আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় সবুজ সার তৈরি
Table of Contents
সবুজ সার তৈরি
সবুজ সার তৈরি
সবুজ সার ফসলের মধ্যে ধৈঞ্চা, শনপাট, বরবটি ইত্যাদি উলে-খযোগ্য। আমাদের দেশে বহুল পরিচিত ধৈঞ্চা বা দেশী ধৈঞ্চা (Sesbania aculeata) ছাড়াও ইদানীং আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আফ্রিকান ধৈঞ্চা (Sesbania rostrata) নামক একটি প্রজাতি এদেশে প্রবর্তন করা হয়েছে, যার শিকড়ে মিথোজীবি (Symbiotic) রাইজোবিয়াম ব্যাক্টেরিয়ার গুটি ছাড়াও সারাদেহে (কান্ড) ৫-৬ সারিতে অসংখ্য গুটি জন্মায়।
এ প্রজাতিটি বীজ ও কান্ডের সাহায্যে বংশ বিস্তার করতে সম। ভেজা ও শুকনো উভয় মাটিতেই যে কোন সময় কান্ডের সাহয্যে এই গাছ জন্মানো সম্ভব। দেশী এবং আফ্রিকান ধৈঞ্চা একক ফসল হিসেবে বা সাথি ফসল (Relay crop) হিসেবে চাষ করা যায়। যেমন আউশ বা বোরো ধান কাটার ১০/১২ দিন আগে ধইঞ্চার বীজ বপন অথবা কাটিং (Cutting) লাগানোর পর ধান কেটে নিলে ধৈঞ্চা সুন্দরভাবে বৃদ্ধি পায়।
সবুজ সারের সংজ্ঞা
বিশেষ ধরনের কিছু উদ্ভিদকে জমিতে জন্মিয়ে সবুজ ও নরম অবস্থায় মাটিতে মিশিয়ে এবং পচিয়ে যে সার প্রস্তুত করা হয় তাকে সবুজ সার (Green manure) বলে। এ প্রক্রিয়াকে সবুজ সারকরণ পদ্ধতি এবং উদ্ভিদগুলোকে সবুজ সার ফসল (Green manuring crops) বলে।
সবুজ সার ফসলের বৈশিষ্ট্যাবলী
সবুজ সার ফসল দ্রুত বর্ধনশীল হতে হবে, কান্ড নরম ও রসালো হবে। তাছাড়া এ গাছ শিম বা গুটি জাতীয় (Legume) হলে ভাল হয়। এতে গাছের শেকড়ের ব্যাকটেরিয়া গুটির ( রাইজোবিয়াম ব্যাক্টেরিয়ার কলোনী) সাহায্যে বায়ুমন্ডলের মুক্ত নাইট্রোজেন মাটিতে যুক্ত করতে পারে ।
সবুজ সারের উপকারিতা
সবুজ সার মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ করে মাটিকে উর্বর করে ও মাটির ভৌত গুণাবলীর উন্নতি সাধন করে। মাটিতে গুটির সাহয্যে নাইট্রোজেন যোগ করে। ধৈঞ্চা সবুজ সার হিসেবে প্রতি হেক্টরে ২০ টন জৈব পদার্থ এবং ৬০-৭০ কেজি নাইট্রোজেন যোগ করে। শন পাটের বেলায় জৈব পদার্থের পরিমাণ হয় ২০ টন এবং নাইট্রোজেন ৪০ কেজি।
জৈব পদার্থ যোগের মাধ্যমে সবুজ সার মাটিতে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা, বংশ ও কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে। ঘনভাবে গাছ জন্মানোর জন্য আগাছা দমন হয় এবং ভূমি য় রোধ হয় ।
প্ৰস্তুত প্ৰণালী
জমি নির্বাচন
যে কোন ধরনের জমিতে ধৈঞ্চা বা শনপাট জন্মায়, তবে ধৈঞ্চা উঁচু নিচু সব জমিতেই এবং শন আপেলাকৃত উঁচু জমিতে ভাল জন্মায় ।
বপন মৌসুম
ধৈঞ্চা ও শনপাট খরিপ এবং রবি উভয় মৌসুমেই চাষ করা যায়। তবে পচনের জন্য রবি মৌসুমে যথেষ্ট পানি পাওয়া না গেলে খরিপ মৌসুমেই আবাদ করা উচিত। পচানোর মত পানি পাওয়া গেলে রবি মৌসুমেও আবাদ করা যেতে পারে। মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ধৈঞ্চা বা শনপাট বপন করা যায়।
খরিপ মৌসুমে ধৈঞ্চা বা শনপাট সবুজ সার হিসেবে চাষ করলে সে জমিতে অনেক সময় আউশ ধান বা পাট আবাদ করা সম্ভব হয় না। এেেত্র রোপা আমন ধান রোপণ করতে হয়।
উৎপাদন পদ্ধতি
সবুজ সার ফসলের জন্য ২ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করুন। সাধারণত ধৈঞ্চা চাষে কোন সারের প্রয়োজন হয় না, তবে শিকড় ও গুটি বৃদ্ধির জন্য হেক্টরপ্রতি ৫-১০ কেজি টিএসপি সার ব্যবহার করতে পারেন। ধইঞ্চা হেক্টরপ্রতি ৪০-৪৫ কেজি এবং শনপাট হেক্টরপ্রতি ৪৫-৫০ কেজি বীজ জমিতে ছিটিয়ে বপন করুন।
বীজ বপনের আগে প্রতি কেজি বীজে ২০-৩০ গ্রাম জীবাণু সার মিশ্রিত করে বুনলে ফলনও খুব ভাল হয় এবং শিকড়ে গুটির সংখ্যাও বহুলাংশে বৃদ্ধি পায় । বীজ বপনের পর জমির তেমন কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তবে জমির রস বেশি পরিমাণে কমে গেলে একবার হালকা সেচ দিন।
বীজ বপনের ৫০-৫৫ দিন পর গাছগুলোকে দা বা কাঁচি দিয়ে এলোপাথারিভাবে কেটে ২/৩ দিনের ব্যবধানে লাঙ্গল দিয়ে ২/৩ টি আড়াআড়ি চাষ দিয়ে গাছগুলোকে ভালভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিন। সে সময়ে জমিতে ৩-৫ সেন্টিমিটার দাঁড়ানো পানি থাকলে ১০-১৫ দিনের মধ্যে গাছ পচে সারে পরিণত হবে।
তাপমাত্রা কম থাকলে বা মাটিতে পানির পরিমাণ কম হলে পচনে ৫-৭ দিন বেশি সময় লাগে। সবুজ সার যে জমিতে জন্মানো হয় সাধারণত সে জমিতেই গাছগুলোকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়, তবে এক জমিতে গাছ জন্মিয়ে অন্য জমিতেও সবুজ সার প্রয়োগ করতে পারেন।