Category Archives: বাউবি মাধ্যমিক

বাউবি মাধ্যমিক

২৬৮৬ এসএসসি বাউবি কৃষি শিক্ষা সূচিপত্র

২৬৮৬ এসএসসি বাউবি কৃষি শিক্ষা সূচিপত্র – কৃষি শিক্ষা কোর্সটি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর “সেকেন্ডারী স্কুল সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম (এস এস সি প্রোগ্রাম)” এর একটি কোর্স। এই “কৃষি শিক্ষা” বিষয়টির কোর্স কোড : এসএসসি ২৬৮৬ ।

কৃষি শিক্ষা সূচিপত্র (২৬৮৬ এসএসসি বাউবি )

 

কৃষি শিক্ষা ২৬৮৬ বই এর পিডিএফ ডাউনলোড:

ইউনিটের নাম

ইউনিট নং

ভুমিকা ও সূচিপত্র এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Inner
ফসল সম্পর্কিত কৃষি প্রযুক্তি এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-01
কৃষি প্রযুক্তি : বীজ, মাছ ও পশু-পাখির খাদ্য সংরক্ষণ এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-02
কৃষি উপকরণ বীজ এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-03
মাছের আবাসস্থল এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-04
কৃষি উপকরণ : গৃহপালিত পশু-পাখির আবাসন ও খাদ্য এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-05
কৃষি ও জলবায়ু এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-06
কৃষিজ উৎপাদনঃ ফসল এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-07
কৃষিজ উৎপাদন: সবজি, ফুল, ফল চাষ, এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-08
কৃষিজ উৎপাদন: মাছ চাষ এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-09
কৃষিজ উৎপাদন: গৃহপালিত পশুপাখি পালন পদ্ধতি এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-10
শিল্পের কাঁচামাল: কৃষিজ দ্রব্যাদি এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-11
বনায়ন এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-12
কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার এসএসসি বাউবি ২৬৮৬ কৃষি শিক্ষা – Unit-13

 

ইউনিট ১ : ফসল সম্পর্কিত কৃষি প্রযুক্তি

ইউনিট ২ : কৃষি প্রযুক্তি : বীজ, মাছ ও পশু-পাখির খাদ্য সংরক্ষণ

ইউনিট ৩ : কৃষি উপকরণ বীজ

ইউনিট ৪ : মাছের আবাসস্থল

ইউনিট ৫ : কৃষি উপকরণ : গৃহপালিত পশু-পাখির আবাসন ও খাদ্য

ইউনিট ৬ : কৃষি ও জলবায়ু

ইউনিট ৭ : কৃষিজ উৎপাদনঃ ফসল

ইউনিট ৮ : কৃষিজ উৎপাদন: সবজি, ফুল, ফল চাষ,

ইউনিট ৯ : কৃষিজ উৎপাদন: মাছ চাষ

ইউনিট ১০ : কৃষিজ উৎপাদন: গৃহপালিত পশুপাখি পালন পদ্ধতি

ইউনিট ১১ : শিল্পের কাঁচামাল: কৃষিজ দ্রব্যাদি

ইউনিট ১২ : বনায়ন

ইউনিট ১৩ : কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার

 

এই বইটি রচনা করেছেন – ড. শিরিন সুলতানা, অধ্যাপক ড. মো: আবু তালেব, অধ্যাপক ড. মো: শাহ আলম সরকার, অধ্যাপক ড. আ,ন,ম, আমিনুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো: আবদুল ওয়াদুদ, ড. মোহাম্মদ শরীফ রায়হান। বইটি সম্পাদনা করেছেন অধ্যাপক ড. জি.এম. মুজিবুর রহমান। বইটির সমন্বয়কারী ড. শিরিন সুলতানা। বইটির প্রকাশ কাল : জানুয়ারি, ২০১৯।

বইটির প্রকাশনায় রয়েছে – প্রকাশনা, মুদণ্র ও বিতরণ বিভাগ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর-১৭০৫। বইটির প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন কাজী সাইফুদ্দীন আব্বাস, কাভার গ্রাফিক্স করেছেন আবদুল মালেক। বইটির অক্ষর বিন্যাস ও পেইজ লে-আউট করেছেন শাহাবুদ্দিন মোল্লা
বইটির মুদণ করেছে মাস্টার সিমেক্স পেপার লি:, ৬৫/২/১ বক্স কালভাটর্ রোড, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।

 

 

কোর্স পরিচিতি:

জাতীয় জীবনের উন্নয়নে ও গতিশীল জাতি গঠনে শিক্ষার বিকল্প নেই। সুশিক্ষিত জনশক্তি ছাড়া দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত মেধা ও সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশে সাহায্য করা ও প্রাথমিক স্তরের অর্জিত শিক্ষার মৌলিক জ্ঞান ও দক্ষতা সম্প্রসারিত ও সুসংহত করার মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষার যোগ্য করে তোলা।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রনে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রযুক্তিগত উন্নতি, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, সমকালীন চাহিদা ও পরিবেশগত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কৃষির স্বতঃস্ফূর্ত প্রয়োগের দিকটি মাথায় রেখে কৃষি শিক্ষা শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে যাতে অন্যান্য ক্ষেত্রের মত বিজ্ঞানেও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করে দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি করা যায়।

এ শিক্ষাক্রমকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন জীবনে কৃষি শিক্ষার জ্ঞান প্রয়োগ করতে পারে, হাতে কলমে কাজ করে বিষয়বস্তুকে সহজে অনুধারন ও বিশ্লেষণ করতে পারে। মুখস্থ বিদ্যা নিরুৎসাহিত করে কৃষি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করার জন্য কৃষি শিক্ষার জ্ঞানকে আরও জীবনঘনিষ্ঠ এবং কৃষি শিক্ষা অধ্যয়ন সহজতর ও আনন্দদায়ক করার কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে ।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে মাধ্যমিক স্তরের দূরশিক্ষণ পদ্ধতির শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে মাধ্যমিক স্তরের স্ব-শিখন পাঠসামগ্রী হিসেবে কৃষি শিক্ষা মডিউলটি রচনা করা হয়েছে। উক্ত মডিউল প্রণয়নে শিক্ষার্থীদের সামর্থ্য, প্রবণতা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। যেহেতু, এখানে মডিউল একই সংগে পাঠ্যসামগ্রী ও শিক্ষকের ভূমিকা পালন করবে, তাই মডিউলটির বিষয়বস্তু যতদূর সম্ভব নিজে পড়ে বোঝার উপযোগী করে রচনা করা হয়েছে।

মডিউলটির বিষয় নির্বাচন ও উপস্থাপনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ সাধনের দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটের শুরুতে ভূমিকা, ইউনিট সম্পৰ্কীয় নির্দেশনা ও ইউনিট বিভাজন: (পাঠ) দেয়া হয়েছে। আবার, প্রতিটি পাঠের শুরুতে ঐ পাঠের শিখনফল যুক্ত করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থী শিখনফল অনুযায়ী জ্ঞান অর্জিত হলো কি না তা যাচাই করতে পারে।

শিক্ষার্থীর কাছে পাঠটিকে আকর্ষণীয়, আনন্দদায়ক ও সহজতর করার জন্য বিষয় আলোচনার সময় মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীর কাজ সংযোজন করা হয়েছে। প্রয়োজন মাফিক ছবি, ডারগ্রাম, চার্ট, গ্রাফ, ছক ইত্যাদি সংযোজন করা হয়েছে। প্রতিটি পাঠ আলোচনার শেষে ঐ পাঠের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় সংক্ষিপ্ত আকানের (সারসংক্ষেপ) দেয়া হয়েছে যাতে শিক্ষার্থী পাঠটি পুনরায় ঝালিয়ে নিতে পারে।

শিক্ষার্থীর স্ব-মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে প্রতিটি পাঠের শেষে পাঠোত্তর মূল্যায়নে বহু নির্বাচনি প্রশ্ন-উত্তর এবং ইউনিটের শেষে সৃজনশীল রচনামূলক প্রশ্ন নেয়া হয়েছে। স্ব-শিখন পাঠসামগ্রী হিসেবে দূরশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকটি আনন্দিত পাঠ ও প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জন নিশ্চিত করবে বলে আশা করি।

 

 

কোর্সবই অনুসরণ করার নির্দেশনা:

এ মডিউলটি দূরশিক্ষণ পদ্ধতির শিক্ষার্থীদের জন্য রচিত হয়েছে। দূরশিক্ষণ পদ্ধতির মূল কথাই হল স্বনির্ভর পাঠ ব্যবস্থাপনা। এ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজ দায়িত্বে নিজের সুবিধামত সময়ে শেখার কাজে নিয়োজিত হন। পাঠসামগ্রী উপস্থাপনায় এ পদ্ধতি মড্যুলার পদ্ধতি নামে পরিচিত।

এখানে মডিউল একসাথে পাঠ্যসামগ্রী ও শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে। এতে শিক্ষার্থীগণ টিউটরের সরাসরি সহায়তা ছাড়া নিজেই পড়াশোনা করতে পারেন। এ কারণেই বইটির বিষয়বস্তু যতদূর সম্ভব নিজে পড়ে বোঝার উপযোগী করে রচনা করা হয়েছে। মডিউলটির ভাবগত ঐক্য রক্ষা করে পাঠের। বিষয়বস্তুকে কতগুলো ইউনিটে ভাগ করা হয়েছে। আবার ইউনিটগুলোকে কতগুলো পাঠে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি পাঠের শেষে আপনি নিজেই নিজের পাঠের অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে পারবেন। এজন্য পাঠের শেষে পাঠোত্তর মূল্যায়ন এবং ইউনিটের শেষে চূড়ান্ত নৃত্যায়ন রয়েছে । শিক্ষার্থীরা যাতে এ মডিউলটি পড়ে অধিকতর সুফল লাভ করতে পারেন। সোনা নিচে কিছু নির্দেশনা তুলে ধরা হল :

  •  ইউনিটের শিরোনাম ও ভূমিকা পড়ে সম্ভাব্য বিষয়বস্তু কী হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা করুন।
  • প্রথম পাঠের সবগুলো উদ্দেশ্য’ পড়ে এই পাঠ থেকে কী কী শিখতে পারবেন তা জেনে নিন ।
  • এরপর ইউনিটের বিষয়বস্তু ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন ও আপনার জন্য নির্ধারিত শিক্ষার্থীর কাজগুলো করুন। বিষয়বস্তু অধ্যয়ন শেষে শিখনফলগুলো অর্জিত হলো কি না তা ভালোভাবে যাচাই করুন। যদি শিখনফল অর্জিত না হয় তাহলে বিষয়বস্তু পুনরায় অধ্যয়ন করুন । কোথাও চিত্র থাকলে চিত্রের সাথে বিষয়বস্তু মিলিয়ে পড়ুন ।
  • কোন মডিউলের বিষয়বস্তু অধ্যয়নের সময় যে বিষয়গুলো অপেক্ষাকৃত কঠিন দুর্বোধ্য মনে হয়েছে তা চিহ্নিত করে আপনার নোট খাতায় লিপিবন্ধ করুন এবং কঠিন বিষয়গুলো সমাধানের জন্য বিষয়বস্তু পুনরায় অধ্যয়ন করুন।
  • প্রতিটি ইউনিটের বিষয়গুলো ভালোভাবে বোঝার জন্য প্রতিটি ইউনিটের প্রতিটি পাঠে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার্থীর কাজ সংযোজন করা হয়েছে। ইউনিটের বিষয়বস্তু ভালভাবে অধ্যয়ন করে শিক্ষার্থীর কাজগুলো সম্পন্ন করুন।
  • পাঠশেষে পাঠোত্তর মূল্যায়নের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন । ইউনিটের শেষে দেয়া উত্তরমালার সাথে আপনার উত্তর মিলিয়ে দেখুন। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর সঠিক না হলে এই পাঠটি আবারও ভালো করে পড়ুন এবং প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে চেষ্টা করুন । এরপর চূড়ান্ত মূল্যায়ন অংশের সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা আছে কিনা দেখুন । জানা না থাকলে সংশ্লিষ্ট অংশ আবারও পড়ুন।

 

 

টিউটোরিয়াল ক্লাস সম্পর্কিত পরামর্শ:

