আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় কৃষি পরিবেশ সংরণে কৃষিজীবের ভূমিকা
Table of Contents
কৃষি পরিবেশ সংরণে কৃষিজীবের ভূমিকা
কৃষিজীব
বিভিন্ন কৃষি উৎপাদনে প্ৰত্য বা পরো ভাবে জড়িত/ব্যবহৃত উদ্ভিদ, প্রাণী অণুজীবসমূহকে একত্রে কৃষিজীব বলা হয় । এতে বিভিন্ন ফসল, উদ্ভিদ, গৃহপালিত পশুপাখি, মাছ, অণুজীব প্রভৃতি সবকিছুকেই বুঝায় ।
কৃষিজীবের গুরুত্ব
আমরা জানি যে, কৃষিজীব পরিবেশের জৈব উপাদান/অঙ্গের অন্তর্ভুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই তাই এদের কৃষি পরিবেশ সংরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন-
- ফসল ও মাছ আবাদ না হলে খাদ্যাভাব ও পরিবেশের উদ্ভিদ বৈচিত্র্যতা নষ্ট হবে।
- উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটলে স্থানীয় জৈব-পরিবেশ বিঘ্নিত হয়, বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হয়, মরুময়তা শুরু হয় ও প্রকৃতির ভারসাম্যতা বিনষ্ট হয়।
- বিভিন্ন অণুজীবের সংখ্যা হ্রাস পেলে বর্জ্য পচন ও বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়ে উৎপাদন কমে ।
- জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে মানুষের অশিা, অপুষ্টি, অদ তা ও অনাচার বাড়ে এবং মানুষ প্রকৃতির তি করে ।
কৃষি পরিবেশে কৃষিজীবের ভূমিকা
কৃষি পরিবেশ সংরণে বিভিন্ন কৃষিজীবের ভূমিকা সম্পর্কে ফসল, উদ্ভিদ, পশু-পাখি, মাছ, অণুজীব ও মানুষ-এ ছয়টি বিষয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করা হলো।
ফসল
ফসল মৌসুমী, একবর্ষী, দ্বিবর্ষী ও বহুবর্ষী হয়ে থাকে। তাছাড়া ফসল শস্য, আঁশ, মূল, কন্দল, ডাল, তৈলজীব, সবজি, ফল ইত্যাদি জাতীয় হয়ে থাকে। এ বিচিত্র জাতের ফসল বিভিন্ন সময়ে জন্মে পরিবেশের জীব-বৈচিত্র্য গঠনে সহায়তা করে। পরিবেশ সংরণে ফসলের ভূমিকা নিম্নরূপ-
- জীব-বৈচিত্র্যের মাধ্যমে ফসল কৃষি পরিবেশে খাদ্য উপাদান চক্রায়ন এবং আগাছা, কীটপতঙ্গ ও রোগ দমনে সহায়তা করে।
- ফসলের উচ্ছিষ্ট, উপজাত ও বর্জ্য পশুপাখি ও মাছের খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয়ে কৃষি পরিবেশে
প্রাণীকুল টিকিয়ে রাখে। - অনেক ফসলী গাছের কান্ড বা শিকড় জ্বালানিরূপে কৃষক পরিবারের শক্তির উৎস ।
- ফসলের বীজ, চারা, কলম, মূল প্রভৃতি অনেক সময় এক পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশে রোগ বা কীটপতঙ্গের ডিম বা পতঙ্গ বহন করে। তাই এসব উৎপাদন ও পরিবহনে সতর্ক হতে হবে।
উদ্ভিদ
সরাসরি ফসল রূপে ব্যবহৃত হয় না এরূপ ছোটবড় স্থলজ ও জলজ ঘাস, লতাপাতা, গাছ, প্রভৃতি পরিবেশে বিদ্যমান। এগুলোর অবস্থানগত কারণে পরিবেশ সংর িত হচ্ছে। তাছাড়া এগুলোর বিচ ণ ব্যবহারও মঙ্গলজনক হতে পারে। যেমন-
- বহু উদ্ভিদ, ঘাস ও লতাপাতার কান্ড, শিকড়, ফুল, ফল ও পাতা উদ্ভিদজাত কীটনাশক তৈরিতে ব্যবহার করে পরিবেশে রাসায়নিক কীটনাশক দূষণ কমানো যায়।
- বিভিন্ন উদ্ভিদ (স্থলজ ও জলজ) বা লতাপাতা সবুজ সার বা কম্পোস্ট তৈরিতে ব্যবহার করে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা যায়।
- অনেক উদ্ভিদ, ঘাস ও পানা পশুপাখি ও মাছের খাদ্যরূপে ব্যবহার করলে কৃষি পরিবেশ সংর ণ ও উৎপাদন এক সাথে চলবে।
- বিশেষ জাতীয় ছোট উদ্ভিদ এজোলা ও নীলাভ সবুজ শ্যালো বাতাস হতে নাইট্রোজেন সংযোজন ও তা পরে মাটিতে দিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
- দেশের নিম্নাঞ্চল, পাহাড়ী অঞ্চল ও ঢালু মৃত্তিকা অঞ্চলে নানাবিধ ঘাস, গাছ ও বৃ পরিকল্পিতভাবে জন্মালে ভূমি য়রোধ করে কৃষি পরিবেশ উন্নয়ন সম্ভব । বহু উদ্ভিদের শিকড়, কান্ড, পাতা, ফুল, ফল ইত্যাদি পশুপাখি ও মানুষের ঔষধ রূপে পরিবেশের প্রাণীকূল সংর ণ করছে।
- সবুজ সার রূপে ব্যবহার উপযোগী প্রায় ৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এগুলো মাটির উর্বরতা বাড়াতে সম।
মাছ
জীব-বৈচিত্র্যতা সংরণে জলজ প্রাণীর মধ্যে মাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশের বিরূপতায় সবচেয়ে বেশি য়গ্রস্ত হয়েছে দেশীয় মাছের প্রজাতি। এজন্য নিলিখিত বিষয় বিবেচনা করা উচিত—
- দেশীয় মাছের অসংখ্য প্রজাতি শুধু খাদ্যই সরবরাহ করে না, এগুলো জলজ পরিবেশ বৈচিত্র্যতাও রা করে।
- ধান ে তে মাছ বা চিংড়ি চাষের ফলে বহু কীটপতঙ্গ দমন হয় এবং ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ।
- বহু পচনশীল দ্রব্য খেয়ে মাছ পানির পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখে।
- নাইলোটিকা অন্য মাছ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়, গ্রাস কার্প উন্মুক্ত স্থানে গেলে ধান ও অন্যান্য জলজ ঘাস খেয়ে সাবাড় করে, আফ্রিকানমাগুর উন্মুক্ত স্থানে গেলে সকল জলজ প্রাণী খেয়ে সাবাড় করে। তাই এ মাছগুলো সুআবদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা উচিত।
অণুজীব
মাটি, পানি ও বাতাসে অনেক অণুজীব রয়েছে। এগুলো কৃষি পরিবেশকে প্রভাবিত করে। যেমন—
- আপকারী রোগ জীবাণু মানুষ, পশুপাখি ও উপকারী পোকামাকড় আক্রমণ করে মৃত্যু ঘটালে পরিবেশ বিঘ্নিত হয় ।
- উপকারী মাটির অণুজীব জৈব বর্জ্য পচনে সহায়তা করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। মাটির জৈব পদার্থ বৃদ্ধি করে ।
- অনেক অণুজীব (যেমন- রাইযোবিয়াম প্রজাতি) জীবাণু সার রূপে ফসল উৎপাদন বাড়ায়।
- বিভিন্ন অণুজীব মাটিতে থেকে জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের খাদ্য উপাদান সরবরাহ নিশ্চিত করে ও কৃষি পরিবেশকে রা করে।
মানুষ
কৃষি পরিবেশের নিয়ন্তা হচ্ছে কৃষক বা মানুষ। তাই কৃষি পরিবেশে বিভিন্ন জীবের ভূমিকা সম্পর্কে কৃষকগণকে অবহিত করতে হবে। তাছাড়া কৃষি উৎপাদনের সাথে পরিবেশ সংর ণের প্রয়োজনীয়তা জানাতে হবে। এজন্য-
- জনসংখ্যা সীমিত রাখতে হবে। অধিক জনসংখ্যার ফলে অপুষ্টি, অশি া ও অদ তা বৃদ্ধি পায় ।
- কৃষি পরিবেশের ফসল, উদ্ভিদ, পশুপাখি ও মাছের বহুমুখীতা আনয়ন করে জৈব-বৈচিত্র্যতা সৃষ্টিকরণ।
- কৃষি পরিবেশকে কম তিগ্রস্ত করে এমন প্রযুক্তি গ্রহণে কৃষকগণকে উৎসাহিতকরণ।
- কৃষি পরিবেশ সংর ণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের এক অবশ্য প্রয়োজনীয় শর্ত, তা কৃষকগণকে বুঝানো ।