ডালিয়া ফুল চাষ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “উদ্যান ফসল” বিষয়ের ৮ নং ইউনিটের, পাঠ নং ৮.৫।
Table of Contents
ডালিয়া ফুল চাষ
ডালিয়া বিভিন্ন রং, সুন্দর এবং আকারের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শীতকালীন মৌসুমি ফুল। বাগান, টবে, বর্ডার প্লান্ট হিসেবে বাসগৃহ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার শোভাবর্ধনের জন্য এই ফুলের চাষ করা হয়। এর আকর্ষণীয় আকার, বর্ণ বৈচিত্র্যের জন্য এর বাণিজ্যিক ব্যবহারও বেড়ে চলেছে। ফুল এর উৎপত্তিস্থল মেক্সিকো সুইডেনের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী আন্দ্রের ডাল এর নাম অনুসারে এর নাম ডালিয়া হয়েছে।
ডালিয়া ফুলের জাত:
ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল সোসাইটি ডালিয়া জাতগুলোকে ১০টি শ্রেণিতে ভাগ করেছে সেগুলো হলো:
১। সিঙ্গেল ফ্লাওয়ার্ড : যেমন— ককেট, ফ্রামে
২। এনিমোন ফ্লাওয়ার্ড : যেমন—কমেট
৩। কোলারেট : যেমন—লেডি ফ্রেন্ড, স্টারলেট কুইন
৪। পিউনি ফ্লাওয়ার্ড : যেমন—বিশপ অব ল্যান্ডডাফ
৫। ডেকোরেডিভ : যেমন—পিটার র্যামসে, লিবারেটর
৬। বল : যেমন—এ্যালটামি, রিস্কা মাইনার
৭। পম্পন : যেমন—অ্যাসকগ, জীনলিস্টার চিত্র ৮.৫.১ : ডালিয়া ফুল
৮। ক্যাটটাস: যেমন—এ্যালবার্ট, আরবকুইন
৯। সেমিক্যাকটাস : যেমন—আলফ্রেড সি ১০। বিবিধ : যেমন—পিঙ্ক গ্রাফি মাটি ও জলবায়ূ
প্রচুর সূর্যালোক সম্পন্ন ঠান্ডা আবহাওয়া ডালিয়া চাষের জন্য উপযোগী। উর্বর ও সুনিষ্কাশিত দেঁাআশ মাটি উত্তম। বংশ বিস্তার সাধারণত অঙ্গজ বংশ বিস্তারের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয়। কন্দমুল ও শাখা কলম থেকে চারা করা হয়। শুধুমাত্র সিঙ্গেল জাতের ক্ষেত্রে বীজ থেকে চারা করা যেতে পারে। কন্দমুলকে সরাসরি টবে বা জামিতে রোপন করা যায়। কন্দমুল কে টুকরো করেও রোপন করা যায় তবে প্রতিটি টুকরোতে একটি চোখ থাকতে হবে।
আবার কন্দুমলের প্রতিটি চোখ থেকে অনেকগুলো চারা বের হয় সেগুলোকে কেটে আলাদা করে টবে বা জমিতে রোপন করা যায়।
ডালিয়া ফুলের শাখা কলম :
কন্দমুল থেকে গাছ জন্মালে দুই তিনটি পাতাসহ ৭—৮ সে.মি. কেটে মে থেকে জুন মাসে শাখা কলম করেচারা রোপন করা যায়। মাটি বা জমি তৈরি ডালিয়া ফুল বেড ও টবে দুইভাবে চাষ করা যায়। জমি ভালোভাবে চাষ করে মাটি ঝুর ঝুরে করে নিতে হবে। মৃত্তিকা বাহিত রোগ জীবাণু থেকে রক্ষার জন্য মাটি শোধন করে নিতে হবে।
চারা লাগানো সাধারণত সেপ্টেম্বর—অক্টোবর মাসে চারা লাগানো হয়। জাতের উপর ভিত্তি করে চারা থেকে চারা ৪০—১০০ সে.মি. সারি থেকে সারি ৭০—১০০ সে.মি. দূরত্বে চারা লাগানো উচিত। সার প্রয়োগ ফুলের কাক্সিক্ষত আকার হওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিমাণে সার দেয়া প্রয়োজন। প্রতি শতকের গোবর সার ২০ কেজি, টিএসপি ১ কেজি, এমপি ৫০০ গ্রাম প্রয়োগ করা যেতে পারে। পটাশ ও ফসফরাস এবং অর্ধেক পরিমাণ ইউরিয়া ৩৫—৪০ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়। তবে ইউরিয়া মাঝে মাঝে পাতায় স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ডালিয়া ফুলের আন্তঃ পরিচর্যা :