  • ওপেন স্কুলের এ মডিউলটি ছাড়াও স্থানীয় স্টাডি সেন্টারে আপনার জন্য প্রতি মাসে টিউটোরিয়াল ক্লাসের ব্যবস্থা রয়েছে । আপনি প্রথমেই আপনার কৃষি শিক্ষা বিষয়ে কতটি টিউটোরিয়াল ক্লাস পাবেন তা আপনার স্টাডি সেন্টার থেকে জেনে নিন এবং আপনার স্টাডি সেন্টারের প্রতিটি টিউটোরিয়াল ক্লাসে অংশ গ্রহণ করুন।
  • টিউটোরিয়াল সার্ভিসকে কার্যপোযোগী করতে আপনার মডিউলটির সব ইউনিটকে টিউটোরিয়াল ক্লাসের সম সংখ্যক অংশে ভাগ করে নিন । প্রথম টিউটোরিয়াল ক্লাসে যাওয়ার আগে আপনার ভাগকৃত প্রথম অংশটি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন। অধ্যয়নের সময় যে বিষয়গুলো অপেক্ষাকৃত কঠিন/দুর্বোধ্য মনে হয়েছে তা চিহ্নিত করান প্রয়োজনে আপনার নোট খাতায় লিপিবদ্ধ করুন। টিউটোরিয়াল ক্লাসে আপনার চিহ্নিত কঠিন/দুর্বোধ্য বিষয়গুলো সমাধানে টিউটরের (শিক্ষকের) সহায়তা নিন।
  • একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ইউনিটের সবগুলো পাঠ অধ্যয়ন শেষ করুন।

পারিবারিক মৎস্য খামার

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পারিবারিক মৎস্য খামার – যা কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার এর অন্তর্ভুক্ত। খামার পরিচালনার বিভিন্নধাপ অনেকগুলো ধারাবাহিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে খামার পরিচালনা করা হয়। খামার পরিচালনার বিভিন্ন ধাপগুলো হচ্ছেঃ

পারিবারিক মৎস্য খামার

 

 

(ক) খামারে পোনা মজুদপূর্ব ব্যবস্থাপনা (পুকুর প্রস্তুতি):

১। পুকুরের আগাছা পরিষ্কার

২।  রাক্ষুসে ও অপ্রয়োজনীয় মাছ দূরীকরণ

৩। পাড় মেরামত

৪। চুন প্রয়োগ

৫। সার প্রয়োগ

৬। পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা

৭। পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা ।

(খ) পোনা মজুদকালীন ব্যবস্থাপনাঃ

১। পোনাৰ প্ৰজাতি নিৰ্বাচন

২। ভালোপোনা বাছাইকরণ

৩। পোনা শোধন

৪। পোনার পরিমাণ নির্ধারণ

৫। পোনা পরিবহন

৬। পোনা অভ্যন্তকরণ ও ছাড়া।

গ) পোনা মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা

১। নিয়মিত সার প্রয়োগ

২। সম্পূরক খা

৩। মাছের বৃদ্ধি পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা

৪। মাছ ধরা ও বিক্রয়

খামার পরিচালনার বিভিন্ন উপকরণ

খামার পরিচালনার বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন। খামার ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পর্যায়ভিত্তিক উপকরণসমূহের চাহিদা নিচে দেয়া হলো

 

 

মাছের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা

মাছ চাষকালীন সময়ে রোগাক্রান্ত হতে পারে। তাই মাসে একবার জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য ও অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। মাছের রোগের সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে মাছের সাভাবিক চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়, ফুলকার স্বাভাবিক রং নষ্ট হয়ে যায়, দেহের উপর লাল / কালো / সাদা দাগ পড়ে, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয় বা কম যায়, মাছের দেহ অতিরিক্ত খসখসে অনুভূত হয়।

চাষকালীন মাছের কয়েকটি সাধারণ রোগ হচ্ছে ক্ষতরোগ, লেজ ও পাখনা পচা রোগ, লাল ফুটকি রোগ, ফুলকা পচা রোগ এবং মাছের উকুন। খামারের পুকুরে মাছ রোগাক্রান্ত হলে মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

১. মাছের ক্ষত রোগ

প্রাথমিকভাবে পুঁটি, শোল, টাকি মাছ এবং পরবর্তী সময়ে কার্প জাতীয় মাছ এ রোগে আক্রান্ত হয় । সাধারণতঃ শীত এবং গ্রীষ্মকালে এ রোগ দেখা যায়। রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ অধিকতর সহজ।

রোগ প্রতিরোধের সহজ উপায় হচ্ছে পুকুরে নিয়মিত শুকিয়ে চুন দেওয়া, পুকুরে নিয়মিত সার প্রয়োগ করে প্রাকৃতিক খাদ্যের যোগান স্থিতিবস্থায় রাখা । মাছের পাশাপাশি পুকুরে কিছুসম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা পুকুরে অতিরিক্ত পোনা মজুদ না করা পুকুরে কোনো ক্ষতিকর দ্রব্য না ফেলা, পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা না রাখা এবং পুকুরে ঘনঘন ঝাকি জাল না ফেলা।

পুকুরের কিছু সাধারণ সমস্যা ও প্রতিকার

১. মাছ ভেসে ওঠা ও খাবি খাওয়া (পানিতে অক্সিজেনের অভাব) পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদার উপস্থিতি, জৈব পদার্থের পচন, বেশি সার প্রয়োগ, ঘোলাত্ব, মেঘলা আবহাওয়া ও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে পানিতে অক্সিজেনের অভাব হয় এবং এ সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে মাছ ও চিংড়ি মারা যায়।

অক্সিজেনের অভাবে মৃত মাছের মুখ “হা” করা থাকে। প্রতিকার ব্যবস্থা: পানিতে সাঁতার কেটে বা পানির উপর বাঁশ পিটিয়ে পুকুরের পানি আন্দোলিত করে অথবা হররা টেনে পুকুরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে হবে। বিপদজনক অবস্থায় পুকুরে পরিষ্কার নতুন পানি সরবরাহ করতে হবে অথবা পাম্প দিয়ে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

২. পানির উপর সবুজ স্তর অতিরিক্ত সবুজ শেওলা উৎপাদনের ফলে এ সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে মাছের শ্বাস কষ্ট হয় হয় ও মাছ পানির উপর খাবি খেতে থাকে। শেওলা পচে পরিবেশ নষ্ট হয়। মাছ ও চিংড়ির মৃত্যু হয়। প্রতিকার ব্যবস্থা পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে তুলে ফেলা যায়। সার ও খাদ্য দেওয়া সাময়িক বন্ধ রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে কিছু পানি পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু বড় সিলভার কার্প ছেড়ে জৈবিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

৩. পানির উপর লাল স্তর  লাল শেওলা অথবা অতিরিক্ত আয়রনের জন্য এ সমস্যা দেখা যায়। এর প্রভাবে পানিতে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। মাছ ও চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায়। আবার পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতিও হয়। শতাংশ প্রতি ১২-১৫ গ্রাম কপার সালফেট বা ছুঁতে ছোট ছোট পোটলায় বেঁধে পানির উপর থেকে ১০-১৫ সে.মি। নিচে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখলে বাতাসে পানিতে ঢেউয়ের ফলে তুঁতে পানিতে মিশে শেওলা দমন করে । প্রতিকার ব্যবস্থা: খড়ের বিচালি বা কলাগাছের পাতা পেঁচিয়ে পানির উপর টেনে বা পাতলা সুস্তি কাপড় দিয়ে তুলে ফেলা যায়।

৪. ঘোলা পানি বৃষ্টি ধোয়া পানি পুকুরে প্রবেশ করে পানি ঘোলাটে হয়ে যেতে পারে। পাড়ে ঘাস না থাকলেও এমনটি দেখা যায় । এর ফলে পানিতে সূর্যের আলো ঢুকে না, ফুলকা নাই হয়ে যায় ও প্রাকৃতিক খাদ্য কমে যায়। প্রতিকার ব্যবস্থা। পুকুরে চুন (১-২ কেজি/শতক), জিপসাম (১-২ কেজি/শতক) বা ফিটকারী (২৪০-২৪৫ গ্রাম/শতক) প্রয়োগ করা যায়।

৫. পুকুরের তলদেশের কাদার গ্যাস জমা হওয়া কারণ পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদার উপস্থিতি এবং বেশি পরিমাণ লতাপাতা ও আবর্জনার পচনের ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে করে পানি বিষাক্ত হয়ে মাছ মারা যায়। প্রতিকার ব্যবস্থা। পুকুর শুকনো হলে অতিরিক্ত কাদা তুলে ফেলতে হবে। হরো টেনে তলার গ্যাস দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

সারাংশ

পারিবারিক মৎস্য খামার স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবারের মাছের চাহিদা মেটানো এবং সেসাথে সাথে সম্ভব হলে বাড়তি কিছুমাছ বাজারে বিক্রি করে পরিবারের স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করা। এছাড়াও পারিবারিক খামারের মাধ্যমে পরিবারের বেকার সদস্যের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতে পারে ।

 

ব্যবহারিক: এককভাবে ১০টি ব্রয়লার মুরগি পালনের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্ণয়

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ব্যবহারিক: এককভাবে ১০টি ব্রয়লার মুরগি পালনের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্ণয় – যা কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার এর অন্তর্ভুক্ত। ব্রয়লার খামার থেকে সাফল্য পেতে হলে প্রথমেই চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা । এছাড়াও প্রয়োজন হবে কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা। এককভাবে প্রতি ব্যাচে ১০০ ব্রয়লার উৎপাদনের লক্ষ্যে এদেরকে ৪-৫ সপ্তাহ পালনের জন্য একটি ঘর এবং খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখার জন্য আরেকটি ঘর প্রয়োজন হবে।

খামারটি খোলা জমি ছাড়াও বাড়ির ছাদ, বারান্দা বা পরিত্যক্ত স্থানেও করা যেতে পারে। এতে জমিবাবদ কোন খরচ লাগবে না। যেহেতু নির্দিষ্ট বয়সের পর ব্রয়লারের বৃদ্ধির হার কমতে থাকে ও খাদ্য গ্রহণের হার বেড়ে যায়, তাই বেশিদিন পালন করলে উৎপাদন খরচ বাড়বে এ লাভের হার কমে যাবে ।

ব্রয়লার যেহেতু কম সময়ে পুনঃপুন বাজারজাত করা যায় সে কারণে কম মূলধন খাটিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায় । ব্রয়লার খামার স্থাপন ও পরিচালনায় স্থায়ী ও আবর্তক বা চলমান এই দুই ধরনের খরচ হবে । যথা:-

ব্যবহারিক: এককভাবে ১০টি ব্রয়লার মুরগি পালনের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্ণয়

 

একটি মডেল:

নিচে এককভাবে ১০টি ব্রয়লার মুরগি পালনের আয়-ব্যয়ের হিসাব একটি টেবিল আকারে একটি মডেল দেওয়া হলো (বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আনুমানিক):

খরচ/আয় এর আইটেম পরিমাণ (১০ মুরগির জন্য) একক মূল্য (টাকা) মোট মূল্য (টাকা) মন্তব্য
ব্যয়:
মুরগির চারা (১০টি) ১০ পিস ৭৫ ৭৫০ প্রতিটি চারার দাম ৭৫ টাকা
খাদ্য (খাদ্যের খরচ) ৩০ দিন ৩০ টাকা/দিন ৯০০ দৈনিক ৩০ টাকা খাদ্য খরচ
ভ্যাকসিন ও ওষুধ ২০০ সম্পূর্ণ সময়ের জন্য অনুমান
পানি ও বিদ্যুৎ খরচ ১০০ পানির বিল ও বিদ্যুৎ খরচ
অন্যান্য খরচ (পরিচ্ছন্নতা, পরিবহন) ৫০ আনুমানিক
মোট খরচ ২০০০

 

১) স্থায়ী খরচ

স্থায়ী খরচের মধ্যে রয়েছে জমি, শেড তৈরি, অফিস ঘর, খাদ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্র রাখার স্থান এবং অসুস্থ ও মৃত পাখি সৎকার করার জায়গা ইত্যাদি বাবদ খরচ। এছাড়াও রয়েছে আসবাবপত্র এবং ব্রয়লারের ঘরে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ও উপকরণ, যেমন:- ব্রুডার, খাবার ও পানির পাত্র, হিটার বা স্টোভ, বায়ু, খাদ্য মাপার জন্য নিক্তি বা ব্যালাপ, বেলচা, বালতি, কোদাল, চাকু, দড়ি, ব্রাশ ইত্যাদি ক্রয়বাকা খরচ। এখানে ১০০টি ব্রয়লার পালনের স্থায়ী খরচের একটি মডেল হিসাব ছকে দেয়া হলো:-

 

 

২) আবর্তন খরচ

আবর্তক বা চলমান খরচের মধ্যে রয়েছে একদিন বাসের ব্রয়লার বাচ্চা সাবাবদ খরচ, সুষম খাদ্যের মূল্য, খামার পরিচালনায় জনবলের বেতন-ভাতাবাবদ খরচ, পরিবহন ও যাতায়াত খরচ, মূলধনের সুদ, অপচয় খরচ, মেরামত খরচ, বিদ্যুৎ ও পানির বিল, অসুস্থ বা মৃত ব্রয়লারের মূল্য ইত্যাদি । বাচ্চা পালনকালে শেষ পর্যন্ত ১০০টির মধ্যে প্রায় ৫টি ব্রয়লারের মৃত্যু ঘটতে পারে। এখানে ১০০টি ব্রয়লার পালনের আবর্তক খরচের একটি মডেল হিসাব ছকে দেয়া হলো:-

