী। এ অবস্থায় কোন জলাশয়ে হেক্টর প্রতি ২৫০ থেকে ৩৫০টি কাতলা অথবা সিলভার কার্প মজুদ করা হয়। এ পদ্ধতিতে পুকুরের সর্বস্তরের খাবার পূর্ণ ব্যবহার হবে।
চিংড়ি চাষের উন্নত পদ্ধতি সমূহের পরিচিতি:
এ পদ্ধতিতে পরিকল্পিতভাবে পুকুর নির্মাণ, বেশি পরিমাণে পোন মজুন নিয়মিত পানি পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা ও দ্রবীভূত অক্সিজেন নিয়ন্ত্রিত করে দক্ষ কর্মীর সাহায্যে খামার পরিচালনা করা হয়। উন্নত পদ্ধতিকে চার ভাগে ভাগ করা হয়।
ক. অল্প উন্নত পদ্ধতি
খ. মধ্যম উন্নত পদ্ধতি
গ. উন্নত পদ্ধতি
ঘ. অধিক উন্নত পদ্ধতি ।
উপরের পদ্ধতিগুলো ব্যয়বহুল এবং অধিক দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত উন্নত পদ্ধতিতে ব্যাপকভাবে চিংড়ি চাষ শুরু হয়নি। তবে থাইল্যান্ড, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করা হয়।

প্রদর্শিত চিংড়ি (গলদা ও বাগদা) শনাক্তকরণ [ ব্যবহারিক ]
বহারিক : প্রদর্শিত চিংড়ি (গলদা ও বাগদা) শনাক্তকরণ – পাঠটি বাউবির “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয় এর ইউনিট – ২ , পাঠ -২.৫। বাংলাদেশের মানুষের আমিষ জাতীয় খাদ্যের প্রধান উৎস হলো মাছ। আমাদের দেশে নদী—নালা, হাওর, বাঁওড়, খাল—বিল ইত্যাদিতে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট—বড় মাছ পাওয়া যায়। বর্তমানে দেশি মাছ ধানের পাশাপাশি অনেক বিদেশি মাছও আমাদের দেশে চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে সমুদ্র উপকূলের ঘেরে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হচ্ছে।
চিংড়ি বাংলাদেশের একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আমাদের দেশের অসংখ্য নদী—নালা, খাল—বিল, পুকুর এবং বিশাল উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে চিংড়ি চাষের বিপুল সম্ভাবনা। এদেশের জলাশয়ে রয়েছে ৬৭টি প্রজাতির চিংড়ি। তবে প্রধানত গলদা ও বাগদা এই দুইটি প্রজাতির চিংড়িই চাষ হয়ে থাকে। গলদা মিঠাপানির পুকুর—দিঘীতে আর বাগদা উপকূলীয় এলাকায় চাষ হয়ে থাকে। চিংড়ি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। তাই চিংড়ি চাষে এদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে চিংড়ির পরিচিতি, বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা, পুকুরে ও ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষ, ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ, উপকূলীয় এলাকায় এককভাবে বাগদা চিংড়ি চাষ, লবণ ক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষ ও প্রদর্শিত চিংড়ি (গলদা ও বাগদা) শনাক্তকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অনেক জমিতে লবণের চাষ করা হয় বহু পূর্ব থেকেই। বর্তমানে লবনের সাথে অধিক লাভের প্রত্যাশায় লবণ ক্ষেতে চিংড়িও চাষ করা হচ্ছে। ফলে চিংড়ি চাষীরা অধিক লাভবান হতে পারেন। সঠিক পদ্ধতিতে সর্তকতার সাথে চাষ করলে লবণের জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ লাভজনক হবে যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। বাংলাদেশে প্রচলিত পদ্ধতি বাগদা চিংড়ি চাষ এবং লবণ ক্ষেতে বাগদা চাষের সাধারণ কার্যাবলী একই ধরনের। উপকূলীয় এলাকায় যেখানে জোয়ার—ভাটার প্রভাব থাকে সেখানেই বাগদা চিংড়ির চাষের স্থান নির্বাচন করা সম্ভব।

প্রয়োজনীয় উপকরণ :
(ক) নমুনা চিংড়ি (গলদা ও বাগদা), (খ) ফরমালিন, (গ) ট্রে ও ফরসেফ, (খ) খাতা, কলম ইত্যাদি।

কার্যদ্ধতি :
১. এবার গলদা ও বাগদা চিংড়ি বাজার থেকে সংগ্রহ করে নিতে হবে।
২. এবার মাছ তিনটি আলাদা আলাদা ট্রেতে রাখতে হবে।
৩. মাছগুলো ফরমালিন দ্রবণে জারের ভিতর সংগ্রহ করতে হবে। শিরোবক্ষ
৪. এবারফরসেফ দিয়ে নমুনা মাছগুলো ভালোভাবে নেড়েচেড়ে রোস্ট্রাম বহিরাকৃতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৫. ব্যবহারিক খাতায় চিংড়ি দুটির ছবি এঁকে শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য লিখে বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করতে হবে।
প্রদত্ত মাছ : ক. গলদা চিংড়ি; খ. বাগদা চিংড়ি
গলদা চিংড়ির শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য:
১. দেহ হালকা সবুজ থেকে বাদামি।
২. পা বেশ লম্বা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় জোড়া পা চিমটা যুক্ত।
৩. রোস্ট্রাম লম্বা ও বাঁকানো এবং উপরের ও নীচের খাঁজে কাটা থাকে। রোস্ট্রাম
বাগদা চিংড়ি শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য :
১. দেহ হালকা বাদামি।
২. এর গায়ে বাঘের মতো ডোরা কাটা কালচে দাগ থাকে।
৩. রোস্ট্রাম বাঁকা ও প্রশস্ত। রোস্ট্রামের উপরের দিকে ৮ টি এবং নীচের অ্যান্টেনা পুচ্ছপাখনা দিকে ৩টি খাঁজ কাটা থাকে।

চিংড়ির খাদ্য
চিংড়ির খাদ্য – পাঠটি বাউবির “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয় এর ইউনিট – ৩ , পাঠ -৩.২। অধিকাংশ চিংড়িই সর্বভূক। এরা পঁচা জৈব পদার্থ, ব্যাকটেরিয়া, ডায়াটম জাতীয় শেওলা, নানা ধরনের এককোষী ও সুতাকৃতি শেওলা, নেমাটোড জাতীয় কৃমি, শামুক, পতঙ্গ, পচনশীল প্রাণীদেহ, উদ্ভিদ প্রভৃতি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। চাষকৃত চিংড়ির খাদ্যকে আমরা দুভাগে ভাগ করতে পারি। যথা : প্রাকৃতিক খাদ্য এবং সম্পূরক খাদ্য।
১। প্রাকৃতিক খাদ্য চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। পুকুরে যদি প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমানে না থাকে তা হলে চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি আশানুরূপ হয় না। আজকাল উন্নত পদ্ধতিতে বিভিন্ন দেশে চিংড়ির নিবিড় চাষে ও পোনার লালনপালনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্ভিদজাত ও প্রাণিজাত খাদ্যের ব্যাপক চাষ করা হয়। সাধারনত: জৈব, অজৈব, সবুজ সার, সার কিংবা চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
চিংড়ির বা চিংড়ি পোনার উপযোগী প্রাকৃতিক খাদ্যের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকা বাঞ্চনীয় :
* সহজেই গ্রহনযোগ্য হয়
* সহজ পাচ্য হয়
* পুষ্টিমান সমৃদ্ধ
* সহজেই চাষযোগ্য হয় এমন।
চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্যে যে খাদ্য উপাদান থাকে তা আমরা দুভাগে ভাগ করতে পারি, যথা—
১) উদ্ভিদজাত
২) প্রাণীজাত।
চিংড়ির উদ্ভিদজাত ও প্রাণীজাত খাদ্য সমূহের তালিকা:
চিংড়ির উদ্ভিদজাত খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি চিংড়ির পৌষ্টিক নালী পরীক্ষা করে জানা গেছে যে, বেশ কিছু সংখ্যক জলজ শেওলাকে এরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে। তবে ডায়াটম জাতীয় শেওলা চিংড়ির উত্তম খাবার। ডায়াটম বা নীল সবুজ শেওলা চাষে ২০ লিটার পানি ধরে এমন একটি পলিথিন ব্যগ নিতে হয়।
পানিতে রাসায়নিক সার হিসাবে ইউরিয়া, সিঙ্গল সুপার ফসফেট ও সোডিয়াম/পটাসিয়াম সিলিকেট ১০০: ১০: ৫ অনুপাতে মিশিয়ে সামান্য পরিমানে ব্যবহার করা হয়। এরপর ঐ সার মিশ্রিত পানিতে ডায়াটম জাতীয় শেওলা বা নীল সবুজ শেওলার সামান্য অংশ বিশেষ প্রয়োগ করে ব্যাগটির মুখ ভালভাবে বেঁধে পুকুরের পানির আলোকিত স্থানে ৫—৭ দিন ভাসিয়ে রাখতে হয়। এভাবে ৫—৭ দিনের মধ্যেই পলিথিন ব্যাগে প্রচুর পরিমান ডায়াটম বা নীল সবুজ শেওলা লক্ষ্য করা যায় যা চিংড়ি বা চিংড়ির পোনার খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
চিংড়ির প্রাণিজাতীয় খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি চিংড়ির প্রাণি জাত খাদ্য তৈরির জন্য আলোকিত স্থানে ছোট ছোট চৌবাচ্চা নির্মাণ করতে হয়। চৌবাচ্চা রাসায়নিক সার মিশ্রিত পানিতে ( ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশিয়াম ১০: ৫: ৫ অনুপাতের) ভর্তি করে তাতে প্রাকৃতিক উৎস হতে সংগ্রহকৃত প্রাণিজাত খাদ্য ছাড়তে হয়। ৭—১০ দিন পর ভাল ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে চৌবাচ্চার পানির রং পরিবর্তন হয়েছে। এ থেকে বোঝা যাবে যে পানিতে প্রাণি জাতীয় খাদ্য উৎপন্ন হয়েছে।
২। সম্পূরক খাদ্য আধা নিবিড় বা নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে যখন স্বল্প জায়গায় অধিক পরিমানে চিংড়ি মজুত করা হয়, তখন পুকুরের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক খাদ্য তাদের পুষ্টি লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই দ্রুত বৃদ্ধি ও অধিক ফলনের জন্য সম্পূরক ‘খাদ্য সরবরাহের প্রয়োজন। চিংড়ির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য সম্পূরক ‘খাদ্যে নিম্নরূপ পুষ্টিমান থাকা বাঞ্চনীয় :
চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্য :
