Tag Archives: কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন

কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন

মহিষের জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য

মহিষের জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য – কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র বিষয়ের এই পাঠটি ১১ নং ইউনিটের ১১.৪ নং পাঠ। এই পাঠে আমরা বিভিন্ন ধরণের মহিষের জাত ও তদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো। মহিষ অন্যতম গৃহপালিত স্তন্যপায়ী। মহিষ মুখ্যত উত্তর গোলার্ধের এক প্রজাতি এবং চেহারায় গরুর সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে। উত্তর আমেরিকার বাইসনকে (bison) অনেক সময় মহিষ বলা হলেও প্রকৃত মহিষের সঙ্গে এদের কোন সম্পর্ক নেই।

 

মহিষের জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের সব এলাকেতেই মহিষ পালন করা হয়ে থাকে। তবে বিশেষ নদীর চর, সমুদ্র উপকূল দ্বীপাঞ্চল এবং হাওর-বাঁওড় এলাকায় মহিষ পালন করা হয় বেশি। এদেশে গৃহপালিত মহিষের সংখ্যা প্রায় ১.৪৭ মিলিয়ন(বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৫-২০১৬)। মহিষ প্রধানত হালচাষ ও গ্রামীণ পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। তবে মহিষের দুধ ও মাংস উৎকৃষ্ট খাদ্য। এ ছাড়া মহিষের গোবর জৈব সার ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মহিষের হাড় পন্যসামগ্রী যেমন বোতাম, চিরুনি ইত্যাদি তৈরি এবং গবাদি প্রাণিখাদ্য ও সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

 

মহিষে জাতের শ্রেণীবিভাগ

গৃহপালিত মহিষের জাতগুলোকে আবাসস্থান ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর ভিত্তি কওে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- জলাভূমি মহিষ বা কাদাপানির মহিষ (Swamp Buffalo) এবং নদী মহিষ বা পরিষ্কার পানির মহিষ (River Buffalo)।

 

জলাভূমির মহিষ (Swamp Buffalo ):

জলাভূমির মহিষের বুক সাধারণত চওড়া, দেহ মাংসল ও গোলাকৃতির যা দেখতে অনেকটা ব্যারেলের মতো। এদের শিং বেশ চওড়া, লম্বা ও চন্দ্রাকৃতির। ষাঁড় ও গাভীর ওজন সাধারণত যথাক্রমে ৫০০ ও ৪০০ কেজি। ষাঁড় ও গাভীর উচ্চতা

সাধারণত গড়ে ১৩৫ সে.মি, হয়ে থাকে। এদের পা খাটো এবং কপাল ও মুখমন্ডল চ্যাপ্টা। গায়ের রং গাঢ় ধূসর থেকে সাদা হয়। চামড়ার রঙ নীলচে কালো থেকে ধূষর কালো হয়ে থাকে। গলকম্বলের উপরিভাগ থেকে গলার পাদদেশে পর্যন্ত বক্রাকৃতির দাগ থাকে। এরা অত্যন্ত কম দুধ উৎপাদন করে, দৈনিক গড়ে ১ লিটারের মতো যা বাছুরের জন্যই যথেষ্ট নয়। এরা ৩৯৪ দিনে গড়ে মাত্র ৩৩৬ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।

শারীরিক বৃদ্ধির হার কম, ফলে বয়: প্রাপ্তি বিলম্বে ঘটে; সাধারণত তিন বছরের পূর্বে পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে না। গর্ভকালে ৩২৫—৩৩০ দিন। সাধারণত নিচু কর্দমাক্ত জলাভূমিতে থাকতে পছন্দ করে, কাদায় গড়াগড়ি দেয় এবং জলাভূমি ও আইলের মোটা অঁাশজাতীয় ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এরা প্রধানত শক্তির কাজেই পটু। তাই হাল, মই ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়। দুধ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম কিন্তু মাংসের জন্য ভালো।

 

জলাভূমির মহিষ

 

 

কোয়া কাম ও কোয়াইটুই (Kwua Cum and Kwaitui)

এই দু’জাতের মহিষ থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। কোয়াইটুই মহিষের দেহ দীর্ঘ ও প্রশস্ত। গায়ের রঙ কালো, চামড়া পুরু, মুখমণ্ডল লম্বা। গাভীর গলা সরু। উচ্চতা ও ওজন গড়ে যথাক্রমে ১৪০ সে.মি. ও ৪৫০ কেজির মতো।

কোয়াদুরে মহিষ (Kwa kui)

এরা আকারে তুলনামূলভাবে খাটো। দেহ ও গলা সরু, ঘাড় সরু, মুখমণ্ডল লম্বা। গায়ের রঙ হালকা ধূসর। উচ্চতা ও ওজন গড়ে যথাক্রমে ১৩০ সে.মি ও ৩৫০ কেজির মতো। এরা হাল-চাষ ও ভারবাহী জন্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কোয়াইয়া (Quipra)

এই উপজাতের মহিষ ধাইল্যান্ডের মি সড টক (Mae Sod Tak) অঞ্চলে দেখা যায়। এরা আকারে ছোট। ওজন ৩০০-৩৫০ কেজির মতো। বন্য স্বভাবের কারণে এদের কদর তুলনামূলকভাবে কম।

ম্যারিড (Marid)

এই উপজাতের মহিষ মায়ানমারে দেখা যায়। মায়ানমারের সমতলভূমির মহিষ থেকে এরা আকারে ছোট। দেহের কালো লোমগুলো দীর্ঘ, সরু ও খাড়া। ধড় ও গাভীর ওজন গড়ে যথাক্রমে ৩০০ ও ৩২৫ কেজির মতো।

লাল মহিষ (Red Buffalo )

এই উপজাতের মহিষ থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে দেখা যায়। এদের দেহ ঘন ও লম্বা লাল রঙের লোমে আবৃত থাকে। তাই এদের নাম লাল মহিষ। এদের দৈহিক ওজন গড়ে সাধারণত ৩৫০ কেজি হয়ে থাকে। তবে, গায়ের রঙ, দেহের গঠন ও ব্যবহারর দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জলাভূমির মহিষের সঙ্গে ভারতের আসামের পশ্চিমাঞ্চলের মহিষের পার্থক্য দেখা যায়।

এদের গায়ের রঙ কালো। শিং অনেকটা কাস্ত্রের মতো থাকা। এরা প্রধানত দুধ উৎপাদনকারী জাত। বিজ্ঞানী মিলেণর ১৯৩৯ সালে এদেরকে নদীর মহিষ হিসেবে নামকরণ করেন। এদের উৎপত্তি ভারত ও পাকিস্তানে, কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চালেও এদের দেখতে পাওয়া যায়।

 

মনিপুরি মহিষ

 

মনিপুরি মহিষ

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

আসামের অন্তর্গত মনিপুর এদের আদি বাসস্থান। আসামের প্রায় সর্বত্র এবং বাংলাদেশের সিলেটে দেখতে পাওয়া যায়।

জাত বৈশিষ্ট্য:

এদের গায়ের রঙ ধূসর। এরা সুঠাম দেহের অধিকারী। মাথা অপেক্ষাকৃত ছোট। শিং বড় এবং ভেতরের দিকে বাঁকানো। এরা সব রকমের খাদ্যে অভ্যস্থ। এদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। ধাড় ও গাভীর ওজন যথাক্রমে প্রায় ৫০০ ও ৬০০ কেজি।

 

নদীর মহিষ:

নদীর মহিষের বুক প্রশস্ত, দেহ সাধারণত মাংসল ও অপেক্ষাকৃত কম গোলাকৃতির। শিংয়ের আকার ও আকৃতির মধ্যে পার্থক্য আছে। ভারত এবং পাকিস্তানে নদীর মহিষের অনেকগুলো জাত দেখা যায়। মহিষ ষাড় ও গাভীর ওজন যথাক্রমে ৩০০-৭০০ ও ২৫০-৬৫০ কেজি হয়।

সাধারণত মহিষ ষাঁড় ও গাভীর উচ্চতা যথাক্রমে ১২০-১৫০ ও ১১৫-১৩৫ সে.মি. হয়। নদীর মহিষের দেহ তুলনামূলকভাবে লম্বা, বুকের বেড় কম, পা খাটো, মাথা ভারি, কপাল প্রশস্ত ও মুখাকৃতি লম্বা। নদীর মহিষের শিংয়ের আকার জলাভূমির মহিষের মতো নয় এবং শিংয়ের অবস্থান ঠিক কপালের একই জায়গায় নয়। এই মহিষের শিং দু’প্রকার। যথা- গোলাকৃতি ও সোজা। এরা সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র স্থানে বাস করতে পছন্দ করে এবং পানির মধ্যে দেহ ডুবিয়ে রাখে। বিভিন্ন জাতের নদীর মহিষের মধ্যে মুররা, নীলি, রাভি, সুরাটি, মেশানা, জাফরাবাদি ইত্যাদি প্রধান। এখানে নদীর মহিষের কয়েকটি জাতের উৎপত্তি, প্রাপ্তিস্থান ও বৈশিষ্ট্যাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।

উন্নত জাতের মহিষের মধ্যে মুররা, নিলি রাভি, মনিপুরী, জাফরাবাদী, নাগপুরী, কুন্ডি, সুরাটি, টোডো, মন্ডা, সম্বলপুরী, টরাই, মেহসানা উল্লেখযোগ্য। মুররা, নিলি রাভি জাতের মহিষ সরকারী খামারে ( মহিষ প্রজনন খামার, বাগেরহাট) পালন করা হয়।

 

নীলি মহিষ :

এ জাতের মহিষের সাথে মুররা মহিষের বেশ মিল আছে। এদের অনেক বৈশিষ্ট্য প্রায় এক রকম। বিজ্ঞানীদের মতে মুররা জাত থেকেই এদের উদ্ভব হয়েছে। তবে আকার, মুখাকৃতি ও কপালের মধ্যে বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। পাকিস্তানের মন্টগোমারি জেলার শতদ্রু নদীর উভয় পাশে এদের আদি বাসস্থান। ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে নীলি জাতের মহিষ পাওয়া যায়। শতদ্রু নদীর নীল পানির বর্ণনায় এদের নামকরণ নীলি রাখা হয়েছে।

 

নীলি মহিষ

 

জাত বৈশিষ্ট্য:

এদের গায়ের ও পশমের রং কালো। কিন্তু ১০—১৫% বাদামি রঙেরও দেখা যায়। দেহাকৃতি মাঝারি ধরনের। কপাল, মুখ, থুতনি, পা এবং লেজের অগ্রভাগে সাদা চিহ্ন দেখা যায়। অনেকটা লম্বাকৃতির মাথার উপরিভাগ স্ফীত এবং দুচোখের মধ্যবর্তী স্থান একটু চাপা। ওলান এবং সিনায় মাঝে মাঝে পিঙ্গল চিহৃ দেখা যায়। শিং ছোট ও শক্তভাবে প্যাঁচানো ঘাড় লম্বা, চিকন ও মসৃণ। ওলান উন্নত লেজ লম্বা। ষাঁড় ও গাভী মহিষের গড় উচ্চতা যথাক্রমে ১৩৭ ও ১২৭ সে.মি. এবং দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৫৭ ও ১৪৭ সে.মি.।

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

পাকিস্তানের মন্টগোমারি জেলার শতদ্রু নদীর উভয় পার্শ্বে এদের আদি বাসভূমি। ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে নীলি জাতের মহিষ পাওয়া যায়৷ শতদ্রু নদীর নীল পানির বর্ণনায় এদের নামকরণ নীলি রাখা হয়েছে।

 

রাভি মহিষ

 

রাভি মহিষ :

এ জাতের মহিষ দুধের জন্য প্রসিদ্ধ। পাক—ভারতের অন্তর্গত রাভি নদীর উভয় পাশে^র্ এদের আদি বাসভূমি। এজন্য এদের নাম রাভি রাখা হয়েছে। পাকিস্তানের লায়ালপুর জেলা, ওকারা, মন্টগোমারি, ভারতের গুজরাট ও চিনাব নদীর উপতাকায় এবং ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে এদের পাওয়া যায়।

জাত বৈশিষ্ট্য:

রাভি মহিষ বৃহদাকৃতির দেহের অধিকারী। গাভীর মাথা মোটা ও ভারি। মাথার মধ্যভাগ উত্তল, শিং প্রশস্ত, মোটা ও কোকড়ানো। থুতনি স্পষ্ট, ওলান সুগঠিত। লেজ বেশ লম্বা এবং প্রান্তদেশে সাদা লোম আছে। গায়ের রং কালো, তবে কোনো সময় বাদামি রঙেরও হয়। ষাঁড় ও গাভী মহিষের উচ্চতা যথাক্রমে ১৩২ ও ১২৭ সেমি এবং দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৫৪ ও ১৪৯ সেমি এবং ওজন যথাক্রমে ৬০০ ও ৬৪৫ কেজি।

 

মুররা মহিষ :

এ জাতের মহিষের উৎপত্তিস্থল ভারতের উত্তর—পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে, দিল্লির আশপাশ এলাকা। বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে এ জাতের মহিষ বেশি পাওয়া যায়। এটি দুগ্ধপ্রদানকারী বিশেষ জাত।

 

মুররা মহিষ

 

বৈশিষ্ট্য:

১. এদের দেহ আকারে বেশ বড় হয়।

২. শিং ছোট এবং বাঁকানো হয়।

৩. গায়ের রং সাধারণত কালো হয়।

৪. স্ত্রী মহিষের পিছনের তুলনায় সম্মুখ ভাগ হালকা হয়।

৫. এরা দুধের জন্য প্রসিদ্ধ।

৬. একটি গাভী মহিষ দিনে প্রায় ২২—২৭ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।

৭. কপাল বড়, চওড়া ও উন্নত।

৮. পা খাটো, মোটা এবং ওলানগ্রন্থি খুব বড়।

৯. দেহের পশ্চাৎ ভাগ অপেক্ষাকৃত চওড়া ও ভারী।

১০. গাভী ও ষাঁড়ের ওজন কম বেশি ৫৬৭ ও ৫৩০ কেজি।

১১. বলদ মহিষ হালচাষ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।

১২. বাঁট লম্বা, সামনের বাঁটের চেয়ে পিছনের বাঁট লম্বা। চিত্র ১১.৪.২ : মুররা

১৩. বাৎসরিক দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০—৩০০০ লিটার।

 

জাফরাবাদি মহিষ

 