 

 

প্রকৃত ব্যয় হিসাবের জন্য মোট আবর্তক খরচের সঙ্গে দুরগির ঘর যন্ত্রপাতি, মূলধন ও আবর্তক খরচের উপর অপচয় খরচ হিসাব করতে হবে।

 

মোট বার্ষিক অপচয় খরচ
  • ব্রয়লারের ঘরের উপর ৫% (৮.০০০/- টাকার উপর ৫%) = 800/- টাকা
  • যন্ত্রপাতির উপর (৪,০০০/- টাকার উপর ১০%) = ৪০০/- টাকা
  • মোট স্থায়ী মূলধন ও আবর্তক প্রচের উপর ১৫% ( ১২,০০০/- + ১৭,০০০/- এর উপর ১৫% ) = ৪,৩৫০/- টাকা অতএব, মোট বার্ষিক অপচয় খরচ = ৫,১৫০/- টাকা

এক বছরে যদি ১০টি ব্যাচ পালন করা যায়, তবে একটি ব্যাচের মোট অপচয় খরচ = ৫১৫/-

অতএব, মোট ব্যয়া = মোট চলমান খরচ + একটি ব্যাচেনা মোট অপচয় চ = ১৭,০০০/- + ৫১৫/- = ১৭,৫১৫/- টাকা

 

খামারের আয়

খামারের আয়ের মধ্যে রয়েছে জীবিত ব্রয়লার বা মাংস বিক্রিবাবদ আয়, বিষ্ঠা বা ব্যবহৃত লিটার বিক্রিবাবদ আয় ও পুরনো বা অকেজো জিনিসপত্র বিক্রিবাবদ আয় ইত্যাদি। পারিবারিক ব্রয়লার খামারের আয় একদিন ব্যাসের ব্রয়লারের বাচ্চার মূল্য, খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য, পানি ও বিদ্যুৎ খরচ ও ব্রয়লার বিভিন্ন উপর অনেকখানি নির্ভর করে।

এখানে ১০০টি ব্রয়লার পালনের আয়ের একটি মডেল হিসাব ছকে দেয়া হলোঃ-

 

 

অতএব, প্রতি ব্যাচ চলার পালনে নিট লাভ  = মোট আয় মোট ব্যয়

= ২০,২৪০/- – ১৭,১৫০/-
= ৩,০৯০/- টাকা

 

চূড়ান্ত মূল্যায়ন

সৃজনশীল প্রশ্ন

১। জামাল এবং কামাল দুইভাই শিক্ষিত এবং আধুনিক কৃষি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। কিন্তু তাদের পৈত্রিক জমি কম হওয়ায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ব্যবহারে আগ্রহ পাননা। তারা তাদের সমমনা কৃষকদের নিয়ে একটি সমবায় গঠন করল। এর ফলে কৃষি উপকরণ জন্য পন্য উৎপাদন এবং বিপননে এক নতুন যুগের সূচনা হলো ।

ক) কৃষি সমবায় কাকে বলে?

খ) জামাল ও কামাল কৃষি সমবায় সংগঠন করলেন কেন? ব্যাখ্যা কর।

গ) কৃষি উপকরণ নয়, সেচ পানি সংগ্রহ এবং কার্যকরী ব্যবহারে কৃষি সমবায় সংগঠনটি কীভাবে জামাল এবং কামালকে সহায়তা করতে পারবে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ) জামাল ও কামালের গঠিত কৃষি সমবার সংগঠনটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

 

২। ময়মনসিংহের আমশোলা গ্রামের কৃষকেরা তাদের নিজের জমিতে একাকী ফসল চাষ করে নানা সমস্যায় পড়েন। যদিও অনেক কষ্টে ভালো ফলন পান, কিন্তু তার সঠিক নাম তারা পান না। পরবর্তীতে তারা উপজেলা সমবা কর্মকর্তার পরামর্শে কৃষি সমবায় গঠন করেন এবং সকল ঝুঁকি মোকাবিলা করে লাভের মুখ দেখেন ।

ক) কৃষি সমবায়ের অভ

খ) কৃষি ঋন প্রাপ্তিতে কৃষি সমবায় প্রয়োজন কেন?

গ) আসশোলা আমের কৃষকগণ কী কী সমস্যায় পড়েন তা ব্যাখ্যা করুন।

ঘ) উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার পরামর্শে কৃষকরা কীভাবে লাভবান হন-বিশ্লেষণ করুন।

 

৩। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসান পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বাড়িতে এসে তার বাবাকে কৃষি কাজে সাহায্য করেন। অতি সম্প্রতি একটি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে তিনি কৃষির উপকরণ সংগ্রহ, উৎপাদন ও ব্যবহার সমগ্রক জানতে পারেন। কৃষি উৎপাদনে সহায়ক এসব কাজগুলো কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে প্রয়োগ করে তিনি নিজের ও এলাকার উন্নয়ন করতে চান।

ক) কৃষি উপকরণ কী?

খ) কৃষির কী কী উপরকরণ কৃষকগণ ব্যবহার করে থাকেন?

গ) হাসান তার এলাকায় কীভাবে কৃষি সমবায়ের উদ্যোগ কাজে লাগাবে?

ঘ) “কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ ও তার ব্যবহার প্রগতিশীল হাসানের মতো কৃষকদের উন্নয়নের সোপান”- যুক্তি দ্বারা বিশ্লেষণ কর।

 

৪। আতাউর একজন বুদ্ধিদীপ্ত ও পরিশ্রমী কৃষক। বসতভিটার ফাকা জায়গায় পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগীতায় একটি সবজী ও পোলট্রি খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করলেন। খামার নির্মাণের প্রয়োজনীয় পাতের কথা বিবেচনা করে কিরূপ খরচ হবে এবং বছরান্তে মুনাফাই কেমন হবে তারও একটি ছক তৈরী করলেন ।

ক) স্থায়ী খরচ কাকে বলে?

খ) পারিবারিক খামারের তথ্য লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা করুন।

গ) আতাউর সাহেবের যে পোল্ট্রি খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছেন তার একটি ব্যয় বাজেট তৈরি করুন।

ঘ) পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশের উপর নির্ভর করে খামার স্থাপন করা উচিত’-আতাউর সাহেবের বিচক্ষতার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করুন।

 

৫। ময়মনসিংহের ইমি ও ইফতির কথা কে না জানে? তারা ভাই-বোন মিলে গ্রামে তৈরি করে ইমি ও ইফতির পারিবারিক খামার। তারা প্রথমে নিজ আঙ্গিনায় দেশি জাতের মুরগি পালন করে এবং এতে তেমন লাভ না হওয়ায় পোল্ট্রি খামারের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে উন্নত জাতের মুরগি ও হাঁস নিয়ে নতুনভাবে খামারটি পরিচালনা করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা সফলতা লাভ করলেন। কিন্তু তারা লক্ষ্য করলেন। তাদের খামারের বর্জ্যগুলো বাড়ির পরিবেশনক দূষিত করছে। এ অবস্থায় তারা খামারের বর্জ্যগুলো পচিয়ে ফসলের জমিতে ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

ক) পারিবারিক খামার কাকে বলে?

খ) বাণিজ্যিক খামারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।

গ) ইমি ও ইফতির সফলতার কারণ ব্যাখ্যা করুন।

ঘ) ইমি ও ইফতির উদ্যোগটির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করুন।

 

৬। মুনিয়া জান্নাত তার বাড়ির পাশে একটি অনাবাদী পতিত পুকুর আছে সেখানে কোনো প্রকার মাছ চাষ করা হয় না। তার পরিবার তেমন স্বচ্ছল ও নয় এবং দুই তিন জন সদস্য বেকারও আছে। তাই তারা পারিবারিক অসচ্ছলতা, বেকারত্ব ও পুষ্টি চাহিদার কথা বিবেচনা করে ঐ পরিত্যাক্ত পুকুরটিতে মৎস্য খামার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়

ক) পারিবারিক মৎস্য খামারের মূল উদ্দেশ্য কী?

(খ) মাছ খাবি খায় কেন? ব্যাখ্যা করুন?

গ) মুনিয়া জান্নাত তার খামারটি পরিচালনার জন্য যে ধাপগুলো অনুসরণ করবে তার বর্ণনা দিন ।

ঘ) মুনিয়া জান্নাতের উল্লেখিত খামার স্থাপনের সিদ্ধান্তটি মূল্যায়ন করুন।

 

পারিবারিক খামারের তথ্য লিপিবদ্ধ করা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পারিবারিক খামারের তথ্য লিপিবদ্ধ করা – যা কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার এর অন্তর্ভুক্ত। পারিবারিক কৃষি খামারকে সাম্প্রতিক সময়ে একটি লাভজনক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত পারিবারিক কৃষি খামারের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সম্পত্তির বিবরণ বা বা বিনিয়োগের যাবতীয় তথ্য, আয়ের সকল তথ্য এবং মুনাফার তথ্য লিপিবদ্ধ করে বাৎসরিক নীট মুনাফা হিসাব করা যায় । নিচে একটি নমুনা উপস্থাপন করা হলোঃ

পারিবারিক খামার                                       :      বিসমিল্লাহ পারিবারিক খামার

মালিকের নাম                                             :       সামসউদ্দিন

ঠিকানা                                                        :      গ্রাম-নাগা, মৌজা- সালনা, ডাকঘর- বশেমুরকৃবি, গাজীপুর সিটিকর্পোরেশন, গাজীপুর।

পারিবারিক খামারে মোট জমির পরিমান       :      ২ বিঘা (আশি শতাংশ)

উঁচু জমি                                                      :       ৪০ শতক

মাঝারি নিচু জমি                                         :         ১৫ শতক

বসত বাড়ি                                                  :         ১০ শতক

পুকুর                                                         :          ১৫ শতক

পারিবারিক খামারের তথ্য লিপিবদ্ধ করা

স্থায়ী খরচ

মুরগীর খামারে বাচ্চা তোলার আগে যে সমস্ত খরচ হয় তাকে স্থায়ী খরচ বলে। স্থায়ী খরচের মধ্যে জমি, মুরগির ঘর ব্রুডার যন্ত্র, খাদ্য পাত্র ও পানির পাত্র, ড্রাম ও বালতি, ডিম পাড়ার ঘর, আসবাবপত্র এবং বিভিন্ন আনুসাঙ্গিক যন্ত্রপাতি উল্লেখযোগ্য । নিচে ১৫০ টি ডিম পাড়া মুরগি পালনের ব্যয় হিসাব করার একটি ছক দেওয়া হলোঃ

 

 

চলমান খরচ

খামারে বাচ্চা এনা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন যে আবশ্যিক খরচ হয় তাকে চলমান ৱচ বলে। বাচ্চা পালন কালে শতকরা ২-৫% মৃত্যহার বিবেচনা করে মুরগীর বাচ্চা এনা করতে হবে। এছাড়া চলমান অন্যান্য খরচের মধ্যে খাদ্য এনা, বিদ্যুৎ খরচ, টিকা ও ঔষধ, লিটার ক্রমিক এবং পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য। ডিম পাড়া মুরগির খামারে থাকার স্থিতিকাল মোটামুটিভাবে ১৮ মাস। এসকল পারিপার্শিকতা বিবেচনায় নিয়ে পারিবারিক খামারে ১৫০ টি মুরগি পালনের চলমান খরচের হিসাব নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

 

প্রকৃত ব্যয় হিসাব করার জন্য মোট চলমান খরচের সাথে অপচয় খরচ হিসাব করতে হবে। অপচয় খরচ নিম্নলিখিত ৩টি খাতে হিসাব করা যেতে পারে ।
ক) মুরগীর ঘরের উপর ( ২০০০০/- এর ৫%) = ১০০০/-

খ) যন্ত্রপাতির উপর (১১০০০/- এর ১০%) = 1100

গ) মোট চলমান খরচের উপর (২৫৯৭০০/- এর ৫% ) = ১২৯৮৫/-
মোট অপচয় ব্যয় = (১০০০+১১০০ + ১২৯৮৫) = ১৫০৮৫/- অতএব মোট ব্যয় = মোট স্থায়ী খরচ + মোট চলমান খরচ + মোট অপচয় ব্যায়
= ৩১০০০ + ২৫৯০০+১০০৮৫.
= ১০০৮০০/-