চিংড়ি একটি সর্বভুক শ্রেণির প্রাণি। চিংড়ির শারীরিক বৃদ্ধি প্রাকৃতিক খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ জন্য চিংড়ির পুকুর, আবাসস্থলে উদ্ভিদ ও প্রাণিজ খাদ্য অবশ্যই থাকা প্রয়োজন। পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্যে, চুন, জৈব ও অজৈব সার কিংবা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রাকৃতিক খাদ্যের মধ্যে প্ল্যাঙ্কটন প্রধান। প্ল্যাঙ্কটন ছাড়াও মাটিতে এক ধরনের ছোট পোকামাকড় ও কেঁচো জাতীয় প্রাণি উৎপাদন হয় যারা বেনথোস হিসেবে পরিচিত। এ বেনথোস এবং প্ল্যাঙ্কটন চিংড়ির প্রধান প্রাকৃতিক খাদ্য। চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্যে নিম্নের গুণাবলি থাকা প্রয়োজন—
১. খাদ্য অবশ্যই চিংড়ির জন্য গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
২. খাদ্য সহজেই হজম হতে হবে।
৩. খাদ্য অবশ্যই পুষ্টিযুক্ত হতে হবে।
৪. খাদ্য সহজেই চাষযোগ্য হতে হবে। চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্যকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা —
১. উদ্ভিদজাত খাদ্য : নীলচে সবুজ শেওলা, সবুজ শেওলা, ডায়াটমস, সুতার মত শেওলা।
২. প্রাণিজ খাদ্য : ক্লাডোসেরা, রটিফার্স, শামুক, ঝিণুক, ক্রাস্টোশিয়ান জাতীয় প্রাণি (ঝিনুক ও শামুক, কাঁকড়ার বাচ্চা)
চিংড়ির জন্য ফাইটোপ্লাংটন বা উদ্ভিদ জাতীয় খাদ্য উৎপাদনের পদ্ধতি :
চিংড়ির ডায়াটম জাতীয় উদ্ভিদ খাদ্য এবং নীল সবুজ শেওলা উৎপাদনের লক্ষ্যে ইউরিয়া, টিএসপি ও সোডিয়াম পটাশিয়াম সিলিকেট মিশ্রিত সার স্বল্প মাত্রায় পানিসহ পলিথিন ব্যাগে সরবরাহ করতে হয়। ঐ মিশ্রিত সারে অল্প পরিমাণে ডায়াটম শেওলা কিংবা নীল সবুজ শেওলা উৎপাদন করতে সামান্য পরিমাণ ঐ জাতীয় শেওলা প্রয়োগ করে পলিথিন ব্যাগের মুখ ভালো করে ৫—৬ দিন পর্যন্ত ভাসিয়ে রাখতে হয়। ৫—৬ দিন পর দেখা যাবে পলিথিন ব্যাগে অসংখ্য ডায়াটাম ও নীল শেওলা জন্মাবে।
চিংড়ির জন্য প্রাণীকণা বা ড্যাফনিয়া উৎপাদন :
প্রাণিকণা উৎপাদনের লক্ষ্যে ১—১২টি সিমেন্টের তৈরি ছোট চৌবাচ্চা তৈরি করতে হয়। প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে খাদ্য প্রাণিকণা সংগ্রহ করে পৃথক চৌবাচ্চায় ছেড়ে দিতে হয়। ১০—১২ দিন পরে চৌবাচ্চার পানির রং গাঢ় সবুজ হবে। এতে বোঝা যাবে চৌবাচ্চায় প্রাণিকণা উৎপন্ন হয়েছে। সম্পূরক ‘খাদ্য তৈরি ও প্রয়োগ ব্যবস্থা : জলজ পরিবেশ অল্প জায়গায় অধিক পরিমাণে চিংড়ি চাষ তথা আধা—নিবিড় বা নিবিড় চিংড়ি চাষ পদ্ধতিতে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করতে পারে না। তাই চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি ও কাক্সিক্ষত উৎপাদনের জন্যে সম্পূরক খাবারের অত্যন্ত প্রয়োজন। চিংড়ির সম্পূরক খাবারে নিম্নবর্ণিত উপাদান থাকা প্রয়োজন। (রেজাউল করিম, ১৯৯৪)।
১. ফসফরাস শতকরা ১ ভাগ।
২. ক্যালসিয়াম শতকরা ২ ভাগ।
৩. লিনোলিক এসিড শতকরা ১ ভাগ।
৪. লাইসিন শতকরা ২ ভাগ।
৫. ক্রুড ফাইবার শতকরা ৩ ভাগ।
৬. প্রোটিন শতকরা ২৫—৪০ ভাগ (ফরিদুল ইসলাম, ১৯৯৪)। সম্পূরক’ খাদ্য তৈরির অনুপাত : চিংড়ির সম্পূরক’ খাদ্য তৈরির বিভিন্ন উপাদান যে অনুপাতে মিশ্রিত করে খাদ্য তৈরি হয় তা নিচে দেয়া হলো :

ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ:
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ – পাঠটি বাউবির “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয় এর ইউনিট – ২ , পাঠ -২.৩। ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ বলতে একটি ব্যবস্থাপনাকে বোঝায় যেখানে একই সময়ে একই জায়গায় ধান ও চিংড়ির চাষ করা হয়। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে একটি বিশেষ গভীরতায় পানি থাকে যা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত হয়। ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ধান হলো মূখ্য ফসল আর চিংড়ি হলো গৌণ ফসল। ধান ক্ষেতের জৈব সার, রাসায়নিক সার, মাটি ও পানি মিলে প্রাকৃতিকভাবে যে পরিবেশ তৈরি হয় তা গলদা চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত পরিবেশ।
যেসব ধান ক্ষেতে প্রায় সব সময় পানি থাকে সেখানে গলদা চিংড়ির চাষ করা যায়। ধানের জমির মাঝে মাঝে ছোট ছোট খাল বা ছোট নালা তৈরি করে গলদা চিংড়ির চাষ করা যায়। চিংড়ি চাষের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয়ের প্রয়োজন। ধান ক্ষেতে আশ্রয় ও খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকায় চিংড়ি খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। ধান ক্ষেত্রে কম পরিমাণে চিংড়ি পোনা মজুদ করলে ৩-৪ মাসেই তা বাজারজাত করা যায়। ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষ করলে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ রাখতে হয়।
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষের সুবিধা :
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষের সুবিধাগুলো নিম্নে দেওয়া হলো :
১. একই জমিতে একই সাথে ধান ও চিংড়ি পাওয়া যায়।
২. চিংড়ি ধানের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফেলে এবং ধানের কোনো ক্ষতি হয় না।
৩. কম পুজিতে ধানের সাথে চিংড়ি চাষ করা যায়।
৪. চিংড়ির অব্যবহৃত খাদ্য ধানের সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৫. চিংড়ির জন্য কম সাম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করতে হয়।
৬. চিংড়ির চলাফেলার কারণে ধানের দ্রুত বৃদ্ধি হয়।
৭. ধান ক্ষেতে পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়।
৮. ধানের ফলনও বেশি হয় এবং মুনাফা অধিক হয়।
৯. ধানের জমিতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে চিংড়ির বিষ্ঠা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
১০. ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষের ফলে দুধরনের কাজের জন্য কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়।
ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষ পদ্ধতি :
বাংলাদেশের অধিকাংশ জমিতেই ধানের চাষ হয়। আর এসব জমির প্রায় অর্ধেক জমিতে মৌসুমী ভিত্তিতে সফলভাবে গলদা চিংড়ি চাষ সম্ভব। সাধারণত ধান ক্ষেত্রে দুভাবে চিংড়ি চাষ করা হয়।
১. ধানের সাথে চিংড়ি চাষ (যুগপৎ পদ্ধতি)।
২. ধানের পরে চিংড়ি চাষ (পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি)।
নিম্নের চিংড়ি চাষ প্রথম পদ্ধতিটি আলোচনা করা হলো :
১. ধানের সাথে চিংড়ি চাষ (যুগপৎ পদ্ধতি) : সাধারণত আমন ও বোরো মৌসুমে ধান ক্ষেতে পানি থাকে। তখন উক্ত মৌসুমে সহজেই ধানের সাথে চিংড়ি চাষ করা যায়। বছরে দু’বার এধরনের চাষ সম্ভব হয়। এদেশের হাওর ও নিচু এলাকায় ধানের সাথে গলদা চিংড়ি চাষের সুযোগ রয়েছে।
ধানের সাথে চিংড়ি চাষের ধাপগুলো নিম্নরূপ :
ক. জমি নির্বাচন :
সব ধরনের জমিতে এ ধরনের চাষ সম্ভব নয়। যেসব জমিতে বছরে ৪ — ৬ মাস পানি থাকে সেসব জমিতে চাষ করা যায়। যে জমিতে বন্যায় পানি উঠেনা, দোঅঁাশ মাটি, প্রয়োজনীয় পানি সেচ দেয়ার ব্যবস্থা আছে। জমির পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি এবং কৃষকের গৃহের নিকটবর্তী সেখানে চিংড়ি চাষ কতে হবে।
খ. জমি প্রস্তুতকরণ :
সঠিক সময়ে যথানিয়মে জমিতে চাষ ও মই দিয়ে ধান চাষের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। এতে জমি উপযুক্ত হবে। ধানের সাথে চিংড়ি চাষের সময় জমিতে সবসময় কমপক্ষে ৫ — ৬ ইঞ্চি পানি থাকা প্রয়োজন।
গ. জমিতে আইল বা বাঁধ নির্মাণ :
ধান ক্ষেতের চারপাশে উঁচু করে আইল বা বাঁধ তৈরি করতে হবে যেন বন্যার সময় বাইরে থেকে পানি না ঢুকে।
ঘ. ধানের জাত নির্বাচন :
বাংলাদেশে প্রায় সব ধরনের জাতের ধানের সাথেই চিংড়ি চাষ করা যায়। তবে উচ্চ ফলনশীল খাটো বা মাঝারি লম্বা এবং হেলে না পড়ে এমন জাতের ধানের সাথে চিংড়ি চাষ সহজ হয়।
ঙ. গর্ত খনন :
জমির যে অংশ একটু ঢালু বা নিচু সে অংশে মোট জমির ৩ — ৪ ভাগ বা প্রতি বিঘাতে ১ শতাংশ মাটিতে ২ — ৩ ফুট গভীর গর্ত করতে হয়।
চ. পোনা মজুদ :
সাধারণত ধান রোপনের ১০— ১৫ দিন পর জমিতে ৬ ইঞ্চি পানি থাকা অবস্থায় শতাংশে ১২ — ১৫টি গলদা চিংড়ির পোনা ছাড়তে হয়।
ছ. পোনা ছাড়ার সময় :
সাধারণত সকালে পোনা ছাড়া হয়। পোনা ছাড়ার সময় ক্ষেতের পানির তাপমাত্রা পাত্রের পানির তাপমাত্রার সাথে মিশায়ে নিতে হয়।
জ. অন্যান্য ব্যবস্থাপনা :
চিংড়িকে দ্রুত বৃদ্ধির করার জন্য নিয়মিত গোবর, ক্ষুদিপানা এবং চিংড়ির দেহের ওজনের ২ — ৩ ভাগ পরিমান চালের কঁুড়া দিতে হয়। জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না, তবে অত্যাবশ্যক হলে চিংড়ি গর্তে আটকিয়ে শুধু জমিতে ব্যবহার করতে হবে।
ঝ. চিংড়ি আহরণ :
ধান কাটার পর পানি কমে গেলে চিংড়ি নর্দমা ও গর্তে চলে যাবে। তখন চিংড়ি আহরণ করতে হবে। ধান কাটার পর সেচ দিয়ে চিংড়ি রাখার সুবিধা থাকলে চিংড়ি রেখে দিয়ে চিংড়িকে বড় হবার সুযোগ দিতে হবে।
ঞ. চিংড়ি উৎপাদন বা ফলন :
সাধারণত ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ করলে ৩ — ৪ মাসেই প্রতি হেক্টরে ১০০ — ১৫০ কেজি চিংড়ি এবং ১.২ — ২.০ টন ধান উৎপাদিত হয়। ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষে অসুবিধা :