জাফরাবাদি মহিষ

জাফরাবাদি গাভী দুধ উৎপাদনকারী এবং ষাঁড় চাষাবাদ ও গাড়ি টানার জন্য বিখ্যাত।

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের গুজরাট, গির অরন্য ও জাফরাবাদ শহরের আশেপাশে এই জাতের মহিষ দেখা যায়। জাফরাবাদের নামানুসারে এদেরকে জাফরাবাদি বলা হয়।

জাত বৈশিষ্ট্য

এরা আকারে বড়, দেহ গভীর ও সুগঠিত। কপাল স্ফীত, শিং ভারি এবং চ্যাপ্টা। গায়ের রঙ কালো তবে মুখ, পা এবং লেজে সাদা দাগ দেখা যায়। ঘাড় মাংসল, গলকম্বল ও ওলান সুগঠিত। এদের দেহ লম্বাটে, পা লম্বা ও সরু, লেজ খাটো। ষাঁড় ও গাভী মহিষের ওজন যথাক্রমে ৫৯০ ও ৪৫০ কেজি। গাভী দিনে গড়ে ১৫-২০ লিটার দুধ দেয়। দুধে চর্বির পরিমাণ খুব বেশি। ষাড় চাষাবাদ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।

 

মেশানা জাতের মহিষ

 

মেশানা মহিষ

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

গুজরাট প্রদেশের বারোদা অঞ্চল ও মেশানা জেলা এদের আদি বাসস্থান। মুররা এবং সুরাটি মহিষের সংকরায়নের মাধ্যমে মেনশানা জাতের উৎপত্তি ।

জাত বৈশিষ্ট্য

এরা মুররা এবং সুরাটি মহিষের মধ্যবর্তী, দেহে দু’জাতেরই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। গায়ের রঙ কালো, বাদামি বা ধূসর। মুখমন্ডল, পা এবং লেজের অগ্রভাগে সাদা দাগ আছে। দেহ লম্বা এবং সুগঠিত। কপাল প্রশস্ত্র, মাঝের অংশ কিছুটা নিচু, শিং কোকড়ানো এবং দেখতে কাস্ত্রের মতো কান মাঝারি এবং অগ্রভাগ চোখা।

ঘাড় মাংসল, সুগঠিত, গলকম্বল নেই। বুক প্রশস্ত, কাঁধ চওড়া এবং দেহের সাথে সুবিনাস্ত্র, পা মাঝারি আকারের। ওলান সুগঠিত ও উন্নত। ষাঁড় ও গাভীর ওজন যথাক্রমে ৪৫০ ও ৬৫০ কেজি। এই জাতের মহিষ ভারতের গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে দুধ ও ঘি সরবরাহের জন্য সুপরিচিত। দুধ উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। এরা নিয়মিত বাচ্চা প্রদানের জন্যও বিখ্যাত।

 

বাংলাদেশের মহিষ:

বর্তমানে বাংলাদেশে মহিষের সংখ্যা প্রায় ৬,২১,৪৭। এর মধ্যে প্রায় ৫৪,০০০ মহিষ শক্তির কাছে নিয়োজিত থাকে। তবে এদেশে মহিষের কোনো উল্লেখযোগ্য জাত নেই । উপকূলীয়, হাওর এবং আখ উৎপাদনকারী এলাকাসমূহে মহিষের বিস্তৃতি তুলনামূলক ভাবে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশের মহিষকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— নদী, জলাভূমি এবং নদী ও জলাভূমির মহিষের সংকর। দেশের পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যে সমতলভূমিতে নদীর মহিষ দেখা যায়। এরা প্রধানত ভারতের দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের মহিষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। দেশের পূর্বাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় জলাভূমির মহিষ ও সংকর মহিষের অবস্থান।

দূরপ্রাচ্যের জলাভূমির মহিষ ও আদি মহিদের সাথে এদের বেশ মিল রয়েছে। বাংলাদেশের জলাভূমির মহিষ মূলত শক্তির কাজে ব্যবহৃত হয়। এদের দুধ উৎপাদনের পরিমাণ খুব কম। দক্ষিণাঞ্চলে ছোট ছোট কৃষক পরিবারে ১-৪টি পর্যন্ত মহিষ দেখতে পাওয়া যায়। গাভী দিনে ১-৩ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। দুধ প্রধানত মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গরুর দুধের চেয়ে মহিষের দুধ বাজারে কম দামে বিক্রি হয়।

দুধে স্নেহের ভাগ বেশি। গবাদিপশুর মাংসের মধ্যে মহিষের মাংস বাজারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গাড়ি টানা, ঘানি টানা, হালচাষ, সেচকার্য, ধান মাড়াই প্রভৃতি শক্তির কাছে এরা ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের মহিষ প্রধানত দেশী মহিষ হিসেবেই পরিচিত। দেহের আকার, পাড়েন এবং রঙের দিক থেকে এদের মধ্যে বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। শিংয়ের আকার এবং পড়নও ভিন্নতর। প্রাণিজ আমিষজাতীয় খাদ্যের চাহিদা, পশুশক্তির ঘাটতি প্রভৃতি মেটানোর জন্য উন্নত প্রজনন পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এদেশের মহিষের উন্নতি অত্যাবশ্যক।

 

 

অনুশিলন:

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-বিভিন্ন জাতের মহিষের বৈশিষ্ট্যগুলো জানা ও খাতায় লেখা।

এই পাঠ শেষে আপনি-

  • দেশী মহিষের আকার, আকৃতি বলতে পারবেন।
  • দেশী মহিষের সাথে উন্নত জাতের মহিষের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবেন।
  • গরু ও মহিষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন।

 

প্রাসঙ্গিক তথ্য

বাংলাদেশের সিলেট জেলায় মনিপুরি মহিষ দেখা যায়। এরা প্রধানত মাংস উৎপাদন, হালচাষ বা পরিবহণের জন্য উপযোগী। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো কোনো অঞ্চলে মুররা জাতের কিছু মহিষ দেখা যায়। মুররা ও মনিপুরি জাতের মধ্যে দৈহিক এবং উৎপাদনগত পার্থক্য নিরূপন করা যায়।

মহিষ ও গরুর মধ্যে পার্থক্য খুব বেশি নয়। মহিষের গলকম্বল নেই, দেহে লোম খুব কম, জলাভূমির মহিষের শিং বড় ও অনেকটা কাস্ত্রের ন্যায়। তাছাড়া আকারে মহিষ সাধারণত গরু থেকে বড় হয়ে থাকে। এছাড়া বাকি সবগুলো বৈশিষ্ট্য মহিষের ক্ষেত্রে গরুর মতোই।

প্রয়োজনীয় উপকরণ

একটি মহিষ ষাড় বা গাভী, কলম, পেন্সিল, রাবার, ব্যবহারিক খাতা ইত্যাদি।

কাজের ধাপ

  • প্রথমে একটি মহিষ দেখে তার অঙ্গপ্রতঙ্গের নাম জানুন ও খাতায় আঁকুন ।
  • যেসব কৃষকের বাড়িতে মহিষ আছে তাদের বাড়ি যান এবং প্রত্যক্ষভাবে মহিষের আকার,
  • আকৃতি ও দৈহিক বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করুন। মহিষের জাতসমূহের বৈশিষ্ট্যের সাথে আপনার দেখা মহিষের
  • বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে দেখুন এবং ব্যাবহারিক খাতায় লিখুন।
  • মহিষ দেখার পর তার জাত বৈশিষ্ট্যসমূহ ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করুন।

 

সতর্কতা

প্রত্যক্ষভাবে মহিষ দেখার সময় সতর্কতার সাথে অগ্রসর হোন।

সারমর্ম :

বাংলাদেশের সিলেট জেলায় মনিপুরি মহিষ আছে যা প্রধানত মাংস উৎপাদন, হালচাষ বা পরিবহণের জন্য উপযোগী। এদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে মুররা জাতের মহিষও দেখা যায়। মহিষ ও গরুর মধ্যে পার্থক্য অল্প। মহিষের গলকম্বল নেই, দেহে লোম কম, জলাভূমির মহিষের শিং বড় ও কাস্তের ন্যায়। সাধারণত আকারেও এরা বড় হয়ে থাকে। এছাড়া বাকি বৈশিষ্ট্যগুলো গরুর মতোই।

 

পাঙ্গাশ মাছ চাষ

পাঙ্গাশ মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করবো আজ। আবহমানকাল থেকে পাঙ্গাস মাছ এদেশের মানুষের জন্য রসনার উৎস হিসেবে পরিচিত। এই মাছটি প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। এক সময়ে পাঙ্গাস মাছ আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে উচ্চবিত্তের মাছ হিসেবে বিবেচিত ছিল। বর্তমানে পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে নদীর নাব্যতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সাথে সাথে এর প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রসমূহ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে পাঙ্গাস মাছের উৎপাদনও ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে। তবে পুকুরে পাঙ্গাস চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় আশির দশক থেকেই এর ওপর কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।

 

 

পাঙ্গাস মাছ চাষ

পাঙ্গাশ মাছের বিভিন্ন জাত:

পাঙ্গাস মাঝের জাতগুলোর মধ্যে দেশী পাঙ্গাস ও থাই পাঙ্গাস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। চলুন এদের পরিচয় সম্পর্কে এখন কিছু তথ্য জেনে নেই,

দেশী পাঙ্গাশ:

দেশী পাঙ্গাসের রূপালী রঙের পিঠের দিকে কালচে এবং পার্শ্ব রেখার ওপরে সামান্য ধূসর। এ মাছের দেহে কোন আঁশ নেই। এখনও আমাদের দেশীয় প্রজাতির পাঙ্গাস সুস্বাদু এবং বেশি মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, বহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে এ মাছটি বেশি পাওয়া যায়। এরা প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে। মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন নদীসহ প্রধান নদীগুলোতে এর পোনা পাওয়া যায়।

থাই পাঙ্গাশ:

এদের আদিবাস থাইল্যান্ডে, কম্পুচিয়া, ভিয়েতনাম এবং পাশ্ববর্তী অঞ্চলের দেশে। আমাদের দেশে সর্বপ্রথম ১৯৯৩ সনে বিদেশী এ প্রজাতির মাছের সফল প্রজনন করানো সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক চাষাবাদের ক্ষেত্রে থাই পাঙ্গাস একটি জনপ্রিয় নাম। দেশী পাঙ্গাসের চেয়ে এ জাত দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ মাছটি সর্বোচ্চ ১০-১২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

 

 

পাঙ্গাশ মাছের চাষ পদ্ধতি:

মাছ চাষের পদ্ধতিটি নির্ভর করে পুকুর বা জলাশয়ের বৈশিষ্ট্য, পরিবেশেগত অবস্থা, পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, পুঁজি, মানসম্মত পোনা প্রাপ্তি, বাজার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ের ওপরে। এসব বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় চাষ পদ্ধতিটি কেমন হবে। আজকে আমরা জানব পাঙ্গাস মাছের একক চাষ বা নিবিড় চাষ সম্পর্কে।

 

পাঙ্গাশ চাষের পুকুর নির্বাচন:

  • পাঙ্গাস চাষের পুকুর আয়তাকার হলে ভাল হয়। পুকুরের তলা ভালভাবে সমতল করে নিতে হবে। পুকুরের পানির গভীরতা ১.৫ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত রাখা দরকার।
  • পাঙ্গাস চাষের জন্য দোআঁশ মাটির পুকুর সবেচেয়ে ভাল। জরুরি প্রয়োজনে যাতে দ্রুত পানি দেয়া যায় সেজন্য পুকুরের কাছেই গভীর বা অগভীর নলকূপের ব্যবস্থা রাখা দরকার।
  • বর্ষায় বা অতিরিক্ত বৃষ্টিতে যাতে করে পুকুর ভেঙ্গে না যায় সেজন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় মেরামত সেরে ফেলতে হয়।
  • সর্বোপরি এমন জায়গায় পুকুরটি বেছে নিতে হবে যেখানে যোগাযোগের সুবিধা ভাল এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

 

পাঙ্গাশ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি:

পুকর নির্বাচন করার পরের কাজটি হলো পুকুরকে ভালভাবে প্রস্তুত করে নেয়া। এবার জেনে নেয়া যাক পুকুর প্রস্তুতি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

  • পুকুরে নানা প্রকৃতির ও বৈশিষ্ট্যে জলজ আগাছা থাকলে প্রথমেই সেগুলোকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • পাঙ্গাস চাষের পুকুরে অপ্রয়োজনীয় ও রাক্ষুসে মাছ যেমন-শোল, বোয়াল, গজার, টাকি, বাইম, মলা, ঢেলা ইত্যাদি মাছকে পাঙ্গাস চাষের আগেই অপসারণ করতে হবে। বিভিন্নভাবেই এদেরকে অপসারণ করা যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে-
  • ঘন ফাঁসের জাল বারবার টেনে সব ধরণের অনাকাক্সিক্ষত মাছ সরিয়ে ফেলতে হবে;
  • পুকুরের পানি পরিষ্কার করে এবং সম্ভব হলে তলার মাটি লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে দিতে হবে;
  • অনেক সময় বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করলেও অপ্রয়োজনীয় ও রাক্ষুসে মাছদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে স্থানীয় মৎস্য অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করে এদের দমন করা যেতে পারে।
  • পুকুরকে মাছ চাষের উপযুক্ত ও টেকসই করতে চুন প্রয়োগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে সব পুকুরের পানিতে অম্লত্বের সমস্য নেই সেখানে প্রতি হেক্টরের জন্য ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। চুন প্রয়োগের আগে গুড়ো করে মিহি করে নিলে এর কার্যকারিতা অনেকগুণ বেড়ে যায়।
  • পুকুরের প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জৈব এবং রাসায়নিক সার দুটোই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত চুন প্রয়োগের ৪/৫ দিন পর সার প্রয়োগ করতে হয়। নতুন পুকুর এবং বেলে মাটির পুকুরে জৈব সার বেশি প্রয়োগ করতে হয়। তবে পুরাতন কাদাযুক্ত পুকুরে রাসায়নিক সার প্রয়োগের হার বেশি হবে। পুকুর প্রস্তুতকালীন সময়ে জৈব সার হিসেবে প্রতি শতকে ৮ থেকে ১০ কেজি গোবর অথবা ৪ থেকে ৫ কেজি মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার করতে হবে।
  • সারের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য প্রতি শতকে ১০০ গ্রাম টিএসপি জৈব সারের সাথে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ব্যবহার করতে হয়। ব্যবহারের আগে প্রতি শতকে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে মিশ্রনটি সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের ৪ থেকে ৫ দিন পর পুকুরের পানির রঙ সবুজ বা বাদামী হলে সাধারণত পোনা মজুদের উপযোগী হয়।

