ডাক প্লেগ ও কৃমিজনিত রোগ এবং ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ, টাকা সংরক্ষণ ও ব্যবহার

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ডাক প্লেগ ও কৃমিজনিত রোগ এবং ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ, টাকা সংরক্ষণ ও ব্যবহার

ডাক প্লেগ ও কৃমিজনিত রোগ এবং ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ, টাকা সংরক্ষণ ও ব্যবহার

ডাক প্লেগ (হাঁসের প্লেগ রোগ)

ডাক প্লেগ হাঁসের ভাইরাসজনিত একটি অত্যন্ত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। যে কোন বয়সের হাঁস বছরের যে কোন সময়ে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে মৃত্যুহার খুবই বেশি সাধারণত আক্রান্ত পাখি দূষিত পানি ও খাদ্যের সাহায্যে এ রোগ ছড়ায়।

রোগের লক্ষণ

১। কোন লক্ষণ দেখা যাওয়ার পূর্বেই হঠাৎ করে হাঁসের মৃত্যু ঘটতে দেখা যায়।

২। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। বয়স্ক হাঁসের ডিম কমে যায়। পিপাসায় কাতর হয়ে বার বার পানি পান করতে দেখা যায়।

৩। চোখ ফুলে চোখের পাতা আটকে যায়। আলোতে চোখ খুলতে পারে না। নাক-মুখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়।

৪। ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হতে থাকে। লেজের আশেপাশে মল লেগে থাকে।

৫। পা এবং পাখা অবশ হয়ে যায়। মাথা, ঘাড় ও শরীরে কাঁপুনি দেখা দেয়। আক্রান্ত হাঁস বুকের উপর ভর দিয়ে বসে পড়ে।

 

রোগ দমন

এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই। ডাক প্লেগ টীকা দিয়ে এ রোগের হাত থেকে হাঁসকে বাঁচাতে হয়। এ টাকা পশুসম্পদ অধিদপ্তরে পাওয়া যায়। আক্রান্ত হাঁসকে দ্রুত আলাদা করে ফেলতে হয়। সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়।
টাকা ব্যবহার পদ্ধতি হাঁসের বাচ্চাকে ১৫-২০ দিন বয়সে প্রথমবার পরে ১ মাস বয়সে 1 অতঃপর ৬ মাস পর পর রানের মাংসে ১ মিলি ইনজেকশন হিসেবে এ টাকা দিতে হয়।

কৃমিজনিত রোগ

হাঁস মুরগিতে বিভিন্ন ধরনের কৃমি রোগ হতে দেখা যায়, যথা: গোলকৃমি, সুতা কৃমি, ইত্যাদি। হাঁস অপেক্ষা মুরগিতে এ রোগে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। অস্বাস্থ্যকর ভিজা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এ রোগ বেশি হতে দেখা যায়।

রোগের লক্ষণ

১। কৃমি রোগে আক্রান্ত মুরগির মাথার ফুল রক্তশূন্য, ফ্যাকাশে এবং পালক সখাসা-খুসকো হয়ে যায়।

২। রক্ত মিশ্রিত পাতলা পায়খানা হয়। কখনও কখনও পায়খানার সাথে কৃমি বের হয়ে আসতে দেখা যায়।

৩। বয়স্ক হাঁস-মুরগির খাওয়া-দাওয়া কমে গিয়ে ডিম পাড়া বন্ধ হয়ে যায়। ওজন কমে যায়।

৪। কৃমির পরিমাণ বেশি হলে অন্ননালীর ছিদ্র বন্ধ হয়ে হাঁস-মুরগি মারা যায়।

প্রতিকার

সাধারণত খাদ্য, পানি এবং স্যাঁতসেঁতে ও অপরিচ্ছন্ন থেকে থেকে কৃমির ডিম হাঁস-মুরগির শরীরে প্রবেশ করে থাকে। অন্ততঃপক্ষে প্রতি ২ মাস পর পর কৃমির ওষুধ খাওয়ানো এবং ঘর-দোর শুকনা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাই এ রোগের হাত থেকে হাঁস-মুরগিকে রক্ষা করার উপায়। মুরগির খাবারের সাথে ইউভিলন, কৃপেনজাতীয় ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত যাওয়াতে হয়।

খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ

ভিটামিনের অভাবে হাঁস-মুরগিতে বিভিন্ন অপুষ্টিজনিত রোগ দেখা দেয়। নিম্নে এ ধরনের রোগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো: ভিটামিন এ ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব হলে হাঁস-মুরগিতে রাতকানা রোগ হয়।

লক্ষণ

১। মুরগির নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে গন্ধবিহীন পুঁজের মতো পদার্থ বের হতে থাকে।

২। চোখ ফুলে ক্ৰমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যায়।

৩। শরীরিক বৃদ্ধি ও ডিম নেওয়া কমে যায়।

৪। পালক বসবাস্য হয়ে যায়।

 

প্রতিকার

কড় বা শাক মাছের তেল, শাকসবজি, সবুজ ঘাস-পাতা খাওয়ালে এ রোগের হাত থেকে হাঁস-মুরগিকে রক্ষা করা যায়।

ভিটামিন-বি১ বা থায়ামিন এ ভিটামিনের অভাবে নিম্নেবর্ণিত লক্ষণগুলো দেখা যায়।

১। মাথা পিছনের দিকে গুটিয়ে আসে।

২। শরীর খিছতে থাকে।

৩। খাওয়া-দাওয়া কমে যায়।

৪। পাখা অবশ হয়ে মুরগি শুকিয়ে মারা যায়।।

প্রতিকার

গমের ভুষি, কলিজা, বাদাম, চাউলের মিহি কুঁড়া ইত্যাদিতে ভিটামিন বি১ থাকে। সুষম খাবার খাওয়ালে সাধারণত এ রোগ কম হয়।

ভিটামিন বি২ বা রাইবোফ্লেবিন এ ভিটামিনের অভাব হলে

১। শারীরিক বৃদ্ধি ও ডিম দেওয়া কমে যায়।

২। পায়ের আঙ্গুল কুঁকড়ে যায়। কলিজা, দুধ বা দুধজাতীয় খাদ্য, মাস, শুটকি মাছের গুঁড়া ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন বিং থাকে। হাঁস-মুরগিকে সুষম খাবার দিলে এ রোগ হয় না। ভিটামিন বি২ ট্যাবলেট খাবারের সাথে মিশিয়েও খাওয়ানো যেতে পারে।

ভিটামিন-ডি : এ ভিটামিনের অভাব হলে-

১। রিকেট নামক রোগ হয় এবং অস্থি দুর্বল হয়ে যায়।

২। ডিমের খোসা পাতলা হয়ে যায়।

৩। ডিমপাড়া কমে যায়

৪। শরীরে ঠিকমতো পালক গজায় না এবং পালক খসখসে হয়ে যায়।

প্রতিকার

কড় বা হাঙ্গর মাছের যকৃতের তেলে ডি ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকে। হাঁস-মুরগির খাদ্য সুষম হলে এ রোগ খুব একটা হতে দেখা যায় না। অসুস্থ্য হাঁস-মুরগিকে মাছের তেল খাওয়ালে ভালো ফল পেতে দেখা যায়। হাঁস-মুরগির দেহে সূর্যকিরণ লাগালে এ ভিটামিনের সংশ্লেষণ ভালোভাবে হতে পারে।

টীকা সংরক্ষণ ও ব্যবহার

টাকা ঠিকমতো সংরক্ষণ না করলে এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এ থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। তাই টাকা সংরক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টাকা সংরক্ষণ নিয়ম ও মেয়াদ টীকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে জেনে নিতে হয়। কোন কোন টাকা শুধু ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে রাখলেই চলে, আবার কোন কোন টীকা হিমায়িত অবস্থায় রাখতে হয়।

হাঁস মুরগির টীকা সংরক্ষণের নিয়ম

টীকার নাম

সংরক্ষণের নিয়ম

১। মুরগির ত্রিম শুরু রাণীক্ষেত টীকা

ক. বি. সি. আর. ডি.

২।বসন্ত রোগের টীকা

বরফসহ থার্মোফ্রাজে১ সপ্তাহ (বরফ গলে পুনরার বরক ভর্তি করতে হবে) পানিতে মিশানো অধ্য ফেলতে হবে।

 

টীকার কার্যকারিতা নষ্ট হবার কারণ

১ টাকার সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি না জান।

২। মেয়াদ উত্তীর্ণ টাকা ব্যবহার করলে।

৩। নির্দেশ মতো টীকা সংরক্ষণ বা পরিবহন না করলে।

৪। যথাস্থানে ও যথানিয়মে টীকা না দিলে।

৫। একই সময়ে ২টি ভিন্ন ভিন্ন রোগের টীকা দিলে।

৬। সঠিক রোগের টাকা না দিলে।

৭। টীকা প্রদানের পূর্বেই ঐ রোগে হাঁস-মুরগি আক্রান্ত হলে।

৮। টীকাতে সূর্যকিরণ পড়লে।

টীকা প্রদানে করণীয়

১। টাকা দেওয়ার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

২। টাকা দেওয়ার সিরিঞ্জ, সুই ও অন্যান্য জিনিসপত্র ফুটন্ত পানিতে ভালো করে জীবানুমুক্ত। করতে হবে।

৩। টীকা পানিতে মিশাতে হলে পরিশ্রুত পানি ফুটিয়ে ভালোভাবে ঠান্ডা করে ব্যবহার করতে হবে। টাকা গুলানোর ১ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করে ফেলতে হবে।

৪। ছায়ায় বা ঘরের মধ্যে ঠান্ডা জায়গায় টাকা পানিতে মিশাতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে।

টীকা পরিবহনের নিয়ম

টীকার গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য সঠিকভাবে পরিবহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টীকা হিমশীতল ভ্যানে করে অথবা ফ্লাস্ক বা ছোট ছোট বক্সে বরফ ভর্তি করে পরিবহণ করতে হয়। টীকা পরিবহণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সময় যাতে সরাসরি সূর্যকিরণ না লাগে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হয়। অন্যথায় টাকার গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

সারমর্ম

• ডাকপ্লেগ হাঁসের ভাইরাসজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। সময়মত টীকা দিয়ে হাঁসকে এ রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে হয়।

• কৃমি প্রতিরোধের জন্য ঘর শুকনা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। ভিটামিনের অভাব রোধের জন্য সুষম খাবার দিতে হয়।

• সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও পরিবহন না করলে টাকার কার্য্য কারিতা নষ্ট হয়ে যায়।

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version