আয়

পারিবারিক মুরগীর খামারে আয়ের প্রধান উৎস হলো মুরগীর ডিম ও বয়স্ক মুরগী। এছাড়া লিটার এবং খাদ্যের বস্তা বিক্রি করেও আয় করা যায়। ডিম পাড়া শেষে প্রতিটি মুরগি বাজারে বিক্রি করা যায়। এছাড়া লিটার জৈব সার হিসাবে জমিতে এবং মাছের খাদ্য হিসাবে পুকুরে ব্যবহার করা যায়। সুতরাং ১৫০ টি মুরগী দিয়ে শুরু করা একটি পারিবারিক খামারে আর নিম্নরুপঃ

 

 

সুতরাং মোট লাভ / নীট মুনাফা = মোট আয় মোট ব্যয়

= ৩৮৫৪৪০- ৩০৫৭৮৫/-
=৭৯,৬৫৫/- অতএব, সার্বিক হিসাব বিবেচনা শেষে দেখা যাচ্ছে মোট খরচ বাদ দিয়ে প্রথম বছরে নীট = ৭৯,৬৫৫/- লাভ হয়েছে।

সারসংক্ষেপ

পারিবারিক খামার একটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক খাত বিবেচনায় নিয়ে একটি আয়ের হিসেব শুরুতেই জানা থাকলে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহজ হয়। সর্বোপরি নটি মুনাফার একটি অগ্রিম ধারনা থাকবে বলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় উৎসাহ পাওয়া যায়।

 

পারিবারিক দুগ্ধ খামার

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পারিবারিক দুগ্ধ খামার – যা কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার এর অন্তর্ভুক্ত। দুধের প্রয়োজনীয়তা: মানুষের দৈহিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য দুধ একটি অপরিহার্য খাদ্যোপাদান। যেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাক্তির জন্য প্রতিদিন ২৫ মিলিলিটার দুধের প্রয়োজন সেখানে এদেশে দৈনিক আমরা পাচ্ছি মাত্র ৫১ মিলিলিটার। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দুধের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বিদেশ থেকে গুড়ো দুধ আমদানি করে এই ঘাটতির আংশিক পূরণ করা হচ্ছে। এ কারণে গত দুই দশকে মানুষের মধ্যে গাভী পালন ও দুগ্ধ খামার গড়ার বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমানে গ্রাম থেকে উপশহর হয়ে শহর পর্যন্ত অনেকেই পারিবারিকভাবে ছোট ছোট গাভীর খামার গড়ে দুধের ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু দেশের দুধের ঘাটতি সম্পূর্ণভাবে মিটানো সম্ভব হচ্ছে না। কাজেই এ ঘাটতি কমাতে আরও অনেক নতুন খামার গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী।

পারিবারিক দুগ্ধ খামার

 

 

পারিবারিক দুগ্ধ খামার

গাভীর খামার বা দুগ্ধ খামার বর্তমানে একটি লাভজনক শিল্প। ধনী ব্যক্তি ছাড়া অন্য সবার পক্ষে বড় আকারের গাভীর খামার অর্থাৎ দুগ্ধ খামার গড়ে তোলা সম্ভব নয়। কিন্তু ছোট ছোট পারিবারিক দুগ্ধ খামার স্থাপন করা সেই তুলনায় অনেক সহজ। পারিবারিক দুগ্ধ খামার স্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কিছুটা বাড়তি আয়েরও ব্যবস্থা হয়।

আবার ছোট ছোট খামার গড়ার মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন ও আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের বিশাল দুধের চাহিদা পূরণে অবদান রাখা যায়। সূতরাং গ্রাম, শহরতলী বা শহর যেখানেই হোক, যাদের বাড়িতে কিছুটা বাড়তি জায়গা রয়েছে তারা ২-৫টি গাভীর পারিবারিক খামার গড়ে তুলতে পারেন। এ ধরনের খামার গড়তে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না।

বাড়ির ভেতরে একটি আধাপাকা শেড তৈরি করেই গাভী পোষা যায়। পারিবারিক গাভীর খামার স্থাপনে তেমন একটা ঝুঁকি নেই। অল্প পুঁজি দিয়ে খামার শুরু করা যেতে পারে। খামার দেখাশোনা করার জন্য আলাদা শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না।

পারিবারিক দুগ্ধ খামার স্থাপনের গুরুত্ব

পারিবারিক দুগ্ধ খামার স্থাপনের গুরুত্বসমূহ নিম্নরূপ:-

  • এতে পরিবারের দুধের চাহিদা মেটানো যায়।
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত দুধ বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করা যায়।
  • দুগ্ধজাত দ্রব্য, যেমন:- ঘি, দই, মিষ্টি ইত্যাদি উৎপাদন করা যায় ।
  • গাভীর গোবর ও চনা জৈব সার ও বায়োগ্যাস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে ।
  • খামরের ধাঁড় বাহুরগুলো মোটাতাজা করে মাংসের জন্য বিক্রি করা যায়।

পারিবারিক দুগ্ধ খামারের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ

পারিবারিক দুগ্ধ খামারের জন্য জমি ও মূলধন ছাড়াও নানা রকমের উপকরণের প্রয়োজন হয়। যেমন:- গাভীর বাসস্থান বা গোশালা, গোশালা নির্মাণ সামগ্রী, উন্নত জাতের গাভী, খাদ্য ও পানির পাত্র, ঘাসের জমি, পানির লাইন, ঘাস বা খড় কাটার চপিং মেশিন, খাবারের ট্রলি, দুধ দোহন ও বিতরণ সামগ্রী, দুধ ও অন্যান্য সামগ্রী পরিবহনের জন্য পিক আপ, মটর ভ্যান বা রিকসা আন, গাভীর প্রাথমিক চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, খাদ্য, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও টিকা, বালতি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ।

 

 

দুধ দোহন

গাভীর ওলান থেকে দুধ সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে দুধ দোহন করা বলে। একই গোয়ালার সাহায্যে নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে দুধ দোহন করলে গাভী স্থিরতাবোধ করে ও উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। দু’টি পদ্ধতিতে গাভীর দুধ দোহন করা যায়। যেমন:-

  •  সনাতন পদ্ধতি: সনাতন পদ্ধতিতে হাত দিয়ে দুধ দোহন করা হয়। পারিবারিক খামারে এই পদ্ধতিতেই দুধ দোহন করা হয়ে থাকে। দোহনের সময় ও গুলােেনর বাটের গোড়া বন্ধ রেখে বাটের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হয়। এর ফলে বাটের মধ্যে জমা হওয়া দুধ বের হয়ে আসে। আবার চাপ সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওলান থেকে দুধ বাটে এসে জমা হয়। সঠিকভাবে দুধ দোহনের জন্য এভাবেই প্রক্রিয়াটি বার বার চালাতে হয়। হাত দিয়ে দোহনের সময় গাভীর বামপাশ থেকে দোহন করতে হয়। দুধ দোহনের সময় প্রথমে সামনের দুই বাট একসঙ্গে ও পরে পিছনের দুই বাট একসঙ্গে দোহন করা হয়। আবার কোন কোন গোয়ালা গুণন বা পূরণ চিহ্নের (X) মতো করে সামনের একটি ও পিছনের একটি বাট একসঙ্গে অথবা যে বাটে দুধ বেশি আছে বলে মনে হয় সেগুলো আগে দোহন করে থাকে।
  • আধুনিক পদ্ধতি: বড় বাণিজ্যিক খামারে যেখানে গাভীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকে সেখানে একসঙ্গে অনেক গাভীর দুধ দোহনের জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে দোহন যন্ত্রের সাহায্যে দোহন করা হয়। দোহনের সময় গাভীর বাটে টিট কাপ লাগিয়ে দোহন যন্ত্র চালু করা হয়। এতে সহজে ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে দুধ দোহন করা যায়।

দুধ দোহনের ধাপ

দুধ দোহনের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এই ধাপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে দুধ উৎপাদন বেশি হয়। ধাপগুলো নিম্নরূপ:-

  • দুধ দোহনের সময়: নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে দুধ দোহন করলে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ২-৩ বার দুধ দোহন করা যায়।
  • গাভী প্রস্তুত করা: দুধ দোহনের পূর্বে কখনোই গাভীকে উত্তেজিত বা বিরক্ত করা যাবে না। কোন অবস্থাতেই গাভীকে মারধর করা যাবে না। দুধ দোহনের পূর্বে গাভীর ওলান ও বাট কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে । অতঃপর পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে গাভীর ওলান ও বাট মুছে নিতে হবে।
  • গোয়ালার প্রস্তুতি: দুধ-দোহনের পূর্বে গোয়ালাকে পরিষ্কার কাপড় পড়তে হবে। গামছা বা অন্য কোন কাপড় দিয়ে মাথার চুল ঢেকে নিতে হবে। নিয়মিত দোহনকারীকে নখ কাটতে হবে। দোহনের সময় দোহনকারীর বিভিন্ন বদঅভ্যাস, যেমন:- ভুতু ফেলা, নাক ঝাড়া এমনকি কথা বলা বন্ধ রাখতে হবে।
  • দোহনের জন্য পরিষ্কার পাত্র ব্যবহার: ওলান থেকে দুধ-দোহনের সময় বালতির পরিবর্তে গম্বুজ আকৃতির ঢাকনাসহ স্বাস্থসম্মত হাতলওয়ালা বালতি ব্যবহার করা উচিত। দুধ-দোহনের পর দুধের পাত্র প্রথমে গরম পানি দিয়ে ও পরে ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। পরবর্তী দোহনের পূর্ব পর্যন্ত পাত্রগুলো খামারের ব্যাক বা তাকে উপুড় করে রাখতে হবে।
  • গাভীকে মশা-মাছিমুক্ত রাখা: দুধ-দোহনের সময় মশা-মাছি যেন গাভীকে বিরক্ত না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • গাভীকে দুধ দোহনে উদ্দীপ্ত করা: বায়ুরের সাহায্যে গাভীকে বাট চুষিয়ে বা গোয়ালার মাধ্যমে ওলান মর্দন বা ম্যাসাজ করে গাভীকে দুধ দোহনের জন্য উদ্দীপ্ত করতে হবে।
  • দোহনের সময় গাভীকে খাওয়ানো: দুধ-দোহনের সময় গাভীকে ব্যস্ত রাখতে স্বল্প পরিমাণে সবুজ ঘাস বা দানাদার খাদ্য গাভীর সামনে দিলে গাভী যাওয়াতে ব্যস্ত থাকবে। এতে দুধ দোহন সহজ হয়।

দুধ সংরক্ষণ

নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পচনমুক্ত রেখে দুধকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহারোপযোগী রাখার প্রক্রিয়াকে দুধ সংরক্ষণ বলে। এজন দোহনের পরপরই দুধ ছেঁকে ঠাণ্ডা করতে হয়। দুধের সংরক্ষণ ব্যবস্থা তেমন একটা সহজ নয়, কারণ অতি সহজেই দুধের রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশের সর্বত্রই সচরাচর কাঁচা অবস্থায় দুধ বিক্রি করা হয়। তবে বেশি সময় কাঁচা অবস্থায় থাকলে দুধের মান ক্ষুণ্ণ হয়। সাধারণ তাপমাত্রায় বিভিন্ন জীবাণু, বিশেষ করে স্ট্রেপটোকক্কাই (Streptococci spp.) ব্যাকটেরিয়া দুধে ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্নের মাধ্যমে দুধকে টক স্বাদযুক্ত করে ফেলে। জীবাণু সাধারণ তাপমাত্রায় দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে দুধ নষ্ট করে ফেলে। সচরাচর দু’ভাবে দুধ সংরক্ষণ করা হয়।

যেমন:-

সনাতন পদ্ধতি:

সনাতন পদ্ধতিতে তাপ দিয়ে ফুটিয়ে দুধ সংরক্ষণ করা হয়। পারিবারিকভাবে এটি সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। একবার গরম করলে দুধ সাধারণত ৪ ঘন্টা ভালো থাকে। সে কারণে ৪ ঘন্টা পর পর ২০ মিনিট দুধ গরম করলে প্রায় সব রকমের জীবাণু ধ্বংস হয়। তবে এতে দুধের পুষ্টিমান কিছুটা কমে যায়। কারণ উচ্চ তাপে কিছু ভিটামিন ও অ্যামাইনো অ্যাসিড নষ্ট হয়ে যায়।

আধুনিক পদ্ধতি:

