Tag Archives: কৃষি উন্নয়ন

কৃষি উন্নয়ন

এইচএসসি বাউবি ১৮৮৯ কৃষি শিক্ষা ১ম পত্র সূচিপত্র

কৃষি শিক্ষা ১ম পত্র সূচিপত্র। এই বিষয়টি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একটি বিষয় যার কোড ১৮৮৯।  এদেশের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। শুধু মানুষ নয়, সমস্ত গবাদি পশুর খাদ্য আসে কৃষি থেকে। জাতীয় আয়ের প্রায় ১৬ ভাগ আসে কৃষি থেকে। দেশের বৃহত্তর শিল্পগুলোও কৃষির উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। ফসল, গবাদি পশু, পোল্টি্র, মৎস্য ও বনরাজি ইত্যাদি ক্ষেত্র নিয়ে বি¯ৃÍত বাংলাদেশের কৃষি।

 

বাংলাদেশের’ কৃষি

 

কৃষি শিক্ষা ১ম পত্র

সকল ইউনিটের পিডিএফ ডাউনলোড:

 

কৃষি তথ্য ও সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, এনজিও এবং বিভিন্ন কৃষি উপকরন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

এছাড়াও কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস হিসেবে অভিজ্ঞ কৃষক/কৃষানী, কৃষক সভা, উঠোন বৈঠক এবং কৃষক বিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাতীয় জীবনে সামাজিক পরিবর্তন ও সর্ববিধ উন্নতির মূলে কৃষি উন্নয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমাদের কৃষির সার্বিক সমস্যা সমাধান করে সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এ ইউনিটে বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্রসমূহ, সামাজিক বনায়ন, কৃষি’ তথ্য সেবা প্রাপ্তিতে কৃষক, বিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট, ই—কৃষি ইন্টারনেট, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি’ তথ্য সার্ভিস ও কৃষি সম্প্রসারণ, এনজিও ও কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

ইউনিট ১ এর পাঠসমূহ :

পাঠ —১.১ : বাংলাদেশে কৃষির ক্ষেত্র
পাঠ —১.২ : কৃষির ক্ষেত্র : মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসল, সামাজিক বনায়ন
পাঠ —১.৩ : কৃষির ক্ষেত্র : মৎস্য, গবাদি পশু, পোল্টি্র
পাঠ —১.৪ : বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস : কৃষক, বিদ্যালয়, ইন্টারনেট ও ই—কৃষি
পাঠ —১.৫ :বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান
পাঠ —১.৬ : কৃষির তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস : কৃষি সম্প্রসারণ, এনজিও, কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
পাঠ —১.৭ : ব্যবহারিক: বিভিন্ন প্রকার খামার (মাঠ/উদ্যান/মৎস্য/গবাদিপশু/পোল্টি্র) পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রণয়ন।
পাঠ—১.৮ : ব্যবহারিক : নিকটবর্তী একটি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রণয়বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস : উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান

ইউনিট  ২ এর পাঠসমূহ :

পাঠ—২.১ : মাটির অম্লত্ব
পাঠ —২.২ : মাটির ক্ষারত্ব
পাঠ —২.৩ : মাটির বুনট
পাঠ —২.৪ : ভূমি ক্ষয় ও সংরক্ষণ
পাঠ —২.৫ : মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা
পাঠ —২.৬ : ব্যবহারিক : ক) লিটমাস পেপারের সাহায্যে মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব পরীক্ষা করা; খ) pH মিটারের সাহায্যে মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নির্ণয়করণ।
পাঠ —২.৭ : ব্যবহারিক : বিভিন্ন ধরণের মাটি সংগ্রহ, শনাক্তকরণ ও সংরক্ষণ

ইউনিট  ৩ এর পাঠসমূহ :

পাঠ —৩.১ : মৃত্তিকা পানি ও পানি সেচ
পাঠ —৩.২ : পানি সেচ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা
পাঠ —৩.৩ : ধানের পানি সেচ ব্যবস্থাপনা
পাঠ —৩.৪ : পানি নিষ্কাশন ,ব্যবহারিক : কয়েকটি টব ব্যবহার করে পানিবন্ধ অবস্থায় ধান চাষের সাথে ঝজও এর তুলনা

ইউনিট  ৪ এর পাঠসমূহ :

পাঠ —৪.১ : আলুর বীজ উৎপাদন
পাঠ —৪.২ : পিঁয়াজ ও সরিষা বীজ উৎপাদন
পাঠ —৪.৩ : বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ
পাঠ —৪.৪ : বীজের বিশুদ্ধতার হার নির্ণয়
পাঠ —৪.৫ : পিঁয়াজ, আলু ও সরিষার বীজ শোধণ

ইউনিট  ৫ এর পাঠসমূহ :

পাঠ —৫.১ : অণুজীব সার
পাঠ —৫.২ : রাইজোবিয়াম, এ্যাজোলা ও ট্রাইকোডার্মা সার
পাঠ —৫.৩ : পাটের রিবন রেটিং
পাঠ —৫.৪ : রেশম চাষ
পাঠ —৫.৫ : মাশরুম চাষ
পাঠ —৫.৬ : মৌমাছি চাষ
পাঠ —৫.৭ : গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন
পাঠ —৫.৮ : ব্যবহারিক : ঘরের ভিতরে মাশরুম চাষ

ইউনিট  ৬ এর পাঠসমূহ :

পাঠ —৬.১ : কৃষি জলবায়ু ও জলবায়ুর উপাদান
পাঠ —৬.২ : বাংলাদেশের কৃষিতে মৌসুমি জলবায়ুর গুরুত্ব ও উপযোগিতা
পাঠ —৬.৩ : কৃষি জলবায়ুর উপযোগী উদ্যান, মাঠফসল ও গবাদি পশুপাখির উপর জলবায়ুর প্রভাব
পাঠ —৬.৪ : ফসল উৎপাদন, গবাদি পশু ও পাখি পালনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
পাঠ —৬.৫ : প্রতিকূল বা বিরূপ আবহাওয়ায় ফসল ও পশুপাখি রক্ষার কৌশল
পাঠ —৬.৬ : ফসলের আলোক সংবেদনশীলতা ও ফসলের মৌসুম
পাঠ— ৬.৭ : ব্যবহারিক : (ক) সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করণ বায়ুর আর্দ্রতা নির্ণয়
পাঠ —৬.৮ : ব্যবহারিক : বিভিন্ন ধরণের দিবা দৈর্ঘ্য নিরপেক্ষ ফসল ও ফসলের জাত চিহ্নিতকরণ

ইউনিট  ৭ এর পাঠসমূহ :

পাঠ —৭.১ : ধান চাষ
পাঠ —৭.২ : ধানের পোকামাকড় এবং দমন ব্যবস্থা রোগ বালাই
পাঠ —৭.৩ : ডাল ফসল : মসুর ও মুগডাল চাষ
পাঠ —৭.৪ : তেল ফসল : সূর্যমুখী চাষ
পাঠ —৭.৫ : তেল ফসল : সয়াবিন চাষ
পাঠ —৭.৬ : চিনি ফসল : আখ চাষ
পাঠ —৭.৭ : আঁশফসল : পাট চাষ
পাঠ —৭.৮ : আঁশফসল : তুলা চাষ
পাঠ —৭.৯ : ব্যবহারিক : সুস্থ বীজ বাছাইকরণ

ইউনিট ৮ এর পাঠসমূহ :

পাঠ—৮.১ : ফুল, ফল ও মসলা জাতীয় ফসলের পরিচিতি ও গুরুত্ব
পাঠ—৮.২ : কুল চাষ
পাঠ—৮.৩ : পেয়ারা চাষ
পাঠ—৮.৪ : কমলা চাষ
পাঠ—৮.৫ : ডালিয়া ফুল চাষ
পাঠ—৮.৬ : চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ
পাঠ—৮.৭ : পিঁয়াজ চাষ
পাঠ—৮.৮ : রসুন চাষ
পাঠ—৮.৯ : আদা চাষ

ইউনিট  ৯ এর পাঠসমূহ :

পাঠ — ৯.১ ফল ও শাকসবজি পচনের কারন, লক্ষণ এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
পাঠ — ৯.২ ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণ পদ্ধতি
পাঠ — ৯.৩ ফল ও শাকসবজি বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ
পাঠ — ৯.৪ আচার, জেলি, সস ও মুরব্বা এবং আলুর চিপস ও ফ্রেন্স ফ্রাই তৈরি

 

আরও দেখুন :

মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা

মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি বাউবি বিএই ১২০৪ – মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিষয়ের ইউনিট -২ এর পাঠ – ২.৫। আকারে যোগান দেয়ার সামর্থকে মাটির উর্বরতা বলে। যে মাটি খুব বেশি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান যোগান দিতে পারে সে মাটি তত বেশি পরিমাণ উর্বর। পুষ্টি উপাদানের পরিমাণের উপর মাটির উর্বরতা কম বা বেশি হতে পারে।

মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা

 

উর্বরতা অনুযায়ী মাটি ২ প্রকারের হয়ে থাকে—

 

উর্বর মাটি:

শস্য উৎপদানের জন্য উর্বর মাটি উত্তম। যে মাটি উদ্ভিদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানসমূহ পর্যাপ্ত পরিমাণে ও উৎপাদনের সুষম আকারে যোগান দিতে সক্ষম তাকে উর্বর মাটি বলে।

 

অনুর্বর মাটি :

যে মাটি উদ্ভিদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানসমূহ পর্যাপ্ত পরিমাণে ও সুষম আকারে যোগান দিতে অক্ষম তাকে অনুর্বর মাটি বলে। এ মাটি শস্য উৎপাদনের জন্য উপযোগী নয়।

 

মাটির উর্বরতা হ্রাসের কারণ নিম্নে মাটির উর্বরতা হ্রাসের কারণসমূহ তুলে ধরা হল:

১. জৈব সারের ব্যবহার কম করা

২. রাসায়নিক সার বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা।

৩. শস্য পর্যায় নীতি মেনে না চলা।

৪. উচ্চফলনশীল জাতের ফসল চাষ করা।

৫. ভূমিক্ষয় ও মাটি দূষণ।

৬. জ্বালানী হিসাবে গোবর সার ব্যবহার করে ফেলা।

৭. নিবিড়ভাবে ফসল চাষ করা।

৮. গৃহপালিত পশুর সংখ্যা ও গোবর কমে যাওয়া।

৯. ফসলের বাকী অংশ জ্বালানী কাজে ব্যবহার করা।

১০. অধিক ভূমি কর্ষণ করা।

 

উর্বর মাটির বৈশিষ্ট্য :

  • মাটির পিএইচ মান ৬.০—৭.৫।
  • মাটি গাঢ় বর্ণের।
  • মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ওজন ভিত্তিতে ২—৩%।
  • আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে খাপ খাওয়া ফসল ও ফসলবিন্যাস।
  • দোঅঁাশ থেকে পলিদোঅঁাশ সম্পন্ন মৃত্তিকা বুনট।

 

মাটির উৎপাদন ক্ষমতা:

নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট শস্য বা শস্য বিন্যাসের ফলন দেয়ার ক্ষমতাকে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বলা হয়।
মাটি ও ফসলের উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী মাটি দু’প্রকারের হয়ে থাকে যথা:

১. উৎপাদক মাটি : যে মাটি ফসল ফলানোর জন্য উপযুক্ত তাকে উৎপাদক মাটি বলে।

২. অনুৎপাদক মাটি : যে মাটি ফসল ফলানোর জন্য অপেক্ষাকৃত অনুপযুক্ত তাকে অনুৎপাদক মাটি বলে।

 

উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন মাটির বৈশিষ্ট্য :

১. মাটি উর্বর হয়ে থাকে।

২. মাটি উত্তম নিস্কাশন সম্পন্ন হয়ে থাকে।

৩. আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকুলে থাকে।

৪. ফসলের শত্রু কম থাকে।

 

 

উর্বর মাটির উপাদান প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপাদান দ্বারা মাটির উর্বরতা নিয়ন্ত্রিত হয়। নিম্নে উপাদানমূহ উল্লেখ করা হল:

প্রাকৃতিক উপাদান

১. গাছপালা ও জলবায়ু: গাছপালা ও জলবায়ু মাটির উর্বরতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। অধিক গাছপালা সম্পন্ন এলাকার মাটিতে অধিক জৈব পদার্থ যোগ হয় যার ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। অধিক বৃষ্টিপাত সম্পন্ন এলাকার মাটি বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাওয়ায় উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান কমে যায়। আবার যে সব এলাকায় তাপমাত্রা বেশি ও আর্দ্র আবহাওয়া সেসব এলাকার মাটি তাড়াতাড়ি ক্ষয়িত হয়, ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়।

২. উৎস শিলা : উদ্ভিদ যে খনিজ উপাদানসমূহ গ্রহণ করে তা উৎস শিলা হতে পেয়ে থাকে। যে শিলায় পুষ্টি উপাদান অধিক সে শিলা সম্পন্ন মাটি অধিক উর্বর হয়ে থাকে।

 

কৃত্রিম উপাদান , কৃত্রিম উপাদানসমূহ নিম্নরূপ:

১. প্রয়োগকৃত জৈব পদার্থ : জৈব পদার্থ মাটির ভৌত অবস্থার উন্নতি করে এবং মাটিতে বিদ্যমান অনুজীব কার্যক্ষমতা ত্বরান্বিত করে ফলে মাটির উর্বরতা বেড়ে যায়।

২. ভূমি কর্ষণ : পরিমিত ভূমি কর্ষণের ফলে ভূমির উপরের স্তর দূর্বল হয় যার ফলে উদ্ভিদের শেকড় সহজেই বিস্তার লাভ করে পুষ্টি উপাদান নিতে পারে।

৩. মাটির পিএইচ : মাটিতে এর মান খুব বেশি বা কম হলে উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে না। পিএইচ (ঢ়ঐ) মান ৬—৮ হলে উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে।

 

মাটির উৎপাদনক্ষমতার উপাদান:

আমরা সহজে বলতে পারি যে, যে মাটি যত বেশি উর্বর তার তত বেশি উৎপাদনক্ষমতা থাকে। মাটির উৎপাদনক্ষমতা কিছু উপাদানের উপর নির্ভর করে থাকে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হল:

১. মাটির উর্বরতা: মাটির উর্বরতা হচ্ছে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণ ও সুষম হারে যোগান দেওয়া। মাটি উর্বর হলে তা অবশ্যই উৎপাদনশীল হবে।

২. শস্য পর্যায় : শস্য পর্যায় যথাযথভবে অনুসরণ করে মটির উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।

৩. জলবায়ু : ফসল ফলানোর জন্য উপযুক্ত জলবায়ুর প্রয়োজন। উপযুক্ত জলবায়ু মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৪. জমি কর্ষণ : জমি কর্ষণের উপর মাটির উৎপাদান ক্ষমতা নির্ভর করে। জমি ভালোভাবে কর্ষণ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

৫. ফসল ব্যবস্থাপনা : ফসল ব্যবস্থাপনার উপর মাটির উৎপাদন ক্ষমতা অনেকটাই নির্ভরশীল্ ফসল ব্যবস্থাপনা যেমন সার প্রয়োগ, আন্ত:কালীন পরিচর্যা, রোগ ও পোকামাকড় দমন, গাছের গোড়া আলগা করে দেয়া প্রভৃতির মাধ্যমে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

 

 

মাটির উর্বরতা সংরক্ষণের উপায় :

১। সঠিক পদ্ধতিতে জমির ব্যবহার : ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে জমিতে যে ফসল উপযোগী সে জমিতে সে ফসল চাষ করতে হবে। যেমন সমতল ভূমিতে সে সকল ফসল চাষ করা হয় পাহাড়ি অঞ্চলে সেসকল ফসল চাষ করা যায় না। সমতল ও পাহাড়ি জমির চাষ পদ্ধতিও ভিন্ন হবে।

২। ভূমি কর্ষণ : পরিকল্পিতভাবে ভূমি কর্ষণ মাটির উর্বরতা সংরক্ষণে সহায়ক। অনিয়মিত ও যথেচ্ছ ভূমি কর্ষণ মাটির ভৌত ধর্ম নষ্ট করে এবং উর্বরতা কমায়। সে ফসলের জন্য যতটুকু কর্ষণ করা দরকার ততটুকুই কর্ষণ করতে হবে।

৩। জৈব পদার্থ প্রয়োগ : জৈব পদার্থকে মাটির প্রাণ বলা হয়। জৈব পদার্থ মাটির ভৌত রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মের উন্নয়ন সাধন করে এবং গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। বিভিন্ন জৈব সার যেমন খামার জাত সার, কম্পোস্ট, সবুজ সার, গোবর, পঁচা আবর্জনা ইত্যাদি মাটিতে প্রয়োগ করে মাটির উর্বরতা বাড়ানো যায়।

৪। পরিমিত রাসায়নিক সার ব্যবহার : জমিতে বিভিন্ন সারের প্রয়োজনীয়তা জেনে পরিমিত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।

৫। পানি সেচ ও নিকাশ : জমিতে পানি সেচ ও নিকাশ ব্যবস্থা ভাল হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পানি সেচ দিতে হবে আবার অতিরিক্ত পানি জমি থেকে বের করে দিতে হবে।

৬। সবুজ সার ও আচ্ছাদন ফসলের চাষ : বিভিন্ন সবুজসার ফসল যেমন ধৈঞ্চা ফুল আসার পূর্বে নরম অবস্থায় চাষ দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও মাটির উপর আচ্ছাদন সৃষ্টিকারী ফসল যেমন ডাল, মিষ্টি আলু ইত্যাদি চাষ করে মাটির উর্বরতা সংরক্ষণ করা যায়।

৭। ফসল পর্যায় ও ফসল বিন্যাস অবলম্বন : একই জমিতে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফসল চাষ করতে হবে যাতে মাটির বিভিন্ন অঞ্চলের পুষ্টি উপাদান উদ্ভিদ দ্বারা সমভাবে পরিশোধিত হয়।

৮। আগাছা দমন ও মালচিং : আগাছা জমির পুষ্টি উপাদান শোষন করে জমির উর্বরতা কমায়। এজন্য আগাছা দমন করে এবং উদ্ভিদ অবশিষ্টাংশ ও অন্যান্য খড়কুটা দিয়ে মালচিং করে জমির উর্বরতা সংরক্ষণ করা যায়।

 

সারাংশ

ফসল উৎপাদনের জন্য মাটির উর্বরতা বজায় রাখা অতীব প্রয়োজন। শুধু মাটির উর্বরতা বজায় রাখলে চলবে না, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। কারণ রাসায়নিক বালাইনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারে ও হাজার বছরের চাষাবাদের ফল মাটি হারাচ্ছে তার অকৃত্রিম উর্বরতা। তাই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে আমাদের দেশের জমির উর্বরতা রক্ষা ও বৃদ্ধির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করতে হবে।

 

মাটির বুনট

আজকের আলোচনার বিষয় মাটির বুনট। এটি ইউনিট-২ এর ২.৩ নং পাঠের অংশ। মৃত্তিকার একটি মৌলিক ও স্থায়ী ভৌত ধর্ম হলো বুনট। মৃত্তিকায় মূলত বালি, পলি ও কর্দম—এই তিন ধরনের কণা উপস্থিত থাকে। এই তিন কণার তুলনামূলক অনুপাত বা শতকরা হারকে মাটির বুনট বলা হয়। অন্যভাবে বললে, মৃত্তিকায় বালি, পলি ও কর্দম কণার পারস্পারিক অনুপাত হলো মাটির বুনট। এটি মৃত্তিকার প্রধান ভৌত ধর্মগুলোর একটি এবং এর উপর মৃত্তিকার অনেক ভৌত ও কৃষি সম্পর্কিত গুণাবলী নির্ভর করে।

মাটির বুনট

 

 

মাটির বুনট সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে মাটির উপযুক্ত ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা সহজ হয়। উদাহরণস্বরূপ, যে মাটি অধিক পলিকণা ধারণ করে, তা শস্য চাষের জন্য উপযুক্ত। কারণ পলিমাটি সহজলভ্য পানি এবং পুষ্টি উপাদান সংরক্ষণে সক্ষম। সুতরাং সেচ ব্যবস্থা, পানি নিস্কাশন, শস্য নির্বাচন ও উৎপাদন—all কিছুই মূলত মাটির বুনটের উপর নির্ভর করে।

 

মাটির বুনট শ্রেণীবিন্যাস :

মাটির বুনটকে প্রধানত বালি, পলি ও কর্দম কণার আনুপাতিক হারের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যস্ত করা হয়। এই শ্রেণীবিন্যাসের দুটি প্রধান পদ্ধতি আছে—আন্তর্জাতিক পদ্ধতি এবং যুক্তরাষ্ট্র পদ্ধতি। উভয় পদ্ধতিতেই মাটিকে কণার অনুপাতের ভিত্তিতে ১২টি বুনট শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। এই শ্রেণীগুলি হলো:

ক্র. নং বুনট শ্রেণী সাধারণ গুণাবলী / বৈশিষ্ট্য
বালি বড় কণার উপস্থিতি বেশি, পানি ধারণ কম, দ্রুত শুকনো হয়, শস্যের বৃদ্ধির জন্য কম পুষ্টি উপাদান ধরে রাখে
দোআঁশ বালি বালির সাথে সামান্য পলি ও কর্দম কণা থাকে, মাঝারি পানি ধারণ ক্ষমতা, আকারে নরম ও খাস্তা
বেলে দোআঁশ দোআঁশ এবং বালির সমন্বয়, মাঝারি স্থূলতা, পুষ্টি ধরে রাখার ক্ষমতা কিছুটা বেশি
দোআঁশ বালি, পলি ও কর্দম কণার প্রায় সমান অনুপাত, ভারসাম্যপূর্ণ স্থূলতা ও সূক্ষ্মতা, চাষাবাদে ভালো
পলি এটেল দোআঁশ দোআঁশের সাথে পলি ও কর্দমের মিশ্রণ, পানি ও পুষ্টি ধারণ ভালো, শস্য চাষে সহায়ক
পলি সূক্ষ্ম কণার আধিক্য, পানি ধারণ খুব ভালো, সহজে ক্ষয়প্রবণ, নরম ও লালনযোগ্য
বেলে এটেল দোআঁশ এটেল মাটির সাথে বালির মিশ্রণ, ভারসাম্যপূর্ণ স্থূলতা, পানি ধারণ ও বায়ুচলাচল ভালো
এটেল দোআঁশ এটেল ও দোআঁশের সংমিশ্রণ, শস্য চাষে সহায়ক, পর্যাপ্ত পুষ্টি ও পানি ধারণ
পলি এটেল দোআঁশ পলি ও এটেল মিশ্রিত দোআঁশ, পানি ও পুষ্টি ধারণ ভালো, নরম ও চাষযোগ্য
১০ বেলে এটেল এটেল কণার আধিক্য সহ বালি, পানি ধারন ক্ষমতা মধ্যম, স্থূল ও সুসংগঠিত
১১ পলি এটেল এটেল কণার সাথে পলির মিশ্রণ, নরম, উর্বর, পানি ও পুষ্টি ভালোভাবে ধরে রাখে
১২ এটেল কর্দম কণার আধিক্য, পানি ধরে রাখার ক্ষমতা অনেক, নরম ও উর্বর, কৃষি চাষের জন্য উত্তম

তবে, কৃষি ব্যবহারের সুবিধার জন্য বুনট শ্রেণীকে প্রধানত ৩টি ভাগে সরলীকৃত করা হয়—বেলে মাটি, দোআঁশ মাটি এবং এটেল মাটি

১. বেলে মাটি

যেসব মাটিতে ৭০% বা তার বেশি বালি কণা থাকে, সেগুলো বেলে মাটি নামে পরিচিত। এর মধ্যে দুটি প্রধান শ্রেণী রয়েছে—১. বালি এবং ২. দোআঁশ বালি

২. দোআঁশ মাটি

এই ধরনের মাটিতে বালি, পলি ও কর্দম কণার অনুপাত এমনভাবে থাকে যে মাটির স্থূলত্ব এবং সূক্ষ্মতা প্রায় সমান হয়। দোআঁশ মাটির মধ্যে বিভিন্ন বুনট শ্রেণী অন্তর্ভুক্ত।

৩. এটেল মাটি

যে মাটিতে কমপক্ষে ৩৫% কর্দম কণা থাকে, তাকে এটেল মাটি বলা হয়। এটেল মাটির প্রধান তিনটি শ্রেণী হলো—১. বেলে এটেল, ২. পলি এটেল, এবং ৩. এটেল মাটি

 

 

মাটির বুনটের গুরুত্ব :

মাটির বুনট শুধুমাত্র মৃত্তিকার একটি ভৌত ধর্মই নয়, বরং এটি কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটির বুনট বোঝার মাধ্যমে নিন্মলিখিত সুবিধা পাওয়া সম্ভব:

  • মৃত্তিকার শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায় কোন মাটিতে কোন ফসল সেরা উৎপাদন দিবে।

  • মৃত্তিকার উপযুক্ত ব্যবহার ও সঠিক ব্যবস্থাপনা সহজ হয়।

  • মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা জানা যায়, ফলে সেচ ও নিকাশের সময় নির্ধারণ সহজ হয়।

  • ভূমি কর্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে পূর্বধারণা পাওয়া যায়।

  • শিলাক্ষয়ের পর্যায় ও মৃত্তিকার ক্ষয়প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

  • ক্রমান্বয়ে পলির স্তর জমা হওয়ার ফলে নতুন বুনটের মাটি গঠিত হয়, যা ফসলের উর্বরতা বাড়ায়।

সুতরাং, কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মাটির বুনটকে সঠিকভাবে বোঝা ও মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি।

 

মাটির বুনট রূপান্তরকরণ :

কৃষিকাজের প্রয়োজনে অনেক সময় মাটির প্রাকৃতিক বুনট পরিবর্তন করতে হয়। বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে মাটির বুনট উন্নত বা রূপান্তর করা যায়, যাতে ফসলের চাষোপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়।

কেন রূপান্তর প্রয়োজন?

মাটির প্রধান তিন প্রকার বুনট হলো: বেলে মাটি, দোআঁশ মাটি, এবং এঁটেল মাটি।

  • বেলে মাটি: পানি ধারণ ক্ষমতা খুব কম (প্রায় ৫%), ফলে ফসল চাষের জন্য অনুকূল নয়।

  • এঁটেল মাটি: পানি ধারণ ক্ষমতা খুব বেশি (প্রায় ৫০%), যার কারণে বায়ুচলাচল এবং শিকড়ের বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয় না।

  • দোআঁশ মাটি: পানি ধারণ ক্ষমতা (৩৫%) এবং বায়ুচলাচল ক্ষমতা মধ্যম, যা অধিকাংশ ফসলের জন্য উপযোগী।

অতএব, বেলে ও এঁটেল মাটিকে কৃষি উপযোগী দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর করা হয়, যাতে ফসল উৎপাদন উন্নত হয় এবং মৃত্তিকার ভৌত ও জৈবিক ধর্ম যথাযথভাবে বজায় থাকে।

 

 

বেলে মাটিকে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর:

বেলে মাটি পানি ধারণে দুর্বল এবং ফসলের জন্য কম উর্বর হওয়ায়, কৃষি কাজের উপযোগী করতে এটি দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর করা প্রয়োজন। রূপান্তরের জন্য নিন্মলিখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয়:

১. এঁটেল মাটি ব্যবহার:
বেলের উপরের স্তরে এঁটেল মাটি প্রয়োগ করে ভালোভাবে মিশালে বেলে মাটির বুনট পরিবর্তিত হয়। এ ক্ষেত্রে বালি, পলি ও কর্দম কণার অনুপাত প্রায় ২:১:১ হলে বেলে মাটি দোআঁশ মাটিতে রূপান্তরিত হয়।

২. গভীর চাষ:
বেলের উপরের স্তরে স্থুলকণা এবং নিচের স্তরে সূক্ষ্মকণা থাকে। মাটির গভীরে চাষ করলে এই স্থুল ও সূক্ষ্ম কণার মিশ্রণ ঘটে এবং বেলে মাটি ধীরে ধীরে দোআঁশ মাটিতে পরিণত হয়।

৩. জৈব সার ব্যবহার:
কম্পোস্ট, খামারজাত সার ও সবুজ সার প্রয়োগ করে মাটির জৈব উপাদান বৃদ্ধি করা যায়। এটি বেলের পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বুনটকে দোআঁশ মাটির অনুকূলে উন্নীত করে।

৪. কেঁচো সার বা ভার্মিকম্পোস্ট প্রয়োগ:
কেঁচো সার একটি উন্নতমানের জৈব সার। বেলে মাটির সাথে এটি মেশালে বেলের দৃঢ়তা কমে, মাটি নরম হয় এবং স্থূলকণা ও সূক্ষ্মকণার মিশ্রণে দোআঁশ মাটি গঠিত হয়।

৫. পলি মাটি প্রয়োগ:
নদীর পলি বা পলিমিশ্রিত বৃষ্টির পানি জমিতে স্থাপন করে মাটিতে পলি কণার বৃদ্ধি করা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেলে মাটি ধীরে ধীরে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তরিত হয়।

 

 

 

এঁটেল মাটিকে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তরকরণ:

এঁটেল মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ায় এটি জলাবদ্ধ হয়ে থাকে এবং শুকিয়ে গেলে অত্যন্ত শক্ত হয়ে যায়। ফলে সরাসরি কর্ষণ বা চাষ করা কঠিন হয়। কৃষিকাজের উপযোগী করার জন্য এঁটেল মাটি দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর করতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়:

১. বেলে মাটি ব্যবহার:
এঁটেল মাটিতে পলি এবং বেলের মিশ্রণ প্রয়োগ করলে মাটি দোআঁশ মাটিতে রূপান্তরিত হয়। এতে বালি, পলি ও কর্দম কণার অনুপাত প্রায় ২:১:১ হওয়া বাঞ্চনীয়। এই পদ্ধতিতে মাটির অতিরিক্ত জলাবদ্ধতা কমে যায় এবং চাষযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।

২. সবুজ সার প্রয়োগ:
মাটিতে নির্দিষ্ট উদ্ভিদ চাষ করে, যখন সেগুলো ছোট ও নরম অবস্থায় থাকে, তা মাটিতে মিশিয়ে দিলে মাটির গুণাবলী উন্নত হয়। এতে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এঁটেল মাটি ধীরে ধীরে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তরিত হয়।

৩. জৈব সার প্রয়োগ:
খামারজাত সার, কম্পোস্ট বা অন্যান্য জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির স্থূল ও সূক্ষ্ম কণার অনুপাত সমান হয়। এর ফলে মাটির ভৌত ও রসায়নগত গুণাবলী উন্নত হয় এবং এঁটেল মাটি দোআঁশ মাটিতে রূপান্তরিত হয়।

৪. কেঁচো সার বা ভার্মিকম্পোস্ট প্রয়োগ:
কেঁচো সার বা ভার্মিকম্পোস্টে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও জৈব পদার্থ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এটি মাটিকে নরম ও হাওয়াযুক্ত করে, ফলে এঁটেল মাটি সহজেই দোআঁশ মাটিতে রূপান্তরিত হয়।

 

 

ব্যবহারিক: মাটির বুনট শনাক্তকরণ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ব্যবহারিক: মাটির বুনট শনাক্তকরণ

বিষয়- ১:মাটির বুনট শনাক্তকরণ

এ পরীক্ষণ শেষে আপনি-

  • মাটির বুনট শনাক্তকরণের উপকরণ সংগ্রহ করতে পারবেন।
  • মাটির বুনট শনাক্ত করতে পারবেন।

উপকরণ

নমুনা মাটি, পাত্র ও পানি।

কাজের ধাপ

১। কোন নির্দিষ্ট স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ করুন।

২। সংগৃহীত নমুনা মাটিতে ঢেলা থাকলে, একটি পাত্রে রেখে তা গুঁড়া করে নিন।

৩। নমুনার একমুঠ গুঁড়া মাটি হাতে নিয়ে পানি মিশান।

৪। হাতের ভিতরে মাটির দলা বানাতে চেষ্টা করুন।

৫। মাটি দলা না হয়, তবে সংগৃহীত নমুনাটি বেলে মাটি।

৬। যদি দলা বানানো যায় এবং চ্যাপ্টা করা যায়, তবে নমুনাটি এঁটেল মাটি।

৭। যদি চ্যাপ্টা করতে গেলে ভেঙ্গে যায়, তবে নমুনাটা দো-আঁশ মাটি ।

৮। নমুনা মাটির পরীক্ষণ শেষে, আপনার বাড়ির পার্শ্ববর্তী মাঠের যে কোন মাটি নিয়ে পরীক্ষণটি বারবার করুন। কি ধরনের মাটি তা শনাক্ত করুন ।

৯। সবশেষে ব্যবহারিক খাতায় / নোটবুকে পরীক্ষণের সমস্ত তথ্য ধারাবাহিকভাবে লিখুন এবং শিক্ষকের স্বাক্ষর নিন।

 

 

বিষয়- ২: সার পরিচিতি

এ পরীক্ষা শেষে আপনি-প্রদত্ত সারের নমুনাগুলো শনাক্ত করতে পারবেন।

উপকরণ

নমুনা সার, পাত্র, পলিব্যাগ, কাগজ ও ব্যবহারিক নোটবুক।

কাজের ধাপ

১। প্রদত্ত নমুনা সারগুলোর বর্ণ, গন্ধ, আকার আকৃতি অনুসারে সনাক্ত করুন।

২। শনাক্তকৃত সারগুলোর নাম লিখুন।

৩। শনাক্তকৃত সারগুলোর যাবতীয় তথ্য ব্যবহারিক নোটবুকে লিখুন এবং শিক্ষকের স্বাক্ষর নিন।

 

বিষয়-৩ : কমপোস্ট সার তৈরিকরণ

এ পরীক্ষাণ শেষে আপনি-

  • কম্পোস্ট সার তৈরির উপকরণ সংগ্রহ করতে পারবেন।
  • কম্পোস্ট তৈরির জায়গা নির্বাচন করতে পারবেন। কম্পোস্ট সার তৈরি করে দেখাতে পারবেন।

উপকরণ

১. আবর্জনা ২. পানি ৩ গোবর ৪, ইউরিয়া ৫. টি এস পি ৬. কাদামাটি ৭. পচনকারী দ্রব্য (যদি থাকে)।

কাজের ধাপ

১. বাড়ির পাশে একটা উঁচু জায়গা নির্বাচন করুন। খেয়াল রাখবেন নির্বাচিত স্থানে যেন বর্ষার পানি না জমে।

২. ৩ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১.২৫ মিটার প্রস্থ জায়গা ফিতা দিয়ে মেপে নিন।

৩. আবর্জনা, খড়কুটা, কচুরিপানা, আগাছা ইত্যাদি পচনশীল দ্রব্য ফেলে ৩০ সে.মি. উঁচু স্তর তৈরি করুন।

৪. প্রথম স্তর সম্পন্ন হলে আবর্জনার উপর ১ কেজি গুঁড়া খৈল, ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২০০ গ্রাম টি এসপি ছিটিয়ে দিন। অথবা প্রতি স্তরে তাজা গোবর, পয়ঃপ্রণালীর আবর্জনা। প্রভাবক হিসাবে ব্যবহার করুন।

৫. এরপর পানি দিয়ে স্তরটি ভিজিয়ে দিন।

৬. এরপর ৩ সে.মি. পুরু করে গোবরের প্রলেপ দিন।

৭। এমনিভাবে পরপর সাতটি স্তর সাজান। প্রতিটি স্তরের উপরে একই হারে ইউরিয়া ও টি.এস.পি বা গোবরের প্রলেপ দিন।

৮. উপরিভাগের স্তরটি কুঁড়েঘরের চালার মত বানান এবং পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিন।

৯. গাদা তৈরি শেষ হলে সপ্তাহখানেক পর একটা শক্ত কাঠি গাদার মাঝখানে ঢুকিয়ে দেখুন যে গাদাটি অতিরিক্ত ভেজা কি না।

 

 

১০. গাদা অতিরিক্ত ভেজা হলে মাঝে মাঝে কাঠি ঢুকিয়ে ভিতরে বাতাস প্রবেশ করতে দিন।

১১. গাদা অতিরিক্ত শুকিয়ে গেলে মাঝে মাঝে কাঠি ঢুকিয়ে ছিদ্র করে সেখানে পানি ঢালুন।

১২. তাড়াতাড়ি পচনের জন্য একমাস পর কমপোস্ট উল্টে দিন। স্তূপ উল্টানোর সময় স্তরে স্তরে মোট ১০ কেজি এক্টিভেটর দিন।

১৩. দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে কমপোস্ট তৈরি হবে।

১৪. কম্পোস্ট তৈরি হলে স্তূপ ভেঙ্গে শুকিয়ে গুঁড়া করে বস্তায় ভরে রাখুন।

১৫. কম্পোস্ট তৈরির ধাপগুলো অনুশীলন করুন এবং ব্যবহারিক নোটবুকে যাবতীয় তথ্য লিখুন এবং শিক্ষকের স্বাক্ষর নিন।

 

সারাংশ

মৃত্তিকা বুনট মৃত্তিকার একটি অন্যতম ভৌত ধর্ম। মৃত্তিকার অন্যান্য ভৌত ধর্মগুলোও মৃত্তিকা বুনটের উপর নির্ভর করে। মৃত্তিকার কণাসমূহ বিভিন্ন অনুপাতে মিশ্রিত হয়ে বুনট শ্রেণীর মাটির সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন বুনট শ্রেণীর মাটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ সকল বৈশিষ্ট্যগত কারণে এক এক শ্রেণীর মাটির এক এক ফসলের জন্য উপযোগী। জমির উৎপাদন শক্তির উপর মৃত্তিকার বুনট ও সংযুতির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।

মাটির ক্ষারত্ব

মাটির ক্ষারত্ব – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর “স্কুল অব এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট” এর “বিএজেড” স্তরের “বাউবি বিএই ১২০৪ – মৃত্তিকা বিজ্ঞান” এর পাঠ – ২.২। মৃত্তিকাক্ষারত্ব ও লবণাক্ততা আমরা পূর্বের পাঠ থেকে জানতে পেরেছি কোন মৃত্তিকা দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়নের (H+) পরিমাণ বেশি হলে তাকে অম্লীয় মৃত্তিকা বলে। কোন মৃত্তিকা দ্রবণে যদি হাইড্রোক্সিল আয়নের (OH-) গাঢ়ত্ব বেশি হয় তাকে ক্ষারীয় মৃত্তিকা বলে।

মাটির ক্ষারত্ব

ক্ষারীয় মৃত্তিকার পিএইচ (pH) মান সবসময় ৭ এর চেয়ে বেশি। ক্ষার জাতীয় লবণ যেমন সোডিয়াম কার্বনেট, ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট ও পটাসিয়াম কার্বনের হাইড্রোক্সিল আয়নের সাথে একত্রিত হয়ে ক্ষারত্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। মৃত্তিকা লবণাক্ততা হচ্ছে যখন মত্তিকা দ্রবূ ণে দ্রবণীয় লবণের পরিমাণ বিশেষ করে সোডিয়াম ক্লোরাইডের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যায় তাকে লৰণাক্ত মত্তিকা বুঝায় ।
অর্থাৎ যে মৃত্তিকা সোডিয়াম লবণের তড়িৎ বিশ্লেষণের ফলে উৎপন্ন হয় তাকে লবণাক্ত মৃত্তিকা বলে।

 

ক্ষারীয় মাটি তিন প্রকারের হতে পারেঃ

১। ক্ষার মাটি (Alkaline soil)
২। লোনা বা লবণাক্ত মাটি (Saline soil)
৩। চুনা মাটি (Calcarious soil)

ক্ষারীয় মাটি সংশোধন নিম্নলিখিত উপায়ে মাটির ক্ষারত্ব দূর করা যেতে পারে:

১। জিপসাম প্রয়োগ করে :

জিপসাম হল ক্যালসিয়াম ও সালফার সমৃদ্ধ রাসায়নিক সার। এটি প্রয়োগ করে মাটির ক্ষারত্ব দূর করা যায়। মাটির ক্ষারত্বের প্রধান কারণ হল সোডিয়াম (Nat) আয়নের আধিক্য। জিপসামের ক্যালসিয়াম আয়ন (Cat) মাটির কলয়েড থেকে সোডিয়াম আয়নকে অপসারিত করে এবং সোডিয়াম আয়ন দ্রবণে চলে এসে সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4) নামক যৌগ উৎপন্ন করে। এ যৌগটি পানিতে দ্রবীভূত হয়ে লিচিং এর মাধ্যমে জমির ক্ষারত্ব কমায়। Na+ + CaSO4 Ca+ + Na2SO4

 

২। সালফার বা গন্ধক ব্যবহার করে :

জমিতে সালফার (S) ব্যবহার করলে তা মাটিস্থ বায়ু দ্বারা জারিত হয়ে এবং পানির সাথে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক এসিড (H2SO4) তৈরি করে। সালফিউরিক এসিড সোডিয়াম যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4) তৈরি করে এবং মাটি থেকে লিচিং হয়ে ক্ষারত্ব কমায়।
S+O2 [ SO2 | SO2 + H 2 O + H 2 SO 4
H2SO4 +Na2CO3 Na2SO4 + H2O+ CO2

৩। জৈব সার ব্যবহার করে :

জমিতে পরিমাণমত জৈব সার যেমন- বায়োফার্টিলাইজার অনুজীব সার, ট্রাইকোডার্মা, বায়োপেস্টিসাইড, সবুজ সার, কম্পোস্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে মাটির ক্ষারত্ব কমানো যায়। বিভিন্ন অনুজীবসার যেমন রাইজোবিয়াম, মাইকোরোইজা, ট্রাইকোডার্মা, ফসফেট ব্যকটেরিয়া ইত্যাদি প্রয়োগ করলে জৈব পদার্থের বিয়োজনে জৈব এসিড উৎপন্ন হয় যা মাটির সোডিয়াম আয়নকে অপসারিত করে দ্রবণে নিয়ে আসে। ফলে মাটির ক্ষারত্ব দূর হয়।

৪। সেচ ও নিকাশ :

মাটির ক্ষারত্ব কমানোর জন্য মাটি থেকে লবণ সরিয়ে দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন লবণমুক্ত পানি সেচ এবং নিষ্কাশন। এ পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণ পানি দিয়ে জমিকে প্লাবিত করা হয়। এতে জমির ক্ষারীয় লবণ পানির সাথে দ্রবীভূত হয়। পরে পানি নিষ্কাশন করলে মাটির ক্ষারত্ব কমে।

৫। সহনশীল ফসলের চাষ :

যেসব জমিকে ক্ষারমুক্ত করা যায় না, সেখানে ক্ষার সহনশীল ফসলের চাষ করেও মাটির ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ক্ষার সহনশীল উদ্ভিদ হলো-সুগার বীট, খেজুর, নারিকেল, গাজর, বার্লি, টমেটো, তুলা, ধান, গম, ভুট্টা, ইত্যাদি।

 

ক্ষারীয় মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য :

১. পিএইচ (pH) মান ৮.৫-১০।

২. বিনিময়যোগ্য সোডিয়ামের পরিমাণ ১৫% এর বেশি থাকে।

৩. জৈব পদার্থ পরিমাণে কম থাকে।

৪. শুকনো মৌসুমে মাটির উপরের আবরনে কালো চাপ বাঁধা স্তর দেখা যায়। এজন্য একে কালো ক্ষার বলে ।

৫. বার্লি, খেজুর-বাবলা বিশেষ করে যে সকল ফসল লবণ সহ্য করতে পারে সেসব ফসল ভালো জন্মে।

৬. সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে, কিন্তু দ্রবণীয় লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণ কম থাকে।

 

লবণাক্ত মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য:

১. পিএইচ (pH) মান ৭-৮.৫।
২. শুকনো মৌসুমে মৃত্তিকার উপরের আবরনে সাদা চাপা বাধা স্তর দেখা যায়। এজন্য একে সাদা ক্ষার বলে।

 

 

মৃত্তিকার ক্ষারত্ব ও লবণাক্ততার কারণ মৃত্তিকার ক্ষারত্ব ও লবণাক্ততা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে ক্ষারত্বের ও লবণাক্ততা প্রায় একটি কারণে হয়ে থাকে। কেননা মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি হলে মাটির ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়। কারণসমূহ নিম্নরূপ:

১. লোনা পানিতে লবণের পরিমাণ এবং সোডিয়াম কার্বনেটের পরিমাণ খুব বেশি থাকে। সমুদ্রের লোনা পানি দিয়ে জমি নিয়মিত প্লাবিত হলে সে জমির লবণাক্ততা বেড়ে যায় যার ফলে মাটি ক্ষারীয় হয়।

২. ক্ষারীয় শিলার চূর্ণবিচুর্নের ফলে মৃত্তিকা ক্ষারীয় হয়। ক্ষারীয় শিলা হতে গঠিত মৃত্তিকা ক্ষারীয় বিক্রিয়া প্রদর্শন করে। উদহারণস্বরূপ ডলোমাইট চুন, চুনাপাথর কুইকলাইম হতে গঠিত মৃত্তিকায় চুনের আধিক্য বেশি থাকে।

৩. অধিক লবণযুক্ত পানি দিয়ে ক্রমাগত জমিতে সেচ দিলে সে মাটির লবণাক্ততা ও ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়।

৪. অবিরাম ঘেরে চিংড়ি মাছ চাষের ফলে সে জমির মাটিতে ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়।

৫. জলবায়ুর প্রভাবে শুস্ক ও অবশুস্ক এলাকায় বৃষ্টিপাত খুব কম হয় বলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম আয়নের চুয়ানি অনেকাংশে কমে যায় যার ফলে মৃত্তিকার উপরের স্তরে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে এবং ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়।

 

ক্ষারীয় ও লবণাক্ততার কারণে ফসল উৎপাদনে বাধাসমূহ :

  •  শুকনো মৌসুমে মানসম্পন্ন পানির অভাব দেখা দেয়।
  •  লবণের গাঢ়তা বা ক্ষারের আধিপত্য বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বিনষ্ট করে দেয়।
  •  গাছপালার সুষম বৃদ্ধিতে বিঘ্ন সৃষ্টি দেয়।
  •  লবণের বা ক্ষারের তীব্রতায় শিকড়ের বিস্তার বাধাপ্রাপ্ত হয় এমনকি চারাগাছ মরে যায়।
  •  সোডিয়ামের প্রাচুর্যে মাটিতে বিষাক্ততা দেখা যায়।
  •  ক্ষারের তীব্রতা সহ্য করতে না পারায় গাছের পাতা পুড়ে যায়।
  •  পানি নিস্কাশনের অভাবে সারা বছর জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।

নিষ্কাশন বিলম্বিত হওয়ায় রবি শস্য চাষাবাদ ব্যাহত হয়।

 

 

ক্ষার মাটি পুনরুদ্ধার পদ্ধতি :

ক্ষার মাটিতে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে পুনরুদ্ধার সম্ভব যথাঃ

  • জল নিস্কাশন
  • লোনা পানির প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাধ ও সুইচ গেট নির্মাণ করা ।
  • সোডিয়ামের পরিমাণ কমানোর জন্য ক্যালসিয়াম সালফেট বা জিপসাম প্রয়োগ করা।
  • সেচ দিয়ে প্লাবিত করা
  • উপরে মাটি চাচিয়া পরিস্কার করা
  • বাস্পায়ন কমাবার ব্যবস্থা করা, যেমন ঃ মালচিং প্রয়োগ করা।
  • সেচ খাল ও নালা পাকা করা
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব ও সবুজ সার প্রয়োগ
  • অন্য স্থান থেকে উবর্র মাটি আনয়ন করে তা ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • গভীর সেচ ও স্বাদু পানি দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে
  • লবণ ও ক্ষার সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করতে হবে।
  • উপযুক্ত চাষাবাদ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

 

মৃত্তিকা অম্লত্ব ও মৃত্তিকা ক্ষারত্বের মধ্যে পার্থক্য :

সারাংশ :

মৃত্তিকার ক্ষারত্ব ও লবণাক্ততা মৃত্তিকার রাসায়নিক ধর্ম। মৃত্তিকার ক্ষারত্ব ও লবণাক্ততার বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি ব্যবস্থাপনা ও শস্য বিন্যাসে। ফলে কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বিলুপ্তের পথে রয়েছে কয়েক’শ প্রজাতির শস্য। কৃষি অলাভজনক হওয়ায় কৃষকরা লবণাক্ত মাটিতে আবাদ করতে আগ্রহ পাচ্ছে না। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে মৃত্তিকার ক্ষারত্ব ও লবণাক্ততা দূর করতে হবে।

 

মৃত্তিকা অম্লত্ব

মৃত্তিকা অম্লত্ব – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি ২.১ নং পাঠ। মৃত্তিকা দ্রবণের (pH) পিএইচ দ্বারা মৃত্তিকা অম্লত্ব জানা যায়। মৃত্তিকা অম্লীয় হলে তখন মৃত্তিকা পিএইচ (pH) এর মান ৭ এর কম হবে। হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব বা গাঢ়ত্ব দ্বারা পিএইচ সনাক্ত করা যায়। মৃত্তিকার (pH) পিএইচ কে মৃত্তিকা বিক্রিয়াও বলা হয়। সুতরাং মৃত্তিকা পিএইচ হলো হাইড্রোজেন আয়ন ঘনত্বের (H+) ঋণাত্মক লগারিদম।

মৃত্তিকা অম্লত্ব

 

 

মৃত্তিকা দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়ন ঘনত্বের (H+) পরিমাণ বেশি হলে তাকে অম্লীয় মৃত্তিকা বলে। মৃত্তিকা পিএইচ (pH) হলো মৃত্তিকা দ্রবনের হাইড্রোজেন আয়ন ঘণত্বের বিপরীত রাশির লগারিদম। হাইড্রোজেন আয়ন ঘণত্বের বা গাঢ়ত্বের একক হলো গ্রাম/লিটার তবে pH এর কোন একক নেই। মৃত্তিকার ঢ়ঐ দ্বারা মৃত্তিকার অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব নির্দেশ করে। হাইড্রোজেন আয়নের [H+] সক্রিয়তাই মৃত্তিকা অম্লত্বের জন্য দায়ী।

 

মৃত্তিকা অম্লত্বের শ্রেণীবিভাগ মৃত্তিকা অম্লত্বকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১. সক্রিয় অম্লত্বঃ

সক্রিয় অম্লত্ব হলো মৃত্তিকা দ্রবণে যে পরিমাণ হাইড্রোজেন আয়ন ঢ়ঐ মুক্ত অবস্থায় থাকে।

২. পটেনসিয়াল বা প্রছন্ন অম্লত্বঃ

পটেনিয়িাল বা প্রছন্ন অম্লত্ব হলো কর্দম কণা বা কলয়েডে যে পরিমাণ হাইড্রোজেন
আয়ন (H+) আবদ্ধ বা শোষিত অবস্থায় থাকে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, মোট অম্লত্ব=সক্রিয় অম্লত্ব + প্রছন্ন অম্লত্ব

 

 

পিএইচ সমীকরণের গাণিতিক ব্যাখ্যা নিম্নের:

সমীকরণের সাহায্যে পিএইচ নির্ণয় করা যায়:
পিএইচ pH =-log[H+] বা, log [H–]

এখানে, [H+] হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব/গাঢ়ত্ব (গ্রাম/লিটার)

কোন দ্রবণে সক্রিয় হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব [H] যত বেশি হবে তার পিএইচ (pH) মান তত কম হবে এবং অম্লত্ব তত বৃদ্ধি পাবে। উদাহরণস্বরূপ কোন দ্রবণের pH এর মান ৪ হলে সে দ্রবণের pH 8 এর [H+], pH ৫ এর তুলনায় দশগুণ বেশি হবে এবং pH ৩ এর চেয়ে দশগুণ প্রত্যেক ছোট এককের [H+] তার পরবর্তী বড় এককের [H] দশগুণ বেশি। তাই অম্লত্ব দশগুণ বেশি হয়। কোন দ্রবণের পিএইচ এর মান ১,২,৩,৪ ১৪ হলে সে দ্রবণে সক্রিয় হাইড্রোজেন আয়নের গাঢ়ত্ব যথাক্রমে ১০১, ১০২, ১০৩, ১০০ ১০-১৪ হবে। পিএইচ [pH] অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নির্দেশক স্কেলের সাহায্য নির্ণয় করা যায়। অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব স্কেল ১ থেকে ১৪ একক নির্দিষ্ট থাকে।

 

 

মৃত্তিকা অম্লত্ব বৃদ্ধির কারণ :

১. মৃত্তিকায় বিদ্যমান অণুজীব ও উদ্ভিদ মূলের শ্বসনের ফলে CO2 উৎপন্ন হয়। পরে এই CO2 মৃত্তিকার পানির সাথে বিক্রিয়া করে H+ আয়ন উৎপন্ন করে H2O+ CO2 H+ + HCO3 মৃত্তিকায় বায়ুর CO, কম বাফার সম্পন্ন মাটির পিএইচ উপরোক্ত বিক্রিয়ার মাধ্যমে কমিয়ে দেয়।

২. মাটিতে প্রধানত এমোনিয়াম সার যেমন এমোনিয়াম সালফেট, এমোনিয়াম নাইট্রেট ও অম্ল উৎপাদনকারী সার যেমন ফেরাস সালফেট প্রয়োগ করে তা মাটিতে আর্দ্র বিশ্লেষিত হচ্ছে। সালফিউরিক এসিড উৎপন্ন করে যার ফলে মৃত্তিকায় অম্লত্ব বৃদ্ধি পায় ৷

৩. কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড প্রভৃতি যৌগ বায়ুতে মিশে থাকে এবং বৃষ্টির পানিতে দ্রবীভূত হয়ে মাটিতে নেমে আসে ফলে এসিডের উৎস হিসাবে কাজ করে।

৪. অধিক বৃষ্টিপাত সম্পন্ন বৃষ্টির পানি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম লবণের ক্ষয় বা অপচয় ঘটায়। মৃত্তিকা পানিতে কার্বন ডাই অক্সাইড দ্রবীভূত হয়ে কার্বনিক এসিড উৎপন্ন করে ফলে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম লবণের ক্ষয় ঘটে এটি অম্লত্ব সৃষ্টির অন্যতম কারণ হয়।

৫. গ্রানাইট, রায়োলাইট, বালি, পাথর ও এসব অম্লীয় শিলায় ক্ষারীয় উপাদানের চেয়ে সিলিকার পরিমাণ বেশি থাকে। থাকৃতিক শক্তির প্রভাবে এসব শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দ্রবণে সিলিসিক এসিড উৎপন্ন করে ফলে মাটির অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়।

৬. জৈব পদার্থের বিয়োজনের ফলে মাটিতে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয় যা আদ্রবিশ্লেষিত হয়ে H+ আয়ন উৎপন্ন করে যা অম্লত্ব বাড়ায়। CO2 + H2O] H2CO3H++ CO

৭. কোন জমিতে ফসল উৎপাদনের তীব্রতা যতই বাড়ে ক্ষারের পরিমাণ ততই কমে এবং অম্লতা বৃদ্ধির আশংকা বাড়ে। আবার ঋতু অনুযায়ী অম্লত্ব সামান্য বাড়ে বা কমে।

৮. বিজারিত সালফার ও নাইট্রোজেন যৌগ অক্সিজেন ও বিচূর্ণীভবনের মাধ্যম সালফিউরিক ও নাইট্রিক এসিড উৎপন্ন করে যাH+ আয়ন উৎপন্ন করে ফলে অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়।

৯. আমাদের দেশের অনেক উঁচু ও মাঝারি উঁচু পলিমাটি অম্লীয় ধরনের হয়। পিএইচ (pH) মান অনুযায়ী মৃত্তিকা তিন ধরনের হয়ে থাকে।

 

 

পিএইচ (pH) মানভিত্তিক মৃত্তিকার অম্লত্বের শ্রেণীবিন্যাস:

১. অম্লীয় মৃত্তিকা পিএইচ (pH) <৭ (সাত)

২. ক্ষারীয় মৃত্তিকা পিএইচ (pH) > ৭ (সাত)

৩. নিরপেক্ষ বা প্রশম মৃত্তিকা পিএইচ (pH) > ৭ (সাত)

অত্যাধিক অম্লতা ফসল উৎপাদনের জন্য ক্ষতিকর। মাটির বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ভিন্ন ভিন্ন পিএইচ এ গাছের জন্য সহজ লভ্য হয়। সেজন্য ফসল উৎপাদনের জন্য মাটির একটি উপযোগী অম্লত্ব নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। অধিক অম্লীয় মাটি বিভিন্ন কৌশল ও পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে সংশোধন করা যায়।

 

 

অম্লীয় মাটির বৈশিষ্ট্য :

১। অম্লীয় মাটির পিএইচ ৭ এর কম হবে।

২। মাটির অম্লত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে মাটিস্থ অণুজীব যেমন ছত্রাকের কার্যাবলী বেড়ে যায়।

৩। অম্লত্ব বৃদ্ধি পেলে অণুজীব ব্যাকটেরিয়ার কার্যাবলী কমে যায়।

৪। অম্লীয় মাটিতে নাইট্রোজেনের অপচয় কম হয়।

৫। এ মাটিতে ফসল চাষ করতে হলে চুন প্রয়োগ করতে হয়।

৬। অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও লৌহ এর আধিক্যেও মাটি বিষাক্ত হতে পারে।

৭। মাটিতে ফসফরাজ, জিংক ও কোবাল্টের সহজ লভ্যতা কমে যায়।

৮। অম্ল মাটিতে বীজের অঙ্গুরোদগম হয় না অথবা ভাল হয় না।

৯। তবে অম্ল সহনশীল ফসল যেমন আনারস, লেবু, চা, কফি ইত্যাদি অম্লীয় মাটিতে ভাল জন্মে।

 

 

অম্লতা দূরীকরণের গুরুত্বপূর্ণ উপায়সমূহ:

অম্লীয় মাটি সংশোধনের বা মাটির অম্লতা দূরীকরণের গুরুত্বপূর্ণ উপায়সমূহ নিম্নরূপ—

১. চুন প্রয়োগের মাধ্যমে:

মাটি থেকে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম অপসারিত হলে মাটিতে অম্লত্ব সৃষ্টি হয়। জমির অম্লীয় মাটি
চুন প্রয়োগ করে তাকে ফসল উৎপাদনের জন্য উপযোগী করা যায়। জমিতে বিভিন্ন চুন জাতীয় পদার্থ যেমন—কুইকলাইম

(CaOMgO), ক্যালসাইট (CaCO3), ডলোমাইট [CMgCO3)2], ম্যাগনেসাইট (MgCO3), কলিচুন Ca(OH)2. Mg (OH)2], ইত্যাদি প্রয়োগ করা হলে এগুলো বিয়োজিত হয়ে Ca++ বা Mg++ উৎপন্ন করে যা আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে মৃত্তিকা কলয়েডের H+ কে প্রতিস্থাপন করে মাটির অম্লতা কমায়।

২। জৈব সার ব্যবহার করে :

মাটিতে নিয়মিত বিভিন্ন জৈব সার, যেমন-গোবর সার, সবুজ সার, কম্পোস্ট, খামার জাত সার, কেঁচো সার, অণুজীব সার, ট্রাইকোডার্মা, বায়োপেস্টিসাইড ইত্যাদি প্রয়োগ করলে মাটির বাফার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং অম্লত্ব হ্রাস করে। মাটির বাফারিং ক্ষমতা মাটির pH পরিবর্তনে বাধা প্রদান করে এবং pH মানকে স্থির রাখে। জৈব সারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা মত্তিকা দ্রব্ ণের H+ আয়নকে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মাটির অম্লত্ব হ্রাস করে।

 

 

অম্লত্ব দূরীকরণে কয়েকটি জৈব সার:

অম্লত্ব দূরীকরণে কয়েকটি জৈব সারের ভূমিকা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

(1) সবুজ সার ব্যবহার :

সবুজ সার শস্য যেমন- ধৈঞ্চা, আলফা, শন, ছোলা, বরবটি, সয়াবিন ইত্যাদি নির্দিষ্ট বয়সে সবুজ অবস্থায় অস্ট্রীয় মাটিতে মিশিয়ে দিলে জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা মাটির বাফার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাধারণত লিগিউম জাতীয় উদ্ভিদ সবুজ সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ সকল উদ্ভি র শিকড়ে রাইজোরিয়াম ব্যাকটেরিয়া নডিউল সৃষ্টি ক্ রে যা বায়ুমন্ডলের মুক্ত নাইট্রোজেনকে সংবদ্ধ করে। মাটির নাইট্রোজেনের পরিমাণ ও বৃদ্ধি পায় এবং জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। এ সকল কারণে সবুজ সার ব্যবহারে মাটির অম্লত্ব হ্রাস পায়।

(11) বায়োফার্টিলাইজার বা অণুজীব সার ব্যবহার:

বিভিন্ন প্রকার অণুজীব সার যেমন- রাইজোবিয়াম, অ্যাজোলা, অ্যাজোটোব্যাক্টার, ইত্যাদি অম্লীয় মাটিতে ব্যবহার করার ফলে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমানে হিউমাস উৎপন্ন হয় এবং মাটির বাফার ক্ষমতা উন্নত হয়। আবার, অনুজীব সারসমূহ বায়ুমন্ডল থেকে প্রচুর পরিমানে মুক্ত নাইট্রোজেন মাটিতে ও উদ্ভিদের শিকড়ে যুক্ত করে। কাজেই, মাটিতে অম্লত্ব বৃদ্ধিকারী নাইট্রোজেন ঘটিত রাসায়নিক সার যেমন- ইউরিয়া, অ্যামোনিয়াম সালফেট, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ইত্যাদি প্রয়োগের মাত্রা কমে যায়। ফলে মাটির অম্লত্ব দূর হয়।

(111) ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার:

ট্রাইকোডার্মা পরিবেশ বান্ধব উপকারী ছত্রাক। এটি মাটি বাহিত রোগ দমন ও মাটির গুণাগুন বৃদ্ধির জন্য বিশ্বব্যাপী সরাসরি মাটিতে ব্যবহার করা হয়। এটি মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি করে এবং ক্ষতিকারক রোগের জীবাণু ধ্বংস করে। ট্রাইকোডার্মা জৈব পদার্থ দ্রুত পঁচিয়ে জৈব সার তৈরি করে যা মাটিতে মিশে মাটি অম্লত্ব, হ্রাস করে।

 

৩। বায়োপেস্টিসাইড বা জৈব বালাইনাশক ব্যবহার:

শস্য উৎপাদনে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পেষ্টিসাইড ব্যবহার করা হয়। এগুলো ব্যয়বহুল পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক এবং মাটিতে অম্লত্বের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন জৈব বালাই নাশক যেমন-নিমপাতা, তামাক, নীম বীজ, আতাপাতা, ও খেজুর পাতার নির্যাস ইত্যাদি মাটিতে ও ফসলে স্প্রে করলে মাটিবাহিত ও উদ্ভিদের পোকামাকড় দমন হয় এবং মাটির সক্রিয় H+, Al3+ এর পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে মাটির অম্লত্ব কমে যায়।

৪। সেচের পানির মান উন্নয়ন:

সেচের পানির অম্লতের কারণেও মাটির অম্লতা বৃদ্ধি পায়। সেজন্য ফসলের জমিতে সেচের পানি প্রয়োগ করার পূর্বে পানির গুণগত মান পরীক্ষা করে সেচ দিতে হবে যাতে অস্ট্রীয় মাটি সৃষ্টি হওয়া রোধ করা যায়। এক্ষেত্রে সেচের পানিতে যাতে অ্যালুমিনিয়াম (Al), আয়রন (Fe) প্রভৃতি খনিজ লবণ না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৫। অম্লীয় সারের ব্যবহার কমানো :

অম্লত্ব সৃষ্টিকারী রাসায়নিক সার বিশেষ করে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার যেমন- ইউরিয়া, অ্যামোনিয়াম
সালফেট প্রভৃতি জমিতে প্রয়োগ করলে মাটির অম্লত বৃদ্ধি পায়। সুতরাং এর বিকল্প হিসেবে ক্ষারীয় সার যেমন সোডিয়াম নাইট্রেট [NaNO3]. ক্যালসিয়ামনাইট্রেট [Ca(NO3)2], বেসিক স্ল্যাগ ইত্যাদি জমিতে ব্যবহার করে অম্লত্ব যায়।

৬। কাঠের ছাই প্রয়োগ:

মাটিতে পরিমাণ মত কাঠের ছাই প্রয়োগ করলে অম্লত্ব দূর হয়। কাঠের ছাইয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম বিদ্যমান থাকায় মৃত্তিকার অম্লতা হ্রাস পায়।

 

মৃত্তিকা অম্লত্বের গুরুত্ব:

১. মৃত্তিকার অম্লমানের সাহায্যে মাটির উর্বরতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।

২. অম্লীয় মৃত্তিকায় বীজের অংকুরোদগম ভালো হয় না এবং ফসলের বেড়ে ওঠার উপর প্রভাব ফেলে।

৩. মৃত্তিকার পিএইচ এর সাহায্যে কোন জমিতে কোন ফসল ভালো জন্মে এবং কোন সার কতটুকু পরিমাণ দিতে হবে তা জানা যায়।

৪. অম্ল মাটিতে চা, কফি, আনারস, বুস্নবেরী ইত্যাদি ফসলের বৃদ্ধি ভালো হয়।

৫. মৃত্তিকায় বিদ্যমান অণুজীবের কার্যাবলী, রাসায়নিক সারের রূপান্তর ও জৈব পদার্থের বিয়োজন অম্লত্বের কারণে হ্রাস পায়।

৬. মৃত্তিকার অম্লত্ব ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে।

৭. মৃত্তিকার অম্লতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সালফার এর দ্রবণীয়তা হ্রাস পায়।

৮. শীত প্রধান দেশে মৃত্তিকার ঢ়ঐ এর মান ৪ এর কম হলে সে জমি চারন ভূমি হিসাবে ব্যবহার করা হয় কারণ সেখানে অধিকাংশ গাছ পালা জন্মায় না অথবা দূর্বল গাছ পালা জন্মায় সেখানে উৎপাদনের হার খুবই কম।

 

সারাংশ :

মৃত্তিকা অম্লত্ব মৃত্তিকার একটি রাসায়নিক ধর্ম। মৃত্তিকা অম্লত্ব প্রকাশের একক হচ্ছে ঢ়ঐ (পিএইচ)। মৃত্তিকার অম্লত্ব ১—১৪ সংখ্যা দ্বারা উল্লেখ করা হয়। কোন মৃত্তিকার অম্লত্ব মান ৭ এর নিচে হলে অম্লীয় মৃত্তিকা বলা হয়। মৃত্তিকা অম্লত্বের কমবেশির জন্য মৃত্তিকায় উপস্থিত উদ্ভিদ পানি ও অণুজীবসমূহের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।

 

 

বিভিন্ন প্রকার খামার পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রণয়ন এর ব্যাবহারিক

কৃষি শিক্ষার কার্যকর শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না—এটি হতে হবে মাঠভিত্তিক, বাস্তবভিত্তিক এবং অনুশীলননির্ভর। এই বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের এক অন্যতম উপায় হলো খামার পরিদর্শন এবং সেই অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সুসংগঠিত প্রতিবেদন প্রণয়ন

শিক্ষার্থীরা যখন সরেজমিনে পশুপালন, হাঁস-মুরগির খামার, মৎস্য খামার, অথবা শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন খামার ঘুরে দেখে, তখন তারা কেবল বইয়ে পড়া তথ্যই নয়, বরং বাস্তব প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনার নানা দিক প্রত্যক্ষ করে শেখার সুযোগ পায়। এর ফলে তারা খামার গঠনের ধরন, পরিচালনা পদ্ধতি, খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, উৎপাদনের কৌশলসহ অনেক বিষয় সম্পর্কে বাস্তবিক ও প্রাসঙ্গিক ধারণা লাভ করে।

এই পাঠে—পাঠক্রম ১.৭—আমরা আলোচনা করব:

  • খামার পরিদর্শনের মূল উদ্দেশ্য কী

  • এটি কীভাবে করতে হয়

  • পর্যবেক্ষণের বিষয়বস্তু কী হতে পারে

  • এবং সেই অভিজ্ঞতার আলোকে কার্যকর প্রতিবেদন কীভাবে প্রস্তুত করা যায়

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু খামার ব্যবস্থাপনার মৌলিক বিষয়গুলোই আয়ত্ত করবে না, বরং হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা ও অনুসন্ধানভিত্তিক প্রতিবেদন তৈরির দক্ষতা অর্জন করবে—যা তাদের ভবিষ্যতের কৃষি-উদ্যোক্তা বা কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে আত্মবিশ্বাস ও সৃজনশীলতা গড়ে তুলবে।

বিভিন্ন প্রকার খামার পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রণয়ন এর ব্যাবহারিক

ক) বাণিজ্যিক ডেইরি (গবাদি পশু) খামার পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রণয়ন।

মূলতত্ত্ব: যে খামারে গাভী পালন করে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য উৎপাদন করা হয়, তাকে ডেইরি খামার বলা হয়।

আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনায় ডেইরি খামার একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত ডেইরি খামারগুলো দেশের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

খামার নির্বাচনের নীতিমালা:
বাণিজ্যিক ডেইরি খামার ideally লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে, উঁচু ও শুকনো জমিতে গড়ে তুলতে হয়, যেখানে—

  • সুনিশ্চিত বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ থাকবে,
  • সহজ যাতায়াত ও বাজারজাতকরণের সুবিধা থাকবে,
  • উন্নত জাতের ও অধিক দুধদানকারী গাভী পালন করা হবে।

 

🛠 প্রয়োজনীয় উপকরণ:

ক্র. উপকরণ
১। একটি বাণিজ্যিক ডেইরি খামার
২। খাতা, কলম ও প্রশ্নপত্র

 

🧭 কাজের ধারা (ধাপে ধাপে করণীয়):

. খামার পরিদর্শনের অনুমতি সময় নির্ধারণ:
খামারের মালিক বা ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে খামার পরিদর্শনের অনুমতি ও সুবিধাজনক সময় নির্ধারণ করুন।

. ছাত্রছাত্রীদের দলে বিভাজন:
পরিদর্শনকারী যদি একাধিক হন, তবে প্রতি দলে ১০-১২ জন করে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে খামার পাঠান।

. ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ:
খামার পরিচালনার নিয়মিত খরচ যেমন খাদ্য, ওষুধ, শ্রমিকের মজুরি ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করুন।

. অবস্থান সুবিধাবলী মূল্যায়ন:

  • খামারটি কোথায় অবস্থিত
  • রাস্তা, পরিবহন, বাজারের দূরত্ব
  • বিদ্যুৎ, পানি ও নিকাশির সুবিধা

. খামারের পরিকাঠামো পর্যালোচনা:

  • জমির পরিমাণ
  • গাভী ঘর, দুধ দোহনের স্থান, খাদ্য সংরক্ষণের ঘর
  • স্নানঘর ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

. গবাদিপশুর তথ্য সংগ্রহ:

  • গাভী, বকনা ও বাছুরের সংখ্যা
  • জাত, স্বাস্থ্য, ও দৈহিক অবস্থা
  • প্রতিদিন কতটা দুধ হয়

. খাদ্য পুষ্টি ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ:

  • খাদ্যের ধরন: ঘাস, দানাদার খাদ্য, খল
  • খাওয়ানোর সময়সূচি
  • পুষ্টিমানের বিশ্লেষণ

. স্বাস্থ্য চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা:

  • নিয়মিত টিকাদান ব্যবস্থা
  • পশু চিকিৎসকের উপস্থিতি
  • অসুস্থ গরুর চিকিৎসা ও আইসোলেশন ব্যবস্থা

. মানবসম্পদ বিশ্লেষণ:

  • কতজন কর্মচারী
  • তাদের দায়িত্ব: পরিচর্যা, দুধ দোহন, খাদ্য সরবরাহ, বর্জ্য পরিষ্কার

১০. উৎপাদন লাভক্ষতি পর্যালোচনা:

  • দৈনিক ও মাসিক দুধ উৎপাদন
  • বিক্রয়মূল্য, খরচ, নিট লাভ/ক্ষতি

১১. প্রতিবেদন প্রস্তুতি:
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয়ে সংগৃহীত তথ্য সাজিয়ে নির্ভুল ও প্রাসঙ্গিক একটি সুসংগঠিত ব্যবহারিক প্রতিবেদন তৈরি করুন।

 

🧾 প্রতিবেদন লেখার কাঠামো (সাজেশন):

  1. খামারের পরিচিতি
  2. পরিদর্শনের তারিখ ও সময়
  3. খামারের অবস্থান ও পরিকাঠামো
  4. গবাদিপশুর সংখ্যা ও বৈশিষ্ট্য
  5. খাদ্য, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা
  6. মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা
  7. উৎপাদন ও লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ
  8. পরিদর্শন-ভিত্তিক সুপারিশ
  9. উপসংহার

 

এই ব্যবহারিক পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞান নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারে, যা ভবিষ্যতে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা বা খামার ব্যবস্থাপক হিসেবে তাদের গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

 

 

📝 পরিদর্শন প্রতিবেদন ছক

বিভাগ বিবরণ
গবাদিপশুর বিবরণ – গাভীর ধরন ও অবস্থান:
– গাভীর জাত:
– গাভীর সংখ্যা: (বাছুর, বাহির থেকে আনা ও বর্তমান জাতি)
খামারের বিবরণ – খামারের নাম:
– খামারের ঠিকানা:
– খামারের উৎপত্তি:
– খামার প্রতিষ্ঠিত সাল ও তারিখ:
– খামারের অবস্থান:
– খামারের আকার:
– খামারে কী কী ঘর আছে
পরিচর্যা – গাভীর খাদ্য:
– রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা:
খামারের আয় ব্যয় – প্রতিদিন দুধের পরিমাণ:
– উৎপাদন:
– প্রতিদিন উৎপাদনের মূল্য:
– খামারের স্থায়ী ব্যয়:
– খামারের চলতি ব্যয়:
– মোট বার্ষিক আয় ব্যয়:
– আয়:
– খামারের বর্তমান অবস্থা/সম্ভাব্যতা – ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
– মন্তব্য:
অন্যান্য তথ্য – তারিখ:
– প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা:
– স্বাক্ষর:

 


সতর্কতা
১। খামারের গাভীকে বিরক্ত করা যাবে না।
২। খামারের মালিক বা ম্যানেজারের অনুমতি ছাড়া কোন জিনিসে হাত দিবেন না।
৩। সকল তথ্য অবশ্যই খাতায় লিখতে হবে।

 

ডেইরি খামার

 

(খ) পোল্টি্র খামার পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রণয়ন:

মূলতত্ত্ব:
বাণিজ্যিকভাবে স্থাপিত পোল্ট্রি খামারে প্রধানত ব্রয়লার বা লেয়ার মুরগি পালন করা হয়। মাংস উৎপাদনের জন্য প্লাইমউথ রক, নিউ হ্যাম্পশায়ার জাতের মুরগির মধ্যে ব্রয়লার স্ট্রেইন এবং ডিম উৎপাদনের জন্য হোয়াইট লেগহর্ন, ফাউমি জাতের মধ্যে লেয়ার স্ট্রেইন প্রজনন করা হয়। এই স্ট্রেইনগুলো খাঁটি জাতের তুলনায় অধিক উৎপাদনশীল ও লাভজনক।

 

🛠 প্রয়োজনীয় উপকরণ:

ক্র. উপকরণ
১। একটি ব্রয়লার বা লেয়ার খামার
২। খাতা, কলম

 

🧭 কাজের ধারা (পর্যায়ক্রমে করণীয়):

. অনুমতি সময়সূচি নির্ধারণ:
একটি বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামারের মালিক বা ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিদর্শনের অনুমতি ও সুবিধাজনক সময় নির্ধারণ করুন।

. দল গঠন:
ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেশি হলে ১০-১২ জন করে ছোট ছোট দলে ভাগ করুন এবং পর্যায়ক্রমে একটি দলকে খামার পরিদর্শনে পাঠান।

. খামারের অবকাঠামো পর্যবেক্ষণ:
খামারের অবস্থান, শেড বা ঘর, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সুবিধাসমূহ পর্যবেক্ষণ করে খাতায় বিস্তারিত লিখে নিন।

. মানবসম্পদ পর্যবেক্ষণ:
ম্যানেজার ও শ্রমিকদের দায়িত্ব ও কাজের ধরণ খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন এবং তথ্য লিপিবদ্ধ করুন।

. খামারের মৌলিক তথ্য সংগ্রহ:
মালিক বা ম্যানেজারের সঙ্গে আলোচনা করে নিম্নলিখিত তথ্য সংগ্রহ করুন—

  • মুরগির জাত
  • মোট মুরগির সংখ্যা
  • গড় বয়স
  • পালন পদ্ধতি (উন্মুক্ত বা ঘনবসতিপূর্ণ খাঁচা পদ্ধতি)

. ব্রয়লার খামার বিশেষ তথ্য:

  • মুরগি বাজারজাতকরণের বয়স
  • বাজারজাতকরণের সময় গড় ওজন

. লেয়ার খামার বিশেষ তথ্য:

  • ডিম দেওয়ার শুরু বয়স
  • গড় দৈনিক ডিম উৎপাদন
  • ডিম উৎপাদনের হার

. স্বাস্থ্য টিকাদান ব্যবস্থা:
মুরগির টিকা প্রদান পদ্ধতি ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করুন।

. অর্থনৈতিক তথ্য সংগ্রহ:
খামারের আয় ও ব্যয়ের বিবরণ জেনে নোট করুন।

১০. সমস্যা চ্যালেঞ্জ:
খামার পরিচালনায় যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা সংগ্রহ করুন।

১১. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
খামারের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা নিন।

১২. প্রতিবেদন প্রস্তুতি:
উপরোক্ত তথ্যগুলো সংগঠিত ও বিশ্লেষণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুসংগঠিত পোল্ট্রি খামার পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরি করুন।

 

 

 

 

 

 

⚠️ সতর্কতা পরামর্শ:

  • মালিক বা ম্যানেজারের অনুমতি ছাড়া কোনো জিনিসে স্পর্শ করবেন না।
  • খামারের মুরগিকে বিরক্ত করবেন না।
  • খামারের প্রতিটি পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সুচারুরূপে খাতায় লিপিবদ্ধ করুন।

 

এই ব্যবহারিক পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পোল্ট্রি খামারের কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনার বাস্তব চিত্র ধারণ করতে সক্ষম হবে এবং পরবর্তীতে খামার ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হবে।

কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-তথ্য সার্ভিস, কৃষি সম্প্রসারণ, এনজিও এবং কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান

কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-তথ্য সার্ভিস, কৃষি সম্প্রসারণ এবং এনজিও এবং কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটির ক্রম ১.৬।

কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-তথ্য সার্ভিস, কৃষি সম্প্রসারণ, এনজিও এবং কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান

 

 

কৃষি তথ্য সার্ভিস (Agricultural Information Service) :

কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান।

১৯৬১ সনে কৃষি তথ্য সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ১৯৮০ সনে কৃষি তথ্য সংস্থাকে কৃষি তথ্য সার্ভিস নামকরণ করা হয়। সংস্থাটি জন্মলগ্ন থেকে নিরলসভাবে গণমাধ্যমের সাহায্যে কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি তৃণমুল পর্যন্ত দ্রুত বিস্তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের সদর দপ্তর খামারবাড়ি, ফামগেট ঢাকায় অবস্থিত। মাঠ পর্যায়ে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশালসহ মোট এগারটি আঞ্চলিক কার্যালয় ও কক্সবাজারে দুটি লিয়াজেঁা অফিস রয়েছে। (তথ্যসূত্র: কৃষি তথ্য সার্ভিস)

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :

বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত আধুনিক লাগসই কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি সহজ সরল ও সাবলীলভাবে অভীষ্ট দলের কাছে বোধগম্য আকারে পেঁাছানোর ব্যবস্থা করা কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রধান লক্ষ্য। (তথ্যসূত্র: কৃষি তথ্য সার্ভিস)

 

 

কৃষি সম্প্রসারন :

কৃষি সম্প্রসারণ একটি ফলিত কৃষি বিজ্ঞান। কৃষি জ্ঞান ও কৃষি গবেষণা থেকে এর জ্ঞান আহরিত হয়। কৃষি সম্প্রসারণ মূলত: নতুন জ্ঞানের বি¯তৃতি। এটি এক দিকে কৃষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান হতে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলী সরবরাহ করে ও তাদের প্রয়োগ করতে সাহায্য করে। অন্য দিকে এটা কৃষকদের সমসস্যাবলী সংগ্রহ করে সমাধানের জন্য গবেষণাগারে প্রেরণ করে। এজন্য এটাকে দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া বলা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ (১৯৮৫) কৃষি সম্প্রসারণের সংজ্ঞায় বলেছেন, কৃষি সম্পসারণ একটি প্রক্রিয়া বা সেবা যা শিক্ষা পদ্ধতি মাধ্যমে কৃষকদের খামার পদ্ধতি ও প্রয়োগ কৌশলের উন্নয়নসহ উৎপাদন ক্ষমতা ও আয় বৃদ্ধি ও সহায়তা করে এবং পরিশেষে পল্লী জনগণের জীবন মান উন্নয়নে সহায়তা দান করে। কৃষি সম্প্রসারণের লক্ষ্য হচ্ছে কৃষকদের উৎপাদন সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করা সমস্যার বিশ্লেষণে তাদেরকে সাহায্য করা, কি উপায়ে সমস্যার সমাধান করা যায় তা শিক্ষা দেয়া এবং কৃষকদের জ্ঞান বৃদ্ধি করা যাতে তারা দক্ষতার সাথে কৃষিকাজ করে তাদের আয় বাড়াতে পারে।

 

 

কৃষি সম্প্রসারণের উদ্দেশ্য :

কৃষি সম্প্রসারণের এমন কিছু উদ্দেশ্য থাকে যাতে কৃষকের শিক্ষা দীক্ষা ও আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দেয়ার পূর্ণ স্বীকৃতি থাকে। তবে বিশেষ করে সম্প্রসারণ শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য স্থির করে। এই শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে কৃষকদের জ্ঞানে, দক্ষতায়, মনোভাবে এবং কর্মে পরিবর্তন এনে দেয়া। কৃষি সম্প্রসারণের নিম্নোক্ত উদ্দেশ্যাবলী গৃহীত হয়েছে। ড় কৃষকদের কৃষি উৎপাদন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদেরকে গবেষণালব্ধ আধুনিক কলাকৌশল সম্পর্কে জ্ঞান দান করা। ড় প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

ড় কৃষক পরিবারের সকল সদস্যের উপযুক্ত কৃষি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। ড় স্থানীয় নেতৃবৃন্দের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের স্বাবলম্বী করে তোলা। ড় বিভিন্ন অধিদপ্তর হতে প্রাপ্য তথ্য কৃষকদের সরবরাহ করা এবং কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা গবেষণাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।

 

 

কৃষি সম্প্রসারণ প্রতিষ্ঠান :

যে সকল প্রতিষ্ঠান কৃষির প্রযুক্তিসমূহ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে এবং কৃষকদের যথাযথভাবে প্রযুক্তিব্যবহারে সাহায্যে করে এবং কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যাবলী সমাধানের জন্য গবেষণাগারে প্রেরণ করে সেগুলোকে কৃষি সম্প্রসারণ প্রতিষ্ঠান বলে। কৃষি সম্প্রসারণ প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—

১. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
২. প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর
৩. মৎস্য অধিদপ্তর
৪. পাট অধিদপ্তর
৫. তুলা উন্নয়ন বোর্ড
৬. বন অধিদপ্তর

নিম্নে কয়েকটি প্রধান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচিতি দেয়া হলো:

 

 

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর :

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অধিদপ্তর। এ অধিদপ্তরের অধীনে ৯টি উইং রয়েছে। উইংসমূহ হচ্ছে—

(১) প্রশাসন এবং পার্সোনেল উইং, (২) সরেজমিন উইং, (৩) খাদ্যশস্য উইং (৪) অর্থকরী ফসল উইং (৫) উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, (৬) প্রশিক্ষণ উইং, (৭) পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন উইং, (৮) পানি ব্যবস্থাপনা ও (৯) কৃষি প্রকৌশল উইং উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী ড় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণার ফলাফলসমূহ কৃষকদের নিকট পেঁৗছে দেয়া। ড় আধুনিক কৃষি কলাকৌশল ও উৎপাদন প্রযুক্তি গ্রহণে কৃষকদের উৎসাহিত ও সাহায্য করা। ড় কৃষকদের চাহিদা, সম্পদ ও সামর্থ অনুযায়ী সর্বোচ্চ উৎপাদন লাভে সহায়তা করা।

কৃষি উপকরণসমুহের সুষ্ঠুভাবে এবং যথাসময়ে কৃষকদের কাছে সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে
যোগাযোগ রাখা। ড় কৃষি অফিসারগণের চাকরীকালীন প্রশিক্ষণদানের ব্যবস্থা করা।

কৃষি সংক্রান্ত জরুরী বার্তা ও তথ্য সামগ্রী যেমন পোষ্টার, লিফলেট, পুস্তিকা যথাসময়ে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা। ড় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের  ব্যবস্থা করা। ড় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

 

 

 

কৃষি উন্নয়নে কৃষি সম্প্রসারণ প্রয়োজনীতা :

কৃষি উন্নয়ন বলতে কৃষির পুরাতন ও অনুন্নত প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটিয়ে অধিক উৎপাদনক্ষম আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারকে বুঝায়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং উন্নত পদ্ধতি অবলম্বন করে হাঁস—মুরগী ও গবাদি পশু পালন করে অধিক ডিম, মাংস ও দুধ উৎপাদন সম্ভব। উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারে একক ফসলের পরিবর্তে বহুমুখী ফসল, নতুন ফসলের প্রবর্তন, নতুন খামার পদ্ধতি, সঠিক মাত্রায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, নতুন জাত এবং আধুনিক পদ্ধতিতে গবাদি পশু, হাস—মুরগী ও মাছের চাষাবাদ ইত্যাদি কৃষি উন্নয়নের প্রথম ধাপ। নিচে
কৃষি উন্নয়নে কৃষি সম্প্রসারণের  প্রয়োজনীতা বর্ণনা করা হল।

 

 

১. প্রযুক্তি শিক্ষায় কৃষি সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা :

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে সব প্রযুক্তি কৃষি গবেষণা থেকে উদ্ভাবিত হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ সেগুলো কৃষকদের হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে থাকে। গাছের বৃদ্ধি ও উন্নয়নে জৈব পদার্থের ভূমিকা ও জৈব সারের ব্যবহারের ফলে কি পরিমাণ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, খাদ্য হিসেবে সারের প্রয়োজনীয়তা, কোন সময়ে কোন সার প্রয়োগ করতে হয় কোন ফসলে কোন সার কি মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়, কোন প্রকার খামার পদ্ধতি অনুসরণ করা বেশি লাভজনক হবে, কোন জাতের কোন ফসল কোন সময়ে চাষ করতে হবে,

কোন সময়ে কোন ফসলে পোকার আক্রমণ বেশি, কি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পোকার আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করা যাবে ইত্যাদি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ কর্মীরা কৃষকদেরকে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। সম্প্রসারণের  এই শিক্ষার ফলে কৃষকদের কৃষি জ্ঞান উন্নত হয় এবং আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণে তারা আরও আগ্রহশীল হয়।

 

২. কৃষি উপকরণের জনপ্রিয়তা সৃষ্টিতে সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা :

কৃষি উপকরণের ব্যবহার হচ্ছে কৃষি উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অন্যতম ধাপ। কিন্তু সেই উপকরণগুলোর প্রতি আগ্রহ বা জনপ্রিয়তা না থাকলে সেগুলো তারা ব্যবহার করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে না। তাই সম্প্রসারণের  দায়িত্ব হচ্ছে কৃষি উপকরণগুলোর জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করা। এর ফলে বীজ, সার, কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক, সেচ যন্ত্রপাতি ইত্যাদি কৃষি উৎপাদনের উকরণগুলোর ব্যবহার কৃষকসমাজে দিন দিন বেড়েই চলেছে। কৃষি স¤প্রসারনের শিক্ষামূলক প্রচারের মাধ্যমে কৃষকদের দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে এবং উপকরণগুলোর জনপ্রিয়তা বহুগুণে বেড়েছে।

 

 

৩. প্রযুক্তি বিস্তারে কৃষি সম্পসারণের প্রয়োজনীতা :

কৃষি সম্প্রসারণ কৃষি প্রযুক্তি শিক্ষা দেওয়াসহ কৃষক গোষ্ঠীর মধ্যে প্রযুক্তির পূর্ণ বিস্তার ঘটিয়ে থাকে। সম্প্রসারণ কর্মীরা প্রযুক্তি সম্পর্কে কৃষকদেরকে এমনভাবে জ্ঞানদান করে যাতে তারা প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্যগুলো ভালোভাবে বিবেচনা করে

ব্যবহারের বা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সম্প্রসারণ কর্মীদের মাধ্যমে কৃষি গবেষণা হতে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলো দ্রুত বিস্তার ঘটে চলেছে। আধুনিক ধানের জাত লাইন পদ্ধতিতে চাষ, প্রত্যেক ফসলে সুষম সার ব্যবহার ইত্যাদি প্রযুক্তির বিস্তার সম্প্রসারণের  শিক্ষার ফলে ঘটে থাকে।

 

৪. স্থানীয় সম্পদ পূর্ণ ব্যবহারে কৃষি সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি সম্প্রসারণ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের নিজের যে সম্পদ আছে বা উপকরণ আছে তারই সুষ্ঠু ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়। কৃষকগণ নিজের সম্পদ ব্যবহার করে অনেক ভাবে লাভবান হতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণের  মাধ্যমে কৃষকদের গোবর সংরক্ষণ ও ব্যবহার, কম্পোষ্ট তৈরি ও ব্যবহার, নিজস্ব কৃষি যন্ত্রপাতির উন্নয়ন সাধন, পশু সম্পদের উন্নয়ন, করনীয় পদ্ধতি’ তে পোকামাকড় দমন, জমির উর্বরতার জন্য জৈব সারের ব্যবহার ইত্যাদি স্থানীয় সম্পদ পূর্ণ ব্যবহারে শিক্ষা দিয়ে থাকে।

 

 

৫. স্থানীয়’ নেতৃত্বের উন্নয়নে কৃষি সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি সম্প্রসারণের মাধ্যমে স্থানীয় নেতৃত্বের উন্নয়ন ঘটে থাকে। স্থানীয় নেতারা যাতে কৃষি ও অন্যান্য সমস্যা কৃষি সম্পসারণের নজরে আনতে পারে এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

 

বেসরকারী সংস্থা বা এনজিও

 

বেসরকারী সংস্থা বা এনজিও (NGO)

সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নয় কিন্তু সরকারের উন্নয়ন নীতিমালা অনুসরণ করে কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সমূহকে বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও বলে। মূলত গ্রামীণ দরিদ্র কৃষক ও মহিলাদের নানামুখী কল্যান সাধন করাই এনজিও গুলোর উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে অনেক এনজিও কাজ করে এবং এরা কৃষকদের তথ্য ও সেবা প্রদান করে কৃষি উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখছে।
বাংলাদেশে কৃষি নিয়ে কাজ করে এমন কিছু এনজিও হল টি এম এস এস (ঞগঝঝ), ব্র্যাক (ইজঅঈ), আরডিআরএস (জউজঝ) প্রশিকা, গ্রামীণ ব্যাংক, কারিতাস, কেয়ার, ভোসড ইত্যাদি।

এনজিওর কার্যক্রম :

বাংলাদেশে এনজিওগুলো কৃষি বিষয়ক নিম্নোক্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে—

১। কৃষকদের কৃষি উপকরণ ও কষি ঋণ সরবরাহ কৃ রে।

২। কৃষকদের কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

৩। কৃষি সমস্যার সমাধান দেয়।

৪। উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ করে।

৫। উচ্চফলনশীল জাতের ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে।

৬। কৃষি বিষয়ক তথ্য সরবরাহ করে।

৭। সেচ কার্যক্রমে সহায়তা করে।

৮। বীজ ও চারা উৎপাদন করে কৃষকদের সরবরাহ করে।

৯। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য আপদকালীন সময়ে কৃষকদের সহায়তা প্রদান করে।

 

কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান :

যে সকল উপকরণ বা দ্রবাদি কৃষি উৎপাদনের প্রয়োজন হয় তাদেরকে কৃষি উপকরণ বলে। যেমন—বীজ, কীটনাশক, সার, কৃষিজ যন্ত্রপাতি, হাঁস—মুরগির খাদ্য, মাছের সম্পূরক খাদ্য, ইত্যাদি। এসব উপকরণ ব্যবসায়িক লাভের উদ্দেশ্য বাজারজাত করা সহ এসব কৃষি উপকরণ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করে থাকে।

এসব উপকরণ উৎপাদনের ধরণ ও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন বীজ কৃষকদের দিয়ে উৎপাদন করা হয়। হাইব্রিড বীজ বিদেশ থেকে আমদানি করে সরবরাহ করা হয় অথবা নিজস্ব খামারে বর্ধন করে। আবার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কারখানা স্থাপন করে উৎপাদন করা হয়। জৈব সার দেশেই উৎপাদন করে সরবরাহ করে, রাসায়নিক সারের মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি ও গন্ধক সার দেশে উৎপাদন করে এবং অন্যান্য রাসায়নিক সার আমদানি করা হয়। কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকের কাছে উপকরণ সরবরাহ করে ও নতুন উপকরণ ও তথ্য দিয়ে কৃষকদের সেবা করে থাকে। কিছু উল্লেখযোগ্য কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হলো:

 

 

সারাংশ :
কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রম কৃষকদের কৃষি বিষয়ক শিক্ষা দেয় এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে। কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের প্রয়োজনীয় সকল কৃষি উপকরণ সরবরাহে মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন তরান্বিত করছে। এছাড়াও কৃষক তথা কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন এনজিও এর অবদান ও যথেষ্ট।

 

বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান , পাঠ-১.৫

বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান , কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কষি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করা যায় তাদের কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে। কষি উন্নয়নে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য বেশ কয়েকটি কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে।

বাংলাদেশের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান 

কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীবিভাগ :

ক. স্তরভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ |
তরভিত্তিক কৃষি শিক্ষায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৫টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা :

(১) মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
(২) উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
(৩) সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
(৪) স্নাতক ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
(৫) স্নাতকোত্তর ও তদূর্ধ ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

খ. সনদ প্রদানভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ সনদ প্রদানের উপর ভিত্তি করে কৃষি প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।

(১) সার্টিফিকেট/ডিপ্লোমা সনদ প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
(২) স্নাতক ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
(৩) স্নাতকোত্তর ও তদূর্ধ ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

নিচে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচিতি দেয়া হল:

১. মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃষি শিক্ষা একটি বিষয় হিসাবে পাঠদান করা হয়। আমাদের দেশের সকল মাধ্যমিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কৃষি শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং ৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে কৃষি শিক্ষা ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে কৃষি বিষয়ে পৃথকভাবে সনদ দেয়া হয় না।

২. উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃষি শিক্ষা ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠদান করা হয়। কৃষি শিক্ষা বিষয়টি সকল বিভাগের অর্থাৎ মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান শাখার ছাত্র—ছাত্রীরা ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে পড়তে পারে। বাংলাদেশের সকল উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কলেজসমূহ এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানেও কৃষি বিষয়ে আলাদাভাবে সনদ দেয়া হয় না।

৩. সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পাঠদান শেষে সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা প্রদান করে। এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের একাডেমিক কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণাধীন বর্তমানে সরকারিভাগে ১৬টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ২টি ভেটেনারী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ২টি লাইভস্টক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কৃষিতে সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা প্রদান করে থাকে। বর্তমানে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এ ৪ বছর মেয়াদী কৃষি ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়েছে। বেসরকারী পর্যায়ে ১০০টির ও বেশী কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চালু আছে।

৪. স্নাতক ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করে তাকে স্নাতক ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে। যেমন শেখ ফজিলাতুনন্নেছা ফিসারিজ কলেজ জামালপুর।

৫. স্নাতকোত্তর ও তদুর্ধ ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষিতে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ও তদূর্ধ ডিগ্রি প্রদান করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বি.এস.সি, এম. এস. এবং পি. এইচ.ডি. ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। যেমন—বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাঃ

১. সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান
ক) কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সরকারি : ১৬ টি, যথা—

খ. লাইভস্টোক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট : ২টি যথা— (১) লাইভস্টোক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, গাইবান্ধা, (২) লাইভস্টোক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সিলেট।

গ. ভেটেরিনারী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট : ২টি যথা—

(১) ভেটেরিনারী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ (২) ভেটেরিনারী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, আলমডাঙ্গা, কুষ্টিয়া।

২. স্নাতক ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (কলেজ)

(১) শেখ ফজিলাতুন্নেছা ফিসারিজ কলেজ, জামালপুর।

 

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

 

৩. স্নাতকোত্তর ও তদূর্ধ ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (বিশ্ববিদ্যালয়)
(১) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
(২) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর,
(৩) হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর
(৪) শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
(৫) পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী
(৬) চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী ও এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
(৭) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

উপরোল্লিখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আরও বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোতে কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠদান পূর্বক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। নিচে এরকম কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়া হল— ১. বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
৩. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী
৪. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
৫. খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) বাংলাদেশে কৃষি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ও প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৩ সালের ১৮ আগস্ট জাতীয় শিক্ষা কমিশন, খাদ্য ও কৃষি কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ঘোষিত হয় “পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ”। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী ১৯৬১ শিক্ষা বর্ষে স্থাপিত হয় পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ বিশ্ববিদ্যালয় নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রাখা হয়। ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর
পশ্চিম তীরে এক মনোরম পরিবেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কার্যাবলী মূলদায়িত্ব
স্নাতক, মাস্টার্স ও পি.এইচ.ডি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষকদের মাঝে সু—সংযোগ স্থাপন করা।

অন্যান্য কাজ
কৃষি উন্নয়নে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি কৃষকদের কাছে পেঁৗছে দেয়া।

গবেষণা
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার গবেষণা, ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান বাউরেস (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম) এর মাধ্যম পরিচালিত হয়। নিরলস গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গত ৪০ বছরে যেসব প্রযুক্তি উদ্ভাবন
করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে।
১. উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত : বাউ ৬৩, বাউ ১৬;
২. সয়াবীনের জাত সোহাগ, জি—২;
৩. সরিষার জাত সম্পদ, সম্বল;
৪. জীবানু সার;
৫. কলা উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি
৬. সয়েল টেস্টিং কিট;
৭. ধান ক্ষেতে মাছ চাষ প্রযুক্তি;
৮. কৃত্রিম পশু প্রজনন প্রযুক্তি;
৯. সার ছিটানো যন্ত্র
১০. গরু মোটা তাজা করণ প্রযুক্তি
১১. ভাসমান খাচায় মাছ চাষ প্রযুক্তি
১২. কুলের জাত: বাউকুল—১; বাউকুল—২; বাউকুল—৩;

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ব শে মু র কৃ বি)

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের আর্থ সামাজি উন্নয়ন মূলত কৃষি উন্নয়নের উপর নির্ভরশীল। কৃষিখাতে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জনের জন্য উচ্চতর কৃষিজ্ঞান ও সঠিক প্রযুক্তি দরকার। এই বাস্তবকে সামনে রেখে ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। গাজীপুর জেলার সালনা নামক স্থানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান।

অন্যান্য কাজের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি তথ্য কৃষক ও ব্যবহারির কাছে হস্তান্তর করা।

গবেষণা
কৃষি শিক্ষাকে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ করে তুলতে গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। অব্যাহত গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সূচনালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে।

১. বারমাসী সাদা ও বারমাসী বেগুনি নামে শিমের দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে, যা সারা বছর চাষ করা যায়।

২. মটরশুটির তিনটি অত্যাধুনিক জাত যা কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

৩. ইপসা নামে পেয়ারার একটি বারমাসী জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

৪. ঢেড়শের ভাইরাস প্রতিরোধী জাত, পেঁয়াজের দুটি উচ্চফলনশীল জাত, চীনা বাধাকপির জাত, বারমাসী টমেটোর জাত, স্বল্প মেয়াদী উচ্চ ফলনশীল মুগডালের জাত ইত্যাদি উদ্ভাবন করা হয়েছে।

৫. পেঁপের পুরুষ ও স্ত্রী উভয় গাছেই ফুল ও ফল হয় এমন জাত (গাইনোডাইয়োসিয়াস জাত) মাটি ও গাছের অভ্যন্তর হতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণ ও অণুজীব সার হিসেবে এর ব্যবহার বিষয়ক গবেষণা। কৃষি গবেষণা ও কৃষি তথ্য সেবায় বিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশেষ করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ অভিজ্ঞ কৃষিবিদ ও মানসম্পন্ন কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

কৃষি গবেষণা কি?

গবেষণা হচ্ছে নতুন জ্ঞান উন্নয়নের চাবিকাঠি এবং গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের উন্মেষ ঘটানো। গবেষণা শব্দটির মুল ইংরেজী প্রতিশব্দ হচ্ছে “জবংবধৎপয” সাধারণভাবে গবেষণা বলতে অজানা কোন কিছুকে অনুসন্ধান করে জানা বা স্পষ্ট ধারণা লাভ করাকে গবেষণা বলে। কৃষি গবেষণা বলতে বুঝায় কৃষি বিষয়ক কোন সুনির্দিষ্ট বিষয়কে বৈজ্ঞানিক ও ক্রমানুযায়ী অনুসন্ধান করে তথ্য উদঘাটন করাকে কৃষি গবেষণা বলে। অর্থাৎ কৃষি সংক্রান্ত নানা বিষয়াদি নিয়ে গবেষণা করাকে কৃষি গবেষণা বলে।

 

কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষির সার্বিক উন্নয়নকে নিমিত্তে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য কৃষি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান
চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষিগবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে।

১. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর

২. বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর

৩. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ঢাকা

৪. বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ

৫. বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঈশ্বরদী

৬. বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

৭. বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, সিলেট

৮. বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম

৯. বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাভার

১০. পশু চিকিৎসা গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

১১. বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ

১২. বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী

১৩. মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৭৬ সালের ৪ঠা আগস্ট তারিখে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর প্রধান কার্যাবলী গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলী ও উদ্দেশ্য নিচে দেওয়া হল :

১. ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন এবং উদ্ভাবিত জাতসমূহ চাষাবাদের জন্য অনুমোদনের ব্যবস্থা করা।

২. ফসল উৎপাদনের জন্য আধুনিক কলাকৌশল উদ্ভাবন করা।

৩. চাহিদা অনুযায়ী দেশে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা।

৪. কৃষি উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম কর্মশালা ইত্যাদির আয়োজন করা।

৫. উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শনের জন্য মাঠ দিবসের আয়োজন করা।

৬. বিভিন্ন ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় ও রোগবালাই থেকে ফসল রক্ষার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।

৭. ফসলের উপর বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্বন্ধে পুস্তিকা, পোস্টার লিফলেট তৈরি করা এবং প্রচার করা।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিউট ১৯৭০ সালের ১লা অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে অবস্থিত। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী নিচে দেওয়া হল:

১. ধানের নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা।

২. বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে ধান ফসলকে রক্ষার কৌশল সহনশীল জাত উদ্ভাবন করা।

৩. বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের হাত থেকে ধান ফসলকে রক্ষা করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।

৪. আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা এবং জাত ও কলাকৌশলের তথ্য বিনিময় করা।

৫. ধান চাষের সঙ্গে সম্পর্কিত পুস্তিকা, বই প্রকাশ, পোষ্টার লিফলেট তৈরি করা ও কৃষকের মাঝে বিতরণ করা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল :

১৯৭৩ সালের ৫ই এপ্রিল ঢাকার ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় কৃষি গবেষণাকে জোরদার করা এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কর্মসূচী প্রণয়ন ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করে থাকে। নিচে এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী দেওয়া হল :
১. কৃষিক্ষেত্রে বিদেশী সহায়তার ব্যবহার সম্পর্কে ও গবেষণা পরিচালনার জন্য সরকারকে পরামর্শ প্রদান করা।
২. নতুন গবেষণা ইনস্টিটিউট, গবেষণা কেন্দ্র, তথ্য কেন্দ্র, জার্ম প্লাজম সেন্টার, যাদুঘর, হারবেরিয়াম, গ্রন্থাগার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করা।
৩. এনএ আর এস ভুক্ত ইনস্টিটিউটসমূহের গৃহীত ও সম্পাদিত কার্যক্রম একট বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা মূল্যায়ন করা।
৪. কৃষি বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন সেমিনার সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট :

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং স্বায়ত্বশাসিত। নিচে এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী দেওয়া হল:

১. পরমাণু শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উন্নতমানের অধিক ফলনশীল ধান, পাট, ডাল, তেলবীজ, সবজি জাতীয় শস্যের জাত উদ্ভাবন করা।

২. উদ্ভাবিত জাতসমূহের কৃষি তাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা ও মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো।

৩. বিভিন্ন ফসলের জন্য সার সুপারিশমালা প্রণয়ন, বোরাগ ও পোকামাকড় দমনের পদ্ধতি সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করা।

৪. মাটির ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যাবলী নিরূপণ, আর্থ—সামাজিক গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তি কৃষকের নিকট হস্তান্তর করা।

৫. বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা ও একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করা।

কৃষি গবেষণার গুরুত্ব প্রকৃতিকে গভীরভাবে বুঝবার ও এর রহস্যকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টাকেও সহজ ভাষায় বিজ্ঞান বলা যেতে পারে। এ প্রচেষ্টাকে ব্যাপক ও সুষ্ঠভাবে রূপ দিতে গিয়েই গবেষণার প্রচলন হয়েছে। গবেষণার ব্যাপকতা বর্তমান পৃথিবীর একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য।

গবেষণার পরিধি শুধু বস্তু জগতেই সীমাবদ্ধ নেই, জীবজগত, ভাবজগত এবং সামাজিক জীবনও এর উর্বর ক্ষেত্র হয়ে পড়েছে। মূলত: এসব গবেষণালব্ধ ব্যপ্তি ও সমষ্টি জীবনে রূপায়িত করেই বিভিন্ন দেশ উন্নতি করে চলছে। তাই যে দেশ গবেষণায় যত বেশি অগ্রসর সে দেশ ততই উন্নত। অপরদিকে অনুন্নত দেশের একটাই লক্ষণ হল গবেণার প্রতি অবহেলা। উদারহরণস্বরূপ জাপান স্বাধীনতা লাভের পর সে দেশটিতে তখন দারুন খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছিল।

সে দেশের মানুষ তখন গাছের লতা পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করেছিল। পরবর্তীতে তারা গবেষণা শুরু করল কিভাবে গাছের লতাপাতা ও ক্ষুদ্র অনুজীবকে কাজে লাগিয়ে মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটানো যায়। তারা কৃষি গবেষণার মাধ্যমে আজ বিশ্বের বুকে উন্নত দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

আমাদের দেশে ক্রমেই জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। কিন্তু আবাদী জমির পরিমাণ দারুণভাবে হ্রাস পাচ্ছে। অধিকন্তু রাসায়নিক পদার্থ ও ভূ—গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারে ইতোমধ্যে মৃত্তিকা সম্পদ ও পরিবেশে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতিকর প্রভাব বাড়ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগজনিত ফসলহানির ঝঁুকির। তদুপরি এই ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা মেটাতে আমাদের ফসলের উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে হবে।

তাই উন্নত দেশগুলোর সাথে যেতে হলে আমাদের কৃষি গবেষণার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

সারাংশ :
কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটগুলো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক কৃষি বিজ্ঞানী তৈরি করছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নকে তরান্বিত করছে।

 

বাংলাদেশ কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-কৃষক, বিদ্যালয়, ইন্টারনেট এবং ই-কৃষি , পাঠ-১.৪

বাংলাদেশ কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-কৃষক, বিদ্যালয়, ইন্টারনেট এবং ই-কৃষি , নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা কৃষি উন্নয়নের মুল চাবিকাঠি। কিন্তু শুধু কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেই হবে না, পাশাপাশি এটি কৃষকের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দিতে হবে যাতে কৃষক এর সুফল পেতে পারে। কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন থেকে কৃষকের কাছে হস্তান্তর পর্যন্ত দ্রুত প্রবাহের ব্যবস্থা, অবাধ ও সময়োপযোগী হতে হবে। তথ্য প্রবাহ সঠিকভাবে তথ্য ব্যবহারকারীর কাছে পেঁৗছাতে হবে যাতে এটি তথ্য ব্যবহারকারীর বোধগম্য হয় এবং প্রযুক্তির সুফল যথাযথভাবে মানব কল্যাণে কাজে লাগে।

বাংলাদেশ কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস-কৃষক, বিদ্যালয়, ইন্টারনেট এবং ই-কৃষি , পাঠ-১.৪

কৃষি তথ্য ও সেবায় বাংলাদেশে কৃষি ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় নতুন নতুন তথ্য সেবা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদি বেশ এগিয়ে গেছে এবং কৃষি তথ্য প্রবাহে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলছে।

অভিজ্ঞ কৃষক/কৃষাণী
কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে ৭০—৮০% লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। এর মধ্যে ৪৭ ভাগের মত লোক শুধু কৃষির উপর নির্ভর করে জীবন নির্বাহ করে। এ সকল কৃষক জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে কৃষি কাজে নিয়োজিত থাকেন। এ কারণে মাঠ ও উদ্যান ফসল, বনায়ন, মৎস্য চাষ, হাঁস—মুরগি ও গবাদি পশু পালন ইত্যাদি বিষয়ে কৃষকদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। ফসল চাষের বিভিন্ন কলাকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। কাজেই ফসল চাষ থেকে শুরু করে মাছ চাষ, পোল্টি্র পালন, গবাদি পশু পালন ইত্যাদি কৃষি বিষয়ক সমস্ত কাজের তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস হিসেবে আমাদের দেশের অভিজ্ঞ কৃষকেরা যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারেন।

কৃষক বিদ্যালয়
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত কৃষক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে কৃষকরা বিভিন্ন তথ্য সেবা পেয়ে থাকেন। এই সকল বিদ্যালয়ে কৃষকদের বিভিন্ন নতুন কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হয় যেমন, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম), সমন্বিত ফসল ব্যবস্থাপনা

(আইসিএম) ও সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা (আইএফএম) ইত্যাদি। এ তথ্য সমৃদ্ধ জ্ঞান তারা কৃষি কাজে সরাসরি বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারেন। কৃষি চিত্র ১.৪.১ : কৃষক বিদ্যালয় সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশের ৩৩৫ টি উপজেলায় কৃষক মাঠ স্কুল স্থাপন করেছে। সারা দেশে মোট ১১ হাজার ৪৭০ টি কৃষক মাঠ স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ২ হাজার ৫৯৭ জন কৃষক/কৃষাণীকে প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বিদ্যালয়গুলোতে ফসলের ব্যবস্থাপনা কলা—কৌশলের উপর কৃষকদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য একদল কৃষক—কৃষাণীকে অনানুষ্ঠানিকভাবে হাতে কলমে মৌসুমব্যাপী মাঠ ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

একটি বিদ্যালয়ের মাধ্যমে ৫০ জন কৃষক—কৃষাণীকে একটি মৌসুমের পুরো সময় ধরে ২০টি অধিবেশনের মাধ্যমে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রতিটি অধিবেশনের সময় ৩—৪ ঘন্টা। এর মধ্যে মহিলাদের জন্য ৪টি , পুরুষ ও মহিলাদের যৌথ ৫টি এবং কৃষকদের ১১টি অধিবেশন। প্রশিক্ষকের কাছ থেকে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক শিক্ষা গ্রহণ করে কৃষকরা একাকী বা দলীয়ভাবে পরীক্ষা প্লট ও প্রদর্শনী স্থাপন করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহণ করেন।

এখানের শিক্ষাদান পদ্ধতি হলোপারস্পরিক অংশগ্রহণমূলক করে শেখা, দেখে শেখা, অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে শেখা ও আবিষ্কার প্রক্রিয়ায় শেখা। এতে বয়স্ক কৃষকরাও খুব ভালোভাবে শিখতে পারেন এবং নতুন কিছু আবিষ্কার বা শেখার আনন্দে প্রশিক্ষণের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। তাই কৃষক মাঠ স্কুলের প্রশিক্ষণ কৃষকদের জন্য প্রায়োগিক ও বাস্তবসম্মত। ভবিষ্যতে এই প্রশিক্ষিত কৃষকদের মাধ্যমেই অন্যান্য কৃষকেরা তথ্য ও সেবা পাবে।

কৃষকসভা ও উঠোন বৈঠক
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কৃষি অফিস প্রায় প্রতি মাসে অথবা প্রয়োজন অনুসারে মাঝে মাঝে কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে যে সভা বা বৈঠক করে তাকে কৃষক সভা বা উঠোন বৈঠক বলে। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি হস্তান্তরে উদ্বুদ্ধ করা, কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধন দেওয়া। কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কৃষকদের সাথে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অথবা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাগণ মতবিনিময় করেন। এছাড়াও হঠাৎ কোন সমস্যা হলে যেমন ধান
ক্ষেতে পোকার আক্রমণ হলে তাৎক্ষণিক ফসলের মাঠে কৃষক সভা করা হয়। মত চিত্র ১.৪.২ : কষকসভা ও উঠোন বৈঠক বিনিময়ের ফলে জ্ঞান ও তথ্যে দুর্বল কৃষকের জ্ঞান বাড়ে এবং কাজে আগ্রহী হয়। এভাবে কৃষক সভা বা উঠোন বৈঠক কৃষির তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে।

ইন্টারনেট
ইন্টারনেট হল ইলেকট্রিক যোগাযোগের মাধ্যমে যেটি অনেকগুলো কম্পিউটারকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় সংযুক্ত করে এবং তথ্যের আদান প্রদান ঘটায়। কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তিতে ইন্টারনেটের ভূমিকা অনিস্বীকার্য। কৃষি তথ্যের বৃহৎ ভান্ডারে হচ্ছে ইন্টারনেট ওয়েবসাইট। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কৃষি বিষয়ক যেকোন তথ্য সমস্যার সমাধান অনায়াসে স্বল্প সময়ে পাওয়া যায়।

ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা :

১। ভিডিও কনফারেন্সিং : ইন্টারনেট ব্যবহার করে কৃষি বিশেষজ্ঞগণ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কৃষকদের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন এবং কৃষকদের সমস্যার সমাধান দিতে পারেন।

২। ই—মেইল : কৃষি বিষয়ক যেকোন তথ্য ইমেইলের মাধ্যমে একজন আরেক জনের নিকট অতি দ্রুত পাঠাতে পারে।

৩। তথ্য সরবরাহ : ইন্টারনেটের মাধ্যমে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান, তথ্য—উপাত্ত, গবেষণাপত্র সহ সর্ব প্রকার তথ্যও আদান প্রদান করা যায়।

৪। গবেষণা : কৃষিবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফলাফল এবং নিজেদের গবেষণা প্রকাশ করার জন্য ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল।

৫। বাজার দর ও কেনাবেচা : বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার বিভিন্ন কৃষি পণ্যের বাজার দর সম্পর্কে হাল নাগাদ তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইনের কৃষি পণ্য ক্রয় বিক্রয়ও করা যায়। যাকে বর্তমানে ই—কমার্স বলা হয়।

ই—কৃষি :

ই—কৃষি বলতে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে কৃষির বিভিন্ন সেবার আদান—প্রদানকে বোঝায়। বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রে ই—সেবার প্রভাব লক্ষণীয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে ই—কৃষির বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে কৃষিতে ইলেকট্রনিক সার্ভিস বা ই—সেবার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সরকার আধুনিক মানসম্মত আইসিটি কেন্দ্র চালু করেছে।

ওয়েবসাইটের মাধ্যমে (িিি.ধরং.মড়া.নফ) কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন সমসাময়িক তথ্য সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসই প্রথম গ্রাম পর্যায়ে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি) স্থাপন করে কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের সূত্রপাত করেছে। এ কেন্দ্রগুলোতে ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার, মডেম সরবরাহ করা হয়েছে। ই—বুক তৈরির মাধ্যমে আরো সহজভাবে কৃষি তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। টেলিভিশনের মাধ্যমে অনলাইনে সরাসরি ভিডিও চিত্র প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং তথ্য প্রাপ্তির জন্য ‘কিয়স্ক’ তৈরি করা হচ্ছে।

টেলিভিশন ও বেতার :

কৃষি তথ্য সার্ভিসের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘মাটি ও মানুষ’ সপ্তাহে ৬ দিন সম্প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়া জাতীয় সংবাদের সাথে বিশেষায়িত সংবাদের অংশ হিসেবে কৃষি সংবাদ প্রচারের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়। এক্ষেত্রে চ্যানেল আই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তারাই প্রথম ১৯ জানুয়ারী ২০০৮ সাল থেকে কৃষি সংবাদ প্রচার শুরু করে। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ থেকে বিটিভির সংবাদে এবং ৬ এপ্রিল ২০০৮ থেকে বাংলাদেশ বেতারে কৃষি সংবাদ প্রচার হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য চ্যানেলগুলো এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে।

 

মোবাইল ভিত্তিক কৃষি তথ্য সেবা :

মোবাইল ভিত্তিক কৃষি তথ্য সেবা দেয়ার জন্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও প্রাকটিক্যাল একশন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘কৃষি কল সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে। এই কল সেন্টার থেকে কৃষি বিশেষজ্ঞগণ সরাসরি যেকোন সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়া কৃষি তথ্য সার্ভিস, এটুআই প্রকল্প এবং বাংলালিংকের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে যেটি মোবাইল এসএমএস ভিত্তিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এছাড়াও উপজেলা ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকায় সন্নিবেশিত মৃত্তিকা উর্বরতাবিষয়ক তথ্য উপাত্ত জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল তথ্য রূপান্তর করা হয়েছে। এ তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাটলিস্টের সহযোগীতায় অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন সিস্টেম নামক সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। যা পরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন সার্ভিস হিসেবে চালু করা হয়।

অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন সার্ভিস ব্যবহারের ফলাফলঃ

ক) সারের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে।

খ) মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে এবং মাটির স্বাস্থ্যের উন্নয়ন হবে।

 

গ) ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ঘ) মটি ও পানি দুষণ কমে যাবে। পরিশেষে, বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ রুপকল্প—২০২১ বাস্তবায়নের ই—কৃষির বিকল্প নেই। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির সুযোগ সুবিধা ব্যপক বি¯ৃÍতি লাভ করেছে । এ সমস্ত তথ্য ও সেবাপ্রদানকারী উৎসের মধ্যে সামগ্রিক সহযোগিতা ও সমন্বয় শক্তিশালী করতে পারলে কৃষক তথ্য ও কৃষির উন্নয়ন আরও বেগবান হবে।

সারাংশ :

নতুন কৃষি প্রযুক্তি কৃষকের কাছে পেঁৗছানোর জন্য বিভিন্ন কৃষি তথ্যসেবা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এছাড়া কৃষক বিদ্যালয় কৃষক সভা ও উঠোন বৈঠক এর মাধ্যমে কৃষকরা নবুতন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে কৃষকরা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পায় এবং তাদের কৃষি পণ্য ক্রয় বিক্রয় করার সুযোগ পায়।

বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্র-মৎস্য, গবাদিপশু ও পোলট্রি

বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্র-মৎস্য – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “গবাদিপশু ও পোলট্রি” বিষয়ের, ১.৩ নং পাঠ।

 

বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্র-মৎস্য, গবাদিপশু ও পোলট্রি

 

মৎস্য :

মৎস্য উৎপাদন কৃষি ব্যবস্থার একটি গুরত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এ উৎপাদন ব্যবস্থার ভৌত পরিবেশ হচ্ছে নদী, নালা, খাল, বিল, হাওর, বাঁওর, পুকুর, ডোবা, দীঘি, হ্রদ, নদ-নদী এবং সমুদ্র ইত্যাদি। এছাড়াও বর্তমানে পতিত জমি ও ফসলের জমি খনন করে এবং ঘের তৈরী করেও মাছের চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি ফসলের পরেই মাছের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের মানুষের শতকরা ৬০ ভাগ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করে মাছ।

 

মৎস্য প্রজাতি ও এর চাষ (Fish species and cultivation):

মাহ শীতল রক্ত বিশিষ্ট জলজ মেরুদন্ডী প্রাণী। এদের দেহে জোড় বক্ষ শ্রেণি পাখনা থাকে। প্রতিটি পাখনার মাঝে কাঁটা থাকে। এরা ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়। মৎস্য বলতে সকল জলজ প্রাণী যেমন-মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, ঝিনুক, ডলফিন ইত্যাদিকে বোঝায়। মাছের প্রজাতির সংখ্যা ২০,০০০ এর মত। বাংলাদেশে স্বাদু ও লোনা পানিতে মাছের প্রজাতির সংখ্যা যথাক্রমে ২৯৬ ও ৫১১ (কৃষি তথ্য সার্ভিস, ২০১৫)।

 

মৎস সম্পদের অবকাঠামো:

বাংলাদেশে মৎস্য হ্যাচারীর সংখ্যা ৯০২টি। এর মধ্যে সরকারি ৮৯টি এবং বেসরকারি ৮১৩টি। গলদা হ্যাচারি ৩৬টি (সরকারি ১৭টি, বেসরকারি ১৯টি) এবং বাগদা হ্যাচারি ৪৯টি (বেসরকারি)। বাংলাদেশে মৎস্য। চিংড়ি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৬টি, মৎস্য প্রশিক্ষণ একাডেমি ১টি, মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট ৪টি, চিংড়ি প্রদর্শনী খামার ২টি। মৎস্য হ্যাচারি/মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ১৩৬টি। চিংড়ি আহরণ ও সেবা কেন্দ্র ২০টি। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) ৯টি এবং মৎস্য গবেষণার জন্য উপকেন্দ্র ১০টি।

 

মাছ উৎপাদনের গুরুত্ব:

বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনের জন্য খুবই অনুকুল এবং পানি সম্পদে সমৃদ্ধ। ১৯৮০ সালে প্রথম বাংলাদেশে বিদেশী মৎস্য প্রজাতির চাষ বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়। এ সময় থেকে পতিত জমি, ধান ক্ষেত, ডোবা, নালা ও হাজামজা পুকুরকে মাছ চাষের উপযোগী করে তোলা হয়। বিভিন্ন ধরনের বিদেশী মৎস্য প্রজাতি যেমন কার্প, সিলভার কার্প, পাঙ্গাশ, মিরর কার্প, থাই সরপঁুটি, তেলাপিয়া ইত্যাদি বাংলাদেশে ব্যপক হারে চাষ হয়। এতে মাছের বাজারমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসে এবং টাটকা মাছ বাজারে পাওয়া যায়। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক সফলতা লাভ করেছে। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন ৪র্থ স্থান দখল করেছে। মানুষের আমিষের ঘাটতি কমে আসছে এবং মাথাপিছু মাছ খাবার পরিমান বেড়ে গেছে। জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ২০১৫—১৬ অর্থবছরে ৩.৬৫%।

 

 

মাছ উৎপাদনে পারিবারিক ও জাতীয় উন্নয়নে ভুমিকা :

১। মাছ বাংলাদেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস।
২। মাছ উৎপাদন, পরিচর্যা, বাজারজাতকরণ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপনন ইত্যাদি বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করে।
৩। মাছের উপজাত থেকে প্রস্তুুতকৃত ফিস মিল, জৈব সার ও পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৪। ফসল—গাভী, হাঁস, মুরগী ও মাছের সমন্বিত চাষ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
৫। মাছের তেল, সাবান, ঔষধ, গ্লিসারিন, বার্নিশ প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহার হয়।
৬। মাছের কাঁটা, দাঁত, লেজ ইত্যাদি থেকে সৌখিন দ্রব্য প্রস্তুুত করা হয়।
৭। বাংলাদেশ হিমায়িত মাছ, চিংড়ি, শুটকি, লবণজাত মাছ এবং অন্যান্য মৎস্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
৮। মৎস্যজাত শিল্প কারখানা যেমন বরফ তৈরী, জাল বুনন ও মেরামত, মাছ ধরার অন্যান্য উপকরণ তৈরি শিল্প গড়ে উঠেছে।

 

মাছের প্রতিবেশ :

মাছের প্রতিবেশ দু’ধরনের:

১। আভ্যন্তরীন জলাশয় ২। উন্মুক্ত জলাশয়

১। আভ্যন্তরীন জলাশয়:

দেশের স্থুলভাগে যে সমস্ত জলাশয় রয়েছে তাই আভ্যন্তরীণ জলাশয়। আভ্যন্তরীন জলাশয়ের প্রকারভেদ:

 

১. মুক্ত জলাশয়:

নদী, সুন্দরবন, কাপ্তাই লেক, বিল, হাওর ইত্যাদি। এই মুক্ত জলাশয়ের জমির পরিমাণ প্রায় ৩৯১৬৮২৮ হেক্টর ( কৃষি তথ্য সার্ভিস, ২০১৫)।

 

২. বদ্ধ জলাশয়:

পুকুর, ডোবা ও দীঘি। মোট আয়তন ৭৮২৫৫৯ হেক্টর।

 

৩. বাঁওর:

নদীর প্রবাহ বাধা প্রাপ্তির জন্য নদীর কিছু অংশ বদ্ধ জলাশয়ের সৃষ্টি করে, একেই বাঁওর বলে। এদেশে বিভিন্ন আকারের প্রায় ৮০ টি বাঁওর আছে। কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও সিলেট জুড়ে এই বাঁওরগুলোর অবস্থান এবং আনুমানিক মোট আয়তন ৫.৪৮৮ হেক্টর।

 

৪. চিংড়ির ঘের প্রতিবেশ:

জোয়ারের পানি আটকিয়ে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকা যেমন খুলনা, বাগেরহাট সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামে বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের খামারগুলো অবস্থিত। অধিকাংশ ঘের দেশীয় পদ্ধতিতে করা হয়। ঘের চাষের মোট আয়তন ১৭৫২৭৪ হেক্টরের মত। গলদার ফলন ৫০০—৬০০ কেজি এবং বাগদার ফলন ২৫০—৩০০ কেজি হেক্টরে। ( কৃষি তথ্য সার্ভিস, ২০১৫)

 

৫. লেক বা হ্রদ:

কৃত্রিম বা স্বাভাবিক বৃহৎ আকারের বদ্ধ জলরাশিকে লেক বা হ্রদ বলে। যেমন ফয়েজ লেক, কাপ্তাই লেক।

 

 

 

উন্মুক্ত জলাশয় (আয়তন ৩৯১৬৮২৮ হেক্টর)।

 

গবাদি পশু:

বাংলাদেশের কৃষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল গবাদি পশু। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্বলিত পশু গৃহে স্থায়ীভাবে লালন পালন করে আসছে, এদেরকে গবাদি পশু বলা হয়। বাংলাদেশে গৃহপালিত পশুর মধ্যে গরু, মহিষ,
ছাগল, ভেড়া প্রধান।

গবাদি পশু হতে প্রাপ্ত উপজাত দ্রব্যসমূহ :

গবাদি পশু জবাইয়ের পর বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল খাদ্য অনুপযোগী দ্রব্য জমা হয় সেগুলোকে গবাদিপশুর উপজাত দ্রব্য বলা হয়। এগুলো হল বর্জ্য মাংস, হাঁড়, রক্ত, নাড়িভূড়ি, মলমূত্র ইত্যাদি। এ উপজাতদ্রব্যগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে বিভিন্ন কাজে লাগানো যেতে পারে। আবার এগুলো যথাযথ সংরক্ষণের পরিবেশ ও দূষণের হাত থেকে রক্ষা পায়। উপজাতগুলো দিয়ে উৎকৃষ্ট জৈব সার ও মাছের খাদ্য তৈরি করা যায়। হাড় ও শিং বিভিন্ন সৌখিন দ্রব্য তৈরিতে কুটির শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

 

গবাদি পশুর গুরুত্ব :

আমাদের জীবনে গবাদি পশুর গুরুত্ব অনেক। নিম্নে গবাদি পশুর নানাবিধ গুরুত্ব তুলে ধরা হলো:

১. জমি চাষ করতে গরু—মহিষ ব্যবহৃত হয়।

২. শস্য মাড়াই করতে গরু মহিষ ব্যবহার করা হয়।

৩. পণ্য পরিবহনের জন্য গরু, মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়।

৪. তেলের ঘানি, আখ মাড়াই মেশিন ইত্যাদি পরিচালনায় প্রয়োজনীয় শক্তি গরু মহিষের মাধ্যমে পাওয়া যায়।

৫. প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস হল গবাদি পশুর মাংস ও দুধ।

৬. গবাদি পশু এবং তাদের মাংস ক্রয়—বিক্রয় করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়।

৭. কোন কোন গবাদি পশু যেমন ছাগল ও ভেড়া পালনে মূলধন কম লাগে।

৮. দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য বিক্রি করে প্রচুর আয় করা হয়।

৯. গবাদিপশুর চর্বি সাবান তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

১০. জ্বালানি হিসেবে গোবর ব্যবহৃত হয়।

১১. গবাদিপশুর মলমূত্র (গোবর) উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবে জমিতে ব্যবহৃত হয়।

১২. গোবর থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করে জ্বালানি ও বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা যায়।

১৩. গবাদিপশু বিক্রয় করে এককালীন অনেক অর্থ পাওয়া যায়।

১৪. ভেড়া—ছাগলের পশম দ্বারা দামী শীতবস্ত্র তৈরি করা হয়।

১৫. গবাদিপশুর চামড়া, পশম, হাড় ইত্যাদি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়।

 

পোলট্রি:

বাংলাদেশে কৃষির একটি অন্যতম ক্ষেত্র হল পোল্টি্র বা গৃহপালিত পাখি। যে সকল জীবের পাখনা আছে, যারা উড়তে পারে এবং ডিম দেয় তাদেরকে পাখি বলা হয়। আবার অর্থনৈতিক প্রয়োজনে মানুষ যেসব পাখি গৃহে পালন করে তাদের গৃহপালিত পাখি বলে্। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গৃহপালিত পাখি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। বাংলাদেশে গৃহপালিত পাখি যেমন হাঁস—মুরগী, কবুতর উল্লেখযোগ্য।

সাধারণত গ্রামের প্রতিটি পরিবারেই গৃহপালিত পাখি পালন করা হয়। এগুলো একদিকে যেমন পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটায় তেমনি বাড়তি অংশ বিক্রয় করে অর্থনৈতিভাবে লাভবান হওয়া যায়। গ্রামের পরিবারে সাধারণত দেশীয় জাতের পোল্টি্র পালন করা হয়। তবে বর্তমানে অনেকেই পোল্টি্র শিল্প গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এজন্য নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য বিজ্ঞানীরা নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং বিদেশ থেকেও উন্নত জাত আমদানি করা হয়েছে। যেমন ’জাপানি কোয়েল’ নামক এক প্রকারের পাখি বাংলাদেশে পালন করা হচ্ছে। সম্প্রতি সরকারি গবেষণা কেন্দ্রে প্রাণীবিজ্ঞানীরা ’শুভ্রা’ নামে একটি ডিম পাড়া মুরগীর জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ জাতের মুরগী বছরে ২৮০—২৯৫ টি ডিম দেয়।

 

পোল্টি্র ও পোল্টি্র বিজ্ঞানের ধারণা:

অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্বলিত যে সব পাখি মানুষের তত্ত্বাবধানে থেকে মুক্তভাবে বংশবৃদ্ধি করে এবং যাদেরকে পারিবারিক বা খামার ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিকভাবে পালন করা হয় তাদেরকে গৃহপালিত পাখি বা পোল্টি্র বলে। যেমন হাঁস, মুরগী, কোয়েল, কবুতর ইত্যাদি।
বিজ্ঞানের যে শাখায় গৃহপালিত পাখি নিয়ে গবেষণা করা হয় বিশেষ করে পাখির খাদ্য, প্রজনন, বিভিন্ন ভৌগলিক পরিবেশে তাদের অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে আালোচনা করা হয় তাকে পোল্টি বিজ্ঞান বলে।


পোল্টি্র শিল্পের ধারনা:

বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নত ব্যবস্থাপনায় উন্নত জাতের হাঁস মুরগী ও কোয়েল পালন করা হচ্ছে। এ কৃষি ক্ষেত্রের গুরুত্ব বিবেচনা করে এটিকে বাণিজ্যিকভাবে একটি শিল্পের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এদেশের অনেক বেকার যুবকযুবতী তাদের শ্রম দিয়ে নতুন নতুন পোল্টি্র শিল্প গড়ে তুলছে এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে বর্তমানে দেড় লক্ষের কিছু কম পোল্টি খামার চালু আছে। ২০০৯—১০ অর্থ বছরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের পোল্টি্র খামারের সংখ্যা ১৪৮৯৩৩ এবং এই খাত থেকে নির্বাহকারী মানুষের সংখ্যা হল ২২৩৩৯৯৫ জন।

 

পোল্টি্রর (মুরগী) শ্রেণীবিন্যাস:

জাত, উপজাত ও স্ট্রেইন মিলিয়ে প্রায় ২০০ প্রকারের মুরগী আছে। এদেরকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১। উৎপত্তিভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ

২। উৎপাদনভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ

১। উৎপত্তি স্থানের উপর ভিত্তি করে মুরগীর জাত ৪ প্রকার যথা:

(ক) আমেরিকান শ্রেণীর—যেমন রোড আইল্যান্ড রেড, নিউ হ্যাম্পাশায়ার, প্লাইমাউথ রক ইত্যাদি।
(খ) ভূ—মধ্যসাগরীয় শ্রেণী: যেমন, লেগহর্ণ, মিনর্কা, অ্যানকোনা ইত্যাদি।
(গ) ইংলিশ শ্রেণী: যেমন, অস্ট্রারলর্প, কার্ণিশ, সাসেক্স ইত্যাদি।
(ঘ) এশিয়া শ্রেণী: যেমন: ব্রাহমা, কোচিন, আসিল ইত্যাদি।

 

২। উৎপাদনভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ

ডিম ও মাংস উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে মুরগীর বিশুদ্ধজাত গুলোকে ৩ শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

(ক) ডিম উৎপাদনকারী জাত:

এ জাতের মুরগী আকারে ছোট ও ওজনে তুলনামূলকভাবে হালকা হয়ে থাকে। তবে এরা বেশ বড় আকারের ডিম দেয়। বছরে ২৫০—৩০০ টি বা তার চেয়ে বেশি ডিম ও দিতে পারে। যেমন, লেগহর্ণ, মিনর্কা, স্টারক্রস সাদা, ইসাব্রাউন ইত্যাদি।

(খ) মাংস উৎপাদনকারী জাত:

এ মুরগী আকারে বেশ বড় ও ওজনে খুব ভারী। এদের শারীরিক বৃদ্ধি খুব বেশি হয় তবে এরা ডিম কম দেয়। এরা ৬—৮ সপ্তাহে ১.৫—২.০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে এবং পূর্ণবয়সে ৪ কেজি পর্যন্তও হয়। এদের মাংস অত্যন্ত নরম ও সুস্বাদু হয়ে থাকে। এদের খাদ্যকে মাংসতে রুপান্তরিত করার ক্ষমতা (১.৮:১) অর্থাৎ এরা গড়ে ১.৮ কেজি খাদ্য গ্রহন করে ১ কেজি মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম।

(গ) ডিম ও মাংস উৎপাদনকারী বা দ্বৈত জাত:

এ জাতের মুরগীর আকার মাঝারি ও ওজনে মোটামুটি ভারী, এরা মাঝারি পরিমান ডিম ও মাংস দেয়। উদাহরণ: রোড আইল্যান্ড রেড, নিউ হ্যাম্পশায়ার, অস্ট্রালপ ইত্যাদি।

 

 

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]
পোল্টি্রর অর্থনৈতিক গুরুত্ব :

মানুষের খাদ্য সরবরাহ, পুষ্টির চাহিদাপুরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি নানাবিধ ক্ষেত্রে পোল্টির গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে পোল্টি্রর অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।

১। পোল্টি্রর মাংস ও ডিমের চাহিদা থাকায় এগুলো বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করা যায়।

২। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অল্প সময়ে অনেক মুরগী পালনের মাধ্যমে বেশী অর্থ উপার্জন করা যায়।

৩। হাঁস মুরগীর খামার করে অনেক বেকার জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়।

৪। পোল্টি্রর শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিল্প যেমন: পোল্টি্রর খাদ্য ও ঔষধ ইত্যাদি শিল্প গড়ে ওঠে এবং অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

৫। পোল্টি্র পালন করে পরিবারে বাড়তি আয় করা যায়।

৬। হাঁস মুরগীর বিষ্ঠা ব্যায়োগ্যাস প্ল্যান্ট এর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

৭। পোল্টি্রর মাংস ও ডিম মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে অনেক ভূমিকা রাখে।

৮। পোল্টি্রর বিষ্ঠা ও লিটার থেকে উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরি করা হয়।

৯। পোল্টি্রর উপজাত দ্রব্য যেমন রক্ত, নাড়িভুড়ি বিশেষ ব্যবস্থায় প্রক্রিয়াজাত করে পাখির ও মাছের খাদ্য তৈরী করা যায়।

১০। বিনোদন: অনেক পাখিই মানুষের বিনোদনের খোরাক যোগায়। যেমন: মোরগের লড়াই, কবুতরের ডাক ইত্যাদি।

 

সারাংশ :

মাছ শীতল রক্ত বিশিষ্ট জলজ মেরুদন্ডী প্রাণী। বাংলাদেশ মৎস্য প্রতিবেশ ও মৎস্য উৎপাদনের জন্য খুবই অনুকুলে এবং মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ ৪র্থ স্থান দখল করেছে। যেসব পশু গৃহে পালন করা হয় তাদেরকে গবাদি পশু বলা হয়। গবাদি পশুর মাংস, দুধ খাদ্য ও আমিষের উৎস হিসেবে এবং গবাদি পশু হতে প্রাপ্ত উপজাত বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পোল্টি্র শিল্পের ভূমিকা ব্যপক। সাধারণত গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই গৃহপালিত পাখি ও পোল্টি্র পালন করা হয় এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর ভূমিকা অপরিহার্য।