১. কোনো কোনো সময় অনেকদিন বৃষ্টি না হলে পানি শুকিয়ে গেলে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
২. কখনো কখনো পানির গভীরতা চিংড়ি চাষের জন্য অনুকূল হয় না।
৩. বন্যা হলে আইল ভেঙ্গে চিংড়ি ভেসে যেতে পারে।
৪. ধানের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক চিংড়ির ক্ষতি করতে পারে।

গলদা চিংড়ির চাষ:
গলনা স্বাদু বা মিঠা পানির চিংড়ি। দেশে সর্বত্রই এই চিংড়ি পাওয়া যায়। তবে উপকূলীয় এলাকার কাছাকাছি নদী-নালায় গলদার প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে গলদা চিংড়ি পাওয়া যায়।
পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ:
পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষের সুবিধা:
- কার্প জাতীয় মাছের সাথে চাষ করা যায়।
- পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার পার্থক্য সহ্য করতে পারে।
- কাটাবিহীন, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
- বাজারে চাহিদা আছে।
- প্রাকতিকভাবে পোনা পাওয়া যায়।
পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষের স্থান নির্বাচন:
মাছ চাষের মতই গলদা চিংড়ি চাষের পুকুর প্রস্তুত করতে হয় চিংড়ি চাষের পুকুরের পানিতে অক্সিজেন বেশি প্রয়োজন। তাই মাঝে মাঝে পুকুরের পানি বদল করতে হয়। এ কারণে, যেখানে পুকুর, নদী বা নলকূপের পানি সহজেই পাওয়া যায়, এমন জায় নির্বাচন করতে হবে। পুকুরের গভীরতা ১-১.৫ মিটার হলে ভালো। পুকুরে সহজেই মিঠা পানি ঢুকানো এবং বের করার ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়।
পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষের জন্য মাটির গুনাগুন:
- দো-আঁশ, এঁটেল বা বেলে দো-আঁশ মাটি ভালো।
- জাতীয় মাটির পাড় শক্ত মজবুত স্থায়ী হয়। সহজে পানি চুঁইয়ে যেতে পারে না।
- PH ০.৫-৭.৫ হলে ভালো। এর কম হলে চুন দিতে হবে।
পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি:
পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন, পোলার বৃদ্ধি ও মৃত্যুহার কমানোর জন্য পুকুর প্রস্তুত করা প্রয়োজন।
পাড় ও তলদেশ ঠিক করা:
পাড় ভাংগা থাকলে নেয়ামত করতে হবে। পাছে কোন গাছপালা না থাকাই ভালো। তলদেশ ঠিক করতে হলে পুকুর থেকে সম্পূর্ণ পানি বের করে পুকুরের তলা ২-৫ সপ্তাহ ভালোভাবে শুকাতে হবে। এতে তলদেশের গ্যাস বের হবে এবং না পরিষ্কার করা যাবে
রাক্ষুসে মাছ দমনঃ
পুকুর না শুকানো গেলে প্রতি ঘনমিটার পানিতে ৩-৫ যান রোটেনন ছিটিয়ে বা পানিতে গুলে দিতে হবে। এতে রাক্ষুসে মাছসহ ক্ষতিকর পোকা মারা যাবে।
তাছাড়াও পুকুরে পানি ঢোকানো ও শো করানোর গেটে বাসে মাছ চোকার প্রতিবন্ধক হিসেবে ০.৫-১.০ মি.মি. ফাস বিশিষ্ট টেকসই নাইলনের জাল স্থাপন করতে হবে। গলদা চিংড়ির একক সাথে পোনা মজুদের পর্বত রোটেশন দিয়ে বাসে মাছ মারা যায়।
চুন প্রয়োগঃ
চিংড়ি চাষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ানো এবং মাটিকে শোধন করার জন্য হুম ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত পুকুরে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন দিতে হয়। চুন ভালোভাবে পানিতে গুলে পুকুরের তলদেশেও পাে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হয়। মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব এর উপর নির্ভর করে চুন দিতে হয় চুল দেখনা ৪-৫ দিন পর ৫-১০ সে.মি. পানি নার্সারি পুকুরে ঢুকাতে হবে। চুন ব্যবহারের মাত্রা নিয়ে টেবিলে দেখানো
সার প্রয়োগ:
চুন দেয়ার ৫-৬ দিন পর শতাংশ প্রতি ৩-৫ কেজি গোবর বা ৩-৫ কেজি মুরগির বিষ্ঠা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। অজৈব সার হিসেবে ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০-৭৫ গ্রাম টি.এস.পি এবং ২৫ গ্রাম এম.পি সার দিতে হবে। সার দেয়ার ১ সপ্তাহের মধ্যে যদি পানি সবুজাভ বা বাদামি রং হয় তবে বুঝতে হবে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য সবুজ কনার জন্ম হয়েছে এবং পুকুরে পোনা ছাড়ার বা মজুদের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ পোনা পরিবহন,খাপ খাওয়ানো ও মজুদকরণ:
চিংড়ি চাষের জন্য সুস্থ ও সবল পোনা নির্বাচন:
একটি প্লাস্টিক পাত্রের (ছবি) পানিতে পোনা নিয়ে তাতে হাত নেড়ে স্রোত সৃষ্টি করতে হবে। দেখা যাবে সুস্থ ও সবল পোনা স্রোতের বিপরীতে দল বেঁধে সাঁতার কাটবে। কিন্তু দুর্বল পোনা পাত্রের মাঝখানে জমা হয়ে থাকবে। আবার পানির তাপমাত্রা হঠাৎ কমিয়ে দিয়ে পোনার সুস্থতা যাচাই করা যায়। এ অবস্থা সুস্থ পোনা বেঁচে থাকবে এবং দুর্বল পোনা মারা যাবে। যে কোন পুকুরে অবশ্যই সুস্থ ও সবল পোনা ছাড়তে হবে।
চিংড়ি চাষের জন্য পোনা পরিবহন :-
পোনা পলিথিন ব্যাগে পরিবহন করা ভালো। ব্যাগে যেন ছিদ্র হয়ে না য সোনা ১টি পলিথিন ব্যাগ একই মাপের আরেকটি পলিথিন ব্যাগে ঢুকিয়ে কোন বাবার ব্যান্ড দিয়ে মুড়ে দিতে হবে। পানি সহ ব্যাগের ২/৩ ভাগ পূর্ণ বাকি ১/৩ ভাগ অক্সিজেন যারা পূর্ণ করাতে হবে। এবার ব্যাগের মুখটি ভালো করে রাবার ব্যান্ড নিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
ভোরে বা সন্ধ্যায় যখন দিনের তাপ কম থাকে তখনই পোনা পরিবহনের ভালো সময়। এলুমিনিয়াম বা মাটির পাত্রে পোনা পরিবহনের সময় দুই ঘণ্টা পর পর অর্ধেক পানি ফেলে দিয়ে পানি ভরতে হবে। মনে রাখতে হবে, নতুন পানির তাপমাত্রা যেন পাত্রের পানির তাপমাত্রার সমান হয়। এছাড়াও পাত্রটি ভেলা চট বা কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখা ভালো।
চিংড়ি চাষের জন্য পোনা মজুদকরণ:
মাছ চাষের পুকুরে পোনা মজুদের নিয়মের মতই এ পোনা মজুদ করতে হবে। পরিবহন পাত্র প্রথমে আধঘন্টা পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হবে। তারপর পাত্রের পানি পুকুরে এবং পুকুরের পানি পাত্রে আদান- প্রদান করতে হবে। এভাবে যখন পাত্রের পানি তাপমাত্রা পুকুরের পানির তাপমাত্রার সমান হবে তখন পাত্রটি বা ব্যাগটি কাত করে পোনাগুলো পুকুরে ছাড়তে হবে। বিভিন্ন চাষ পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি চিংড়ির পোনা মজুদের পরিমাণ হতে দেখান হলো
চিংড়ি চাষে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ:
সার প্রয়োগের ফলে উৎপাদিত সবুজ কণা মাছ ও চিংড়ি খায়। তবু দ্রুত বৃদ্ধির জন্য সম্পূরক বা করতে হয়। নিচের ছকে বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের পরিমাণ ও মিশ্রণের হার দেওয়া হলো:
ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষে কোন বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। ধান ক্ষেতের শেওলা, পোকা-মাকড় ও পচনশীল গাছপালা চিংড়ি খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকে। তবে দ্রুত উৎপাদন পেতে খৈল ও ভূষি বা কুঁড়া ১ :১ অনুপাতে মিশিয়ে একদিন পর পর ক্ষেতের গর্তে দিতে হবে।
মনে রাখা দরকার, সাধারণ ধানের ক্ষেতে প্রস্তুত করার মতই এক্ষেত্রেও জমি প্রস্তুত করতে হয়। তাই চিংড়ির জন্য পৃথকভাবে সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। পুকুরে মজুদকৃত চিংড়িকে দিনে ২ বার (সূর্যোদয়ের পর ও সূর্যাস্তের পূর্বে) খাবার দিতে হয়। মজুদকৃত চিংড়ির মোট ওজনের ৩-৫ ভাগ হারে খাবার দেওয়াই যথেষ্ট।
দেহেরস বৃদ্ধির সময় চিংড়ি আশ্রয়ের ব্যবস্থা:
চিংড়ি দেহেরস বৃদ্ধির সাথে সাথে খোলাস পাল্টায় বা বদলায়। এ সময় চিংড়ি অত্যন্ত দুর্বল থাকে। তখন চিংড়ি আশ্রয় খোঁজে। এজন্য এসময় পুকুরে কিছু পাতাবিহীন ডাল পালা বা বাঁশ পুঁতে দেয়া প্রয়োজন এতে চিংড়ি আশ্রয় নিতে পারে।
গলদা চিংড়ি মিশ্রচাষের পুকুর পরিচর্যা :
গলদা চিংড়ির একক বা মিশ্রচাষের পুকুরে কিছু কিছু পরিচর্যা নেয়া প্রয়োজন। নিম্নে তার কয়েকটির বর্ণনা করা হলো :
১. চিংড়ির বেঁচে থাকার হার, দৈহিক বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রোগবালাই ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য মাসে অন্তত দুইবার জাল টেনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়।
২. চিংড়ি নিয়মিত খাবার গ্রহণ করেছে কিনা তা সর্তকতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এজন্য একটি পাত্রে খাবার সরবরাহ করতে হবে। ৪-৫ ঘণ্টা পর তা দেখতে হবে। যদি খাবার জমা থাকে তবে পরবর্তী খাবার কমিয়ে দিতে হবে।
৩. চিংড়ি সকাল বা অন্য কোন সময় পুকুরের কিনারে বা পানির উপরে এসে খাবি খেলে। বুঝতে হবে অক্সিজেনের অভাব হয়েছে। এমতাবস্থায় জাল টেনে এবং বাঁশ পিটিয়ে পুকুরের পানিকে আন্দোলিত করতে হবে। তবু ফল না পেলে পুকুরের পানি পরিবর্তন করতে হবে।
৪. উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় চাষ করলে ৬-৭ মাসে চিংড়ি বাজারজাতকরণের উপযুক্ত হয়। এ সময় ১৫-২৫ টিতে ১ কেজি ওজন হলে চিংড়ি ধরে বাজারজাত করা যায়। চিংড়ি ধরার সময় বড় ফাঁস জাল ব্যবহার করতে হয়। এতে শুধু বড় আকারের চিংড়ি ধরা পড়ে। ছোটগুলো পুকুরে রেখে তাদের বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হয়। অবশিষ্ট চিংড়ি বাজারজাতকরণের উপযুক্ত হলে পুকুর শুকিয়ে সমস্ত চিংড়ি ধরে ফেলতে হয়।

বাগদা চিংড়ির চাষ:
দেশের এক বিপুল অংশ জুড়ে রয়েছে উপকূলীয় এলাকা। এই এলাকায় বাগদা চিংড়ির চাষ | করা হয়। বাগদা চিংড়ি লোনা পানির চিংড়ি তাই উপকূলীয় এলাকার লোনা পানি, সমুদ্রের মোহনার কাছাকাছি নদ-নদী ও গভীর সমুদ্রে বাগদা চিংড়ি পাওয়া যায়। গলদা চিংড়ির মত বাগদা চিংড়িও জলাশয়ের তলদেশ ও পাড়ে ঘেঁষে চলাফেরা করে এবং সেখান থেকেই সব ধরনের খাবার খায়। দিনের চেয়ে রাতের বেলায় খাবার খেতে পছন্দ করে। ৫-৬ মাসেই বাজারজাত করার উপযুক্ত হয়।
উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চলে বাঁধ দিয়ে বিরাট আয়তনের যে জলাশয় তৈরি করা হয় তাকে ঘের বলে। ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য পাড় বেঁধে ১-২ একর আয়তনের জলাশয় তৈরি করা হয়। ঘেরের পানি লোনা থাকে। বাগদা চিংড়ি চাষ এসব ঘেরেই করা হয়। জোয়ার-ভাটার সময় সমুদ্রের লোনা পানি ঘেরে উঠা-নামা করে। বাগদা চিংড়ি চাষ অনেকটা গলদা চিংড়ি চাষের নিয়মেই করা হয়। নিচে চাষের ধাপগুলো পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করা হলো :
উপরের কাজসমূহ গলদা চিংড়ি চাষের খামার প্রস্তুতের নিয়মেই করা হয়। পোনা নির্বাচন পদ্ধতি গলদার অনুরূপ। তবে বাগদা চিংড়ির পোনা খুবই স্পর্শকাতর। সেজন্য পরিবহন ও খামারে মজুদ করার সময় বিশেষভাবে যত্ন নিতে হয়।
প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত পোনার মৃত্যু হার বেশি হয়। আবার বাগদার পোনার সাথে একই রকম বিভিন্ন পোনা মিশে থাকতে পারে। সেজন্য হ্যাচারি থেকে পোনা সংগ্রহ করা ভালো। বাগদার পোনা পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার পার্থক্য সহজে সহ্য করতে পারে না। তাই পোনা মজুদ করার সময় ব্যাপক হারে পোনা মারা যায়। এ দিকটা সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে।
পোনা নির্বাচন
⇓
পোনা পরিবহন
⇓
পোনা মজুদকরণ
এ কাজগুলো গলদা চিংড়ি চাষের খামারে যেভাবে করা হয় এক্ষেত্রেও সেভাবে করতে হবে। হেক্টর প্রতি ২০,০০০-৮০০০০ টি পোনা মজুদ করতে হয়। বাগদা চিংড়ির দেৱে নিয়মিত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খামারে ১-১.৫ মিটার গভীর পানি রাখা দরকার। পানির ভৌত-রাসায়নিক ও জৈবিক পরিবেশ ঠিক রাখা জন্য নিয়মিত পানি পরিবর্তন প্রয়োজন। এতে চিংড়ি খামার থেকে দূষিত পানি ও বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যায়।
বাগদা চিংড়ির খাবার ব্যবস্থাপনা:
চিংড়ি চাষের যে পদ্ধতি এ পাঠে আলোচনা করা হচ্ছে তাকে উন্নত সম্প্রতি চা পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে সাধারণত প্রাকৃতিক খাদ্যের উপর নির্ভর করা হয়। পুকুর প্রস্তুত করার সময় এবং পরবর্তীতে অজৈব ও জৈব সার সরবরাহ করে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন করা হয়। তবুও চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধির হার বাড়ানোর জন্য সহজে পাওয়া যায় এমন সম্পূরক খাদ্য দেওয়া হয়।
নিচে সম্পূরক খাদ্য তৈরির তালিকা দেওয়া হলো
বাগদা চিংড়ির স্বাস্থ্য বৃদ্ধি পরীক্ষা:
চিংড়ি বেঁচে থাকার হার, দৈহিক বৃদ্ধি, রোগ বালাই প্রভৃতি পর্যবেক্ষণ করা দরকার। এজন্য নির্দিষ্ট বিরতিতে পুকুর থেকে নিয়মিত চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য সকাল বা বিবেশ প্রতি হেক্টর পুকুরে ১০-৫০ বার ঝাকি জাল মেরে চিংড়ি সংগ্রহ করে ওজন পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
দৈহিক বৃদ্ধিহার নির্ণয়ের জন্য প্রতি পুকুরে ৩০-৪০টি চিংড়ির দৈর্ঘ্য এবং ওজন মেপে গড় করতে হবে। উন্নত সম্প্রসারিত হাল্কা চাষে মাসে অন্তত একবার চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করে দৈহিক বৃদ্ধি, রোগবালাই ও বেঁচে থাকার হার জেনে পরবর্তীতে চিংড়ি মজুদের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ পদ্ধতিতে চিংড়ির রোগবালাইয়ের হার খুব কম থাকে।
বাগদা চিংড়ি আহরণ ও বাজারজাতকরণ:
খামার বা পুকুরের পরিবেশ ঠিক থাকলে বাগদা চিংড়ি ৩-৪ মাসেই বাজারজাত করা যায়। সাধারণত অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় বাগদা চিংড়ি আহরণ করা হয়।
বাগদা চিংড়ি আহরণের ৩টি পদ্ধতি নিচে বর্ণনা করা হলো :
দলগত চাষ ও ফলন আহরণ এ পদ্ধতিতে পুকুরে বা খামারে একই সময়ে একই বাসের পোনা মজুদ করা হয়। ৩-৪ মাস পর পর জাল মেরে বড় চিংড়ি আহরণ করা হয়। পরে পুকুরের পানি সম্পূর্ণ বের করে বাকি চিংড়ি আহরণ করা হয়।
অনাবরত চাষ ও ফলন আহরণ এ পদ্ধতিতে খামারে জোয়ারের সময় ৩-৪ মাস পর পা বড় আকারের চিংড়ি আহরণ করা হয়। যে পরিমাণ চিংড়ি আহরণ করা হয়। সেই পরিমাণ
পোনা পুনরায় মজুদ করা হয়। পরবর্তীতে অধিকাংশ চিংড়ি বাজারজাতকরণের সাইজের হলে পুকুরের সমস্ত পানি বের করে বাদবাকি চিংড়ি ধরে ফেলা হয়। এ আহরণ পদ্ধতিতে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বাগদা চিংড়ি সম্পূর্ণ আহরণ পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতে চাষ ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ধাপ পর্যায়ক্রমে অনুসরণ করা হয়। শেষে পুকুরের পানি সম্পূর্ণরূপে বের করে সমস্ত চিংড়ি ধরে ফেলা হয়।
বাগদা চিংড়ির আহরণ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা:
চিংড়ি চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। তাই এর গুণগুত মান ভালো রাখা খুব দরকার। খামার বা পুকুরের কাছাকাছি ছায়াযুক্ত খোলামেলা স্থান নির্বাচন করে সেখানে পাকা বা কাঠের মেঝেতে আহরণকৃত চিংড়ি রাখতে হবে। আহরণের পরপরই চিংড়িগুলো পরিষ্কার পানিতে ধুতে হবে।
এরপর বড় ড্রাম বা পাত্রে গুঁড়া বরফ মিশ্রিত পানিতে চিংড়িগুলো রাখতে হবে। পুকুর বা খামার থেকে চিংড়ি আহরণের পর বেশিক্ষণ ফেলে রাখা যাবে না। এতে তাড়াতাড়ি পচন ধরে। গুণগতমানও তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। পচা ও নরম চিংড়ি বিক্রি করা যায় না।
উপকূলীয় এলাকায় ও লবণক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষ:
উপকূলীয় এলাকায় ও লবণক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষ – পাঠটি বাউবির “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয় এর ইউনিট – ২ , পাঠ -২.৩। উপকূলীয় এলাকায় এককভাবে বাগদা চিংড়ি চাষ লোনা পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। বাগদা চিংড়ি এদের মধ্যে অন্যতম। এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। উপকূলীয় এলাকায় যেখানে জোয়ার—ভাটার প্রভাব থাকে সেখানেই বাগদা চিংড়ির চাষের স্থান নির্বাচন করা সম্ভব। বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য লোনা পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ প্রয়োজন এবং সমুদ্র থেকে তা পাওয়া সম্ভব।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাগদা চিংড়ির ব্যাপক চাষ হচ্ছে। বাগদা চিংড়ির উৎপাদন ভাল পেতে হলে হালকা চাষ পদ্ধতি ভালভাবে প্রয়োগ করে ঘেরের উৎপাদন কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব। উন্নত হালকা চাষ পদ্ধতির চারটি পর্যায়ের বর্ণনা নিম্নরূপ :
১. চাষ পুকুর বা ঘের।
২. পোনা মজুদপূর্ব পুকুর বা ঘের প্রস্তুতি।
৩. পোনা নির্বাচন, খাপ—খাওয়ানো ও মজুদ।
৪. পোনা মজুদ—পরবতীর্ ব্যবস্থাপনা।
লবণক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য পুকুর বা ঘের :
সুষ্ঠু ঘেরের নিম্ন ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে পুকুর বা ঘেরের আয়তন ১—১০ হেক্টর বা ২.৫—২৫ একরের মধ্যে হলে ভাল হয়। পুকুর বা ঘের বর্গাকার বা আয়তাকার, চারদিকে বাঁধ মজবুত, ফাঁক—ফেঁাকরমুক্ত এক মিটার পানি রাখার ব্যবস্থা আছে এমন পুকুর বা ঘের। পুকুরের তলদেশে সমতল, পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা আছে এমন পুকুর। অমাবস্যা ও পুর্ণিমার জোয়ারে ৭৫—১০০ সেন্টিমিটার পানি তোলার ব্যবস্থা আছে এমন পুকুর বা ঘের হতে হবে। নতুবা পাম্পের সাহায্যে পানি সরবরাহ করতে হবে।
পুকুরের স্লুইচ গেটের সংখ্যা, সাইজ ও অবস্থান এমন হবে যেন পূর্ণিমার জোয়ার—ভাটার সময় কমপক্ষে ৫০ ভাগ পানি নদীর টাটকা পানির সাথে পরিবর্তন করা যায় এবং পানি পরিবর্তনের সময় সারা পুকুরে ভালো ে¯্রাতের সৃষ্টি হয়। বাগদা চিংড়ি চাষের সময় পানির লবণাক্ততা ৮—১৫ পি.পি.টি—এর মধ্যে
থাকতে হবে। ঘেরের মাটির পি—এইচ ৫—এর ওপর হলে ভাল হয়। ঘের জলজ আগাছা ও শেওলামুক্ত থাকতে হবে।
লবণক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য পোনা মজুদ—পূর্ব পুকুর বা ঘের প্রস্তুতি :
* ঘেরের সমস্ত পানি ভাটার সময় অপসারণ করে দিতে হবে।
* ঘেরের তলদেশ ভালভাবে রোদে শুকাতে হবে এবং তলদেশের জলজ আগাছা মূলসহ অপসারণ করতে হবে।
* বাঁধ, স্লুইচ গেট, বাঁশের বানা বা ছাঁকটি জাল সবকিছু মেরামত করতে হবে।