আধুনিক পদ্ধতিতে তিনভাবে দুধ সংরক্ষণ করা যায়। যথা:-

  • ক. রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ:রেফ্রিজারেটরে ৪ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে স্বল্প সময়ের জন্য দুধ সংরক্ষণ করা
  • খ. ফ্রিজারে সংরক্ষণ: ফ্রিজার বা ডিপ ফ্রিজে দুধ সংরক্ষণ করা যায়। ডিপ ফ্রিজে রাখলে দুধে জীবাণুর বংশবৃদ্ধি হয়। না ঠিকই কিন্তু এতে দুধের রাসায়নিক বন্ধন ভেঙ্গে যায়। ফলে দুধের গুণগত মান কিছুটা হ্রাস পায় ।
  • গ. দুধ পাস্তুরিকরণ: দুধ অন্যতম আদর্শ খাদ্য। এটি যেমন বাস্তুর ও মানুষের কাছে আদর্শ খাবার, তেমনি অণুজীবের বংশ বিস্তারের জন্যও সমানভাবে আদর্শ মাধ্যম। দোহনের পর সময়ের সাথে দুধের গুণাগুণ নষ্ট হতে শুরু করে। আর দীর্ঘক্ষণ সাধারণ তাপমাত্রায় রাখলে এক সময় দুধ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য মূলত বিভিন্ন প্রজাতির অনুজীব বা জীবাণুই দায়ী। এই অনুজীব অতি উচ্চ তাপমাত্রায় ও নিম্ন মাত্রায় জন্মাতে ও বংশ বিস্তার করতে পারে না। কাজেই দুধকে দীর্ঘ সময়ের জন্য জীবাণুমুক্ত রাখতে নির্দিষ্ট সময় ধরে নির্দিষ্ট উচ্চ তাপমাত্রায় তাপ দেয় হয়। এতে একদিকে যেমন বিভিন্ন প্রজাতির রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস হয়, অন্যদিকে তেমনি দুধে উপস্থিত কিছু অনুঘটক বা এনজাইম নিষ্ক্রিয় হয়। ফলে দুধ দীর্ঘ সময় খাবার উপযোগী থাকে। দোহনের পর দুধকে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করাকে পারিকরণ বলে। এতে দুধে উপস্থিত সকল রোগজীবাণু ও অনুঘটক নষ্ট হয়ে যায়। এই দুধকে পাস্তুরিত দুধ বলে। এই পাস্তুরিত দুধ সঙ্গে সঙ্গেই ৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রার নীচে নামিয়ে আনতে হয়।

লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) নামে এক ফরাসি বিজ্ঞানী এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন বিধান তার নামানুসারের পদ্ধতিটির নাম পাস্তরিকরণ (Pasteurization) রাখা হয়েছে। পাস্তুরিকরণের তাপমাত্রা ও সময়ের ওপর নির্ভর করে পারিকরণকে তিনভাগে ভাগ করা হয়, যেমন:-

  • নিম্ন তাপ দীর্ঘ সময় পাস্তুরিকরণ। এতে দুধকে ৬২.৮° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট ধরে উত্তপ্ত করা হয়।
  • উচ্চ তাপ কম সময় পাস্তরিকরণ। এতে দুধকে ৭২.২° সেলসিয়াস তাপমাত্রার ১৫ সেকেন্ড ধরে উত্তপ্ত করা হয়।
  • অতি উচ্চ তাপ অতি কম সময় পাস্তুরিকরণ। এতে দুধকে ১৩৭৮° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মাত্র ২ সেকেন্ডের জন্য উত্তপ্ত করা হয়।

নিয়ে পাস্তরিকরণের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বর্ণনা করা হলো:-

পাস্তুরিকরণের সুবিধা

  • পান্তরিকৃত দুধ নিরাপদ, কারণ এতে রোগ উৎপাদনকারী জীবাণু ধ্বংস হয় ।
  • পান্তরিকরণ দুধের সংরক্ষণকাল দীর্ঘায়িত করে, কারণ এই পত্রিয়ার ফলে দুধে ল্যাকটিক অ্যাসিড প্রস্তুতকারী জীবাণুর সংখ্যা কমে যায়।
  • দুধের অনুঘটক নষ্ট হয়ে যায়। ফলে দুধ দীর্ঘ সময় ভালো ও খাওয়ার উপযোগী থাকে। দুধে উপস্থিত অধিকাংশ রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।
  • এই প্রক্রিয়ার দুধের স্বাদ ও পুষ্টিমান ঠিক থাকে।

পাস্তুরিকরণের অসুবিধা

  • এই প্রক্রিয়াটি আদর্শ উপায়ে করতে না পারলে অতিরিক্ত আলোচ্ছলে দুধের চর্বিকণাগুলো আলাদা হয়ে যেতে পারে।
  • এতে তাপ সংবেদনশীল ভিটামিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • উচ্চ তাপে কিছুটা স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

 

 

সারাংশ

দৈহিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য দুধ অপরিহার্য খাদ্যোপাদান। প্রতিদিন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ২৫০ মিলিলিটার দুধের প্রয়োজন হলেও আমরা পাচ্ছি মাত্র ৫১ মিলিলিটার। এ ঘাটতি পূরণের জন্য বৃহৎ আকারের খামারের পাশাপাশি পারিবারিক দুগ্ধ খামার গড়ার বিকল্প নেই। প্রতিদিন এক হাতে নির্দিষ্ট সময়ে দুধ-দোহন করলে গাভী স্থিরতা বোধ করে ও ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়।

পারিবারিক খামারে হাতেই দুধ-দোহন করা হয়। দেহনের পর দুধ সংরক্ষণ না করলে দুধের মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন জীবাণু ও অনুঘটক দুখ নষ্ট করে ফেলতে পারে। তাই দুধ সংরক্ষণ করা উচিত। ডিপ ফ্রিজে ঠান্ডায় যেমন দুধ সংরক্ষণ করা যায় তেমনি উচ্চ তাপমাত্রায় কম সময় ফুটিয়ে দুধকে পাস্তুরিত করেও সংরক্ষণ করা যায়।

পারিবারিক পোল্ট্রি ও গবাদি পশুর খামার

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পারিবারিক পোল্ট্রি ও গবাদি পশুর খামার – যা কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার এর অন্তর্ভুক্ত। পোল্ট্রি : অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে, প্রধানত ডিম ও মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে, পারিবারিক বা খামারভিত্তিতে যেসব প্রজাতির গৃহপালিত পাখি বৈজ্ঞানিকভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে পালন করা হয় তাদেরকে একত্রে পোল্ট্রি (Poultry) বলে।

পোল্ট্রি প্রজাতিগুলোর মধ্যে মুরগি (Chicken), হাঁস (Duck), টারকি (Turkey), কোয়েল (Quail), কবুতর (Pigeon), রাজহাস (Geese), তিতির (Guinea Fowl) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে, পৃথিবীতে বাণিজ্যিকভিত্তিতে যে পরিমাণ ডিম ও মাংস উৎপাদিত হয় তার সিংহভাগই আসে মুরগি, হাঁস ও কোয়েল থেকে ।

পারিবারিক পোল্ট্রি ও গবাদি পশুর খামার

 

 

পারিবারিক পোল্ট্রি খামার

আমাদের দেশে সেই আদিকাল থেকেই গ্রামের কৃষকরা দেশি জাতের হাঁস, মুরগি, রাজহাঁস, কবুতর ইত্যাদি পালন করে। আসছে। এটি আমাদের গ্রামের কৃষ্টিরই একটি অংশ। পারিবারিকভাবে পালিত এসব পোল্ট্রিকে তারা তেমন কোন খাদ্যও সরবরাহ করেন না। আর এগুলো তারা কোন বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোন থেকেও পোষেন না। শুধু নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন মাত্র। কিন্তু বর্তমানে এ ধারণা পাল্টে গেছে।

এখন পারিবারিকভিত্তিতে শুধুমাত্র গ্রামে নয়, এমনকি শহরের বাসাবাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ, বারান্দাতেও ক্ষুদ্র থেকে ছোট আকারের পোল্ট্রি খামার গড়ে তোলা হচ্ছে। গ্রাম বা শহরের এসব ক্ষুদ্র ও ছোট খামারে দেশি কম উৎপদানশীল জাতের পোল্ট্রি না পুষে উন্নত জাতের অধিক উৎপাদনশীল বা সংকরজাতের পোল্ট্রি পালন করা হচ্ছে। খামারিরা তাদের আর্থিক সঙ্গতি ও সুবিধা-অসুবিধার ওপর নির্ভর করে এসব খামারে ১০- ৩০০টি পর্যন্ত পোল্ট্রি পালন করছেন।

 

গ্রামে পালনের উপযোগী পোল্ট্রি

গ্রামে মুরগি, হাঁস, কবুতর ও রাজহাঁস পালন করার জন্য বেশি উপযোগী। আবদ্ধাবস্থায় পালন করলে জাপানি কোয়েলও পালন করা যায়। কারণ, একই জায়গায় মুরগির ৮ গুণ কোয়েল পালন সম্ভব। বাংলাদেশে পোল্ট্রির নতুন বৃহদাকারের টারকি গ্রামে ছেড়ে পালন করার জন্য বেশ উপযোগী।

এদের মাংসের রঙ লালচে হওয়ার গরু ও খাসির মাংসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। পারিবারিকভাবে গ্রামে পালনের জন্য বিশুদ্ধ জাতের ফাইওমি মুরগি অথবা সংকরজাতের সোনালি ও রূপালি মুরগি উৎকৃষ্ট। কারণ এরা দেশি মুরগির মতোই মাঠে-ঘাটে চড়ে খেতে পারে। আবার এদেরকে আবদ্ধ বা অর্থ-আবদ্ধ পদ্ধতিতেও পালন করা যায়।

এদের থেকে বছরে ২০০-৩০০টি ডিম পাওয়া সম্ভব। হাঁসের ক্ষেত্রে উন্নত জাতের থাকি ক্যাম্পবেল, ইন্ডিয়ান রানার ও জিনডিং ডিমের জন্য এবং পেকিন ও মাসকোডি মাংসের জন্য পোষা যায়।

 

শহরে পালনের উপযোগী পোল্ট্রি

তবে শহরে বাসাবাড়িতে পারিবারিকভাবে মূলত আবদ্ধ পদ্ধতিতেই পোল্ট্রি পোষা হয়। কাজেই এখানে পোষার জন্য মুরশি কোয়েল, কবুতর ও টার্কিই বেশি উপযোগী। শহরে হাঁস ও রাজহাস পালন করা সম্ভব নয়।

 

 

পারিবারিক পোল্ট্রির খামার ব্যবস্থাপনা

গ্রাম বা শহর যেখানেই পালন করা হোক না কেন পারিবারিক খামার থেকে পর্যাপ্ত উৎপাদন পেতে হলে প্রতিটি ঘামারিকে অবশ্যই খামার ব্যবস্থাপনার ছুটিনাটি বিষয়গুলোর দিকে সঠিকভাবে নজর দিতে হবে। খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সীমিত জ্ঞান থাকলে পোল্ট্রি থেকে কাঙ্খিত উৎপাদন পেতে সমস্যা হতে পারে। ফলে উৎপাদন ভালো হবে না। এতে অনেকেই খামার করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।

এদের দুর্দশা দেখে খামার গড়তে আগ্রহী ব্যক্তিরাও নিরুৎসাহিত হয়। অথচ খামারিরা যদি নামার ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করেন ও সে অনুযায়ী সঠিকভাবে খামারের প্রতিদিনের কাজকর্ম সম্পাদন করেন, তবে সহজেই এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠে নামারকে আর্থিকভাবে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর একথা মনে রাখা উচিত যে, যে কোনো ছোটখাট অবহেলা বা ভুলত্রুটিই খামারের লোকসানের জন্য যথেষ্ট।

 

পারিবারিক পোল্ট্রি খামারে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা

এ কথাটি সর্বজনবিধিত যে, চিকিৎসা অপেক্ষা প্রতিরোধই শ্রেয়। রোগব্যাধি হলে নিরাময়ের জন্য অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু যদি রোগ হওয়ার আগেই এমন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় যাতে রোগই না হয়, অর্থাৎ আগে থেকেই রোগ প্রতিরোধ করা যায়, তবে চিকিৎসার কোনো দরকারই পড়বে না।

পোল্ট্রি শিল্পে রোগব্যাধি চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। কারণ, এই অধিক উৎপাদনশীল ছোট্ট প্রাণীগুলোর রোগ সারানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করলে অনেকক্ষেত্রেই এরা রোগ থেকে সেরে উঠে সত্য, কিন্তু রোগসংক্রান্ত পীড়নের ফলে এরপর এদের থেকে আর কাজিত উৎপাদন পাওয়া যায় না। তাছাড়া রোগপ্রতিরোধে সামারি বা পোল্ট্রি পালনকারির বেশকিছু করণীয় কাজ আছে। এ কাজগুলো সুষ্ঠভাবে পালন করতে পারলেই পোল্ট্রি খামার রোগমুক্ত থাকবে। এগুলো নিম্নরূপ:-

