আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ
Table of Contents
বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ
বীজ উৎপাদনের কৌশল
ফসলের ভালো ফলন পেতে গেলে ভালো বীজ উৎপাদনের বিকল্প নেই। সাধারণ ফসল উৎপাদনের চেয়ে বীজ ফসল উৎপাদন পদ্ধতি কিছুটা আলাদা। বীজ ফসল উৎপাদন করতে বিশেষ কিছু পরিচর্যা ও যত্ন নেয়া প্রয়োজন। আমরা এই বীজ ফসল থেকেই খাওয়ার জন্য ফসল উৎপাদন করে থাকি। এই বীজ ফসল উৎপাদন করতে গেলে কিছু কৌশল অনুসরণ করতে হয় যা নিচে আলোচনা করা হলো।
স্থান নির্বাচন :
ভালো মানের বীজ উৎপাদনের জন্য প্রচুর সূর্যালোক, মাঝারি বৃষ্টিপাত, শুষ্ক ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং পরাগায়নের সময় হালকা বাতাস প্রবাহিত হয় এমন ধরনের স্থান নির্বাচন করা উচিত।
জমি নির্বাচন জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ উর্বর সমতল ভূমি যেখানে পরিমিত আলো বাতাস বিরাজমান এবং আগাছার প্রকোপ কম এমন জমি নির্বাচন করতে হয়। কোন জমিতে একাধিক বার একই জাতের ফসল চাষ না করাই শ্রেয়।
বীজ সংগ্রহ :
অবশ্যই বীজ অনুমোদনকারী সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
যেমন- প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদনের জন্য ভিত্তি বীজ, ভিত্তি বীজের জন্য মৌল বীজ সংগ্রহ করতে হয়। সংগ্রহের সময় বীজের বস্তা বা প্যাকেটের ট্যাগে জাতের নাম, ব্যবহারের সময়সীমা, গজাবার ক্ষমতা, আর্দ্রতা, বীজ পরীক্ষার তারিখ ইত্যাদি তথাগুলো সঠিক আছে কিনা তা অবশ্যই খেয়াল করতে হবে। বীজহার গজাবার ক্ষমতা, বিশুদ্ধতা, বপনের সময় মাটির উর্বরতা প্রভৃতি বিবেচনা করে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমিতে কি পরিমাণ বীজ লাগবে তা নির্ধারণ করে নিতে হবে।
জমি প্রস্ততকরণ :
বিভিন্ন জাতের বীজ ফসলের জন্য বিভিন্নভাবে জমি তৈরি করতে হয়। যেমন- ধানের জমি শুকনো অবস্থায় ৪-৬ বার চাষ মই নিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করে নিতে হয়। আবার রোপা ধানের জমি পানি নিয়ে ভিজিয়ে কানা করে প্রস্তুত করতে হয়।
বীজ বপনের সময় ও পদ্ধতি নির্বাচিত বীজ সঠিক সময়ে সারিতে বা ছিটিয়ে প্রায় গভীরতায় বুনতে হয়। বীজ সারিতে বপন করাই শ্রেয়। এতে আলো, বাতাস সহজে পায়, পরিচর্য সহজ হয় এবং বীজও কম লাগে। তবে বপনের গভীরতা, বীজের আকার, মাটির বুনট ও আর্দ্রতা প্রভৃতির উপর বগনের সফলতা নির্ভর করে।
স্বাতন্ত্রিকরণ/ পৃথকীকরণ দূরত্ব নির্ধারিত জমির আশে পাশে একই বা ভিন্ন জাতের ফসলের সাথে যাতে বীজ ফসলের অনাকাঙ্ক্ষিত সংমিশ্রণ না ঘটে সেজন্য নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। যেমন- ধানের ভিত্তি বীজের বেলায় এটি থেকে প্লটের তন্ত্রিকরণ ৯ মিটার এবং প্রত্যাশিত বীজের ক্ষেত্রে ৫ মিটার রাখা হয়।
বাছাইকরণ/রোগিং : ভালো বীজ বপন করলেও গজাবার পর কিছু অন্য জাতের ফলন জন্মাতে দেখা যায়। হাতের ব্যাগত বিষক্ষতা রক্ষার স্বার্থে জমিতে ঘুরেফিরে এসব গাছ। তুলে ফেলতে হয়। একেই রোগিং বলে। ফুল আসার আগেই এ কাজটি করা উত্তম। তবে তিন পর্যায়ে এ কাজটি করা যেতে পারে। যথা-
ক. গাছে ফুল আসার আগে,
খ.. ফুল আসার সময় এবং
গ. পরিপক্ক হওয়ার পূর্বে।
পরিচর্যা প্রয়োজনমাফিক সার ও পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। জলাবদ্ধতা দেখা দিলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি বের করে নিতে হবে। এ ছাড়া আগাছা হলে তা নিড়ানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং পোকা মাকড় ও রোগবালাই দেখা দিলে তা সমন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বীজ সংগ্রহ ভালোভাবে পরিপক্ক হওয়ার পর বীজ কাল কাটতে হবে। তারপর মাড়াই করে ঝেড়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। প্রক্রিয়াজাতকরণ কর্তনকৃত বীজ ফসল সঠিক স্থানে নিয়ে এসে মাড়াই করার পর বীজ পরিষ্কার করে নিতে হবে।
এ সময় অবশ্যই বীজ থেকে অন্য ফসলের বীজ, অন্য জাতের বীজ, আগাছা বীজ, খড়কুটা, ভাঙ্গা দানা প্রভৃতি বেছে নিতে হবে। এরপর আবার ঝাড়াই করে নিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণের সম্যা বীজের আর্দ্রতা ১২% এর উপর এবং ৪% এর নিচে গেলে সজীবতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সুতরাং বীজের আর্দ্রতা ৪-১২% এর মধ্যে হলে বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়।
মনে রাখতে হবে, বীজের আর্দ্রতা শতকরা ১২ ভাগের বেশি হলে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই আক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বীজ সংরক্ষণের নীতি : বীজ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সাধারণত নিচের নীতিগুলো মেনে চলা
ক. বীজ রাখার জায়গা শুষ্ক ও ঠাণ্ডা হতে হবে।
খ. সংরক্ষণের আগে বীজ পরপর কয়েকদিন ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে ও পরে ছায়ায়। ঠাণ্ডা করে নিতে হবে।
গ. সহজে সজীবতা হারায় না এমন ধরনের উন্নতমানের বীজ বায়ু নিরোধক ধাতব পাত্র বা পলিথিনের বছর সংরক্ষণ করতে হবে।
ঘ. বীজ রাখার জায়গা পোকা ও রোগের আক্রমণের প্রতিরোধক হতে হবে।
ঙ. মাঝে মাঝে বীজ পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং প্রয়োজনে শুকিয়ে নিতে হবে।