* ঘেরে জোয়ারের পানির সাথে যেন কোন ক্ষতিকর প্রাণী ঢুকতে না পারে সেজন্য স্লুইচ গেটের মুখে বাঁশের বানা বা ছাঁকনি জাল স্থাপন করতে হবে।
* বানা বা ছাঁকনি জালের উচ্চতা ঘেরের পানির সর্বাধিক উচ্চতা হতে কমপক্ষে আধামিটার হতে হবে।
* ঘেরের কোথাও কোন ক্ষতিকর প্রাণী বা মাছ থাকলে তা বিনাশ করতে হবে। চুন প্রয়োগ বা রোটেনন প্রয়োগের মাধ্যমে ধ্বংস করতে হবে। চুন বা রোটেনন প্রয়োগ করে মাছ মারা নিরাপদ। উপরের কাজগুলো প্রথম তিন সপ্তাহে করতে হবে।
* চতুর্থ সপ্তাহে মাটির পিএইচ পরীক্ষা করতে হবে। মাটির পিএইচ অনুযায়ী চুনের পরিমাণ ঠিক করা যেতে পারে।
* ঘেরের তলদেশ ভালভাবে শুকানোর পর পাথুরে চুন (ঈধঈঙ৩) পরিমাণ মত লোহার ড্রামে বা মাটিতে গর্ত করে টুকরা করে পানি দিয়ে ঠাণ্ডা করতে হবে। চুন ফুটে ঠাণ্ডা হওয়ার পর তা প্রয়োগ করা উচিত।
* পঞ্চম সপ্তাহে চুন ছিটানোর ৭দিন পর ৬০—৮০ সে.মি. জোয়ারের পানি ছেঁকে ঘেরের মধ্যে সরবরাহ করতে হবে।
* ঘেরে পানি সরবরাহের সময় প্রতি হেক্টরে ৪০ কেজি ইউরিয়া ও ২০ কেজি টি.এস.পি একত্রে একটি পাত্রে সারারাত ভিজিয়ে গুলিয়ে তা দিনের বেলায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করার সময় স্লুইসের মুখে ছিটিয়ে দিতে হবে।
* সার প্রয়োগের পর ঘেরের পানি কয়েক দিনের মধ্যে সবুজ বর্ণ ধারণ করে থাকে। পানির স্বচ্ছতা ২৫—৪০ সে.মি. হলে বুঝতে হবে পানিতে চিংড়ির প্রাকৃতিক খাবার উৎপন্ন হয়েছে।
* পানির রং যদি সবুজ না হয় তাহলে পূর্ণমাত্রায় আবার সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। অতঃপর একটি পাত্রে সার পানি দ্বারা গুলে ঘেরের সমস্ত জায়গায় ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
লবণক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য পোনা নির্বাচন, খাপ খাওয়ানো ও মজুদ :
ঘেরের গুণগত মান অনুযায়ী প্রতি হেক্টর জলায়তনের জন্যে ১৫,০০০—৩০,০০০ টি হিসাবে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত বাগদা পোনা নির্বাচন করতে হবে। বাগদার ভাল পোনার বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :
ক) পোনার দেহ বেশ স্বচ্ছ কোথাও ঘোলাটে ভাব বা দাগ থাকে না। খ) দেহে বেশ সোজা কোথাও কোন কেঁাকড়ানো ভাব দেখা যায় না। গ) দেহের লম্বালম্বি কালচে বা খয়েরি দাগটি স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। ঘ) সাঁতার কাটার সময় পুচ্ছ পাখনা বেশ ছড়ানো অবস্থায় থাকে। ঙ) ঘেরের পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার সঙ্গে যত্ন ও ধৈর্যে্যর সাথে ভালো করে খাপ খাইয়ে নিয়ে পোনা ঘেরে মজুদ করতে হয়।
লবণক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য পোনা মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা :
* পোনা মজুদের পর প্রথম ৫ সপ্তাহ প্রয়োজন না হলে ঘেরের পানি পরিবর্তন করা যাবে না। তবে পানির উচ্চতা কমে গেলে পানি সরবরাহ করে ৬০—৮০ সে.মি. করার প্রয়োজন হবে। পানির স্বচ্ছতা ৪০ সে.মি.—এর বেশি হলে পূর্ণমাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে এবং ২৫ সে.মি.—এর নিচের হলে ঘেরের এক—তৃতীয়াংশ পানি বের করে নতুন পানি প্রবেশ করাতে হবে।
পোনা মজুদের ৫ সপ্তাহ পর পানির গভীরতা বৃদ্ধি করে ৭০—১০০ সে.মি. করতে হবে। প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ার—ভাটার চক্রে ঘেরের শতকরা ৫০ ভাগ করা উচিত। বর্ষা মৌসুমে চিংড়ির অল্প পরিমাণ কৃত্রিম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
ত্রিশ গ্রাম বা এর বেশি ওজনের চিংড়িগুলো ধরে ফেলতে হবে। ধরার পর সাথে সাথে ছায়াযুক্ত স্থানে প্লাস্টিকের বা* বা তাপপরিবাহী কোন পাত্রে বরফ ও চিংড়ির স্তর পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে রেখে চিংড়ি সংরক্ষণ করতে হবে। বরফজাতকৃত চিংড়িগুলো অতিদ্রুত প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পোনা মজুদের ৬ মাসের মধ্যে ভাটার সময় ঘেরের সমস্ত পানি বের করে দিতে হতে এবং সমস্ত চিংড়ি আহরণ করে পূর্বের নিয়মে বরফ দ্বারা সংরক্ষণ করতে হবে।
লবণ ক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষ বাংলাদেশে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অনেক জমিতে লবণের চাষ করা হয় বহু পূর্ব থেকেই। বর্তমানে লবনের সাথে অধিক লাভের প্রত্যাশায় লবণ ক্ষেতে চিংড়িও চাষ করা হচ্ছে। ফলে চিংড়ি চাষীরা অধিক লাভবান হতে পারেন। সঠিক পদ্ধতিতে সর্তকতার সাথে চাষ করলে লবণের জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ লাভজনক হবে যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
উপকূলীয় এলাকায় ও লবণক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষ বাগদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতি :
বাংলাদেশে প্রচলিত পদ্ধতি বাগদা চিংড়ি চাষ এবং লবণ ক্ষেতে বাগদা চাষের সাধারণ কার্যাবলী একই ধরনের। সন্তোষজনকভাবে ফলন পেতে হলে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় যা নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
ক. লবণক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য জমি প্রস্তুতকরণ :
বাগদা চিংড়ির জন্য জমি প্রস্তুতে সময় যে সব বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে সেগুলো নিম্নরূপ :
১. জমির আয়তন ১ — ২ হেক্টর হলে ভালো হলে ভালো যাতে ভালোভাবে সমতল করে তৈরি করা যায়।
২. পানির শ্যাওলা ও আগাছা ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে এবং জমির আইল শক্তভাবে বাঁধতে হবে।
৩. পানির গভীরতা ১ মিটার রাখতে হবে।
৪. লবণাক্ততার মাত্রা ১৭ পিপিটি পর্যন্ত রাখতে হবে।
৫. জৈব সার ১.০ — ১.৫ কেজি, ইউরিয়া ১৭৫ — ২২০ গ্রাম টিএসপি ১৫০ — ২০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
৬. চিংড়ির পোনা ছাড়ার পূর্বে রাক্ষুসে ও আগাছা দুর করে চুন প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি শতকে ১.০ — ১.৫ কেজি চুন গুড়া করে পানিতে গুলিয়ে ঠাণ্ডা করে ছিটিয়ে দিতে হবে।
৭. লবণের জমির কিছু অংশে বা নিচু অংশে জলজ গাছ বা গাছের শক্ত পাতা বা শাখা রেখে চিংড়ির আবাসস্থল তৈরি করতে হবে।
৮. মাটির পিএইচ মেপে চুন প্রয়োগ করে ৭.০ এর উপরে রাখতে হবে।
খ. লবণক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য পানি ঢুকানো ও পোনা ছাড়া :
জমি প্রস্তুত ও চুন প্রায়োগের ৭ — ১০ দিন পর ৬০ — ৭০ সে. মি. জোয়ারের পানি ঢুকাতে হবে। পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হলে পোনা ছাড়তে হবে। প্রতি শতকে ১০০ — ১৫০টি পোনা ছাড়াতে হবে।
গ. লবণক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য সার প্রয়োগ :
প্রতি মৌসুমে পোনা ছাড়ার ১ সপ্তাহ পর প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির জন্য প্রতি শতকে ৭০ — ৯০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০ — ২৫ গ্রাম টিএসপি ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
ঘ. লবণক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষ থেকে চিংড়ি আহরণ :
সকল চিংড়ি একসাথে বা মাসে মাসে আহরণ করা যায়। পোনা মজুদের ৫ — ৬ মাস পর থেকে বড় বড় চিংড়ি আহরণ করা যায়।
ঙ. ফলন বা উৎপাদন :লবন জমিতে উপরোক্ত পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করলে সন্তোষজনক ফলন পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে সাধারণত প্রতি হেক্টরে ৪০০ — ৫০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদিত হয়।

কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষ:
কার্প জাতীয় মাছের সংগে চিংড়ির একত্রে একই জলাশয়ে চাষ করাকে কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষ বলা হয়। এইপদ্ধতিতে পুকুরে কার্প ও চিংড়ি একত্রে চাষ করে অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়। এতে জলাশয়ের পূর্ণ ব্যবহার হয় এবং আর্থিকভাবে লাভবানও হওয়া যায়।
নিচে কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি পর্যায়েক্রমে বর্ণনা করা হলো-
কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি:
এক্ষেত্রে সাধারণ মাছ চাষের মতোই পুকুরকে প্রস্তুত করতে প্রয়োজন। চিংড়ি চাষের পুকুরে পানিতে বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন। তাই মাঝে মাঝে পুকুরের পানি বদল করতে হয়। পুকুরে গভীরতা ১-১.৫ মিটার হওয়া ভালো।
কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষের জন্য পাড় ও তলা মেরামত:
পাড় ভাঙা থাকলে তা যথাযথভাবে মেরামত করতে হবে। পাড়ে বড় গাছ না রাখাই ভালো। তলদেশ সমান করে নিতে হবে। নতুবা জাল টানতে অসুবিধা হয়।
কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষের জন্য রাক্ষুসে মাছ অপসারণ:
পুকুরে বার বার জাল টেনে বা পুকুর শুকিয়ে ফেলতে হবে অথবা রোটেনন বিষপ্রয়োগে মাছ মারা যায়।
কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষের জন্য চুন প্রয়োগ :
