বিভিন্ন পশুপাখির জাত পরিচিতি – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ এর ইউনিট ২ এর পাঠ-২.২ এর আমাদের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক এর জাতীয় অর্থনীতিতে পশুপাখির অবদান বিষয়ক পাঠ।
Table of Contents
পশুপাখির জাত পরিচিতি
মাঠফসল ছাড়া আমাদের কৃষির প্রধান সাব—সেক্টরগুলো হ’লো পশুপাখি, মৎস্য এবং বনজ সম্পদ। পশুপাখি হতে আমরা দুধ, ডিম, মাংস, জৈব সার, জ্বালানি ও শ্রম শক্তি পাই। তাছাড়া পশুর চামড়া রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। বাংলাদেশের প্রত্যেক বাড়িতেই কোন না কোন পশুপাখি পালন করা হয়।
গরুর জাত
১। দুধের জন্য গরুর জাত:
লাল সিন্ধী, শাহীওয়াল, থার্পাকার্র, হলষ্টিন ফ্রিজিয়ান, জার্সি, গুয়ের্ণসি, আয়ার শায়ার, বাদামী সুইস।
২। কাজের জন্য গরুর জাত:
হরিয়ানা, বাগনারী, ধান্নী ও থার্পাকার্র ।
৩। দুধ ও কাজ উভয়ের জন্য:
হরিয়ানা ও থার্পাকার্র ।
নিম্নে কয়েকটি উন্নত জাতের গরুর পরিচিতি দেয়া হলোঃ শাহীওয়াল শাহীওয়াল জাতের গাভী দৈনিক ৯—১০ লিটার দুধ দেয় এবং প্রায় ২৮০ দিন দুগ্ধবতী থাকে। বলদ বা ষাঁড় হাল চাষের অনুপযোগী। পাকিস্থানের পাঞ্জাব প্রদেশের মন্টগোমারী এর উৎপত্তিস্থল। গাভী আকারে কিছুটা লম্বা, হালকাপাতলা, ছোট পা ও গতি ধীর। এদের মাথা আকারে ছোট এবং কপালের স্থান উচু।
লতি কান ও নাভী ঝুলানো। চুট ও গলকম্বল বেশ বড়। ওলান বড় ও ঝুলন্ত। গায়ের রং হালকা লাল বা হালকা হলুদ। দৈনিক ৯১০ লিটার দুধ দেয় এবং প্রায় ২৮০ দিন দুগ্ধবতী থাকে। বলদ বা ষাঁড় হাল চাষের অনুপযোগী। লাল সিন্ধী পাকিস্থানের সিন্ধু প্রদেশের করাচী, লাসবেলা ও হায়দরাবাদ এর উৎপত্তিস্থল। গায়ের রং লাল বলে একে লাল সিন্ধী বলে।
এটি ছোট মাথাওয়ালা মোটা ও খাটো জাতের গরু। শিং মোটা ও সামনের দিকে বাঁকানো। কপাল প্রশস্ত, কানের আকার মাঝারী, নীচের দিকে ঝুলানো, ওলান বেশ বড় ও সুগঠিত। নাভী বড় ও ঝুলানো। এ গরু প্রতিকূল অবস্থা সহ্য করতে পারে এবং দুধও দেয় বেশি। দৈনিক ৮১০ লিটার দুধ দেয় এবং প্রায় ৩৫০ দিন দুগ্ধবতী থাকে।
থার্পার্কার গরু
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের থার্পাকার্র জেলায় এর উৎপত্তিস্থল। এটি শক্ত ও মজবুত গড়নের মধ্যমাকার শক্তিশালী পশু। বলদ গাড়ী ও লাঙ্গল টানার কাজে ব্যবহৃত হয়। গাভী বেশি পরিমাণে দুধ দেয়। দৈনিক দুধ দেয় ৯১১ লিটার এবং বছরের ৩০০ দিন দুগ্ধবতী থাকে। গায়ের রং সাদা। শিং ও চুটি মধ্যম আকারের। হলষ্টিন ফ্রিজিয়ান হল্যান্ডের ফ্রিজল্যান্ড প্রদেশে এর উৎপত্তিস্থল। দুধাল জাতের গাভীর মধ্যে এজাত তূলনাম লকভাবে বড়। শরীরের সামনের অংশ চিকন এবং ওলান বেশ বড়। শরীর বেশ পেশী যুক্ত। গাভীগুলো শান্ত স্বভাবের কিন্তু ষাঁড়গুলি বদ মেজাজের। গায়ের রং কালো সাদায় চিত্রা এবং এ দুয়ের যে কোন একটির প্রধান্য থাকে।
