মাছের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ. সাধারণভাবে মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগের সংক্রমণ যথেষ্ট পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়।ব্যাকটেরিয়ার তীব্রতার মাত্রা এবং সব ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ মাছের প্রজাতি এবং জলাশয়ভেদে নানারকম হয়ে থাকে।

জলজ পরিবেশে বেশি পরিমাণে জৈব পদার্থের উপস্থিতি এবং বেশি তাপমাত্রার কারণে জলাশয়ে জৈব পদার্থসমূহের যে পচন সংঘটিত হয়, মূলত তা-ই জলাশয়ের মাছে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ও বিস্তার ঘটায়। নিচে এসব রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

মাছের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ

 

ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ

 

মাছের কলামনারিস রোগ:

এটি একধ রনের ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ। সাধারণত স্বাদু পানির জলাশয়ে চাষ করা হয় এমন মাছে এই রোগের প্রকোপ খুব বেশি হয়ে থাকে।

কলামনারিস রোগের জীবাণু :

এই রোগ সৃস্টির জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার নাম ফ্লেক্সিব্যাক্টর কলামনারিস (Flaxibactor columnaris)।

 

ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ

 

কলামনারিস রোগের বিস্তার:

এ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত মাছের ত্বক ও ফুলকায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়। সংক্রামণ সাধারণত পাখনার গোড়া থেকে শুরু হয়ে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রধানত মাছের মাথা, পৃষ্ঠদেশ এবং ফুলকা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কম হলে বা জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি হলে এই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বেশি হয়।

কলামনারিস রোগের লক্ষণ:

এই রোগের লক্ষণ নিম্নরূপ :

(ক) মাছের মাথা, পৃষ্ঠদেশ এবং ফুলকায় ক্ষতরোগ দেখা দেয়।

(খ) সংক্রামণের প্রাথমিক অবস্থায় দেহে ছত্রাকের অনুরূপ সাদা ফোঁটা হয় এবং ফোঁটার চারপাশে লালচে বৃত্ত দেখা দেয়।

(গ) মাছের ফুলকাতে ঘা দেখা দেয়।

(ঘ) পরিশেষে মাছ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

 

 

মাছের পাখনা ও লেজ পচা রোগ

এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।

পাখনা ও লেজ পচা রোগের জীবাণু :

এই রোগের জীবাণু হিসেবে প্রধানত সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্সকেই (Pseudomonas florescens) সনাক্ত করা হয়ে থাকে। তবে মিক্সোব্যাকটর (Myxobactor) গণের কয়েকটি প্রজাতিও এই রোগ সংক্রমণে মুখ্য ভূমিকা রাখে।

পাখনা ও লেজ পচা রোগের বিস্তার:

সাধারণত স্বাদু পানিতে চাষাবাদ করা হয় এমন কার্প জাতীয় মাছে এই রোগের সংক্রামণ বেশি হয়ে থাকে। তবে ক্যাটফিশ জাতীয় মাছেও এ রোগ দেখা যায়। মৎস্যবিজ্ঞানীদের মতে, জলাশয়ের বিভিন্ন পরিবেশগত নিয়ামক পরিবর্তিত হলেও এ জীবাণুর সংক্রামণ বৃদ্ধি পায়।

 

ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ

 

 

পাখনা ও লেজ পচা রোগের লক্ষণ:

এ রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। নিচে এগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

ক) মাছের দেহের পিচ্ছিল আবরণ কমে যায়, স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য কমে গিয়ে মাছের দেহ কালচে বর্ণ ধারণ করে।

খ) লেজ ও পাখনায় সাদাটে দাগ সৃষ্টি হয়, পরে সেখানে পচন ধরে এবং শেষ পর্যায়ে সেগুলো খসে যায়।

গ) মাছ খাদ্য গ্রহণে অনীহা প্রদর্শন করে এবং ক্রমশ দেহের ভারসাম্য কমে যায়।

ঘ) মাছে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং দেহের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

 

সারমর্ম

মাছ চাষের বিভিন্ন পর্যায়ে মাছে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দেয়। এসব ব্যাকটেরিয়া মাছে বিভিন্ন ধরনের রোগের সংক্রমন ঘটায়। এসব সংক্রমণ মাছ চাষ প্রক্রিয়াকে সে সময়ের জন্য পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারে কারণ এসব রোগে মাছের ব্যাপকভাবে মড়ক দেখা দেয়।

পানির গুণাগুণ পরিবর্তন হলে বা পানিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও এসব ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ অত্যধিক হারে দেখা যায়।

আরও দেখুন

Leave a Comment