 

 

পাঙ্গাশের পোনা সংগ্রহ ও পরিবহন:

পুকুরের প্রস্তুতি শেষ হলে উন্নত গুনাগুন সম্পন্ন পাঙ্গাস মাছের পোনা সংগ্রহ করতে হয়। এ জন্য বিশ্বস্ত কোন হ্যাচারী থেকে পোনা সংগ্রহ করা উচিত। পোনা পরিবহনের সময় বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে যাতে করে পরিবহনের সময় পোনার কোন ক্ষতি না হয়। পরিবহনের আগেই চৌবাচ্চায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পোনাকে উপোস রেখে টেকসই করে নিতে হবে। পরিবহনের সময় পোনাকে বেশি উত্তেজিত করা উচিৎ নয়।

পাঙ্গাশের খাদ্য প্রয়োগ:

পাঙ্গাস চাষে পুকুরে যে প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হয়, তা মাছের আশানুরূপ ফলনের জন্য যথেষ্ঠ নয়। তাই সুষম খাদ্য প্রয়োগ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে চাষ পর্যায়ে দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমান খাদ্য সরবরাহ না করতে পারলে পাঙ্গাসের উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হবে। মাছের খাদ্যের পরিমান মাছের বয়স এবং দেহের ওজনের ওপর নির্ভর করে।

১৫ দিন পর পর নমুনা হিসেবে কয়েকটি মাছের ওজন পরীক্ষা করে দেখতে হবে মাছ ঠিক মতো বাড়ছে কিনা। নির্দিষ্ট পরিমান খাদ্য পুকুরের আয়তন অনুযায়ী নির্ধারিত ৬ থেকে ৮ টি স্থানে প্রদান করা ভাল। দানাদার জাতীয় খাবার ছিটিং এবং সম্পূরক খাবার বল আকারে নির্দিষ্ট জায়গায় সরবরাহ করতে হয়। খাবার একবারে না দিয়ে ২ থেকে ৩ বারে সমানভাবে ভাগ করে প্রয়োগ করলে খাদ্যের কার্যকারীতা অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া প্রয়োজনমতো চুন এবং সার প্রয়োগ করাটাও জরুরি।

পাঙ্গাশ মাছ সংগ্রহ ও বিক্রয় :

বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মাছ মজুদের ৫-৬ মাস পর যখন পাঙ্গাসের গড় ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম হয়, তখনই মজুদকৃত মাছের ৫০% বাজারে বিক্রি করে দিতে হয়। এতে করে অবশিষ্ট মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।

পাঙ্গাশ মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা:

পাঙ্গাস বেশ শক্ত প্রকৃতির মাছ। তারপরও পাঙ্গাসের রোগ—বালাই দেখা দিতে পারে। রোগ হওয়ার আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই উত্তম। সেক্ষেত্রে— পুকুর প্রস্তুতকরণ ধাপটি যথাযথভাবে করতে হবে। সুস্থ—সবল রোগমুক্ত পোনা মজুদ করতে হবে। সাধারণত নিম্নমানের চাষ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত ধকলের কারণে পাঙ্গাস মাছ প্রোটোজোয়া ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়।

এসব ব্যাকটোরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসায় তঁুত ব্যবহার বেশ ফলদায়ক ইকঈ (ইবহুধষ কড়হরঁস ঈযষড়ৎরফব) দ্রবণে ৭—১০ দিন আক্রান্ত মাছকে গোসল করালেও প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক যেমন— টেট্রাসাইক্লিন (মাত্রা ৫৫—৭৭ মিগ্রা/কেজি খাবার) খাবারের সাথে মিশিয়ে ৭—১০ দিন আক্রান্ত মাছকে খাওয়ালে প্রতিকার পাওয়া যাবে।

 

 

পাঙ্গাশ মাছের একক চাষ পদ্ধতি:

পাঙ্গাস মাছের একক চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের পাঠ। এই পঠটি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র এর ইউনিট-১ এর পাঠ -১.৫ এর অংশ। আবহমানকাল থেকে পাঙ্গাস মাছ এদেশের মানুষের জন্য রসনার উৎস হিসেবে পরিচিত। এই মাছটি প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। এক সময়ে পাঙ্গাস মাছ আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে উচ্চবিত্তের মাছ হিসেবে বিবেচিত ছিল।

বাংলাদেশের নদ—নদীতে এক সময় প্রচুর দেশী পাঙ্গাস পাওয়া যেত। নদী থেকে মাছটির পোনা সংগ্রহ করে পুকুর দীঘিতে চাষের চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু সফলতা আসেনি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রণোদিত প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। পরবর্তিতে ১৯৯০ সালে থাইল্যান্ড থেকে “থাই পাঙ্গাস” আমদানি করা হয়। ১৯৯৩ সালে মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউটে থাই পাঙ্গাসের পোনা উৎপাদনের সফলতার পর থেকে এর চাষ ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করে।

এ পদ্ধতিতে কম সময়ে বেশি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বেশি ঘনত্বে পোনা মজুদ করা হয়। এক্ষেত্রে আমিষ সমৃদ্ধ কৃত্রিম খাবার প্রয়োগের মাধ্যমে বেশি মুনাফা করা যায়। উন্নত চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হেক্টর প্রতি ১৫ থেকে ২০ টন পাঙ্গাস উৎপাদন করা সম্ভব। একক চাষে প্রতি হেক্টরে ৮ থেকে ১০ সেমি. আকারের ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বিগত বছরের পোনা মজুদ করে অধিক উৎপাদন ও বেশি মুনাফা বাড়ানো সম্ভব।

 

থাই পাঙ্গাশ মাছের একক চাষ :

জলাশয় বা পুকুরে শুধু একটি প্রজাতি অর্থাৎ শুধু থাই পাঙ্গাস চাষ করলে তাকে থাই পাঙ্গাসের একক চাষ বলা হয়। এ ধরনের চাষ মূলত নিবিড় ব্যবস্থাপনায় করা হয়। থাই পাঙ্গাস মাছের একক চাষ পদ্ধতির ধাপগুলো নিচে আলোচনা করা হল:

পুকুর নির্বাচন বন্যামুক্ত আলো—বাতাস পূর্ণ এলাকায় পুকুর নির্বাচন করতে হবে। এঁটেল দো—আঁশ বা দো—আঁশ মাটির পুকুর পাঙ্গাস চাষের জন্য উত্তম। পুকুর আয়তাকার হলে ব্যবস্থাপনা করতে সুবিধা হয়। পুকুরের আয়তন হতে হবে ২৫—১০০ শতাংশ এবং গভীরতা হবে ১.৫—২ মিটার। পুকুরের তলায় কাদার পরিমান ১৫ সে.মি এর বেশি না থাকাই ভাল।

 

থাই পাঙ্গাশ মাছ চাষের সুবিধা :

(১) সব ধরনের জলাশয়ে চাষযোগ্য।

(২) চাষের জন্য পোনা পাওয়া যায়।

(৩) দ্রুত বর্ধনশীল।

(৪) একক ও মিশ্র প্রজাতির সাথে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়।

(৫) সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করে।

(৬) পরিবেশের প্রতিকূলতা সহ্য করতে পারে।

(৭) দাম কিছুটা কম হলেও বাজার চাহিদা ভাল।

(৮) জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়।

(৯) বিদেশেও রপ্তানিযোগ্য।

 

একক পাঙ্গাশ চাষের  জন্য পুকুর প্রস্তুতকরণ :

জলজ আগাছা দমন, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত প্রাণি দমন এবং পাড় ও তলা মেরামত করার পর যথাক্রমে চুন ও সার প্রয়োগ করে চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুত করতে হয়। উক্ত কাজগুলো যথারীতি আগের মতই করতে হবে (কই চাষের পুকুর প্রস্তুতকরণ অংশ দেখে নিতে পারেন)।

চুন ও সার প্রয়োগের ক্ষেত্রেও কই মাছের একই মাত্রা প্রযোজ্য। তবে অধিক ঘনত্বে পাঙ্গাস চাষ করলে পুকুরে জৈব সার প্রয়োগ না করাই উত্তম। কারণ পাঙ্গাস চাষে যে পরিমাণ খাদ্য প্রয়োগ করা হয় তাতে পাঙ্গাসের মল—মূত্রের কারণে পরিবেশ এমনিতেই উর্বর থাকে এবং পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মে। অনেক সময় প্রাকৃতিক খাদ্যাধিক্যের ফলে মাছের সমস্যা দেখা দেয়। যে সব খামারি ভাসমান খাদ্য দিয়ে অধিক ঘনত্বে পাঙ্গাস চাষ করবেন তাদের ক্ষেত্রে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখা উচিত।

পোনা মজুদ পুকুর প্রস্তুতির কাজ চলাকালীন ভাল পোনার জন্য নির্ভরযোগ্য নার্সারি/হ্যাচারি মালিকের সাথে যোগাযোগ শুরু করা বাঞ্চনীয়। ভাল ব্যবস্থাপনা আর ভাল খাবার খাওয়ালেই যে মাছের ভাল উৎপাদন পাওয়া যাবে তা অনেক সময় ঠিক নাও হতে পারে। ভাল উৎপাদন পাওয়ার পূর্বশর্ত হল ভালো মানসম্মত পোনা। অন্তঃপ্রজনন জনিত সমস্যার কারণে সব হ্যাচারির পোনার মান সমান নয়। ভাল ও বিশ্বস্ত হ্যাচারির পোনা দেখে কিনতে হবে। পুকুরে মজুদ করার জন্য একটু বড় মাপের পোনা (৬—৭ ইঞ্চি লম্বা) হলে ভাল হয়।

অনেকে অধিক ফলন পেতে আরো বড় আকারের পোনা (১০০১৫০ গ্রাম ওজন/ প্রতিটি) মজুদ করে। সকালের কম তাপমাত্রায় পুকুরে পোনা মজুদ করতে হবে। পোনাকে অবশ্যই পুকুরের পানির সাথে কন্ডিশনিং (অভ্যস্তকরণ) করে তারপর ছাড়তে হবে। নিম্নের সারণি অনুসারে পোনার সংখ্যা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

 

পাঙ্গাশ মাছের একক চাষে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ:

পাঙ্গাসের একক চাষ সম্পূর্ণভাবে সম্পূরক খাদ্য নির্ভর। তাই পাঙ্গাসকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার সরবরাহ করতে হবে। খাদ্য প্রয়োগে ব্যাঘাত ঘটলে উৎপাদনে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। পাঙ্গাসের খাবারে ২৫—৩০% আমিষ থাকা বাঞ্চনীয়। ইদানিং বাজারে বিভিন্ন ধরনের (ভাসমান, ডুবন্ত ইত্যাদি) পিলেট খাদ্য বিক্রি হয়। তবে এসব খাদ্যের আমিষের মাত্রা জেনে তারপার কেনা উচিত। তাছাড়া খৈল, চাউলের কঁুড়া, গমের ভূষি, ফিসমিল, ময়দা/আটা, ভিটামিন প্রিমিক্স ইত্যাদি সমম্বয়ে ৩০% আমিষ সমৃদ্ধ খাবার খামারেই তৈরি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে খাদ্যের খরচ কিছুটা কমে যায়। এ ধরনের খাদ্যকে। নিম্নোক্ত হারে উপাদানগুলো ব্যবহার করে সহজেই ৩০% আমিষ নিশ্চিত করা যাবে—

(বি:দ্র: উপাদানগুলোর ব্যবহার মাত্রা যৎসামান্য পরিবর্তন করা যেতে পারে। তবে বেশি পরিমাণ হেরফের করলে কাঙ্খিত আমিষ নিশ্চিত করা যাবে না।) মাছের দেহের ওজনের ৩—৮% হারে খাবার দিতে হবে। চাষের শুরুতে মজুদকৃত পোনার জন্য বেশি হারে খাবার দিতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে ওজন বাড়ার সাথে সাথে তা হ্রাস করতে হবে। সারণিতে বর্ণিত নিয়মে খাদ্য দিলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।

দিনে দুই বার খাবার দিতে হবে। পিলেট খাদ্য পুকুরের বিভিন্ন জায়গায় ছিটিয়ে দিতে হবে। খামারে তৈরি ভিজা খাদ্য পুকুরে স্থাপিত ট্রে—তে দেয়া বাঞ্ছনীয়। আহরণ ও বাজারজাতকরণ : পাঙ্গাসের ওজন ৫০০ গ্রামের ওপর হলে আহরণ করে বাজারজাতকরণ করা যেতে পারে। বেড় জাল, ঝাঁকি জাল ব্যবহার করে অথবা পুকুর শুকিয়ে সমস্ত মাছ একবারে আহরণ করা যেতে পারে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পারিপারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে মাছের চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সারা দেশের প্রায় আড়াই লক্ষ হেক্টর পুকুর, দীঘি ইত্যাদিসহ প্রায় ৬ থেকে ৭ লক্ষ হেক্টর জলাশয়ে পরিকল্পিতভাবে পাঙ্গাস মাছের চাষ করলে দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদন কয়েকগুন বেড়ে যাবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এদেশের বিপুল সংখ্যক বেকার যুব ও যুব মহিলাদের। প্রায় হারিয়ে যাওয়া আমাদের ঐতিহ্য ’মাছে ভাতে বাঙ্গালী’-কে পুনরুদ্ধার করতে তাই পাঙ্গাস মাছের চাষ একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

 

চূড়ান্ত মূল্যায়ন – মুরগির খামার স্থাপন

আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ ব্রয়লার খামারের প্রকল্প প্রস্তুতকরণ আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।

 

 

চূড়ান্ত মূল্যায়ন – মুরগির খামার স্থাপন

আমাদের দেশে আমিষের অভাব খুবই প্রকট। আমিষের এ অভাব মেটাতে মুরগি পালনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে । খুব অল্প সময়ে অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে মুরগি পালন একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় কৃষি শিল্প হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে । আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সঠিক পরিকল্পনায় মুরগি খামার স্থাপনের মাধ্যমে মুরগি পালনকে লাভজনক করে তোলা যায় ।

মুরগি খামার দুধরনের হতে পারে । যেমন- পারিবারিক মুরগি খামার ও বাণিজ্যিক মুরগি খামার । পারিবারিক মুরগি খামারে অল্পসংখ্যক মুরগি পালন করে সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে বাণিজ্যিক মুরগি খামার গড়ে তোলা যায় । উৎপাদনের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে মুরগির খামার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে ।

 

 

মাংস উৎপাদনের জন্য মুরগি পালন করলে একে বলা হয় ব্রয়লার খামার। আবার ডিম উৎপাদনের জন্য খামার করলে একে বলা হয় লেয়ার বা ডিমপাড়া মুরগির খামার । তবে যে ধরনের খামারই স্থাপন করা হোক না কেন তা লাভজনক করতে চাইলে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা, বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা ও সঠিক পরিচালনা ।

এ ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে মুরগির খামারের জন্য স্থান নির্বাচন, ব্রয়লার এবং ডিমপাড়া মুরগির খামার পরিকল্পনা ও স্থাপন, খামারের দৈনন্দিন কাজকর্ম, ব্রয়লার এবং ডিমপাড়া মুরগির খামারের প্রকল্প প্রস্তুতকরণ ইত্যাদি বিষয়গুলো তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকসহ আলোচনা করা হয়েছে ।

 

 

 মুরগির খামার স্থাপন

সংক্ষিপ্ত ও রচনামূলক প্রশ্ন

১। খামার বলতে কী বোঝেন? বিভিন্ন ধরনের খামারের নাম লিখুন ।

২ । খামারের স্থান নির্বাচনের সময় কী কী বিষয় বিবেচনা করতে হয়?

৩। কী কী বিষয় বিবেচনায় রেখে ব্রয়লার খামারের পরিকল্পনা করতে হয় ?

৪। লেয়ার খামার পরিকল্পনায় বিবেচ্য বিষয়গুলো বর্ণনা করুন ।

৫। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ব্রয়লারের ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ছকের মাধ্যমে দেখান ।

৬। লেয়ার খামার স্থাপন ও পরিচালনার খাতগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করুন ।

৭। কীভাবে খামারের আয় হয়?

৮ ৷ মুরগি খামারের ম্যানেজারের দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণনা করুন ।

৯। খামারে একজন শ্রমিকের কাজ কী কী?

১০। সপ্তাহে ৩০০ ব্রয়লার উৎপাদনের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তুত করুন ।

 

ব্যবহারিকঃ ডিমপাড়া মুরগি খামারের একটি প্রকল্প প্রস্তুতকরণ

আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ ডিমপাড়া মুরগি খামারের একটি প্রকল্প প্রস্তুতকরণ আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।

 

 

ব্যবহারিকঃ ডিমপাড়া মুরগি খামারের একটি প্রকল্প প্রস্তুতকরণ

পদক্ষেপ ১ঃ খামারের ধরন/শ্রেণী/টাইপ/বৈশিষ্ট্য

i) বাদামি খোসার ডিম উৎপাদনকারী খামার।

ii) দৈনিক ডিম উৎপাদন- ৫০০টি বাজারজাত করার উপযোগী ডিম ।

iii) দৈনিক প্রকৃত ডিম উৎপাদন- ৫১০টি (গুণাগুণ নির্ধারণের জন্য ২% ডিম বাছাইয়ের সময় বাদ যাবে)।

(iv) মুরগির ঝাঁকে সারাবছর দৈনিক ডিম উৎপাদনের হার ৭৫% ধরতে হবে ।

(v) ডিম উৎপাদনকাল- উৎপাদন শুরু হওয়া থেকে এক বছর পর্যন্ত (কারও কারও মতে উৎপাদন হার ১০% এ পৌঁছার সময় হতে এক বছর)।

vi) মুরগিগুলোর সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকার ক্ষমতা গড়ে বার্ষিক ৮৮% বা গড়ে বার্ষিক মৃত্যুহার ১২% ধরতে হবে ।

viii) পুলেট গৃহায়ণের বয়স- ১ দিন অথবা ১৫-১৬ সপ্তাহ বয়সের পুলেট। ধরুন, এ প্রকল্পের পুলেটের বয়স ১৬ সপ্তাহ ।

 

 

পদক্ষেপ ২ঃ স্থায়ী খরচ

১. থাকার জায়গা বা থাকার ঘর

ক. লিটার পদ্ধতি

লিটার ব্যবস্থাপনায় বা মেঝে পালন পদ্ধতিতে ৬৮০টি পুলেটের জন্য ২৫৯.২৫ বর্গমিটার (২৩৮০ বর্গফুট) আকারের ১টি ঘরে ৩২.৪০ বর্গমিটার (২৯৭.৫ বর্গফুট) আকারের ৮টি কক্ষ তৈরি করুন । অথবা ১২৯.৬২ বর্গমিটার (১১৯০ বর্গফুট) আকারের ২টি ঘর তৈরি করুন । প্রতিটি ঘর ৩২.৪০ বর্গমিটার (২৯৭.৫ বর্গফুট) আকারের ৪টি কক্ষে ভাগ করুন । প্রতিটি কক্ষে ৯৬টি পুলেট রাখুন ।

ঘরের প্রকৃতি ও আকৃতি ঃ

মেঝে পাকা; চালা টিনের (G. I. sheet), দোচালা (gable type), বেড়া মেঝেসংলগ্ন ৬০-৭৫ সে.মি. (২.০-২.৫ ফুট) টিন অথবা ইটের দেয়ালের উপর ১২০-১৩৫ সে.মি. (৪.০-৪.৫ ফুট) তারজালি অথবা লোহার গ্রিল দিয়ে তৈরি করুন । দরজা কাঠ বা লোহার ফ্রেমে কাঠ বা টিন দিয়ে তৈরি করুন। প্রতি বর্গমিটারের তৈরি খরচ ১,৫০০.০০ টাকা এবং ঘরের জন্য মোট খরচ = ৩,৭৪,৮৭৫.০০ টাকা ।

খ. খাঁচা পদ্ধতি

প্রতিটি মুরগির জন্য জায়গার পরিমাণ ৪৩৭ বর্গ সেন্টিমিটার । একসঙ্গে প্রতি ইউনিট খাঁচায় মুরগি রাখার সংখ্যা ৫টি । প্রতি ইউনিট খাঁচার আকার ২১৮ বর্গ সেন্টিমিটার । ৬৮০টি মুরগির খাঁচার ইউনিট সংখ্যা ১৩৬ । প্রতি ইউনিট খাঁচার দাম ৫০০.০০ টাকা। খাঁচা স্থাপনের ঘরের আকার ১১৩ বর্গমিটার । প্রতি বর্গমিটার ঘর তৈরির খরচ ১৫০০.০০ টাকা এবং মোট ঘর তৈরির খরচ ৬৮,০০০.০০ টাকা ।

 

 

খাঁচাসহ মুরগির ঘর তৈরির খরচ

ক) খাঁচাবাবদ খরচ = ৬৮,০০০.০০
খ) ঘরবাবদ খরচ = ১,৬৯,৫০০.০০
মোট টাকা = ২,৩৭,৫০০.০০

২. খাওয়ার জায়গা (Feeding space)

ক. যদি লম্বা খাবার পাত্রে (feed trough) খাদ্য দেয়া হয় তাহলে প্রতিটি মুরগির জন্য ১০ লিনিয়ার সেন্টিমিটার (৪ লিনিয়ার ইঞ্চি) খাওয়ার জায়গা লাগবে। প্রতিটি খাবার পাত্র যদি দৈর্ঘ্যে ১০৭ সে.মি. (৩.৫ ফুট), প্রস্থে ১৫ সে.মি. (৬ ইঞ্চি), গভীরতায় ১৫ সে.মি. (৬ ইঞ্চি) হয় তাহলে প্রতিটি খাদ্য পাত্রে ২১টি মুরগি একসঙ্গে খেতে পারবে। এরূপ মোট পাত্র লাগবে ৩২টি । নির্মাণসামগ্রী কাঠ বা টিন বলে প্রতিটির নির্মাণ খরচ পড়বে আনুমানিক ২৫০.০০ টাকা । মোট খরচ পড়বে ৬,৫০০.০০ টাকা ।

খ. যদি ঝুলন্ত পাত্র (যধহমরহম ভববফবৎ) হয় তাহলে প্রতি পাত্রে খাবে ১২টি মুরগি। অতএব মোট পাত্রের সংখ্যা হবে ৫৬টি। প্রতিটির মূল্য ২০০.০০ টাকা করে ধরলে মোট মূল্য পড়বে ১১,২০০.০০ টাকা ।

৩. পানির পাত্রের জায়গা (Drinker space or Waterer space)

ক. যদি লম্বা পাত্র হয় তাহলে প্রতিটি মুরগির জন্য ১০ লিনিয়ার সে.মি. (৪ লি.ই.) এবং যদি প্রতিটি পাত্র দৈর্ঘ্যে ১০৭ সে.মি. (৩.৫ ফুট), প্রস্থে ১৫ সে.মি. (৬ ই.) এবং গভীরতায় ১৫ সেমি. ( ইঞ্চি) হয় তাহলে প্রতিটি পাত্রে ২৪টি মুরগি পানি পান করতে পারবে (খাদ্য খাওয়ার মতো হুড়োহুড়ি করে না বলে বেশি সংখ্যায় পান করতে পারবে) । অতএব, মোট পাত্রের সংখ্যা ২৮টি (প্রতি কক্ষে ৪টি করে) । নির্মাণসামগ্রী স্টিল প্লেট বা টিন হলে এবং প্রতিটির মূল্য ৩০০.০০ টাকা ধরলে মোট খরচ ৮৪০০ টাকা পড়বে ।

খ. ঝুলন্ত পানির পাত্র (hanging drinker) হলে প্রতিটিতে পান করবে ২৪টি মুরগি । এখানেও মোট পাত্রের সংখ্যা ২৮টি (প্রতি ঘরে ৪টি করে) । প্রতিটি ২০০.০০ টাকা হিসেবে মোট খরচ পড়বে ৫৬০০.০০ টাকা ।

৪. ডিম পাড়ার জায়গা

ক. মেঝে বা লিটারে পালন পদ্ধতিতে প্রতি ৫টি মুরগির জন্য ১টি করে ডিমপাড়ার বাসা সরবরাহ করতে হবে । প্রতিটি বাসা দৈর্ঘ্যে ৩০ সে.মি. (১ ফুট), প্রস্থে ৩০ সে.মি. (১ ফুট) ও গভীরতায় ৪৫ সে.মি. (১.৫ ফুট) হলে মোট বাসা লাগবে ১৩৬টি ।

৫. বাসা সাজানোর স্টাইল

ক. লিটার পদ্ধতি :

এ পদ্ধতিতে লম্বালম্বিভাবে অথবা একটার পাশে আরেকটা এবং এভাবে ৪টি বা ৫টি বাসার ১ ইউনিট কিংবা ১ ইউনিট বাসার উপর আরও ১ ইউনিট বাসা সিড়ির মতো করে স্থাপন করা যায় । মোট ইউনিট সংখ্যা ৪টি হিসেবে ৪০টি; আর ৫টি হিসেবে ৩২টি। প্রতি কক্ষে ৫টি বা ৪টি ইউনিট থাকবে । ডিমপাড়ার বাসা অবস্থান কক্ষের দেয়ালের মেঝেসংলগ্ন স্থানে এবং দেয়ালের গায়ে সমান্তরালভাবে সাজানো হলে ভালো হয়। এতে সূর্য্যের আলো পড়বে না। নির্মাণসামগ্রী স্টিল প্লেট, টিন বা কাঠ । প্রতি ইউনিট ২০০.০০ টাকা হিসেবে মোট মূল্য ৮,০০০.০০ টাকা ।

খ. খাঁচায় পালন পদ্ধতি :

এ পদ্ধতিতে পালন করলে আলাদাভাবে ডিম পাড়ার বাসা বা বাক্স লাগে না । খাঁচাগুলো ঢালসহ এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে মুরগি ডিম পাড়া মাত্রই ডিমগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে খাঁচার সামনের গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাইরের বর্ধিত অংশ এসে জড়ো হয় । এ খাতে আলাদা কোনো খরচ লাগে না ।

ডিম সংগ্রহের জিনিষপত্র (egg tray)- ১৭টির মোট মূল্য = ৫১০.০০ টাকা ।

১০০০ বর্গফুট (৯২.৯৫ বর্গমিটার) ডিম সংরক্ষণাগার তৈরিতে মোট খরচ = ২০,০০০.০০ টাকা ।

 

৬. আলোকায়ন

দৈনিক (২৪ ঘন্টায়) আলোর প্রয়োজন হবে ১৬ ঘন্টা । কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা ঋতু এবং বছরের ছোট- বড় দিন অনুযায়ী দৈনিক ২.৫ ঘন্টা হতে ৪ ঘন্টা পর্যন্ত হবে । আলোর উৎস বৈদ্যুতিক বাল্ব । যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই সেখানে উজ্জ্বল হারিকেনের আলো দ্বারা ব্যবস্থা করতে হবে ।

বাল্বের প্রকৃতি ঃ

বাল্বের শক্তি হবে ৪০ ওয়াট; আলোর রঙ স্বাভাবিক; আলোর তীব্রতা মৃদু (২০ লাক্স) হবে । ১টি বাল্বের আলোকায়ন এলাকা ৭২,৯০০ বর্গ সে. (১০০০ ব.ফু.)। বাল্ব স্থাপনের এক পয়েন্ট হতে আরেক পয়েন্টের দূরত্ব হবে ৬১০ সে.মি. (২০ ফুট), মোট বাল্বের সংখ্যা হবে ২৪টি । বাল্ববাবদ বছরে গড়ে মোট খরচ ১,০০০.০০ টাকা পড়তে পারে ।

পদক্ষেপ ৩ঃ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা

ক. জনশক্তি-

মাসিক ১,০০০.০০ টাকা হিসেবে ২ জন শ্রমিকের এক বছরের বেতন = ২৪,০০০.০০
মাসিক ১,০০০.০০ টাকা হিসেবে ১ জন পাহাড়াদারের এক বছরের বেতন মোট = ১২,০০০.০০
মোট = ৩৬,০০০.০০

বি. দ্র.ঃ

হিসেব ও অন্যান্য তদারকি কাজ মালিক নিজেই করবেন

খ. প্রতি ব.মি. ২০০০.০০ টাকা হিসেবে ১৩ ব.মি. (৩.৯৬ মি. × ৩.৩০ মি.) আকারের অফিস ঘর তৈরির

খরচ = ২৬,০০০.০০

গ. ১২ মেট্রিক টন খাদ্য ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১টি খাদ্য গুদাম নির্মাণবাবদ ব্যয় = ৪০,০০০.০০

ঘ. প্রতি ব.মি. ৩০০ টাকা হিসেবে ১.৯৮ মি. x ১.৬০ মি. = ৩.১৫ ব.মি. আকারের অসুস্থ্য ও মৃত মুরগি রাখার জায়গার জন্য খরচ = ১,০০০.০০

ঙ. সার বা বিষ্ঠা রাখার স্থান (ছাউনিসহ পাকা গর্ত)- বছরে ২০ টন বিষ্ঠা ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন (প্রতি মুরগি বছরে ৩০ কেজি বিষ্ঠা ত্যাগ করে) ৩৯.২১ ঘনমিটার আকারের গর্ত তৈরির খরচ (প্রতি ঘনমিটার ২৫০.০০ টাকা হিসেবে) = ৯,৮০২.০০

চ. মৃত মুরগি সৎকাজের (disposal pit ) জায়গার জন্য খরচ (বছরে ১২% হিসেবে ৮০টি মুরগি মরতে পারে) = ৫০০.০০

 

 

মোট স্থায়ী খরচ

১. মুরগির ঘর –

ক. লিটার পদ্ধতিতে-
খ. খাঁচা পদ্ধতিতে-

 

= ৩,৭৪,৮৭৫.০০
= ২,৩৭,৫০০.০০

২. ম্যানেজার বা মালিকের অফিস ঘর- = ২৬,০০০.০০
৩. ডিম সংরক্ষণাগার- = ৫,০০০.০০
8. গুদাম ঘর- = ৪০,০০০.০০
৫. অসুস্থ ও মৃত মুরগির ঘর = ১,০০০.০০
৬. বিষ্ঠা সংরক্ষণাগার- = ৯,৮০২.০০
৭. মৃত মুরগি সৎকারের জায়গা- = ৫০০.০০
৮. আসবাবপত্র- = ২৫,০০০.০০

মোট স্থায়ী খরচ-

ক. লিটার পদ্ধতিতে- = ৪,৮২,১৭৭.০০
খ. খাঁচা পদ্ধতিতে- = ৩,৪৪,৮০২.০০

 

আবর্তক বা চলতি খরচ

 ১. প্রতিটি ৭৫.০০ টাকা হিসেবে ৬৮০টি পুলেটের মূল্য = ৫১,০০০.০০
২. বার্ষিক মোট খাদ্য খরচ-

২৪ মেট্রিক টন × ১১০০০.০০ (প্রতিদিন প্রতি মুরগির জন্য ১১০ গ্রাম এবং প্রতি মেট্রিক টন খাদ্য ১১০০০ টাকা হিসেবে)

= ২,৬৪,০০০.০০
৩. লিটার খরচ-

বছরে প্রতি কক্ষে ৮ বস্তা এবং প্রতি বস্তা ২৫.০০ টাকা হিসেবে

= ১,৬০০.০০
8. ওষুধপত্র ও টিকাবাবদ খরচ (মুরগি প্রতি ২০০ হিসেবে)- = ১,৩৬০.০০
৫. জনশক্তিবাবদ খরচ = ৩৬,০০০.০০
৬. বছরে খাওয়ার খরচ  = ৫০০০.০০
মোট  = ৩,৫৮,৯৬০.০০

 

 

লাভক্ষতির হিসেব

বার্ষিক মোট প্রতিপালন ব্যয়
১. মোট আবর্তক খরচ = ৩,৫৮,৯৬০.০০
২. মোট মূলধনের উপর সুদ (বছরে ১৩% হারে)

লিটার পদ্ধতিতে-

খাচাঁ পদ্ধতিতে-

 

= ৮৩,৬০১.০০

= ৫৯,৬৪৬.০০

৩. অপচয় খরচ-

ঘরবাড়ির জন্য বছরে ২% হারে (লিটার পদ্ধতিতে)

আসবাবপত্র- (১০% হারে)

 

= ১০,০৪০.০০

= ২৫,০০.০০

মোট খরচ

ক. লিটার পদ্ধতিতে- = ৪,৫৫,১০১.০০
খ. খাঁচা পদ্ধতিতে- = ৪,২১,১০৬.০০

 

বার্ষিক আয়

১. প্রতিটি ২.৫০ টাকা হিসেবে ১,৮২,৫০০ টি ডিম ভালো ডিম বিক্রিবাবদ আয়-

প্রতিটি ১.৫০ টাকা হিসেবে ২২৮১টি ডিম বাছাইয়ে বাদপড়া ডিম বিক্রিবাবদ আয়-

= ৪,৫৬,২৫০.০০

=  ৩,৪২১.৫০

 ২. প্রতি মেট্রিক টন ৫০০.০০ টাকা হিসেবে বছরে ২০ মেট্রিক টন বিষ্ঠা বিক্রিবাবদ আয়-  = ১০,০০০.০০
৩. প্রতিটি ১০০.০০ টাকা হিসেবে ৫৯৮টি বাতিল মুরগি (ডিমপাড়া শেষে) বিক্রিবাবদ আয়-  = ৫৯,৮০০.০০
8. খালি বস্তা বিক্রিবাবদ আয়-  = ৫০০০.০০
মোট আয়  = ৫,৩৪,৪৭১.০০

 

বছরে লাভক্ষতি হিসাব

 ক. লিটার পদ্ধতিতে-
 মোট আয়  = ৫,৩৪,৪৭১.৫০
মোট ব্যয়  = (-) ৪, ৫৫, ১০১.০০
মোট লাভ  = ৭৯০.৫০
খ. খাঁচা পদ্ধতিতে-
 মোট আয়  = ৫,৩৪,৪৭১.৫০
মোট ব্যয়  = (-) ১,১৩,৩৬৫.৫০
মোট লাভ  = ৪,২১,১০৬.০০

 

 

ব্যবহারিকঃ ব্রয়লার খামারের প্রকল্প প্রস্তুতকরণ

আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ ব্রয়লার খামারের প্রকল্প প্রস্তুতকরণ আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।

 

 

ব্যবহারিকঃ ব্রয়লার খামারের প্রকল্প প্রস্তুতকরণ

ব্রয়লার খামারের প্রকল্প প্রস্তুত করার জন্য নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করে নিন । যথা-

১. মূলধন : মূলধনের অবস্থা কী, আপনার নিজের টাকা আছে না-কি তা ব্যাংক থেকে ঋণ করতে  হবে? কারণ মূলধন এবং বাজারজাতকরণের সুবিধার ওপর ভিত্তি করেই আপনি প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে বা প্রতি দুমাসে বা প্রতিবছর কত ব্যাচ ব্রয়লার বিক্রি করবেন তা ঠিক করবেন।

২. ১ নং এ বর্ণিত সময় ছকে আপনি কী পরিমাণ ব্রয়লার বিক্রি করবেন তার ওপর নির্ভর করে আপনার খামার স্থাপনের জমি, ব্রয়লারের থাকার ঘরের আকার ও সংখ্যা, প্রয়োজনীয় খাদ্যের পরিমাণ অনুসারে গুদামের ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় খাদ্য পাত্র, পানির পাত্র, ব্রুডিং যন্ত্রপাতি, খামার পরিচালনার লোকজনের জন্য অফিসসহ অন্যান্য সুবিধাসমূহ এবং তাদের বেতনভাতা, বাসস্থান প্রভৃতির খরচ যোগাড় করুন ।

৩. যদি জীবন্ত ব্রয়লার হিসেবে একসাথে বিক্রি করা না যায় তাহলে তাদের প্রক্রিয়াজাত (ঢ়ৎড়পবংং) করে বিক্রির ব্যবস্থায় আনুসঙ্গিক খরচের কথাও বিবেচনায় আনুন ।

৪. ব্রয়লার পালনে আপনার পছন্দমতো জাত/উপজাত বা স্ট্রেইন সহজে সুলভ মূল্যে পাওয়া যাবে কি-না সেদিকটায়ও নজর দিন।

৫. সুষম খাদ্য ন্যায্যমূল্যে সারাবছর সংগ্রহ করা যাবে কি-না সে ব্যাপারে চিন্তা করুন । ধীরভাবে ঠান্ডা মাথায় এ বিষয়গুলো চিন্তাভাবনা করে প্রকল্পের কাজে হাত দিন ।

 

 

প্রকল্প নমুনা প্রতি সপ্তাহে ৫০০ ব্রয়লার উৎপাদন প্রকল্প

স্থায়ী খরচ

ক. খামারের জমি ক্রয়-

প্রতি একর ১ লাখ টাকা হিসেবে ০.৭৫ একরের মূল্য = ৭৫,০০০.০০

খ. অবকাঠামো নির্মাণ-

i. ব্রয়লার ঘর- প্রতি বর্গফুট (০.০৯৩ বর্গমিটার) ২০০ টাকা হিসেবে ৫০০ বর্গফুট (৪৬.৪৮ বর্গমিটার) আকারের ৯টি টিনের ঘরের মূল্য  = ৯,০০,০০০.০০
ii. ম্যানেজারের কক্ষ- প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা হিসেবে ১২ ফুট × ১০ ফুট = ১২০ বর্গফুটের (১১.১৫ বর্গমিটার) টিনের চাল, দেয়াল, মেঝে পাকাসহ মূল্য = ২৪,০০০.০০
iii. অফিস কক্ষ- প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা হিসেবে ২০ ফুট × ১৫ ফুট = ১৩০ বর্গফুটের (১২.০৮ বর্গমিটার) মূল্য = ২৬,০০০.০০
iv. সাধারণ গুদাম- প্রতি বর্গফুট ১৫০ টাকা হিসেবে ১৫ ফুট × ১০ ফুট = ১৫০ বর্গফুটের (১৩.৯৪ বর্গমিটার) মূল্য  = ২২,৫০০.০০
v. খাদ্য গুদাম- প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা হিসেবে ৩০ ফুট x ২০ ফুট = ৬০০ বর্গফুটের (৫৫.৭৭ বর্গমিটার) মূল্য = ১,২০,০০০.০০
vi. শ্রমিক কক্ষ- প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা হিসেবে ১২ ফুট × ১০ ফুট = ১২০ বর্গফুটের মূল্য = ২৪,০০০.০০
vii. বিষ্ঠা সংরক্ষণ স্থান- মাসিক ৩ কেজি হিসেবে বছরে ১৫.৫ টনের মূল্য  = ১০,০০০.০০

 

সর্বমোট  =   ২, ০১৫০০.০০

 

 

গ. যন্ত্রপাতি

i. বাল্ব বা হিটার ব্রুডার- প্রতিটি ৫০০০ টাকা হিসেবে ১০টির (১টি আপদকালীনসহ) মূল্য  = ৫০,০০০.০০
ii. থার্মোমিটার- ১টি আপদকালীনসহ মোট ৫টির (প্রতি ঘরে মাত্র ৩/৪ সপ্তাহ ব্যবহার) মূল্য  

= ৬০০.০০

iii. হাইড্রোমিটার- প্রতিটি ৫০০ টাকা হিসেবে ১০টির (১টি আপদকালীনসহ) মূল্য  

= ৫০০০.০০

iv. খাদ্য পাত্র-

৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত প্রতিদিনের জন্য ২.৫ সে.মি. জায়গা ধরে মোট ৫৬টি খাদ্য পাত্রের মূল্য (প্রতিটি ১০০ টাকা হিসেবে)

৫-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিটি ৭.৫ সে.মি. ধরে ১২.৫ সে.মি. লম্বা ১০০টি পাত্রের মূল্য (প্রতিটি ১২৫ টাকা হিসেবে)

 

= ৫,৬০০.০০

= ১২,৫০০.০০

v. পানির পাত্র- = ৫,৬০০.০০ = ১২,৫০০.০০
৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ২৮টির মূল্য (খাদ্য পাত্রের অর্ধেক সংখ্যা)৫-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত ৫০টির মূল্য (প্রতিটি ১০০ টাকা হিসেবে)
= ২৮০০.০০

= ৫০,০০.০০

 

সর্বমোট  =    ৮১,৫০০.০০

ঘ. আসবাবপত্র

চেয়ার, টেবিল, আলমারি, ফাইল কেবিনেট, রেক ইত্যাদি ক্রয়বাবদ খরচ = ২০,০০০.০০

সর্বমোট স্থায়ী ব্যায় = ক+খ+গ+ঘ

= ৭৫,০০০.০০+১১,২৬,৫০০.০০+৮১,৫০০.০০+২০,০০০.০০

= ১৩,৩০,০০০.০০

 

 

২। আবতক বা চলতি খরচ (৮ সপ্তাহ চক্র)

i. বাচ্চার মূল্য- প্রতি ব্যাচে ৫১০টি বাচ্চা (২% মৃত্যু হারসহ) হিসেবে এবং প্রতিটির মূল্য ১৬ টাকা ধরে ৮ ব্যাচের মোট ৪০,০৮০টি বাচ্চার মোট মূল্য = ৬৫,২৮০.০০
ii. খাদ্য খরচ- ৪০০০ ব্রয়লারের ৮ সপ্তাহের খাদ্যের মূল্য (প্রতি ব্রয়লার ৪ কেজি হিসেবে মোট ১৬০০ কেজি এবং প্রতি কেজি ১০০ টাকা হিসাবে = ১,৬০,০০০.০০
iii. জনশক্তিবাবদ খরচ-
  • ম্যানেজারের বেতন- মাসিক ৪০০০ টাকা হিসেবে (২ মাস)
  • অফিস ক্লার্কের বেতন- মাসিক ২৫০০ টাকা হিসেবে (২ মাস)
  • ৫ জন শ্রমিকের মোট বেতন- জনপ্রতি মাসিক ১০০০ টাকা হিসেবে (২ মাস)
= ৮,০০০.০০

= ৫,০০০.০০

= ১০,০০০.০০

iv. লিটার ক্রয়বাবদ খরচ- প্রতি ব্যাচে ১০ বস্তা করে মোট ৮০ বস্তার মূল্য (প্রতি বস্তা ২৫ টাকা হিসেবে) = ২,০০০.০০
v. বিদ্যুৎ খরচ = ২,০০০.০০
vi. প্রতিষেধক ক্রয়বাবদ খরচ = ১,০০০.০
vii. পরিবহণ খরচ = ২,০০০.০০
viii. অন্যান্য খরচ  = ৭২০.০০

 

সর্বমোট  =  ২,৫৬,০০০.০০

৩. অপচয় খরচ (Depreciation cost )