জার্সি গরু
ইউরোপ ও আমেরিকায় দেখা যায়। দুধাল জাতের মধ্যে জার্সি সর্বাপেক্ষা বড়। দেহের গঠন উন্নত ও সুন্দর। ওলান বেশ বড়। চুটি নেই। গায়ের রং লাল, জিহ্বা ও লেজের রং কালো। গোচারণে অভ্যস্ত। বাৎসরিক দুধ উৎপাদন ২,৭৫০৪,০০০ লিটার। হরিয়ানা হরিয়ানা জাতের গাভী দৈনিক ৯১০ লিটার দুধ দেয়। বলদ লাঙ্গল ও গাড়ী টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।
ভারতের হরিয়ানা অঞ্চলের এ গরু সাদা, দীর্ঘ, উচ্চ ও বলিষ্ঠ। শিং লম্বা, চিকন ও মসৃণ। দেহের বর্ণ সাদাটে বা হালকা ধূসর। দৈনিক ৯১০ লিটার দুধ দেয়। বলদ লাঙ্গল ও গাড়ী টানার কাজে ব্যবহৃত হয়। বাগনারী পাকিস্তানের সিন্ধু অঞ্চলে এর উৎপত্তিস্থল। গরু দীর্ঘকায়, বলিষ্ঠ, দৃঢ় ও শরীর সুগঠিত । গায়ের রং সাদা এবং কাঁধের রং কালো। দৈনিক ২৩ লিটার দুধ দেয়। এই গরু কষ্টসহিষ্ণু এবং গাড়ী ও লাঙ্গল টানার জন্য উপযোগী।
ধান্নী গরু
পাকি¯ ানের ইসলামাবাদ অঞ্চলের এই গরু গাড়ী ও লাঙ্গল টানার জন্য ব্যবহৃত হয়। শরীর শক্ত ও মজবুত। এ গরু খুব কম দুধ দেয়। মহিষের জাত বাংলাদেশে নিজস্ব কোন উৎকৃষ্ট জাতের মহিষ নেই। বাহির হতে আনা জাতের মধ্যে মুরড়া, নীলা, রাভি ও কুন্ডি উলেখযোগ্য। মুরড়া জাতের মহিষই বাংলাদেশে বেশি দেখা যায়। এ জাতের পরিচিতি নিম্নে দেয়া হলো। মুরড়া মুরড়া জাতের মহিষ কষ্ট সহিষ্ণু এবং বাংলাদেশের জলবায়ুতে উপযোগী। ভারতের দিলী ও হারিয়ানা এদের উৎপত্তিস্থল। শরীর বড়, পা ছোট, শিং খাট ও বাঁকানো এবং কালো।
চামড়া কালো এবং পশমও কালো। স্ত্রী মহিষের মাথা সুগঠিত কিন্তু পুরুষ মহিষের মাথা ভারী ও মোটা। কপালের সম্মুখভাগ চওড়া ও উঁচু। এরা কষ্ট সহিষ্ণু এবং বাংলাদেশের জলবায়ুতে উপযোগী।
ছাগলের জাত:
উদ্দেশ্য অনুযায়ী ছাগলের জাতকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
১। দুধ উৎপাদনকারী জাত:
স্যানিন, এ্যাংলো, নুবিয়ান, দামাসকাস, ব্রিটিশ এলপাইন, টংগন বার্গ, যমুনাপারী, বারবারী, স দানীয়ান।
২। মাংস উৎপাদনকারী জাত:
ব্ল্যাক বেঙ্গল, বোয়ার, যমুনাপারী, ফিজিয়ান, মে—ট—অ, কেম্বিং কেটজ।
৩। চামড়া উৎপাদনকারী জাত ঃ