পানি সেচ বা অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের জন্য নালা তৈরি করতে দিতে হবে। ডালিয়া কান্ড নরম এবং এর ফুল বড় বলে গাছ যেন হেলে না পড়ে বা বাতাসে ভেঙ্গে না যায় সেজন্য শক্ত করে খঁুটি বেঁধে দিতে হয়। তিন দিকে ৩টি খঁুটি ত্রিভুজের মতো পুতে দিলে গাছ সোজা হয়ে বেড়ে উঠে।
ডালিয়া ফুলের চাষে সেচ :
ডালিয়া গাছের জন্য পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে। ফুল ফোটা পর্যন্ত নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। স্টপিং, থিনিং এন্ড টাইমিং চারার ডগা কেটে পাশ থেকে শাখা বের হয় তাকে স্টপিং বলে। স্টপিং এর মাধ্যমে একাধিক শাখা তৈরি করে অনেকগুলি ফুল পাওয়া যায়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শাখা রেখে বাকিগুলোকে কেটে ফেলাকে থিনিং বলে। টাইমিং হলো প্রয়োজনে বা প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে ফুল ফোটানোর সময় নিয়ন্ত্রণকে টাইমিং বলে। ডিসবাডিং প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে গাছের ফুল সীমিত বা বড় আকারের জন্য কেন্দ্রীয় বা কয়েকটি কঁুড়ি রেখে বাকি সব কঁুড়ি বাদ দেয়াকে ডিসবাডিং বলে।
ডালিয়া ফুলের রোগ ও পোকা মাকড় দমন :
রোগ দমন পাউডারি মিলডিউ রোগ হলে পাতায় সাদা পাউডারের মত দেখা যায়। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া থাকলে দ্রুত বিস্তার লাভ করে। ০.১% বেভিস্টিল স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা যায়। এছাড়া ও ঢলে পড়া, ড্যাম্পিং অফ, কান্ড পচা রোগ দেখা যায়। এসব ছত্রাক বাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য চারা লাগানোর পূর্বে মাটি শোধন করে নেয়া উচিত।
ডালিয়া গাছে জাবপোকা আক্রমণ করলে পাতা, কুড়ি ও ফুলের রস চুষে নিয়ে উৎপাদন হ্রাস করে। এর সাথে সাথে ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। ম্যালাথিয়ন, বাসুডিন মাত্রা অনুযায়ী স্পে করতে হবে। মাকড় পাতার রস চুষে খেয়ে পাতা বাদামী রং হয় এবং পাতা শুকিয়ে যায়। এক্ষেত্রে মেটাসিস্টক্স বা কেলথেন স্প্রে করা যেতে পারে। ফুল সংগ্রহ খুব সকালে বা সন্ধ্যার দিকে ধারালো ছুরি দ্বারা ফুল সম্পূর্ণ ফোটার আগেই সংগ্রহ করতে হবে। সাথে সাথে অর্ধেক পানিতে ভরা পাত্রে ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। গাছটি কেটে না ফেলে আরও কিছুদিন রাখলে আবার ডাল বের হয়ে ফুল আসবে।
ডালিয়া ফুলের কন্দমুল তোলা ও সংরক্ষণ :
ফুল ফোটা শেষ হলে গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করলে ১৫—২০ সে.মি. রেখে গাছটি কেটে দিতে হবে। এরপর কন্দ মুলগুলো উঠিয়ে নিয়ে ছায়ায় শুকিয়ে শুকানো বালির মধ্যে সংরক্ষণ করতে হবে। ডালিয়ার মুল ৪—৭ সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে ভালো থাকে।
আরও দেখুন :