আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে পশুপাখির অভিযোজন কলাকৌশল – যা কৃষি ও জলবায়ু এর অন্তর্ভুক্ত ।
Table of Contents
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে পশুপাখির অভিযোজন কলাকৌশল
পরিবেশের সঙ্গে কোনো একটি প্রজাতির জীবের নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার কৌশলকে অভিযোজন বলে। মনে রাখতে হবে যে, পরিবেশ ও জীবের দেহের মধ্যে অভিযোজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। জীবের অভিযোজন পরিবেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
তাই অভিযোজন পরিবেশের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ ও বায়ুর উপাদান, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ঐ স্থানের উচ্চতা এবং জীবের শারীরিক গঠন ও দৈহিক অবস্থা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। অভিযোজনের এসব উপাদান মোকাবেলা করেই জীব তার অবস্থানে টিকে থাকে। এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম ।
কিন্তু হঠাৎ করে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হলে মানুষ তার বুদ্ধি দিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও পশুপাখি সেই পরিবেশে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে না বা অভিযোজনে সক্ষম হয় না।
কারণ পশুপাখি অসহায় ও নিরীহ প্রাণী। কোনো অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তন ধীরে ধীরে হলে পশুপাখি পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন করতে সক্ষম হয়। আর পরিবেশে অভিযোজনে অক্ষম অনেক প্রজাতির জীবের বিলুপ্তিও ঘটে। প্রতিকূল ও বিরূপ পরিবেশে পশুপাখির অভিযোজনের জন্য মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে খরা, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসজনিত সমস্যা সমাধানের ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এতে পপাখি অনেকাংশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়।
খরায় পশুপাখি রক্ষার কলাকৌশল
- কাঁঠাল, ইপিল-ইপিল, বাবলাসহ বিভিন্ন গাছের চাষ বৃদ্ধি করতে হবে ও খরার সময় এসব গাছের পাতা পশুপাখিকে খাওয়াতে হবে।
- খরার সময় এদেরকে ভাতের মাড়, তরিতরকারির উচ্ছিষ্টাংশ, কুঁড়া, গমের ভুশি, ডালের ভুশি, খৈল, ঝোলাগুড় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়াতে হবে।
- পশুপাখিকে নিয়মিত সংক্রামক রোগের টিকা দিতে হবে।
- এদেরকে কাঁচা ঘাসের সম্পূরক খাদ্য, যেমন:- সবুজ অ্যালজি, খাওয়াতে হবে ।
- খরা মৌসুম আসার পূর্বেই ঘাস দিয়ে সাইলেজ ও হে তৈরি করে রাখতে হবে যা খরা মৌসুমে গবাদিপশুকে খাওয়ানো যাবে।
- এদেরকে শুদ্ধ খড় না খাইয়ে ইউরিয়া দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা খড় ও ইউরিয়া মোলালেস ব্লক খাওয়ানো যেতে পারে।
- পশুপাখিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।
- এদেরকে বেশি করে পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে হবে।
- গবাদিপশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে।
- এদের দেহ সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ও পরজীবির জন্য চিকিৎসা করাতে হবে।
- পশুপাখিকে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। এদেরকে কখনোই প্রখর রোদে নেওয়া যাবে না।
- পশুপাখি অসুস্থ হলে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।
বন্যাজনিত সমস্যায় পশুপাখি রক্ষার কলাকৌশল
- পশুপাখিকে যথাসম্ভব উঁচু ও শুকনো জায়গায় রাখতে হবে।
- গবাদিপশুকে পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে হবে, বন্যার দূষিত পানি এদেরকে পান করানো যাবে না।
- পশুপাখির মৃতদেহ গর্তে পুঁতে ফেলতে হবে।
- বন্যার সময় পশুপাখিকে খাদ্য হিসেবে খড়, চালের কুঁড়া, ভুশি ও খৈল বেশি পরিমাণে খাওয়াতে হবে।
- এ সময় কচুরিপানা, দলঘাস, লতাগুল্ম এমনকি করাগাছও পশুপাখিকে খাওয়ানো যেতে পারে।
- কাঁচা ঘাসের বিকল্প হিসেবে সংরক্ষিত খাদ্য, যেমন:- হে ও সাইলেজ খাওয়ানো যেতে পারে।
- বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পতিত জমিতে বিভিন্ন জাতের ঘাসের বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে।
- পশুপাখিকে সংক্রামক রোগের টিকা দিতে হবে ও কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
- প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগাক্রান্ত পশুপাখির চিকিৎসা করাতে হবে।
জলোচ্ছ্বাসজনিত সমস্যা মোকাবেলায় পশুপাখি রক্ষার কলাকৌশল
উপকূলীয় এলাকায় সামুদ্রিক জলোচ্ছাস একটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বছরের যে কোনো সময় জলোচ্ছ্বাস সমুদ্র- ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে। যথা:-
- উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনে পশুপাখির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পারে। এদেশের বিস্তৃর্ণ সমুদ্র-উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপগুলো জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে। তাই জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে পশুপাখিদের রক্ষা করার জন্য নিম্নলিখিত
- উঁচুস্থানে পশুপাখির আবাসন বা বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
- জলোচ্ছ্বাস বা ঝড়ের সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এদেরকে উঁচু আশ্রয়স্থলে নিয়ে বেঁধে রাখতে হবে ।
- জলোচ্ছ্বাসের পর মৃত পশুপাখিদের মাটিচাপা দিতে হবে।
এ সময় পশুপাখির জন্য ভাতের মাড় ও জাউ, শুকনো খড় ও দানাদার খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। - পশুপাখিকে দানাদার খাদ্য, যেমন:- ভুশি, কুঁড়া, খৈল ও প্রয়োজনমতো লবণ, খাওয়াতে হবে।
- এদেরকে কাঁচা ঘাসের পরিবর্তে বিভিন্ন গাছ-পাতা খাওয়াতে হবে। জলোচ্ছ্বাস কবলিত এলাকায় টিম গঠন করে প্রাণী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
- পশুপাখিকে নিয়মিত সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
- পশুপাখি যাতে পচা ও দূষিত পানি করে রোগাক্রান্ত না হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সারাংশ
পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার কৌশলকে অভিযোজন বলে। হঠাৎ করে জলবায়ুর পরিবর্তন হলে মানুষ | বুদ্ধির জোরে অভিযোজন করতে পারলেও নিরীহ পশুপাখি তা পারে না। তাই জলবায়ুর পরিবর্তন অর্থাৎ ধরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় থেকে এদেরকে রক্ষার জন্য মানুষ নানা কলাকৌশল তৈরি করেছে। এগুলো ব্যবহার করে জলবায়ুর প্রভাব থেকে পশুপাখিদের রক্ষা করতে হবে।