আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – বাছুরের খাদ্য। খামার শুরুর পূর্বাবস্থায় খামারীরা অনেক দ্বিধায় থাকেন যে বাছুরকে কী খাওয়াবে এবং কী খাওয়াবে না এ ব্যাপারে। এসম্পর্কে বিস্তারিত জানতেই আমাদের এবারের আলোচনা।
এই পাঠ শেষে আপনি-
- বাছুরের পাকস্থলীর গঠন বর্ণনা করতে পারবেন।
- বাছুরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টির পরিমাণ লিখতে পারবেন।
- বয়সভিত্তিতে বাছুরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে পারবেন।
- বয়সভিত্তিতে বাছুরের খাদ্য পরিবেশন করতে পারবেন।
বাছুরের শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ পর্যাপ্ত খাদ্যের প্রয়োজন। তবে, খাদ্যের পুষ্টিমান, পরিমাণ প্রভৃতি জানার পূর্বে বাছুরের পাকস্থলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রয়োজন। এতে বাছুরের জন্য বয়সভেদে খাদ্যতালিকা (ration) তৈরি করতে সুবিধা হয়।
Table of Contents
বাছুরের খাদ্য
গরুর পাকস্থলী:
পূর্ণবয়স্ক গরুর পাকস্থলীর প্রকোষ্ঠ চারটি। বাছুরেরও চারটি। পূর্ণবয়স্ক গরুর পাকস্থলীর চারটি শৈশবে প্রকোষ্ঠের মধ্যে ৮০% জুড়ে থাকে প্রথম প্রকোষ্ঠ বা রুমেন (rumen), মাত্র ৫% দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠ বা রেটিকুলাম (reticulum), ৮% দখল করে তৃতীয় প্রকোষ্ঠ বা ওমেজাম (omasum) এবং চতুর্থ প্রকোষ্ঠ বা সত্যিকার পাকস্থলী তথা অ্যাবোজোম (abomasum) দখল করে থাকে মাত্র ৭%।
বাছুরে রুমেন ও রেটিকুলাম একত্রে যত বড় অ্যাবোমেজাম ও ওমেজাম একত্রে তার দ্বিগুন (চিত্র ৫৬ দেখুন)। বাছুরের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ অনুপাত পরিবর্তিত হয়। ১০-১২ সপ্তাহের বাছুরে ওমেজাম- অ্যাবোমেজাম, রেটিকুলাম রুমেনের মাত্র অর্ধেকে নেমে আসে।
এক বছর বয়সে এই আনুপাতিক হার পূর্ণবয়স্ক গরুর সমান হয়ে যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় দুধ সরাসরি অ্যাবোমজামে চলে যায়। তবে, অ্যাবোমেজামের পরিসরের বেশি দুধ পান করালে তা রুমেনে চলে যায়। শৈশবকালে বাছুরের রুমেন যেহেতু অকার্যকর থাকে তাই অতিরিক্ত দুধ পানে পাকস্থলীর বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। যেমন- দুধের পচন ধরতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শৈশবে বাছুরের অ্যাবোমেজাম ২ লিটার দুধ ধারণ করতে পারে এবং সম্পূর্ণ পাকস্থলী ৪.৫ লিটারের কম দুধ ধারণ করে। গরুর জাতভেদে এই পরিমাণ দুধ ধারণের পার্থক্য হতে পারে। আমাদের দেশী বাছুরকে দৈনিক ১.০-১.৫ লিটার এবং সংকর জাতের বাছুরকে ২.০ লিটার পর্যন্ত দুধ পান করানো যেতে পারে।
অনুশীলন (Activity):
বায়ুরের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পাকস্থলীর বিভিন্ন প্রকোষ্ঠের যে পরিবর্তন হয় তা লিখুন।
বাছুরের খাদ্য ও শক্তির পরিমাণ:
বাছুরের ক্ষুদ্র পরিপাকতন্ত্র একসাথে অনেক খাদ্য হজম করতে পারে না। পাঁচ-ছয় সপ্তাহ বয়সের আগ পর্যন্ত বাছুর কোনো আঁশযুক্ত মোটা খাদ্য (roughage) খেতে পারে না। এমনকী, শক্তসমর্থ দশ আসতে হবে যা দুধ বা দানাদার (concentrate) খাবার থেকে আসতে পারে।
বিজ্ঞানী মরিসনের (Morrison) মতে, ৪৫.৫ কেজি দৈহিক ওজনের বাছুরের জন্য ০.৭০-১.০ কেজি মোট পরিপাকযোগ্য পুষ্টির (total digestive nutrients) প্রয়োজন।বাছুরের খাদ্যতালিকায় খাদ্যের ৫টি উপাদান, যেমন- শর্করা, আমিষ, স্নেহপদার্থ, খনিজপদার্থ ও খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন থাকতে হবে।
এছাড়া প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানিও পান করাতে হয়। বাছুরের জন্য প্রথম ছয় মাসে আমিষের চাহিদা দ্রুত বেড়ে যায়। দুধ উৎকৃষ্টতর আমিষের উৎস। দুধের পরিবর্তে অন্য কোনো উৎস থেকে আমিষ খাওয়াতে হলে আমিষের উৎসের প্রতি অবশ্যই দৃষ্টি নিতে হবে।
শৈশবে বাছুরের শরীরের আমিষ অংশের মতো অস্থিতত্ত্বেরও দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেহেতু অস্থি বা হাড়ের প্রধান অংশ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস তাই খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকতে হবে। দুধ খণিজ উপাদানসম হ যথার্থ পরিমাণে সরবরাহ করে থাকে।
তবে, দুধ ছাড়ার পর বাছুরের খাদ্যতালিকায় প্রায়ই ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অপ্রতুলতা দেখা দেয়। তাছাড়া আয়োডিন অপ্রতুল খাদ্যে এর অভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আয়োডিনযুক্ত লবণ সরবরাহ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, সালফার, লোহা ও তামার প্রয়োজনও বেড়ে যায়।
বাছুরকে দানাদার মিশ্রণ ও কিছু উন্নতমানের লিগিউমজাতীয় সবুজ ঘাস সরবরাহ করলে এসমস্ত খনিজপদার্থ পর্যাপ্ত পরিমাণে পায় এবং সাথে সাথে রুমেনের আকারও বড় হতে থাকে। খাদ্যের সাথে যে জীবাণু রুমেনে প্রবেশ করে তা বংশবৃদ্ধি করে এবং খাদ্য পরিপাক করে। অধিকন্তু, সব সময় বাছুরকে খাদ্যলবণ সরবরাহ করতে হবে।
খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন হলো খাদ্যের সর্বশেষ উপাদান। তবে, অন্তত চার সপ্তাহ পর্যন্ত বাছুরকে শালদুধ (colostrum) ও দুধ পান করানো হলে ভিটামিনের অভাব দেখা দেয় না। যেহেতু রুমেন পুরোপুরি বিকাশ লাভ না করা পর্যন্ত পাকস্থলীতে ভিটামিন সংশ্লেষিত হতে পারে না, তাই খাদ্যে এর সরবরাহ থাকা প্রয়োজন। খণিজ ও ভিটামিন সহজ উপায়ে বাছুরের খাদ্যে সরবরাহ করার উপায় হলো এই দু’টো খাদ্য উপাদান দানাদার মিশ্রণে পরিমাণমতো যোগ করা ।
বাছুরের খাদ্য সরবরাহ:
আমাদের দেশে বাছুর পালন উন্নত বিশ্বের পদ্ধতিগুলো থেকে আলাদা। উন্নত বিশ্বে বাচ্চুর জন্মানোর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তার মা থেকে পৃথক করে নেয়া হয়। সম্পর্ণ কৃত্রিম উপায়ে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে বাচ্চুর জন্মানোর পর প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের সাথে থাকে এবং বাট চুষে দুধ পান করে। কৃষক বা খামার উভয় পর্যায়েই একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
অতএব আমাদের দেশে বাছুরের খাদ্য সরবরাহ উন্নত দেশের পদ্ধতি থেকে আলাদা হওয়া বাঞ্ছনীয়। একটি কথা অবশ্যই স্মরণ রাখা উচিত যে, বাহুরকে খাদ্য-পুষ্টি সরবরাহই বড় কথা নয়, পুষ্টি শরীরের কাজে লাগার জন্য দরকার বৈজ্ঞানিকভাবে পরিচর্যা।
গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে খামার পর্যায়ে বাছুরের পুষ্টি সমস্যা দেখা যায় জন্মের প্রথম ৬ মাসের মধ্যে। কিন্তু কৃষক পর্যায়ে বাছুরের ৬ মাস বয়সের পর এই সমস্যার সৃষ্টি হয় যখন বাছুর তার মায়ের নিকট হতে কোনো দুধ না পায় বা কম পরিমাণে পায়। ফলে তাকে অন্য খাবারের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। দু’পর্যায়ের সমস্যা সম্বন্ধে কিছু আলোকপাত না করলে সমাধান পাওয়া মুশকিল হবে।
ক) কৃষক পর্যায়ের সমস্যা ঃ
এই পর্যায়ে যতদিন গাভীর দুধ পর্যাপ্ত থাকে ততদিন কৃষকের ইচ্ছায় অথবা গাভীর কারচুপির জন্য বাছুর প্রয়োজনমাফিক দুধ পায়। গাভীর দুধ উৎপাদন সাধারণত ৬ মাস পর কমে যায় এবং কৃষকও মনে করে বায়ুরতো বড় হয়েছে। অতএব এখন দুধ পান করতে না দিলেই চলবে।
কিন্তু তখন তার যে উন্নতমানের শক্ত খাবার দরকার পড়ে কৃষক সেটা হয়তো খেয়াল করেন না। অন্যদিকে, আমাদের দেশের বাচ্চুর সাধারণত খড়জাতীয় নিম্নমানের খাবার খায়। ফলে বাছুর
আস্তে আস্তে অপুষ্টিতে ভুগতে শুরু করে।
খ) খামার পর্যায়ের সমস্যা ঃ
এই পর্যায়ে দুধ উৎপাদনকে বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করা হয়। ফলে প্রায়ই বাছুরের দুধ সরবরাহ হ্রাস পায় এবং জন্মের পর বাছুর প্রায় দু’মাস শক্ত খাবার থেকে তেমনভাবে পুষ্টিও গ্রহণ করতে পারে না। অতএব বাছুরের স্বাস্থ্য খারাপ হয়।
বাছুর পেটের পীড়া:
অন্য কারণটি প্রায়ই মূল কারণ বলে বিবেচিত হয় আর তা হলো পুষ্টি সরবরাহের সাথে বাছুরের সুষ্ঠু পরিচর্যার অভাব। খামার পর্যায়ে অনেক বাছুর একসাথে পালন করা হয়। কোনোভাবে যদি দলের একটি (আমাশয় বা ডায়রিয়া) আক্রান্ত হয় তখন দলের অন্য বাছুরগুলোও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করলেও ঐ দলের কোনো বাছুরই ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে না। তাছাড়া অনেক রোগজীবাণু মেঝে (যা প্রায়ই ভেজা থাকে) থেকে, পানি বা খাদ্যদ্রব্যের সাহায্যে এক বাছুর হতে অন্য বাছুরে বা এক দল হতে অন্য দলে সংক্রমিত হতে থাকে।
ফলে দেখা যায়, পুরো খামারের বাছুরের স্বাস্থ্য জন্মের পর প্রায়ই খারাপ থাকে। বয়স বাড়লে বাছুরের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শক্ত খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পেয়ে থাকে বিধায় ব্যয়ঃপ্রাপ্তির সাথে সাথে বাছুরের স্বাস্থ্য আস্তে আস্তে ভালো হতে থাকে।
বয়সের ভিত্তিতে আমাদের দেশের বাছুরের খাদ্য-পুষ্টি সরবরাহ তিনটি পর্বে বিভক্ত করা যায়। যথা-
ক) তরল খাদ্য পর্ব :০-২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত
খ) তরল ও শুকনো খাদ্য পর্ব ৪৩-২৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত
গ) শুকনো খাদ্য পর্ব ঃ ২৫-৫২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত
ক) তরল খাদ্য পর্ব ঃ
এই পর্বের প্রথম সপ্তাহে বাছুরকে শালদুধ পান করাতে হবে। একবারে বেশি না পান করিয়ে কমপক্ষে দিনে দু’বার পান করাতে হবে। বাছুর জন্ম গ্রহণ করার পরপরই দুধ দোহন করে চামচ দিয়ে বাছুরকে পান করাতে হবে। বাচ্চুর যখন দাঁড়ানো শিখবে তখন ওলানের নিকট নিয়ে বাট মুখে পুরে চুষতে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
কিছুক্ষণ প্রশিক্ষণ নিলে বাছুর বাট চুষে দুধ পান করা শিখবে। যদি সমস্যার সৃষ্টি হয় তাহলে বাছুরকে প্রথমে আঙ্গুল চোষার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তারপর বাছুরকে ওলানের নিকট নিয়ে আঙ্গুল চুষতে দিতে হবে এবং আস্তে আস্তে আঙ্গুল সরিয়ে বাট মুখে দিতে হবে।
এভাবে আস্তে আস্তে বাছুর দুধ পান করা শিখে যাবে। বাছুরকে যদি কখনও কোনো কারণে বোতল বা বালতি হতে দুধ পান করাতে হয় তাহলেও একইভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। এদেরকে কখনও জোর করে দুধ পান করানো উচিত নয় এতে দুধ ফুসফুসে গিয়ে নিউমোনিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। বাছুর যখন নিজের ইচ্ছায় লেজ নেড়ে নেড়ে দুধ পান করবে তখন বুঝতে হবে সে সুস্থ ও ভালোভাবে বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া দুধ পানের সময় হলে এরা ডাকাডাকি করবে ও লেজ নাড়াতে শুরু করবে।
খাবার সময় বাছুরের এই অবস্থাকে কনডিশনড্ রিফ্লেক্স (conditioned reflex) বলে। কনডিশনড্ রিফ্লেক্সের জন্য দুধ সরাসরি ইসোফেজিয়াল গ্রুন্ড (esophageal groove) নিয়ে সত্যিকার পাকস্থলী বা অ্যাবোমেজামে প্রবেশ করবে। ফলে বাছুরের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। বাছুরের লেজ নাড়া খুব ভালো নির্দেশিকা যা দুধ সত্যিকার পাকস্থলীতে পৌছার প্রত্যয়ন করে।
খ) ভরল ও শুকনো খাদ্য পর্ব ঃ
বাছুরের বয়স দু’সপ্তাহ হলেই তাকে কিছু দানাদার খাদ্য দিতে হবে। সারণি ১৩-এ দানাদার খাদ্যের তিনটি মিশ্রণ দেখানো হয়েছে। অল্প বয়স্ক বাছুরের জন্য মিশ্রণ তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে এতে আঁশের ভাগ অপেক্ষাকৃত কম থাকে।
আমিষের পরিমাণ প্রতি কেজি মিশ্রণের শুষ্কপদার্থে ২০০-২২০ গ্রাম এবং মেটাবলাইজেবল শক্তি ১২.০-১০.০ মেগাজুল থাকা প্রয়োজন। কারণ এই সময়ে বাছুরের রুমেন ছোট থাকে এবং কম খাদ্যে যাতে বেশি পুষ্টি পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে দানাদার খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দুধের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া উচিত (খাদ্য পরিবেশন ছক অনুযায়ী)। এতে বাছুর পালনের খরচ কমে যাবে এবং রুমেনেরও স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটবে। কখনও দুধ দিয়ে বাছুরের তৃষ্ণা মেটানো উচিত নয়।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিষ্কার পানির যোগান দিতে হবে। এতে বাছুর দুধের পুষ্টির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারে। বাছুরের একমাস বয়স থেকেই কিছু কিছু কচি সবুজ ঘাস সরবরাহ করা উচিত। বাছুর তার ইচ্ছেমতো খেয়ে নিবে। আমাদের দেশে কচি দূর্বা ঘাস বা চাষ করা ভুট্টা, ৩০-৩৫ দিন বয়স্ক নেপিয়ার, পাৱা ইত্যাদি ঘাস দেয়া যেতে পারে।
কম বয়সী বাছুরের জন্য শীতকালে খেসারি, মাসকলাই এবং বর্ষাকালে কাউপি, ইপিল-ইপিল, তুঁত গাছ বা ধৈঞ্চার পাতা ইত্যাদি অধিক পুষ্টিকর কাঁচা ঘাস। এই ধরনের ঘাস বাছুরের সারাজীবনের জন্যই প্রয়োজন।
বিদেশে সাধারণত প্রথম সপ্তাহ শেষেই বাছুরকে তার মা হতে পৃথক করা হয় এবং ‘বিকল্প দুধ বা ‘মিল্ক রিপ্লেহার (milk replacer)’ সরবরাহ করা হয়। ৬৫% স্কিম মিল্ক, ২০% উদ্ভিজ্জ তেল, যেমন- নারিকেল তেল, ১০% ঘোল বা মাঠার পানি এবং ৫% ভিটামিন ও খণিজদ্রব্য দিয়ে বিকল্প দুধ তৈরি করা যায়। বিকল্প দুধের সবগুলো উপাদান একসঙ্গে জোগাড় করা অনেকের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে অথবা খুব বেশি খরচ পড়তে পারে। তবে, গাভী দুধ কম দিলে বা অসুস্থ হয়ে পড়লে উপরোক্তভাবে বিকল্প দুধ তৈরি করে সরবরাহ করা যেতে পারে।
গ) শুকনো খাদ্য পর্ব ঃ
এসময়ে বাছুরের রুমেন প্রায় পরিপক্ক থাকে। অতএব এই বয়সে বাছুরকে তার ইচ্ছানুসারে আঁশজাতীয় খাদ্য, যথা- খড়জাতীয় শুকনো খাদ্য, বিভিন্ন প্রকার সবুজ ঘাস ও চাল, গম, ছোলা ও খেসারির কুড়া ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে এবং দানাদার খাদ্যের পরিমাণ হ্রাস করতে হবে।
বাছুর যেহেতু এই বয়সে দুধ পান করে না তাই এদের খাদ্যে তা প্রয়োজনমাফিক যোগ করা উচিত। সারণি ১৪-এ এই বয়সের বাছুরের জন্য তিনটি মিশ্রণ তৈরি করে দেখানো হয়েছে। এসব মিশ্রণের দু’একটি খাদ্য উপাদান পাওয়া না গেলে সমগোত্রীয় অন্য উপাদান দিয়ে তা পরিবর্তন
করা যেতে পারে। সবুজ ঘাস খাওয়ালে তার সাথে ১০% নালী গুড় ভালোভাবে মিশিয়ে দিলে বাছুরের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। এই অবস্থায় দানাদার মিশ্রণ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কমিয়ে দেয়া যায় ।
অনুশীলন (Activity) ও বাছুরের খাদ্য সরবরাহের তিনটি পর্বের মধ্যে মূল পার্থক্য নির্ণয় করুন।
সারণি ১৪ : তরল ও অকনো খাদ্য পর্বে বাছুরের জন্য দানাদার খাদ্য মিশ্রণ
সাধারণ সতকর্তা ঃ
বাছুরকে শুকনো দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর অভ্যাস করানো উচিত। পানিতে গুলে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পদ্ধতিতে খাদ্য পচনের মাধ্যমে রোগব্যাধি ছড়ানোর সম্ভবনা থাকে। দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পর সুন্দরভাবে খাদ্যাধার পরিষ্কার করে রাখতে হবে। দানাদার খাদ্যে যাতে পোকা, ফাঙ্গাস বা দুর্গন্ধ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মিশ্রণ তৈরি করার সময় সব খাদ্য সঠিক অনুপাতে দেয়া উচিত। বাছুরকে কমপক্ষে দিনে দু’বার খাদ্য সরবরাহ করা উচিত।
বাছুরের খাদ্য পরিবেশন:
সারণি ১৫ মোতাবেক বাছুরকে খাদ্য পরিবেশন করা যায়। এ অনুক্রমে সারণি ১৫-এ প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে।
সারণি ১৫ : বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাছুরের খাদ্য পরিবেশন
বাছুরের খাদ্য পরিবেশনে যে অনুক্রম দেখানো হয়েছে তাতে সবুজ ঘাস পাতার পাশাপাশি দানাদার খাদ্যের উল্লেখ আছে। এই দানাদার (concentrate) খাদ্য সারণি ১৮-এ উল্লেখিত উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি করা যেতে পারে।
সারণি ১৬ : বাছুরের দানাদার খাদ্যে বিভিন্ন খাদ্যদব্যের পরিমাণ
দানাদার খাদ্যে যে উপাদান যুক্ত হয়েছে তার দু’একটি উপাদান না পাওয়া গেলে তাৎক্ষনিকভাবে অন্য উপাদান যুক্ত করা চলে। যেমন সরগম এর পরিবর্তে চালের কুঁড়া ব্যবহার করা যায়। দানাদার খাদ্য মিশ্রণ একত্রে একাধিক বাছুরের জন্য তৈরি করে স্বল্প সময়ের জন্য সংরক্ষণও করা চলে। এ থেকে বাছুরপিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য বাছুরের খোপে প্রদত্ত খাদ্য পাত্রে (feed trough) সকালবিকেল পরিবেশন করা যায় ।