পেঁপে চাষের পদ্ধতি ,যেভাবে পেঁপে চাষে মিলবে দ্বিগুণ ফলন

পেঁপে চাষের পদ্ধতি ,যেভাবে পেঁপে চাষে মিলবে দ্বিগুণ ফলন, গ্রামের বাড়ির উঠানে পেঁপে গাছ পরিচিত ছবি। পেঁপের রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। এটি দারুণ জনপ্রিয় ফল হলেও সবজি হিসেবেও সর্বত্র সমাদৃত। লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন পেঁপে। আর আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করলে দ্বিগুণ ফলন পাওয়া সম্ভব।

পেঁপে চাষের পদ্ধতি ,যেভাবে পেঁপে চাষে মিলবে দ্বিগুণ ফলন

পেঁপে স্বল্পমেয়াদী ফল, চাষের জন্যও বেশি জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। বাড়ির আঙিনায় কয়েকটি গাছ লাগালে সেটা থেকে সারাবছর সবজি-ফল পাওয়া যায়।

পেঁপে চাষের পদ্ধতি ,যেভাবে পেঁপে চাষে মিলবে দ্বিগুণ ফলন

জেনে নেওয়া যাক পেঁপে চাষের পদ্ধতি-

পেঁপে গাছ মোটেও জলাবদ্ধতা সহনশীল নয়। পেঁপে চাষের জন্য জলাবদ্ধতামুক্ত এবং সেচ সুবিধাযুক্ত জমি নির্বাচিত করতে হবে। জমি একাধিকবার চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। দ্রুত পানি নিষ্কাষণে ‘বেডপদ্ধতি’ অবলম্বন করা ভালো। পাশাপাশি দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ২০ সেন্টিমিটার গভীর নালা থাকবে। নালাসহ প্রতিটি বেড ২মিটার চওড়া এবং জমি অনুযায়ী লম্বা হবে।

১৯৯২ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট শাহী নামের একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করে। জাতের বৈশিষ্ট্য হলো- এটি একলিঙ্গী। গাছের উচ্চতা ১.৬ থেকে ২ মিটার। কাণ্ডের খুব নিচু থেকে ফল ধরে। ডিম্বাকৃতি ফলের ওজন হয় ৮০০-১০০০ গ্রাম। আর ফলপ্রতি বীজ হয় ৫০০-৫৫০টি। ফল বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। রং গাঢ় কমলা থেকে লাল। গাছ প্রতি ফলের সংখ্যা ৪০-৬০টি। এ জাত দেশের সব জায়গায় চাষ উপযোগী।

পদ্ধতি

পেঁপের চারা বীজতলা ও পলিথিন ব্যাগে তৈরি করা যায়। চারা তৈরির ক্ষেত্রে ১০-১৫ সেন্টিমিটার সারি করে প্রতিটিতে ৩-৪ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে। বপনের ১৫-২০ দিন পর চারা বের হয়। আর ৪০-৫০ দিন পর তা রোপণের উপযোগী হয়।

২.২ মি দূরত্বে পেঁপের জন্য গর্ত তৈরি করতে হবে। প্রতি গর্তে ৩টি করে চারা রোপণ করলে হেক্টরপ্রতি চারা লাগবে ৭৫০০টি। এসব সুস্থ-সবল চারা পেতে ৪০০-৫০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন। তবে হাইব্রিড পেঁপের জন্য ১০০-১৫০ গ্রাম বীজ যথেষ্ট।

চারা রোপণের ১৫-২০ দিন আগে বেডের মাঝ বরাবর ২ মিটার দূরত্বে তৈরি করতে হবে গর্ত। এর সাথে গর্তপ্রতি ১৫ কেজি পচা গোবর, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ২০ গ্রাম বরিক এসিড এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মেশাতে হবে। সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে গর্ত পূরণ করে সেচ দিতে হবে।

আশ্বিন এবং পৌষ মাস উন্নত পদ্ধতিতে পেঁপে চাষে সফলতা পেতে বীজ বপন ও চারা রোপণের সময়। বপনের ৪০-৫০ দিন পর অর্থাৎ মাঘ-ফাল্গুন মাসে চারা রোপণের উপযোগী হয়।

 

পেঁপে চাষ ২ পেঁপে চাষের পদ্ধতি ,যেভাবে পেঁপে চাষে মিলবে দ্বিগুণ ফলন

 

