আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-গর্ভবতী গাভীর লক্ষণ, যত্ন ও পরিচর্যা এবং প্রজননক্ষম ষাঁড়ের যত্ন। গর্ভ ধারনের পর গাভীর দৈহিক ও প্রকৃতিগত অনেক পরিবর্তন হয়ে থাকে। এই পরিবর্তন অবশ্য সকল পশুতে সমভাবে দেখা যায় না। তবে গর্ভ ধরনের ৩ মাস পর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। গর্ভ ধারনের লক্ষণ দুই ভাবে প্রকাশ পায় (১) বাহ্যিক (২) আভ্যন্তরীণ। গর্ভবতী গাভীর প্রধান বাহ্যিক পরিবর্তনগুলো হলো- বাহ্যিক
১। গর্ভবর্তী হলে বকনা বা গাভীর ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাবে, পশু ডাকে আসবে না।
২। গাভীর দুধ উৎপাদন আস্তে আস্তে কমতে থাকবে।
৩। পশুর পেট ক্রমশ বড় হতে থাকবে।
৪। গর্ভকালের শেষ দিকে ওলান আস্তে আস্তে বড় হবে।
Table of Contents
গর্ভবতী গাভীর লক্ষণ, যত্ন ও পরিচর্যা এবং প্রজননক্ষম ষাঁড়ের যত্ন
আভ্যন্তরীণ লক্ষণ
১। বাচ্চার বৃদ্ধির সাথে সাথে জরায়ু বেড়ে সম্মুখে ও নিচের দিকে প্রসারিত ।
২। মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
৩। পরীক্ষায় বাচ্চার অবস্থান বুঝা যায়
গর্ভবর্তী গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা
গাভী গর্ভবতী হওয়ার পর এদের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। গর্ভধারণের পর প্রথম সাত মাস পর্যন্ত পা পরিচর্য্য, খাদ্য প্রদান, দুধ দোহন স্বাভাবিকভাবেই করতে হয়। সাত মাস পর আস্তে আস্তে দুধ দোহন বন্ধ করতে হবে। তবে বাচ্চা প্রসবের ৪০ দিন পূর্বে দুধ দোহন একবারে বন্ধ করে দিতে হবে।
যদি দুধ উৎপাদন বন্ধ না হয় তাহলে গাভীকে দানাদার খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ো ছোকড়া জাতীয় খাবার বেশি নিতে হবে। আট মাস থেকে বাচ্চা পর্যন্ত গর্ভবতী গাভী এবং বাচ্চার স্বাস্থ্য ঠিক ान নিতে হবে। গাভীর গর্ভধারণকাল গড়ে ২৮০ দিন।
গর্ভবর্তী গাভীর দৈনিক সুষম খাদ্যের তালিকা
১। কাঁচা মান দৈনিক ১২-১৫ কেজি।
২| দৈনিক ৩-৪ কেজি।
দানাদার খাদ্য মিশ্রণ তালিকা
উপকরণগুলো ভালো করে একসাথে মিশিয়ে প্রতি গাভীকে ১-৩ কেজি খাওয়াতে হবে। গাভীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিষ্কার পানি দিতে হবে। বাচ্চা দেওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে শুকনা খড় জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ আড়ে আড়ে কমিয়ে কাঁচা ঘাস এবং ঘুদের জাউ জাতীয় নরম থানা থেতে দিতে হবে।
গর্ভবর্তী গাভীকে আলাদা করে রাখতে হবে। এ অবস্থায় গাভীকে দিয়ে কোন কাজই করানো যাবে না। এমনকি গাভীকে দীর্ঘপথ হাঁটানো, দৌড়ানো বা অন্য পশুর সাথে সরাসরি চরতে দেয়া বা ভয় দেখানো যাবে না। বাসস্থান পরিষ্কার শুকনা রাখতে হবে যাতে ঘর পিচ্ছিল না হয়। ঘরে ধানের খড় দিয়ে বা ছালা বিছিয়ে বিছানা করে দেখা যেতে পারে।
গাতীকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং মশা-মাছির আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হবে। প্রসবের ৩-৪ দিন পর্বে রাতেও দেয়াল রাখতে হবে।। গাভী গর্ভবর্তী হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চা প্রসব করে থাকে। বাচ্চা প্রসবের পূর্বে নিম্নেবর্ণিত লক্ষণ দেখা মাবারের পরিমাণ কমে যাবে। ঘন ঘন প্রসাব হবে। ওলান কাঁচলা বা শাল দুধে পূর্ণ হয়ে যাবে। অস্থিরতা অনুভব করবে। প্রসব বাচ্চা উঠবে এবং শুয়ে পড়বে। প্রসবের পথ স্ফীত ও লাল হবে এবং সেখান থেকে শ্লেম্মা বের হবে।
বাচ্চা প্রসবের পর পরই গাভীর ফুল বের হয়ে যাবে।ফুল সাথে সাথে দূরে নিয়ে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। কেননা গাতী ফুল খেয়ে ফেলতে পারে। এতে অজীর্ণতা দেখা দিতে পারে এবং দুধ উৎপাদন কমে যেতে পারে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি ফুল না পড়ে তা হলে ডাক্তারের সাহায্য নিতে হবে।
ফুল ভিতরে থাকলে পঁচে গিয়ে রোগ জীবাণুর আক্রমণে জরায়ুতে পচন সৃষ্টি হতে পারে। সময়মত চিকিৎসা না করালে গাভী মারাও যেতে পারে। গাভীর বাসস্থান পরিষ্কার শুকনা রাখতে হবে। গাভীর খাবারের প্রতিও নজর দিতে হবে। প্রসবের পর কুসুম গরম পানি দিয়ে গাভীকে ধুয়ে নিতে হবে।
গাভীর ওলান ও বাট কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। দুধের বাটে বাছুরের মুখ লাগিয়ে শাল দুধ খেতে নিতে হবে। অনেকে দোহন করে শাল দুধ ফেলে দেয়। এমনটি করা উচিত নয়। শাল দুধ খেলে বাছুরের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। প্রথম ৩-৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাছুরের বিশেষভাবে যত্ন নিতে হয়। এ সময় বাছুরকে পরিমাণ মত দুধ খাওয়ানো দরকার। বাছুরের বয়স ২ সপ্তাহ হলে দুধের সাথে কচি ঘাস, চিকন বড় এবং দানাদার খাদ্য বাওয়ানোর অভ্যাস করতে হয়।
বাছুরের দানাদার খাদ্য তালিকা
প্রাথমিক অবস্থায় উপরোক্ত দানাদার খাদ্য মিশ্রণ দৈনিক ৫০ গ্রাম করে দিতে হবে এবং ও মাস পর দৈনিক ৫০০ আম সরবরাহ করতে হবে। বাচ্চা প্রসবের পর গাভীতে মুখর ও ওলান প্রদাহ এ দুটি রোগ দেখা দিতে পারে। দুধত্বর অপুষ্টিজনিত রোগ। দুধের সাথে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম বের হওয়ার ফলে এ রোগ হয়। গাভীর ওলান থেকে ঠিকমতো দুধ বের করে না আনলে এবং দুধ দোহনে স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা না নিলে গাভীর ওলান প্রদাহ রোগ হতে পারে।
প্রজননক্ষম ষাঁড়ের যত্ন
প্রজননের জন্য ষাঁড়ের বাচ্চা অবস্থা থেকে সঠিকভাবে যত্ন নিতে হয়। ষাঁড়ের শারীরিক সুস্থতা বীজের বা সিমেনের গুণাগুণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই, বাছাইয়ের পর সাধারণত প্রজনন ষাঁড় নির্বাচন করা হয়। প্রজনন ষাঁড়ের যত্নের ব্যাপারে বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো :
১। প্রত্যেকটি ষাঁড়কে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আলাদা ঘরে রাখতে হবে।
২। পরিমাণ মত সুষম খাদ্য দিতে হবে।
৩। উপযুক্ত পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সরবরাহ করতে হবে।
৪। প্রতি ১০০ কেজি ওজনের জন্য দৈনিক ১.৫-২ কেজি সুষম দানাদার খাদ্য ও ৩-৪ কেজি কাঁচা ঘাস দিতে হবে।
৫। সপ্তাহে ২ বারের বেশি বীজ বা সিমেন সংগ্রহ করা যাবে না।
৬। নিয়মিত প্রতিষেধক টীকা দিতে হবে।
৭। কোন রোগ দেখা দিলে সংগে সংগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৮। স্বাস্থ্যসম্মত বিধি ব্যবস্থা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
সারমর্ম
• বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য এবং অনুভব করে, গাভী গর্ভবর্তী হয়েছে কিনা বুঝা যায়।
•বাচ্চা প্রসবের ৪০ দিন পূর্বে গাভীর দুধ দোহন বন্ধ করে দিতে হয়।
•গর্ভবতী গাভীকে সুষম খাদ্য দিতে হয়।
•গর্ভবতী গাভী দ্বারা কোন ভারী কাজ করানো উচিত নয়।
•পশুর ঘর পরিষ্কার এবং শুকনা রাখতে হবে। প্রসবের পূর্বে ঘরে শুকনা খড় বা ছালা দিয়ে বিছানা করে দেয়া উত্তম।
•লক্ষণ দেখে বাচ্চা প্রসবের সময় বুঝা যায়।
•জন্মের পর বাছুরকে শাল দুধ খাওয়াতে হয়।
• প্রজনন ষাঁড়ের যথাযথভাবে যত্ন নিতে হয়।