বাংলাদেশের পশুপাখির পরিচিতি ও পরিসংখ্যানবাংলাদেশের পশুপাখির পরিচিতি ও পরিসংখ্যান নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশ” বিভাগের ২ নং ইউনিটের ২.১ নং পাঠ।
বাংলাদেশের পশুপাখির পরিচিতি ও পরিসংখ্যান
বাংলাদেশের পশুপাখি বলতে সে সব পশুপাখিকে বুঝায় যাদের উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশেই । এদের মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি এবং কবুতরই প্রধান । সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে গরুর কোন অবিমিশ্র কিংবা উন্নত জাত নেই। অন্য দেশ থেকে আনা কোন অবিমিশ্র জাতের গরু এদেশের কোন চাষীর বাড়ীতেও দেখা যায়না। আবার এমন কোন মিশ্র, উচ্চ—উৎপাদনশীল জাতও বাংলাদেশী জাত হিসেবে গৃহীত হয়ে উঠেনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গরু সে সব অঞ্চলের নামানুসারে পরিচিত।
যেমন চট্টগ্রাম অঞ্চলের গরুকে চাটগাঁইয়া, পাবনার গরুকে পাবনাইয়া এবং ভৈরবের গরুকে ভৈরবী বলে। এসব স্থানীয় নামের মিশ্রজাত ৩৭ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। সময়মত সুষম খাবার প্রদান ও যত্ন নিলে দেশী গরু হতে অধিক পরিমাণে দুধ পাওয়া মোটেই অসম্ভব নয়। এ জাতগুলোর মধ্য হতে নির্বাচন ও নিয়মিত উৎকৃষ্ট জাতের ষাঁড় দিয়ে সংকরায়ন ও প্রজননের মাধ্যমে সহজেই উন্নত জাতের গুণাবলী দেশীয় জাত সমূহের মধ্যে প্রসারিত করা যেতে পারে। বাংলাদেশে নিজস্ব উৎকৃষ্ট জাতের কোন মহিষ নেই। এ দেশে যে সকল মহিষ দেখা যায় এগুলোর প্রায় সবগুলোই বিদেশ থেকে আনা।
এ দেশের আবহাওয়ায় লালিত পালিত এবং বংশ বিস্তারের মাধ্যমে এরা বর্তমানে এদেশের মহিষ নামে পরিচিত। বাংলাদেশে ভারবাহী বা কাজের জন্য জলা মহিষ বা সোয়াম্প মহিষ এবং দুধ উৎপাদনের জন্য নিলা, মুরড়া, কুন্তি ও রাভি জাতের মহিষ দেখা যায়। মহিষ পানি এবং মাটি উভয় জায়গায় থাকে। তবে এরা পানিতে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। মহিষের জন্য জলাশয়, ডোবা, খাদ, গর্ত, বিল, ইত্যাদির প্রয়োজন যেখানে তারা নাক অবদি ডুবিয়ে রাখে। আমাদের দেশের মহিষের দুধ দেয়ার ক্ষমতা দৈনিক ৫১৫ লিটার।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছাগল দেখা যায়। ছাগল পালন এদেশে খুবই পুরানো রেওয়াজ। ব্ল্যাক বেঙ্গল নামক ছাগল এদেশের খুবই পরিচিত জাত। এ জাতের ছাগল এদেশের জলবায়ুতে বসবাসের খুবই উপযোগী। এরা অল্প বয়সে গর্ভবতী হয় এবং ছয়মাস অন্তর অন্তর বাচ্চা প্রসব করে, এবং এক সাথে একাধিক বাচ্চা প্রসব করে থাকে। বাংলাদেশে যেখানে পশু খাদ্যের খুব অভাব, সেখানে কম খাবারে মাংস উৎপাদনের জন্য ছাগল একটি উৎকৃষ্ট প্রাণী।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক দেশী জাতের ভেড়া দেখা যায়। ভেড়া দলবদ্ধ অবস্থায় থাকতে ভালবাসে। ছাগলের তুলনায় বাংলাদেশে ভেড়ার সংখ্যা কম।