  • খামারে পরিচ্ছন্ন পরিবেশের সৃষ্টি করা । আরামদায়ক তাপমাত্রা ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থার উন্নয়ন, যেমন:- আপেক্ষিক আর্দ্রতা, বিশুদ্ধ বাতাস ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।
  •  বিভিন্ন বয়স ও প্রজাতির পোল্ট্রি আলাদা আলাদা ঘরে পালন করা ।
  • বাচ্চা বা বয়স্ক পোল্ট্রি রোগবিহীন, স্বাস্থ্যবান অংশ ও উৎস থেকে সংগ্রহ করা।
  • রোগাক্রান্ত ও স্বাস্থ্যহীন পাখি মুছা পাখিদের থেকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি পৃথক করে ফেলা।
  • সুষম খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা ।
  • ইঁদুর ও অন্যান্য ইঁদুরজাতীয় প্রাণী, কীটপতঙ্গ এবং অন্যান্য পশুপাখির উপদ্রব থেকে খামারকে মুক্ত রাখতে হবে।
  •  পোল্ট্রিকে সময়মতো টিকা দিতে হবে।
  •  মৃত পোল্ট্রি ও সামারের বর্জ্যের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে মামারের পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে । এছাড়াও অন্যান্য বর্জ্য, যেমন:- খালি কার্টুন, বাক্স, বোতল, ওষুধ বা টিকার খালি শিশি ইত্যাদি গর্ত করে মাটিচাপা দিতে হবে বা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

 

পারিবারিক গবাদিপশুর খামার

হাঁস-মুরগির মতো পারিবারিক পর্যায়ে গবাদিপশু পালনও এদেশের গ্রামীণ কৃষির একটি অত্যন্ত পুরনো রীতি। এদেশে গবাদিপশুর মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া অন্যতম। তবে গরু ও ছাগল দেশের সর্বত্র পালন করা হলেও মহিষ ও ভেড়া সব এলাকায় নেই অথবা পালন করা হয় না। অবশ্য কোন কোন এলাকায় ভারবাহী পশু হিসেবে ঘোড়াও পালন করতে দেখা যায়।

সচরাচর অবস্থাসম্পন্ন বা ধনী গৃহস্থরাই গরু ও মহিষ পালন করে থাকেন। অধিক দামের কারণে ভূমিহীন কৃষক, বেকার ও গরীব লোকদের পক্ষে গরু ও মহিষ কেনা ও পোষা সম্ভব নয়। কিন্তু কষ্টে-শিষ্টে অবশ্যই দু’একটা ছাগল বা ভেড়া কেনা সম্ভব। তাই তাদের পক্ষে ছাগল-ভেড়া পালন করাই সহজ। পারিবারিক গবাদিপশুর খামার সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য খামারির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।

বিশেষ করে পশুর জাত, উৎপাদন ক্ষমতা, বাসস্থান, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ও টিকাদান কর্মসূচী সম্পর্কে খামারিদের সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে । নিয়ে পারিবারিক গবাদিপশু ২টি খামার নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ক) পারিবারিক ছাগল-ভেড়ার খামার

ভূমিহীন কৃষক, বেকার যুবক ও গরীব লোকদের জন্য ছাগল ও ভেড়া পালন করা বেশ সহজ ও লাভজনক। একটি ছাগল থেকে বছরে অন্তত ৪টি বাচ্চা পাওয়া যায়। এতে সহজেই পুঁজি উঠে আসে। তাইতো ছাগলকে গরীবের গাভী বলা হয়।

ছাগলের মাংস অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। তাই বেশি দামে বিক্রি হয়। পুরুষ বাচ্চা ছাগল ও ভেড়া মাত্র ৮ মাস বয়সে প্রজনন উপযোগী হয়ে যায়। কাজেই মাংসের জন্য বাজারজাত করতে গরুর তুলনায় কম সময় লাগে। এতে খামারির পুঁজি উঠে আসতে সময় কম লাগে। তবে পারিবারিকভাবে ছাগল বা ভেড়ার খামার গড়তে হলে ৫-১৫টির বেশি পালন করা উচিত হবে না। কারণ এতে বাড়তি লোকের প্রয়োজন পড়বে। ফলে খামার লাভজনক হবে না।

খ) পারিবারিক গরু মহিষের খামার

আমাদের দেশি গাভী দৈনিক ১.০-১.৫ লিটার দুধ দিতে সক্ষম। তাই দেশি গরু দিয়ে পারিবারিক দুগ্ধ খামার গড়লে কোন রকমে পারিবারিক চাহিদা মিটানো গেলেও তা থেকে বাড়তি আয় করা সম্ভব নয়। সে কারণে অধিক উৎপাদনশীল ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন হলস্টেইন-থ্রিজিয়ান, জার্সি বা শাহিওয়াল সংকর জাতের গরু দিয়ে পারিবারিক দুগ্ধ খামার স্থাপন করা যেতে পারে।

পারিবারিক খামারে ২-৫টির বেশি গরু না রাখাই ভালো। কারণ এতে বাড়তি লোক নিয়োগ করতে হবে ও খামারের খরচ বাড়বে। পারিবারিক দুগ্ধ খামার ছাড়াও ৪-৫টি ষাঁড় বাছুর কিনে বাহুর মোটাতাজা করার প্রকল্প হাতে নেয়া যেতে পারে। এতে স্বল্প সময়ে টাকা আয়ের একটি উৎসের সৃষ্টি হবে। অবশ্য হাওর-বাওর ও নদী প্রধান এলাকায় দুধ ও মাংসের জন্য ৪-৫টি করে মহিষ পালন করা যেতে পারে।

 

পারিবারিক গবাদিপশুর খামারে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা

পারিবারিক খামারে গবাদিপশুর রোগপ্রতিরোধ ও রোগ চিকিৎসা করে সুস্থ্য রাখাকেই গবাদিপশুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বলা হয়। চিকিৎসা অপেক্ষা প্রতিরোধই শ্রেয়। কথাটি মনে রেখে খামারে যথাযথ রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। কারণ খামারে গবাদিপশু রোগাক্রান্ত হলে চিকিৎসা করে তাকে উৎপাদনে আনতে অনেক সময় লাগে। তাই গবাদিপশুর খামারে নিম্নলিখিতভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে। যথা:-

  • উঁচু স্থানে খামার নির্মাণ করা ও খামারের চারদিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • গোয়াল ঘর দক্ষিণমুখী অর্থাৎ পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বিভাবে নির্মাণ করতে হবে । খামারে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • খামারে কার্যকরী পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • খামারে মানুষ এবং বন্যপ্রাণী ও পাখির প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • গবাদিপশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে।
  • সুষম খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা কর হবে।
  • খাদ্য ও পানির পাত্র সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া একত্রে পালন করলে আলাদা আলাদা ঘরে রাখতে হবে ।
  • সর্বোপরি গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার জন্য উপযুক্ত ও কার্যকরী টিকাদান কর্মসূচী অনুসরণ করতে হবে ।
  • মৃত পশুকে যথাযথভাবে মাটিচাপা দিতে হবে ও বর্জ্য যথাযথভাবে সরিয়ে নিয়ে খামারের পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
  • খামারের পশু রোগাক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে ।

 

সারাংশ

অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে, প্রধানত ডিম ও মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে, পারিবারিক বা খামারভিত্তিতে যেসব প্রজাতির গৃহপালিত | পাখি আধুনিক পদ্ধতিতে পালন করা হয় তারাই পোল্ট্রি, যেমন:- হাঁস, মুরগি, রাজহাঁস, কবুতর, কোয়েল, তিতির, টারকি ইত্যাদি । আমাদের দেশে আদিকাল থেকেই গ্রামের কৃষকরা দেশি জাতের হাঁস, মুরগি, কবুতর ইত্যাদি পালন করে আসছে।

হাঁস-মুরগির মতো পারিবারিক পর্যায়ে গবাদিপশু পালনও এদেশের গ্রামীণ কৃষির পুরনো রীতি । যদিও পারিবারিকভাবে পূর্বে দেশি জাতের পোল্ট্রি ও গবাদিপশু পালন করা হতো। কিন্তু বর্তমানে অধিক উৎপাদনশীল বিশুদ্ধ ও সংকর জাতের পোল্ট্রি ও গবাদিপশু পালন করা হচ্ছে।

যে কোন পারিবারিক পোল্ট্রি বা গবাদিপশুর খামার থেকে পর্যাপ্ত উৎপাদন পেতে হলে পোল্ট্রি ও গবাদিপশুর জাত, উৎপাদন ক্ষমতা, বাসস্থান, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ও টিকাদান কর্মসূচী সম্পর্কে খামারিদের সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে।

পারিবারিক কৃষি খামার

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পারিবারিক কৃষি খামার – যা কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার এর অন্তর্ভুক্ত। জনবহুল কৃষি প্রধান বাংলাদেশের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৯ লাখ হেক্টরের সামান্য বেশি হলেও বিভিন্ন কারণে বছর বছর কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। অধিকন্ত, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য ঘরবাড়ি নির্মান এবং কর্মসংস্থানের জন্য নতুন শিল্প স্থাপনায় কৃষি জমির ব্যবহার হচ্ছে।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৭০% এর বেশি মানুষ গ্রামে বাস করে এবং মোট আবাদি জমির প্রায় ৫% বসতবাড়ীর আওতায় রয়েছে । এসকল বসতবাড়ীর আঙ্গিনা সুষ্ঠু ব্যবহার করে পারিবারিক খামারের এক উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরী করা যেতে পারে।

বসতবাড়ীতে সবজী ও ফল চাষের মাধ্যমে পরিবারের সব সদস্যকে উৎপাদনে কাজে লাগিয়ে পারিবারিক শ্রমের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। একই সাথে পরিবারের চাহিদা পূরণ করে বাড়তি সবজী বিক্রি করে পরিবারের জন্য বাড়তি আরের সংস্থানও নিশ্চিত করা যায়। নিয়ে কয়েকটি পারিবারিক খামারের কথা উল্লেখ করা হলো:

পারিবারিক কৃষি খামার

 

 

পারিবারিক মৎস্য খামার :

বাংলাদেশের কৃষকের অনেকের বাড়ীতেই ছোট বড় পুকুর আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসকল পুকুর গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব পুকুরে প্রাকৃতিকভাবেই কিছু মাছ জন্মে আবার ক্ষেত্র বিশেষ কিছু মাছের চাষও করা হয়।

এ চাষের ফলে উৎপাদিত মাছ পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে বাজারে বিক্রি করা যায়। কিন্তু সনাতন পদ্ধতির এ মাছ চাষ খাদ্য হিসেবে যেহেতু বাড়ীর উদ্ধৃত্ত ভাত কিংবা অন্যান্য খাবারের অংশ বিশেষ দেওয়া হয়। তাই মাছের উৎপাদন খুবই কম হয়।

এসব পুকুরে পরিকল্পনামাফিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষের আওতায় আনতে পারলে মাছের উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব। সেইসাথে পারিবারিক মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বেকার সদস্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হতে পারে ।

পারিবারিক কৃষি খামারঃ

এদেশের বেশীরভাগ কৃষকের বসতভিটার আশে পাশে কিছু ফাঁকা জায়গা থাকে। আপাত দৃষ্টিতে যা বাণিজ্যিক চাষের অনুপোযোগী । ফলে প্রায়শই অনাবাদী থাকে। বাড়ীর আশে পাশের এ ধরনের খালি জায়গা যা উঁচু, নীচু, মাঝারি বা উভয় হতে পারে- চাষের আওতায় এনে পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পরিকল্পণা করা হয় তাকে পারিবারিক কৃষি খামার হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।

এই খামারের জমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ঋতুভিত্তিক ফসল নির্ধারন করতে পারলে সারা বছরই পারিবারিক চাহিদা পুরণ করতে সমর্থ হবে সেই সাথে বাড়তি উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য বাজারে বিক্রি করে পারিবারিক আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাছাড়া এ পারিবারিক কৃষি খামারে উৎপাদিত পণ্যে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় বাজারে চাহিদাও বেশী থাকে এবং উচ্চমূল্যও পাওয়া যায়।

 

 

পারিবারিক পোল্ট্রি খামারঃ

পোল্ট্রি বলতে গৃহপালিত পাখি যেমন, হাস, মুরগী, কবুতর ইত্যাদিকে বুঝায়। আবহমানকাল থেকে এদের গ্রামীন কৃষক পারিবারিক খামারে হাঁস, মুরগী, কবুতর ও অন্যান্য সৌখিন পাখি যেমন কোয়েল পালন করে আসছে এবং জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ এ দেশের কৃষির সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে এশ্রেণীর খামার থেকে পরিবারের ডিম ও মাংশের চাহিদা মিটিয়ে ক্ষেত্র বিশেষে উদ্ধৃত অংশ বাজারজাত করে কৃষক কিছু বাড়তি আয়েরও পথ তৈরী করতে পারে।