মুবেনডি, ব্ল্যাক বেঙ্গল। নিম্নে যমুনাপারী ও ব্ল্যাক বেঙ্গল নামক দুটি জাত সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো ঃ যমুনাপারী গঙ্গা, যমুনা নদীর তীরবর্তী অঞ্চল এ ছাগলের উৎপত্তিস্থল। ভারতে এ ছাগল বেশি দেখা যায় তবে বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে এ ছাগল নজরে পরে। দীর্ঘকায়, দীর্ঘ পদবিশিষ্ট ভারতীয় এ ছাগল ধূসর বাদামী, কখনো কালো তামাটে বা সাদা রংয়ের হয়ে থাকে। এদের শিং চ্যাপ্টা ও খাটো এবং প্রায় ১০—১২ ইঞ্চি লম্বা ঝুলন্ত কান বহন করে। এ জাতীয় ছাগলের দু’উরুর মাঝে লম্বা তুলতুলে অধিক পরিমাণে লোম থাকে। এ জাতের ছাগল দৈনিক ২৩ লিটার দুধ দেয়।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল:
ব্ল্যাক বেঙ্গল বাংলাদেশেরকালো ছাগল নামে পরিচিত এবং দেশের সর্বত্রই দেখা যায়। এটি বাংলাদেশের কালো ছাগল নামে পরিচিত এবং দেশের সর্বত্রই দেখা যায়। এর শরীর খাটো এবং নরম কালো লোম দ্বারা আবৃত। এর কানগুলো সাধারণতঃ উপর দিকে খাড়া থাকে। শিং কালো এবং ২—৩ ইঞ্চি লম্বা হয়। অল্প বয়সে গর্ভবতী হয় এবং ছয় মাস পর পর বাচ্চা দেয়। এজাতের খাসির মাংস অতি উৎকৃষ্ট। এ জাতীয় ছাগলের চামড়া মসৃণ ও মোলায়েম হয় এবং বয়স্ক ছাগলের সাদা বা ধূসর বর্ণের দাড়ি থাকে।
ভেড়ার জাত:
ভেড়ার জাতকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিভাগ করা হয়।
১। মাংস বা পশম উৎপাদনের হারের উপর ভিত্তি করে।
২। মুখের রংয়ের উপর (সাদা বা লাল) ভিত্তি করে ।
৩। শিং এর উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে।
৪। উৎপত্তি অনুযায়ী এলাকার উপর (উঁচু ভূমি, পর্বত, নিম্নভূমি) ভিত্তি করে।
৫। পশমের বিভিন্নতা অনুসারে। উপমহাদেশে যে সকল জাতের ভেড়া দেখা যায় সেগুলো হলো বিবরিক, ওয়াজিরি, কাগনি, লোহি, হারনাই, দামানি, ইত্যাদি। লোমের জন্য বিখ্যাত এমন দুটি জাত সম্বন্ধে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
মেরিনো ভেড়ার জাত:
এ জাতীয় ভেড়ার উৎপত্তিস্থল স্পেন দেশে। এদের মুখ ও পা সাদা, কান ও পায়ের গোড়ালীতে লালচে বাদামী রংএর দাগ দেখা যায়। এদের পা এবং মাথার বেশির ভাগই পশম দ্বারা আবৃত। চামড়ার গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে মেরিনোকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা ঃ
এ —টাইপ: মোটা জাত। ভেড়ার মাথা হতে লেজের গোড়া পর্যন্ত কোকড়ানো পশমে আবৃত থাকে। বি—টাইপ: ঘাড়ের পশম ব্যতীত সমস্ত শরীর অপেক্ষাকৃত কম পশমে আবৃত থাকে।
সি—টাইপ: চামড়া গোলাপী রং এর। পশম তুলনাম লক ভাবে মসৃণ। মাংসের মান অন্য দু’জাতের তুলনায় উত্তম।
রোমনী নার্স ভেড়ার জাত:
ইংল্যান্ডের রোমনী নার্স অঞ্চলে এদের উৎপত্তিস্থল। এরা সবচেয়ে ছোট জাতের ভেড়া। এদের পা ছোট ও সাদা। মুখ সাদা এবং কপালে এক গুচ্ছ পশম থাকে। এদের শিং নেই।
পাখির জাত পরিচিতি:
হাঁস ও মুরগির জাত:
হালকা জাত ও ভারী জাত —এ দু’শ্রেনীতে মোরগমুরগিকে ভাগ করা যায়। যে সব মুরগির ওজন কম তারা হালকা জাতের অন্তভূর্ক্ত ; যেমন— লেগহর্ন এবং যে সব মুরগির ওজন বেশী তা হলো ভারী জাত; যেমন— রোড আইল্যান্ড রেড। উন্নত খাঁটি মুরগির উৎপত্তিস্থল অনুসারে এরা আমেরিকান, এশিয়াটিক, ইংলিশ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জাত হিসেবে পরিচিত। এদের মধ্যে যে সব জাত বাংলাদেশে পরিচিত তাদের সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হলো:
হোয়াইট লেগহর্ণ মুুরগি:
এটি ভূমধ্যসাগরীয় শ্রেণীর অš র্ভুক্ত। উৎপত্তিস্থল ইতালী। বর্তমানে বিশ্বের সব স্থানে প্রসার লাভ করছে। দেহের আকার আকৃতি ছোট। ডিমের আকার বড়, এদের সাদা, বাদামী, নীলাভ, হলুদ ও কাল জাত আছে। তবে সাদা রং—এর একক ঝুটি বিশিষ্ট উপজাত সবচেয়ে জনপ্রিয়। রোড আইল্যান্ড রেড বাণিজ্যিক হাইব্রিড সৃষ্টির জন্য আর. আই. আর এর ি ডম ব্যবহার করা হয়। এরা আমাদের দেশে ১৫০—২০০ ডিম দেয়।
এটি আমেরিকান শ্রেণীর অন্তভূর্ক্ত ভারী জাত। এটি সংক্ষেপে আর. আই. আর নামে পরিচিত। দেহের পালক লাল কিন্তু লেজের দিকের পালক, গলা এবং ডানার পালক কিছুটা কালো। ডিমের রং বাদামী। বাণিজ্যিক হাইব্রিড সৃষ্টির জন্য এ মুরগির ডিম ব্যবহার করা হয়। এরা আমাদের দেশে ১৫০—২০০ ডিম দেয়। নিউ হ্যাম্পশায়ার আমেরিকার নিউহ্যাম্পশায়ার নামক স্থানে এর উৎপত্তি বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। অনেকটা গোলাকৃতি, বড় আকারের এবং হালকা হলুদ বর্ণ বিশিষ্ট এ মুরগি প্রধানতঃ মাংস প্রদানকারী। এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আছে হলুদ বর্ণের পা এবং একক ঝুটি।
ডিমের রং বাদামী। বর্তমানে হাইব্রিড মুরগি তৈরি করতে এদের ব্যবহার করা হয়। ফাইওমি এটি ভূমধ্য সাগরীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত জাত। উৎপত্তিস্থল মিশর। এদের গলার দিকে ধুসর এবং সমস্ত শরীরে সাদাকালো রংয়ের মিশ্রণ। এরা খুব চঞ্চল ও চালাক এবং দেশী মুরগির মত এদের ছাড়া অবস্থায় পালন করা যায়। এদের কানের লতি সাদা। মাথার ঝুটি আকারে ছোট, বেজোর এবং লাল। আমাদের দেশে এরা বছরে ১৫০—২০০ টি ডিম দেয়। হাঁসের জাত পৃথিবীতে সর্বাধিক হাঁস পালন করা হয় চীন দেশে এবং বাংলাদেশের স্থান ি দ্বতীয়।
বিশ্বে ২২ প্রকারের হাঁসের জাত আছে। দেশী হাঁস সহ বিদেশী জাতের হাঁসও আমাদের দেশে পালন করা হয়। পৃথিবীতে সর্বাধিক হাঁস পালন করা হয় চীন দেশে এবং বাংলাদেশের স্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশের হাঁস আকারে ছোট, কম ডিম দেয় এবং ডিমের আকার ছোট। দেশী জাতের হাঁসের পরিচয় নিম্নে দেয়া হলো। নগেশ্বরী হাঁস বাংলাদেশের সিলেটে ও ভারতের কাছাড়ে এ হাঁস পাওয়া যায় । এদের গলা ও বুক সাদা এবং শরীরের অন্যান্য অংশ কালো। পা ও ঠোটের রং হলুদ। ডিমের রং হালকা নীল বা সবুজাভ। বছরে এরা প্রায় ১০০টি ডিম পারে।
মাটি হাঁস:
বাংলাদেশের সিলেট জেলায় এ হাঁস পাওয়া যায়। হাঁসের পালক ধূসর বর্ণের। পালকের উপর মাঝে মাঝে কালো দাগ থাকে। ঠোট ও পায়ের রং হলুদ অথবা কালো। ডিমের রং সাদা। সাদা হাঁস বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এদের এ জাত দেখা যায়। এদের দেহের পালক সাদা, ঠোঁট ও পা হলুদ, আকারে ছোট। ডিমের আকার ছোট। এছাড়াও আমাদের দেশে বিভিন্ন পাতি হাঁস পাওয়া যায়। এদের ডিম উৎপাদনের হার কম। এরা বেশ কষ্ট সহিষ্ণু ও চঞ্চল।
রাজ হাঁস:
ধুসর ও সাদা এ দু’রং এর রাজহাঁস বাংলাদেশে দেখা যায়। এরা বছরে দু’বার প্রতিবারে ৮—১০ টি ডিম পাড়ে। ডিমের আকার বড়। উন্নত জাতের খাঁটি হাঁস উন্নত জাতের খাঁটি হাঁস বলতে বিদেশী হাঁসকে বুঝায়। উন্নত জাতের হাঁস মাংস ও ডিমের জন্য পালন করা হয। ডিমের জন্য ভাল জাত হলো খাকি ক্যাম্বেল, জিংডিং, ইন্ডিয়ান রানার ইত্যাদি। আর মাংসের জন্য ভাল জাত হলো— বেইজিং বা পেকিন এবং মাসকোভি। আমাদের দেশে উন্নত জাতের যে সব হাঁস পালন করা হয় নিম্নে তাদের সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো:
খাকি রংয়ের ক্যাম্বেল হাঁস ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এরা বছরে প্রায় ২৫০—৩০০ টি ডিম দেয়। খাকি ক্যাম্বেল মালয়েশীয় জংলি হাস, ইন্ডিয়ান রানার ও রুয়েন হাঁসের সঙ্করায়নের ফলে এ জাতের উদ্ভব হয়েছে। ক্যাম্বেল হাঁস সাদা ও খাকি রংয়ের হয়। খাকি রংয়ের ক্যাম্বেল হাঁস ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এরা বছরে প্রায় ২৫০—৩০০ টি ডিম দেয়। জিংডিং হাঁস
এ হাঁসের উৎপত্তিস্থল চীন দেশে। এদের গলা ও দেহ কিছুটা লম্বা। হাসের রং উজ্জল। ডিমের রং হালকা নীল ও সবুজাভ। এরা অত্যন্ত কষ্ট সহিষ্ণু এবং বছরে ২০০—২৫০ টি ডিম দেয়।
ইন্ডিয়ান রানার :
এদের ঘাড় লম্বা ও সুগঠিত এবং মাথা উপরের দিকে উঁচু। দেহ হালকা, লম্বা এবং সামান্য গোলাকার। এ জাতের হাঁসের পালকের রং উজ্জল সাদা। মাথার উপরিভাগ চ্যাপটা। এদের ডিমের রং সাদা, বছরে ২০০—২৫০ টি ডিম দেয়।
জাতীয় অর্থনীতিতে পশু সম্পদের অবদান আমাদের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক। কৃষির মধ্যে পশুপাখি পালন উলেখযোগ্য বিষয় এবং এদের নিয়েই বাংলাদেশের পশু সম্পদ। পশু সম্পদ বাংলাদেশের খুবই মূল্যবান সম্পদ। আমাদের অর্থনীতিতে পশু সম্পদের অবদান বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। পশু সম্পদ হতে আমরা দুধ, মাংস, চামড়া, জ্বালানী, জৈবসার ও শ্রম শক্তি পেয়ে থাকি। সব মিলিয়ে জাতীয় উন্নয়নে পশু সম্পদের অবদান অপরিসীম।
মোট জাতীয় আয়ে পশু সম্পদ সাব সেক্টরের অবদান ৯% যা হাল চাষের মূল্য সমেত বেড়ে দাঁড়ায় ১৫%। মোট জাতীয় আয়ে পশু সম্পদ সাব সেক্টরের অবদান ৯% যা হাল চাষের মূল্য সমেত বেড়ে দাঁড়ায় ১৫%। আমাদের প্রাণীজ আমিষের চাহিদার ২৫% আসে পশু সম্পদ থেকে। দেশের জনসমষ্টির ৩০% সার্বক্ষনিক এবং ৫০% খন্ডকালীন পশু পালনে কর্মরত। গ্রামীন জনসাধারণের এক বিরাট অংশ বিশেষ করে ভূমিহীন, ক্ষুদ্র, প্রান্তিক চাষি, বেকার যুবক, দুঃস্থ মহিলারা হাঁস—মুরগি ও গবাদী পশু পালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাদের আয়ের প্রধান উৎস হলো দুধ, মাংস, ডিম, হাল, ইত্যাদি বিক্রয়লব্ধ অর্থ।
আমাদের রপ্তানি আয়ে পশু সম্পদের অবদান শতকরা ১৩ ভাগ। চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানি করে বছরে আয় হয় ৬৭২০ মিলিয়ন টাকা। কৃষি কাজ বা চাষাবাদে পশু শক্তির অবদান শতকরা ৯৫ ভাগ যদিও বর্তমানে এ কাজে কিছু কিছু যান্ত্রিকীকরণ শুরু হয়েছে। এখনও শতকরা ৫০ ভাগ গ্রামীন পরিবহন হয়ে থাকে পশু সম্পদ দ্বারা। বছরে প্রায় ২২ মিলিয়ন টন শুকনো গোবর জৈব সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করে আমরা লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য শস্য উৎপাদন করে থাকি। বর্তমানে ব্যবহৃত রাসায়নিক সারের শতকরা ১০ ভাগ আমরা পশু সম্পদ হতে পেয়ে থাকি। আমাদের প্রচলিত জ্বালানির ২০ ভাগ আসে পশু সম্পদ হতে। দেশে প্রতি বছর ৭ মিলিয়ণ টন গোবর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় ফলে দেশের বেশ বড় অংকের টাকা এখাতে সাশ্রয় হয়।
আরও পড়ুন :