ক. ব্রয়লার ঘর, অফিস, গুদাম ইত্যাদিবাবদ ১১,২৬,৫০০.০০ টাকার উপর বার্ষিক ২% হারে সুদ (জমির দামের উপর কোনো অপচয়
খরচ হয় না)
= ২২,৫৩০.০০
খ. যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের দামের ওপর (বার্ষিক ১০% হারে)
অর্থাৎ ৯৮,৯০০.০০ টাকার ওপর ১০% হারে সুদ
 = ৯৮৯০.০০
গ. মূলধনের ওপর সুদ (বার্ষিক ১৩% হারে ) = ২,০৬,১৮০.০০
 ১ বছরের অপচয় খরচ = ২,৩৮,৬০০.০০

 

 

৮ ব্যাচের জন্য ৮ সপ্তাহে মোট ব্যয়

ক. আবর্তক খরচ = ২,৫৬,০০০.০০
খ. অপচয় খরচ = ৩৯, ৭৬৭.০০

সর্বমোট ব্যয় = ২৯৫, ৭৬৭.০০

আয়

ক. ৪০০০ জীবন্ত ব্রয়লার বিক্রিবাবদ আয় – প্রতিটি ২ কেজি ধরে এবং প্রতি কেজি ৬০ টাকা হিসেবে  = ৫,৬০,০০০.০০
পোল্ট্রি বিষ্ঠা বিক্রিবাবদ আয়- প্রতিটি ব্রয়লার থেকে ২.৫ কেজি হিসেবে হিসেবে ২ মাসে ২০০০০ কেজি বা ২০ মেট্রিক টন (প্রতি মেট্রিক টন ৫০০ টাকা হিসেবে)  = ১০,০০০.০০

মোট আয় = ৫,৭০,০০০.০০

৮ সপ্তাহের প্রকৃত লাভ = আয়-ব্যায় = ৫,৭০,০০০.০০ – ২,৯৫,৭৬৭.০০ = ২,৭৪,২৩৩.০০

অতএব প্রতি মাসের লাভ = ২,৭৪,২৩৩.০০ / ২ = ১,৩৭,১১৬.৫০

খামারের দৈনন্দিন কাজকর্ম

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ  খামারের দৈনন্দিন কাজকর্ম ।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর  মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।

 

 

 খামারের দৈনন্দিন কাজকর্ম

ম্যানেজারের দায়িত্ব ও কর্তব্য

খামারের ম্যানেজারের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিম্নরূপ-

  • সূর্য উঠার আগে খামারে গমন ।
  • প্রতি ঘরে আলোকায়নের অবস্থা নিরীক্ষণ ।
  • সকালের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক হাজিরা নিরীক্ষণ ।
  • যথাসম্ভব সব ঘর প্রদক্ষিণ করে মুরগির স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ ।
  • শ্রমিকদের সাহায্যে মৃত, দুর্বল ও রোগাক্রান্ত মুরগি নির্দিষ্ট জায়গায় অপসারণ ।
  • প্রত্যেক ঘরে খাবার পাত্র, পানির পাত্র পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তদারকী করা।
  • খাদ্য গুদাম খুলে দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ।

সকালের কাজ শেষ করে নাস্তা করার জন্য এক-দেড় ঘন্টা বিরতি। বিরতির পর অফিসে এসে ম্যানেজারকে নিম্নলিখিত কাজগুলো সারতে হবে-

  • সকাল ১০:০০-১২:০০ টার মধ্যে অফিসের কাজ সমাপ্ত ।
  • দুপুর ১২:০০ টায় মুরগির ঘরে গিয়ে ডিম পাড়ার অবস্থা অবলোকন এবং ডিম সংগ্রহকারী শ্রমিকদের কাজ পর্যবেক্ষণ ।
  • প্রথমবার (দুপুর বেলায়) মোট কতটি ডিম সংগ্রহ হলো তার হিসেব নেয়া ।
  • দুপুরের বিশ্রাম ।
  • বেলা ২:০০ টায় আবার মুরগির ঘরে খাদ্য সরবরাহ পর্যবেক্ষণ শেষে অফিসের কাজে যোগদান ।
  • বিকেল ৪:০০ টায় দ্বিতীয়বার ডিম সংগ্রহের পরিমাণ দেখে ঐদিনে মোট কতটি ডিম উৎপাদিত হলো তা হিসেবের খাতায় লিপিবদ্ধকরণ ।
  • বিকেল পাঁচটায় বাড়ি যাওয়ার আগে প্রত্যেক শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কাজের হিসেব গ্রহণ ও মুরগির ঘরে গিয়ে মুরগির শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ।
  • আলোকায়নের অবস্থা ঠিক আছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করে বাড়ি গমন ।

 

 

শ্রমিকের কাজ

পোল্ট্রি খামারে একজন শ্রমিকের কাজ নিম্নরূপ-

  • সকালে খামারে এসে নিজের পরিহিত কাপড় বদলিয়ে খামারে কাজের নির্দিষ্ট পোষাক ধারণ ।
  • নির্ধারিত মুরগির ঘরে গিয়ে মৃত বা অসুস্থ বা দুর্বল মুরগি বাছাইকরণ ।
  • সাবান দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে খাবার পাত্র, পানির পাত্র প্রভৃতি পরিষ্কারকরণ ।
  • খাদ্য গুদাম হতে প্রত্যেক খাদ্য পাত্রে খাদ্য এবং পানির পাত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহকরণ ।
  • দুপুর বারটায় শ্রমিক নিজে বা ডিম সংগ্রহকারী শ্রমিকদের সঙ্গে থেকে তার ঘরের ডিম উত্তোলন করবেন।
  • ডিম সংগ্রহ ও জমা দেয়ার পর বিশ্রাম ।
  • বেলা ২:০০ টায় আবার মুরগির খাদ্য ও পানি সরবরাহকরণ ।
  • বিকেল ৪:০০ টায় দ্বিতীয়বার ডিম সংগ্রহ ।
  • প্রয়োজনে অথবা অসুবিধা দেখা দিলে ম্যানেজারের দৃষ্টি আকর্ষণ ।
  • বিকেল ৫.০০টায় রাতের পাহাড়াদারের খামারে আগমণ ও প্রত্যেক ঘরে মুরগির অবস্থা দর্শন ।
  • ঘরের দরজার তালা ঠিকমতো আটকানো আছে কি-না তা নিশ্চিতকরণ ।

 

 

পাঠোত্তর মূল্যায়ন

১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন ।

ক. ম্যানেজার প্রতিদিন কখন খামারে যান?

i) সূর্য ওঠার আগে

ii) সূর্য ওঠার পরে

iii) বেলা ৯:০০ টায়

iv) বেলা ৮:০০ টায়

খ. দ্বিতীয়বার কখন ডিম সংগ্রহ করা হয়?

i) বেলা ৩:০০ টায়

ii) বেলা ৩:৩০ টায়

iii) বেলা ৪:০০ টায়

iv) বেলা ৫ঃ০০ টায়

২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন

ক. ম্যানেজার বাড়ি যাওয়ার পূর্বে খামারের আলোকায়নের অবস্থা যাচাই করেন না ।

খ. বেলা ১:০০ টায় মুরগির ঘরে খাদ্য সরবরাহ করা হয় ।

৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন ।

ক. ম্যানেজার সকাল ডিম মধ্যে অফিসের কাজ সমাপ্ত করেন ।

খ. দেয়ার পর শ্রমিক বিশ্রাম নেন ।

৪। এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন ।

ক. খাদ্য গুদাম খুলে দিয়ে ম্যানেজার কী করেন?

খ. শ্রমিক খাবার পাত্র, পানির পাত্র প্রভৃতি পরিষ্কার করার পূর্বে কী করেন?

 ডিমপাড়া মুরগির খামার পরিকল্পনা ও স্থাপন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ  ডিমপাড়া মুরগির খামার পরিকল্পনা ও স্থাপন ।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর  মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।

 

 

 ডিমপাড়া মুরগির খামার পরিকল্পনা ও স্থাপন

পরিকল্পনা

যে কোনো খামার পরিকল্পনা অর্থনৈতিক লাভের জন্য করা হয়। তাই ডিমপাড়া মুরগির খামার পরিকল্পনার বেলায়ও নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ চিন্তা করে খামার স্থাপন করতে হবে । যথা-

১. মূলধনের উৎস কী ? নিজের টাকা না ব্যাংক ঋণের টাকা?

২. আপনার খামার হতে বার্ষিক কত টাকা লাভ করতে চান তা স্থির করতে হবে ।

৩. আপনার স্থিরিকৃত পরিমাণ টাকা মুনাফা করতে হলে খামারজাত দ্রব্য হতে শতকরা ১০-১২ টাকা লাভের হারে মোট কত টাকা আয় করতে হবে তা হিসেব করতে হবে ।

৪. বর্তমান বাজার দরে কতগুলো ডিম বিক্রি করলে আপনি এ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন তা হিসেব করতে হবে । একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে । যেমন- বার্ষিক গড়ে ৭০-৭৫% হারে খাবার ডিম বা অনিষিক্ত ডিম উৎপাদন এবং ৬০-৬৫% হারে বাচ্চা ফুটানো বা নিষিক্ত ডিম উৎপাদন ধরে, প্রতিটি ডিম গড়ে ২.৫০ ৩.০০ টাকা হিসেবে বিক্রি ধরে – বছর শেষে ৮৮% মুরগি সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকবে; আর বাকি পুরানো মুরগি বিক্রি করে ও উৎপাদন খরচ বাদে ১০-১২% লাভ থাকবে এ হিসেব করে পরিকল্পনা করতে পারেন ।

৫. ডিমের ব্যবহার অনুযায়ী ডিমপাড়া মুরগির খামার দুপ্রকার । যথা-

  • নিষিক্ত বা বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদন খামার
  • অনিষিক্ত বা খাবার ডিম উৎপাদন খামার

আপনি কোন্ ধরনের খামার তৈরি করবেন তা ঠিক করুন। যদি বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদন করেন তাহলে আপনি দুরকম বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদন করতে পারেন । যথা-

  • বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদনের খামার
  • খাবার ডিম উৎপাদনের খামার

আবার খোসার রঙ অনুযায়ী উপরের দুরকম উদ্দেশ্যের জন্যই আপনি

  • সাদা খোসার ডিম উৎপাদনকারী বা বাদামি খোসার ডিম উৎপাদনকারী মুরগির খামার করতে পারেন ।

৬. সাদা বা বাদামি খোসার খাবার ডিম বা বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদনকারী মুরগি বা বাচ্চা কোথায় পাবেন, আপনি সেগুলো আনতে পারবেন কি-না সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে হবে ।

উপরোক্ত বিষয়সমূহে চিন্তাভাবনা করে খামার স্থাপনের কাজে হাত দিতে হবে ।

 

 

খামার স্থাপন ও পরিচালনার খরচ

খামার স্থাপন ও পরিচালনার খরচ দুই খাতে বিভক্ত । যথা-

ক) স্থায়ী খরচ

খ) আবর্তক বা চলমান বা চলতি খরচ

ক) স্থায়ী খরচ

স্থায়ী খরচের খাতওয়ারী হিসেব নিম্নরূপ-

  • খামার এলাকাভুক্ত জমির মূল্য ।
  • মুরগির গৃহায়ণ ব্যবস্থাবাবদ খরচ ।
  • ম্যানেজারের অফিস, ডিম সংরক্ষণাগার, খাদ্য গুদাম, খাদ্য ছাড়া অন্যান্য জিনিসপত্র রাখার স্থান, শ্রমিকদের বিশ্রাম ঘর, অসুস্থ ও মৃত মুরগি রাখার জায়গা নির্মাণবাবদ খরচ ।
  • আসবাবপত্র ও যানবাহন ক্রয়বাবদ খরচ ।

খ) আবর্তক খরচ

আবর্তক খরচে নিম্নবর্ণিত খাতসমূহ অন্তর্ভুক্ত । যথা-

  • নিষিক্ত ডিম বা ডিমের জন্য প্রজননক্ষম পুলেট ও ককরেলের মূল্য, অনিষিক্ত বা খাওয়ার ডিম উৎপাদনের জন্য উন্নতমানের পুলেটের মূল্য (হাইব্রিড)।
  • সুষম খাদ্যের মূল্য ।
  • টিকা এবং প্রতিষেধক ওষুধপত্রের মূল্য ।
  • খামার পরিচালনায় জনবলের বেতনভাতা খরচ ।
  • পরিবহণ ও যাতায়াত খরচ ।
  • মূলধনের সুদ ।
  • ডিপ্রেসিয়েসন বা অপচয় খরচ ।
  • মেরামত খরচ ।
  • বিদ্যুৎ ও পানির বিলবাবদ খরচ ।
  • এডভারটাইজিং বা বিজ্ঞাপন ব্যয় ।
  • নষ্ট বা বাদ যাওয়া ডিমের মূল্য ।
  • অসুস্থ বা মৃত মুরগির মূল্য ।

 

 

খামারের আয়

অন্যদিকে ডিমপাড়া মুরগি হতে আয়ের খাতওয়ারী হিসেব নিম্নরূপ-

  • ডিম বিক্রিবাবদ আয় ।
  • উৎপাদন শেষে জীবিত মুরগির বিক্রিত মূল্য ।
  • বিষ্ঠা বা সারের মূল্য ।
  • পুরনো বা অকেজো জিনিসপত্র বিক্রিবাবদ আয় ।

খামার স্থাপন

স্থায়ী খরচ

১. নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির মূল্য, খামারে যতগুলো মুরগি রাখা হবে তাদের জন্য ঘরের জায়গাসহ গুদাম, অফিস, ডিম রাখার জায়গা রেখে যে পরিমাণ জমি লাগবে তার মূল্য । এলাকা অনুযায়ী প্রতি বিঘা জমির মূল্য কমবেশি হবে ।

২. প্রজাতি বা স্ট্রেইন অনুযায়ী যতগুলো মুরগি রাখা হবে তাদের মোট জায়গার পরিমাণ হিসেব করে ঘর তৈরি করতে হবে । সাদা খোসার ডিম উৎপাদনকারী প্রতিটি মুরগির জন্য ০.২৮ বর্গমিটার (৩ বর্গফুট) জায়গা এবং বাদামি খোসার ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জন্য ০.৩৭ বর্গমিটার (৪ বর্গফুট) জায়গা হিসেব করে থাকার ঘর তৈরি করতে হবে। এসব মুরগি লিটার বা খাঁচায় যে কোনো পদ্ধতিতে পালন করা যায় ।

খাঁচাতে প্রতিটি মুরগির জন্য ৪৩ বর্গ সে.মি. জায়গার প্রয়োজন হবে । কাজেই এ হিসেবে খাঁচা তৈরি করা হয় । খাঁচার সারি লম্বালম্বিভাবে এক সারি বা একটার উপর আরেকটা রেখে ৩/৪ সারি করা যায় । আবার সিড়ির মতো করে সাজিয়ে উভয় পার্শ্বেও সারি করা যায় ।

ঘরের চালা ঃ

ঘরের চালা পূর্বের পাঠে (পাঠ ৩.২) আলোচিত ব্রয়লারের ঘরের অনুরূপ হবে । বাংলাদেশের পরিবেশে দোচালা বা গেবল টাইপ চালই মুরগির জন্য বেশি আরামদায়ক ।

বেড়ার নমুনা :

ব্রয়লার ঘরের বেড়ার মতো লেয়ারের ঘরের বেড়ার উচ্চতার ১/৩ অংশ শক্ত দেয়াল, কাঠ বা বাঁশের চাটাই দিয়ে পূর্ণ করে বাতাস চলাচলের জন্য তারজালি বা বাঁশের চটি দিয়ে আড়াআড়িভাবে তৈরি করতে হবে। বেশি বাতাস বা বেশি শীত হতে মুরগিকে রক্ষার জন্য বেড়ার ফাঁকা অংশ প্রয়োজনে ঢেকে দেয়ার জন্য পলিথিন বা চটের পর্দার ব্যবস্থা করতে হবে ।

 

 

মেঝের প্রকৃতি ঃ

লিটার পদ্ধতিতে পালন করলে মুরগির ঘরের মেঝে পাকা হলে ভালো হয় । কাঁচা মেঝের ক্ষেত্রে শক্ত এঁটেল মাটির মেঝে হলেও চলবে । তবে এ ধরনের মেঝে বর্ষাকালে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যেতে পারে । শুকনো বালির মেঝের ক্ষেত্রে বর্ষাকালে সমস্যা হতে পারে ।

  • এছাড়াও ম্যানেজারের অফিস ঘর তৈরির খরচ প্রতি বর্গফুট (০.০৯৩ বর্গমিটার) হিসেবে মোট মূল্য ।
  • ডিম সংরক্ষণের ঘর তৈরি খরচ প্রতি বর্গফুট (০.০৯৩ বর্গমিটার) হিসেবে মোট মূল্য ।
  • খাদ্য গুদাম তৈরির খরচ- মুরগির সংখ্যা অনুসারে প্রতিটি মুরগির জন্য দৈনিক ১১০-১২০ গ্রাম খাদ্যের প্রয়োজন হিসেবে কমপক্ষে ২ মাসের খাদ্য সংরক্ষণাগার তৈরির খরচ ।
  • বিষ্ঠা বা সার রাখার স্থান নির্মাণের খরচ ।
  • মৃত মুরগি পুড়িয়ে ফেলা বা পাকা গর্তে ফেলে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখার স্থান নির্মাণবাবদ খরচ।
  • যানবাহন কেনাবাবদ খরচ ।

আবর্তক খরচ

ক. মুরগি সংক্রান্ত খরচ-

  • একদিন বয়সের লেয়ারের বাচ্চা বা ডিমপাড়ার সম্ভাবনাময় পুলেট ক্রয়ের খরচ ।
  • খাদ্য খরচ- মাথাপিছু ১১০-১২০ গ্রাম ধরে ।
  • লিটার কেনাবাবদ খরচ ।
  • খাঁচায় মুরগি পালন করলে মেঝে পাকা হলেই ভালো ।

খ. ঘর তৈরির সাজসারঞ্জাম বিভিন্ন রকমের হতে পারে । যথা-

  • বাঁশ, টিন বা বিচালী ।
  • মাটির ঘর ।
  • ইট, সিমেন্ট বা পাকা দালান ঘর ।

গ. ঘর তৈরির সাজসরঞ্জাম অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট ঘর তৈরির খরচ, তা যেভাবেই ঘর তৈরি করা হোক না কেন প্রতি বর্গফুট (০.০৯৩ বর্গমিটার) হিসেবে খরচ ধরে ঘরের মোট খরচ বের করতে হবে ।

ঘ. আসবাবপত্র ক্রয় বা তৈরিবাবদ খরচ-

  • খাবার পাত্রের দাম ।
  • পানির পাত্রের দাম ।
  • ডিম পাড়ার বাক্সের দাম ।
  • ডিম রাখার ঝুড়ি কেনার জন্য খরচ ।
  • ডিম বাছাই ও ছাটাই খরচ- যতগুলো ডিম বিক্রির অনুপযুক্ত হলো তার মূল্য ।
  • টিকা ও ওষুধপত্রের খরচ ।
  • খাদ্য সংগ্রহ, ডিম বাজারজাতকরণ ও ডিমপাড়া শেষে মুরগি বিক্রির জন্য পরিবহণ খরচ ।
  • বিভিন্ন কাজে ম্যানেজারের যাতায়াত খরচ ।

ঙ. খামারের জনশক্তির খরচ

  • ম্যানেজারের বার্ষিক বেতনভাতা ।
  • অফিস স্টাফের বার্ষিক বেতনভাতা ।
  • শ্রমিকদের বার্ষিক বেতনভাতা ।

এছাড়াও মূলধনের উপর বার্ষিক সুদ (ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে), জমিবাদে স্থায়ী খরচের অপচয়ের শতকরা হার ইত্যাদি । এভাবে যত খরচ হয় সব যোগ করে বার্ষিক খরচ/মোট খরচের হিসেব রাখতে হবে ।

 

 

বার্ষিক আয় –

  • ডিম বিক্রি- বার্ষিক গড়ে ৭০-৭৫% হারে উৎপাদন ধরে বর্তমান বাজার দরে ডিমের মোট মূল্য ।
  • শতকরা ৮৮টি মুরগির সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে এ হিসেবে ডিমপাড়া শেষে বর্তমান বাজার দরে মোট মূল্য ।
  • প্রতিটি মুরগি থেকে বছরে ৩০ কেজি বিষ্ঠা পাওয়া যাবে এভাবে হিসেব করে বর্তমান বাজার দরে মোট বিষ্ঠা বা সারের মূল্য ।
  • অকেজো আসবাবপত্র বিক্রিবাবদ মোট আয় ।

এভাবে মোট আয় থেকে মোট ব্যয় বাদ দিয়ে প্রকৃত লাভলোকসান হিসেব করতে হবে ।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন

১ । সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন ।

ক. খাঁচা পদ্ধতিতে পালনের ক্ষেত্রে প্রতিটি মুরগির জন্য কতটুকু জায়গার প্রয়োজন হয় ?

i) ৪৩৭ বর্গ সে.মি.

ii) ৪৪২ বর্গ সে.মি.

iii) ৪৫২ বর্গ সে.মি.

iv) ৪৬২ বর্গ সে.মি.

খ. প্রতিটি মুরগির জন্য দৈনিক কতটুকু খাদ্যের প্রয়োজন ধরা হয়?

i) ১০০-১০৫ গ্রাম

ii) ১০৫-১১০ গ্রাম

iii) ১১০-১২০ গ্রাম

iv) ১১৫-১২০ গ্রাম

২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।

ক. মোট আয় থেকে মোট ব্যয় বাদ দিয়ে প্রকৃত লাভলোকসান হিসেব করতে হয় ।

খ. বাতাস বা শীত থেকে মুরগিকে রক্ষা করার জন্য পলিথিন বা চটের পর্দার ব্যবস্থা করতে হয় ।

৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন ।

ক. ডিমের ব্যবহার অনুযায়ী ডিমপাড়া মুরগির খামার

খ. শুকনো বালির মেঝের ক্ষেত্রে – সমস্যা হতে পারে ।

৪।  এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন ।

ক. খামার স্থাপনের খরচের প্রধান দুটো খাতের নাম কী ?

খ. বাদামি খোসার ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জন্য কতটুকু জায়গার প্রয়োজন?

ব্রয়লার খামার পরিকল্পনা ও স্থাপন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ ব্রয়লার খামার পরিকল্পনা ও স্থাপন।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর  মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।

 

 

 ব্রয়লার খামার পরিকল্পনা ও স্থাপন

ব্রয়লার খামার পরিকল্পনায় বিবেচ্য বিষয়সমূহ

মাংস উৎপাদনের জন্য যে খামারে মুরগি পালন করা হয় সেটাই ব্রয়লার খামার । যে কোনো খামার বা শিল্পে বাণিজ্যিকভাবে সফলতা লাভের জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা । ব্রয়লার খামার একটি বিশেষ ধরনের শিল্প । তাই এ খামার প্রতিষ্ঠার জন্য মূল বিষয় ছাড়াও আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হয় । ব্রয়লার খামার পরিকল্পনার সময় নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে । যথা-

  • মূলধন ।
  • জমি ।
  • উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা বা বাজার ।
  •  আধুনিক ব্রয়লার স্ট্রেইনের বাচ্চা সহজে পাওয়ার সম্ভাবনা ।
  • খাদ্য সংগ্রহ করা সহজ কি-না এবং খাদ্যের মূল্য ন্যায্য কি-না ?
  • পানি ।
  • বিদ্যুৎ।
  • প্রতিশেধক ওষুধপত্র
  • যোগাযোগের রাস্তাঘাট ইত্যাদি ।

বার্ষিক যত সংখ্যক ব্রয়লার উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে সে সংখ্যক ব্রয়লারের ৭-৮ সপ্তাহ প্রতিপালনের ঘর এবং অন্যান্য সুবিধা, যেমন- অফিস, শ্রমিক ঘর, খাদ্য গুদাম, মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের ঘর, সংরক্ষণাগার ইত্যাদি তৈরির জন্য জমি এবং এ সকল প্রয়োজনীয় ঘরবাড়ি তৈরির জন্য মোট জায়গার সঙ্গে আরও প্রায় ১.৫ গুণ ফাঁকা জায়গা যোগ করে খামারের মোট জমির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ।

 

 

নির্দিষ্ট বয়সের পর ব্রয়লার মুরগির শরীর বর্ধণের হার কমতে থাকে এবং খাদ্য গ্রহণের হারও বেড়ে যায় । যে কারণে মাংস উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়ে মুনাফার হার কমে যায় । তাই নির্দ্দিষ্ট সময়ের পর জীবন্ত ব্রয়লার বা ড্রেসড ব্রয়লার হিসেবে বিক্রি করতে হয়। সুতরাং ব্রয়লার খামার স্থাপনের সময় উৎপাদিত মাংস বাজারজাত করার সুবিধাগুলো নিশ্চিত হয়ে খামার স্থাপন করতে হবে ।

অন্যদিকে ব্রয়ালার যেহেতু কম সময়ে পুনঃপুনঃ বাজারজাত করা যায় সে কারণে কম মূলধন খাটিয়ে অধিক মুনাফা করা যায় ।

ব্রয়লার খামার ব্যবস্থাপনায় তিনটি মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধান করতে হয়, যথা-১. পাখির খাদ্য, ২. বাসস্থান ও ৩. রোগ দমন ।

খাদ্য খরচ মোট উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় ৬০-৭৫% এবং খাদ্যের গুণাগুণ ও মূল্যের ওপর লাভলোকসান নির্ভর করে । সেজন্য ব্রয়লার খামার ব্যাবস্থাপনায় খাদ্যের গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্তু বাসস্থানের পরিবেশ অনুকূল ও আরামদায়ক না হলে শুধু খাদ্য দিয়ে তার অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয় । তেমনি খামার রোগমুক্ত না হলেও তা লাভজনক হবে না ।

বাসস্থান

নিরাপদ ও আরামে থাকার জায়গার নাম বাসস্থান । বাসস্থান নিরাপদ রাখতে হলে নির্বাচিত স্থানের উপযোগী দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে তা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে ঝড়বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহজে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় । বাসস্থানের অভ্যন্তরীণ চাহিদা, যেমন- ব্রয়লারের জন্য পরিমাণমতো থাকার জায়গা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্য ও পানির পাত্র, তাপ ও আলো এবং বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থা থাকতে হবে । এখানে এগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ।

 

 

মাথাপিছু থাকার জায়গা

বাজারজাত করার বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ব্রয়লারের জন্য ০.০৯৩ বর্গমিটার (১ বর্গফুট) জায়গার প্রয়োজন । এভাবে হিসেবে করে যতটি ব্রয়লার বাজাতজাত করার বয়স পর্যন্ত পালন করা হবে ততটুকু জায়গার দরকার হবে । বাসস্থানের জন্য কয়টি ঘর লাগবে তা নির্ভর করবে ব্রয়লারের সংখ্যার ওপর । এ সংখ্যা প্রতি সপ্তাহে কতটি ব্রয়লার বাজারজাত করা হবে কিংবা একদলের পর আরেক দল বাজারজাত করা হবে কি-না তার ওপর নির্ভর করবে । এখানে উৎপাদনকারীকে ব্রয়লার উৎপাদন সংখ্যার ওপর ভিত্তি করেই ঘরের সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে ।

ঘর তৈরি

উৎপাদনকারীর প্রাথমিক মূলধন বিনিয়োগের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে ঘর নির্মাণ করতে হবে । অর্থাৎ ঘর পাকা, কাঁচা বা টিনের হবে পালনকারীর সামর্থের ওপর নির্ভর করে । তবে যে প্রকারের সামগ্রী দিয়েই ঘর তৈরি করা হোক না কেন, একটি কথা মনে রাখা উচিত যে, প্রতিটি ব্রয়লারের উৎপাদন খরচের তুলনায় এর থাকার জায়গার খরচ খুব সামান্য । ব্রয়লারের ঘর তৈরিতে চালের প্রকৃতি, বায়ু চলাচলের প্রয়োজন অনুযায়ী বেড়ার প্রকৃতি এবং লিটারের ধরন অনুযায়ী মেঝে নির্মাণ করা হয় ।

চালের প্রকৃতি

থাকার ঘরের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও নির্মাণসামগ্রীর ওপর নির্ভর করে চাল তৈরি করতে হয় । পোল্ট্রি খামার কিংবা ব্রয়লার খামারে নিম্নবর্ণিত চাল তৈরির প্রচলন আছে । যথা-

ক. একক চালা

খ. দোচালা বা গেবল টাইপ

গ. মনিটর

ঘ. সেমি-মনিটর টাইপ ।

 

 

বেড়ার প্রকৃতি

ব্রয়লার পালনকালে এদেরকে বাজারজাত করার বয়স পর্যন্ত একই ঘরে রাখা হয় । কিন্তু লালনপালনের সুবিধার্থে প্রথম ৪ সপ্তাহ ঘরের তাপমাত্রায় ৩৫° সে. (৯৫° ফা.) থেকে কমাতে কমাতে ২৬.৭° সে. এ (৮০º ফা.) নামিয়ে আনার জন্য বেড়ায় বেশি ফাঁকা জায়গা রাখা যাবে না । কিন্তু প্রয়োজনীয় বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অন্যদিকে বয়স বাড়ার সাথে তাল রেখে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা কমিয়ে বাতাস চলাচল বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হয় বিধায় বেড়ার উচ্চতার ৬০% তারজালি দিয়ে তৈরি করতে হয় ।

বাতাসে ২১% এর কম অক্সিজেন ০.৫% এর বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকলে তা পোলট্রির স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে । সাধারণত ব্রয়লালের ঘরে বায়ু চলাচলের সুবিধার জন্য কিছু অংশ নিচ্ছিদ্র বা শক্ত এবং বাকি বেড়ার অংশে তারজালি বা লোহার রডের ফাঁক ফাঁক বেড়া বা জানালা রাখা হয় । স্থান বা আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় খোলা অংশ বা ফাঁক বেড়ার উপরিভাগে বা নিচের ভাগে তৈরি করা যেতে পারে ।

পরিবেশের তাপমাত্রা :

ব্রয়লারের বাচ্চা বা যে কোনো মুরগির বাচ্চা প্রতিপালনে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের তাপমাত্রার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সারণি ৩.১ এ বয়স বাড়ার সঙ্গে ব্রয়লারের ঘরে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা দেয়া হয়েছে ।

সারণিঃ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ব্রয়লারের ঘরের প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা

বয়স (সপ্তাহ)

তাপমাত্রা সে. (ফা.)

