আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহার – যা কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহার
কৃষি জমি
কৃষি জমি ব্যবহার করে কৃষি পন্যের উৎপাদন, ক্রয়, বাজারজাতকরণ পর্যন্ত যে সকল বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাদেরকে কৃষি উপকরণ বলে। এ সমস্ত কৃষি উপকরণের মধ্যে কৃষি জমি সেচের জন্য পানি, কৃষির অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ যেমন বীজ, সার, কীটনাশক, জমি চাষের জন্য যান্ত্রিক মালামাল এবং ফসল সংগ্রহের জন্য অন্যান্য যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কৃষি ঋণ সংগ্রহের জন্য কৃষি সমবায় ব্যবহার উচ্চ মাত্রার সক্ষমতা এনে দিতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এই উভয় জাতীয় প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা যায়। যে, সর্বনিম্ন এক হেক্টর জমি না হলে একটি লাভজনক কৃষি খামার পরিচালনা করা যায় না। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক এর চাইতে ক্ষুদ্রতর কৃষি জমির মালিক। এমন কি যাদের আড়াই একর বা তার কিছু বেশি পরিমান জমি রয়েছে তারাও তাদের কৃষিকাজের আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে নামি যন্ত্রপাতি কিনতে সক্ষম নন।
যদি কোনোভাবে কিনেও ফেলেন ঐ যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারেন না। নিজের কাজ শেষে বসিয়ে রাখতে বা ভাড়ায় দিতে হয়। সমবায়ের মাধ্যমে অনেক জমি একই ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যায়। সেই ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল কৃষি উপকরণের সর্বোচ্চ পরিমাণ লাভজনক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
সমবায়ীগন সম্মত হলে কিছু জমিকে জলাধারে রূপান্তরিত করে বর্ষার পানি ধরে রাখা যায়, যা থেকে প্রয়োজনের সময় সেচের পানি পাওয়ার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায় । অর্থাৎ তুলনামূলক নিচু জমিও সমবায়ের অন্তর্ভূক্ত করে নেওয়া যায়। দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে সমবায়ের আওতায় জমির পরিমাণ চার পাঁচশত হেক্টর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। তবে জমির পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি জমি ব্যবহারের পরিকল্পনা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন হবে।
পানি
কৃষি কাজের জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি ছাড়া কোনো ধরণের কৃষিকাজই চালানো সম্ভব নয়। কয়েক দশক আগে আমাদের দেশে কৃষিকাজের জন্য গভীর নলকূপের সুপারিশ করা হতো। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে, গভীর নলকূপের অতি ব্যবহার পরিবেশ বান্ধব নয়। সবচাইতে নিরাপদ পানি হলো জলাধারে সঞ্চিত পানি। জলাধারে পানি বর্ষাকালে সঞ্চয় করে সারা বছর সেই পানি ব্যবহার সর্বোত্তম।
জলাধার করা, সেখান থেকে পাম্পের সাহায্যে সেচ নালা বা পাইপে সমবায়ের আওতাধীন জমিগুলোতে, স্বল্প অপচয়ে, সেচের পানি ব্যবহার করা যায়। ভূ-উপরিস্থ জলাধারে সঞ্চিত পানি দিয়ে সেচ দেওয়ার খরচ তুলনামূলক অনেক কম। তা ছাড়া সেচ ছাড়াও এই জলাধারের পানি অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কাজে লাগে যা লাভজনক উৎস হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
এ ধারনায় প্রাকৃতিক জলাধারগুলি সমবায়ের আওতায় এনে জালউৎস সমবায়ের জমিতে সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়। জলধারের সঞ্চিত বর্ষাকালের পানি সারা বছর সেচ কার্যে ব্যবহার করায় কৃষির উৎপাদন হার তুলনামূলক ভাবে বৃদ্ধির ফলে স্বনির্ভর কৃষির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে ।
কৃষির ভারী যন্ত্রপাতি
আমরা আগেই বলেছি জমিগুলির পর্যায়ক্রমিক খন্ডকরণের কারণে কৃষির যান্ত্রিককরণ কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ কৃষির উৎপাদন তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধির জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয়তা আজ সার্বজনীন ভাবে স্বীকৃত। পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, হারভেষ্টার, স্প্রেয়ার থেকে শুরু করে বহু যন্ত্রপাতি ফসল উৎপাদন, পশুপাখি পালন এবং শস্যচাষে সফলভাবে ব্যবহার করা যায়।
এ সকল অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কৃষির উৎপাদনে ব্যপক অবদান রাখলেও এর ক্রয়, ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ যথেষ্ট জটিল এবং ব্যয়বহুল। এ সব বিবেচনায় এককভাবে এসকল যন্ত্রপাতি ক্রয় না করে যদি সমবায়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায় তাহলে আনুপাতিকহারে ব্যয়ভার যেমন কমবে, তেমনি ফসল নিবিড়তার বিবেচনায় ঐ সকল যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহারও নিশ্চিত হবে।
কৃষির অন্যান্য অত্যাবশ্যক উপকরণ সংগ্রহ
কৃষির প্রধান উপকরণ বীজ, সার, ঔষধ, তাছাড়া পশু ও মৎস্য সংগ্রহণ ও সংরক্ষণে সমবায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে। কৃষি সমবায়ের কারণে এ সকল অত্যাবশ্যক উপকরণের বর্ধিত চাহিদা সৃষ্টি হবে এবং এ চাহিদার পরিমাণ সহজেই হিসেব করে সরকারী কৃষি সেবা সংস্থাকে (যেমন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) জানানো যেতে পারে।
জরুরী কৃষি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো সরবরাহযোগ্য উপকরণের মোট চাহিদা সম্পর্কে জেনে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। এতে মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ সংগ্রহ যেমন নিশ্চিত হয় তেমনি সমন্বিত চাহিদার ভিত্তিতে সংগ্রহ করার খরচও অনেকাংশে কম পড়ে।
কৃষি ঋণ প্রাপ্তি এবং পরিশোধ
কৃষির চলমান উৎপাদানশীলতা ধরে রাখা এবং ক্ষেত্র বিশেষে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষি ঋণ প্রায়ই বলিষ্ট ভূমিকা পালন করে। কিন্তু একক কৃষিঋণ প্রাপ্তি এই আধুনিক যুগেও এক জটিলতার নাম। কৃষিঋণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন শর্তের কারণে প্রায়শই কৃষক ঋণ লাভে অসমর্থ কিংবা নিরুৎসাহিত হয়। কিন্তু একটি কৃষি সমবায় যদি সরকারের নিবন্ধিত হয় এবং এর সদস্যগণের একটি ঋণতহবিল থাকে তাহলে অনেক জটিলতা সহজেই নিরসন করা যায়।
নিবন্ধিত হওয়ার কারণে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদানে স্বচ্ছন্দেই করেন এবং সমবায়ের সদস্যরাও আবদকালীন ঋণ তাদের তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় কণ শোধ করতে পারে।
সারসংক্ষেপ
কৃষির উৎপাদনশীলতা ক্রমবর্ধমান রাখা এবং প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় অত্যাবশ্যক উপকরণসমূহ সংগ্রহের ক্ষেত্রে কৃষি সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সমবায়ের মাধ্যমে ব্যায়বহুল আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা যেমন সহজ তেমনিভাবে তার উৎকৃষ্ট কার্যকরি ব্যবহার নিশ্চিত করে ।