এদেশের ভেড়া আকারে ছোট ও বিভিন্ন রংয়ের হয়। এরা কম উৎপাদনশীল জাত। পৃথিবীর কোন কোন দেশে ভেড়া পালনের প্রধান উদ্দেশ্যে হলো উহা হতে পশম সংগ্রহ করা। তবে এদেশে ভেড়া মাংসের জন্য পালন করা হয়ে থাকে। গ্রামে গৃহস্থের বাড়ীতে ছাড়া অবস্থায় যে সমস্ত মুরগি চড়ে বেড়ায় তারা দেশী জাতের মুরগি। এরা সধারণতঃ ঘর দুয়ার ও বাড়ীর আশে পাশে ক্ষেতে খামারে চড়ে বেড়ায় ও খাদ্য কুড়িয়ে খায়। এরা আকারে ছোট, ডিম কম দেয়। এদের দেহ সুগঠিত ও শক্ত। এরা খুব চালাক ও সতর্ক। দেশী মুরগির মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য পূর্ণ জাত আছে।
এদের মধ্যে আছিল বা লড়াইয়ের মুরগি, পালকশুণ্য গ্রীবা বা গলা ছোলা মুরগি, চাটগাঁয়ের মুরগি এবং মাথায় পালকের গোল ঝুটি মুরগি প্রধান। আছিল বা লড়াইয়ের মুরগি দেখতে সুন্দর কিন্তু তারা চঞ্চল ও হিংস্র। এ জাতের মুরগির মধ্যে মোরগ লড়াইয়ের জন্য ব্যবহার হয়। লড়াইয়ের মোরগ বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়। আছিল মুরগি ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলার সরাইল ও চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানায় দেখা যায়। গলা ছোলা মুরগির গলায় কোন পালক থাকে না। এরা আকারে বড়। গলার ফুল বেশ বড় এবং লাল রংয়ের। সিলেট জেলা ও বিভিন্নস্থানে বিচ্ছিন্নভাবে এ মুরগি দেখা যায়। খাঁটি চাটগায়ের মুরগি চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানায় দেখা যায়।
এরা আকারে বড়, গলা লম্বা, মাথা ছোট, মাথায় ঝুঁটি থাকে। মাথায় পালকের গোল ঝঁুটি মুরগি বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়। এদের মাথার পালক গোল হয়ে এক গুচ্ছ ঝুঁটি তৈরী করে। ঝুঁটি ও গলার ফুল খুব ছোট ও লাল রংয়ের। গ্রাম গঞ্জের পুকুর বিল বা ডোবায় যে সমস্ত হাঁস চড়ে বেড়াতে দেখা যায় এগুলো দেশী জাতের পাতি হাঁস। এরা আকারে ছোট ও ডিম কম দেয়। দেশী হাঁস অত্যন্ত কষ্ট সহিষ্ণু চঞ্চল এবং সতর্ক। এদের পালকের রং বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। দেশী হাঁসের মধ্যে নাগেশ্বরী, মাটি হাঁস, সাদা হাঁস, রাজ হাঁস প্রভৃতি উলেখযোগ্য। নাগেশ্বরী এবং মাটি হাঁস সিলেটে পাওয়া যায় এবং সাদা হাঁস বাংলাদেশের সর্বত্র দেখা যায়। রাজহাঁস কেহ কেহ সখ করে পালন করেন। রাজহাঁস খুব কম ডিম দেয়।
কবুতর শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এরা খুব সুন্দর ও শান্ত প্রাণী এবং নিজেদের খাবার নিজেরাই সংগ্রহ করে খায়। কবুতর বাড়ীতে কিংবা পোড়া বাড়ীতে থাকতে পছন্দ করে। আমাদের দেশে অনেকে সখ করে কবতুতর পালেন। এরা প্রতি দেড় মাসে এক জোড়া বাচ্চা দেয়। কবুতরের বাচ্চার মাংস খুব সুস্বাদু। জাত ও বর্ণ অনুসারে কবুতর বিভিন্ন আকৃতি ও রংয়ের হয়। যে সব জাত আমাদের দেশে দেখা যায় এরা হলো জালালী, সিরাজী, লক্ষেèৗ ও বোগদাদী।
ছক ঃ পশু পাখির সংখ্যা ও উৎপাদন