খামার স্থাপনের পরিকল্পনা , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.৪ , খামার পরিকল্পনা খামার পরিকল্পনা হচ্ছে একটি পরিবর্তনশীল, ক্রিয়া যার মাধ্যমে কৃষি পণ্যের মধ্যে কোনটির উৎপাদন লাভজনক সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন করা। খামার পরিকল্পনার অর্থ হচ্ছে কৃষকের সম্ভাব্য বিকল্পগুলোর থেকে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে লাভজনক ফসল, পণ্য বা উপকরণ বেছে নেয়া ও বাস্তবতা প্রয়োগ করা।
Table of Contents
খামার স্থাপনের পরিকল্পনা , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.৪
খামার পরিকল্পনার ধাপসমূহ
১। খামারের সহজ পরিকল্পনা প্রণয়ন। যেমন: ফসল নির্বাচন, জমি নির্বাচন, উপকরণ ইত্যাদি।
২। ফসল ও কৃষি পন্য উৎপাদনের সকল উন্নত প্রযুক্তি ও পদ্ধতিসমূহ প্রয়োগ।
৩। একটি পূর্ণাঙ্গ বাজেট। অর্থাৎ খামারের সকল ফসল ও পণ্য দ্রব্যের সম্ভাব্য আয় ব্যয় নিরূপণ করা।
খামার স্থাপন
খামার স্থাপনের জন্য যেসব বিষয় বিবেচনা নেয়া প্রয়োজন সেগুলো হলো—
ক) খামার মালিক বা পরিচালকের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যসমূহ যেমন— শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা, বয়স, স্বাস্থ, রুচি ও চাহিদা।
খ) ভূতাত্ত্বিক বিষয়সমুহ, যেমন— মাটির ধরন, আবহাওয়া ও জলবায়ু, ভূমির উচ্চতা।
গ) অর্থনৈতিক বিষয়সমূহ, যেমন— উন্নত প্রযুক্তির প্রাপ্যতা, উপকরণ সরবরাহ ও দান, ঋন প্রাপ্যতা, শ্রমিক সহজলভ্যতা, জমির মূল্য উৎপাদিত পন্যের পরিবহন, বাজারজাতকরন ও দাম।
মাঠ ও উদ্যান ফসলের খামার স্থাপনের পরিকল্পনা সীমিত ব্যয়ে স্বল্প শ্রমে অধিক মুনাফা ও লাভজনক খামারে পরিণত করার জন্য একটি খামার স্থাপন পরিকল্পনা প্রয়োজন। মাঠ ও উদ্যান ফসলের খামার স্থাপনের পরিকল্পনার জন্য যেসব বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে সেগুলো হল:
ভূতাত্ত্বিক বিষয়সমূহ
১। খামারের অবস্থান: সাধারণত শহরে ও বন্দরের আশেপাশে গড়ে উঠে। খামারের চারপাশে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, পানি উৎস, সেচ ও নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২। মাটির ধরন: উর্বর সুনিস্কাশিত মাটি ফসল ও উদ্যান খামার স্থাপনের জন্য উপযোগী।
৩। আবহাওয়া ও জলবায়ু: আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে একেক অঞ্চলের একেক ধরনের কৃষি খামার গড়ে উঠছে।
৪। ভূমির উচ্চতা: উঁচু জমিতে যেখানে বন্যার পানি উঠে না যেখানে উদ্যান ফসলে খামার ও নার্সারী স্থাপনের জন্য উপযোগী।
অর্থনৈতিক বিষয়সমূহ:
১। উন্নত প্রযুক্তির প্রাপ্যতা: কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির প্রাপ্যতার উপর খামার স্থাপন নির্ভর করে বিভিন্ন ফসলের উন্নত বীজ, কৃষি যন্ত্রপাতির প্রাপ্যতা সহজলভ্য হতে হবে।
২। উপকরণ সরবরাহ ও দাম: কৃষি খামার স্থাপনের জন্য ন্যায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৩। ঋন ব্যবস্থা: খামার ব্যবস্থা ঝঁুকিপূর্ণ বিধায় কৃষি ঋনের ভূমিকা অপরিসীম। সহজশর্তে ঋণের সুবিধা পেলে খামার স্থাপনে আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
৪। জমির মূল্য: জমির মূল্য কম এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো সেখানে খামার গড়ে তোলা উচিত কারণ খামারের জন্য অনেক বেশি জমি প্রয়োজন।
৫। কৃষি পন্যের পরিবহন, বিপনন ও মূল্য: উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজেই পচে যায়। পণ্য সামগ্রী সঠিক সময়ে পরিবহন ও বিপনন করা যায় যে ব্যবস্থা থাকতে হবে। পরিবেশে খামার স্থাপনের আগে উদ্যোক্তারা উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর পরিবহন, বিপনন ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
সারসংক্ষেপ
উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উৎপাদনের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় নতুন নতুন খামার স্থাপন করতে অনেকেই এগিয়ে আসছে। খামার স্থাপনে যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হয় সেগুলো হল এ খামারের অবস্থান, মাটির ধরন, আবহাওয়া ও জলবায়ু, ভূমির উচ্চত, উন্নত প্রযুক্তির প্রাপ্যতা, উপকরণ সরবরাহ ও দাম, খনন ব্যবস্থা, শ্রম, জমির মূল্য, পণ্যের পরিবহন, বিপণন ও দাম।
আরও দেখুন :
- খামারের কার্যাবলী, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.৩
- খামার ও খামার করণ , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.২
- কৃষি অর্থনীতি , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.১
- ব্যবহারিক : কৃষি ও বৃক্ষ মেলা পরিদর্শন ও প্রতিবেদন তৈরী , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট – ১৬ , পাঠ – ১৬.৪
- বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা