মাছ ও চিংড়ি সংরক্ষণ বিভিন্ন পদ্ধতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-মাছ ও চিংড়ি সংরক্ষণ বিভিন্ন পদ্ধতি

মাছ ও চিংড়ি সংরক্ষণ বিভিন্ন পদ্ধতি

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি

১. সমার যন্ত্র মাছের আঁশ তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়। বেশি পরিমাণে মাছ পরিষ্কার করার সময় তাড়াতাড়ি কাজ করা যায়।

২. ধারালো ছুরি পরিষ্কার ধারালো ছুরি, মাছ কাটা এবং পরিষ্কার করার জন্য।

৩. কাঠের বোর্ড পরিষ্কার কাঠের বোর্ড, মাছ পরিষ্কার করা ও কাটার সময় রাখার জন্য।

৪. ঠাণ্ডা পানি বালতিতে মাছ পরিষ্কার করার জন্য পানি রাখতে হবে।

৫. পাত্র পরিত্যক্ত নাড়িভুঁড়ি ফেলার জন্য পাত্র।

৬. পরিষ্কার বড় পাত্র মাহ ধোয়ার জন্য বড় গামলা বা পাত্র।

৭. বাক্স, মাদুর, ট্রে বা এ জাতীয় জিনিস যেখানে লবণজাত মাছ শুকাতে

৮. পরিষ্কার পাত্র যেখানে বাতাস প্রবেশ করতে পারে না।

৯. লবণ দানাদার লবণ।

১০. ব্যাগ, মাদুর বা তারের জালের বাক্স। যেখানে মাছ শুকানোর জন্য ধুমায়িত করা যেতে পারে।

১১. চুলা ধুমায়িত করার জন্য।

১২. গুদামজাত করার জন্য বাতাস প্রবেশ করতে পারে না এমন বাক্স বা প্লাস্টিক ব্যাগ ইত্যাদি।

 

 

লবণজাতকরণ

মাছ সংরক্ষণ করার সবচেয়ে সনাতন এবং সহজ পদ্ধতি হলো লবণজাতকরণ। এই পদ্ধতিতে সাধারণ খাবার লবণ ব্যবহার করার মাছের দেহের সমস্ত পানি বের হয়ে আসে। ফলে ঐ পরিবেশে কোন জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না। মাছে পচন ধরে না।

পদ্ধতি :

মাছ লবণজাত করার দুইটি পদ্ধতি আছে।

ক. সাধারণ লবণ দিয়ে শুকানো বা ড্রাই সস্টিং

খ. লবণজাত করে আগুনে তাপ দেওয়া বা ব্রাইন সপ্টিং।

ক. সাধারণ লবণ দিয়ে শুকানো বা ড্রাই সল্টিং

এ পদ্ধতিতে মাছ লবণজাতকরার জন্য ঝুড়ি, বাঁশের ট্রে বা পানি বের হতে পারে এমন জিনিস ব্যবহার করতে হয়। বড় মাছের ক্ষেত্রে মাছের আঁশ, নাড়িভুড়ি, পাখনা মার যন্ত্র নিয়ে ফেলে দিতে হয়। ধারালো ছবি দ্বারা মাছ আড়াআড়ি টুকরা করা হয়। তবে সম্পূর্ণ মাছ দেহ থেকে পৃথক করা হয় না। প্রথমে মাছের শরীরের মধ্যে লবণ মাখানো হয়। এরপর ১২- ২৫ ঘণ্টা লবণ পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। কুঁড়ি বা ট্রে অথবা যে পাত্রে মাছ রাখা হবে সে পাত্রটির তলায় পুরু লবণের স্তর দিতে হবে। তারপর মাছ রেখে আবার লবণ এভাবে একস্তুর মাছ এবং একজর লবণ রাখতে হবে।

 

 

খেয়াল রাখতে হবে কোন অবস্থাতেই যেন মাছ गाে গায়ে লেগে না যায়। পাত্রটি যখন লবন এবং মাছ দ্বারা পূর্ণ হবে তখন পাত্র বা ঝুড়ির মুখ মোটা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অবশেষে ঝুড়িটি একটু উঁচু করে পাথরের উপর বসিয়ে রাখতে হবে। যেন লবণ পানি সহজেই গড়িয়ে যেতে পারে। এভাবে যখন সমস্ত পানি করে যাবে তখন গুদামজাত করতে হবে। ছোট মাছ লবণাক্তকরণের সময় মাছ ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু মাছের নাড়িভুঁড়ি ফেলতে হবে না। এ পদ্ধতিতে লবণজাতে মাছ একবছর পর্যন্ত রাখা যায়।

খ. আগুনে তাপ দিয়ো লবণজাত করা বা ব্রাইন সস্টিং

প্রথমে পাত্রের তলায় মোটা লবণের স্তর নিতে হবে। তারপর ৩৪১ ভাগ হারে মাছ এবং লবণ দিয়ে পাত্রটি করতে হবে। অন্য একটি পাত্রে তিন ভাগ পানি এক ভাগ লবণ দিয়ে ভরতে হবে। পাত্রটি আগুনে জ্বাল দিতে হবে। পানিতে হাত ডুবানোর মত গরম অবস্থায় পূর্বের পারো পানি ঢালতে হবে। এবার পাত্রটি একটু উঁচু জায়গায় রেখে পানি চুইয়ে দিতে হবে। এভাবে যখন সমস্ত পানি শুকিয়ে যাবে মাছ অসামজাত করতে হবে।

মাছ শুঁটকিকরণ

আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচলিত পদ্ধতি। প্রায় সব রকমের মাছ এ পদ্ধতিতে চটকি করা যায়। এ পদ্ধতিতে বাতাস এবং সূর্যের তাপে মাছের শরীর থেকে পানি বের হয়ে মাছ শুকিয়ে যায়। যদি মাছ শুকাতে দেরি হয়, তাহলে জীবাণু বিস্তার লাভ করতে পারে। সেজন্য শুঁটকি সব সময় খুব কড়া রোদে শুকাকে হন। উন্নত দেশে সোলার ড্রায়ারে বা ওভেনে মাছ শুঁটকি করা হয়।

 

 

পদ্ধতি :

ছোট মাছ নাড়িভুড়িসহ ভালোমত ঠাণ্ডা পানিতে ধুরো লবণ পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর ভিজা মাছগুলো বাঁশের চাটাই, মাদুর বা যে পাত্রে সহজে বাতাস আসা- যাওয়া করতে পারে এমন পাত্রে শুকাতে দিতে হয়। শুকানোর জায়গাটি মাটি থেকে একটু উঁচু হতে হবে যেন সহজেই পানি গড়িয়ে যেতে পারে। এভাবে ২-৩ দিনের কড়া রোদে মাছগুলো শুকানো হয়। পরে কোনো মাছগুলোতে যেন বাতাস প্রবেশ না করে এমন পলিথিন ব্যাগে বা পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।

বড় মাছের ক্ষেত্রে নাড়িভুঁড়ি আঁশ, পাখনা, ফুলকা ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে ফেলে দিতে হবে। লবণ দিয়ে মাছ ধুয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে লবণ পানিতে না ধুলেও কোন ক্ষতি নেই এবার মাছগুলো বাঁশের মাচা অথবা ট্রে বা বাতাস চলাচল করতে পারে এমন জায়গায় রাখতে হবে।

বাতাসের আর্দ্রতা অনুযায়ী মাছের ট্রে বা মাচা ২/১ দিন ছায়ার মধ্যে রাখতে হবে। যদি প্রথমেই কড়া রোদে রাখা যায়, তাহলে মাছের উপরিভাগ শক্ত হয়ে যাবে। শুঁটকির গুণগত মান নষ্ট হবে। ছায়ায় ২/১ দিন রেখে যখন দেখা যাবে মাছের উপরিভাগ শুকিয়ে যাচ্ছে তখন মাছ কড়া রোদে দিয়ে শুকাতে হবে।

রাতে এবং বৃষ্টির সময় মাছগুলো মোটা প্লাস্টিক বা পারো রাখতে হবে যেন কোনভাবেই বাতাস না লাগে। মাছ যখন ভাঁজ করা যাবে না তখন বুঝতে হবে মাছ শুটকিকরণ হয়েছে। যদি লবণাক্ত মাছ শুঁটকি করা হয় তবে শুকনো মাছের উপর লবণের পাতলা স্তর দেখা যাবে।

লবণাক্ত বা সাধারণ শুঁটকি মাছ কাঁচের বা অন্য কোন ধাতব পাত্রে রাখলে কয়েক বছর রাখা যায়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে পাত্রের ভিতর যেন বাতাস প্রবেশ না করে।

বরফজাতকরণ

মাছের পচন রোধ করার জন্য সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো বরফজাতকরণ। মাছ ধরার সময় টাটকা থাকে। টাটকা মাছ একস্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহনের সময় পচন হতে পারে। মাছে বরফ দিলে মাছ ঠাণ্ডা থাকে। ঠাণ্ডা অবস্থায় মৃত মাছের শরীরের জীবাণু কাজ করে না। এ পদ্ধতিতে মাছ সামরিকভাবে ভালো রাখা गा।

পদ্ধতি:

বরফজাত করা মাছ বহুদিন সংরক্ষণ করা যায় না। গভীর সমুদ্রে ট্রলারের সাহায্যে মাছ আহরণ করা হয়। সেখানে বড় বড় বরফের টুকরা ভেঙ্গে গুঁড়া করা হয়। বাতাস প্রবেশ করতে পারে না এমন বাক্সে নিচে বরফ নিয়ে মাছ ও বরফ অনুপাতে সাজাতে হয়।

বরফ গুঁড়া করলে মাছের শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে। এতে জীবাণু সজিনা হতে পারে না। এভাবে মাছ ও চিংড়ি সংরক্ষণ করে সমুদ্র থেকে ফিশ হারবারে মাছ আনা হয়। এ পদ্ধতিতেই বাঁশের ঝুড়ি বা বাক্সে মাছ সংরক্ষণ করা হয়। তারপর প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার পাঠোনো হ্যা।

বাজারে মাছ পরিবহনের সময় ১৪১ অনুপাত মেনে চলা উচিত। এমনভাবে বরফজাত
করলে মাছ ২০-২৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা য

হিমায়িতকরণ

এ পদ্ধতি মাছ সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে ভালো। এক বছর পর্যন্ত মাছ সমস্ত গুণাগুণ রেখেই সংরক্ষণ করা যায়। দেশে প্রধানত চিংড়ি, ব্যাঙের পা, লবস্টার হিমায়িতকরণের মাধ্যমে বিদেশে রফতানি করা হয়। হিমায়িতকরণ ৫ ধরনের ফ্রিজারের মাধ্যমে করা হয়।

ক. এবার রাস্ট ফ্রিজার ৩০০ থেকে ৪০০ সে. তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়।

খ. ইমারেশন ফ্রিজার লবণ দ্রব্য ব্যবহার করা হয়ে।

গ. প্লেট ও ব্রেট ফ্রিজার ৩০ থকে ৪০০ সে. তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়।

পদ্ধতি

বরফজাত করা মাছ হিমায়িত করা হয়। বরফজাত করা মাছকে প্রথমে ঠান্ডা পানিতে ভালোমত ধোয়া হয়। বড় মাছের নাড়িভুঁড়ি, পাখনা, আঁশ ফেলে দেয়া হয়। চিংড়ির মাথা আলাদা করে মাছের সাইজ অনুযায়ী যেত করা হয়। ২০-১০০ নিযুতাংশ ক্লোরিন পানিতে মাছ ও চিংড়ি পৃথকভাবে ২০ মিনিট ডুলিয়ে নিতে হয়।

এরপর এ মাছ সোডিয়াম ট্রাইফসফেট দ্রবণে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হয়। তারপর সে তাপে ব্লক ফ্রিজিং করা হয়। রক ফ্রিজিং হতে সময় লাগে ২-৩ ঘণ্টা। মাছ সরাসরি ০০ সে. তাগে গ্রেজ করা হয়। চিংড়ি ৩ সে. তাপে ০.৫ ভাগ লবণ পানিতে গ্রেজ করা হয়। গ্রেজকৃত বুকগুলো কাগজের প্যাকেটে মুড়িয়ে বা কার্টুনে ভরে বাজারজাত করা হয়। হিমায়িত মাছ – ১৮° সে হয়।

সারমর্ম

বড় মাছ সংরক্ষণের সময় নাড়িভুঁড়ি আঁশ ও পাখনা ফেলে দিতে হয়।

ছোট মাছ সংরক্ষণের সময় নাড়িভুঁড়ি ফেলতে হয় না।

রক্ষা করার জন্য সব সময় বাতাস প্রবেশ করতে পরে না এমন পাত্র ব্যবহার করে

শুটকি মাছ কাচ বা অন্য কোন ধাতব পাত্রে রাখলে কয়েক বছর ভালো থাকে।

বরফজাতকরণে মাছ সাময়িকভাবে ভালো রাখা যায়।

বরফ দিয়ে ঠাণ্ডা অবস্থায় মৃত মাছের শরীরে জীবাণু কাজ করে না।

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version