তবে বর্তমান সময়ে প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎপড়তার কারণে পারিবারিক খামারে কৃষকরা উন্নত জাতের হাঁস ও মুরগী পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছে। অধিক ডিম উৎপাদনে সক্ষম এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে পারিবারিক খামারে অধিক মাংশ উৎপাদনশীল ব্রয়লার মুরগী পালন করে আসছে।

পারিবারিক দুগ্ধ খামার :

দুগ্ধ খামার বর্তমানে একটি লাভজনক শিল্প। পারিবারিক দুগ্ধ খামার বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশে দুধের চাহিদা পূরনে বিশাল ভূমিকা রাখছে। গত পাঁচ বছরে গ্রামের অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে পারিবারিক দুগ্ধ খামার। প্রধানত গ্রামের নারীরা ঘরের কাজের পাশাপাশি উন্নত জাতের গাভী পালনে হাসি যুগিয়েছেন পরিবারের মুখে।

বিশেষ একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে দু-একটি গাভী দিয়ে শুরু করে এখন ছোট বড় খামার গড়ে তুলেছে ৫২ হাজার পরিবার। তারা এ খামারের মাধ্যমে যেমন হয়েছেন স্বাবলম্বী তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও রাখছেন বিশাল অবদান। ব্র্যাক আড়ং, প্রাণ, আকিজের মতো বড় ব্র্যান্ডের প্যাকজজাত দুধের বড় যোগান আসছে এসব পারিবারিক পুগ্ধ খামার থেকে।

পারিবারিক খামারের গুরুত্ব :

উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্টতই বুঝা যায় পারিবারিক খামার পরিবারের চাহিদা পূরণ করে, পরিবারের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও সহায়তা করে । নিম্নে পারিবারিক খামারের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলোঃ

১) পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি চাহিদা এবং ক্ষেত্র বিশেষ অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করে ।

২) বেকার সদস্যদের কর্মসংস্থান তৈরীতে সহায়তা করে।

৩) পরিবারের সিনিয়র সদস্যদের অবসর সময় আনন্দে কাটানোর কর্মক্ষেত্র তৈরী করে ।

৪) কীটনাশক ও বিষমুক্ত শাকসবজী, ফলমূল যোগানের উৎকৃষ্ট সুযোগ তৈরী করে ।

৫) ঋতু বর্হিভূত (অফ সিজন) ফল/সবজী ফলানোর মাধ্যমে অতিথি আপ্যায়নে বৈচিত্র্য আনয়ন করে।

৬) গৃহপালিত গবাগি পশু পালন করে প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পুরন পূর্বক পশু উপজাত (যেমন, গোবর, পোল্ট্রি লিটার) উত্তম জৈবসার এবং মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৭) গবাদি পশুর মলমূত্র থেকে বায়োগ্যাস উৎপন্ন করে জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি করে গৃহিনীদের কষ্ট লাঘব করা যায়।

৮) সর্বোপরি কৃষক পরিবারের সার্বিক উন্নয়ন সাধন করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে ।

 

সারসংক্ষেপ

দেশের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। অধিক জনসংখ্যার প্রয়োজনীয় বাসস্থান তৈরীর নিমিত্তে কৃষি জমি ব্যবহৃত হয়ে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। অপরদিকে বর্ধিত ঐ জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন অধিক উৎপাদন।

পারিবারিক খামারকে কিছু ক্ষেত্রে ঐ বর্ধিত খাদ্য উৎপাদনের জন্য এক চমৎকার অনুসঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। পারিবারিক খামারে উৎপাদিত পণ্য একদিকে যেমন পরিবারের সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে, অনুরূপ বর্ধিত খাদ্যশস্য বিক্রি করে কৃষক অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে পারে।

 

কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহার

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহার – যা কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার এর অন্তর্ভুক্ত।

কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহার

 

 

কৃষি জমি

কৃষি জমি ব্যবহার করে কৃষি পন্যের উৎপাদন, ক্রয়, বাজারজাতকরণ পর্যন্ত যে সকল বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাদেরকে কৃষি উপকরণ বলে। এ সমস্ত কৃষি উপকরণের মধ্যে কৃষি জমি সেচের জন্য পানি, কৃষির অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ যেমন বীজ, সার, কীটনাশক, জমি চাষের জন্য যান্ত্রিক মালামাল এবং ফসল সংগ্রহের জন্য অন্যান্য যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কৃষি ঋণ সংগ্রহের জন্য কৃষি সমবায় ব্যবহার উচ্চ মাত্রার সক্ষমতা এনে দিতে পারে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এই উভয় জাতীয় প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা যায়। যে, সর্বনিম্ন এক হেক্টর জমি না হলে একটি লাভজনক কৃষি খামার পরিচালনা করা যায় না। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক এর চাইতে ক্ষুদ্রতর কৃষি জমির মালিক। এমন কি যাদের আড়াই একর বা তার কিছু বেশি পরিমান জমি রয়েছে তারাও তাদের কৃষিকাজের আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে নামি যন্ত্রপাতি কিনতে সক্ষম নন।

যদি কোনোভাবে কিনেও ফেলেন ঐ যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারেন না। নিজের কাজ শেষে বসিয়ে রাখতে বা ভাড়ায় দিতে হয়। সমবায়ের মাধ্যমে অনেক জমি একই ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যায়। সেই ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল কৃষি উপকরণের সর্বোচ্চ পরিমাণ লাভজনক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।

সমবায়ীগন সম্মত হলে কিছু জমিকে জলাধারে রূপান্তরিত করে বর্ষার পানি ধরে রাখা যায়, যা থেকে প্রয়োজনের সময় সেচের পানি পাওয়ার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায় । অর্থাৎ তুলনামূলক নিচু জমিও সমবায়ের অন্তর্ভূক্ত করে নেওয়া যায়। দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে সমবায়ের আওতায় জমির পরিমাণ চার পাঁচশত হেক্টর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। তবে জমির পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি জমি ব্যবহারের পরিকল্পনা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন হবে।

পানি

কৃষি কাজের জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি ছাড়া কোনো ধরণের কৃষিকাজই চালানো সম্ভব নয়। কয়েক দশক আগে আমাদের দেশে কৃষিকাজের জন্য গভীর নলকূপের সুপারিশ করা হতো। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে, গভীর নলকূপের অতি ব্যবহার পরিবেশ বান্ধব নয়। সবচাইতে নিরাপদ পানি হলো জলাধারে সঞ্চিত পানি। জলাধারে পানি বর্ষাকালে সঞ্চয় করে সারা বছর সেই পানি ব্যবহার সর্বোত্তম।

জলাধার করা, সেখান থেকে পাম্পের সাহায্যে সেচ নালা বা পাইপে সমবায়ের আওতাধীন জমিগুলোতে, স্বল্প অপচয়ে, সেচের পানি ব্যবহার করা যায়। ভূ-উপরিস্থ জলাধারে সঞ্চিত পানি দিয়ে সেচ দেওয়ার খরচ তুলনামূলক অনেক কম। তা ছাড়া সেচ ছাড়াও এই জলাধারের পানি অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কাজে লাগে যা লাভজনক উৎস হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

এ ধারনায় প্রাকৃতিক জলাধারগুলি সমবায়ের আওতায় এনে জালউৎস সমবায়ের জমিতে সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়। জলধারের সঞ্চিত বর্ষাকালের পানি সারা বছর সেচ কার্যে ব্যবহার করায় কৃষির উৎপাদন হার তুলনামূলক ভাবে বৃদ্ধির ফলে স্বনির্ভর কৃষির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে ।

 

 

কৃষির ভারী যন্ত্রপাতি

আমরা আগেই বলেছি জমিগুলির পর্যায়ক্রমিক খন্ডকরণের কারণে কৃষির যান্ত্রিককরণ কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ কৃষির উৎপাদন তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধির জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয়তা আজ সার্বজনীন ভাবে স্বীকৃত। পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, হারভেষ্টার, স্প্রেয়ার থেকে শুরু করে বহু যন্ত্রপাতি ফসল উৎপাদন, পশুপাখি পালন এবং শস্যচাষে সফলভাবে ব্যবহার করা যায়।

এ সকল অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কৃষির উৎপাদনে ব্যপক অবদান রাখলেও এর ক্রয়, ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ যথেষ্ট জটিল এবং ব্যয়বহুল। এ সব বিবেচনায় এককভাবে এসকল যন্ত্রপাতি ক্রয় না করে যদি সমবায়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায় তাহলে আনুপাতিকহারে ব্যয়ভার যেমন কমবে, তেমনি ফসল নিবিড়তার বিবেচনায় ঐ সকল যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহারও নিশ্চিত হবে।

কৃষির অন্যান্য অত্যাবশ্যক উপকরণ সংগ্রহ

কৃষির প্রধান উপকরণ বীজ, সার, ঔষধ, তাছাড়া পশু ও মৎস্য সংগ্রহণ ও সংরক্ষণে সমবায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে। কৃষি সমবায়ের কারণে এ সকল অত্যাবশ্যক উপকরণের বর্ধিত চাহিদা সৃষ্টি হবে এবং এ চাহিদার পরিমাণ সহজেই হিসেব করে সরকারী কৃষি সেবা সংস্থাকে (যেমন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) জানানো যেতে পারে।

জরুরী কৃষি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো সরবরাহযোগ্য উপকরণের মোট চাহিদা সম্পর্কে জেনে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। এতে মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ সংগ্রহ যেমন নিশ্চিত হয় তেমনি সমন্বিত চাহিদার ভিত্তিতে সংগ্রহ করার খরচও অনেকাংশে কম পড়ে।

কৃষি ঋণ প্রাপ্তি এবং পরিশোধ

কৃষির চলমান উৎপাদানশীলতা ধরে রাখা এবং ক্ষেত্র বিশেষে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষি ঋণ প্রায়ই বলিষ্ট ভূমিকা পালন করে। কিন্তু একক কৃষিঋণ প্রাপ্তি এই আধুনিক যুগেও এক জটিলতার নাম। কৃষিঋণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন শর্তের কারণে প্রায়শই কৃষক ঋণ লাভে অসমর্থ কিংবা নিরুৎসাহিত হয়। কিন্তু একটি কৃষি সমবায় যদি সরকারের নিবন্ধিত হয় এবং এর সদস্যগণের একটি ঋণতহবিল থাকে তাহলে অনেক জটিলতা সহজেই নিরসন করা যায়।

নিবন্ধিত হওয়ার কারণে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদানে স্বচ্ছন্দেই করেন এবং সমবায়ের সদস্যরাও আবদকালীন ঋণ তাদের তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় কণ শোধ করতে পারে।

 

সারসংক্ষেপ

কৃষির উৎপাদনশীলতা ক্রমবর্ধমান রাখা এবং প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় অত্যাবশ্যক উপকরণসমূহ সংগ্রহের ক্ষেত্রে কৃষি সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সমবায়ের মাধ্যমে ব্যায়বহুল আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা যেমন সহজ তেমনিভাবে তার উৎকৃষ্ট কার্যকরি ব্যবহার নিশ্চিত করে ।

 

কৃষি সমবায় এবং সমবায় সংগঠন

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কৃষি সমবায় এবং সমবায় সংগঠন – যা কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার এর অন্তর্ভুক্ত। বৃহৎ কোন কাজ অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে সম্মিলিত ভাবে কোন দল বা জনগোষ্ঠী বা সংগঠনের মাধ্যমে সমাধানকে সমবায় বলে সমবায়ের এ সরল ধারনা যখন কৃষি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এবং বিপননের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় তখন তাকে কৃষি সমবায় বলে।

সফলভাবে কোন কৃষি প্রযুক্তির বাস্তবায়ন এবং তা থেকে মুনাফা অর্জনই কৃষি-সমবায় সমিতির অভিষ্ট লক্ষ্য। সকল সমবায় যেহেতু ক্ষুদ্র দলের মধ্যে গড়ে উঠে, বিশেষ এলাকানির্ভরতা বা আঞ্চলিকতা-এর অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য।

বিজ্ঞানের অগ্রগতি কৃষিকেও স্পর্শ করায় এককালের লাঙ্গল নির্ভর কৃষি আজ প্রযুক্তির আর্শিবাদপুষ্ট এবং একইকৃষি-সমবায় সাথে পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। এ সবের ফলশ্রুতি একদিকে কৃষির উৎপাদন যেমন বহুগুণে বেড়েছে, অপরদিকে ঐ অধিক উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণে সৃষ্টি হয়েছে নতুন সংকট। যেমন, প্রযুক্তির ছোয়ায় বাম্পার ফলন ফলে বলেই ফসলের দাম পড়ে যায়। ক্ষেত্র বিশেষ উৎপাদন খরচও উঠে আসে না।

এ সকল অনাকাঙ্খিত সমস্যা দূরীকরণে কৃষি-সমবায় এক উৎকৃষ্ট বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। সমবায় ভিত্তিতে প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র গড়ে তুলে ফসলের দীর্ঘ মেয়াদি গুদামজাতকরণ যেমন সম্ভব তেমনি কাঙ্খিত সময়ে বাজারজাত করে অধিক মুনাফাও অর্জন সম্ভব।

কোন একজন কৃষকের পক্ষে প্রযুক্তিনির্ভর এবং ব্যয়বহুল এ সুবিধা পুরোপুরিভাবে তৈরী বা অর্জন বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে শুধুই কঠিন নয় ক্ষেত্র বিশেষ অসম্ভবও বটে। অথচ কৃষি-সমবায়ের মাধ্যমে দল গঠন করে জমি ও অন্যান্য সকল ব্যয়ভার এবং মুনাফার আনুপাতিক বন্টনের নীতিমালা কৃষিক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করতে পারে।

কৃষি সমবায় এবং সমবায় সংগঠন

 

 

গুরুত্ব

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে কৃষি সমবায়ের গুরুত্ব অসীম। নিম্নে কৃষি সমবায়ের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-

(১) আধুনিক কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল সকল উপকরণ সংগ্রহ (যেমন, কম্বাইন্ড হারভেষ্টার), কার্যকরভাবে ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষনের জন্য সুদক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে।

(২) বহুবিদ কমল এবং বৈচিত্রময় ফসলের চাষ, নিবির চাষাবাদ, কার্যকরি শষ্য পর্যায় অবলম্বন, আইপিএম পদ্ধতিতে ফসলের ক্ষতিকর রোগবালাই ও পোকামাকড় প্রতিরোধ, ফসল কর্তন, সংগ্রহ এবং সংরক্ষনের যান্ত্রিক কৃষির প্রয়োগের জন্য কৃষি সমবায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে ।

(৩) উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মানসম্মত পরিবর্তন নিশ্চিতকরণ, সঠিক গুদামজাতকরণ এবং কাঙ্খিত সময়ে বিপণনের ক্ষেত্রে কৃষি সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ।

(৪) সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মূলধন সংগ্রহ ও পুঁজি গঠন, ক্ষেত্র বিশেষ সরকার বা অন্য উৎস হতে প্রদেয় ভর্তুকি গ্রহনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

(৫) সর্বপুরি উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারন, বিক্রয় এর মাধ্যমে উচ্চ মুনাফা অর্জন নিশ্চিত করতে পারে । বৃহৎ পরিসরে তিন ধরণের সমবায় লক্ষ করা যায়-

যান্ত্রিক পুলঃ

একটি ব্যয়বহুল কৃষি যন্ত্র, যা সাধারনত অনিয়মিতভাবে ব্যবহৃত হয় যেমন শুধুমাত্র ফসল কর্তনের সময়, সেক্ষেত্রে একটি ক্ষুদ্র কৃষক পরিবার তা ক্রয় না করে, বৃহৎপরিসরে ঐ যন্ত্রটির সকল কৃষক সম্মিলিতভাবে তা ক্রয় করে ব্যবহার করতে পারে।

 

 

বিপণন সমবায়ঃ

একটি ক্ষুদ্র খামারে সুসম পদ্ধতিতে পন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুরত্বে পরিবহনের সময়ে লাভজনক হয় না। সেক্ষেত্রে সকল ক্ষুদ্র খামারের উৎপাদিত পন্য সমবায়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করে বিপণনের জন্য প্রেরণ করা যেতে পারে।

ঋণ ইউনিয়নঃ

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যাংকে ঋণের উচ্চ সুদ, স্বল্প ঋণের অপ্রাপ্যতা কিংবা ঋণ প্রাপ্তিকালে কৃষকের প্রাপ্তি বিলম্বিত করে। এসব ক্রান্তিকাল মোকাবেলায় কৃষকবৃন্দ একটি তবহিল গঠন করতে পারে যা সদস্য কৃষককে বিনা সুদে কিংবা স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করতে পারবে। এ সকল পদক্ষেপ বিপর্যয়কালীন সময়ে অত্যাবশ্যকীয় কৃষি উপকরণ যেমন, বীজ বা কৃষি যন্ত্রপাতি।

 

সারসংক্ষেপ

কৃষি খামারে বৃহৎ কোন কাজ অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে সমাধান করাকে কৃষি সমবায় বলে । কৃষি | সমবায়কে যান্ত্রিক পুল, বিপনন সমবায় ও ঋণ ইউনিয়ন, এ তিন বৃহৎ পরিসরে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। কৃষির ব্যয়বহুল উপকরণ সংগ্রহে সহজলভ্যতা এবং ঐ সকল উপকরণের কার্যকর ব্যবহারে কৃষি সমবায়ের ভূমিকা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

 

ব্যবহারিকঃ গোল কাঠ বা তক্তা পরিমান

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ব্যবহারিকঃ গোল কাঠ বা তক্তা পরিমান – যা বনায়ন এর অন্তর্ভুক্ত। গাছ কর্তনের পর সর্বপ্রথমে ডালপালা ছেটে চাহিদা মোতাবেক কান্ডকে কেটে টুকরো টুকরো করতে হবে। এ ধরনের টুকরোকে সাধারণত লগ বা গোল কাঠ বলা হয়। এ দৈর্ঘ্য প্রায় ২.৫ হতে ৪ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। গোল কাঠকে অনেক সময় বাকল হেঁটে চারকোনা করা হয়। কিন্তু এখানে কিভাবে কাঠ চিরাই করলে সর্বাপেক্ষা কম কাঠ অপচয় হয়, সে বিষয়ের লক্ষ্য রাখা আবশ্যক ।

ব্যবহারিকঃ গোল কাঠ বা তক্তা পরিমান

 

 

গোল কাঠ পরিমাপের উপায়

একটি গাছে কতটুকু কাঠ আছে তা নির্ণয়ের সবচেয়ে সঠিক পন্থা হল কান্ডের সিলিন্ডারের সাথে তুলনা করে সিলিন্ডারের পরিমাণ নির্ণয় করে কাঠের পরিমাণ নির্ণয় করা। প্রতিটি গাছের কান্ড গোড়ার দিকে মোটা এবং উপরের দিকে সরু। আবার সব গাছের কান্ড একই রকম গরু নয়। ফলে সরাসরি সিলিন্ডারের সূত্র প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ নির্ভুলভাবে কাঠের পরিমাপ নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য এবং ব্যবহার্য না। যদি কান্ড সিলিন্ডার আকৃতির হতো তবে খুব সহজে একটি লগে বা টুকরো কান্ডে কাঠের পরিমাণ নির্ণয় করা যেত। নিয়ে তা দেখানো হল:

আমরা জানি,

একটি সিলিন্ডারের আয়তন = 21

এখানে,

r = ব্যাসার্ধ

I= উচ্চতা

A= ধ্রুর সংখ্যা (যার মান ৩.১৪১৬)

উদাহরণ স্বরূপঃ একটি সিলিন্ডার আকৃতির কাঠের লগের ব্যাস ২০ সে.মি. এবং এর উচ্চতা বা দৈর্ঘ্য ৩ মিটার হলে, কাঠের পরিমাণ কত ঘনমিটার ।

কাজের ধারা

১। নির্বাচিত গাছের কান্ডের কাঠের পমিাণ করার জন্য কান্ডের দৈর্ঘ্যা প্রথমে ফিতা সাহায্যে মাপা হল।

২। এবার কান্ডের দুই প্রান্তের ব্যাস মেপে তাদের গড় বের করা হয়।

৩। সর্বশেষে উপরের সূত্র দ্বারা কাঠের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়।

এখানে, কান্ডের দৈর্ঘ্য = ৩ মিটার

কান্ডের ব্যাস d = ২০ সে.মি.

সুতরাং কান্ডের ব্যাসার্ধ, R=D/2=20CM/210cm = ০.১০ মিটার

অতএব, কাঠের পরিমাণ Ari

= (৩.১৪১৫ × (-১০)× ৩) ঘনমিটার

=০.০৯৪২ ঘনমিটার

দাঁড়ানো গাছে কাঠের পরিমাণ নির্ণয়

দাঁড়ানো গাছের কাঠের পরিমাণ সূত্র ব্যবহার করে সাধারণত নির্ণয় করা  যায় ।

সূত্রঃ কাঠের পরিমাণ (ঘনমিটার) = ০.০৮X বেড় ১+ (বেড় ২২৪) + বেড় ৩ – x দৈর্ঘ্য

প্রয়োজনীয় উপকরণ :

ক) নির্বাচিত গাছ
খ) পরিমাপক ফিতা
গ) কাগজ, কলম ইত্যাদি

কাজের ধারা

১. নির্বাচিত গাছের কান্ডের কাঠের পরিমাণ করার জন্য চিত্রর মত করে কাজের দৈর্ঘ্য প্রথমে ফিতা ভরা মাপতে হবে।
২. এবার কান্ডের মোটা, মাঝারি ও চিকল প্রান্তের বেড় ফিতা দ্বারা মেপে নিতে হবে। ৩. সবশেষে উপরের সূত্র প্রয়োগ করতে হবে।

উদাহরণ : ধরে নেই,

কান্ডের দৈর্ঘ্য = ২০ মিটার

চিকন প্রাপ্তের বেড় (বেড় ১) = ১ মিটার

মাঝের প্রান্তের বেড় (বেড় ২) = ১.৫ মিটার

মোটা প্রান্তের বেড় (বেড় ৩) = ২ মিটার

ভক্তার পরিমাণ নির্ণয়

ভক্তার পরিমাণ নির্ণেয়ের ক্ষেত্রে তক্তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা প্রথমে ফিতার সাহায্যে বের করে দিতে হবে। কাঠের পরিমাণ করার জন্য এ ক্ষেত্রে তিন মাত্রিক পরিমাণ নিম্নোক্ত চিত্রানুসারে ফিতার সাহায্যে মেপে নিতে হবে।

 

ধরে নেই,

তক্তার দৈর্ঘ্য x = ৩ মিটার

তভার প্রস্থ y = ১ মিটার

তক্তার উচ্চতা h = ০.৫মিটার

অতএব, ভক্তার আয়তন= দৈর্ঘ্য x প্রস্থ x উচ্চতা

= 0 x 10.5 ঘন মিটার

= ১.৫ ঘন মিটার

 

 

চূড়ান্ত মূল্যায়ন

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. নোমান বাংলাদেশের কা সম্পর্কে তার শিক্ষক ড. রহিম সাহেব এর কাছে জানতে চাইলেন। তিনি প্রথম প্রকার বন সম্পর্কে বলেলন, ‘এ বন বাংলাদেশের মোট বনভূমির বেশি এলাকাজুড়ে আছে এবং এখানে বেশ কয়েকটি শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে।’ তারপর দ্বিতীয় প্রকার বন সম্পর্কে বলেলন, ‘শীতকালে এ বনের পাতা ঝরে যায়। এ দুই প্রকার বন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ?

ক) বনভূমির কাকে বলে?
(খ) বনভূমি কমে যাওয়ার কারণে কী?
গ) প্রথম প্রকার বনে কীভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর ।
ঘ) বর্ণিত দুটি বনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করুন।

২। কিশোরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা জনাবা রহিমা সামাজিক বনায়নের সাথে সম্পর্কিত। এ উদ্দেশ্যে তিনি সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইনের পাশে বৃক্ষ রোপন করে থাকেন। তাছাড়া তিনি তার এলাকাবাসীদের বনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করে থাকেন।

ক) গ্লোয়িং স্টক কাকে বলা হয় ?
খ) সামাজিক বনায়ন ও ম্যানগ্রোগ্রোভ বনায়নের মধ্যে পার্থক্য লিখ।
গ) উপকূলীয় বনের অধিকাংশ প্রজাতির শ্বাসমূল থাকে কেন?
ঘ) রহিমা বেগমের মতো তার এলাকাবাসী এ কর্মসূচিতে এগিয়ে আসলে বনায়নের অভাব পূরণ হবে”-উক্তিটি বিশ্লেষণ করে বনায়নের গুরুত্ব লিখ।

৩। রেহেনা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মতে তার বাড়ির দক্ষিণ দিকে পুকুর পাড়ে উঁচু ৮ শতক জমিতে মেহগনি বীজ রোপন করেন। এ জন্য তিনি ১৫ সে.মি. x ১০ সে.মি. আকারের পলি ব্যাগ ব্যবহার করেন। এতে করে রেহেনা ব্যাপক সফলতা লাভ করেন ।

ক) । বীজ নিষ্কাশনের প্রধান কয়টি পদ্ধতি?

খ) নার্সারি স্থাপনের একটি প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন ।

গ) রেহেনার নার্সারির চারার সংখ্যা নির্ণয় করুন ।

ঘ) রেহেনার সফলতার কারণ বিশ্লেষণ করুন।