চারা রোপণের আগে গর্তের মাটি ভালোভাবে ওলট-পালট করে নিতে হবে। প্রতি গর্তে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বে ত্রিভুজ আকারে ৩টি করে চারা রোপণ করতে হবে। বীজতলায় উৎপাদিত চারার উন্মুক্ত পাতাগুলো ফেলে দিলে রোপণ করা চারার মৃত্যুহার হ্রাস পায়। এ ছাড়া চারা দ্রুত বড় হয়।

পলিব্যাগে উৎপাদিত চারার ক্ষেত্রে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পলিব্যাগটি দেখেশুনে অপসারণ করতে হবে, যাতে মাটির বলটি ভেঙে না যায়। পড়ন্ত বিকেলে চারা রোপণের জন্য উত্তম সময়। লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে চারার গোড়া বীজতলা বা পলিব্যাগে মাটির যতটা গভীরে ছিল তার চেয়ে বেশি নিচে না যায়।

ভালো ফলন পেতে হলে পেঁপে গাছে সময়মতো সুষমমাত্রায় সার দিতে হবে। প্রতি গাছে ৪৫০-৫০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪৫০-৫০০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। চারা রোপণের এক মাস পার হলে প্রতিমাসে গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হয়। গাছে ফুল আসার পর এই মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। মাটিতে রসের অভাব হলে পানির ব্যবস্থা করতে হবে।

উন্নত পদ্ধতিতে পেঁপে চাষে অবশ্যই পরিচর্যার দিকে শতভাগ খেয়াল রাখতে হবে। জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বর্ষা মৌসুমে আগাছা দমন করতে গিয়ে মাটি যাতে বেশি আলগা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সেচ দিতে হবে। সেচের ও বৃষ্টির পানি যাতে জমিতে জমে না থাকে সে জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর গাছে ফুল আসলে প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ-সবল স্ত্রী গাছ রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলতে হবে। তবে সুষ্ঠু পরাগায়ন ও ফল ধারণের জন্য বাগানের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে শতকরা ৫টি পুরুষ গাছ থাকা দরকার।

পেঁপের অধিকাংশ জাতের ক্ষেত্রে একটি পত্রক থেকে একাধিক ফুল আসে। এর থেকে ফল ধরে। ফল কিছুটা বড় হওয়ার পর প্রতি পত্রকক্ষে সবচেয়ে ভালো ফলটি রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। দ্বিতীয় বা তার পরবর্তী বছরে যে পেঁপে হয় সেগুলো ঠাসাঠাসি অবস্থায় থাকে। ফলে ঠিকমতো বাড়তে পারে না এবং এদের আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ছোট ফলগুলো ছাঁটাই করতে হবে।

 

পেঁপে চাষ ৩ পেঁপে চাষের পদ্ধতি ,যেভাবে পেঁপে চাষে মিলবে দ্বিগুণ ফলন

 

পেঁপের ভাইরাসঘটিত পাতা মোড়ানো রোগ: এই রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো পাতা নিচের দিকে বা ভিতরের দিকে গুটিয়ে যায়। অন্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- পত্রশিরা মোটা হয়ে যাওয়া, মাঝেমধ্যে বাইরের দিকে পত্রশিরার স্ফীতি প্রভৃতি দেখা যায়। পাতা চামড়ার মতো খসখসে ও ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং পত্রবৃন্ত বিকৃত হয়ে পাকিয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। গাছের ওপরের দিকের পাতাকেই বেশি আক্রমণ করে। রোগের পরবর্তী পর্যায়ে পত্রমোচন ঘটে। গাছের বৃদ্ধি রোধ হয় এবং গাছে ফুল ও ফল ধরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি ফল ধরেও তবে তা ছোট, আকারে বিকৃত হয় এবং অকালেই ঝরে পড়ে।

এই রোগের ভাইরাসের প্রধান বাহক হলো বেসমিসিয়া ট্যাবাসি (Bemisia tabaci) নামক সাদা মাছি। এই মাছি এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে গিয়ে এই রোগের ভাইরাসের বিস্তারে সাহায্য করে। বাহকের শরীরে ভাইরাস সক্রিয় অবস্থায় থাকাকালে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছড়িয়ে যায়।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: রোগ প্রতিরোধী উদ্ভিদের জাত রোপণ করার চেষ্টা করুন। পেঁপে গাছের আশেপাশে এই রোগের জীবাণুকে পরাশ্রয় প্রদান করে এমন ধরনের উদ্ভিদ বেড়ে উঠতে দেবেন না। উপকারী পোকামাকড় যাতে অত্যধিক কীটনাশকের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলে নষ্ট করে দিন। ফসল তোলার পরে উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ যাতে জমিতে পড়ে না থাকে সেদিকে নজর রাখুন।

আরও পড়ুন :

Leave a Comment