মাছ চাষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চুন। সাধারণত শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন ছিটাতে বা পানিতে গুলে দিতে হবে। চুন পানিকে শোধন করে এবং পানিতে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষের জন্য সার প্রয়োগ:
চুন দেওয়ার ৬-৭ দিন পর জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। শতাংশ প্রতি ৩-৫ কেজি গোবর বা হাঁস মুরগির বিষ্ঠা পুকুরে দিতে হয়। আবার ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০-৭৫ গ্রাম টি.এস.পি এবং ২৫ গ্রাম পটাশ পানিতে গুলে দিতে হবে। সার দেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে পুকুরের পানির রং সবুজ হলে প্রাকৃতিক খাবার আছে বুঝতে হবে। পুকুরের পানিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপস্থিতিকেই প্রাকৃতিক খাদ্য বলে। এবার পুকুরে মাছ অবমুক্ত করার জন্য তৈরি হয়েছে।
কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষের জন্য পোনা মজুদ:
হেক্টর প্রতি ৭,০০০-১০,০০০ টি গলদা, সিলভার কার্প ও কাতলা ১০০০ টি এবং ৫০০০ টি বুই, ৩০ টি গ্রাস কার্প, ২০ টি মৃগেল ও কমন কার্প পোনা মজুদ করতে হবে। তবে মৃগেল ও কমন কার্প মাছ না দিলেও চলে। কারণ চিংড়ি তলদেশের বা নিচের স্তরের খাবার খায়।
কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষের জন্য খাদ্য প্রয়োগ :
মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। চিংড়ির খাবারের মধ্যে ঝিনুক চূর্ণ, আর্টেমিয়া, কিশমিল, লবণ ও ভিটামিন অবশ্যই থাকতে হবে। চিংড়ির আমিষ জাতীয় খাবার প্রয়োজন।
কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষের জন্য আশ্রয় ব্যবস্থা:
চিংড়ির দেহের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খোলস পরিবর্তন করে। এ সময় চিংড়ি অত্যন্ত দুর্বল ও নাজুক অবস্থায় থাকে। এসময় চিংড়ি আশ্রয় খোঁজে। এজন্য এ সময় পুকুরে কিছু পাতাবিহীন ডালা-পালা পুঁতে রাখতে হবে। পুকুরে কিনারে কলা গাছ ফেলে রাখাও যায়
পরিচর্যা : কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষের পুকুরে কিছু পরিচর্যা করা প্রয়োজন। নিচে তার কিছু বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো-
- মাছ ও চিংড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মাসে দুবার জাল টেনে দেখতে হবে।
- চিংড়ি নিয়মিত খাবার গ্রহণ করছে কিনা তা যথাযথভাবে পর্যাবেক্ষণ করতে হবে।
- চিংড়ি সকাল বা অন্য কোন সময় পুকুরের কিনারে বা পানির উপরে এসে খাবি খেলে অক্সিজেন অভাব ঘটেছে বলে বুঝতে হবে। এক্ষেত্রে জাল টেনে, বাঁশ পিটিয়ে পুকুরের পানি নাড়াতে হবে।
কার্প ও চিংড়ির সমন্বিত চাষের পর আহরণ :
উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় চাষ করলে ৬-৭ মাসে চিংড়ি বাজারজাতকরণের উপযুক্ত হয়। এ সময় ১০-১৫ টিতে ১ কেজি ওজন হলে চিংড়ি আহরণ করতে হবে। এভাবে বড় আকারের ও ওজনের মাছ ধরে ফেলতে হবে।

চিংড়ির রোগ ও ব্যবস্থাপনা
চিংড়ির রোগ ও ব্যবস্থাপনা – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্রের, ৪ নং ইউনিটের ৪.৩ নং পাঠ।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্রমবিকাশে চিংড়ির অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রতিদিন স্বামিষ গ্রহণ করি তার প্রায় ৬০% যোগান দেয় মাছ ও চিংড়ি। বিগত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের মধ্যে হিমায়িত চিংড়ির পরিমাণ ছিল ৫৩% এবং এসব পণ্য রপ্তানিবাবদ অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ অর্থাৎ প্রায় ৮৫% এসেছিল চিংড়ি থেকে। বাংলাদেশের চিংড়ি উৎপাদনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে শুরু করে পরবর্তি বছরগুলোতে চাষকৃত চিংড়ির পরিমাণ উত্তরোত্তর বেড়েছে।
চিংড়ি চাষের পরিধি বৃদ্ধি এবং প্রচলিত সনাতন চাষ পদ্ধতি থেকে আধা-নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে ক্রমোন্নতি-ই এর প্রধান কারণ। সনাতন চাষ পদ্ধতিতে প্রথমদিকে তেমন রোগ বালাই ছিল না বা চিংড়ি চাষীরা এ ব্যাপারে তেমন সচেতন ছিলেন না। তবে চিংড়ি চাষে নিবিড়তা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন রোগবালাই ও আপদ বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাগদা চিংড়ি চাষে হোয়াইট স্পট বা চায়না ভাইরাস রোগ মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। চিংড়ি উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার পাশাপাশি রোগবালাই সম্পর্কিত বাস্তব জ্ঞান থাকলে সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে চিংড়িকে সুস্থ-সবল রেখে ভালো ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব।
চিংড়ির রোগের কারণঃ
চিংড়ির রোগাক্রান্ত হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ বা বিষয় কাজ করে। এর মধ্যে চিহ্নিত কারণগুলো নিম্নরূপ—
১. পানির ভৌত—রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাগুণের অবনতি (পানির তাপমাত্রা, জৈব তলানি, পিএইচ, লবণাক্ততা, দ্রবীভূত অ*িজেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড, শেওলা)।
২. মাত্রাতিরিক্ত উৎপাদন উপকরণ ব্যবহার (সার, খাদ্য, ঔষধ ইত্যাদি)।
৩. বাইরের এলাকা বা পার্শ্ববর্তী রোগাক্রান্ত খামারের দূষিত পানির প্রবেশ।
৪. অধিক মজুদ ঘনত্ব।
৫. রোগমুক্ত/ ঝচঋ পোনা ব্যবহার না করা।
৬. অপুষ্টি।
৭. ক্রটিপূর্ণ পরিবহন ও হ্যান্ডেলিং।
৮. পরজীবী ও রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর সংক্রমণ।
৯. আক্রান্ত খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য উপকরণ যথাযথভাবে পরিস্কার না করেই পুনরায় ব্যবহার।
চিংড়ির রোগের সাধারণ লক্ষণ:
জীবাণুর আক্রমন ও রোগের ধরণ অনুযায়ী রোগাক্রান্ত চিংড়ির মাঝে বিভিন্ন প্রকার লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে সাধারণভাবে নিম্নোক্ত লক্ষণ সমূহ দেখা যায়:
* অসুস্থ চিংড়িকে পুকুরের পাড়ের কাছে অচেতন অবস্থায় দেখা যাবে।
* খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখাবে এবং অসুস্থ্য চিংড়ির খাদ্যনালী খালি থাকবে।
* রোগাক্রান্ত চিংড়ির ফুলকায় কাল, হলুদ বা বাদামী দাগ অথবা ক্যারাপেস (ঈধৎধঢ়ধপব)এবং খোলসে সাদা সাদা দাগ দেখা যাবে।
* রোগের কারণে চিংড়ির উপাঙ্গে পচন ধরতে পারে।
* অসুস্থ চিংড়ির খোলসের উপর শেওলা জমতে দেখা যায়।
* অসুস্থ চিংড়ির খোলস নরম থাকে এবং পেশী সাদা বা হলদে হতে দেখা যায়।
চিংড়ির রোগ
(১) চিংড়ির হোয়াইট স্পট বা সাদা দাগ রোগ:
এটি চিংড়ির মহামারী রোগ কারণ এই রোগে আক্রান্ত চিংড়ির বাঁচার আশা থাকে না। একে অথবা চায়না ভাইরাস রোগও বলা হয়ে থাকে। বাগদা চিংড়ি এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। গলদা চিংড়ির হোয়াইট স্পট রোগের কোন রিপোর্ট এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। রোগটি ১৯৯৪ সালে ক*বাজার অঞ্চলে প্রথম দেখা দেয় এবং পরবর্তিতে খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
রোগের কারন : ভাইরাসের কারনে এ রোগ হয়। রোগের লক্ষণ : মারাত্মকভাবে আক্রান্ত চিংড়ি খাদ্য গ্রহণ দ্রুত কমিয়ে দেয়। ভাইরাস আক্রান্ত চিংড়ি প্রাথমিক অবস্থায় দূর্বল হয়ে পড়ে এবং পাড়ের কাছে এসে অলস বসে থাকে। মৃত্যুহার ব্যাপক এবং লক্ষণ প্রকাশ পাবার ৩ থেকে ১০ দিনের ভিতরে শতভাগ চিংড়ি মারা যায়। আক্রান্ত চিংড়ির খোলস ঢিলঢিলে হয়ে যায় এবং ক্যারাপেস ও খোলসে সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে মুমূর্ষু চিংড়ি নীলাভ থেকে লালচে বাদামি বর্ণের হয়ে যায়।
চিকিৎসা/প্রতিকার : তেমন কোন চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। তাই ইচ্ছেমত কোন ঔষধ বা কেমিক্যাল ব্যবহার না করাই ভাল। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই একমাত্র পথ।

(২) চিংড়ির ইয়েলোহেড বা মস্তক হলুদ হওয়া রোগ:
এই রোগে আক্রান্ত চিংড়ির মাথা হলুদ হয়ে যায় বিধায় একে ইয়েলোহেড রোগ বলা হয়। সংক্ষেপে একে ণঐউ (ণবষষড়যিবধফ উরংবধংব) ও বলে। মূলত: বাগদা চিংড়ি এ রোগের শিকার। বাংলাদেশে এ রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব এখনও ঘটেনি।
রোগের কারণ : ভাইরাসের আক্রমণে এই রোগ হয়।
রোগের লক্ষণ:
আক্রান্ত চিংড়ি প্রথমদিকে খাদ্য গ্রহণ করলেও দিন বাড়ার সাথে সাথে খাদ্য গ্রহণ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়। চখ ২০—২৫ থেকে শুরু করে কিশোর বয়সের চিংড়ি এ রোগের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। আক্রান্ত চিংড়ি থেকে অন্য চিংড়িতে রোগের সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত চিংড়ি লক্ষণ প্রকাশ পাবার পর ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ব্যাপক হারে মারা যায় এবং মৃত্যুহার শতভাগেও পেঁৗছাতে পারে। রোগাক্রান্ত চিংড়ির দেহের বর্ণ ফ্যাকাশে হতে শুরু করে। শিরোবক্ষ এবং হেপাটোপ্যানক্রিয়াস হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং ফুলে যায়।
চিকিৎসা/প্রতিকার:
এ রোগের চিকিৎসায় ঔষধে কাজ হয় না। তাই সুষ্ঠু চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করাই একমাত্র পন্থা। তবে চাষের পুকুরে ফাইটোপ্লাংকটন চাষ করে এ রোগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় বলে শুনা যায়।

(৩) চিংড়ির কালো/বাদামি দাগ রোগ অথবা খোলসের রোগ:
গলদা চিংড়িতে রোগটি বেশি হলেও বাগদা চিংড়িতে এ রোগ হতে দেখা যায়। কারণ : বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া
লক্ষণ : ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে চিংড়ির খোলসে কালো কালো বা বাদামি দাগ সৃষ্টি হয়। খোলসের গায়ে ছিদ্র হয়, খোলস ক্ষতিগ্রস্থ হয়, উপাঙ্গ খসে পড়ে এবং পরবর্তিতে ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চিংড়ি মারা যায়। সব বয়সের চিংড়িই এ রোগের শিকার হতে পারে।
প্রতিকার : ঋঅঙ এর সুপারিশ মোতাবেক ঘরভঁৎঢ়ঁৎরহড়ষ নামক এন্টিবায়োটিক দ্বারা এ রোগের চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যায়। তাছাড়া ঙীড়ষরহরপ ধপরফ ব্যবহারের পরামর্শও দেয়া হয়। তবে উন্নত চাষ ব্যবস্থাপনা হলো এ রোগ প্রতিরোধের সব থেকে ভালো পথ।
(৪) চিংড়ির ছত্রাক জনিত রোগ:
এ রোগের নির্দিষ্ট কোন নাম নেই। যেহেতু ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়, তাই একে ছত্রাকজনিত রোগ বলা হয়। সব বয়সের গলদা ও বাগদা চিংড়িই ছত্রাকের শিকার হতে পারে। তবে চিংড়ির লার্ভা ও পিএল এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ছত্রাক মূলত মাধ্যমিক সংক্রমণ ঘটায়।
রোগের কারণ : খধমবহরফরঁস, ঋঁংধৎরঁস ংড়ষধহর ইত্যাদি ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়।
লক্ষণ : আক্রান্ত চিংড়ির খোলসের ভিতর দিয়ে বিস্তৃত জালের মত ছত্রাক দৃশ্যমান হয়। আক্রান্ত চিংড়ির পেশীকলা হলদে ধুসর বা নীলাভ বর্ণ ধারণ করে।
প্রতিকার : এর সুপারিশে উন্নত চাষ ব্যবস্থাপনার সাথে সাথে ছত্রাকের আক্রমণ দমন করতে ঞৎরভষঁৎধষরহ, গবৎঃযরড়ষধঃব—ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
(৫) চিংড়ির প্রোটোজোয়াজনিত রোগ:
এক বা একাধিক প্রোটোজোয়া পরজীবীর আক্রমণে এ রোগ হয়। যে কোন বয়সের গলদা বা বাগদা চিংড়ির প্রোটোজোয়াজনিত রোগ হতে পারে।
রোগের কারণ : তড়ড়ঃযধসহরঁস, ঊঢ়রংঃুষরং, ঠড়ৎঃরপবষষধ, অপরহবঃধ, ঙঢ়বৎপঁষধৎরধ, ঠধমরহরপড়ষধ, চড়ফড়ঢ়যুৎধ ইত্যাদি প্রোটোজোয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়।
রোগর লক্ষণ : চিংড়ির খোলস, পুষ্টিতন্ত্র ও ফুলকার ক্ষতি হয়। আক্রান্ত চিংড়ির চলাচল, খাদ্য গ্রহণ ও খোলস পাল্টানো বাধাগ্রস্থ হয়। চিংড়ি স্বাভাবিক বর্ধন হার ব্যহত হয়।
প্রতিকার : উন্নত চাষ ব্যবস্থাপনা এ রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভাল পথ।

(৬) চিংড়ির অপুষ্টিজনিত রোগ:
গলদা এবং বাগদা উভয় চিংড়িই অপুষ্টিতে ভুগতে পারে। (ক) খোলস নরম রোগ/স্পঞ্জের মত দেহ:
চাষাবাদের মাঝামাঝি সময়ে প্রায়ই গলদা চিংড়ির এ রোগ হয়। আবার বর্ষাকালে ঘেরে পানির লবণাক্ততা কমে গেলে বাগদা চিংড়িও এ রোগে আক্রান্ত হয়।
কারণ ঃ পানিতে ক্যালসিয়াম কমে যাওয়া
* পানিতে অ্যামোনিয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়া।
* পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া
* সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব
* অনেক দিন পানি পরিবর্তন না করা।
লক্ষণ : খোলস নরম থাকে অর্থাৎ খোলস বদলানোর ২৪ ঘন্টা পরও খোলস শক্ত হয় না। দেহ ফাঁপা হয়ে স্পঞ্জের মত হয়। চিংড়ির বর্ধন ব্যহত হয় এবং চিংড়ি ক্রমশঃ দূর্বল হয়ে মারা যায়। প্রতিকার : পুকুরে ২—৩ মাস পর পর ০.৫—১ কেজি/শতাংশ হারে চুন প্রয়োগ এবং খাবারে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এ সমস্যার সুফল পাওয়া যায়। (খ) খোলস পাল্টানোর পর মৃত্যু:
কারণ: খাদ্যে ভিটামিন বি—কমপ্লে*, ফ্যাটি এসিড, আমিষ ও খনিজ লবণের অভাব।
লক্ষণ : দেহ নরম থাকে এবং রং নীলাভ হয়ে যায়। চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয় এবং চিংড়ি ক্রমশ দূর্বল হয়ে মারা যায়।
প্রতিকার : পরিমিত পরিমাণ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ করতে হবে।
উপরোক্ত রোগ—বালাই ছাড়াও আরও কিছু রোগ চিংড়ি খামারে নিয়মিত দেখা যায়। যেমন:
(৭) চিংড়ির গায়ে শেওলা পড়া:
কারণ : বদ্ধ পানিতে অতি মাত্রায় খাদ্য ও সার প্রয়োগে সবুজ শেওলার আধিক্যের কারণে এ সমস্যা হয়ে থাকে। শীতকালে গলদা চিংড়ির পুকুরে এ রোগ বেশি দেখা যায়।
লক্ষণ: চিংড়ির দেহের উপরিভাগে সবুজ শেওলার আস্তরণ দেখা যায়। চিংড়ি খোলস পরিবর্তন করে না এবং চলাচলের গতি মন্থর হয়ে যায়। বৃদ্ধি ব্যহত হয় এবং চিংড়ি আস্তে আস্তে মারা যায়।
প্রতিকার : দূষিত পানি বের করে দিয়ে পুকুরে নতুন পানি দিতে হবে। নিয়মিত বিরতিতে পানি পরিবর্তন করতে হবে। পানির প্রবাহ বাড়িয়ে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। চুন সার ও খাদ্য প্রয়োগ মাত্রা সীমিত রাখতে হবে।
চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা :
চিংড়ির ঘেরে/পুকুরে একবার রোগের সংক্রমণ শুরু হলে, বিশেষ করে ভাইরাসের আক্রমণ হলে, বলতে গেলে কিছুই করার থাকে না। তাছাড়া চিকিৎসা দিয়ে আক্রান্ত চিংড়িকে সারিয়ে তোলাটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম। ঋঅঙ —এর মতে চিংড়ির রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলো নিম্নমানের চাষ ব্যবস্থাপনা, অস্বাস্থ্যকর জলজ পরিবেশ, আমদানী করা চিংড়ির জন্য অপর্যাপ্ত সংগনিরোধ ব্যবস্থা প্রভৃতি।
পানির গুণাগুণের (যেমন—তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, ঙ২, ঢ়ঐ, দ্রবীভূত বিষাক্ত গ্যাস ইত্যাদি) হঠাৎ নাটকীয় পরিবর্তনের ফলে ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে দেখা গেছে। তাই বলা যেতে পারে উন্নত চাষ ব্যবস্থাপনা চিংড়ির রোগ প্রতিরোধের পূর্বশর্ত। নিম্নে রোগ প্রতিরোধের সাধারণ উপায়গুলো বর্ণনা করা হলো—
১. হ্যাচারিতে নেওয়ার আগে ব্রুডস্টক এবং চাষের পুকুর/ঘেরে মজুদের আগে চখ (চড়ংঃ খধৎাধব) রোগ মুক্ত কিনা তা যাচাই (ঝপৎববহরহম)করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ঝচঋ ব্রুড ব্যবহারের মাধ্যমে সুস্থ, সবল ও ভাইরাসমুক্ত পোনা
উৎপাদন ও মজুদ করতে হবে।
২. হ্যাচারি ও পুকুরে যথাক্রমে পোনা উৎপাদন ও মজুদের যাবতীয় কার্যক্রম শুরুর পূর্বে অবশ্যই সেগুলো ভালোমত জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
৩. ঘের/পুকুরের পরিবেশ চিংড়ির জন্য উপযোগী রাখার স্বার্থে পানির ভৌত রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাগুণের হঠাৎ পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. পোনার মজুদ ঘনত্ব নিয়মের মধ্যে রাখতে হবে এবং অতিরিক্ত পোনা মজুদ করা যাবে না।
৫. মাংসজাতীয় খাবার কাচা অবস্থায় না দেওয়াই শ্রেয়। তাছাড়া বাসি—পচা ছাতা ধরা মেয়াদ উত্তীর্ণ নিম্নমানের খাবার দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।
৬. চাষাবস্থায় ঘের/পুকুরের পানি পরিবর্তন (ডধঃবৎ বীপযধহমব) ন্যূনতম মাত্রায় রাখতে হবে যাতে করে নতুন পানির সাথে ভাইরাসের বাহক (ঠরৎঁং পধৎৎরবৎ) প্রবেশ করতে না পারে। তাছাড়া জলাশয়ে অবাঞ্চিত ও ক্ষতিকর প্রাণির/পোকার প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৭. জলাশয়ে পরিমিত পরিমান চুন সার ও সুষম খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
৮. জলাশয়ের চারিদিকে শক্ত—পোক্ত ও উচঁু বাঁধ নির্মান করতে হবে। যাতে বন্যার পানি ও পাশ্ববর্তী ঘের থেকে চুয়ানো পানি প্রবেশ করতে না পারে।
৯. নিয়মিতভাবে চিংড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ঘেরে রোগাক্রান্ত ও মরা চিংড়ির উপস্থিতি টের পাবার সাথে সাথে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।
১০. এক জলাশয়ে ব্যবহৃত জাল ও অন্যান্য উপকরণ অন্য জলাশয়ে ব্যবহারের পূর্বে বাধ্যতামূলকভাবে পরিশোধন করে নিতে হবে।
১১. চিংড়ি চাষের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং যত্রতত্র মলমূত্র, থুতু ও আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ অভ্যাস হ্যাচারি থেকে শুরু করে চাষের ঘের পর্যন্ত সমানভাবে মেনে চলতে হবে।
১২. আহরণোত্তর ঘেরের পানি ও তলার কালো কাদা শোধন না করে সরাসরি অন্যত্র ফেলা যাবে না।

চিংড়ি পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ
চিংড়ি পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ – পাঠটি বাউবির “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয় এর ইউনিট – ৫ , পাঠ -৫.২।
চিংড়ি পরিবহন:
চিংড়ি পরিবহন বলতে বোঝায় চিংড়ি আহরণের পর আহরণের স্থান হতে প্রক্রিয়াজাতকরণ
কারখানায় বা ভোক্তা বা ক্রেতার নিকট পেঁৗছানো। আর চিংড়ি বাজারজাতকরণ বলতে সাধারণ অর্থে আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ির গুনগত মান অক্ষুন্ন রেখে সংরক্ষণ করে বাজারে বিক্রি করাকে বোঝায়। চিংড়ি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস। চিংড়ি পঁচনশীল প্রাণি তাই চিংড়িকে পঁচন থেকে রক্ষা করে চাহিদা অনুযায়ী বাজারজাত করতে হয়। এতে করে চিংড়ি চাষিরা লাভবান হবে এবং দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে। তাই উপযুক্ত পদ্ধতিতে চিংড়ি পরিবহন ও বাজারজাত করার প্রয়োজন।
চিংড়ি পরিবহন ও বাজারজাতকরণের প্রয়োজনীয়তা :
১. খাওয়ার উপযোগী চিংড়িকে ক্রেতার নিকট চাহিদা অনুযায়ী পেঁৗছানো।
২. বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা।
৩. এক স্থানের চিংড়ি দিয়ে অন্য স্থানের চাহিদা পূরণ করা।
৪. চিংড়িকে পঁচনের হাত থেকে রক্ষা করা।
৫. সারা বছর বাজারে বা ভোক্তার নিকট চাহিদা অনুযায়ী চিংড়ি সরবরাহ করা।
৬. চিংড়ির দাম ভালো পাওয়া।
৭. দেশের রাজস্ব ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা।
৮. দেশের মানুষের আর্থ—সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা।
চিংড়ি পরিবহনের সময় করণীয় বিষয় :
চিংড়ি পরিবহনের সময় নিচের পরিচর্যাগুলো অনুসরণ করতে হবে।
ক. নৌকা বা জাহাজের উপর পরিচর্যা :
১. চিংড়িকে আকার ও প্রজাতি অনুসারে পৃথক করতে হয়।
২. এমনভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যেন আঘাত না পায়।
৩. ব্যবহারকারীর জন্য পাত্র, ঝুড়ি এমনভাবে হতে হবে যেন সহজে পরিষ্কার করা যায়।
৪. সূর্যালোক যেন না পড়ে সেভাবে রাখতে হবে।
৫. ক্লোরিনযুক্ত (৫—১০ পিপিএম) পানিতে ধুয়ে নিলে ভালো হয়।
৬. প্রতিবার চিংড়ি রাখার পূর্বে জিনিসপত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
৭. ডেক, চিংড়ির ঘর, বালতি, পাত্র, বরফ ভাঙ্গঁার কাঠ বা লাঠি ইত্যাদি ক্লোরিন পানি দ্বারা ধুয়ে নিতে হবে। ৮ চিংড়ি বেশিক্ষণ বাইরে রাখা যাবে না।
খ .চিংড়ি খালাস ও পরিবহনের সময় পরিচর্যা—
১. চিংড়ি খালাস করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন চিংড়ির গায়ে কোন আঘাত না লাগে।
২. খালাসের পর চিংড়িকে পরিষ্কার স্থানে রাখতে হবে এবং পূনরায় বরফ দেওয়ার প্রয়োজন হলে দ্রুত দিতে হবে।
৩. চিংড়ি পরিবহনের সময় প্লাস্টিক বাক্স ব্যবহার করাই উত্তম। কাছাকাছি পরিবহনের ক্ষেত্রে তাপ প্রতিরোধ বাক্স ব্যবহার করাই উত্তম।
৪. দূরে চিংড়ি পরিবহনের ক্ষেত্রে শীতল ভ্যান ব্যবহার করা উত্তম এবং যত দ্রুত সম্ভব পরিবহন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. চিংড়ি খালাসের সময় বাক্সের উপর দাঁড়ানো বা স্তুপাকারে রাখা যাবে না।
৬. ঢাকনাওয়ালা ও তলায় ছিদ্রযুক্ত ধাতু নির্মিত পাত্র যথাযথভাবে বরফ দিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ :
চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ বলতে সাধারণ অর্থে আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়িকে দীর্ঘসময় গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রেখে সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকে বোঝায়। চিংড়ি আহরণের পর দ্রুত প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। চিংড়িতে রয়েছে আমিষ, শ্বেতসার, ফ্যাট, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন। চিংড়ি আহরণের পর যথাসময়ের মধ্যে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত না করলে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে।
বিদেশের ক্রেতারা ক্রয় করতে চায় না। এতে রপ্তানির সমস্যা দেখা দেয়। চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরনের আধুনিক পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলা : প্রথমে সমুদ্রে উপকূলবর্তী এলাকা বা ঘের থেকে ঝুড়ি বা বাক্স ভর্তি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্টে আনা হয় এবং ছোটবড়, ভালো—খারাপ ইত্যাদির ভিত্তিতে মাথা ছাড়িয়ে গ্রেডিং করা হয়।
এরপর গ্রেডিং করা মাছকে বরফ গলিয়ে ক্লোরিনযুক্ত চলমান পানি দ্বারা (২০ পি.পি.এম) ধৌত করা হয়। যদি একসঙ্গে বেশি মাছ আসে তবে যে মাছগুলো ধৌত করা হবে সেগুলো ঠাণ্ডা ঘর থেকে বের করে বাকিগুলো ঠাণ্ডাঘরে রাখতে হবে। মোট কথা চিংড়ি বেশিক্ষণ বাইরে রাখা যাবে না। এরপর মাথাসহ ও মাথাবিহীন চিংড়িকে আলাদা করে ১০ পিপিএম ক্লোরিন মিশ্রিত অবস্থায় ধৌত করার পর ওজন নিয়ে চিংড়িগুলো প্যানিং ট্রেতে সুন্দর করে সাজানো হয় এবং ৩—৫ পিপিএম ক্লোরিন মিশ্রিত ঠাণ্ডা পানি দিয়ে প্যানিং ট্রে ভরে পলিথিন দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়।
তারপর প্যানিং ট্রেগুলো প্লেটা বা কন্ট্রাক্ট ফ্রিজারে নির্দিষ্ট চেম্বারে স্থাপন করে— ৩৫ থেকে —
৪০ সে. তাপমাত্রায় হিমায়িত করা হয়। সময় লাগে ১৫ মিনিট থেকে ২—৩ ঘণ্টা এবং প্যানিং ট্রেতে ৪—৮টি ব্লক করা যায়। প্রতি ব্লকের ওজন বিভিন্ন মাপের করা যায় যেমন : ১ কেজি, ১.৮ কেজি ইত্যাদি। এ গ্লেজিং মাছকে শুষ্ক বোধ করে এবং পচনকে বাধাগ্রস্ত করে। ২—৩ ঘণ্টার কম সময় হিমায়িত করলে মাছের গুণগত মান ভালো থাকে না।
গ্লেজিং করার পর চিংড়ির ব্লকগুলোর অভ্যন্তরীণ মোড়ক (ইনার কাটুর্নে) ভরে সিল করা হয় এবং কার্টুনের গায়ে নিম্নোক্ত তথ্য থাকে। ক. কোম্পানির নাম, খ. চিংড়ির প্রকৃত ওজন, গ. চিংড়ির নাম ও গ্রেড, ঘ. ব্যাচ বা কোড নম্বর, ঙ. পাউন্ড প্রতি চিংড়ির সংখ্যা, চ. রপ্তানিকারকের ঠিকানা। ৬ বা ১০টি ইনার কার্টুন একটি মাস্টার কাটুর্নের মধ্যে ভরে পলি প্রপাইলিন (পিপি)
বেল্ট দিয়ে মোড়ক বাঁধা হয়। তারপর হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয় রপ্তানির জন্য এবং রপ্তানি করা হয়। চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি ফ্লো—চার্টের নিম্নে মাধ্যমে দেখানো হলো :
চিংড়ি বাজারজাতকরণ :
চিংড়ি বাজারজাতকালীন অসুবিধাসমূহ নিম্নরূপ : চিংড়ি বাজারজাতকরণের চেইন সম্পর্কে ধারণা না থাকায় চেইনের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী যেমন— পোনা, খাদ্য, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সরবরাহে নানা ধরনের মধ্যসতে¡ ভাগী সংশ্লিষ্ট থাকায় সমষ্টিগতভাবে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য ও চিংড়ির মান অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হয় না। চিংড়ি সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞানতা, চিংড়ি খামার হতে বিক্রয় কেন্দ্রের দূরত্ব, বাজার দরের তথ্য না পাওয়া, সর্বোপরি দাদন ব্যবসার শর্তের কারণে চাষি চিংড়ির ন্যায্যমূল্য পায় না।
চিংড়ির বাজার অবকাঠামো নিম্নরূপ :
আমাদের চিংড়ির বিপণন ব্যবস্থা অধিক মধ্যসত্বভোগীর কারণে বেশ জটিল। এ ব্যবস্থায় চাষি পর্যায় থেকে ফড়িয়া, পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ছোট ডিপো, বড় ডিপো, আড়তদার, পাইকার, কমিশন এজেন্ট হয়ে সর্বশেষ প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় চিংড়ি সরবরাহ হয়ে থাকে। বাংলাদেশের চিংড়ি বাজারজাতকরণ পদ্ধতির ফ্লোচার্ট নিম্নে দেখানো হলো :
চিংড়ি চাষী :
চিংড়ি খামারের অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার উপর নির্ভর করে চাষীগণ সরকারি খামারে ফড়িয়াদের নিকট অথবা ছোট ডিপো বা আড়তে চিংড়ি বিক্রয় করেন। ফড়িয়া : ফড়িয়াগণ সরাসরি চিংড়ি চাষীদের নিকট থেকে চিংড়ি ক্রয় করে ছোট ও বড় ডিপোতে বিক্রয় করে থাকে। আড়তদার : চিংড়ি চাষী যারা ফড়িয়া বা আড়তদার এর নিকট দাদন গ্রহণ করে না বা চুক্তিবদ্ধ থাকে না, তারা তাদের উৎপাদিত চিংড়ি সরাসরি আড়ত বা নিলাম কেন্দ্রে বিক্রয় করতে পারেন।
ডিপো মালিক :
ডিপো মালিকগণ চিংড়ি চাষী বা ফড়িয়াদের নিকট থেকে চিংড়ি ক্রয় করে থাকেন। ডিপো মালিকগণ চিংড়ি ক্রয় করার জন্য চাষী ও ফড়িয়াদের ঋণ প্রদান করেন।
পাইকার :
সাধারণত পাইকাররা বিপুল সংখ্যক চিংড়ি আড়তদারের নিকট থেকে সংগ্রহ করে থাকে। কোনো কোনো পাইকার
কমিশন এজেন্টের প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করে থাকে। তাছাড়া আড়তদারে নিকট থেকে নিলামের মাধ্যমে ও দরকষাকষির মাধ্যমে চিংড়ি ক্রয় করে প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় প্রেরণ করেন। \
কমিশন এজেন্ট :
কমিশন এজেন্টগণ একাউন্টহোল্ডার হিসেবে কাজ করে থাকেন। যারা বড় ডিপো মালিক বা পাইকারের সাথে রপ্তানিকারকদের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করেন। কমিশন এজেন্টগণ সাধারণত প্রতি কেজি চিংড়ির জন্য ৫ টাকা হারে রপ্তানিকারকের নিকট থেকে কমিশন পেয়ে থাকেন। প্রক্রিয়াকরণকারী/রপ্তানিকারক : সাধারণত প্রক্রিয়াকরণকারী কমিশন এজেন্টের মাধ্যমে পাইকার বা বড় ডিপো থেকে চিংড়ি ক্রয় করে প্রক্রিয়াজাত করেন এবং বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। তারা অভ্যন্তরীণ এবং বৈদশিক বাজারের মধ্যে চিংড়ি বৈদেশিক রপ্তানি বাজারের মধ্যে চিংড়ি সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থার জন্য চূড়ান্ত ব্যক্তি হিসেবে কাজ করে।