জৈব সার সম্পর্কে ধারণা ও সংজ্ঞা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় জৈব সার সম্পর্কে ধারণা ও সংজ্ঞা

জৈব সার সম্পর্কে ধারণা ও সংজ্ঞা

 

 

জৈব সার সম্পর্কে ধারণা ও সংজ্ঞা

আমাদের আশপাশের উদ্ভিদজাত ও প্রাণিজাত অনেক বস্তুকেই সরাসরি অথবা প্রক্রিয়াজাত করে জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে ।

সংজ্ঞা: জৈব উৎস থেকে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত অথবা প্রস্তুতকৃত সারকে জৈব সার বলে।

জৈব সার সম্পর্কে ধারণা

জৈব সার

বাংলাদেশে ব্যবহৃত জৈব সারের মধ্যে রয়েছে গোবর, কম্পোস্ট, সবুজ সার, বিভিন্ন ধরনের খৈল, হাড়ের গুঁড়া, মাছের গুঁড়া ইত্যাদি। অন্যান্য দেশে মানুষের মলমূত্র, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, খামারজাত সার, পশুপাখির রক্ত ইত্যাদি জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া আমাদের দেশে এবং বিদেশে প্রাণিজ সার (জৈবসার) হিসেবে অ্যাফোলা (Azolla), নীল সবুজ শেওলা (Blue Green algae) ও জীবাণু সার (Biofertilizers) ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

গোবর

গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির মলকে গোবর বলে। গোবর সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাস্তবে গোবরে সবটুকুই গোবর থাকে না এর মধ্যে খড়কুটা, চনা ইত্যাদিও মিশ্রিত থাকে। প্রতিদিন ভোরে গরুর গোয়াল ঘর পরিষ্কার করে গোবর একটি চালার নিচে গর্তে ফেলে পচাতে হয়। পচানোতে ২/৩ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

এসময় গোবরে অণুজীবের কার্যকলাপ ঘটে ও বিষাক্ত গ্যাস বেরিয়ে যায়। আগাছার বীজ থাকলে তাও অঙ্কুরিত হয় অথবা মরে যায়। আমাদের দেশে একটি গরু দৈনিক ১২-১৫ কেজি এবং একটি মহিষ ২০-২৫ কেজি গোবর দেয়।

কম্পোস্ট বা আবর্জনা পচা সার

খড়কুটা, আগাছা, ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, কচুরিপানা ইত্যাদি আবর্জনা দ্রব্যকে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু গোবরসহ পচিয়ে প্রস্তুতকৃত সারকে কম্পোস্ট বা আবর্জনা পচা সার বলে। এ সার তৈরিতে ৩-৪ মাস সময় লাগে। এ সারের গুণগত মান গোবর সারের অনুরূপ।

খামার জাত সার

শীত প্রধান দেশে গরু বাছুরকে বছরের অধিকাংশ সময় ঘরের ভেতরে রাখতে হয়। তখন গরু বাছুরের বিছানা হিসেবে খড়কুটা, ঘাস ইত্যাদি বিছিয়ে দেয়া হয়। কিছুদিন পরপর বিছানা বদল করে দিতে হয়। বিছানা হিসেবে ব্যবহৃত গোবর, চনাসমৃদ্ধ খড়কুটা খামার অঙ্গনে এক জায়গায় জমা করে রাখা হয়। কিছুদিন পর এগুলো পচে সারে পরিণত হয়। এ সারকে খামারজাত সার (Farm yard manure) বলে।

সবুজ সার

জমিতে ধৈঞ্চা, শনপাট, বরবটি ইত্যাদি ফসল গাছ জন্মিয়ে নরম ও সবুজ অবস্থায় জমিতে মিশিয়ে প্রস্তুতকৃত সারকে সবুজ সার বলে। সবুজ সার জমিতে জৈব পদার্থ ছাড়াও বেশ কিছু নাইট্রোজেন যোগ করে। একটি সবুজ সার ফসল থেকে হেক্টর প্রতি ১০-৫০ টন জৈব পদার্থ (সুবজ) এবং ৫০- ১৫০ কেজি নাইট্রোজেন পাওয়া যায়।

 

খৈল

সাধারণত তৈল উৎপাদনকারী ফসলের বীজ থেকে খৈল তৈরি হয়। ঘানি বা এক্সপেলারের (Expeller) মাধ্যমে বীজ থেকে তেল বের করে নিলে বাকী অংশটা খৈল হিসেবে অথবা সার হিসেবে জমিতে প্রয়োগ করা যায়। খৈল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন- সরিষা, তিল, তিসি, তুলা, সূর্যমুখী প্রভৃতির খৈল । এসব সারের প্রধান উপাদান নাইট্রোজেন ।

হাড়ের গুঁড়া

পশুপাখির হাড় থেকে চর্বি জাতীয় পদার্থ বাদ দিয়ে হাড় গুঁড়া করে যে সার তৈরি করা হয় তাকে হাড়ের গুঁড়া সার (Bone meal) বলে। হাড় সেদ্ধ করে গুঁড়া করা হলে সারে ফসফরাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ।

মাছের গুঁড়া

মাছের পরিত্যক্ত অংশ এবং বাজারজাত করা মাছকে গুঁড়া করে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মাছের গুঁড়া হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবেও বেশ সমাদৃত। মাছের গুঁড়াও মূলত নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার ।

শুকনা রক্ত

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গরু বাছুর যত্রতত্র জবাই না করে এক জায়গায় (শটার হাউসে) জবাই করে এদের রক্ত সংর ণ করা হয় এবং শুকিয়ে গুঁড়া করে সার তৈরি করা হয়। শুকনা রক্ত নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ।

ছাই

প্রতিদিন রান্নাবান্নার লাকড়ি পুড়িয়ে যে ছাই উৎপন্ন হয় তা পটাসিয়াম সমৃদ্ধ সার হিসেবে জমিতে প্রয়োগ করা হয়।

নিচে বিভিন্ন জৈব সারের নাইট্রোজেন (ঘ), ফসফরাস (P-Os) ও পটাশ (KO) উপাদানের তালিকা দেয়া হল :

ছক ১: বিভিন্ন জৈব সারে নাইট্রোজেন (ঘ), ফসফরাস (P-Os) ও পটাশের (KO) পরিমাণ

 

 

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version