প্রথম

৩৫° (৯৫)

দ্বিতীয়

৩২.২০ (৯০)

তৃতীয়

২৯.৪০ (৮৫º)

চতুর্থ

২৯.৪০ (৮৫০)

পঞ্চম

২৬.৭০ (৮০°)

ষষ্ঠ-অষ্টম

২১.১° (৭০°)

 

আলোক ব্যবস্থাপনা ঃ

প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম যে কোনো উৎস থেকেই ব্রয়লার গৃহে আলোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে । প্রথম সপ্তাহে ব্রয়লার গৃহে খাবার ও পানি দেখার জন্য সারারাত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে । দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে রাতের বেলায় মাঝে মাঝে আলো নিভিয়ে আবার জ্বালাতে হবে এবং এভাবে সারারাত মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে ।

খাদ্য ব্যবস্থপনা ঃ

যেহেতু পোল্ট্রি বা ব্রয়লার পালনে মোট উৎপাদন খরচের ৬০-৬৫% খাদ্য খরচ এবং খাদ্যের গুণগত মানের ওপর তাদের প্রয়োজনীয় শারীরিক বর্ধন নির্ভর করে, সেজন্য এদের খাদ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বেশি । খাদ্যের গুণগত মান, খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ, প্রতি কেজি খাদ্যের দাম, খাদ্য খাওয়ানোর দক্ষতা প্রভৃতি খাদ্য ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত । কাজেই ব্রয়লারের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে খাদ্য ও পানির পাত্র এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে ।

 

 

খাদ্য গুদামের জায়গার পরিমাণ :

প্রতিটি ব্রয়লার ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত ৪ কেজি খাদ্য খাবে । তাই এ পরিমাণকে ব্রয়লারের মোট সংখ্যা দিয়ে গুণ করে যে ফল দাড়াবে সেরূপ খাদ্য ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম তৈরি করতে হবে ।

মোট খাদ্য পাত্রের সংখ্যা নির্ণয় ঃ

বয়সভেদে ব্রয়লারের জন্য ২.৫-১০ সে.মি. লম্বা খাদ্যের পাত্র বা ফিড ট্রাফের প্রয়োজন । কাজেই বয়সের ভিত্তিতে ও সংখ্যা অনুযায়ী হিসেব করে ব্রয়লারের ঘরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্যের পাত্র সরবরাহ করতে হবে ।

মোট পানির পাত্রের সংখ্যা নির্ণয় ঃ

একইভাবে বয়সের ওপর নির্ভর করে একটি ব্রয়লারের জন্য ২.৫-৭.৫ সে.মি. লম্বালম্বি পানির পাত্রের জায়গার প্রয়োজন হবে । সাধারণভাবে দেখা যায় নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্রয়লারের জন্য মোট খাদ্যের পাত্রের অর্ধেক সংখ্যক পানির পাত্র হলেই চলবে ।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন

১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন ।

ক. প্রতিটি ব্রয়লার ৮ সপ্তাহে কতটুকু খাদ্য খাবে?

i) ৪০ কেজি

ii) ৪.২ কেজি

iii) ৪.৩ কেজি

iv) ৪.৫ কেজি

খ. ব্রয়লারের ঘরে প্রথম ৪ সপ্তাহে তাপমাত্রা কত ডিগ্রী সে. থেকে কত ডিগ্রী সে. এ নামাতে হবে?

i) ৩৫° থেকে ২৬.৭° সে.

ii) ৩৪° সে. থেকে ২৬° সে.

iii) ৩০° সে. থেকে ২৬° সে.

iv) ৩০° সে. থেকে ২৬.৭° সে.

২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন ।

ক. বাজারজাত করার পূর্ব পর্যন্ত প্রতিটি ব্রয়লারের জন্য ০.০৯৩ বর্গমিটার জায়গার প্রয়োজন হয় ।

খ. বয়সভেদে ব্রয়লারের জন্য ৫.০-১২.৫ সে.মি. লম্বা খাদ্যের পাত্রের প্রয়োজন ।

৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন ।

ক. খাদ্য খরচ মোট উৎপাদন খরচের প্রায় ——–।

খ. ব্রয়লার বাচ্চা পালনে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ——–যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে ।

৪.  এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন ।

ক. ব্রয়লার খামার স্থাপনের তিনটি মৌলিক চাহিদা কী?

খ. বাতাসে কী পরিমাণ অক্সিজেন ও কার্বণ-ডাই-অক্সাইড থাকলে তা পোল্ট্রির স্বাস্থ্যের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলে?

মুরগির খামারের জন্য স্থান নির্বাচন

আজকে আমরা মুরগির খামারের জন্য স্থান নির্বাচন আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর  মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।

 

 

 মুরগির খামারের জন্য স্থান নির্বাচন

খামার বলতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হাঁসমুরগি প্রতিপালন করার জন্য নির্দ্দিষ্ট স্থানকে বুঝায় । হাঁসমুরগির উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে খামার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন- ডিম উৎপাদন খামার (egg farm), মাংস উৎপাদন খামার (broiler farm), প্রজননের খামার বা ব্রিডার খামার (breeder farm ) বাচ্চা উৎপাদন খামার (hatchery) ইত্যাদি । আবার হাঁস উৎপাদনের জন্য স্থাপিত খামারকে হাঁসের খামার (duck farm) বলা হয়।

অনুরূপভাবে, কোয়েল, রাজহাঁস, তিতির ও কবুতর ইত্যাদি উৎপাদনের খামারকে যথাক্রমে কোয়েল খামার, রাজহাঁসের খামার, তিতির পাখির খামার ও কবুতরের খামার বলা হয় । তবে কোয়েলের খামারকে কোয়েলারিও (quailary) বলা হয়ে থাকে । কোয়েলের ক্ষেত্রেও লেয়ার খামার, ব্রয়লার খামার, ব্রিডার খামার ও হ্যাচারি ইত্যাদি রয়েছে । আবার কবুতরের বাচ্চা উৎপাদনের খামার স্কোয়াব খামার (squab farm) নামে পরিচিত ।

 

 

এদেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে মুরগি, হাঁস বা কোয়েলের খামার থাকলেও রাজহাঁস, কবুতর ও তিতিরের কোনো বাণিজ্যিক খামার নেই বললেই চলে । এছাড়াও একই স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির ডিম, বাচ্চা ও মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে স্থাপিত খামারকে পোলট্রি খামার (poultry farm) বলে । তবে প্রজাতি বা উৎপাদিত বস্তুর নামে খামারের নাম রাখা অধিক যুক্তিযুক্ত । একটি কথা মনে রাখা উচিত, একই খামারে বিভিন্ন প্রজাতির পোল্ট্রি পালন না করাই ভালো । কারণ একসঙ্গে পালন করলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে ।

মুরগির খামার একটি স্থায়ী ব্যবস্থা। যে ধরনের মুরগির খামারই স্থাপন করা হোক না কেন সাফল্যজনকভাবে খামার পরিচালনার জন্য এর স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কৌশল । কারণ মনে রাখতে হবে শুধু খামার স্থাপন করলেই চলবে না তা করে তুলতে হবে লাভজনক ।

 

 

মুরগির খামারের জন্য স্থান নির্বাচনের সময় নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে । যেমন-

  • খামারের স্থান উঁচু হওয়া উচিত। খামার এমন স্থানে গড়তে হবে যেখানে বন্যা কখনও প্রবেশ করতে না পারে ।
  • যে স্থানে খামার করা হবে সেখানকার মাটি বালু ও কাঁকর মিশ্রিত হতে হবে এবং মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা থাকতে হবে ।
  • খামার স্থাপনের জন্য নির্বাচিত স্থানে সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে ।
  • খামারের স্থানটি মানুষের বাড়িঘর থেকে দূরে কোলাহলমুক্ত জায়গায় হতে হবে ।
  • যে স্থানে খামার করা হবে সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হতে হবে ।
  • মানুষের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত রাজপথ থেকে অন্তত আধা কিলোমিটার দূরে খামারের স্থান নির্বাচন করা উচিত।
  • যেখানে খামার করা হবে সেখানে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে ।
  • খামারের স্থান নির্বাচনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আশেপাশে সস্তায় ও সহজে মুরগির খাদ্য ক্রয় করার সুযোগসুবিধা থাকে ।
  • খামারে উৎপাদিত পণ্য, যেমন- ডিম, মুরগি ইত্যাদি সহজে বাজারজাতকরণের সুযোগ থাকতে হবে ।
  • খামার স্থাপনের জন্য নির্বাচিত স্থানের মূল্য তুলনামূলকভাবে কম কি-না সেটাও বিবেচনা করতে হবে ।

 

 

পাঠোত্তর মূল্যায়ন

১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন ।

ক. কবুতরের বাচ্চা উৎপাদনের খামারকে কী বলে ?

i) স্কোয়াব খামার

ii) লেয়ার খামার

iii) ব্রয়লার খামার

iv) হ্যাচারি

খ. যে স্থানে খামার করা হবে সেখানকার মাটি কেমন হবে ?

i) এঁটেল

ii) দো-আঁশ

iii) বেলে

iv) বালি ও কাঁকর মিশ্রিত

২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন ।

ক. প্রজননের খামারকে ব্রিডার খামার বলে ।

খ. মুরগির খামার একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা ।

৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন ।

ক. কোয়েলের খামারকে ——- বলা হয়ে থাকে ।

খ. যেখানে খামার করা হবে সেখানে ——– ও ———ব্যবস্থা করতে হয় ।

৪। এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন ।

ক. একই স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির ডিম, বাচ্চা ও মাংস উৎপাদনের খামারকে কী বলে?

খ. ডিম উৎপাদনের খামারকে কী বলে ?

চূড়ান্ত মূল্যায়ন- দুগ্ধ খামার স্থাপন

আজকে আমরা চূড়ান্ত মূল্যায়ন- দুগ্ধ খামার স্থাপন আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর দুগ্ধ খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।

 

 

চূড়ান্ত মূল্যায়ন- দুগ্ধ খামার স্থাপন

আমাদের দেশে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও দারিদ্র দূরীকরণে দুগ্ধ খামারের ভূমিকা অনস্বীকার্য । দুগ্ধ খামার স্থাপনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপই একই সুতোয় গাঁথা । খামার স্থাপনের পূর্বে যেমন বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করে কাজ করতে হয় ঠিক তেমনি খামার স্থাপনের পর খামারের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি দিতে হয় । দুগ্ধ খামারের মূল উৎপাদিত দ্রব্য হচ্ছে দুধ ।

 

 

 

তাই দুধ বাজারজাতকরনের ব্যবস্থা সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা প্রয়োজন । খামার স্থাপনের উদ্দেশ্যই হলো তা থেকে মুনাফা অর্জন করা । সুতরাং দুগ্ধ খামারের আয় ব্যয়ের হিসেব সম্পর্কেও জানা আবশ্যক । অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খামার স্থাপন করে থাকেন । কীভাবে এই ঋণ পরিশোধ করা যায় সে সম্পর্কিত জ্ঞান থাকাও প্রয়োজন ।

এ ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে দুগ্ধখামার স্থাপনে প্রাথমিক করনীয়, খামার ব্যবস্থাপনা, দুধ দোহন ও বাজারজাতকরণ, ৩-৫ টি গাভীর খামার স্থাপনে প্রকল্প প্রণয়ন, খামারের আয় ব্যয়ের হিসাব, হাত দিয়ে দুধ দোহন, ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের খতিয়ান নিজ হাতে খাতায় লেখা সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকসহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে ।

 

 

চূড়ান্ত মূল্যায়ন- দুগ্ধ খামার স্থাপন

সংক্ষিপ্ত ও রচনামূলক প্রশ্ন

১। পাঁচটি গাভীর খামার স্থাপনে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোর নাম লিখুন ।

২। দুধ বাজারজাতকরণ সংক্ষেপে বর্ণনা করুন ।

৩। বাছুরকে খাওয়ানোর পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করুন ।

৪। ডিহর্নিং বলতে কী বুঝেন? এটি কত প্রকার ও কী কী?

৫ ৷ বাছুর চিহ্নিত করণ সংক্ষেপে বর্ণনা করুন ।

৬। দুগ্ধ খামারে কী কী তথ্য রাখা হয় তা লিপিবদ্ধ করুন ।

৭। দুধ দোহনের বিভিন্ন ধাপ বর্ণনা করুন ।

৮ । দুধ দোহনের পদ্ধতি কয়টি ও কী কী বর্ণনা করুন ।

৯ । একটি দুধ দোহন যন্ত্রের বিভিন্ন অংশের নাম লিখুন ।

১০। খামারের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত?